Punjabi Landlady - 1 books and stories free download online pdf in Bengali

পাঞ্জাবি বাড়িউলি - 1


সবে সবে আমার চন্ডিগড় ট্রান্সফার হয়েছে । একটা প্রমোশন ও পেয়েছি। আমি এখন ডেপুটি ম্যানেজার। আমাদের কোম্পানি বেশ নামকরা । ইলেকট্রিক্যাল আর ইলেকট্রনিক অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারিং আর মার্কেটিং করে আমাদের কোম্পানি । আমি কাস্টমার সাপোর্ট ডিপার্টমেন্টটার ইনচার্জ । ( কিছু কিছু কথার আর বাংলা তর্জমা করলাম না। এইগুলো ইংলিশে বলা আর শোনা আমাদের দৈনন্দিন কথোপকথনের অঙ্গ হয়ে গেছে। )


আমি ব্যাচেলর , 36 বছর বয়স। বাবা , মা বিয়ের কথা বলতে বলতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর বলেন না । বাবা রিটায়ার করেছেন, মা গৃহবধূ । ওরা কলকাতায় থাকেন আমাদের আদি বাড়িতে। ছোটো বোনের কাছাকাছিই বিয়ে হয়েছে। সেই দেখাশোনা করবে বাবা, মাকে। আসলে ট্রান্সফার না নিলে প্রমোশন দিচ্ছিলো না কোম্পানি। তাই অগত্যা নিতে হলো।


চন্ডিগড় ভীষণ সুন্দর সহর। এখানে অফিসের গেস্ট হাউসে উঠেছি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করতে হবে। নতুন অফিস জয়েন করে গেছি কয়েকদিন হল। আজ রবিবার, তাই প্রপার্টি এজেন্টের সঙ্গে ফ্ল্যাট দেখতে বেড়িয়েছি সকাল থেকে। পাঁচটা ফ্ল্যাট দেখা হয়ে গেছে। একটাও পছন্দ করতে পারলাম না এখনও। দুটো পছন্দ হয়েছিলো। কিন্তু অনেক ভাড়া চাইলো। অত বাজেট আমার নেই । আর একটা ফ্ল্যাট দেখাবে বললো এজেন্ট ভদ্রলোক। কিন্তু উনি থাকতে পারবেন না। কি একটা ফ্যামিলি ফাংশন আছে, চলে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। বললেন বারিউলির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েই চলে যাবেন। তবে বললেন যে এখানে হওয়া মুস্কিল আছে। বাড়িউলি ভদ্রমহিলা নাকি একটু খুঁতখুঁতে ধরনের। অনেক বাদবিচার করেন। নিজেই সব ভাড়াটেদের বাতিল করে দেন ।


যাইহোক বাড়িউলি ভদ্রমহিলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এজেন্ট চলে গেলো। এক মধ্যবয়স্কা লম্বা চওড়া পাঞ্জাবি ভদ্রমহিলা । মুখে হাঁসি নেই । গম্ভীর ভাবে বললেন, "আগে ফ্ল্যাটটা ঘুরে দেখে আসুন। আপনার পছন্দ হলে, বসে কথা বলবো।"


এক নেপালি দরোয়ান আর তার বউ কাছাকাছিই ছিলো । তাদের বললেন আমায় ওপরের তলায় ফ্ল্যাটটা দেখিয়ে দিতে।


অসাধারণ সুন্দর বাংলো। দোতলা । গেট দিয়ে ঢুকে গাড়ি রাখার জায়গা। সামনে একটু ছোট বাগান করা। বাঁ দিকের প্যাসেজে একটা গাড়ি আর একটা স্কুটার রাখা দেখলাম। নিচের তলায় ভদ্রমহিলা থাকেন । দোতলাটা ভাড়া দেবেন। আলাদা সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে। ওপরে একটা বেডরুম, বেশ বড়ই। একটা দেওয়াল জুড়ে উঁচু সিলিং পর্যন্ত ক্যাবিনেট করা । বেডরুমের সঙ্গে লাগোয়া একটা ব্যালকনি। সরু, লম্বা মতন। ব্যালকনি থেকে বাড়ির পেছনের মস্ত বড় লন দেখা যাচ্ছে। বেশ কিছু গাছ আছে। সবুজ গালিচা । বেডরুমের সঙ্গে এটাচড বাথরুম। এ ছাড়া একটা বেশ বড় ড্রইং কাম ডাইনিং রুম । আরো একটা ঘর, সেটা দ্বিতীয় বেডরুম কিংবা স্টাডি যে কোনো ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর আছে কিচেন । সেটা পুরোপুরি ক্যাবিনেট করা। গ্যাস, মাইক্রোওয়েভ, ফ্রিজ সমস্ত কিছুই আছে। আরো একটা বাথরুম ও আছে। বলা হয়নি, প্রতিটা ঘরেই পুরো ফার্নিচার দেওয়া। মানে, খাট, বিছানা, সোফা সেট, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার ; বাথরুমে geyser, ওয়াশিং মেশিন, সবই আছে । আর প্রতিটা ঘরেই কিছু না কিছু দেওয়ালে স্টোরেজ তাক বানানো আছে। আর সবচেয়ে যেটা আকর্ষণীয় সেটা হচ্ছে একটা বেশ বড় ব্যালকনি, যেটা বাড়ির সামনে দোতলায় রাস্তার দিকে মুখ করে। সামনের রাস্তাটা বেশি চওড়া নয়। আর রাস্তার ঠিক ওপারেই এক বিশাল বড় জগিং পার্ক। সবুজে সবুজ । বিকেল বেলার এই পড়ন্ত আলোয় এই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।


আমার তো ভীষণ ভীষণ পছন্দ হয়েছে ফ্ল্যাটটা। যদিও আমার একার পক্ষে বেশ বড়ই। তারওপর পুরো ফার্নিশড বলে ভাড়া তো বেশ বেশীই হবে।


যাই, কথা বলে দেখি, বাড়িউলি কত ভাড়া বলেন । নিচে ভদ্রমহিলা ওনার ড্রইং রুমে অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে একটা সোফায় বসতে বললেন । নেপালি কাজের মেয়েটা জল দিয়ে গেলো। ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করলেন, "পছন্দ হয়েছে ?"


আমি হেঁসে বললাম, "আপনার বাংলোটা তো ভীষণ সুন্দর। পছন্দ তো নিশ্চই হয়েছে। ভাড়াটা যদি বলেন ? "


ভদ্রমহিলা এখনও হাঁসেননি । বললেন, "ভাড়া বলবো। আগে আমার কিছু জানার আছে আপনার সমন্ধে। সেগুলো জেনে নিই । আপনার নাম তো জেনেছি, সুমিত বললেন তো ? আর কলকাতায় বাড়ি । আমার প্রশ্ন গুলো বলে যাচ্ছি। এক এক করে উত্তর দিন ।

আপনি এখানে কোন কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে এসেছেন ? কি কাজের দায়িত্ব আপনার ? আপনার ভাড়া কি কোম্পানি দেবে না আপনি নিজে দেবেন ?"


আমি আমার কোম্পানির নাম, আমার designation জানালাম। আমার ভিজিটিং কার্ড একটা দিলাম । বললাম, ভাড়া আমিই দেবো, কোম্পানি নয়।


এরপর ভদ্রমহিলা প্রশ্ন করলেন, "আপনি তো অবিবাহিত বলেছেন। তা বিয়ে করার কি প্ল্যান আছে এখন ? মানে এখানে কি বউ নিয়ে থাকবেন ? না মা, বাবা কে নিয়ে থাকবেন ?"


বললাম, "না বিয়ে বোধহয় আর করবো না। বাবা, মাও বলে বলে এখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন। একাই থাকবো এখানে। বাবা, মা কলকাতার বাড়ি ছেড়ে আসতে চান না। হয়তো কয়েকদিনের জন্য ঘুরতে আসতে পারেন মাঝে মাঝে ।"


ভদ্রমহিলার প্রশ্ন তখনও শেষ হয়নি , "আচ্ছা একা একা থাকবেন তো আপনার রান্না কি নিজেই করবেন ? না রান্নার লোক রাখবেন ?"


আমি বললাম, "না আমি রান্না করতে পারিনা । আমি তো পেয়িং গেস্ট অ্যাকমোডেশন খুঁজছিলাম । আপনার এখানে বোধহয় সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনার জায়গাটা আমার ভীষণ পছন্দ হয়ে গেছে। তাই এখানে পেয়ে গেলে কোনো রান্নার লোক রাখতে হবে।"


ভদ্রমহিলার ইন্টারভিউ এখনও বাকি। বললেন, "আচ্ছা আপনি কি খুব পার্টি টার্টি করেন ? মানে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গান চালিয়ে হই হুল্লোড় করতে ভালো বাসেন ?"


আমি মুচকি হেঁসে বললাম, " একদমই না। বরঞ্চ তার উলটো। আমি খুব ইন্ট্রোভার্ট, বেশি বন্ধু টন্ধু করতে পারি না। আর পার্টিতে তো আমি যেতেই পছন্দ করি না। আমার নিজের বাড়িতে পার্টি করা তো দূরের ব্যাপার ।

হ্যাঁ, গান শুনতে ভালো বাসি। তবে একা একা শুনি, তাও বেশি জোরে নয় ।"


ভদ্রমহিলা দেখলাম, এতক্ষনে একটু মুচকি হাসলেন। কাজের মেয়েটিকে ডেকে চা আনতে বললেন । তারপর আমার দিকে চেয়ে বললেন, "দেখুন আমি একটু শান্তিতে থাকতে ভালোবাসি। তাই আমি চাইনা বাড়িতে হৈ হুল্লোড় হোক। যে সব লোক ভাড়া নিতে আসে, তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি , তারা ফ্যামিলি, বাচ্ছা কাচ্ছা নিয়ে, বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করার কথা বলে । দুষ্টু ছেলেরা বল খেলে আমার বাগান নষ্ট করে দেবে। আমি এইসব পছন্দ করি না।

আপনি বললেন যে একা থাকবেন , বিয়ে করবেন না, ইন্ট্রোভার্ট , বন্ধুদের নিয়ে পার্টি করবেন না …এইরকমই আমি খুঁজছিলাম। বাবা, মা এসে থাকলে কোনো অসুবিধে নেই, তারা তো বয়স্ক মানুষ। শান্তির ব্যাঘাত ঘটবে না। আমি আপনাকে ভাড়া দিতে রাজি আছি ।"


আমি তো মনে মনে খুবই খুশি। যেনো কোনো বড় ইন্টারভিউ পাস করেছি। কিন্তু এখনও জানি যে ভাড়াটা আমার নাগালের বাইরে হতেই পারে। একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলাম, "আমার ভয় হচ্ছে, আপনার এত সুন্দর ফ্ল্যাট আমার বাজেটে বোধহয় হবে না ।"


ভদ্রমহিলা বললেন, " আপনার বাজেট কত ?" আমি বললাম ।


উনি কিছুক্ষন চুপ করে থাকলেন । কিছু চিন্তা করে বললেন, "দেখুন, আমি আরেকটু বেশীই এক্সপেক্ট করেছিলাম । কিন্তু কি জানেন, এই কয়েক মাসে অনেক ভাড়াটের সঙ্গে কথা বললাম। অনেকেই আমার পছন্দ মতো ভাড়া দিতে প্রস্তুত। কিন্তু আমার তাদের পছন্দ হয়নি। আসলে, টাকাটা আমার কাছে বড় ব্যাপার নয়। আমার যা আয় হয়, তাতে আমার ভালোভাবেই চলে যায় । আমি শুধু চাইছিলাম আমার মনের মত একজনকে ভাড়া দিতে। এত মাস পরে আপনার মধ্যেই আমি যে রকমটা চাইছিলাম, সেই সব গুণ পাচ্ছি । তাই আমি আপনার প্রস্তাবিত ভাড়াতেই রাজি।"


আমি তো যেনো নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তবুও ভয় ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, " অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম। আর অন্য কিছু ? মানে সিকিউরিটি ডিপোজিট কিংবা অ্যাডভান্স ? আর কন্ট্রাক্ট ?"


উনি বললেন, "হ্যাঁ কন্ট্রাক্ট তো একটা সই করতে হবে। তেমন কিছু নেই তাতে। আমার বানানোই আছে অ্যাডভোকেট দিয়ে। আপনাকে কপি দিয়ে দিচ্ছি, দেখে নিয়ে জানাবেন । এগারো মাসের কন্ট্রাক্ট কিন্তু। তারপর আবার রিনিউ হবে।

আর সিকিউরিটি ডিপোজিট আপনার জন্য লাগবে না। শুধু প্রথমে দু মাসের ভাড়া দিয়ে দেবেন । শেষে ছাড়ার সময় অ্যাডজাস্ট করে দেবো। আর প্রতি মাসে 7 তারিখের মধ্যে ভাড়া দিয়ে দেবেন।"


আমি বললাম, " আর কবে থেকে আসতে পারবো ? এ মাসে তো দশ দিন হয়েই গেছে। আমি কিন্তু অফিসের গেস্ট হাউসে বেশিদিন থাকতে পারবো না । "


ভদ্রমহিলা বললেন, "আপনি চান তো আজকেই চলে আসতে পারেন আপনার জিনিস পত্র নিয়ে। এগ্রিমেন্ট সই তো আসার পরেও করতে পারেন ।"


আমি তো ভীষণ খুশি। বললাম, "আজ অফিস নেই, রবিবার। আর তাছাড়া আজ আমি গাড়ি ভাড়া করেই সারাদিন ঘুরছি। এখন সাড়ে চারটে বাজে । আমার অফিসের গেস্ট হাউস সেক্টর 22 তে। কাছেই। আমি এক ঘণ্টার মধ্যেই চলে আসছি, ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে। আপনি চেক পেমেন্ট নেবেন তো ? নাহলে আমি ATM থেকে ক্যাশ তুলে আনবো। আমার কাছে এক মাসের ভাড়া ক্যাশে হবে, দু মাসের টাকা তুলতে হবে ।"


ভদ্রমহিলা দেখলাম আমার প্রতি খুব সদয় । হেঁসে বললেন, " ঠিক আছে । আপনি এক মাসের ক্যাশ আর বাকিটা চেকে দিয়ে দিতে পারেন ।"


আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার পার্স বার করেছি। একমাসের ভাড়ার টাকা গুনে, উঠে গিয়ে ওনাকে দিলাম। বললাম, "আমি চেক বুক সঙ্গে নিয়েই ঘুরছি । কি নামে লিখবো বলুন, এখনই লিখে দিচ্ছি ?"


উনি বললেন , "সিমরান খান্না ।"


আমি সঙ্গে সঙ্গে চেক লিখে ওনাকে দিয়ে দিলাম। ভদ্রমহিলা বললেন, "আপনি আপনার জিনিস নিয়ে আসুন, আমি রশিদ তৈরি করে রাখছি। আর হ্যাঁ, আপনি তো বাঙালি, তাহলে তো নিশ্চয়ই নন-ভেজ খান। আজ রাতে আপনি আমার এখানেই খাবেন । আর আপনার রান্নার লোকের আর ঘর পরিষ্কারের লোকের ব্যবস্থা আমিই করে দেবো। আপনাকে খুঁজতে হবে না। এখন যান, আপনি আপনার জিনিসপত্র নিয়ে চলে আসুন ।"


আমার তো দুটো বড় সুটকেস আর একটা কাঁধের ব্যাগ। সব কিছু প্যাক করে, গেস্ট হাউসের টাকা মিটিয়ে এক ঘণ্টাই লেগে গেলো। কিছু ক্যাশ টাকাও ATM থেকে তুলে নিলাম। ফার্নিশড ফ্ল্যাট নিয়েছি বলে সুবিধে। নাহলে আবার কিছু ফার্নিচার কিংবা ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন কিনতে হতো। বাসন পত্র হয়তো কিছু কিনতে হতে পারে। সেটা দেখে নেবো।


সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম আমার নতুন ঠিকানায়। বাংলোর গেটের ভেতরে ঢুকতেই মনটা কিরকম ভালো ভালো লাগছিলো । এইরকম একটা বাংলোয় আমি থাকছি, আমার মা দেখলে ভীষণ খুশি হবেন। হ্যাঁ, মা বাবাকে একবার নিয়ে এসে রাখতেই হবে এইখানে। বাবা সামনের এই জগার্স পার্কে সকাল বেলায় হাঁটতে যাবেন। আর মা তো এই দুটো ব্যালকনি তে বসে, সামনে সবুজ ঘেরা লন আর বাগান দেখেই খুশি হয়ে যাবেন ।


আমার ব্যাগ গুলো নামিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলাম। নেপালি দরওয়ান বাহাদুর এসে আমার ব্যাগ গুলো ওপরে নিয়ে গেলো। দেখলাম, দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন বাড়িউলি সিমরান খান্না । মিস না মিসেস তো জানা নেই। জিজ্ঞেসই করিনি। হেঁসে বললেন, "আপনি ওপরে যান। আমি এখনই সব পরিষ্কার করিয়ে দিয়েছি । রেফরিজারেটরে নতুন করে খাবার জল ভরিয়ে রেখেছি । আমি একটু পরেই আসছি , সব দেখিয়ে বুঝিয়ে দেবো।"


আমি হেঁসে বললাম , "অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।"


উপরে চলে গেলাম । আমার ব্যাগ গুলো শোবার ঘরেই রেখেছে দেখলাম । একটু পরে গোছানো আরম্ভ করবো…অনেক সময় আছে তো…একবার যখন এসে গেছি। আমি আরেকবার সব ঘর গুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ব্যালকনি দুটো সত্যিই দারুন।


জামাকাপড় গুলো গুছিয়ে রাখাই ভালো। কাল থেকে আবার অফিস শুরু হয়ে যাবে। শোবার ঘরে দেওয়াল জোড়া ক্যাবিনেট বলেছিলাম । অনেক জায়গা। শার্ট, প্যান্ট সব ব্যাগ থেকে বার করে বিছানার ওপর রেখেছি। ক্যাবিনেটে একটা একটা করে গুছিয়ে রাখছি, এমন সময় সিমরান চলে এলেন । বললেন, " কি ? সাহায্য করবো গোছাতে ?"


আমি বললাম, " আপনি আবার কষ্ট করবেন কেনো ? আমি করে নিচ্ছি ।"


হেঁসে বললেন, "কষ্টের কি আছে । মেয়েরা এসব ভালো পারে। আপনি সরুন, আমি করছি ।"


আমি সরে দাঁড়ালাম । ভদ্রমহিলা ক্যাবিনেটে আমার শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, জিন্স, গেঞ্জি সব আলাদা আলাদা করে সাজাতে লাগলেন । ক্যাবিনেটে ঠিক পাশেই একটা ড্রেসিং টেবিল। আমি আমার সব শেভিং সেট, আফটার শেভ লোশন, ময়শ্চারাইজার , আর আরো যা আছে বার করে সাজাতে থাকলাম ।


সিমরান বললেন, "এই যে শেষের ক্যাবিনেটের ওপরের তাকে সব বেডশিট, বেডকাভার, কম্বল, এক্সট্রা বালিশ রাখা আছে । এক সেট করে পাতিয়ে দিয়েছি । এখানে আরও দু সেট করে রাখা আছে । এখানে এসে একবার দেখে নিন ।"


আমি গেলাম ক্যাবিনেটটার সামনে যেখানে সিমরান দাঁড়িয়ে আছেন । আমাকে সব চেয়ে ওপরের তাক টা দেখাচ্ছেন। মুস্কিল হলো কি, ক্যাবিনেটটা এতই উঁচু , ওপরের তাকটা আমার মাথার চেয়েও 2 - 3 ইঞ্চি উঁচুতে । আমি তো ঠিক করে রেখেছিলাম ওপরের কোনো তাকই আমি ব্যাবহার করবো না ।


ও আচ্ছা, আমার ব্যাপারে তো আপনাদের এই কথাটা বলাই হয়নি । আসলে আমার হাইটটা একটু কম, এই 5 ফুট 3 ইঞ্চি। আমার চেহারাও একটু মাঝারি গোছের, মানে 62 কেজি মতন ওজন। 5 ফুট 3 ইঞ্চি একজন বাঙ্গালী পুরুষের এভারেজ হাইটের চেয়ে একটু কমই বলা যায়।


এদিকে এই সিমরান ভদ্রমহিলা আবার একটু বেশীই লম্বা। ওনার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছি আমার মাথাটা ওনার কাঁধটা শুধু পার করতে পেরেছে। ওনার থুতনিটাও আমার মাথার প্রায় দু - তিন ইঞ্চি উঁচুতে। ভাবলাম হিল পড়েছেন বোধহয়, কিন্তু দেখছি পায়ে তো একটা বাড়িতে পড়ার সাধারণ রবারের চটি। দেখে তো মনে হচ্ছে খালি পায়ে 5 ফুট 10 কি 11 ইঞ্চি হতে পারে হাইট।

আমি লজ্জিত ভাবে বললাম, " ম্যাডাম, একটা কথা বলবো ? আপনি যদি প্লীজ ওই তাকের বেডশিট আর যা আছে, সেগুলো কোনো নিচের তাকে নামিয়ে রাখেন তো ভালো হয়। আসলে আমি না ওখানে কি আছি তা দেখতেই পাচ্ছি না।"


সিমরান প্রথমে বুঝতে পারেনি আমি কি বলতে চাইছি। তারপর যখন বুঝল যে আমার মাথা ওই তাক পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে না, তখন হেঁসে কুটিপাটি। হাঁসি থামিয়ে বলছেন, "আমি সত্যিই দুঃখিত , আমি এটা খেয়ালই করিনি। আমার কাছে আসুন, আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।"


আমি কিছু বলার আগেই দেখি সিমরান আমার সামনে এসে নিচু হয়ে আমার থাই দুটো জড়িয়ে ধরেছে। ধরে সোজা হয়ে আমাকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। এতই আকস্মিক ব্যাপারটা ঘটে গেলো, আমি ঘাবড়ে গিয়ে ওর গলাটা জড়িয়ে ধরেছি, পাছে আমি পড়ে না যাই। আমার মাথা তখন ওর মাথার চেয়েও একটু উঁচুতে । হাসতে হাসতে বলছে, "এবার তো আপনি আমার চেয়েও লম্বা। এবার দেখতে পাচ্ছেন , ভেতরে কি আছে ?"


আমি তাকের ভেতরে দেখি বেডশিট, বেডকভার সব রাখা আছে। বললাম, "দেখেছি ম্যাডাম, এবার আমায় নামিয়ে দিন।"


সিমরানের হাঁসি বন্ধ হয়না । বলছে, "আরে দাঁড়ান আমি এবার দেখি, আপনাকে আমার কোলে কেমন দেখাচ্ছে ।" বলে আমায় কোলে নিয়ে এগিয়ে গেলো ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটার সামনে। আয়নায় দেখে বলছে, " আরে দেখুন দেখুন , আপনাকে তো আমার কোলে একদম বাচ্ছা ছেলের মতন লাগছে ।" বলে , একবার সামনে হয়ে, একবার পাস ফিরে আমায় কোলে তুলে ঘুরে ঘুরে আয়নায় দেখছে। আর হেঁসে গড়িয়ে পড়ছে ।


আমার তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে । একজন মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলা আমার মত এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে এত অবলীলায় কোলে তুলে নিয়ে, আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখছে আর হাঁসছে । বললাম, "আমাকে নামিয়ে দিন প্লীজ আপনার কোল থেকে। আপনার বয়স হয়েছে, আর আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোক, আমায় কোলে তুলতে গিয়ে আপনার কোমরে লেগে যাবে…"


সিমরান আমায় থামিয়ে বলে উঠলো, "আরে আপনি তো কত হালকা। আপনাকে কোলে তুলে তো আমি সারাদিন ঘুরতে পারি । চলুন, আপনাকে কোলে নিয়ে আমার বাড়ি ঘুরিয়ে দেখিয়ে নিয়ে আসি। আচ্ছা, একটা কাজ করুন তো। আপনার পা আমার পায়ের সামনে ঝুলে আছে বলে আমার চলতে অসুবিধে হচ্ছে। আপনার পা দুটো দিয়ে আমার কোমরটা জড়িয়ে ধরুন তো।"


কিছু করার নেই, যে ভাবে আমাকে সিমরান তুলে ধরে আছে, আমার তো কিছু করার উপায় নেই, মাটিতেই পা ঠেকছে না আমার। অগত্যা আমি আমার পা দুটো দিয়ে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার পাছার তলায় হাত দিয়ে আমাকে আরেকটু ভালো করে কোলে তুলে ধরল। বললো , "হ্যাঁ, এবার ঠিক হয়েছে। চলুন এবার আমি সব ঘরগুলো নিজে ঘুরে দেখাই।"


বলে, আমায় নিয়ে চলতে লাগলো। আমি তখন ওর কোলে চড়ে আছি ওর গলা জড়িয়ে । আমার মুখ একদম ওর মুখের সামনে। আবার আমায় আয়নার দিকে ফিরিয়ে বললো, "আপনি নিজে দেখে বলুন তো আপনার নিজেকে কিরকম লাগছে আমার কোলে ?" ওর হাঁসি যেনো ধরছেই না।


আমি আমতা আমরা করে বললাম, "লাগছে আপনি একটা 10 বছরের ছেলেকে কোলে তুলে রেখেছেন।"


সিমরান ওর মাথা পেছনে হেলিয়ে অট্টহাসি হেঁসে উঠল। বললো, "একদম ঠিক, একেবারে বাচ্ছা ছেলে।" বলে এক হাত দিয়ে আমার গালটা টিপে দিলো, যেমন বাচ্ছাদের বড়রা আদর করে।


বললো, "এখন থেকে আর আপনি নয়, একটা বাচ্ছাকে কেউ আপনি বলে না। আমি তোমায় তুমি বলবো। তুমিও আমায় তুমি করেই বলবে। আর কি বলছিলে তখন ? আমার বয়স হয়েছে…একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোককে কোলে তুললে আমার কোমরে লেগে যাবে ? কত বয়স মনে হয় হয়েছে আমার বলো তো ?"


আমি বললাম, "50 হবে মনে হয়।"


সিমরান মুখে একটা কপট রাগের ভাব করে বললো, "মোটেও 50 না। আমার 45। বিশ্বাস না হয় তো আধার কার্ড দেখিয়ে দেবো। আর তোমার কত ?"


আমি একজন 45 বছরের মধ্যবয়স্কা মহিলার কোলে চড়ে তার সঙ্গেই কথা বলছি। বললাম, "আমার 36।"


"ও তুমি আমার চেয়ে মাত্র 9 বছরের ছোট। আমি তো তোমায় দেখে 30 টিরিশ ভাবছিলাম। আসলে তোমার মুখটা খুব বাচ্ছা বাচ্ছা, তাই বয়স বোঝা যায়না। তুমি গোঁফদাড়ি রাখতে পারো, নাহলে শুধু গোঁফ। তাহলে যদি 36 মনে হয়। আচ্ছা ঠিক আছে, এমনি গোঁফ দাড়ি ছাড়াই ভালো। যদি তোমাকে কেউ আমার কোলে দেখে ফেলে, তাহলে বাচ্ছা ছেলেই ভাববে। তাহলে আর তোমার প্রেস্টিজে লাগবে না।" বলে আবার হাঁসি…


আমি মুখ কাঁচুমাচু করে বললাম, "সিমরান দিদি, এবার আমায় কোল থেকে নামিয়ে দাও প্লীজ। কখন তোমার কাজের লোক দুজন এসে যাবে। আমার খুব লজ্জা করবে।"


বললো, "লজ্জা কেনো করবে ? ওদের সামনে তুমি আমায় দিদি বলে ডেকো । দিদি কি ছোটো ভাইকে কোলে তোলেনা ? আমি বলবো তোমার 25 বছর বয়স। তার মানে আমার চেয়ে 20 বছরের ছোটো। বলবো, তুমি আমার অনেক দিনের চেনা। ছোটবেলায় তোমায় কত কোলে নিয়ে ঘুরেছি। এতদিন পরে দেখা হয়েছে। তাই ছোটবেলার মত কোলে তুলে নিয়েছি। এতে তোমার লজ্জা পাবার তো কিছু নেই।"


এখন আবার সিমরান আমায় কোলে নিয়ে আসতে করে এপাশ ওপাশ দোল খাওয়াচ্ছে। মায়েরা যেমন বাচ্ছাদের কোলে দোলায়। বললো, "চলো তোমায় আগে কিচেনের জিনিসপত্র কোথায় কি আছে দেখিয়ে দি। এখুনি আবার শেফালী এসে যাবে। মানে আমার ওই কাজের মেয়েটা। ওকে বলে রেখেছি ফল আর জুস নিয়ে আসতে। ওর সামনে তুমি আবার আমার কোলে চড়ে থাকতে লজ্জা পাবে ।"


সিমরান আমায় কোলে করে চললো কিচেনে। আমি না বলে পারলাম না, "তোমার কিন্তু অসীম শক্তি দিদি। তুমি 45 বছরের এক মধ্যবয়সী মহিলা হয়ে আমার মত এক জোয়ান পুরুষ মানুষকে একটা বাচ্ছা ছেলের মত অবলীলায় কোলে তুলে ঘুরছো।"


সিমরান আরেকবার আমার গাল টিপে দিলো। হেঁসে বললো, "তা আমার এই জোয়ান পুরুষের হাইট, ওয়েট কত শুনি ?"


আমি বললাম, " আমি 5 ফুট 3 ইঞ্চি আর 62 কেজি।"


সিমরান বলে, "আর আমি 5 ফুট 11 ইঞ্চি আর 90 কেজি। তার মানে তোমার চেয়ে আট ইঞ্চি লম্বা আর প্রায় তিরিশ কেজি ওজন বেশি। তাহলে বল তুমি আমার কোলে তো বাচ্ছা ছেলেই লাগবে, তাতে লজ্জার কি আছে ?"


এমন সময় দরজায় বেল বাজলো। সিমরান তখন আমায় কোলে নিয়ে কিচেনের ভেতরে ঢুকেছে। আমি সিমরানের গলা জড়িয়ে ধরে ওর কোলে হাওয়ায় ভাসছি। আমি ওর মুখের দিকের চেয়ে আকুতি করে বললাম, "তোমার কাজের মেয়েটা এসে গেছে। এবার আমায় তোমার কোল থেকে নামিয়ে দাও দিদি। প্লীজ।"


সিমরান মিষ্টি হেঁসে বললো, "ছেড়ে দেবো একটা শর্তে । বাইরের লোকের সামনে আমায় দিদি বলে ডাকতে পারো। কিন্তু আমরা একা থাকলে কিন্তু তুমি আমায় দিদি বলবে না…ডাকবে সিমরান বলে। নাহলে কিন্তু আমি তোমায় শেফালির সামনেই কোলে তুলে নেবো । শর্তে রাজি ?"


আমি ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। এ আবার কি শর্ত ? কিন্তু উপায় তো নেই, ওর কোল থেকে তো এখন নামতে হবে । তাই মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম । সিমরান এক গাল হেঁসে, "লক্ষ্মী ছেলে" , বলে আমার গালটা আরেকবার টিপে দিলো। তারপর আমায় কোলে নিয়েই দরজা খোলার জন্য চললো।


আমি জোরে ওর গলা জড়িয়ে ধরলাম। "কি করছো দিদি ? আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দাও এবার। কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমায় ? সিমরাননন !!!"


সিমরান মুচকি হেঁসে এক হাত দিয়ে আমার মুখটা চেপে ধরলো। তারপর আমায় কোলে নিয়েই দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। আমার তো টেনশন হয়ে গেছে। করছে কি ? আমাকে কোলে নিয়েই কি দরজা খুলবে নাকি ? এক হাত দিয়ে সিমরান আমার মুখ চেপে ধরেছে, তাই কিছু বলতেও পারছিনা। অন্য হাতে আমায় ওর কোলে চেপে ধরে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার বুক দুরদুর করছে। দরজার ওপারেই ওর কাজের মেয়েটা দাঁড়িয়ে। কি লজ্জার ব্যাপার হবে। আমাকে সিমরানের কোলে বন্দী হয়ে থাকতে দেখবে।


ঠিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সিমরান দরজার eye-hole দিয়ে বাইরে দেখলো। তারপর আমার দিকে চেয়ে একটা দুষ্টু হাঁসি হেঁসে, আমায় ওর কোল থেকে নামিয়ে দিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে আবার কিচেনে ঢুকে গেলাম। সিমরান হেঁসে উঠে দরজা খুলে দিলো।


দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে……



( To be continued…)