Kulangar books and stories free download online pdf in Bengali

কুলাঙ্গার

অনেক জায়গায় শুনেছি “ কুলাঙ্গার ” শব্দটি। বাবা মাকে দেখে না। আচ্ছা আমি যদি গল্পটা এভাবে সাজাই?

প্রদীপ মন্ডল বলে একটি ছেলে গ্রামের গর্ব। বাবা সাইকেল সারাইয়ের দোকানে কাজ করে। মা সাধারণ গৃহবধূ। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে জমিয়ে প্রদীপের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতো তারা। এদিকে প্রদীপও তার সম্পূর্ন মনোযোগ পড়াশোনার উপরেই দিতো। প্রতিটা ক্লাসে প্রদীপ ফার্স্ট নয় সেকেন্ড হতো। মার্কস থাকতো তার 97% থেকে 99% এর মধ্যেই। মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যস্তরে সপ্তম হলো। বাড়িতে রিপোর্টার এসে সে কি প্রশংসা! প্রদীপ সায়েন্স নিলো। অথচ প্র্যাক্টিকালের দামী দামী জিনিসপত্র কিনে দেওয়ার ক্ষমতা বাবার ছিল না। প্রদীপ স্কলারশিপের টাকায় পড়াশোনা চালু রাখলো। উচ্চমাধ্যমিকে 1 নম্বরের জন্য রাজ্যস্তরে দশম হতে পারলো না। সবাই সান্তনা দিলো।

এভাবেই চলতে থাকলো আরো কয়েকটা বছর। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে প্রদীপ জবে অ্যাপ্লাই করতে লাগলো। একদিন হঠাৎ আমেরিকা থেকে একটা জব লেটার আসে। ভারতীয় কারেন্সিতে পঁচিশ লক্ষ বছরে। এটা শুরুর স্যালারি। কয়েকবছর চাকরি করলে আরো স্যালারি বাড়বে। প্রদীপ আমেরিকা যাবে ঠিক করে, কিন্তু এখানে বাধা দেয় ওর বাবা। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে, এই জায়গা ছেড়ে আমেরিকা গেলে কীকরে হবে? প্রদীপ টাকা পাঠাবো বলে চলে যায়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা পাঠাতো সে। দুই বছর হয়ে যায় প্রদীপ বাড়ি আসে না, শুধু ফোনে কথা হয়। আমেরিকায় যেমন স্যালারি বেশি, তেমন খরচও বেশি। আমেরিকা থেকে একদিন প্রদীপ বাড়িতে ফেরে। বাবা মাকে বলে,
--“ ওখানে আমি নিজের বাড়ি বানিয়েছি। আমার সঙ্গে চলো। তিনজনে একসঙ্গে থাকবো। ”

ওর বাবা সঙ্গে সঙ্গে বারণ করে দিয়েছে।
--“ এটা আমার পৈতৃক বাড়ি। এই বাড়ি ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না। ”

প্রদীপের মা বলেছে,
--“ ফিরে আয় না বাবা এখানে। ”

প্রদীপ বলেছে ফিরবে না। ওখানে তার বাড়ি আছে, ওখানে তার চাকরি আছে। এসব ছেড়ে এখানে চলে আসা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এবার ঘোরে গল্পের মোড়। যে প্রদীপকে ভালো রেজাল্ট করায় সবাই বাহবা দিচ্ছিল, আমেরিকা চলে যাওয়ায় সবাই তার নিন্দে করছে। সবাই বলছে “ বংশের কুলাঙ্গার ” এবং “ স্বার্থপর ”। তবু প্রদীপ কারোর কথা শোনে না। ফিরে যায় আমেরিকায়।


এবার আপনারাও নিন্দে করবেন ওকে। কিন্তু করাটা কি উচিৎ হবে? নিজের জন্য স্বপ্ন দেখা কি ভুল? সে তো কখনো ভুলে যায়নি তার বাবা মাকে। টাকা পাঠিয়েছে প্রতিনিয়ত, খবর নিয়েছে সুদূর আমেরিকা থেকে। এমনকি ওদেরকে নিয়ে যেতে চেয়েছে নিজের কাছে। প্রদীপের দোষটা কোথায়? সে গরীব থাকতে চায়নি তাই? সে নিজের দমে ভারত ছেড়ে আমেরিকায় উন্নতি করেছে তাই? নিজের পৈতৃক বাড়ির চেয়েও তার কাছে তার নিজের গড়া বাড়ি প্রিয় তাই? প্রদীপ সেখানে অভ্যস্ত, সেখানে তার সম্মান আছে। নিজের কাজ দেখে তার গর্ব হয়। কিন্তু ওর বাবা মা নিজের ছেলের জন্য নিজের পূর্বপুরুষের ভিটে বাড়ি থেকে উঠে যেতে রাজি নয়। দুজনের ইমোশন আলাদা, দুজনের দুনিয়া দেখার ধরন আলাদা, তারা দুজন ভিন্ন মানুষ। তাহলে এখানে প্রদীপকে কেন কুলাঙ্গার বলা হচ্ছে? কেন তাকে তার কষ্টে বানানো কেরিয়ার ছেড়ে ফিরে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে? সময়ের সঙ্গে মানুষের এগিয়ে যাওয়া উচিৎ নাকি পুরনো জিনিস আঁকড়ে ধরে প্রজন্ম ধরে ধরে গরীব থেকে যাওয়া উচিৎ? কী বলেন?

বিঃ দ্রঃ -
গল্পটা কাল্পনিক এবং আমার চিন্তাধারার উপর লেখা। আমি বিশ্বাস করি অগ্রগতিই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। সবসময় সব জিনিসে বিশ্বাস করবেন না। অপরপক্ষের দিকটায় নিজেকে বসিয়ে ভাববেন। সবাই নিজের পরিশ্রম কেনই বা ত্যাগ করবে?
গল্পটির মাধ্যমে আপনাদের কারোর যদি ইমোশনে আঘাত দিয়ে থাকি তাহলে আমি দুঃখিত।
শেয়ারড

NEW REALESED