The tension of the surface film of a liquid ...... ধুরর। কি কঠিন রে বাবা ! কন্যাকুমারিকা ফিজিক্স বইটা দুম করে বন্ধ করে উঠে পড়ে টেবিল ছেড়ে। কালকে সকালে চারটে চ্যাপ্টার পরীক্ষা ফিজিক্স টিউশন এ কিন্তু ওর এখনো , এই রাত দেড়টা তেও পড়া শেষ হয়নি। এটা পড়ে তো আগের কিছু ভুলে যায়, সেটা দেখে এসে আবার নতুন টা ভুলে যায় এই চলছে।। ওহ , আপনাদের তো বলাই হয়নি, যার কথা হচ্ছে তিনি হলেন কন্যাকুমারিকা রায়, নিবাস মেদিনীপুর , বর্তমানে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী, বিজ্ঞান বিভাগ।অবশ্য তা নামেই,বাবা মায়ের অসম্ভব বাধ্য হওয়ার সুবাদে আর দুর্ভাগ্য বশত স্কুলের ফার্স্ট গার্ল হওয়ার দরুন মনে প্রবল ইচ্ছা থাকলেও কলা বিভাগে আর ভর্তি হওয়া হয়নি। চোখের জল চেপে রেখে দাঁতে দাঁত চিপে বিদায় জানিয়েছে ওর প্রিয় বিষয় ইতিহাস কে। শুধু তাই নয় , বাবা, মা, সব teacher দের তার প্রতি বিজ্ঞানে ভালো ফলাফলের অগাধ আশা থাকায় একে একে বিদায় জানিয়েছে ওর শখ, বেঁচে থাকার অক্সিজেন আঁকা, নাচ, গান আর গল্পের বই পড়ার অদম্য নেশা কে।শুধু একজনকে চাইলেও ও কিছুতেই ছাড়তে পারেনি।। ইতিহাসের প্রতি ওর ভালোবাসা ও প্রথম বুঝতে পারে যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে।সায়েন্স নেওয়ার পর সব আর্টসের বই ফেলে দিলেও সন্তর্পনে কেবল লুকিয়ে রেখেছে ওই অষ্টম শ্রেণীর বই টিকে। বাবা মাকেও জানতে দেয়নি। যখন ওর না পাওয়া গুলো ওকে তাড়া করে তখন ও বইটাকে রাতের অন্ধকারে বেরকরে বুকে জড়িয়ে নেয়। প্রচন্ড চাপা স্বভাবের ধীর, স্থির, গম্ভীর মেয়েটার চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে বইটাকে স্যাঁতস্যাঁতে করে তোলে। তারপর মনের চেপে রাখা কষ্টের বোঝা কমলে ও যত্ন সহকারে বইটাকে লুকিয়ে দেয় বুকসেলফ এর ভারী ভারী বিজ্ঞানের বইগুলোর পেছনে।। দিনগুলো ঝরা পাতার মতো কাটতে থাকে, কন্যাকুমারিকা র পড়ার চাপ ও বাড়তে থাকে, পাল্লা দিয়ে মনের গহীনে চেপে রাখা কষ্ট গুলো ও। বইটা বারবার ভিজতে থাকে। একদিন বইয়ের তাক গোছাতে গিয়ে দেখে ওর প্রিয় বইটা নেই। অজানা আশঙ্কায় ও খানিকটা চমকে যায়, ঘুরিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করে, মা গত কয়েকদিনে ওর বইয়ের তাকে হাত দিয়েছে কিনা । ' আরে, কালকে পাড়ার বিমলদা আছে না, পুরোনো কাগজ বিক্রি করে,আমি কালকে তো তোর বইয়ের তাক থেকে কিছু বাতিল কাগজ আর একটা ছেঁড়া খোঁড়া কবেকার একটা ইতিহাসের বই বের করলাম, আর ওনাকে বিক্রি করে দিয়েছি, কেন রে ? দরকারি কিছু তো ছিল না ওর মধ্যে'---- কন্যাকুমারী চুপ করে গেল , এবার ও মনের কষ্ট গুলো কাকে বলবে এই ভেবেই ওর কান্না পেলো,তারপর মনে হলো ওর তো সেই সম্বল টাও হারিয়ে গেল। সেরাতে ওর ঘুম হলো না, কিছুদিন বইটার কথা ভাবতে ভাবতে ওর মধ্যে কিছু পরিবর্তন এলো, ওর এরপর বইয়ের কথা মনে করলেই বইটার সাথে সাথে একটা শব্দ স্পষ্ট দেখতে পেত , ' ঐতিহ্য' , ও নিজেও বুঝলো ওর মনের মধ্যে থাকা অস্থিরতা টা কোনো এক অজানা অস্তিত্বের টানে পাহাড়ি নদীর মতো তিরতিরে হয়ে উঠছে। ও ধরতে পারলো না, অনুভূতিটা ঠিক কি, তবে ও খেয়াল করলো এই অনুভূতি টা ওকে ওর মানসিক চাপ থেকে অনেকখানি রেহাই দেয়।। এরপর প্রায় 3, 4 মাস কেটে গেছে, মনের ওই টানা পোড়েন টা থাকলেও এখন কন্যাকুমারী আর পাত্তা দেয় না । এখন ও অনেক পরিনত হয়েছে, মনকে সংযত করতে শিখেছে, নিজের কষ্ট গুলো নিজের সাথে যুঝতে শিখিয়েছে, ওকে নতুন একটা মানুষ রূপে গড়ে তুলেছে, এখন নিজের মানসিক শান্তির জায়গা ও নিজেই । তাই ও পড়ার চাপের মাঝে নিজের সাথে কথা বলার জন্য রাতের কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখে। কিন্তু...... তবুও একটা খচখচানি থেকেই যায়। যাইহোক , আজকে ওর kvpy এক্সাম আছে, জানে প্রিপারেশন নেই, তবুও মা বাবার মুখের ওপর না করতে পারেনি , চলেছে পরীক্ষা দিতে। স্বাভাবিক ভাবেই টেনশনে থাকার কথা। কিন্তু ও লক্ষ্য করছে, ওর আজকে টেনশনের থেকে মনের উৎফুল্লতা টা বেশি। আর একটা আলাদা ভালোলাগা ওকে ঘিরে রেখেছে। যাইহোক ও আর বেশি পাত্তা না দিয়ে, রওনা দিলো এক্সাম সেন্টার এর দিকে।। বিরাট লম্বা লাইন পেরিয়ে ও ওর রুম এ গিয়ে পৌঁছলো। ঢুকতে যাবে, হঠাৎ দেখে আরেকজন ক্যান্ডিডেট হন্যে হয়ে এপাশ ওপাশ করছে। ছেলেটা লম্বা , দোহারা চেহারা , মাথায় ঝাঁকড়া চুল , চোখে পড়ুয়াদের মতো চশমা, ঢিলেঢালা একটা shirt আর ট্রাউসার্স পরেই চলে এসেছে। অবস্থা দেখে বেশ হাসিই পেলো কন্যাকুমারিকা র । তারপর কি জানি কি মনে হতে ও ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো , ওর হাত থেকে admit card টা নিয়ে দেখে বললো , ' তোমার রুম নম্বর 3 , এপাশ থেকে বাঁদিকে যাও , পেয়ে যাবে। ছেলেটার ভীতু চোখ দুটোয় খুশি ঝিলিক দিলো। ও তাড়াতাড়ি একটা হাসি উপহার দিয়ে 3 নম্বর রুম এর দিকে চলে গেল। কন্যাকুমারিকাও ফিরে এলো নিজের রুমে, পরীক্ষা শুরু হলো, একটা সময়ে শেষ ও হলো। স্বাভাবিক ভাবেই খুব একটা ভালো হয়নি, অবশ্য ও আশাও করেনি। যাইহোক , পরীক্ষা হল থেকে বেরিয়ে ও গেল ব্যাগ যেখানে জমা রেখেছে সেখান থেকে ব্যাগ নিতে।ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে এসে একটু এগোতেই কাঁধে একটা অচেনা স্পর্শ পেয়ে চমকে পিছন ফিরে তাকালো। অবাক হয়ে দেখলো সেই ছেলেটা। ছেলেটা মুচকি হেসে বললো, ' আসলে তখন না তাড়ায় ছিলাম তাই বলতে পারিনি, thankyou আমাকে সাহায্য করার জন্য।' ততক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়েছে কন্যাকুমারিকা, বললো,' না , না ওটা কোনো ব্যাপার নয় , আসলে তুমি ওরকম পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলে , তাই....' ছেলেটা মাথা চুলকে বললো , তাই নাকি? আসলে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম,যদি পরীক্ষা টা না দিতে পারি। ওরা গল্প করতে করতে বেরিয়ে এসে লাইনে দাঁড়ালো, কথায় , কথায় জানা গেল ছেলেটা ওরই বয়সি, বাড়িও মেদিনীপুরের কাছাকাছি, ঘাটালে, ওখানকার স্কুল এই পড়ে, ধীরে ধীরে লাইন এগোতে থাকলো, গেটের বাইরে অস্থির অভিভাবকদের ভিড় , চিৎকার চলছে। একসময় ওরা গেটের সামনে চলে এলো। হঠাৎ ছেলে টা বললো, ' এই যা , কথায়, কথায়, তোমার নামটাই জানা হলো না, কি নাম তোমার?' কন্যাকুমারিকা রায়, আর তোমার ? ছেলেটা সেই কিছুক্ষন আগেই পরিচিত হওয়া হাসিটা উপহার দিয়ে বললো ,' ঐতিহ্য, ঐতিহ্য সেন।' ঐতিহ্য বেরিয়ে গেল, বাইরে তখন কন্যাকুমারিকার বাবা ওকে হাত নেড়ে ডাকছে, আর কন্যাকুমারিকা সব হইহট্টগোলের মাঝে একটাই শব্দ শুনতে পাচ্ছে, হালকা ভারী পুরুষালি গলায় কেউ বলছে , ' ঐতিহ্য'।।