( পাঠকদের অনুরোধ করবো যে আপনারা এই সিরিজের প্রথম ভাগটা যদি না পড়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে একবার পড়ে নিন। তাহলে এই পর্বটা বুঝতে সুবিধে হবে । )
দীর্ঘাঙ্গী বান্ধবী - 2
আমার চোখটা বোধহয় লেগে গিয়েছিল। বাসটা একটা বাম্পে পড়তে সজাগ হয়ে গেলাম। আমি এখনও চাদরের তলায় মাথা পর্যন্ত মুড়ি দিয়ে যুথিকার কোলের ওপর বসে আছি। বাসের সিটটা হেলান দেওয়া আছে বলে, আমি আসলে ওর গায়ের ওপর শুয়েই আছি। আমার মাথাটা ওর বুকের ওপর। ও আমার চেয়ে এতটাই লম্বা যে বুঝতে পারছি, আমার পায়ের পাতাটা ওর গোড়ালিও ছুঁতে পারেনি । আমি ওর দেহের ওপর নড়াচড়া করছি। কিন্তু মনে হচ্ছে ও বুঝতেই পারছেনা । যুথিকা ঘুমোচ্ছে। আমি ওর লম্বা চওড়া শরীরের ওপরে পাস ফিরে শুয়ে আছি । আমি হাত দিয়ে ওর হাতটা নাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম, "যুথিকা ওঠো।"
ও একটা "উঁ", বলে সারা দিলো। আমার মাথার ওপর থেকে চাদরটা সরিয়ে আমার দিকে দেখলো। বললাম, "আমাকে তোমার কোল থেকে নামিয়ে দাও।"
যুথিকা বলল, "কেনো ? তুমি আমার কোলেই শুয়ে থাকো না । আমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। আমি তো তোমায় কোলে নিয়ে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো আমার কোলেই।"
আমি হেঁসে বললাম, "আরে আমিও তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তোমার এমন নরম কোলে শুয়ে। কিন্তু বাসটা এবার বোধহয় দাঁড়াবে রাতের খাবারের জন্য। এবার আমায় সিটে বসতে দাও।"
যুথিকা আসতে করে নিজের দেহটাকে সিটের ভেতরের দিকে কাত করে দিলো। দিয়ে আলতো করে আমার দেহটাকে একটু তুলে আমায় আমার দিকের সিটের ওপর বসিয়ে দিলো। তারপর চাদরটা মোটামুটি একটু পাট করে রাখলো।
আমি বললাম, "বাস দাঁড়ালে কিছু খাবে তো ?"
বললো, "আমি ভালো করে খেয়েই বেড়িয়েছি। হালকা কিছু খেতে পারি। বাসে বেশি পেট ভরে খাওয়া উচিত হবে না। তুমি খাবে ?"
আমি বললাম, "না আমি বাসে বেশি খাবো না। দেখি হালকা কি পাওয়া যায়।"
যুথিকা আমার হাতটা টেনে নিয়ে মুচকি হেসে বললো, "কেমন লাগলো?"
আমি বললাম, "তুমি কি যে কর না। একেবারে কোলে বসিয়ে নিয়েছিলে। কেউ যদি দেখে ফেলতো ?"
যুথিকা আমার হাতটা আলতো করে টিপছে। বললো, "কি করে দেখবে ? তোমায় তো পুরো চাদরের তলায় ঢেকে রেখেছিলাম। আর তুমি এত ছোটো সাইজের যে এক্কেবারে ফিট করে গেছ আমার ভেতর।"
আমি বললাম, " বাহ্! আর তুমি তো ঘুমিয়ে পড়েছিলে ওইভাবে আমায় কোলে শুইয়ে। যদি চাদর সরে যেতো । কিম্বা আমাদের দুজনের ঘুম না ভাঙত, আর বাসের আলো জ্বালিয়ে দিতো ? তাহলে…?"
যুথিকা হাঁসছে। "সত্যিই তোমায় বুকের ওপর নিয়ে এত আরাম হচ্ছিলো, যে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। আজ রাতে ওইভাবেই ঘুমোবো।"
আমি কপট রাগ করার ভান করে বললাম,"না, রাতে ওইভাবে ঘুমোলে হুস থাকবে না। কেউ দেখে ফেলবে।"
যুথিকা বলল, "দেখে ফেললে কি হবে ? বলবো আমরা স্বামী স্ত্রী।"
আমি বিস্ফারিত চোখে ওর দিকে দেখলাম।
যুথিকা আমার হাতের ওপর আবার একটু চাপ দিয়ে বললো, "কি হলো ! ঘাবড়ে গেলে নাকি ?"
আমি বললাম, "যুথিকা, আমাদের সবে কয়েক ঘন্টা হলো আলাপ হয়েছে। তুমি অনেক দূরের কথা ভাবছো ।"
ও বললো, "ভয় নেই, আমাকে বিয়ে করতে বলছি না তোমায়।"
আমি বললাম, "জানি, আমি তো তোমার কাছে পুরুষ মানুষই নই। লম্বায় আমি তোমার কাঁধের কাছে; তোমার আমার চেয়ে গায়ের জোর বেশি ; একটা বাচ্ছা ছেলের মতো তুমি আমায় কোলে তুলে ঘুমিয়ে পড়ো। তুমি আমায় নিয়ে পুতুল খেলতে পারবে, বিয়ে তো তুমি কোনো লম্বা চওড়া শক্তিমান পুরুষকেই করবে।"
যুথিকা আমার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থাকলো , " বাব্বাহ! তোমার সঙ্গে তো আমি কথায় পারবো না। বিয়ে করার মত পুরুষ যদি শুধু লম্বা, চওড়া , শক্তিমান হলেই চলে যেতো, তাহলে আমি এতদিন তো কোনো কুস্তিগীর কিংবা ওয়েট লীফটারকেই বিয়ে করতে পারতাম। আমি তো খেলার জগতেরই মেয়ে। পুলিশেও এইরকম চেহারার লোক পাওয়া যায়। কিন্তু ওইসব তথাকথিত পুরুষরা আবার আমার মত লম্বা চওড়া মেয়ে পছন্দ করে না। ওদের চেহারার জন্যে যে attention পায়, সেটাতে কম্পিটিশন এসে যায়। তাই ওই লম্বা চওড়া ছেলেরা আমাকে পছন্দই করবে না । আর যারা আমার চেয়ে লম্বায় কম তাদের তো আবার আমার পাশে দাঁড়াতেই লজ্জা করে। আমার সঙ্গে কথা বলতেই অস্বস্তি বোধ করে।
কিন্তু তুমি একদম আলাদা। আমি তোমার চেয়ে সাত ইঞ্চি লম্বা । সেটা অনেক খানি। আমি এত লম্বা হওয়া সত্ত্বেও তুমি আমার সঙ্গে বন্ধুর মত ব্যবহার করছো, আমার হাইটের প্রসংশা করছো। আমার কাছে গায়ের জোরে হেরে গিয়েও তুমি আমার থেকে ভয়ে সিঁটিয়ে যাওনি। সবচেয়ে বড় কথা, তোমাকে আমি জোর করে কোলে তুলে নিলাম। আমার বুকের ওপর চাদরের তলায় লুকিয়ে শুইয়ে রাখলাম, তাতেও তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে না। কারণ তুমি জানো যে এই হাইট কিম্বা গায়ের জোরে বেশি হলেই পৌরুষত্ব প্রমাণ হয়না। পৌরুষত্ব তোমার পার্সোনালিটি তে, তোমার আত্মমর্যাদায়, তোমার কর্মে । সেই দিক দিয়ে তুমিই আমার আদর্শ পুরুষ মানুষ।"
আমি তো হতবাক। হাসতে হাসতে বললাম, "তুমি কি নেতা টেতা নাকি উকিল ? এত সুন্দর গুছিয়ে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারো তুমি ? সত্যিই তোমার বন্ধু হতে পেরে আমি গর্বিত।"
যুথিকা আবার আমায় জড়িয়ে ধরতে যাচ্ছিলো। কিন্তু বাসের আলো জ্বলে উঠলো। কন্ডাক্টর বললো, বাস কিছুক্ষন দাঁড়াবে রাতের খাবারের জন্যে। সবাই প্রায় বাস থেকে নামলো। আমরাও। কিন্তু ওখানে সব মশলাদার খাবার । খেয়ে যদি পেট গন্ডগোল করে । তাই আর আমরা দুজন সাহস করলাম না। একটা মিষ্টির দোকান ছিলো। ভালো সন্দেশ, রসগোল্লা আর মিষ্টি দই খেয়ে নিলাম। যুথিকাও দেখলাম আমার মত মিষ্টি খেতে ভালোবাসে।
একটা জিনিষ আমি লক্ষ্য করার চেষ্টা করছিলাম। যে আমাদের এই সাত ইঞ্চি লম্বায় তারতম্য , অন্য লোকেরা কি ভাবে দেখছে। আমি কিন্তু সেইরকম ভাবে কাউকে আমাদের দিকে নজর দিতে দেখলাম না। ভালো লাগলো ব্যাপারটা। যুথিকা কিন্তু বুঝতে পারেনি আমি এইটা লক্ষ্য করার চেষ্টা করছি। ওর বোধহয় এতে অসুবিধে হয় না। কারণ ও যখন দাঁড়িয়ে কারো সঙ্গে কথা বলে, মহিলা হোক কি পুরুষ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওর ওই 5 ফুট 10 ইঞ্চি হাইট নিয়ে ওই তো বেশি লম্বা দেখায়।
আবার বাসে এসে বসলাম । কন্ডাক্টর বলেছে, যেহেতু এখন প্রায় রাত সাড়ে বারোটা বাজে, এরপর খুব কারো প্রয়োজন না হলে, বাস একেবারে শিলিগুড়িতেই দাঁড়াবে ।
বললাম, "তাহলে তোমার সঙ্গে শিলিগুড়িতে কি আর দেখা হবে ? তুমি তো কাল থেকে কাজে যোগ দেবে। তোমাদের কি বেশিক্ষন অবধি কাজ করতে হয় ?"
যুথিকা বললো, "আমিও ভাবছিলাম, কাল থেকে তোমার সঙ্গে কোন সময় দেখা করা যায়। তোমার কত দিনের কাজ ওখানে ?"
বললাম, "তিন কি চার দিন লাগতে পারে।"
যুথিকা চিন্তিত হয়ে গেলো। বললো, "তাহলে যদি শুধু সন্ধ্যেবেলা গুলোয় দেখা হয় আমাদের, তিন দিন পর তো সব শেষ। তুমি কলকাতায় আর আমি পড়ে থাকবো শিলিগুড়িতে। কিন্তু এতে তো আমার মন ভরবে না। তাছাড়া সন্ধেবেলায় কখন ছাড়া পাবো তার তো কোনো ঠিক নেই । পুলিশের কাজ তো…বুঝতেই পারছো ।"
আমি বললাম, "তুমি তো কাল পৌঁছচ্ছ । কালই কি কাজে যোগ দেবে ? মানে বলছি, কাল আমার দুপুর বেলা থেকে কাজ, সন্ধে অবধি। পুরো সকালটা কোনো কাজ নেই, হোটেলেই থাকবো। যদি তুমিও দুপুরে কাজে যাও, তাহলে সকাল বেলাটা তো এক সঙ্গে কাটাতে পারি। "
যুথিকার চোখ চকচক করে উঠলো। "হ্যাঁ, সে তো হতেই পারে। কাল ছুটি থেকে ফিরছি আমি, কাল তো কাজে নাও যেতে পারি। বলবো শরীরটা খারাপ লাগছে , বাসে ঘুম হয়নি। বাসে, পাশে একটা বাচ্ছা ছেলের সিট ছিল। সারা রাত বিরক্ত করেছে। তাই ওকে কোলে নিয়ে ঘুমোতে হয়েছে সারারাত। আমারই ঘুম হয়নি ।" বলে হাঁসছে।
আমিও হাঁসলাম, "হ্যাঁ, ভালো যুক্তি, শুধু বাচ্ছা ছেলের বয়সটা বোলো না যেনো । তাহলে কাল সারাদিন কাজে যাবেনা তো ?"
ও বললো, "কিন্তু তুমি তো হোটেলে উঠবে, আমি তোমার সঙ্গে কি করে থাকবো ?"
আমি বললাম, "উপায় একটা আছে। আমরা একসঙ্গেই বাস স্ট্যান্ড থেকে যাবো। তোমার বাড়িতে ব্যাগ রেখে তোমাকে নিয়ে চলে আসবো আমার হোটেলে। তারপর সারাদিন থাকো। আমি শুধু দুপুর 1টা থেকে 5টা পর্যন্ত থাকবো না। সেই সময়টা তুমি ঘুমিয়ে নিও। সন্ধ্যেবেলা আমি ফিরে এলে আবার আড্ডা। রাতে চলে যেও। তাহলে মোটামুটি সারাদিন আমাদের একসঙ্গে থাকা হবে। পরের দিনের গুলো প্ল্যান করে নেওয়া যাবে ।"
যুথিকার পছন্দের জিনিস, আমার হাতটা আবার ধরে নিয়েছে নিজের বিশাল হাতের তালুর মধ্যে। খুশিতে মুখ উজ্জ্বল। বললো, "হ্যাঁ এটা করা যেতে পারে। কিন্তু আমার বাড়িটা একটু দূরে বাস স্ট্যান্ড থেকে, মানে আমার কাজের জায়গার কাছাকাছি ভাড়া নিয়েছি। তোমার হোটেলটা কোথায় ?"
আমি বললাম, "আমার হোটেলটা শহরের ওপরেই , বাস স্ট্যান্ড থেকে খুব বেশি দূর নয়।"
বললো, "আচ্ছা, তাহলে তো আগে আমার ওখানে যেতে গেলে, তোমায় অতটা রাস্তা ফালতু যেতে হবে।"
আমি বললাম, " তোমার সঙ্গে প্রতিটা মুহূর্ত কাটানোই আমার কাছে মূল্যবান, একটু না হয় বেশি রাস্তাই তোমার সঙ্গে ঘুরলাম ।"
যুথিকা হেঁসে বললো, "ওরে বাবাহ্, প্রেম যে দেখছি টসটস করে গড়িয়ে পড়ছে । দেখো বাবা, বেশি বোলো না। আমি কিন্তু পুলিশ, তোমায় অ্যারেস্ট করে আমার কাছেই ধরে রেখে নেবো।"
আমি বললাম, "অ্যারেস্ট তো করেই রেখেছো তখন থেকে। আমার হাত তো তোমার হাতেই বন্দী।"
যুথিকা বললো, "তোমার হাত ? তোমার হাত কোথায় ? দেখতে পাচ্ছিনা তো ।"
আমি বললাম, "হ্যাঁ, আমিও তো খুঁজে পাচ্ছিনা। শুধু তো তোমার ওই বিশাল হাতের মুঠো দেখতে পাচ্ছি। দেখো তো তোমার মুঠোটা খুলে ওখানে ঢুকে গেছে কিনা ?"
যুথিকা বললো, "উঁহু, খুলবনা মুঠো, তোমার হাতটা আমি নিয়ে নিয়েছি। তোমায় আর দেবোনা।"
আমি বললাম, "সত্যি যুথিকা, তুমি জানোনা তুমি কি অসাধারণ সুন্দর। আমার হাতটা তোমার হাতের পাশে দেখো। মনে হবে একটা বাচ্ছা ছেলের হাত ধরে আছো তুমি।"
যুথিকা হাঁসছে। ওর হাতের মুঠো খুলে নিজের থাই এর ওপর পেতে রাখলো । আমি ওর হাতের পাতার ওপর আমার হাতের পাতাটা রাখলাম, মাপ নেবার মত করে। ও হেঁসে বললো, "দেখো কি মিষ্টি দেখাচ্ছে তোমার হাতটা আমার হাতের ওপর ।"
আমি বললাম, "মিষ্টি ?? লাগছে একটা বাচ্ছা ছেলের হাত তার মায়ের হাতের ওপর রেখেছে । কত ছোট লাগছে আমার হাতটা তোমার হাতের ওপর। আর তোমার হাড় কি চওড়া। আমার কব্জিটা কত সরু লাগছে, তোমার কব্জির ওপর ।"
ও বললো, "তুমি তো আমার বাচ্ছাই । এসো আমার বাচ্ছাকে আমি কোলে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিই।"
আমি বললাম, "এই, এখন না। এখন তো শুধু আলোটা কম করেছে। এখনও সবাই ঘুমোয় নি। এখন কোলে নিতে যেওনা, কেউ দেখে ফেলবে।"
ও বললো, "ঠিক আছে। একটু পরেই সব আলো নিভিয়ে দেবে। তখন তোমায় কোলে নেবো।"
আমি বললাম, "না আর কোলে নয়। তোমার পাশেই বসছি । তুমি সাইডের সিটে বসেছো। সামনে, পেছন, পাশের সিট, সব জায়গা থেকে দেখা যাবে।"
যুথিকা বললো, "আচ্ছা আমি ভেতরে ঢুকে বসছি। মাঝখানের হ্যান্ডেলটা তোলা আছে তো। আমি কোনায় বসে পা দুটো পাশের সিটের দিকে বেঁকিয়ে দেবো। আর গায়ে তো চাদর থাকবে, তোমাকে দেখতেই পাওয়া যাবে না। তুমি চলে এসো আমার সাইডের সিটে, আমি ঢুকে যাচ্ছি।"
ও ভেতরে ঢুকে গেলো। আমি একটু দাঁড়িয়ে সাইডের সিটটায় বসে গেলাম। ওর পা দুটো ও আমার দিকে বেঁকিয়ে দিলো, আমার পায়ের তলা দিয়ে। মানে আমার পা দুটো ওর হাঁটুর ওপরেই ভর করে রইলো। ও চাদরটা নিয়ে আমাদের দুজনের ওপর দিয়েই চাপা দিয়ে দিলো।
আমি বললাম, "কি করছো তুমি যুথিকা ?"
ও বললো, "আমার বাচ্ছার বাসে ঘুম হয় না। তাই আমি ওকে কোলে শুইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবো। তারই ব্যবস্থা করছি।" বলে হাঁসছে।
এতক্ষনে বাসের আলো নিভিয়ে দিয়েছে। সব যাত্রীরাই ঘুমোবার ব্যবস্থা করছে। আমি বুঝতে পারলাম, যুথিকা আমার পিঠের পেছনে হাত দিয়ে আমায় ওর কোলে তোলার চেষ্টা করছে। উফ্ ওর তর সইছে না একদম।
যুথিকা ঠিক কায়দা করে আমাকে ওর কোলে তুলে নিলো। আমাকে একটু নিচের দিকে করে শোয়ালো যাতে আমার মাথাটা ওর গলার নিচে থাকে। আমাকে পাস ফিরিয়ে শুইয়েছে ওর কোলের ওপর, তাতে আমার পা দুটো হাঁটুর থেকে একটু মুড়ে গেছে। ও আমার থেকে এতটাই লম্বা যে আমার পা ওর পায়ের পাতা পর্যন্তও পৌঁছয়নি। আমার মাথাটা ওর কাঁধের ওপর ভর দিয়ে শোয়ালো, আমার মুখটা ওর গলার দিকে ফিরিয়ে। ও নিজের গলা পর্যন্ত চাদর দিয়ে ঢেকে নিয়েছে। চাদরের তলায় আমাকে ওর কোলের ওপর এমন ভাবে শুইয়ে নিয়েছে, যে আমাকে দেখাই যাচ্ছে না। আর নিজের মাথার আর আমার মাথার ওপরও চাদর জড়িয়ে নিয়েছে ঘোমটার মতন করে। তাই আমার মুখ, মাথাও আর দেখাই যাচ্ছে না। কেউ ভালো করে নজর করলে ভাববে, যুথিকা কোলের ওপরে কোনো বাচ্ছাকে নিয়ে শুয়ে আছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কেই বা বাসে ঘুরে বেড়াবে।
এমনিতেই বাস চলার আর AC চলার মেশানো একটা শব্দ হয়েই যাচ্ছে। আমার মুখটা ওর গলার কাছে হওয়াতে, খুব নিচু স্বরে কথা বলাও যাচ্ছে। অন্য কেউ শুনতেও পাবে না।
যুথিকা খুব নিচু স্বরে বললো, "তোমার কোনো অসুবিধে হলে বলো। তোমার যে রকম ভাবে শুলে কষ্ট হবে না, সেই রকম ভাবে শোও।"
বললাম, "আমি ঠিক শুয়েছি। কিন্তু তোমার লাগছে না তো ? আমার পুরো ওজনটা তো তোমার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।"
ও বললো, "আমার তো বেশ আরামই লাগছে। গা টেপা হয়ে যাচ্ছে। তোমার ওজনই তো বুঝতে পারছি না । আচ্ছা তোমার ওজন কত ?"
ফিসফিসিয়ে বললাম, "62 কেজি"।
ও ফিক করে হেঁসে ফেললো । "62 কেজি ? মাত্র ? আর আমার 91কেজি। মানে 29 কেজি বেশি। তাই তোমার ওজন বুঝতেই পারছি না। তোমার চিন্তা নেই, তুমি সারারাত তোমার যখন যে পাস ফিরে, কিম্বা সোজা হয়ে, উপুড় হয়ে, যে রকম ভাবে খুশি সেই রকম ভাবে শুতে পারো, আমার কোনই অসুবিধে হবে না।"
আমি বললাম, "শোনো না, এই চাদরটা আমার নাকটা ঢেকে দিচ্ছে, নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমার নাকের ওপর থেকে একটুখানি সরিয়ে দাও না চাদরটা।"
ও বললো,"দাঁড়াও, তাহলে কিন্তু তোমার মুখটা দেখা যাবে। দাঁড়াও , ব্যবস্থা করছি।"
ওর বেশ লম্বা চুল, পিঠ পর্যন্ত। ওর চুলটা কাঁধের ওপর দিয়ে নিয়ে এসে আমার মাথার ওপর দিয়ে দিয়ে দিলো । তাতে আমার মুখটা ওর চুলের তলায় ঢেকে গেলো। আমার মাথাটা ওর কাঁধের ওপর কাত করে রাখা, কিন্তু ওর চুল দিয়ে ঢাকা পড়ে গেলো। ও বললো, "তোমার মুখটা আমার গলার ভেতর ঢুকিয়ে নাও। তাহলে তোমার নাকের ওপর আমার চুল পরবে না। কিন্তু তোমার মাথাটা আমার চুলে ঢেকে যাবে।"
আমি আমার মুখটা ওর চওড়া গলার খাঁজে ঢুকিয়ে দিলাম। আমার নাকের ডগাটা এখন ওর গলার ভেতরে ঠেকছে। কি ঠান্ডা আর নরম ওর গলাটা। আর আমার নিজের শরীরটায় মনে হচ্ছে কোনো ওজন নেই। একটা মোটা নরম তুলোর গদিতে যেনো শুয়ে আছি। ও দুদিক দিয়ে ওর মোটা মোটা হাত দুটো দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমার মাথাটা ওর বলিষ্ঠ কাঁধটার ওপর বালিশ করে রাখা। আর আমার পুরো শরীরটা ওর বিশাল দেহের মধ্যে চাদরের তলায় লুকোনো।
যুথিকার গাল, থুতনি আমার গালে কপালে ঠেকছে। নরম তুলোর মত ওর গালটা। বললো, "আমার সোনামনি এবার আমার কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও তোমায় কোলে নিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিই। রাতে দরকার হলে আমায় ডেকো কিন্তু ।"
আমি শুধু একটা শব্দ করলাম "হুঁ"। আমি চোখ বন্ধ করলাম। কি এক প্রশান্তি অনুভব করছি। ভীষণ নিশ্চিন্ত, secured একটা অনুভুতি। যেন মায়ের কোলে তার বাচ্ছা নিশ্চিন্তে ঘুমোতে শুয়েছে। আমার হাতটা ওর নরম কিন্তু পুরুষ্ঠু হাতের ওপর রাখা। আমি আমার নাকটা, ঠোঁটটা ওর নরম বড় গলার ভেতরে ঠেকিয়ে শুলাম।
কখন যে চোখে ঘুম নেমে এসেছে বুঝতেই পারিনি।
( To be continued….)