Read JIVAN - khatha by Samir Sinha in Bengali Short Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

জীবন - কথা (JIVAN - khatha)

‘National Story Competition-Jan’

'জীবন' - কথা (JIVAN - khatha)

সমীর সিন্ হা

'মানুষের' জীবন ঘটনা বহুল প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে এক নতুন ঘটনার শুরু আর পুরানোটা শেষ, এই ভাবেই বোধহয় ঘটনার ভারসাম্য বজায় থাকে দিন দিন প্রতিদিন ।

তাই বোধ হয়, আমরা ভালো মন্দের মধ্যে সহজেই ফারকটা' বুঝতে পারি ।

কিছু কথা, কিছু আবেগ, কিছু মুহূর্ত্য সারা জীবন অঙ্গাগি ভাবে জড়িয়ে থাকে আমাদের সঙ্গে, জীবন কাওকে সুযোগ করে দেয় 'দ্বিতীয়বার', কাউকে 'এক' বার, আর কাউকে বা 'এক' বারও নয়...

এখন তা, ভালোভাবে বুঝতে পারি জীবন দর্শন থেকে।

'সুজন' এমনই জীবন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল চরিত্র - লাজুক, মৃদুভাষী, বন্ধু বৎসল আর মেহনতি ছেলে, ওই সময়টার (যৌবনের) কথা, মনে পড়লে ভারী অবাক লাগে তখন আমরা দোর্দণ্ডপ্রতাপ যৌবনের আগুনে জ্বলে পুড়ে চলেছি প্রতি মুহূর্তে আদিম, অনাদিম রিপুর রেসা-রেসিতে জীবন প্রায় অষ্ঠাগত আর ওই বয়সে 'সুজন' আমাদের পাড়ায় ভিডিও, 'ভিসিপি-ভি-সি-আর' এর বিজনেস করতো নেহাত শখের বশে নয় বিজনেসের মতো করেই।

ধীরে ধীরে ওর প্রসার জমে উঠল এক সময় তা সামাল দেওয়া দায় তবু আমাদের চেনা 'সুজন' ওই বয়সে কর্মসংস্থান এর যে পথ সবার সামনে খুলে দিয়েছিল তা সত্যিই কাবিলে তারিফ ।

ওর সামনে সে কথা না বললেও মনে মনে ওকে নিয়ে গর্ব করতাম ।

আর প্রতি দিন বন্ধু - বান্ধব এর সাথে 'উল্লাস চুমুকে' ওর প্রান চাঞ্চল্যতা ছিল গর্ব করার মত এই ভাবে কিছুদিনের মধ্যেই ও এলাকায় সর্বপ্রথম চলন্ত ভ্রাম্যমান ভিডিও ইউনিট তৈরি করে ফেলেছিল আর কর্মসংস্থানের নুতন পথের দিশারী হয়ে উঠেছিল সবার অজান্তেই,

- বাড়ির খেয়ে আড্ডা মেরে বেশ মজা করেই সময় কেটে যাচ্ছিল তরতর করে...

হঠাৎ! বেশ কিছু দিন ধরে দেখছি 'সুজন' একটু অন্যমনস্ক !

- কি রে সব ঠিক আছে তো?

- ও বল্লো, 'এক টাক' ।

- তোকে, এর আগে কখনো টেনশনে দেখিনি বল তো কি ব্যাপার 'গুরু' প্রেম - ট্রেম নয় তো রে !

অনেক দিক থেকে 'সারজি্কেল স্টাইক' করে জানতে পারলাম সত্যি ও 'প্রেমে' পড়েছে আমাদেরই পাড়ার 'মিনি ইন্ডিয়ান' ইউনিটের বাঙালি পাঞ্জাবী মেয়ের সঙ্গে নাম কি যেন একটা - 'প্রীত' আগে পিছে' কিছু একটা - ঠিক তেমন একটা মনে পড়ছে না ।

হঠাৎ একদিন মাসিমার - মানে 'সুজন' এর 'মার ফোন এল - "একবার তোরা বাড়িতে আসতে পারবি কথা আছে" বলতে না বলতেই আমাদের গ্রুপের সবাই মাসিমার বাড়ি পৌঁছে গেলাম হই- হই করে ।

- "বাবা তোরা তো সবাই জানিস" 'সুজন' আমার 'সাত রাজার ধন এক মানিক' ওর খুশি মানে আমার খুশি সেই কবে 'উত্তর প্রদেশ' থেকে চলে এসেছিলাম ছোট্ট এক বাচ্চাকে সাথে করে যার তখন কোন ভবিষ্যত ছিল না আর আজ একটা ছোট্ট পরিবার পেয়েছি যেখানে তোদের মত আপনজন প্রতিবেশী আর দু’বেলা ভালো করে নিজের ইচ্ছা - মত করে খাওয়া - পরা, 'সুজনের' মত ছেলে - আর কি চাই এ জীবনে, তোরা বল?

ও 'হ্যাঁ'! যার জন্য তোদের ডেকেপাঠালাম, বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে এই সামনের 'বুধবার' একটু তোদের করেকম্মে নিতে হবে বুঝিস তো বাবা লোকজন বলতে তোরাই আমাদের আপনজন আর আমার কেই বা আছে বল!

সবাই মিলে আমার বললাম মাসিমা আর কোন কথা হবে না বাদ বাকি আমরা সব দেখে নেব।

মিষ্টি মুখ করে, আমার সবাই এক সঙ্গে বেরিয়ে এলাম স্বঃর্গবে ।

'কয়েক' দিনের মধ্যে সমস্ত জল্পনার অবসান খুব ধুমধাম, উল্লাস করে আর সারারাত ব্যাপী ভিডিও চালিয়ে আমাদের 'সুজন' এর বিয়ে হয়েগেল আর সবার শেষে চমক ছিল আমাদের দেওয়া হানিমুনে 'দিঘা' - সবাই মিলে চাঁদা তুলে ।

কিছুদিনের পর যে যার জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আমি 'শান্তিনিকেতনে' পড়াশোনায়, 'সুবল' স্থানীয় কলেজে আর বাবার গ্যারাজ এর গ্রাহক প্রতিনিধি, 'বিমল' পৈতৃক রেশন বিজনেস সামলাতে আর বাদবাকি রা যে যার মতো কাজে।

বেশি কিছু দিন পরে ছুটিতে বাড়ি এলাম হঠাৎ 'সুবলের' ফোন ভালো মন্দের খবরের মধ্যে ও বলেই ফেললো খবরটা শুনেছিস তুই?

- বললাম, 'কোন খবর' ।

- 'সুজন চৌধুরীর' বিয়ে ভেঙে গেছে !

- কি যা তা বলছিস, এই তো ক-দিন আগে-ই বিয়েটা হল আর এর মধ্যে ভেঙে গেল ।

- কি ভাবে?

- একটু থেমে ফোনের ও পার থেকে 'সুবল' বলল তোর মনে আছে 'সুজনের' ভিডিও বিজনেসে একটা নতুন ছেলে জয়েন্ট করেছিল ফর্সা, 'কটাচোখা' ছেলেটা, মনে পড়ছে তোর - ঔই ছিল 'ঘর শত্রু বিভীষণ',এখন মনে হল ভালোবাসাটা ছিল নিছক এক তরফা যার পরিনতি আজ এই দিন ...

মেয়েটা বেশকিছু টাকাপয়সা, মাসিমার-অগাধ বিশ্বাস আর সুজনের এক তরফা ভালোবাসার গলা রুদ্ধ করে পর পুরুষের সঙ্গে পলায়ন করেছে।

- ফোন নামিয়ে রাখলাম ওপ্রান্ত থেকে আওয়াজ এল' হ্যালো' হ্যালো'।

- এভাবে সময় তার আপন গতিতে চলতে থাকে অনেক গুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছি তা আজ 'অশানীর' পাঠানো কোর্ট পেপারে হাতে পেয়ে হঠাৎ মনে হল।

আমার কাহিনীটা বোধহয় আপনাদের জানানো হয় নি? তেমন কোন বড় মহান ঘটনা নয়,এক সাধারনের অতি সাধারন ঘটনা !!

তখন, শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা প্রায় শেষের পথে হঠাৎ 'অশানীর' প্রেমে হাবুডুবু আমি, ভাবতে পারিনি আমার অতি বড় শত্রুও যে আমার মধ্যেও এই 'প্রেমের' অতি বড় 'ট্যালেন্ট' আছে, আর বিশেষ করে যে 'আমি' সুডেন্ট লাইফের বেশীর ভাগ সময় জনকল্যাণ ও ছাত্র উন্নয়নে দিয়ে ফেলেছি সে যে এই ঘটনার অধিকারী কারও একথা বিশ্বাস হয় নি এখনো পর্যন্ত !!

'ওর'- বাবা জয়েন্ট বি. ডি. ও, এক বখাটে ভাই আর গৃহস্থী- মা নিয়ে ওদের সংসার আর আমার 'স্টিল প্লান্ট' -এ কাজ করা একমাত্র সংসারে উপার্জন করা বাবা আর সারা দিন স্বামী পুত্রের মঙ্গল কামনারত উপবাসী 'মা' নিয়ে আমাদের সংসার, দিদির বিয়ে আমার জন্মের আগেই হয়ে গিয়েছিল, ওর দুই ছেলে।

মানুষ মাত্রই ভুল হয়ে থাকে আমারও জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল বোধহয় - 'কোনো কিছুই না ভেবে বিয়ের পিঁড়িঁতে বসে পড়া,' ভালোভাবে বিয়ে হবার পর ভাবলাম এই বার জীবন একটা দিশা পেল বোধহয়.....

সবেমাত্র বড় বড় স্পন দেখা শুরু করেছি আর জীবনটাকে একটু শেট করেছি মাত্র হঠাৎ যেন ছন্দ পতন হলো, স্কুলে মিউজিক টিচার এর চাকরিটা 'অশানী' পাকাপাকি ভাবে পাওয়া মাত্র ও ভাবতে শুরু করল সঙ্গী নির্বাচনে বোধহয় বড় ভুল ও করে ফেলেছে, সারাজীবন বোধহয় আমি - 'আপরের মুখ পানে চাহিয়া থাকিব' ।

অগত্যা, সময় চেয়ে বাড়ি থেকে অনেক দূরে 'অশানী' ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেল আমার ভালো- বাসাকে উপেক্ষা করে - কখনো বুঝিনি এমন শৈল্পিক মনে কখন কিভাবে যেন অহংকারের করাল থাবা প্রবেশ করে ফেলেছে,

- বড়রা বলতেন, একটা বাচ্চা কাচ্চা হয়ে যাক সব ঠিক হয়ে যাবে কারন 'দাম্পত্য প্রেমের থেকে অপত্য স্নেহ অনেক বেশী শক্তিশালী' কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা, ওর স্ট্যাটাসে বাঁধে আমি ওর স্বামী হয়ে এখনও বেকার আর ওর পাকাপোক্ত চাকরি তাই মেয়েকে দেখার যোগ্যতার বড়ই অভাব আমার ।

এই ভাবে জীবন যাপন এর থেকে ভাবলাম অন্য শহরে গিয়ে নুতন ভাবে শুরুটা করা যাক তাই আবেগের বাকরুদ্ধ করে অচেনা শহরে পাড়ি দিলাম....

এই ভাবে অনেক গুলো বছর কাটিয়ে উঠলাম হঠাৎ একটা ঘটনা জীবনকে চমকে দিয়ে গেল 'অশানীর' কাছ থেকে পাওয়া ডিভোর্স এর চিঠি এটা আমার কাছে যেন মনে হল 'ফাঁসির ফরমান' ।

সাথে আরও একটা খবর যে - 'ও কোন এক সহকর্মীকে ভালোবেসে ফেলেছে গভীর প্রেমে সাঁতার কাটছে, ভাবি কত সহজ এই ভালোবাসা মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে আর কত সহজে, যখন তখন' এক্সচেঞ্জ অফার' চলে নিয়মিত।

অনেক মানসিক যুদ্ধ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, ভেঙে দেওয়া খুব সোজা এক বার চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি?

কোনরকম সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়লাম 'অশানীর' দেশে কিন্তু হায় পোড়া কপাল কি কিসমত আমার ভাবতেই আবাক হই এখন !!

অনেক কষ্টের পর ওর বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সন্ধাবেলা পৌছালাম, একটা ছোট্ট অনুরোধ বাচ্চাটাকে একটু আদর করতে দাও না, আমার খুব ইচ্ছা করছে!

- আহা! 'মরনদশা' কিছুতে তা হবে না তোমার মত খোকলা নেতার কাছে থেকে কোন লাভ নেই কি খাওয়াবে ওকে?

- ড্যং কোরো না! সামনে রুমে চাটাই বিছিয়ে থাকলে থাকো না হলে মানে মানে কাটো!

- আর দেখতাম সহকর্মীদের ভিড়ে 'অশানীর' স্বামী স্ত্রীর নাটক - এই তুমি চা খাবে? একটু খাও সেই কখন খেয়েছো, এযেন এক 'বহুরূপী' !

ভাবি 'একই অঙ্গে এত রুপ' কি করে সম্ভব?

সেই, দিন অনেক চিন্তা ভাবনা করলাম না বাস্তবে আর সম্পর্কের বৃক্ষরোপন সম্ভব নয় কারণ কোন সম্পর্ক জোড়া তালি দিয়ে বেশী দিন টেকানো সম্ভব নয়, অগ্যোতা বিফল মনরথ নিয়ে ফিরে এলাম সঙ্গে নিয়ে এলাম ইনসোমেনিয়া, ভারটি-গোর মতো সব ভয়ঙ্কর বিমারি ।

সেই দিনই মনে মনে ভাবলাম রোগ তো সারিয়ে ফেলবো কিন্তূ এই মানসিক ভারসাম্যহীন কাটিয়ে জীবনের রাস্তায় সুদৃঢ় ভাবে মাথা উঁচু করে বাকি জীবনটা কি ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব তারই ভাবনা হঠাৎ মনে এল.... না 'অশানী' যদি তার নিজের পথ নিজেই বেছে নিতে পারে আহলে আমি নয় কেন?

এর মাঝে অনেক গুলো বছর অতিক্রান্ত হয়েছে বদলে গেছে অনেক কিছুই তা সে পাড়ার 'দত্ত কাকুর'- 'দত্ত কেবিন' হোক কিংবা পুরানো হাসপাতালে গায়ে নুতন রং এর প্রলেপ সবকিছুই পরিবর্তনশীল যেমন করে 'সুজন চৌধুরীর' জেল যাওয়া কখনও ভাবিনি ওর এমন পরিনতি হতে পার বলে....

মেয়েটি চলে যাওয়া পর ধীরে ধীরে সমস্ত ব্যাপার গুলো মানিয়ে আবার নতুন ভাবে জীবন শুরু করেছিল 'সুজন', মাসিমার কোনো এক পরিচিত দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ের সঙ্গে সব কিছুই ঠিকই ছিল এরমধ্যে একটা 'ফুট' 'ফুটে' মেয়ে হয় ওদের কিন্তু ওই যে কথায় বলে - 'বিধি বাম' ভালোবাসা এখন সবচেয়ে সস্তা জনপ্রিয়হীন আবেদন, যা সত্যি বোঝা দায়।

এই মেয়েটিও অন্য প্রেমিকের সাথে রাস্তা বদলে ফেলল, মেয়েটাকে ফেলে রেখে ।

আর 'সুজন' ও মাসিমার নামে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করে মেয়েটি, জেলে যেতে হয় মাসিমাদের আর সবার শেষে যে পরিনতি তা শুনলে হতবাক হতে হয়, 'সুজন' তখন জেলে বেশ কয়েকবার আমি নিজে দেখা করে এসেছি অনেক সময় ও আফসোস করে আমায় বলেছিল 'জীবনের সমীকরণ মেলানো খুব সোজা কারও কাছে আবার সেই সমীকরণ ই দুর্ভেদ্য.... আর আমার ক্ষেত্রে, থাক! সে কথা!

এর পর বেশ কিছু দিন আমিও কাজের মধ্যে মনোনিবেশ করে ফেলি তাই আর কারোর খবরাখবর রাখার সুযোগই হয়ে ওঠেনি, খবর পেলাম 'সুজন চৌধুরীর' বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছিল তা সব মিথ্যে তাই কোর্ট বা-ইজ্জত 'সুজনকে' মেয়েটির আনা অভিযোগ থেকে মুক্ত করে রেহা করে ।

'আদালত' সুজন চৌধুরীকে রেহাই দিলেও সমাজ ব্যবস্থা, পাড়া, প্রতিবেশী ওকে রেহাই দেয় নি পরিনতি যে দিন ওর ছাড়া পাওয়ার দিন সেই দিন সকালে ও আত্মহত্যা করে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে অজানা উদ্দেশ্য পাড়ি দেয় ।

খবরটা পেয়ে স্থির থাকতে পারি নি কান্নায় ভেঙে পড়ি আর বুকের মধ্যে 'স্বজনহারার বেদনা' অনুভব করি, সেই ছোট্ট বেলার নির্ভেজাল বন্ধু জীবনের অনেক 'ওঠা - পড়ার' সাথী কিছুই করতে পারলাম না ওর জন্য শুধু একটা কথা বারবার মনে পড়ছে সত্যই 'জীবন' সবাইকে বারবার সুযোগ দেয় না কেউ বা পায় আর কেউ বা পায় না......

এই কথাটা মাথায় রেখে সব কিছু ঝেড়ে ফেলে একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে সবেমাত্র বাইকে চড়ে স্ট্যাট করবো এমন সময় কে যেন পিঠে আলতো টোকা দিয়ে বলল 'এক্সকিউজ মী তুমি কি 'জীবন' ?

অপ্রস্তুত হয়ে ঢোক গিলে উত্তর দিলাম 'হ্যাঁ' আর আপনি?

আরে, 'আমি' - 'ইতি' আমাকে চিনতে পারলি না তোর 'ব্যাচমেট' !

সেই শান্তিনিকেতনের 'ইতি' কে এই মুহূর্তে এখানে এই ভাবে দেখবো কখনো ভাবিনি তাই স্তম্ভিত হয়ে খানিকটা সময় নিয়ে বললাম 'তুই এখানে'?

'ইতি' বললো সে অনেক কথা, তুই কি খুব ব্যস্ত? যদি খানিকটা সময় থাকে তো দুজন 'চা' খেতে পারি আর না হলে তোর মোবাইল নাম্বার- টা দিতে পারিস ফোন করে নেব।

আমি মনে মনে ভাবলাম 'ব্যস্ততা' আমাকে ছেড়ে কবে যে চলে গেছে এখন ঠিক তা মনে পড়ে না, অগ্যতা 'ইতিকথা'- কে (যে নামে শান্তিনিকেতনে আমরা সবাই ওকে ডাকতাম) বললাম তোর সময় আছে কি না বল? আমার হাতে সময় আছে।

আমি বাইকে করে 'ইতিকে' নিয়ে আমার পরিচিত এক 'চা' এর দোকানে নিয়ে এলাম দোকানে ঢুকে দেখলাম টেবিল কোন খালি নেই কম বয়সী কলেজ পড়ুয়ারা দখল করে রেখেছে,

এখন নতুন সম্পর্কের সূচনা হয় এই টেবিল থেকে এই সব কচিকাঁচাদের দেখে হঠাৎ করে সেই কথা বিশেষ করে মনে হল !

যেহেতু 'ক্যাফের' মালিক 'মিত্র- দা' আমার খুবই পরিচিত সেহেতু একটা টেবিল পেতে বিশেষ কোন অসুবিধা হয় নি ।

এক গ্লাস ঠান্ডা জল খেয়ে `ইতিকে' জিজ্ঞাসা করলাম আগে তোর খবর শোনা? আমার টা পরে বলবো!

শান্তিনিকেতনে, মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে ইতি ওর পছন্দের আমাদের এক ক্লাস সিনিয়রকে জীবনসঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করে নতুন জীবন শুরু করেছিল বাড়ির অমতে, প্রথমে অতটা মনে হয় নি যে ভালোবাসাটা বিয়ের স্বীকৃতি পর এত সহজেই ফিকে পড়ে যাবে, এত সহজে বেরং হয়ে পড়বে!

কিছু দিনের মধ্যেই পুরুষের আদিম প্রবৃত্তি মারধরের মাধ্যমে যে বেরিয়ে আসবে এত সহজে এটা বোধহয় ও এত কম সময়ে বুঝে উঠতে পারেনি ।

ব্যাস, শুরু হল সম্পর্কের অভিযোজন খেলা, ক্রমশ এই খেলায় খেলতে খেলতে এক সময় 'ইতি' ক্লান্ত হয়ে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় বাকি পথ একা চলার ।

এই কথা বলতে বলতে ওর মনের ক্ষতবিক্ষত রুপ প্রকাশ পেল ওর চোখে মুখে কি নিদারুণ পরিস্থিতিতে ওর এই সিদ্ধান্ত সে কথা আমি ছাড়া আর কেইবা বুঝতে পারে তাসে আমি ভালো ভাবে জানি !

হঠাৎ যেন কোথাও হারিয়ে গেলাম, আর নিজের অজান্তেই মনে মনে কিছুটা স্বার্থপর হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যদি 'ইতিকথা'(ইতি) সবকিছু ভুলে জীবনের পথ চলতে চায় নুতন করে আমি ওর পথের সাথী হতে ইতস্ততঃ হব না যদি ও চায় তো!!!

হঠাৎ- ই মনে হল কেউ যেন আমাকে নাড়া দিচ্ছে জোরে-জোরে,স্তম্ভিত ফিরে দেখলাম 'ইতি' আমাকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে এই 'জীবন' কি `রে শরীর টরীর সব ঠিক আছে তোর, কোথায় হারিয়ে গিয়ে ছিলি ???

মনে মনে ভাবলাম হারিয়ে তো গিয়েছিলাম এই অল্প সময়ে, কার সঙ্গে থাক সে কথা!!!

===সমাপ্ত ===