Read Late night handcuffs by Saikat Mukherjee in Bengali Horror Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

নিশি রাতের হাতছানি

শরীর ঝাকি দিয়ে অরূপ এর ঘুম ভাঙলো। ঘুমের ভেতর হঠাৎ পড়ে যাবার মত একটা অনুভুতি হলো। বুকটা এখনও ধুকধুক করছে। ঘরের কোণে রাখা হারিকেনের আলোতে, দেয়ালে পড়া ছায়ায় ঘরটা অচেনা লাগছে। তারপরই অরূপের মনে হোলো, ঘরটা তার নিজের না। কাল রাতেই অরূপ এই বাগানবাড়িতে এসে পৌঁছেছে। দোতালার একটা ঘর, তিনবেলা খাবার সহ, ভাড়া নিয়েছে। বাড়তি টাকা দিয়েছে বারবার চা এনে দেবার জন্য। অরূপের লেখা উপন্যাস ঠিক শেষের দিকে এসে আটকে আছে। শহর ছেড়ে এই বাগানবাড়িতে উঠার এই একটাই উদ্দেশ্য, গল্পটা শেষ করা। বিকেলের আলো থাকতে, লিখতে লিখতে
ক্লান্ত হয়ে সে বিছানায় এসে শূয়েছে। নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

কোনো এক সময় হয়তো মহেশ এসে হারিকেনটা রেখে গেছে। টেবিলে বই, খাতা, কাগজ, সব এলোমেলো ভাবে পরে আছে। ঘরের বাতাস প্রচন্ড ভারী, অস্বস্তিকর গরম। অরূপ এক হাত বাড়িয়ে জানালার পাল্লাটা খুলে দিল আর অন্য হাতে খাতার ওপর থেকে চশমাটা নিয়ে চোখে দিল। মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো, বাগানে একটা মেয়ে ধীর পায়ে হাঁটছে। অরূপ একটু অবাক হলো। রাত কটা বাজে অরূপ এর কোনো ধারণা নেই। বাগানবাড়িতে পৌঁছানোর পরই তার পকেট ঘড়িটি থেমে গেছে। এই গ্রাম এলাকায় ঘড়ি সারানোর কোনো ব্যাবস্থা নেই। এটা সে বিকেলেই মহেশ এর থেকে জেনেছে।

মেয়েটা অন্যমনস্ক ভাবে একা হেঁটেই চলেছে। বাগানে কোনো আলো নেই। বারান্দায় ঝুলানো কিছু হারিকেনের আলো পুরোপুরি বাগানে পৌঁছায় না। অরূপ দেখে ধারণা করলো মেয়েটার পরনের শাড়িটা হালকা নীল রঙের, ভালো মানের। সম্ভবত সেও বাগানবাড়িতে পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে এসেছে।

খোলা জানালা দিয়ে হটাৎ করে বাতাস এসে টেবিলে রাখা কাগজ গুলো উড়িয়ে দিল। অরূপ মেঝেতে ছড়িয়ে পরা কাগজ গুলো এক এক করে কুড়িয়ে নিল। কাগজ গুলো টেবিলে গুছিয়ে রাখতে রাখতে খেয়াল করলো মেয়েটি নেই। রাত হয়তো অনেক হয়েছে, কেননা মহেশ বা অন্য কারোর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা আর। সে হয়তো তার নিজের ঘরে চলে গেছে। ভোর সকালে দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ এ অরূপ এর ঘুম ভাঙলো। চেয়ারে রাখা পাঞ্জাবিটা গায়ে পরতে পরতে সে দরজা খুললো। দরজায় মহেশ দাড়িয়ে, "বাবু নাস্তা করবেন না? কাল রাতে ও কিছু খাননি।"

খাবো। অরূপ বলল! নিচের ঘরে নাস্তা দেয়া আছে বাবু।" তুমি যাও, আমি আসছি।" মহেশ যেতে যাবে এমন সময় অরূপ পেছন থেকে ডাক দিলো, "আচ্ছা মহেশ, অন্য কামরায় যারা থাকছে, তারা কোথাথেকে এসেছে? শহর থেকে?" "কোন কামরায় বাবু? মহেশ বলল। আপনি ছাড়া তো আর কেউ নেই।" আমি ছাড়া আর কেউ নেই? "না, এই সময় এখানে কেউ আসে না। হুটহাট বৃষ্টি, পানি জমে থাকে, ঝোপঝাড় থেকে সাপ কেঁচো কত কি আসে। এখানে আর মাস খানেকপর লোক আসবে। তখন ঘুরে বেড়ানোর জন্য খুব সুন্দর জায়গা। "আশেপাশে কারো বাড়ি আছে?" অরূপ জিজ্ঞেস করলো। "পাশের বাড়ি? সে তো অনেক দূর। কেনো বাবু?" "নাহ্ তেমন কিছু না, রাতে একটা মেয়ে বাগানে হাঁটাহাঁটি করছিল। তাই জানতে চাইলাম। মহেশের চেহারাটা অন্ধকার হয়ে গেলো। পরক্ষনেই সে বললো, "আমি জানিনা বাবু৷" বলতেই সে মেঝের থেকে হারিকেনটা তুলে তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। বৃদ্ধ মহেশ বলতে গেলে তার সারাটা জীবনই এই বাড়িতে কাটিয়েছে। বাড়ির মালিকেরা গ্রাম ছেড়েছে বহু বছর আগে। রেখে গেছে শুধু মহেশকে দেখভাল করার জন্য।

কামরা ভাড়া দেয়া, ভাড়া তোলা, রান্না করা, সব দায়িত্বই তার। অরূপ এর ধারণা ছিল সে হয়তো সবাই কেই চেনে মেয়েটাকে দেখলে হয়তো চিনবে। বয়স এর কারণে হয়তো এখন মনে আসছে না। অরূপ তৈরি হয়ে, লেখার খাতা-কলম হাতে নিয়ে, নাস্তা করার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। অরূপ যখন ঘরে ফিরল তখন বেশ রাত। সারাদিন পুকুর ঘাটে, বারান্দায়, কখনো ঘাছের নিচে বসে সে লিখেছে। দরজার কাছে মহেশ এর রেখে যাওয়া জ্বালানো হারিকেন, ঘরে ঢুকে অরূপ হাতের কাগজপত্র ও হারিকেনটা টেবিলে রেখে, চেয়ারে বসলো। সামনে জানালাটা খোলা। যাবার সময় সে বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল। ভাগ্যিস ঝড় বৃষ্টি হয়নি। নইলে বই খাতা সব পানিতে ভেসে যেত। একটা বই খুলে অরূপ অন্যমনস্ক ভাবে পাতা উল্টাচ্ছে। দুই একটা শব্দ চোখে পরলেও সেদিকে তেমন মনযোগ নেই তার। লেখাটা তার মন মত হচ্ছে না। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলো কাল রাতের মেয়েটা আবার এসেছে। হাঁটছে বাগানে। অরূপ একটু মাথা বাড়িয়ে আশেপাশে দেখলো। আর কাউকে দেখা গেলো না। মহেশকেও না। মেয়েটা মাথা তুলে তাকালো। অরূপ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। অরূপ যে তাকে দেখছে, সেটা কি মেয়েটা লক্ষ করেছে? নাহ্। মেয়েটা বাড়িটাকে দেখলো, তারপর ঘুরে পুকুর ঘাটের দিকে চলে গেলো। অরুপ তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুর ঘাটের দিকে রওনা দিলো। মেয়েটা ঘাটে বসে আছে। পাকা, বাঁধানো ঘাট। সে পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে নিজের চিন্তায় মগ্ন। অরূপ এসে দাড়ানোর পরেও তার ধ্যান ভাঙলো না।

"শুনছেন?" মেয়েটা খুব আস্তে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে তাকালো। হটাৎ অরূপ এর গলার আওয়াজে চমকালো না। অপরিচিত পুরুষকে এত রাতে তার সাথে ঘাটে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ঘাবড়ালো না। "আপনি? এখানে...?" অরূপ জিজ্ঞেস করলো। মেয়েটা অল্প হাসলো, কোনো জবাব দিলো না। অরূপ নিজ থেকেই বললো, " আমি এই বাড়িতে আছি।" মেয়েটা তাকালো বাড়ির দিকে। "ঘর ভাড়া করে থাকছি। আপনি কি এখানের আশেপাশে থাকেন?" মেয়েটা চোখ নামিয়ে কিছু চিন্তা করলো। তারপর মাথা নেড়ে জানালো, হ্যাঁ। "ওহ্ আচ্ছা। মহেশকে চেনেন হয়তো। এ বাড়ির লোক। সে বলল পরের বাড়ি অনেক দূর। আপনি কি এখানে একা....?" মেয়েটা আবারো মাথা নেড়ে জানালো, হ্যাঁ। "এত দূর থেকে একা এসেছেন?" মেয়েটা আবারো হেসে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

"এত দূর থেকে, এত রাতে, আপনার ভয় লাগে না?" এবার মেয়েটার চেহারা বদলে গেলো। দেখে মনে হলো এখন সে ভয় পাচ্ছে। অরূপ প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য বললো, "আমার নাম অরূপ। শহর থেকে এসেছি, লেখক হবার চেষ্টায়। আপনার নামটা জানতে পারি?" মেয়েটা অরূপ এর দিকে তাকালো এবং আস্তে করে বললো, "নিশি।"

অদ্ভুত সুন্দর কণ্ঠ। স্বচ্ছ মনে হলো ঝিরিঝিরি বাতাস এর সাথে ভেসে আসা সুন্দর একটি সূর। অরূপ লক্ষ করলো মেয়েটা অসম্ভব রূপবতী। তাকে দেখে মনে হচ্ছে চেহারায় চাঁদ এর আলোর আভা। চেহারায় একটা দুঃখের ছাপ, মায়া ভরা চোখ। অরূপ মুগ্ধ হয়ে দেখছে, হালকা বাতাসে উড়ছে নিশির চুল গুলো।
বাতাসের বেগ বেড়ে চলেছে। নিশি উঠে দাড়িয়ে বললো, " আমায় যেতে হবে।" অরূপ কিছু বলবে, তাকে যেতে মানা করবে, বা তাকে এগিয়ে দেবার জন্য যাবে, তার আগেই নিশি সিড়ি দিয়ে নেমে, পুকুরের ধার দিয়ে হেঁটে, অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। পরদিন সকালে নাস্তার টেবিলে অরূপ মহেশ কে বললো, "মহেশ, রোজ রাতে বাগানে একটা মেয়ে হাঁটতে আসে, মেয়েটা কে? দূর থেকে আসে বললো।" মহেশ চুপ করে তার হাতের কাজ চালিয়ে গেলো, কোনো আওয়াজ
করলো না। অরূপ আবার বললো, "এত দূর থেকে একটা মেয়ে আসা যাওয়া করে, কত বিপদ আপদ হতে পারে। তুমি তাকে সাবধান করে দাওনা কেনো?” মহেশ এবারও জবাব দিলো না।

তুমি নিশ্চই ওর পরিবারকে চেনো। তার বাড়ি চেনো। তার বাড়ি কোথায় আমাকে বলবে। আমিই যাব।" মহেশ এবার ঘর থেকে বের হয়ে যাবার জন্য দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। মহেশ, মেয়েটার বাড়ি কোথায় বললে না যে?"

মহেশ উত্তর দিলো, " আমি কিছু জানি না বাবু। আমি কাউকে দেখিনি।"

"আমি দু রাত এখানে আছি, দু রাতেই মেয়েটাকে দেখেছি, আর তুমি কখনো দেখনি?” "আমি কাউকে দেখিনি বাবু।" বলেই মহেশ চলে গেলো।

অরূপ আজ সারাদিন তার ঘরেই ছিল। লেখাটা শেষ করার চেষ্টা করছে। মহেশ দরজার কড়া নেড়ে ঘরে ঢুকলো। অরূপ এর সামনে এক কাপ চা রেখে চলে যাবার জন্য এগোলো। দরজায় যেয়ে মহেশ থামলো, ওখান থেকেই বললো, "বাবু, কেউ আপনাকে ডাকলে যাবেন না।

অরূপ চোখ না তুলেই জিজ্ঞেস করলো, "কি বলছো? কোথায় যাব না?" মহেশ ঘুরে, এক পা এগিয়ে, একটু ব্যাস্ততার সাথে বললো, কেউ আপনার নাম ধরে ডাকলে যাবেন না বাবু। জায়গাটা ভালো না। কেউ আপনার নাম ধরে ডাকলে আপনি অপেক্ষা করবেন। সে তিনবার ডাকে না বাবু। কেউ আপনার নাম ধরে ডাকলে আপনি অপেক্ষা করবেন । তিনবার ডাকার জন্য অপেক্ষা করবেন। সে তিনবার ডাকে না, সে কখনোই তিনবার ডাকে না...।" নিজে নিজেই হড়বড় করে বলতে বলতে মহেশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অরূপ অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে রইলো, মহেশের কথার কিছুই সে বুঝল না। মহেশের কথার খুব একটা গুরুত্বও সে দিলো না। বয়স্ক লোক, নিরিবিলী জঙ্গলের মাঝখানে এত বড় একটা বাড়িতে একা থাকে। তার মাথার আর কথার কতটুকুই বা ঠিক আছে? মহেশের চিন্তা বাদ দিয়ে অরূপ চায়ের কাপে চুমুক দিল ।

মাঝ রাতে অরূপের ঘুম ভাঙলো। ঘরে হিম হিম ঠান্ডা বাতাস বইছে। জানালাটা খোলা। উঠে জানালা বন্ধ করার ইচ্ছে হলো না অরূপের। ঘুমটা কেটে যাবে। সে চাদর টেনে, পাশ ফিরে আবারো চোখ বন্ধ করলো। "অরূপ...।" কিছুক্ষণ পর অরূপ অবাক হয়ে চোখ খুললো। কেউ কি তাকে ডাকছে? মনে হলো অনেক দূর থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। অরূপ একটু অবাক হয়েই উঠে বসলো। কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো। এবার আরেকটু কাছে থেকে আওয়াজ এলো, "অরূপ...।"

অরূপ তাড়াতাড়ি জানালার কাছে এসে দাড়ালো। দেখলো নিশি বাগানে দাড়িয়ে। তার চেহারায় একটা হয়রানির ছাপ। অরূপ কে জানালায় দাড়াতে দেখে, নিশি হাত ইশারা করে অরূপকে নিচে নামতে বললো। তার চেহারায়, হাতের ইশারায়, এক রকম অস্থিরতা টের পেলো অরূপ। তাড়াহুড়ো করে নিচে এসে, নিশির সামনে এসে দাড়ালো।

নিশি বলল, "আমায় একটু সাহায্য করবে?" "অবশ্যই করবো। কোনো ঝামেলা হয়েছে? আমি কি করতে পারি বলুন?"

"আমি ফিরে যেতে পারছি না। তুমি কি আমাকে একটু পৌঁছে দেবে?" "এতো রাতে...আমি? আমি তো এলাকাটা চিনি না।" "আমি তো চিনি। তুমি শুধু আমার সাথে যাবে। আমি তোমাকে নিয়ে যাবো। "

অরূপ ভাবলো, নিশি পথ চিনিয়ে তাকে নিয়ে যাবে, কিন্তু সে একা পথ চিনে ফিরবে কি করে? অরূপ বললো, "আপনি না হয় আজকে রাতটা এখানে থাকুন। মহেশকে বলে আপনার জন্য একটা ঘর খুলে দেই। কাল সকালে আপনাকে পৌঁছে দেবো।

নিশি বাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, "আমি এখানে থাকতে পারবো না।" তারপর অরুপের দিকে তাকিয়ে বললো, " আমায় এখনই যেতে হবে। বলো আমার সাথে যাবে।

"যাবো। কিন্তু আমি ফিরবো কি করে?" এবার নিশি হাসলো। অরূপ এর হাতটা ধরে বললো, "তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।"

অরূপ অন্য এক ভুবনে হারিয়ে যাচ্ছে। এই অপুরুপ সুন্দর মেয়েটি তার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। অরূপের মনে হলো, সে সারাটা জীবন এই হাতটি ধরে থাকতে পারবে। অরূপ বুঝতে পারছে, সে নিজের অজান্তেই, নিশিকে ভালবেসে ফেলেছে। কখন, সে নিজেও জানে না। হয়তো যখন নিশি তার হাতটা স্পর্শ করেছে, হয়তো যখন প্রথম তার সাথে কথা হয়েছে। হয়তো তখন, যখন তার মায়া ভরা চোখ দুটো দেখেছে, হয়তো যখন ওকে বাগানে হাঁটতে দেখেছে। অরূপ জানে না। শুধু জানে, সে তার গল্পের শেষটা পেয়ে গেছে, আর এখন থেকে তার জীবনের শুরু। অরূপ হেসে, নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, " চলো যাই ।

আমি একটা হারিকেন নিয়ে আসি।"

"লাগবে না।" বলেই নিশি অরুপ এর হাত ধরে এগিয়ে গেলো। তারা দুজন হাঁটছে পুকুরঘাটের দিকে। অরূপ দেখলো জোছনার আলোয় পুকুরের জল ঝিকমিক করছে। চাঁদের আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়ে আছে। সত্যিই হারিকেন এর প্রয়োজন নেই। নিশির হাত ধরে অরূপ আস্তে আস্তে পুকুর এর সিঁড়ি বেয়ে নামছে। পুকুরের ঠান্ডা জল পায়ে লাগতেই অরূপ নিশির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, " বাড়ি যাবে না?"

নিশি অরূপ এর চোখের দিকে তাকিয়ে, মাথা নেড়ে জানালো, না! অরূপ তাকিয়ে আছে, নিশির মায়া ভরা চোখে। কি যাদু আছে এই চোখে? এই কণ্ঠস্বরে? অরূপ এর মনে হলো সারাটা জীবন এই চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে সে পার করে দিতে পারবে। অরূপ নিশির চোখে চোখ রেখে হাসলো। নিশির হাত ধরে সিঁড়ির আরেকটা ধাপ নামলো। ভোরের আবছা আলোতে, গামছা হাতে, মহেশ পুকুর ঘাটে এসে দাড়ালো। বাড়িতে যখন মেহমান থাকে তখন সে কাক ডাকা ভোরে উঠে বাড়ির কাজ শুরু করে। অরূপ বাবুর নাস্তা তৈরি করে তাকে বাজারে যেতে হবে। বাজার মেলা দূর। যাবার আগে, অরূপ বাবুর কিছু লাগবে কি না, জেনে যাবে। সিঁড়ি বেয়ে নেমে, জল ছুঁতেই দেখলো, দূরে একটা কাপড় ভাসছে। তার বুঝতে সময় লাগলো না, কি ঘটেছে। মহেশ এর কাছে এ কোনো নতুন ঘটনা না। এ ঘটনা সে আগেও কয়েকবার দেখেছে। গা ছেড়ে সিঁড়িতে বসে পরলো মহেশ। চেয়ে রইলো ভেসে থাকা মানুষটার দিকে। পানিতে উপুর হয়ে ভেসে আছে অরূপ বাবু। নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে, বাকিদের মত, সেও ডুবে গেলো। মহেশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অরুপ বাবুর দেহের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো, "গল্পটা যে আর শেষ হলো না বাবু।"


-সমাপ্ত-