Read The Genie - 4 by Saikat Mukherjee in Bengali Horror Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

আত্মা - 4

ফজরের আজানের প্রায় এক ঘন্টা আগে ইমাম সাহেবের প্রস্রাবে চাপ দিয়েছে, তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে প্রস্রাব সেরে পুকুরে অযু করে উঠতে যাবেন তখন মনে হল পড়ে যাচ্ছেন, চোখে কিছুই দেখতে পারছেন না। মাথা কেমন জানি ঘুরছে, অজ্ঞান হয়ে পানিতে পড়ে যাবেন
এমন সময় কেউ একজন ধরে ফেলল,

ইমাম সাহেব আবছা আবছা দেখছেন মানুষটাকে। উনাকে পুকুরের সিড়িতে বসিয়ে মাথায় একটু জল দিয়ে বলল,
' এখন ঠিক আছেন ?'
ইমাম সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, 'কে! কে
আপনি, এ গায়ে তো কোনোদিন আপনাকে দেখলাম না।' লোকটা মুচকি হেসে বলল, 'বিশ বছর যাবত আপনার
পিছনেই নামাজ পড়ি ইমাম সাহেব, আমি জিন্নে
মুমিন।......................


ইমাম সাহেব খুব বেশি অবাক হলেন না। জিন্নে মুমিন এভাবে নামাজ পড়ে বলে তিনি আগেও শুনেছেন। কিন্তু খুব আগ্রহ নিয়ে ইমাম সাহেব জিন্নে মুমিনের
দিকে তাকাচ্ছেন, সাদা ধবধবে দাড়ি, সাদা পাঞ্জাবি - পায়জামা।

- ইমাম সাহেব।
- জ্বী বলুন।
- আপনার কি খুব আর্থিক সমস্যা ?

ইমাম সাহেব কোনো উত্তর দিলেন না।
জিন্নে মুমিন আবার বলতে শুরু করল, 'ফজরের আজানের প্রচুর সময় বাকি আছে, আপনার সাথে কিছু
কথা বলি। ইমাম হিসেবে আপনি আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ, আপনার খোজ খবর আমি রাখি। মানবের
প্রতি আমার মতো জিন্নে মুমিনদের অগাধ
ভালোবাসা আছে, এর কারণ কি জানেন ইমাম সাহেব ?
- না।
- কারণটা হল, এই যে আমরা জিন্নে মুমিনরা নামাজ পড়ি, নামাজে কুরআন পড়ি, সেই কুরআন জ্বীনের উপর
নাজিল হয় নি। হয়েছে নবী মুহাম্মাদ ( সঃ ) এর উপরে। সেই নবীকে আমরা জিন্নে মুমিনরা ভালোবাসি, তাহলে উনার স্বজাতি মানবকে কেন
ভালোবাসবো না ? ইমাম সাহেব আপনার জন্য একটা কাজ নিয়ে এসেছি, আপনার আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসবে।
- আমি ইমামতী ছাড়া আর কোনো কাজ করবো না।
- আপনি ইমামতী করবেন, সাথে মানুষের উপকার৷
খারাপ জ্বীন থেকে মানুষকে রক্ষা করবেন,

আমরা জিন্নে মুমিনদের একটা সংগঠন আছে, সেটার
নাম "আদম সেবা সংগঠন।" সংগঠন ভালো জিনিস, নবীজীর "হিলফুল ফুজুল" নামে একটা সংগঠন
ছিলো। আমরা আদম সেবা সংগঠনের সব জিন্নে মুমিন আপনাকে সাহায্যে করবো। আপনি মানুষকে খারাপ জ্বীন থেকে রক্ষা করবেন, তারা খুশি হয়ে
আপনাকে টাকা দিবে৷ সেটা দিয়ে আপনার সব অভাব ঘুচে যাবে। আপনি আজ ফজরের নামাজ শেষে নদগাও রওয়ানা দিবেন, আমরা খবর পেয়েছি সেই গ্রামের "মরা নদী" নামে একটা নদীর পাড়ে বড়ই গাছ আছে৷ সেখানে একটা খারাপ জ্বীন থাকে।

যেখানে সুন্দরী যুবতী মেয়ে দেখে সাপ
বিড়াল বিভিন্ন রূপে তাদেরকে ভয় দেখায়, বিরক্ত করে, রাতে আবার মানুষ হয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। এখন অবধি দু'টা মেয়ের
সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে, যে
মেয়েকে পছন্দ হবে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবে, যে মানুষ বাধা হবে তাকেই মেরে ফেলবে। আপনাকে মারতে পারবে না, কারণ আপনার সাথে আমরা শতশত জ্বীন থাকবো। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাপার হল, এই জ্বীন যেসব মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করছে তাদের ঘরে এক মাসেই বাচ্চা হবে। সেই বাচ্চা ভূমিষ্ট হবার সাথে সাথে কালো আত্মা হয়ে যাবে। তখন এই খারাপ জ্বীনের সংখ্যা বেড়ে যাবে,

আমাদের আর কিছুই করার থাকবে
না। আপনি আজই এই গ্রামে যাবেন, যাবার পথে আপনি শুধু জায়নামাজ কুরআন রাখতে পারেন, খাওয়া -
দাওয়া আমরা দেব আপনাকে। এখন থেকে আপনাকে একটা বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হবে, আপনি অশরীরী সবকিছু দেখতে পারবেন, কথা বলতে
পারবেন, ফজরের নামাজ শেষেই বেড়িয়ে পড়ুন। আপনি খারাপ জ্বীনকে শেষ করেই দু'টা মেয়েকে হসপিটাল পাঠিয়ে ভ্রুণ নষ্ট করাবেন।
.
.
সবাই দারুণ অবাক, তারেকের বউয়ের বিয়ে
হয়েছে মাত্র একমাস। অথচ আজ সারাদিন শুধু খানিক
পর পর বমি করছে, পেটও কেমন বড় হয়ে
গেছে। অবিকল অবস্থা তুরেছারও। সবাই খুব ভয়ের ভেতর দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, এদিকে কোনো কবিরাজও ভয়ে আসছে না। সবাই জেনে গেছে তুরাব ওঝা এখানে এসে সাপের কামড়ে মারা গেছে।
খানিক পড়ে খবর এসেছে ওয়াব উদ্দিন হসপিটালে মারা গেছে। বাড়িতে নেমে এসেছে এক আকাশ বিষাদ, যেন মুক্তির পথ নেই৷ এর শুরু হয়েছে সবাইকে শেষ করার জন্য।
.
লাশ বাড়িতে এসেছে বারোটা নাগাদ, সবাই জানাজার জন্য লাশ মাঠে নিয়ে গেছে । হঠাৎ একজন সাদা পাঞ্জাবি পরা হুজুর সামনে এসে দাড়িয়েছেন। তিনি
প্রথমে সবার বিশ্বাস আর ভরসা অর্জনের জন্য গ্রামের গোপনীয় কথা বলতে শুরু করলেন,

'আমাদের সামনে যে লাশ দেখছেন, তাকে কালো বিড়াল সেজে খারাপ জ্বীন কামড়ে দিয়েছে, এই জ্বীনটা সাপ হয়ে ছোবল মেরেছে তুরাব ওঝাকেও। ইতিমধ্যে দু'টা মেয়ের সাথে মিলিত হয়েছে। আপনাদের এলাকার
মানুষের সামনে বিরাট বিপদ, এই জ্বীন যে মেয়েকে ভালো লাগবে তার সাথে মিলিত হবে৷ যারা বাধা হবে তাকেই মেরে ফেলবে, কোনো কবিরাজ রক্ষা করতে পারবেনা।

উপস্থিত জনতার মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছে হুজুরের কথা। এরা ভন্ড
পীরের কথা বিশ্বাস করে আর সামনে তো
সত্যিকারের একজন ক্ষমতাবান মানুষ দাড়িয়ে আছে। যার পেছনে আছে শতশত জ্বীনের শক্তি। হুজুর আবার বলতে শুরু করলেন, 'আপনারা সবাই জানাজা পরে মরা নদীর পাড়ে যাবেন। জ্বীনকে বোতলে বন্দী করা হবে।
.
নদগায়ের নারী - পুরুষ সব মরা নদীর পাড়ে উপস্থিত হয়েছে। ইমাম সাহেব বড়ই গাছের নীচে জায়নামাজ বিছিয়ে বসেছেন। উনি চোখ বন্ধ করে জিন্নে মুমিনদের ডাকলেন। এলাকার
মানুষ খুব আগ্রহে তাকিয়ে আছে, খানিক পরে সবাই শরীরে গরম হওয়া অনুভব করলো, পরিবেশ বাতাস সবকিছু যেন কেমন অন্য রকম লাগছে । হঠাৎ করে সবাই দেখলো বড়ই গাছে ঝাকুনি, দেখেই
মনে হচ্ছে গাছে অশরীরীদে ধস্তাধস্তি
হচ্ছে। বড়ই গাছের পাতা আর ছোট ছোট ডাল ভেঙে পড়ছে। খানিক্ষণ পরে ইমাম সাহেব জায়নামাজ থেকে উঠে বোতলের মুখ খোলা রাখলেন। সবাই লক্ষ করলো হুজুর অদৃশ্য কিছুর সাথে কথা বলছেন।

খানিক পরে বোতলের মুখ লাগিয়ে তারেককে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন
বোতলটা মাটির নীচে কবর দাও, তারপর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব যে দু'টা মেয়ের সাথে সঙ্গম করেছে তাদেরকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে পেটের ভ্রুণ নষ্ট করতে হবে।

"সমাপ্ত"