Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

সমান্তরাল মহাবিশ্বের মায়াজাল



প্রথম মহাবিশ্ব
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::



দীপ ও অঙ্কিতার নতুন বিয়ে হয়েছে। দুজনই দুজনকে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ভালোবাসতো অবশেষে তাদের বিয়ে হয়েছে। তবে দুজনেরই এটা প্রথম বা দ্বিতীয় ভালোবাসা নয়। দীপের এটা তিন নম্বর ও অঙ্কিতার এটা চার নম্বর ভালোবাসা। তাদের এর আগে সম্পর্ক এতদিন গড়ায়নি, বিভিন্ন কারণে সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। দীপের সম্পর্ক কখনও ভেঙেছে দীপের বেকারত্ব, খামখেয়ালী পনার জন্য কখনও আবার তৃতীয় ব্যক্তির জন্য উল্টো দিকে অঙ্কিতার সম্পর্ক ভেঙেছে ছেলে গুলোর হয় মানসিকতা ঠিক নয়, আবার কখনও তারা বেশি অঙ্কিতার নিজো জীবনে ঢুকছিল এই সব কারনে । দীপ ও অঙ্কিতার সোশ্যাল সাইট এ বন্ধুত্ব হয় তার পর ভালবাসা হয় এবং দুজন দুজনকে খুব ভালোভাবে বোঝে ও তাদের চিন্তাভাবনা অনেকটা একই রকমের।
অবশেষে তারা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিয়ের পর তারা ২ বেড রুম যুক্ত একটি আবাসনে এ উঠেছে, বিয়ের আগেই তারা দুজন মিলে দেখে এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিল। দীপ পেশায় পুলিশ অফিসার এবং অঙ্কিতা পেশায় শিক্ষিকা। বিবাহিত জীবন খুব ভালো কাটছিল, একদম যোগ্য স্বামী পেয়েছিল অঙ্কিতা, উল্টো দিকে দীপ যোগ্য স্ত্রী পেয়েছিল এক কথায় একে অপরের পরিপূরক। বিবাহিত জীবনের ৬ মাস পড়ে অঙ্কিতা গর্ভবতী হল, যখন খবর টা দীপ কে জানাল তখন দীপ পুলিশ স্টেশন থেকে সোজা চলে আসে অঙ্কিতার কাছে, দীপ আনন্দে অঙ্কিতা কে কোলে তুলে নিয়ে গোল গোল করে ঘোরাতে লাগে। এর আগে দীপ শুধু বিয়ের দিন এতো খুশি হয়েছিল । দীপ অঙ্কিতা কে বলে আজ থেকে তোমার সব কাজ বন্ধ সব কাজ হয় কাজের মাসি করবে নয় আমি করব। অঙ্কিতা তখন বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখন ঠিক আছি যখন আমি পারবো না তখন আমি নিজে থেকেই বলবো, দীপ বললো না না আজ থেকেই বন্ধ তোমার সব কাজ। কাজের দায়দায়িত্ব এখন থেকে আমার, তুমি শুধু রেস্ট করবে কারণ তুমি সুস্থ থাকলে আমাদের সন্তান সুস্থ থাকবে। তখন অঙ্কিতা বললো তাহলে অপরাধীদের কে ধরবে তুমি সব কাজ করলে, দীপ বললো আমি সামলে নেব ঘর ও থানা। এই ভাবে আরো নয় মাস কেটে গেল, অঙ্কিতার সন্তান প্রসবের দিন কাছে আসছে। সন্তান প্রসবের এক সপ্তাহ আগে একদিন রাতে দীপের ফোনে একটা ফোন আসে থানা থেকে তাকে এখনি থানায় যেতে হবে, থানার ফোনে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি জানায় শহরের একটি নির্দিষ্ট এলকার একটি আবাসনে কয়েকজন সন্ত্রাসী ঘাঁটি গেড়েছে। তাদের কাছে অত্যাধুনিক কিছু হাতিয়ার আছে। যে খবর দিয়েছে সেই ব্যক্তির ছোট ছেলে দূরবীন দিয়ে খেলতে খেলতে দেখছে, তাদের বন্দুক দেখে ওই বাচ্ছা ছেলে টা তার বাবাকে ডেকে বন্দুক দেখিয়ে কিনে দিতে বলে। তখন ওই ব্যক্তির বন্দুক দেখে সন্ধেয় হয়, তার পর ওই ব্যক্তি পুলিসকে জানায়।
সেটা শুনে দীপ অঙ্কিতা কে ঘুমোতে বলে এবং বলে সে ঘন্টা খানিকের মধ্যেই চলে আসবে। অঙ্কিতা প্রথমে দীপ কে যেতে না দিলেও, দীপের বোঝানোর পর তাকে মেনে নিতে হয়। অঙ্কিতা জানে এটা দীপের কতব্য। অঙ্কিতা জানত না কেন থানা থেকে এত রাতে ফোন করেছে। দীপ কারণ টা অঙ্কিতা কে জানায় নি, কারণ দীপ জানে এই কথা বললে অঙ্কিতা যেতে দেবে না আর দিলেও টেনশন এ থাকবে। আর যেটা অঙ্কিতার পক্ষে খারাপ। অবশেষে অঙ্কিতা কে একবার গলা জড়িয়ে দীপ বেরিয়ে গেল থানার দিকে। থানায় গিয়ে দীপ সাথে সাথে ১২ জনের দল গঠন করল, যেটার দায়িত্বে ছিল দীপ নিজেই । সবাই হেলমেট,বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে দুটো গাড়িতে বেড়িয়ে পড়ল ওই সন্ত্রাসবাদীদের জীবিত অথবা মৃত ধরতে। ১০ মিনিটের মধ্যে তারা পৌঁছে গেল সন্ত্রাসবাদীদের আবাসনের এর আগের গলি তে। তারা সেখানে সবাই নেমে গেল কারণ গাড়ি নিয়ে সোজা আবাসনের সামনে গেলে সন্ত্রাসবাদীরা সজাগ হয়ে যাবে। তাই তারা হেঁটে হেঁটে যাবে যাতে সন্ত্রাসবাদীরা বুঝতে না পারে। দীপ ও তার দল যেখানে নেমেছিল সেখান থেকে সন্ত্রাসবাদীদের আবাসনের দূরত্ব ২০০ মিটার।
দীপরা আস্তে আস্তে এগোতে লাগলো - ১৮০ মিটার, ১৫০ মিটার , ১১০ মিটার, ৯০ মিটার যেই ৬০ মিটার এ আসলো সামনের আবাসনের এক তলার ৩টে ও দুই তলার ৩টে জানলা থেকে গুলি চলতে লাগলো।

সেই রাতে অঙ্কিতা শুয়ে শুয়ে ভাবছিল তার আর দীপের কাটানো সুন্দর মুহূর্তের কথা, তাদের প্রথম দেখা হওয়ার কথা। ভাবতে ভাবতে কখন তার চোখে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি , আচমকা একটা বাজে স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেল অঙ্কিতার, দেওয়াল ঘড়িতে দেখলো ৩.০৫ বাজে।




দ্বিতীয় মহাবিশ্ব
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::




অঙ্কিতা সাথে দীপ এর দেখাশুনা করে দুই পরিবারের ইচ্ছেতে বিয়ে হয়েছে । দীপের বাড়ি থেকে প্রথম সমন্ধ গিয়েছিল অঙ্কিতার বাড়িতে ঘটকের মাধ্যমে। তারপর দুজন দুজনকে দেখে ভালোলাগে , তারপর সেই ভালোলাগা বিয়ের মণ্ডপ অবধি পৌঁছায়। দীপ সেনা বাহিনীতে কাজ করে অঙ্কিতা গৃহবধূ। বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যে দীপ সেনা বাহিনীতে যোগ দেয়, যাওয়ার আগে দীপ অঙ্কিতা কে বলে খুব তাড়াতাড়ী ফিরে আসবে । বিয়ের ৪ মাস পর দীপ বাড়ী ফিরে আসে ছুটি নিয়ে। এসে দীপ অঙ্কিতার সাথে ঘুরতে হানিমুন এ যায় সমুদ্রে। দীপ তিন মাসের ছুটি তে বাড়িতে আসে, হানিমুন এর পর পরেই খুশির খবর টা অঙ্কিতা প্রথম দীপকে জানায় যে সে গর্ভবতী। এই কথা শুনে দীপ আনন্দে অঙ্কিতা কে কোলে তুলে নিয়ে গোল গোল করে ঘোরাতে লাগে। এর আগে দীপ শুধু বিয়ের দিন এতো খুশি হয়েছিল, খুশির আনন্দে সে অঙ্কিতা কে বলে আজ থেকে তোমার সব কাজ বন্ধ । তোমার কাজ সব কাজের মাসি করবে, আমি যত দিন আছি ততদিন আমি করবো । আমি চলে যাওয়ার পর তোমাকে দেখার জন্য আয়া রাখবো আর মা তো আছেই। তখন অঙ্কিতা বললো এখন তো আমি ঠিক আছি যত দিন আমি পারবো ততদিন করবো তারপর নয় কাজের মাসি করবে। দীপ বললো না না আজ থেকেই বন্ধ তোমার সব কাজ। কাজের দায়দায়িত্ব এখন থেকে আমার, তুমি শুধু রেস্ট করবে কারণ তুমি সুস্থ থাকলে আমাদের সন্তান সুস্থ থাকবে। তখন অঙ্কিতা বললো এখন নয় তুমি করলে কিন্তু তুমি যখন চলে যাবে একমাস পর তখন কে করবে? সব কাজ তো আর কাজের মাসিকে দিয়ে করানো যায় না । আমি চলে যাওয়ার পর মা থাকবে তোমার সাথে, মা দেখবে না হলে আয়া রাখবো। তুমি এইসব নিয়ে ভেবো না আমি ঠিক একটা ব্যবস্থা করে যাবো। এই ভাবে এক মাস কেটে গেল দীপ যাওয়ার সময় অঙ্কিতা কে মা এর কাছে রেখে গেল। দীপ প্রতিদিন ফোন করে অঙ্কিতার খোঁজ নেয় । একদিন ফোনে দীপ অঙ্কিতাকে বলে তার সন্তান প্রসবের সময় সে তার পাশে থাকবে, সেই মত দীপ ছুটির আবেদন করে এবং ছুটি মঞ্জুর হয়ে যায়। অঙ্কিতার গর্ভবতী অবস্থার অষ্টম মাসে দীপ ফিরে আসে । দীপ এবার ৩ মাসের ছুটিতে বাড়ি এসেছে , একবারে সন্তানের মুখ দেখে কাজে যোগ দেবে।
এই ভাবে আনন্দে আরো একমাস কেটে গেল, সন্তান প্রসবের দুই সপ্তাহ আগে এক রাতে দীপের রেজিমেন্ট থেকে ফোন আসে যে তার ছুটি খারিজ হয়ে গেছে , এখুনি তাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে। দীপ কারণ জানার জন্য তার গ্রুপের দায়িত্বে থাকা এক সেনা অফিসারকে ফোন করে তখন সেই অফিসার জানায় দেশে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য সমস্ত সেনা জাওয়ান দের ছুটি খারিজ করা হয়েছে এবং তাদের শীঘ্রই সেনাতে যোগ দিতে বলা হয়েছে। যারা যোগ দেবে না তাদের সেনা থেকে শুধু বিচ্যুত নয় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দীপের যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলেও তার যেতে হবে কারণ দেশের সুরক্ষার বিষয় , দীপের কাছে দেশ সবার আগে। দীপ অঙ্কিতা কে অনেক বুঝিয়ে এক সপ্তাহ পর সেনা বাহিনীতে যোগ দিল। অঙ্কিতা বেশি জোর দেখাতে পারলো না কারণ অঙ্কিতাও জানতো এটা দীপের কর্তব্য। সেনা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরের দিনই দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল, দীপের রেজিমেন্টের দায়িত্ব দীপের উপর ছিল। দীপের রেজিমেন্টকে একটা মিশন দেওয়া হল । দীপদের মিশন ছিল ঘুরপথে গিয়ে, রাতের অন্ধকারে আচমকা শত্রুদের ক্যাম্পে উপর হামলা করতে হবে। দীপ ১২জনের দল বানালো, যারা সবাই হেলমেট, নাইট ভিশন, বুলেটপ্রু জ্যাকেট, অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে মিশনের জন্য তৈরি হল এবং দীপ তার হামলার পরিকল্পনা সবাই কে জানালো। সেই মতো তারা বেড়িয়ে পরলো শত্রুদের হামলা করতে, তারা হেঁটে হেঁটে ২৫ কিলোমিটার ঝোপ জঙ্গল অতিক্রম করলো। দীপ মানচিত্র দেখে তার দলের সবাই কে বললো শত্রুরা আর ২ কিলোমিটার দূরে। দীপ ও তার দলের ১১জন আসতে আসতে এগোতে লাগলো । ১.৫ কিলোমিটার,১.২ কিলোমিটার, ১ কিলোমিটার , ৮০০ মিটার যখনই দীপরা ৬০০ মিটারের মধ্যে চলে আসলো, অচমকা একটা গুলি আসলো ! সাথে সাথে সাইরেনের শব্দ বেজে উঠলো শত্রুদের ক্যাম্পে।

সেই রাতে অঙ্কিতা শুয়ে শুয়ে ভাবছিল তার আর দীপের কাটানো সুন্দর মুহূর্তের কথা। ভাবতে ভাবতে কখন তার চোখে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি ,আচমকা একটা বাজে স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেল অঙ্কিতার, দেওয়াল ঘড়িতে দেখলো ৩.০৫ বাজে।




তৃতীয় মহাবিশ্ব
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::




দীপ ও অঙ্কিতা বিয়ে করে একটি ভাড়া বাড়িতে উঠেছে। দীপ ও অঙ্কিতা ছোট থেকে দুজন দুজনকে চেনে। দুজনই একই বস্তিতে খেলেধুলে বড় হয়েছে । দুজনেই দুজনের খুব ভালো বন্ধু ছিল, সুখ দুঃখের কথা একে অপরকে বলতো। দীপ অষ্টম শ্রেনী ও অঙ্কিতা চতুর্থ শ্রেণী অবধি পড়েছে, পরিবারে অভাব ও টানাটানির জন্য তারা মাধ্যমিক টাও পাশ করতে পারিনি। একটা সময় পর তাদের এই বন্ধুত্ব প্রেম এ এসে পৌঁছায় এবং অবশেষে তারা বিয়ে করে। দীপ পেশায় ছিল একজন সিকিউরিটি গার্ড এবং অঙ্কিতা ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ করতো। এইভাবেই তাদের জীবন কাটছিল, বিয়ের ছয় মাস পর এক রাতে খেতে খেতে অঙ্কিতা দীপ কে বলে যে সে গর্ভবতী। এই কথা শুনে দীপ খাবার থালা সরিয়ে অঙ্কিতা কে জরিয়ে ধরে , তারপর তাকে কোলে তুলে গোল গোল করে ঘোরাতে লাগে আনন্দে। এর আগে দীপ শুধু বিয়ের দিন এতো খুশি হয়েছিল, খুশির আনন্দে সে অঙ্কিতা কে বলে আজ থেকে তোমার সব কাজ বন্ধ।তোমার ঘরের কাজ হয় আমি করবো নয় কাজের মাসি করবে। তখন অঙ্কিতা বলে আমি তো এখন ঠিক আছি এখন আমি করি যখন পারবো না তখন আমি আমার মা কে ডেকে নেবো কটা দিনের জন্য। তোমার কাজের মাসি বলতে হবে না ফালতু খরচা বেড়ে যাবে। তখন দীপ বলে ঠিক আছে কাজের মাসি বলছি না কিন্তু তুমি কোনো কাজ করবে না আজ থেকে । আমি কাল আমার মা কে কয়েক মাসের জন্য ডেকে নিচ্ছি, অর্ধেক আমার মা থাকবে অর্ধেক তোমার মা থাকবে। তুমি শুধু বিশ্রাম করবে, তুমি সুস্থ থাকলে আমাদের সন্তান সুস্থ থাকবে। আচ্ছা ঠিক আছে অঙ্কিতা বললো হাসতে হাসতে। এই ভাবে হাসি খুশিতে আরো ছয় মাস কেটে গেল। সপ্তম মাসে দীপের কাজ চলে যায়। যেই সংস্থার অফিসের গার্ড ছিল দীপ , সেই সংস্থা বন্ধ হয়ে যায় এর ফলে দীপের কাজটাও চলে যায়। দীপ বাড়ি এসে অঙ্কিতা কে কিছু জানায় না, কারণ দীপ জানে কাজ নেই এটা জানলে অঙ্কিতা চিন্তা ভাবনা করবে । আর এই চিন্তা ভাবনা অঙ্কিতার সাস্থ্য'এর পক্ষে খারাপ সেটা দীপ ভালো করেই জানে, তবে বাড়িতে থাকলে অঙ্কিতা বুঝে যাবে কিছু একটা হয়েছে । তাই দীপ ঠিক করল কাজে যাওয়ার সময় সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নতুন কাজ খুঁজবে । আর যখন নতুন কাজ পাবে তখন সে অঙ্কিতা কে সব খুলে জানাবে। সেই মতো দীপ প্রতিদিন কাজের সময় বেড়িয়ে যেতো কাজ খুঁজতে, সারা দিন এদিক ওদিক ঘুরে কাজের খোঁজ করতে লাগলো কিন্তু দিনের শেষে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরত। তবে বাড়ি ফিরে তার হতাশা এক মুহূর্তের জন্য বুঝতে দিত না অঙ্কিতা কে । এই ভাবে আরো ২ মাস কেটে গেল, যত সন্তান প্রসবের দিন এগিয়ে আসছিল তত দীপের চিন্তা বারছিল। সন্তান প্রসবের সময় হাসপাতাল খরচা , ওষুধ খরচা কোথার থেকে আসবে এই সব চিন্তা তার মাথায় ঘুরছিল। যেই টুকু জমানো ছিল সেই টাকায় এই দুই মাস ঘর চলেছে। সন্তান প্রসবের ঠিক দুই সপ্তাহ আগে দীপ এক চায়ের দোকানে বসে ভাবছিলো কী করবে, কোথার থেকে যোগাড় করবে এত টাকা ! তখনই তার পাশে বসে থাকা এক ব্যক্তি তাকে দেখে বুঝতে পারে যে দীপ কোনো কিছুর চিন্তায় মগ্ন,তার চা যে ঠান্ডা হয়ে জল হয়ে গেছে তার দিকে তার কোনো নজর নেই । তখন সেই ব্যক্তি দীপ কে জিজ্ঞাসা করে যে 'ও ভাই কি ভাবছো এত, তোমার চা পুরো জল হয়ে গেছে,তোমার তো কোনো হুস নেই দেখছি ?' কী হয়েছে ভাই এত চিন্তিত কেন?
তখন দীপ প্রথমে কিছু না বলে চলে যেতে চাইলে ওই ব্যক্তি দীপের হাত ধরে টেনে বসিয়ে আবার একই প্রশ্ন করে ; তখন দীপ ওই ব্যক্তিকে তার সমস্যার কথা বলে। তখন ওই ব্যক্তি দীপ কে বলে তোমার কাজের সমস্যা আমি মেটাতে পারবো না তবে টাকার সমস্যার সমাধান করে দিতে পারি যদি তুমি আমার কথা মতো চলো। ওই ব্যক্তির কথা শুনে কোনো কিছু না ভেবেই দীপ বলে আমি চলবো আপনার কথা মতো, বলুন কি করতে হবে আমি এখনই করছি। তখন ওই ব্যক্তি বলে আজ নয় পরের সপ্তাহে করতে হবে । তুমি তোমার ফোন নম্বরটা দাও কখন, কোথায়, কী করতে হবে আমি ফোন করে জানিয়ে দেব। দীপ তার ফোন নম্বরটা ওই ব্যক্তি কে দিয়ে দিল, তার পর ওই ব্যক্তি সেই চায়ের দোকান থেকে চলে গেলো। এক সপ্তাহ পর এক রাতে দীপের ফোনে ওই ব্যক্তির ফোন আসল , ওই ব্যক্তি দীপ কে একটা জায়গায় ডাকলো । যেখানে ওনার লোকেরা দীপের জন্য দাঁড়িয়ে আছে । দীপকে সেখানে তারাতারি যেতে বললো , আর কি করতে হবে সেটা ওখানে গেলেই দীপ জানতে পারবে। 'রাতের বেলায় কাজ' কথাটা শুনে দীপের মনে খটকা লাগলেও দীপের কাছে কোনো উপায় ছিল না, তাকে যেতে হবে টাকার জন্য। দীপ অঙ্কিতাকে সিকিউরিটি অফিসের জরুরি কাজের কথা বলে বাড়ি থেকে বেরোলো। অঙ্কিতা যেতে না দিতে চাইলেও অবশেষে তাকে যেতে দিতে হল যেহেতু দীপ জরুরি কাজের কথা বলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে দীপ পৌঁছে গেল সেই জায়গায় যেখানে ওই ব্যক্তি তাকে ডেকেছে। দীপ গিয়ে দেখলো ওখানে আরো ১১জন দাড়িয়ে আছে, দীপের আসার সাথে সাথে ওই ব্যক্তির ফোন আসল দীপের ফোনে। দীপ ফোন ধরে জিজ্ঞাসা করলো কি কাজের জন্য এখানে তাকে ডাকা হয়েছে আর এরা কারা, এরা এখানে কি করছে? প্রথমে ওই ব্যক্তি দীপ কে শান্ত হতে বললো, তারপর বললো এরা হল তোমার সহকর্মী তোমরা সবাই মিলে আমার একটা কাজ করবে যার জন্য তোমাদের এক এক জন কে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তোমাকে ৬০ লক্ষ দেবো কারণ তুমি এই দলের দায়িত্বে থাকবে মানে অধিনায়ক। এবার মন দিয়ে শোনো কি করতে হবে - তোমাদের একটি ব্যাংকের গাড়ি লুঠতে হবে । বাকি ১১ জন কে আমি বুঝিয়ে দিয়েছি কি করতে হবে, এখন তোমাকেও জানিয়ে দিলাম সুতরাং নিজেদের মধ্যে প্রশ্ন করে কোনো সময় নষ্ট করো না। তোমার সামনে একটা স্ক্রিন আছে ওই স্ক্রিন এ একটা ড্রাইভ লাগানো আছে শুধু স্ক্রিন টা চালু করো, চালু করলেই সমস্ত তথ্য, পরিকল্পণা, কোথায়, কখন কি করতে হবে আমি সব বর্ণনা করে রেখেছি । শুধু চালিয়ে দেখে নাও, তারপর পাশের আলমারি তে বন্দুক, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট আছে ওই গুলো পরে কাজে নেবে পরো আর একটা কথা তুমি না চাইলে তুমি এখান থেকে চলে যেতেই পারো শুধু এটাই বলবো সুযোগ একবার আসে, এটা বলে ওই ব্যক্তি ফোনটা কেটে দিল। দীপ প্রথমে ভাবলো এই চুরি সে করবে না কিন্তু এতো গুলো টাকার কথা আসতেই সে গিয়ে স্ক্রিনটা চালু করলো। সমস্ত কিছু মন দিয়ে দেখলো দীপ ও তার দল, তারপর তারা তৈরী হয়ে বেরিয়ে পড়ল গাড়ি লুঠ করতে। ১০ মিনিটের মধ্যেই তারা সেই রাস্তায় এসে দাড়ালো যেখান দিয়ে ওই ব্যাঙ্কের গাড়ি যাবে। ওই ব্যাক্তির কথা অনুযায়ী রাত তিনটের সময় ওই গাড়ি এখান থেকে যাবে সাথে আরো দুই গাড়ি গার্ড থাকবে। দীপ হাত ঘড়িতে সময় দেখল ২.৫৫ বাজে, দীপের চোখ ঘড়িতে ২.৫৬, ২.৫৮, ২.৫৯ , ৩ টে দীপ দেখলো সামনে দিয়ে গাড়ি আসছে। দীপরাও দুটো গাড়িতে এসেছিলো, তাদের পরিকল্পণা ছিল সোজাসুজি গুলি করতে করতে উল্টো দিকের গাড়ি গুলোর সাথে ধাক্কা মারা। দীপ গাড়ি আসতে দেখে গাড়ি চালককে গাড়ি চালু করতে বললো, আর বললো সোজা গিয়ে ওই গাড়িতে ধাক্কা মারতে। পরিকল্পণা মতো তারা গুলি চালাতে চালাতে সোজা গিয়ে ধাক্কা দিলো সিকিউরিটির গাড়ীতে, সাথে সাথে দীপ ও তার দল গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সামনের দিকে দুটো স্মোক বম্ব ছুড়ে দিল। সব দীপদের আয়ত্বে ছিল কিন্তু হটাৎ করে একটা গুলি আসলো সিকিউরিটির গাড়ির দিক থেকে।

সেই রাতে অঙ্কিতা শুয়ে শুয়ে ভাবছিল তার আর দীপের কাটানো ছোট বেলার মুহূর্তের কথা, তাদের বড়ো হয়ে ওঠার কথা। ভাবতে ভাবতে কখন তার চোখে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি ,আচমকা একটা বাজে স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেল অঙ্কিতার, দেওয়াল ঘড়িতে দেখলো ৩.০৫ বাজে।




চতুর্থ মহাবিশ্ব
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::




অঙ্কিতার সাথে দীপের বিয়েটা আচমকাই হয়ে গেল। অঙ্কিতার বিয়ে করার কথা ছিল তার প্রেমিক অভির সাথে পালিয়ে কিন্তু বিয়ে হয়ে গেল অভির বন্ধু দীপের সাথে । অভি শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছে, যে রাতে অঙ্কিতার সাথে অভির পালানোর কথা ছিল , সেই রাতে অভি ফোন বন্ধ করে বসে ছিল। দীপের কাজ ছিল অঙ্কিতাকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে ট্রেন স্টেশন অব্ধি পৌঁছে দেওয়া, কারণ দীপের বাড়ি অঙ্কিতার বাড়ির কাছে আর অভির বাড়ি অন্য এলাকায়। সময় মতো দীপ অঙ্কিতাকে নিয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলেও উপস্থিত হয়নি অভি। অনেক ফোন করেও যখন অঙ্কিতা দেখল অভি ফোন ধরছে না তখন অঙ্কিতা বুঝতে পেরেছে অভি তার সাথে প্রতারণা করেছে । সেই সময় অঙ্কিতার বাড়ি ফেরার পথ ছিল না, তাই অঙ্কিতা দীপ কে নিয়ে পালায় এবং বিয়ে করে। দীপ প্রথমে না যেতে চাইলেও পরে পালাতে রাজি হয়ে যায় কারণ অঙ্কিতার প্রতি দীপের দুর্বলতা প্রথম থেকে ছিল। বিয়ের সময় অঙ্কিতা ভাবছিলো - 'একদিন আগেও সে নিজেই জানতো না দীপের সাথে তার বিয়ে হবে সে তো ভেবেছে অভির সাথে থাকবে সারাজীবন কিন্তু কেমন যেন আচমকাই দীপের সাথে তার বিয়ে হয়ে গেল। এতে দীপের কোনো দোষ নেই দোষ তো তার সে ভুল মানুষকে ভালোবেসে ছিলো, দীপ তো বিয়ে করে তার জীবন বাঁচিয়েছে।' বিয়ের পর তারা একটি হোটেলে উঠেছে দুই দিনের জন্য, দুই দিন পর তারা উঠল ভাড়া বাড়িতে। এক সাথে থাকতে থাকতে দুজনের মধ্যে একটা ভালোবাসা বাড়তে লাগলো। অঙ্কিতা নিজের মনে নিজেই বলছে সে এতদিন ভুল লোককে ভালোবেসেছে, সে ভগবান কে ধন্যবাদ দিচ্ছে দীপের সাথে তার বিয়ে করিয়ে দেওয়ার জন্য । দীপ সত্যি খুব ভালো ছেলে , পেশায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার যাকে বলে আদর্শ পুরুষ, তাই দীপের প্রতি অঙ্কিতার ভালোবাসা দিন দিন বাড়তে লাগলো। এই ভাবে হাসি খুশিতে, আনন্দে ছয় মাস কেটে গেল; ছয় মাস পর খুশির খবর টা অঙ্কিতা প্রথম দীপকে জানায় যে সে গর্ভবতী। এই কথা শুনে দীপ আনন্দে অঙ্কিতা কে কোলে তুলে নিয়ে গোল গোল করে ঘোরাতে লাগে । তারপর দীপ অঙ্কিতা কে নীচে নামিয়ে কাপালে চুম্বন করে বলে যে আজ সে খুব খুশি, এর আগে শুধু বিয়ের দিন সে এত খুশি ছিল। দীপ অঙ্কিতা কে বলে আজ থেকে তোমার সব কাজ বন্ধ, আজ থেকে সমস্ত কাজ কাজের মাসি করবে, দরকার হলে আয়া রেখে দেবো। তুমি শুধু আরাম করবে কারণ এই সময় বেশি কাজ করা উচিত নয় তোমার। তখন অঙ্কিতা বলে আমি এখন ঠিক আছি, যখন পারবো না তখন আমি নিজে থেকেই বলবো। পারা পারির কথা নয় আমি জানি তুমি পারবে, কিন্তু বিপদ আসতে কতখন দীপ বললো ! ঠিক আছে আমি করবো না, অঙ্কিতা বললো দীপ কে জরিয়ে ধরে । এই ভাবে হাসিখুশি তে আরো নয় মাস কেটে গেল। সন্তান প্রসবের সময় কাছে চলে আসছিল । সন্তান প্রসবের এক সপ্তাহ আগে দীপের ফোনে একটা ফোন আসে, ফোন টা ছিল দীপের ব্যাঙ্কের এক ক্লার্কের যার নাম ছিল শ্যামল। দীপ তাকে শ্যামল দা বলে ডাকতো কারণ তিনি বয়সে দীপের থেকে অনেক বড়ো ছিল। তার কাজ ছিল ব্যাঙ্ক সময় মতো খোলা বন্ধ করা। ছুটির দিনে রাত ন'টার সময় শ্যামলদার ফোন দেখে দীপ বুঝতে পারছিল কিছু একটা হয়েছে ! না হলে শ্যামল দা এতো রাতে ফোন করতো না । তাই সাথে সাথে দীপ ফোনটা ধরলো , ফোন ধরতেই শ্যামল দা বলে উঠলো স্যার আপনি একটু ব্যাঙ্কে আসতে পড়বেন, পুলিশ এসেছে ব্যাঙ্কের বাইরে আমি দারিয়ে আছি পুলিশ অফিসারদের সাথে। তখন শ্যামল দার হাতের থেকে একজন পুলিশ অফিসার ফোন টা নিয়ে বললো - ম্যানেজার বাবু আমি সাব ইনসপেক্টর অভিজিৎ চন্দ্র রায় বলছি। তখন দীপের নাম টা শুনে কেমন একটা লাগলো, নিজের মনেই কিছু মনে করার চেষ্টা করছিল। তখন উল্টো দিক থেকে সাব ইন্সপেক্টর বললেন আপনি শুনছেন, এটা বলার পর দীপ ভাবনার কথা ভুলে বললো হ্যা বলুন অফিসার কী হয়েছে? এত রাতে আপনি আমাদের শ্যামল দা'কে নিয়ে ব্যাঙ্কের বাইরে দাড়িয়ে কেন আছেন, ব্যাপার টা কী? তখন পুলিশ ইন্সপেক্টর বললো আমাদের কাছে একজন রেডিও অপারেটরের ফোন এসেছিলো কিছুক্ষন আগে , তার কথা অনুযায়ী তিনি যখন রেডিও সিগনাল ইন্টার্সপ্ট করছিল তখন দুটি ওয়াকিটকির কথোপকথন শোনে। ওই কথপোকথনের কথা শুনে মনে হচ্ছে কোনো একটি দল ব্যাঙ্ক চুরি করছে আর নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের জন্য তারা ওয়াকিটকি ব্যবহার করছে। ওই কথপোকথনের রেকডিং আমদেরও শুনিয়েছে, আমরাও শুনে বুঝলাম কোনো ব্যাঙ্কে চুরি হচ্ছে এই মুহূর্তে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে কথোপকথনের রেকডিং তার মধ্যে কোথাও ব্যাঙ্কের নাম উল্লেখ নেই। তাই আমরা সব ব্যাঙ্ক এ গিয়ে দেখছি ব্যাঙ্ক গুলো ঠিক আছে কিনা। আপনাদের বাইরে দেখে ঠিক আছে মনে হচ্ছে কিন্তু আমদের ভিতর টা দেখতে হবে এবং লকার রুম টাও দেখতে হবে। তাই আপনার অনুমতি ছাড়া শ্যামল বাবু খুলবে না বললো , আর আপনাকে ছাড়া লকার রুমও খোলা যাবে না বললো তাই আপনাকে একটু কষ্ট করে আসতে হবে। দীপ শুনে বললো আচ্ছা আমি আসছি বলে ফোনটা কেটে দিল।

দীপ অঙ্কিতার সামনেই ফোনে কথা বলছিল তাই ফোন রাখার সাথে সাথে অঙ্কিতা দীপ কে বললো এতো রাতে কোথায় যাবে ? ছুটির দিনে রাতের বেলায় কেন ডাকছে ? তোমাদের ব্যাংকের ক্লার্ক কে কী পুলিশে ধরেছে? এক এর পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো অঙ্কিতা, দীপ না পেরে বললো একটু থামো, আগে শোনো কি হয়েছে তারপর করো প্রশ্ন। অঙ্কিতা বললো কি হয়েছে, তারপর দীপ পুরো ঘটনাটার কথা অঙ্কিতা কে জানালো এবং এটাও বললো তাকে এখন ব্যাঙ্কে যেতে হবে । সব শুনে অঙ্কিতা বললো তাহলে তো তোমার এক মুহুর্ত দাড়ানো উচিত না যাও তাড়াতাড়ী যাও। এটা শুনে দীপ কিছুটা আবাক হল যে মেয়ে কিছুক্ষন আগে এত প্রশ্ন করছিল সেই মেয়ে তাকে যেতে বলছে। পরিস্থিতির গুরত্ব অঙ্কিতা বুঝতে পেরেছে এটা দেখে দীপের ভালো লাগলো। তাই সময় নষ্ট না করে দীপ সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লো, গাড়ি নিয়ে।

আড়াই ঘন্টা পর দীপ গিয়ে পৌঁছলো ব্যাঙ্কে। ব্যাঙ্কের সামনে গিয়ে দেখল এক গাড়ি পুলিশ ও শ্যামল দা দাড়িয়ে আছে। তারাতারি গাড়ি থেকে বেরিয়ে দীপ শ্যামল দা কে বলল খোলো ব্যাঙ্কটা এমনেই অনেকক্ষণ আপনারা দাড়িয়ে আছেন । এই কথা শুনে শ্যামল দা দৌঁড়ে গিয়ে ব্যাঙ্ক খুললো এবং ভিতরের ঢুকেই ব্যাঙ্কের সব আলো গুলো জ্বালিয়ে দিলো। তারপর পুলিশ ঢুকলো সব শেষে ঢুকলো দীপ। ব্যাঙ্কে ঢুকে দীপের নজর গেল সব ইন্সপেক্টর অভিজিৎ চন্দ্র রায়ের দিকে, ঠিক সেই সময় অভিজিতের নজর গেল দীপের দিকে দুজনেই দুজন কে দেখে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। টানা ১ মিনিট ওই ভাবে দারিয়ে থাকার পর অভিজিতের স্তব্ধতা ভাঙলো অন্য পুলিশের ডাকে। স্যার এখানে কিছু নেই শুধু লকার রুম দেখলেই হয়ে যাবে। তখন অভিজিৎ দীপের পাশে গিয়ে বলল ' কেমন আছিস বন্ধু , শুনলাম ওই রাতে তোরা পালিয়ে বিয়ে করেছিস, ধন্যবাদ তোকে তুই অঙ্কিতাকে বিয়ে করে ওর সন্মান টা রেখেছিস।' এটা বলে অভিজিৎ দীপের গলা জড়িয়ে ধরলো আর বললো আমার কিছু করার ছিল না ওই রাতে, এক দিকে অঙ্কিতা অন্য দিকে মা বাবা আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না । পালানোর আগের দিন রাতে ফোনে অঙ্কিতার সাথে যখন পালনোর কথা আলোচনা করছিলাম তখন মা পাশ থেকে শুনে নেয় এবং সেই কথা গিয়ে বাবাকে জানায়। তারপর দিন সকাল থেকে তারা আমাকে বুঝতে দেয়নি যে তারা পুরো ব্যাপারটা জানে, রাত ৮ সময় মা আমার ফোনটা চায় ফোন করার জন্য, ফোন টা হাতে নিয়ে মিথ্যা ফোন লাগিয়ে কথা বলতে বলতে আমাদের একতলার বারান্দা থেকে ফোনটা নিচে ফেলে দেয়। আমাকে গিয়ে বলে কথা বলতে বলতে পরে গেছে , প্রথমে আমি কথাটা শুনে রেগে গিয়েছিলাম তারপর আমি নিজেকে সামলে নিলাম। আমি তখনও বুঝতে পারিনি যে ওটা ইচ্ছে করে ভাঙ্গা হয়েছে। রাতে মা বাবা ঘুমানোর পর পালানোর কথা ছিল কিন্তু খাওয়া দাওয়ার পর তারা ড্রইং রুমে কথা বলে যাচ্ছে, অন্য দিন ওই সময় যেখানে শুয়ে পরে সেখানে ওই দিন কথা বলেই যাচ্ছিল। আমি ওনাদের বলি আজ ঘুমাতে যাচ্ছ না কেন? তখন উল্টো আমাকে বলে তুই ঘুমতে যা আমরা ঘুমোতে যাচ্ছি। আমি তখন দেখলাম আমার হাতে সময় কম ওনারা ঘুমোতে না গেলে আমি বেরোতে পারবো না, তাই আমি আমার ঘরে গিয়ে দরজা ভেজিয়ে দিলাম । তার ঠিক এক মিনিটের মধ্যে ধপ করে আওয়াজ হল দরজা বন্ধ করার, আমি হটাৎ চমকে উঠলাম! দরজার সামনে গিয়ে দেখি দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছে। আমি মা বাবা কে বলি এটা কি হল তোমরা বাইরের দিক থেকে দরজা কেনো বন্ধ করে দিয়েছো? খোলো দরজা আমি বেরোবো, ওনারা বলে আজ রাতে দরজা বন্ধ থাকবে কাল সকালের আগে খুলবে না। আজ রাতে তোকে কোথাও যেতে দেব না। তখন আমি বলি কি জাতা বলছো আমি কোথায় যাবো, তখন আমার মা বলে গতকাল রাতে তোদের কথা আমি সব শুনে নিয়েছি। ওই মেয়ের সাথে তোকে আমি পালতে দেবো না । কাল সকালে তোর বাবা গিয়ে ওই মেয়েকে বলে আসবে তোর সাথে সম্পর্ক রাখতে না, ভালো ভাবে শুনলে ভালো না হলে অন্য ব্যবস্থা নেবে তোর বাবা। ওই মেয়ের সাথে আমাদের পরিবারে যায় না ওদের জাত আলাদা, তোর পক্ষে ভালো এটাই তুই ওই মেয়ের কথা ভুলে যা তাতে ওই মেয়ে ভাল থাকবে না হলে তুই তোর বাবাকে চিনিস ভালো করেই। আমি অনেক কিছু করে বেরোনোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বেরোতে পারিনি। আর আমার ফোন টাও ভেঙ্গে গিয়েছিল যে কারনে আমি অঙ্কিতা কে জানাতে পারিনি। দুই দিন পরে শুনলাম তোরা দুজনে পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছিস , শুনে খারাপ লাগলেও খানিক বাদে আমি তোকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছি। তুই অনেক বড় মাপের কাজ করেছিস অঙ্কিতা কে ওই রাতে বিয়ে করে।

যখন অভি দীপকে এই কথা গুলো বলছিলো তখন ব্যাঙ্কের ভীতর থেকে ধপ করে আওয়াজ হল। আওয়াজের শব্দ আসার সাথে সাথে দীপ ভিতরের দিকে যেতে লাগলো তার সাথে ছিল অভি, শ্যামল ও বাকি পুলিশ অফিসাররা। দীপ গিয়ে লকার রুমের দরজার সামনে এসে কান পাতলো, কান পাতার সাথে সাথে শব্দ এলো ভিতর থেকে। দীপের সাথে বাকিরাও ওই শব্দ শুনতে পেল । অভি সাথে সাথে সবাই কে জায়গা নিতে বললো, আর দীপকে চোখের ইশারায় লকার রুমটা খুলতে বলল। লকার রুমের দরজাটা ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির । এই দরজা খোলার অনুমতি ছিল ৩ জনের কাছে, যাদের মধ্যে দীপ হল একজন। দীপের রেটিনা স্ক্যানের মাধ্যমে লকারের দরজা যখন খুলছিল, সেই শব্দে ভিতরে থাকা চোরেরা সজাগ হয়ে যায়, দরজা খুলতেই একটা গুলি দীপের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। সোজা গিয়ে লাগে এক পুলিশ কর্মীর কপালে। সাথে সাথে পুলিশের দিক থেকেও গুলি চলে।

সেই রাতে অঙ্কিতা শুয়ে শুয়ে ভাবছিল দীপের সাথে কাটানো সেই ছোট একটা মুহূর্তের কথা, যেই মুহূর্তটা তাদের দুজনকে এক করে দিয়েছে, সেই বাড়ি থেকে পালানোর মুহূর্তটা। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন তার চোখে চোখ লেগে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। আচমকা একটা বাজে স্বপ্নে ঘুমটা ভেঙে গেল অঙ্কিতার, দেওয়াল ঘড়িতে দেখলো ৩.০৫ বাজে।




প্রত্যেক মহাবিশ্বের মায়াজাল
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::





প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় , চতুর্থ নয় এই রকম যত গুলি মহাবিশ্ব আছে, তার প্রত্যেকটি মহাবিশ্বের মায়াজালে অঙ্কিতা, দীপ ও অভিজিৎ -দের দেখা যায়। কোথাও দীপ ও অঙ্কিতার চেনা, কোথাও তাদের অচেনা। যারা একে অপরের সাথে সুখে শান্তিতে বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছিল। কোথাও তারা ভালোবেসে, কোথাও দেখাশুনা করে , আবার কোথাও হটাৎ বিয়ে হয়েছে । দীপ পেশায় কোথাও পুলিশ, কোথাও সেনাবাহিনীতে, কোথাও ডাক্তার, কোথাও সিকিউরিটি গার্ড, কোথাও চোর, কোথাও ডাকাত, কোথাও বড়ো আবার কোথাও ছোটো ব্যাবসায়ী। এই রকম বিভিন্ন মহাবিশ্বে বিভিন্ন রকম পেশায় নিয়োজিত দীপ। অন্য দিকে অঙ্কিতা কোথাও গৃহবধূ, কোথাও শিক্ষিকা, কোথাও অভিনেতা, কোথাও সরকারি , কোথাও বেসরকারি, আবার কোথাও সঙ্গীত শিল্পী এই রকম বিভিন্ন মহাবিশ্বে বিভিন্ন রকম পেশায় নিয়োজিত।


প্রত্যেক মহাবিশ্বে তারা যেমন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত , তেমনি বিভিন্ন ভাবে তাদের বিয়ে হয়। তবে কিছু জিনিস তাদের মধ্যে এক ছিল - যেমন তাদের বিয়ে, অঙ্কিতার গর্ভধারিনী হওয়া , ঘুম থেকে একি সময় ওঠা , তাদের জন্ম ও মৃত্যু ইত্যাদি। রাত ৩.০৫ প্রত্যেক মহাবিশ্বের অঙ্কিতার ঘুম ভাঙলো একটি বাজে স্বপ্নে। অঙ্কিতার ৩.০৫ এ ঘুম থেকে ওঠার কারণ - দীপের সাথে অন্য মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্বপ্ন দেখেছিল অঙ্কিতা তাই তার ঘুম ভেঙে যায় । এক মহাবিশ্বের ঘটে যাওয়া ঘটনার স্বপ্ন আরেক মহাবিশ্বের অঙ্কিতার স্বপ্নে আসে । অঙ্কিতার কাছে সেটা দুরস্বপ্ন হলেও স্বপ্নে দীপের উপস্থিতি তাকে ভাবাছিল । অন্য কোনো মহাবিশ্বে ঘটে যাওয়া ঘটনার স্বপ্ন কিনা সেটা অঙ্কিতার জানা ছিলনা ঠিকই কিন্ত স্বপ্নটা ছিল দীপকে নিয়ে, তাই তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। রাত ৩.০৬ অঙ্কিতা ফোন করে দীপের ফোনে , ফোন বেজে গেল দীপ ধরলো না। তারপর থেকে অঙ্কিতা ক্রমাগত ফোন করে গেল কিন্তু ফোন তুললো না দীপ। প্রতি মহাবিশ্বে ভোর ৫.০৫ এর সময় ফোন এল অঙ্কিতার । কোথাও অচেনা নম্বর থেকে, কোথাও আবার চেনা চেনা নম্বর থেকে। ফোন ধরে অঙ্কিতা হ্যাঁলো বলতেই উল্টো দিকের ব্যক্তি বললো আপনি কী দীপের স্ত্রী? অঙ্কিতা বললো হ্যা আমি দীপের স্ত্রী! আপনি কে বলছেন? উল্টো দিকের ব্যক্তি বললেন আমি - লেফটেন্যান্ট জেনারেল অভিজিৎ, কোথাও ডাক্তার অভিজিৎ, কোথাও সিকিউরিটি গার্ড অভিজিৎ আবার কোথাও ইন্সপেক্টর অভিজিৎ বলছি ; আপনাকে / তোমাকে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে দীপ আর এই দুনিয়ায় নেই , ওর গুলি লেগে মৃত্যু হয়েছে ৩.০৫ নাগাদ। আপনি/তুমি তাড়াতাড়ি আসুন/ আসো হাসপাতালে । এইটুকু কথা শুনতেই অঙ্কিতার ফোনটা পরে গেল মেঝেতে, অঙ্কিতা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো বিছানায় কিছুক্ষন পর তার জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে অঙ্কিতা ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে গেল, হাসপাতালে গিয়ে দেখলো দীপের নীরস দেহটা পরে আছে হাসপাতালের মর্গে। সামনে গিয়ে ভালো করে দেখতেই অঙ্কিতা দেখতে পেলো দীপের কপালে কেউ বড় টিপ পরিয়ে দিয়েছে , দীপ শুয়ে আছে নিশ্চিন্তে। এই দৃশ্য অঙ্কিতা নিতে না পেরে আবার অজ্ঞান হয়ে পরতে গিয়েছিল কিন্তু সেই সময় অভিজিৎ তাকে ধরে নেয়।

দীপের চলে যাওয়ার দুঃখে অঙ্কিতার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থেকে, সন্তান প্রসবের সময় কয়েকদিন পর হলেও ডাক্তাররা সন্তান ও মায়ের কথা মাথায় রেখে সন্তান প্রসাবের অপরেশন করে। অপারেশনের মাধ্যমে অঙ্কিতা একটি সুস্থ ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। দীপের মারা যাওয়ার ২ দিন পর রাত ৩.০৫ নাগাদ অঙ্কিতা এই ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়। দীপের সাথে কাটানো মুহূর্ত তাদের ভালোবাসা হয়তো কোনদিন ভুলতে পারবে না অঙ্কিতা কিন্তু দীপের সন্তানের কথা ভেবে অঙ্কিতা নিজের মন কে শক্ত করে এবং জীবনে এগিয়ে যায়।
দীপের মৃত্যুর ২ বছর পর, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অঙ্কিতা অভিজিৎ কে বিয়ে করে ।





©:সমাপ্ত:©