Read Family (SANGSAR) by Samir Sinha in Bengali Short Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

সংসার (SANGSAR)

সংসার

সমীর সিন্ হা

'জীবনের' এই মধ্য সময়ে এসে অনেক সময় মনে হয় এমন অনেক কিছুই আছে আমাদের সংসারে যা - বুঝতে পারিনি আবার অনেক কিছুই আছে - বুঝেছি কিংবা বোঝার চেষ্টা করেছি মাত্র সত্যি একটা কথা বলতেই হয় "জীবন সমুদ্রে এতখানি পথে কেবলমাত্র অভিজ্ঞতার কিছু নুড়ি - পাথর কুড়িয়েছি মাত্র, তাই বলতে দ্বিধা নেই 'জীবন' তুমি এখন আমার কাছে অধরা হয়েই আছো হয়তো বা বাকি 'জীবন' এই ভাবেই অধরা হয়েই থাকবে, তোমাকে আর তোমার 'সংসারকে' বোঝার ক্ষমতা সাধারনের নেই।

হয়তো ভাবছেন এ কথা হঠাৎ করে কেনই বা মনে হলো ! এর পিছনেও - এক সামাজিক 'কাহিনীর' প্রেক্ষাপট রয়েছে ।

'কাহিনীতে', সচ্ছল মধ্যবিত্ত এক পরিবার, মা-বাবার দুই ছেলেকে মাথা উঁচু করে তোলার ধনুক ভাঙ্গা পন, পরিনতি নিজেদের দাম্পত্য সুখে 'সমঝোতা' বা 'কাটতি', তা সে যাই ভাবুন না কেন ।

'বাড়ি' আছে তো আসবাবপত্র পর্যাপ্ত নেই, 'জলের ট্যাঙ্ক' আছে তো বেসিন নেই আর 'ঘোরার সখ' আছে তো খরচের টাকা পর্যাপ্ত নেই ফলে টানাপোড়েন পিসে মরে 'স্বামী- স্ত্রী' ।

কিন্তু এতে ছেলেদের বড়ো হওয়ার 'সপ্নের' কোন দিন আচ পড়ে নি আর তা উনারা কোন দিনই বুঝতেই দেয় নি ওদের ছেলেদের, 'আচার - আচরনের' মাধ্যমে ।

এবার একটু ফিরে দেখা যাক ওদের জীবনে।

আমাদের 'এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবার ভদ্রলোকের, এক সময় ক্ষমতা প্রতিপত্তিতে মোড়া থাকত এই 'পরিবার' এমন 'পরিবারে' কেউ কখনো ভাবেনি 'চাকরির' কথা কিন্তু উনি 'স্পোর্টস ম্যান' হিসাবে ওই অঞ্চলে এতই পরিচিত ছিলেন যে ঔই সময়ে 'স্পোর্টস কোটাতে' অনায়াসে স্থানীয় কলেজে চাকরিটা পেতে তেমন খুব একটা অসুবিধা হয় নি।

এই নিয়ে বাড়িতে চুড়ান্ত মনোমালিন্য হলেও উনি তেমন একটা আমল দেন নি, মন দিয়ে নিজের কাজে মনোনিবেশ করে জীবন তরী এগিয়ে নিয়ে চললেন ধীর গতিতে.....

সময় আপন গতিতে এগিয়ে চলল উনি নিজের পায়ে খানিকটা দাঁড়িয়ে বিয়ে করলেন ওনাদের এলাকার এক গ্রামের একান্নবর্তী পরিবারের সুন্দরী মেয়েকে-'উনাদের' পরিবারও এই অঞ্চলের প্রভাবশালী পরিবারও ছিল বটে এই ভাবে দেখতে দেখতে উনাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হলো আলালের ঘরে দুলাল বাবা মায়ের খুশির জোয়ারে বাঁধ ভাঙার উপক্রম হয় আর কি? তাই ওরা ঠিক করলেন 'ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করবেন' তা সে যে কোন পরিস্থিতিই হোক না কেন ।

শুরু হল, ওদের মানুষ গড়ার কাজ নিজেদের জীবন বঞ্চিত করে, এর মধ্যে পারিবারিক চাপানউতোরে উনাদের পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ বাটাওরা হয়ে যায় আর উনাদের ভাই বোনের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি হওয়ার কারনে নামমাত্র অংশ ভাগ বাটাওরা করে পেলেন নিজের অংশ হিসেবে, আর এক সাথে এক পরিবারের ছত্রছায়ায় থাকার যে স্বপ্ন উনি এতদিন ধরে দেখে এসে ছিলেন তার যবনিকা হলো জায়গাজমি ভাগের পর।

ঔই সময়ে সরকারি বেতন যৎসামান্যই ছিল তারই মধ্যে টাকা জমিয়ে উনি উনার 'স্বপ্নের 'তাজমহল' নিজেদের বাড়ি তৈরি করেন নাম রাখলেন 'শান্তির নীড়' এর সঙ্গে ছেলে মানুষের পথে বাধা না হয়ে সাথে যোগ্য সহযোগিতা পান উনার স্ত্রীর ।

এরই মাঝে, দেখতে না দেখতে অনেক গুলো বছর কেটে গেছে উনাদের ঘরে আর এক দুলালের আবির্ভাব হল তা সে এক যুগ পরে বাড়িতে খুশির জোয়ারে বন্যা বয়ে গেল আরও এক বার....

খুশি তো এল ঠিকই কিন্তু পরিস্থিতি মোটেও স্বাভাবিক ছিল না এখন দুই ছেলের খরচ সামাল দেওয়া রীতিমত হিমসিম হওয়ার যোগাড় তাতে করে দাম্পত্য জীবনের ছোট খাটো খুশীর 'গলা টিপে' রাখা ছাড়া কোন উপায় ছিল না, এইভাবে বেশ কয়েকটি বছর কেটে গেল ছেলেরা এখন প্রাপ্তবয়স্ক, বড়ো ছেলের পড়াশোনা শেষ হওয়ার প্রায় নামগন্ধ নেই - 'ডিগ্রি' থেকে 'মাস্টার্স ডিগ্রি' ইত্যাদি ইত্যাদি পড়ার কোন শেষ নেই তবুও আমাদের থামতে হয় এটাই স্বাভাবিক না হলে সময় কখন তোমায় ছেড়ে চলে যায় বোঝার উপায় নেই......

'বড় ছেলের' বড়ো হওয়ার জুনুনে বাবা মা বাধা দেয় না আর এই বলে মনকে শান্ত করে ছেলেতো কোন খারাপ কাজ করে না শুধু তো পড়াশোনা করে, এদিকে খেয়াল থাকে না শস্য ভান্ডারে শস্যাভাব দেখাদিচ্ছে দিন দিন প্রতিদিন তার প্রভাব ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগল 'ছোট ছেলের' উপর সবার অজান্তেই ।

এই ফাঁকে 'ছোট ছেলে' বাড়ির পরিস্থিতি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করে তাই চেষ্টা চালিয়ে যায় 'অসাধারণ' না হয়ে 'সাধারণ' হয়ে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়াতে, (বিশেষ করে একটা বিষয় সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায় বাড়ির ছোটরা খুব তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে যায় হঠাৎ করেই) পরিস্থিতির চাপে আর পড়াশোনার ফাঁকে চেষ্টা চালিয়ে যায় কি করে স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার করে টাকা বানিয়ে 'মা-বাবার' হাত বাটা যায় ।

হঠাৎ করে, ছোট ছেলে সুযোগ তৈরি করে ফেলে ঔই গ্রামেই পরিচিত কোন এক দাদার কর্মসূত্রে থাকা দিল্লিকে উপলক্ষ বানিয়ে,তাই 'গ্রাজুয়েট' হওয়ার পর আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বেরিয়ে পড়ল 'অজানার উদ্দেশ্য' জীবনের নুতন অধ্যায় তৈরি করার জন্য, বিদেশ বিভুইয়ে ।

'জীবনের' সিদ্ধান্ত সব সময় যে মনমাফিক হবে তার কোন মানে নেই সবসময়ই যে সফলতা সমানভাবে সাথে সাথি হবে তারই বা কি ভরসা ! তাই প্রতিদিনই যখন 'ইন্টারভিউর' 'রেজাল্ট 'নেগেটিভ আসতে থাকে তখন নিজের মনও সাথ দিতে চায় না আর হঠাৎ করে বাড়ি থেকে চলে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক না বেঠিক ! আরও মনকে বিচলিত করে তোলে, শেষ পর্যন্ত চাকরির সুযোগ এসে যায় যেন' 'মরা গাংএ' বান আসে আর বাবা মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, বেশ কিছু দিন সবাই খুব খুশি, খুশিই ছিল হঠাৎ আচমকা একটা খবর জীবনের সমস্ত মানে বদলে দিল ওদের 'বাবা' আর ওদের মাঝে নেই উনি সবাইকে ফাঁকি দিয়ে 'অনন্তলোকে চলেগেছেন। শেষের কয়েকটি দিন উনার শারীরিক অবনতি হতে দেখা যায় ।

শেষ সময়ে, ছোট ছেলেকে কাছে পাননি উনাদের' বাবা' সেটাই সব থেকে দুঃখের একথা শেষ সময়ে 'স্ত্রী' কে বলে গিয়েছিলেন।

আমারা সবাই এ কথা ভালো ভাবেই জানি, এই সংসারে' 'মৃত্যুই' এক চরম সত্য আর বাদবাকি সব কিছুই মিথ্যে তবু কি মন মানে 'বাবা' আর 'মা' কে নিয়েই ছোট ছেলের জগৎ সেখানে একজনের অভাব কোনদিনই পূর্ন হবে না তাই সমস্ত সামাজিক রীতি নিতি মেনে, যদিও 'স্যার স্টিফেন হকিন্স' - এর মতে "যে একবার সংসার ছেড়ে চলে যায় তার আর কোন ধরনের সম্পর্ক থাকে না এই সংসারে সে তুমি সামাজিক রীতি রেওয়াজ মান কিংবা না মানো",

আমাদের মতো সাধারণ মানুষজনেরা কেবলমাত্র সপ্ন নিয়ে বাঁচতে পচ্ছন্দ করে ফলে অতীত থেকে ভবিষ্যতের আঙিনায় ওদের অনেক কাহিনী তৈরি হয়ে যায় ।

সময়ই হলো জখমের সেরা প্রলেপ 'ছোট ছেলের' জীবনে 'মা' আর 'দাদাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গেল নুতন ভাবে একটা' 'দাদা'র চাকরি আর ঘরে নুতন 'লক্ষীর' আবির্ভাব যেখানে পরিবারকে নুতন ভাবে' 'অস্কিজেন' যোগাতে পারে, কথায় বলে- 'মানুষ ভাবে এক বিধাতা করে আর এক' ।

দাদার চাকরিটা পেতে না পেতে হঠাৎ করে এক ঝড় বৃষ্টি ভেজা রাতে মার শরীর ভীষণ খারাপ হলো শহরের নামি হাসপাতালে ভর্তি হলেন, চিকিৎসা করে জানা গেল কঠিন অসুখ ভালো করে ইনভেস্টিকেশান না করে বলা যাবে না ঠিক কি হয়েছে? ব্যাপারটা খুব একটা সুবিধা লাগে নি ছোট ছেলের আর এরই ফাঁকে অন্য দিকে দাদার জোর কদমে মেয়ে দেখা চলছিল কারনটা খুবই স্বাভাবিক বয়সটা তো থেমে থাকে না কারোর জন্য ।

'মাকে' নিয়ে ছেলে পৌঁছে গেল 'দিল্লি' নিজের কাজের ফাঁকে সমান তালে চলছিল চিকিৎসার নোখঝোক হঠাৎ রিপোর্টে ধরা পড়লো মারক রোগ 'ক্যান্সার', রিপোর্টা নিয়ে প্রথমে বিশ্বাসই হয় নি কিন্তু বাস্তব সে যে বড্ড কঠীন ও কঠোর 'বাবা' চলে যাওয়ার পর এতো বড় ঘটনা কখনো ওরা ভাবেই নি? কি হবে 'মা' এর পরিনতি, কি ভাবে 'মা' কে বাঁচাবে? কি হবে ওদের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি ইত্যাদি নানান প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে।

অবশেষে ডাক্তারদের পরামর্শে স্থির হয় 'অপারেশন' করা জরুরি কিন্তু এই 'অপারেশন' কোন সাধারন 'অপারেশন' নয় কঠীন 'অপারেশন' ব্যায়বাহুল্য তো বটেই, ঝুঁকি ও অনেকখানি, সে যাই হোক নিদিষ্ট সময়মত 'অপারেশনের' সময় এল এই বিদেশ বিভুইয়ে সমস্ত কিছু যোগাড় করাই এক বিশাল ব্যাপার, বন্ধু বান্ধবদের সহযোগিতায় সবকিছুই যোগাড় হয়ে গিয়েছিল সময় মত অবশেষে 'সাত - আট' ঘণ্টার কঠিন পরিশ্রমের পরিনতি ডাক্তাররা 'অপারেশন-থিয়েটারের' বাইরে বেরিয়ে এসে জানালো 'অপারেশন-'সাকসেসফুল' এখন পর্যন্ত সবকিছুই ঠিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানা নেই ???

মনের মধ্যে তৎক্ষণাৎ যেন আশার সুনামি এলো বলে মনে হলো নুতন করে বাঁচার আনন্দে মন ভরে উঠলো !

অবশেষে, ডাক্তারদের পরামর্শে ছেলে 'মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এল, অত বড় অসুখের ধাক্কাটা সহজে সামলানো এক কথায় অসাধ্য সাধন কাজ তবু তো সব কিছু নিজেদের মানিয়ে নিতে হয় সময়ের' 'সাথে সাথে' এটাই সত্য ঠিক যেমন করে ওদের 'মাকে' বাকি জীবনটা জোড়া তালি দিয়েই মোকাবিলা করতে হবে নুতন সময়ে সঙ্গে ।

অন্যদিকে, বড় ছেলের পছন্দের মেয়ে বিয়ের জন্য ঠিক হলো, মা উনার সাধ্য মতো সমস্ত আয়োজন সম্পন্য করে ঘরে বউ নিয়ে এলেন 'এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে' - আমারই ঘরে থেকো আলো করে', ভেবেছিলেন শরীরের অসুস্থতা ভুলে যাবেন মানসিক শান্তিতে আবার শুরু করবেন জীবনের নুতন 'ইংনিস' - ঔ যে কথায় বলে না 'মানুষ ভাবে এক বাস্তবিকতায় হয় আরেক' -কিছুদিন না যেতেই উনার কাছে 'মা-লক্ষ্মীর' উপমার মানেটাই বদলে গেল দিন দিন প্রতিদিন সাংসারিক বিপ্লবে প্রান প্রায় 'ওষ্ঠাগত', 'শান্তির-আশ্রমে' অশান্তির যেন গৃহ প্রবেশ ঘটে যায়, পরিনতি, - শারীরিক ও মানসিক অবসাদে উনার মন 'কানায় কানায়' পরিপূর্ণতা পায় অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে, উনার বার বার মনে হয় কোথায় যেন একটা বড় ভুল উনি করে ফেলেন নিজের অজান্তেই যার মাসুল উনাকে কড়ায় গন্ডায় দিতে হচ্ছে 'মা-লক্ষ্মীর' আবির্ভাবর মাধ্যমে।

নিজেদের হাতে তৈরি সংসারে যেখানে প্রতিটি অংশ উনার হঠাৎ করে নিজের ছেলে কেমন যেন বদলে যায় 'লক্ষীর' আবির্ভাবে উনার যেন বিশ্বাসই হয় না যার স্বপ্ন পূরণের জন্য দিনের পর দিন উনাদের হাজারো স্বপ্নের বলিদান আর যার সাফল্যের কামনায় দিনকে দিন যাদের অমূল্য সম্পদের বলিদান সেই কিনা অকপটে উনাকে জবাব দিল এই বলে :

-'একটু অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে পারো না সব সময় ক্যাচ ক্যাচ কর, সারাদিন অফিস করে এসেছি একটু শান্তিতে চা খেতে দাও !

- আর ও যা, করছে করতে দাও' ???

'ছোট-ছেলে' বাড়ির পরিস্থিতি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করে উভয় ধর্ম সংকট নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে ওদের 'মা' এতটাই বিচক্ষণ, যে কোন পরিস্থিতিতেই কোন সাংসারিক সমস্যার কথা ছোট ছেলেকে জানান দেন না যাতে কিনা সাংসারিক সন্তুলন খারাপ না হয়ে যায় এই ভেবে ।

এ কথা সবারই জানা 'ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুর অন্তরে' আজ যে নবীন কাল সে প্রবীণ হবে তুমি যা যা করবে এই সংসারে ঠিক তেমনি তুমি ফেরত পেয়ে যাবে এই সংসার থেকে কিন্তু এই সব কথা জেনেও 'মানুষ' যে কি মোহে সেই কাজই পরোক্ষে ভাবে করে বসে যার জন্য জীবন ভর পশ্চাতাপ, অনুশোচনা করতে হয় কিন্তু সেই মুহূর্ত, সেই ঘটনা আর কোন দিন দুই বার ফিরে আসে না আর।

কিন্তু ঔযে বলে না মানুষের আবেগ, অনুভূতি সবই নিয়ন্ত্রণ করে 'হরমোন' তাই এসবই ওরই খেলা কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আমাদের, - সেটাই আজ আমরা হারিয়ে ফেলেছি ।

'ছোট ছেলে' বাড়ির এই পরিস্থিতি কি ভাবে সামাল দেবে বুঝে উঠতে পারে না তাই একবার নিজের কাছে এক বার বাড়ি 'মা' নিয়ে যাওয়া আসা করতে থাকে এই ভেবে কখনো না কখনো ভারসাম্য তৈরি করা যাবে, কিন্তু খুব একটা দিন যেতে না যেতেই মা এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুরু হয়ে যায় ।

'মা-লক্ষ্মীর' আচরণ 'মা' - এর বুঝতে বেশি সময় লাগে না উনি লক্ষ্য করেন ছেলে বাড়িতে থাকলে বউমার এক রকম রুপ আর বাড়ির বাইরে অন্য রুপ সহজেই যে কোন লোক অতি সহজেই ধোকা খেয়ে যেতে বাধ্য যে রকমটা উনি খেয়ে আসছেন দিন দিন প্রতিদিনই তা সে সামাজিক হোক কিংবা পারিবারিক হোক নিজেদের হাতে বানানো সংসারের এই রকম দৈন্যদশা উনার পক্ষে আর সহ্য হবার কথা নয়।

তাই উনি সবার অজান্তেই 'ভগবানের' আর উনার 'স্বর্গবাসী স্বামীর' কাছে প্রার্থনা করে চলতেন, 'আর ভালো লাগছে না এবার একটু শান্তি চাই আর তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শুতে চাই, আমাকে আর এখানে এমন ভাবে একা ফেলে রেখে চলে যেও না'।

উনার 'ছোট-ছেলে' খুব ছোট্ট বয়স থেকেই বড়ো হয়ে যায়,

ওর পারিপার্শ্বিক অবস্থা ওকে বড় হতে সাহায্য করে 'মা' কে নিয়ে তীর্থ স্থানে যায় সাধারণত সবাই কিন্তু 'মাকে নিয়ে একটার পর একটা হসপিটাল শুধু একটু সুস্থ দেখার আসায়, একটু শান্তি পাওয়ার আশায় এ ঘটনা বিরল ।

কিছু দিনের মধ্যেই উনার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শুরু হলো ও দিকে 'মা-লক্ষ্মীর' তেমন কোন পরিবর্তন দেখা গেল না যেমনটা ছিল আগে এখনও তেমনি আজকাল মানুষের যে ঠিক কি চাই তার বোঝার ক্ষমতা স্বয়ং ভগবানের কাছেও অধরা, আমরা কোন ছার !

ধীরে ধীরে `ক্যান্সার' তার করাল থাবা বসিয়ে দেয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে উনার শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে অনেকদিন ডাক্তার আর ঔষধের টানাপোড়ন চলতে থাকে এমতো অবস্থায়ও বউমার কোনরূপ পরিবর্তন চোখে পড়ে না কাউকে আপনজন ভাবলেই তবেই না মনপ্রান খারাপ হয় আর এর জন্য বোধহয় কোন রক্তের সম্পর্কের প্রয়োজন হয়, অগ্যতা অবশেষে একদিন ভোরের 'সূর্য উঠার আগেই উনার' 'প্রান ভোমরা' শরীর থেকে বেরিয়ে দুর দিগন্তের পথে পাড়ি দেয় দুই ছেলেকে ফেলে রেখে আর বোধহয় উনার শেষ ইচ্ছা স্বামী কাছে পৌঁছে যাওয়া - 'অনন্তলোকে' পূর্ণ হল ।

পাড়াপ্রতিবেশীদের মধ্যে খুব নাম ডাক ছিল উনার ভালো মানুষ হিসেবে 'শশ্মানঘাটে' মানুষের ভিড়ই এর প্রমাণ একটা কথা বার বার এই সময়ে মনে হচ্ছে :

'দড়ির উপর দাঁড়িয়ে ভারসাম্য রাখার নাম সার্কাস আর অশান্তি উপর বেঁচে শান্ত থাকার নাম হলো সংসার' ।

এরপর বেশ কয়েকটি বছর আমার কাজে আমি এতখানিই ব্যাস্ত হয়ে পড়ি যে পরিচিত কারও কোন খবর নেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি সময় সব কিছু ভুলিয়ে দেয়, 'কিছু মানুষ জন', কিছু পরিবারের লোককথা, কিছু সাংসারিক কথা স্মৃতির মধ্যে ঘোরাফেরা করে আর মনকে ভাবায় এই যা ।।

===========সমাপ্ত ===========