There will be nothing except jingle books and stories free download online pdf in Bengali

ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না

ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না

লেখক: Q

(১)

উত্তর বঙ্গ, ১৯৬৭।

আমি সুভাষ… সুভাষ চক্রবর্তী, একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ, psychiatrist। আমি আপাতত human psychology নিয়ে রিসার্চ করছি। সদ্য human psychology নিয়ে পড়াশুনো শেষ করে রিসার্চ শুরু করেছি। এখন আমার ‘টপিক অব রিসার্চ’ হলো psycopaths। যার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য জিনিষ হচ্ছে সিরিয়াল কিলার। Scotland Yard এর পুলিশকে একসময় ভাগিয়ে মেরেছিলো তাদেরই মধ্যে একজন সেরা সিরিয়াল কিলার – Jack The Ripper।

বাঙালিরা সক্কাল সক্কাল উঠে, খবরের কাগজের সাথে চায়ের পাতে বিস্কুটের জায়গায় জ্যাক দ্য রিপারকে পেলে কেমন বোধ করবে জানিনা, তবে আমি এখন উত্তর বঙ্গের পাহাড়িয়া অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে সাদা Ambassador-এ করে ছুটে চলেছি এমন একজনের সন্ধানে যে হয়তো এই জ্যাক দ্য রিপারকেও হার মানাবে।

(২)

উত্তর বঙ্গের কোনো এক নাম না জানা শহরের কোনো এক কোণায় একটা স্পেশাল সিকিউরিটি mental asylum-এর আবাসিক সে। কাকতলীয় ভাবে, তার নামো সুভাষ, কিন্তু সুভাষ রায়। তার সম্বন্ধে শুধু এটুকু জানি যে সে নিরানব্বইটা খুন করেছে। দশ বছর আগে সে তার নিরানব্বই নম্বর খুন করতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, কিন্তু মানুষিক রোগী ভেবেই আদালত তাকে এইখানে পাঠায়। বয়স-45।

গাড়ি থেকে নামলাম mental asylum-এর সামনে। সিকিউরিটি গার্ড দরজা খুলে দিল। আমি ভেতরে গেলাম। সেখানে একজন আমাকে নিয়ে গেল সেখানকার হেড-অব-ডিপার্টমেন্ট মনে আবাসিক কমিশনরের কাছে।

কমিশনর মশাই একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক, এই প্রায় ষাটের কাছাকাছি। তিনি আমাকে বললেন, ‘আপনি সিরিয়াল কিলার নিয়ে গবেষণা করছেন, তাও আপনাকে স্পেশাল পারমিশন দেওয়া হচ্ছে ওর সঙ্গে দেখা করার। জেলের বাইরে দেখবেন নীচে একটা লাইন আঁকা রয়েছে। ওর কোনো কথায় ইনফ্লুন্সড হয়ে দয়া করে ওই লাইনটা ক্রস করবেন না। ও কিন্তু আজ পর্যন্ত নিজের একশো নম্বর ভিকটিমকে খুঁজছে। He may be really dangerous। তাই সাবধানে। বাইরে একজন অফিসার থাকবেন। কোনো বিষয় দরকার পড়লে ডেকে নেবেন।’

আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো তার কাছে। তার সেলটা বাইরে থেকে দেখার পর একটু অদ্ভুত লাগলো। সারা পাঁচিল জুড়ে সুদে একশো নম্বরটি নানান কায়দায় লেখা। তাছাড়া কোথাও কোথাও আঁকা রওয়েছে গিটার, আবার কোথাও আঁকা সিগার।

‘সুভাষ,’ আমার সঙ্গে যে অফিসারকে পাঠানো হয়েছিল সে বলে, ‘আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।’

শুনে সে এগিয়ে এলো। আমাকে সামনে রাখা একটা টেবিলে বসাতে দেওয়া হলো। অফিসার বেরিয়ে গেলেন।

‘বলুন কি বলবেন,’ সে আমায় বলে। তার চেহারা দেখে মনে হয় না যে সে জেলে থাকে। লম্বা-চওড়া, মুখে দাড়ির কোনো হদিস ছিল না, থাকলেও অন্ধকারে দেখা যাচ্ছিল না, আর মাথায় হালকা পাঁকা চুল।

আমি শুরু করলাম।

‘আপনার নামে নিরানব্বইখানা খুন করার অভিযোগ রয়েছে। কেন করতেন তাদের খুন?’

‘আমি একটা modernization revolution শুরু করতে চেয়েছিলাম। যারা মডার্ন, তারা থাকবে, যারা তা নয় তাদের বাঁচার অধিকার নেই।’

‘আপনি সাধারণত গরিব লোক, ভিকিরি, পুরোহিত এদেরকে নিশানা করতেন। কেন?’

একটু হেসে সে বললো, ‘এরা মডার্ন নয়। বিশেষ করে ওই পুরুত-ফুরুত গুলো। কুসংস্কারের ঢিপি সব কটা।’

‘গিটারের তার গলায় জড়িয়ে খুন করতেন। গিটার কেন চুস করলেন?’

‘গিটার ইজ এ মডার্ন ইন্সট্রুমেন্ট। তাই সেটাকেই বানিয়ে নিলাম এই revolution-এর হাতিয়ার।’

‘আপনি সেলের পাঁচিল একশো নম্বরটা লিখে রেখেছেন কেন?’

‘আসলে, এজ এ স্টুডেন্ট আমি পড়াশুনোয় খুব ভালো ছিলাম। ক্লাসে টপ করতাম। আই ওয়াস এ টপার অল মাই লাইফ। তাই ভাবলাম এইটা তেও টপ করবো। তাই একশোটা খুন করবো বলে ঠিক করি। কিন্তু উনফোর্চুনেটলি সেটা হলো না।’

‘আপনি প্রত্যেকটা ভিক্টিমের হাতে, বুকে, একটা লাইন লিখে দিতেন – ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না। মনে কি লাইনটার? আর কেন লিখতেন?’

‘ঝিনচ্যাক মানে হলো something very modern। আর মডার্ন মানুষ ছাড়া কেউ থাকবে না। তাই।’

আমাদের কথাবার্তা শেষ হলো।

সেখান থেকে বেরোতে যাবো যখন সে পেছন থেকে আমায় ডাকলো।

‘এখন কিন্তু আমি কোনো মোটিভে বিশ্বাস করি না। এখন একশো নম্বর খুনটার ভিক্টিম যে কেউ হতে পারে। আর আমি দেখতে পারছি এই লাইনের ওই পারে।’

‘আপনি এই দিকে দেখতে পারছেন, আমি অন্য কোনো দিকে দেখতে পারছি।’ আমি বললাম। বলে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।

(৩)

পরের দিন সক্কাল বেলা উঠে নর্থ বেঙ্গল হোটেলে বসে খবরের কাগজ দেখতে দেখতে হটাৎ শুনলাম টেলিফোনটা বেজে উঠলো।

‘আমি সেই mental asylum-এর আবাসিক কমিশনর বলছি। সুভাষ আত্মহত্যা করেছে।’

আমি সেখানে গিয়ে দেখলাম যে দরজার সামনে এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে রয়েছে। ডেড বডি তার থেকে চাদর সরানো হলো। দেখলাম মাথায় খোদাই করে লেখা ‘১০০’ আর হাতে খোদাই করে একটা লাইন লেখা:

ঝিনচ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না!