Read Room No 333 by Nandini Mukherjee in Bengali Horror Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

রুম নম্বর 333

শ্যামল ও তার বন্ধুরা গরমের ছুটিতে মোহনপুরের এক ভূত বাংলোতে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। সবার মনে আনন্দ থাকলেও সংকরের মনে কিন্তু একটু একটু ভয়ের স্পষ্টতা দেখা দিচ্ছে। সংকর বলল অন্য কোনো জায়গায় গেলে হয়না?

শ্যামল বলল না এবার আমরা মোহনপুরের ভুত বাংলোতে যাবো। আমরাও তো দেখি কেমন ভুত আছে ভূত বাংলোতে! তারপর তারা সবাই মিলে অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। পরের দিন সকালে সবাই বেরিয়ে পড়লো মোহনপুরের ভূতবাংলোর উদ্দেশ্যে। সারাদিন জার্নি করার পর তারা সন্ধে 6 তার সময় তাদের ঠিক করা ভূতবাংলতে পৌছালো। পৌঁছানোর পর তারা অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখলো যে বাংলো তো পুরোপুরি সুনসান। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো বাংলোটা দেখে মনে হচ্ছে বহু বছর এই বাংলোতে কেউ আসে নি। শ্যামল বলল চল ভেতরে গিয়ে দেখা যাক। ভিতরে গিয়ে তারা দেখে একটি বৃদ্ধ মানুষ সামনের টেবিল চেয়ারে বসে আছেন! তারা বৃদ্ধ লোকটিকে বলল দাদা আমাদের একটা রুম লাগবে। বৃদ্ধ লোকটি কর্কশ কন্ঠে বলল হ্যাঁ পাওয়া যাবে। তোমরা রুম নম্বর 333 এ চলে যাও।

শ্যামলরা বলল ঠিক আছে, তারা রুম নম্বর 333 এ পৌঁছাতেই দরজা খুলতেই দেখলো কয়েকটা বাদুড় উড়ে চলে গেলো। সুবিনয় বলল রুম তো নয় যেন জঙ্গাল। তারা রুম পরিস্কার করে ফ্রেস হয়ে নিজেদের আনা খাওয়ার খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো। এখন বাজে রাত তিনটে। সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন! ঘড়ির টিক টিক আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। হটাৎই কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শোনা গেলো। শ্যামল তৎক্ষণাৎ ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখে একটি সাদা কাপড় পড়া মেয়ে একটা লোককে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দিয়ে শ্যামল এর দিকে এগিয়ে আসছে। তখন শ্যামল ওই মেয়েটিকে দেখা মাত্র নিজের প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে আরম্ভ করলো। অবশেষে শ্যামল ঘরে এসে দরজায় ছিটকিনি আটকে দেয় এবং খুব জোরে জোরে হাফাতে শুরু করে।

বন্ধুদের কে ঘুম থেকে তুলে বলে ভাই আমরা কালকেই এখান থেকে চলে যাব। সুবিনয় এবং অন্যান্য বন্ধুরা বলে কেনো কি হয়েছে? তুই এতো হাপাচ্ছিস কেনো ? শ্যামল বলল সব পরে বলবো। শ্যামল যখন বলতে শুরু করলো তখন সব বন্ধুরা মিলে শ্যামলকে বলল এইভাবে চলে না গিয়ে ওই মেয়ের সম্মন্ধে আমাদের জানতে হবে। ওই মেয়ের সম্মন্ধে কিছু জানতে হলে সেই বৃদ্ধ লোকটির কাছে আমাদের কে যেতে হবে। তারপর ওরা বৃদ্ধ লোকটির কাছে গিয়ে কাল রাতের ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনাটি খুলে বলল। প্রথমে লোকটি ওদের কথা শুনে কিছু বলতে চেয়েও বলতে চাইছিলো না। পরে ওদের জোরাজুরিতে বলতে শুরু করলো। আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগেকার কথা, এই মেয়েটিও তার স্বামীর সাথে তোমাদের মতো ঘুরতে এসেছিলো। প্রথমে সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল।হটাৎ একদিন দুজনের মধ্যে এক অজানা কারণে তাদের দুজনের মধ্যে খুব ঝগড়া শুরু হয়। এবং এক পর্যায়ে মেয়েটির স্বামী মেয়েটিকে ব্যালকনীর ধারে নিয়ে আসে এবং মেয়েটি তার অজান্তেই নিজের পা স্লিপ করে ব্যালকনি থেকে নিচে পড়ে যায় ও প্রচুর রক্ত বেরোনোর কারণে মারা যায়।

তারপর মেয়েটির স্বামী ভয় পেয়ে এতো রাতে কি করবে কিছু ভেবে না পেয়ে মেয়েটির লাশ টিকে ওই রুমের ভেতরেই ঢুকিয়ে তালা বন্ধ করে পালিয়ে যায় ওই জায়গা ছেড়ে। তারপর থেকে ওই বাংলোতে যারা যারা ছুটি কাটাতে এসেছে। রোজ রাত হলেই রুম নম্বর 333 থেকে কান্নার আওয়াজ ও অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়। এর পর থেকে সুন্দর এই বাংলোটি ভুত বাংলো নামে পরিচিতি পায়। এরপর মাঝখানে কেটে যায় 2-3 বছর। অনেক বড়ো বড়ো শহর থেকে অনেক সরকারি অফিসার বাংলোটিকে ভেঙে হোটেল বা রেস্ট্রুরেন্ট এর রূপ দিতে চেয়েছেন কিন্তু প্রত্যেক বার কোনো না কোনো এক অজানা শক্তি তাদের স্বপ্ন কে বাস্তবায়িত হতে দেয় নি। সব কিছু শুনে শ্যামল ও তার বন্ধুবান্ধবরা মেয়েটির কংকালটি খুঁজে বের করে তার অতৃপ্ত আত্মার চির মুক্তির ব্যবস্থা করতে চায়। যেমন বলা তেমন কাজ, তারা সবাই প্ল্যান করে আজ পূর্ণিমার রাতে সবাই এক জোট হয়ে মেয়েটির কংকালটি খুঁজে বের করবে এবং মেয়েটির আত্মা কে মুক্তি দেবে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘনিয়ে এলো সেই রাত।

সবাই একটা করে হাতে মোমবাতি আর মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে রুম নম্বর 333 এর দিকে রওনা হলো। দরজা খুলতেই এক অজানা শক্তি ঝোড়ো বাতাসের সাথে শ্যামল ও তার বন্ধুদের কে ঘর থেকে ধাক্কা মেরে বাইরে বের করে দিতে চাইলো, কিন্তু সবাই নিজেকে সামলে নিয়ে ঠাকুরের নাম নিয়ে এগিয়ে চললো সামনের দিকে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটি ভাঙা চড়া আলমারির দিকে সবার নজর পড়লো। শ্যামল সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে একাই এগিয়ে গেলো সেই ভাঙা চড়া আলমারির দিকে, তারপর আলমারি টা একটু জোরে ধাক্কা দিতেই তার পাল্লা টা কেঁচকেচ শব্দে খুলে গেলো এবং আলমারি থেকে সেই মেয়েটির কঙ্কাল টি বেরিয়ে এলো। সবাই তখন খুব ভয় পেয়ে গেলো কংকালটিকে দেখে।

শ্যামল বেশি দেরি না করে সাথে সাথেই মেয়েটির কংকালটির গায়ে কেরোসিন ঢেলে মাচিস জ্বালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দিলো ও মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মা চিরতরে মুক্তি পেয়ে যায়, এবং বাংলোটি আবার তার স্বাভাবিক রূপে ফিরে আসে। এরপর যখন ভোরের আলো ফুটে উঠে তখন বাংলোটির মালিক শ্যামল ও তার বন্ধুদের সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে তাদের বিদায় জানালো।


(সমাপ্ত)