ভাগ্গিস তখন ফেসবুক ছিলোনা
বছর ৩০ আগেকার ঘটনা । আমার বোনের বিয়ের দিন । গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে সকাল বেলায় । আমার মাসীরা, পিসিরা, মামাতো, মাসতুতো, পিসতুতো দিদিরা, বৌদিরা, বোনেরা আর পাড়ার কিছু ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী মহিলারা সব হলুদ খেলছে । পুরোটাই মেয়েদের ব্যাপার ।
আমি বিয়ে বাড়ির কাজ নিয়ে দৌড়োছি এদিক ওদিক।
হলুদ খেলার জায়গাটা দিয়ে যাবার সময় দিদি , বৌদিরা আমায় ধরলো, হলুদ মাখাবে বলে । আমি বললাম, না গো আমায় হলুদ লাগিও না, আমায় এখুনি যেতে হবে ছেলের বাড়ি তত্ব নিয়ে। কয়েকজন বৌদি ঝামেলা করছিলো, না আজ তো হলুদ লাগাতেই হবে, এরপর তো তোর বিয়ে দেবো । আমি ওদের ম্যানেজ করে কেটে বেরিয়ে এসেছি হলুদ খেলার জায়গাটা থেকে ।
হটাৎ দেখি পেছন থেকে একজন মহিলা আমাকে জাপটে ধরেছে । ঘুরে দেখি আমাদের প্রতিবেশী এক মাঝবয়সী বৌদি । বলছে, ধরেছি আমি, তোমরা এসো হলুদ লাগাও।
আমি হাঁসতে হাঁসতে ওর হাত ছাড়াতে গিয়ে দেখি, পেছন থেকে এমন ভাবে ধরেছে, যে আমার হাত দুটো শুদ্ধু জড়িয়ে ধরেছে । আমার আসলে একটু ছোটখাটো চেহারা, ৫ ফুট 3 ইঞ্চি লম্বা, আর রোগা পাতলা গঠন, এই ৫৫ কিলো মতো ওজন । আর এই বৌদি, একটু হৃষ্টপুষ্ট, ৭৫ কিলোর বেশিই ওজন হবে । আবার লম্বাও ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি মতন।
বৌদি যেহেতু আমার চেয়ে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি লম্বা, আর ওর ভারী শরীরটা আমার রোগা দেহের চেয়ে বেশ চওড়া, ওই বৌদির মোটা মোটা হাত দুটো, আমাকে পুরো আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। আমার হাত দুটো বৌদির হাতের তলায় এমনভাবে চেপে গেছে, যে আমি হাত ব্যবহার করতেই পারছিনা । আমি তখন পিঠ দিয়ে পেছনে ঠেলতে চেষ্টা করলাম বৌদিকে। কিন্তু আমার ওজন যেখানে ৫৫ কিলো মতন, ওই বৌদির ৭৫ কিলো তো হবেই । নড়াতেই পারলাম না ওকে । মাঝখান থেকে আমার পা দুটো এগিয়ে গিয়ে, আমি আরো নিচের দিকে নেমে গেলাম। মানে, তখন আমার মাথার উপরটা বৌদির গলার কাছে। ও তখন আমার চেয়ে এক ফুটের কাছাকাছি লম্বা লাগছে।
আমার কাছে তখন এটা একটা প্রেস্টিজের লড়াই হয়ে গেছে । একজন ৩২ বছরের প্রাপ্তবয়স্ক জোয়ান পুরুষ বনাম একজন ৪৫ বছরের মধ্যবয়স্কা মহিলার লড়াই ।
দর্শক , প্রায় ২৫ জন নানা বয়সের মেয়ে আর মহিলা সবাই ওই বৌদিকেই উৎসাহ দিচ্ছে তখন। আমি যদি হেরে যাই, আজ তাহলে সমগ্র পুরুষ জাতির লজ্জা । একজন মধ্যবয়সী মহিলার কাছে হেরে যাবো ? সেটা তো আরো লজ্জার । ৩২ বছরের জোয়ান পুরুষ হয়ে, ৪৫ বছরের এক মাঝ বয়সী মহিলার কাছে গায়ের জোরে হেরে যাওয়া।
এইসব যখন ভেবে মনের জোর বাড়াবার চেষ্টা করছি, তখন দেখছি আমার পা দুটো বৌদিকে পিঠ দিয়ে ঠেলতে গিয়ে এগিয়ে যাওয়াতে, আমার পায়ের ব্যালান্স আর নেই। ওই বৌদিই পেছন থেকে একরকম আমাকে ধরেই রেখেছে, ছেড়ে দিলে আমি পরেই যাবো।
আমার মাসতুতো, মামাতো দিদি, বৌদির দল তখন চিৎকার করে যাচ্ছে, ওকে এখানে নিয়ে এসো। আসলে ওই বৌদি যে জায়গাটায় আমাকে ধরেছে, সেটা প্রায় ১৫ ফুট দূরে হলুদ খেলার জায়গাটা থেকে। সেখানে বিয়ে বাড়ির কার্পেট পাতা হয়ে গেছে, তাই সেখানে ওরা হলুদ নিয়ে আসতে পারছে না ।
সেটা যখন বুঝতে পারলাম, তখন মনে একটু সাহস এলো । বৌদি আমাকে বেকায়দায় ধরে থাকলেও, আমাকে ওই ১৫ ফুট নিয়ে যেতে পারবেনা। কারণ আমার দেহটা নিচের দিকে নেমে যাওয়াতে, বৌদি আমাকে ঠেলে নিয়ে যেতেও পারছেনা ।
তাই, এই লড়াইটা হয়তো আমি জিততে পারবোনা, কিন্ত বৌদিও জিতবে না। বৌদিকে আমায় ছেড়ে দিতেই হবে।
যে রকম ভেবেছি, তাই হলো । দেখি বৌদি হাত দিয়ে যে চেপে জড়িয়ে ধরে ছিলো, সেটা আলগা করছে, আর ওর নিজের দেহের ঠেকা দিয়ে আমাকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করছে। যখন সোজা হয়ে দাঁড়ালাম, বৌদি তখন আমাকে পুরো ছেড়েই দিলো ।
আমি বৌদির দিকে মুখোমুখি ঘুরে দাঁড়ালাম । দেখি বৌদি আমায় দিকে চেয়ে মিটি মিটি হাঁসছে। যেহেতু ও আমার চেয়ে ৫ লম্বা ইঞ্চি, একদম মুখোমুখি হওয়াতে, বৌদি আমার দিকে বেশ কিছুটা মুখ নামিয়েই দেখছে।
আমি বললাম, সত্যি বৌদি, তোমার এই বয়সেও এতো গায়ের জোর ।
বৌদি করলো কি, পলকের মধ্যে নিচু হয়ে, একটা হাত আমার হাঁটু দুটোর পেছনে ধরলো । আর একটা হাত, আমার পিঠের তলায় দিয়ে দিলো । দিয়ে আমাকে নিয়ে পাঁজাকোলা করে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমি তখন বৌদির কোলে বাচ্ছা ছেলের মতো শুয়ে হওয়ায় ভাসছি।
ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো, যে আমি পড়ে যাবার ভয় পেয়ে বৌদির গলাটা দুহাতে জড়িয়ে ধরেছি ।
শুনতে পাচ্ছি , সবাই এই দৃশ্য দেখে হইহই করে হাততালি দিয়ে হেঁসে উঠলো। মুখ তুলে দেখি বৌদি মুখ নিচু করে, আমার দিকে চেয়ে হাঁসছে। তারপর আস্তে আস্তে আমার মাথার পেছনটা ধরে, আমার মুখটা নিজের মুখের তলায় উঠিয়ে নিলো। নিয়ে আমার কপালে বড় করে একটা চুমু খেলো আওয়াজ করে। যেনো আমার কপালে নিজের বিজয় চিহ্ন এঁকে দিলো ।
তারপর আমাকে কোলে আস্তে করে দোল দিতে দিতে খুব ধীরে হেঁটে হলুদ খেলার জায়গাটার দিকে এগিয়ে গেলো ।
আমি তখন আর লড়াইয়ের কোনো চেষ্টা করার অবস্থাতেই নেই। পুরোপুরি পরাজয় মেনে নিয়েছি । কিন্তূ লজ্জায় আর কোনো দিদি, বৌদিদের দিকে দেখতে পারছিনা। বৌদির গলা জড়িয়ে, বৌদির বুকের মধ্যে আমার মুখ গুঁজে দিয়েছি । চারিদিকে তখন শুধু মেয়েদের হাঁসির রোল আর হাততালি । এক মধ্য বয়সী মহিলার কোলে এক প্রাপ্তবয়স্ক জোয়ান পুরুষ বন্দি। মেয়েরা উৎসব তো করবেই ।
তখন সবাই হলুদ নিয়ে এগিয়ে এলো । বৌদি আর আমায় কোল থেকে নামায়নি । বৌদির কোলে শুইয়েই আমাকে সবাই মুখে গায়ে হাতে হলুদে ভর্তি করে দিলো।
কি অসম এক মজার লড়াই হলো । ৪৫ বছরের মধ্যবয়স্কা এক মহিলা, ৩২ বছরের জোয়ান এক পুরুষকে, প্ৰথমে গায়ের জোরে চেপে ধরে রেখে নাস্তানাবুদ করে, পরে পাঁজাকোলা করে তুলে, একঘর মেয়েদের সামনে জোর করে চুমু খেয়ে , প্রায় ১০-১৫ মিনিট কোলে তুলে বন্দি করে রাখলো।
ভাগ্যিস তখন স্মার্টফোন আর ফেসবুক ছিলো না ।