Read The mystery of the burial place by Nandini Mukherjee in Bengali Horror Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

কবর স্থানের রহস্য

আমি সবে সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে কলেজে উঠেছি, অবশ্যই আমাকে ঘর ছেড়ে হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে। কিছুই জানিনা এখানকার পরিবেশ সম্মন্ধে। তবে কলেজ যাওয়ার পথে একটা সুনসান কবর স্থান রয়েছে। অনেকে আমাকে বলেছে রাত ১০ টার পর ওই রাস্তা দিয়ে পেরোতে না। আমারো কলেজ থেকে ফিরতে এতো দেরি হয়না। তবে আজ আমাদের কলেজে fest ছিল। তাই নাচ ও গানের মধ্যে এতটাই মেতে গিয়েছিলাম যে বুঝতেই পারিনি কখন রাত দশটা বেজে গিয়েছিলো। কিন্তু ওই কবরস্থানের রাস্তা দিয়ে লোকে পেরোতে না বলে আর এখন অন্য রাস্তা দিয়ে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে হয়তো। তাই তাড়াতাড়ি হোস্টেলে ফেরার জন্য ওই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে আমাকে। আমি আরো শুনেছি যে ওইখানে রাতের বেলা অনেক ভয়ানক ভয়ানক সব আওয়াজ শোনা যায় তবে আমি বিশ্বাস করি না এসব আবার হতে পারে নাকি? যখন আমি হাঁটছিলাম মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার পিছু করছে, বার কয়েক পেছনে তাকিয়ে দেখলাম কেউ কোথাও নেই। এই এত রাতে কোন বদমাশ লোক মজাও তো করতে পারে এইভেবে এগিয়ে চললাম। কিন্তু আবার কিছুক্ষণ পর মনে হল কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। এইবার আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম আর চারিদিকটা একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলাম। হটাৎ কিছুটা দূরে একটা কবর স্থানের মতো জায়গা লক্ষ্য করলাম, আমার তক্ষণাৎ মনে পড়ে গেলো লোকোমুখে প্রচলিত এটাই সেই ভৌতিক কবরস্থানটা নয় তো? আমি কৌতুহল বসতো সেই কবর স্থানটার দিকে এগিয়ে গেলাম কিছুটা। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম কবরস্থানের একটা পুরনো সমাধি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। আমার কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে চারপাসটা। একে অমাবস্যার রাত তারপর গাড়ো কুয়াশায় চারপাশটা কেমন যেন ঢেকে গেছে আর গভীর বনের ভেতরে শিয়াল লাগছে হুক্কা হুয়া করে। খানিকক্ষণ বাদে সেই সমাধির মাটি দেখলাম আস্তে আস্তে করে আলগা হয়ে যেতে লাগল, আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক নর কঙ্কাল আমার সামনে উঠে দাঁড়ালো সমাধি থেকে, আমার শরীরটা কেমন যেন অবস হয়ে আসছে আমি হাতেপায়ে কোন জোর পাচ্ছিনা সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেও। কংকালটি তখন এক ভয়ঙ্কর অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠলো আমায় বৃথা পালানোর চেষ্টা করোনা আমি যতক্ষণ না চাইবো তুমি কোথাও পালাতে পারবে না। আমি তখন বাধ্য হয়েই ওখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। কংকালটা আমার সাথে কথা বলতে চায় বুঝলাম, তারপর কংকালটা তার সাথে ঘটে যাওয়া অস্বাভাবিক রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা আমাকে বলতে শুরু করলো। যে কয়েক বছর আগেকার ঘটনা তারা শুভ রাহুল সুস্মিতা আর আমি অনিকেত। আমরা চারজন বন্ধু, সেই স্কুল জীবন থেকে অনেক ভালো ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিলাম, আমাদের মধ্যে সবকিছুই ভালোভাবেই চলছিল একদিন এক পার্টিতে আমরা চারজন বন্ধুরা একসাথে গিয়েছিলাম এবং নাচ গান করছিলাম সেখানে আমি আর সুস্মিতা নাচের দিক থেকে একটু ভালোই ছিলাম তাই আমরা দুজন একসাথে নাচলে সবাই আমাদের বেস্ট couple পার্টনার হিসেবে দেখতো আর এটা রাহুল আর শুভ ভালোভাবে মেনে নিত না কখনো। একদিন সুস্মিতার জন্মদিনে সুস্মিতা কোনো কারণবশত শুধুমাত্র আমাকে একা জন্মদিনের পার্টিতে ইনভাইটেশন দিয়েছিল কিন্তু আমার আর দুই বন্ধু শুভ আর রাহুলকে ডাকেনি তারা এই খবরটা জানতে পেরেছিল আমার এক শত্রুর মুখ থেকে তখন তারা আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। কারণ আমার মত শুভ আর রাহুল ও চেয়েছিল যে সুস্মিতা শুধু আমাকে একা নয় ওদেরকেও প্রাধান্য দিক, কিন্তু ওরা সেটা সুস্মিতার থেকে না পাওয়ার জন্য তারা আমাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করে এক অমাবস্যার রাতে। দিনটা ছিল ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ সাল, রাহুল আমাকে সকালবেলা ফোন করে বলে তার জন্মদিন উপলক্ষে একটা পার্টির অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছে শহর থেকে তুলনামূলক ভাবে একটু দূরে একটা ফার্ম হাউসে, ঠিক সময়ে তারা আমাকে পিক আপ করতে আসবে বলে জানিয়ে দেয়। আমিও সেই মতো ভালো একটি গিফট নিয়ে রেডি হয়ে বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম ওদের আসার অপেক্ষায়। ওরা ওদের ঠিক সময় মত আমার বাড়িতে এসে আমাকে নিয়ে যায়। প্রথমদিকে সব ঠিকঠাকই চলছিল আমরা মজা আনন্দ করে যাচ্ছিলাম গাড়িতে গান শুনতে শুনতে গাড়িটা চালাচ্ছিল রাহুল। হঠাৎ একটা জায়গায় আমরা গাড়ি থামিয়ে চা খাওয়ার জন্য নামি। আমার ভালো লাগছিল না বলে আমি গাড়িতেই ছিলাম। আর ওরা দুজন নিচে নামে চা খাওয়ার জন্য আমার একটু মাথাটা ধরেছিল বলে, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম হঠাৎ হঠাৎ সারা শরীর জ্বালা জ্বালা করে ওঠার জন্য যেই চোখ খুলেছি তখন দেখি পুরো গাড়ি দাউ দাউ করে বীভৎস ভাবে জ্বলছে আর গাড়িতে শুধু আমি একাই ছিলাম রাহুল আর শুভ বাইরে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে আমি ওদের কাছে আর্তনাদ করে চলেছি বাঁচার জন্য কিন্তু তারা আমায় বাঁচাতে এলো না। বরং আমায় ওভাবে একা ফেলে দিয়ে চলে গেল তারা। একটা সময় পর আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো এবং আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম আর আমি তখনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি আমার এই খুনের বদলা অব্যশই নিয়ে তবে ছাড়বো। তখন আমি সব শুনে বললাম তাহলে তুমি বলো এখন কিভাবে তুমি তোমার খুনের বদলা নিতে চাও ওদের থেকে। তখন কঙ্কালটি বলল আমি তোমার শরীরে ঢুকে ওদেরকে আমার মতন আগুনে পুড়িয়ে মারতে চাই। আমি বললাম তাহলে তাই হোক এটা বলার পরেই কঙ্কালটা আমার শরীরে ঢুকে গেল এবং আমি এক অশরীরীর নির্দেশে গেলাম প্রথমে রাহুলের বাড়িতে তারপর রাহুলের সাথে কিছুটা সময় ভাব জমিয়ে রাহুলকে শুভর বন্ধু বলে পরিচয় দিয়ে একটা রেস্ট্রুরেন্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম এবং আমরা মাঝরাস্তায় পৌঁছাতেই একটা গভীর খাদের ধারে গাড়িটাকে নিয়ে গিয়ে আমি গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে নেমে গিযে রাহুল সমেত গাড়িটাকে গভীর খাঁদে ফেলে দিলাম এবং এতে কংকালটার প্রথম বদলা সম্পূর্ণ হলো। তারপর দ্বিতীয় দিন শুভর কাছে গিয়ে শুভকে রাহুলের মৃত্যুর খবরটা দিয়ে দিলাম, শুভ এটা শুনে খুব কষ্ট পেলো এবং একটু ভয়ও পেলো। আমি শুভর বন্ধুত্ব পাওয়ার জন্য তাকে সান্তনা দিলাম রাহুলের বেপারে ভালো কিছু কথা বলে তারপর শুভকে রাহুলের মৃতদেহের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আমাদের গাড়িটা সেই কবরের সামনে এসে খারাপ হয়ে গেলো। আমরা গাড়ি থেকে নেমে দেখতে গেলাম কী হয়েছে আর সেই সময় আমি একটু টয়লেট করতে যাওয়ার নাম করে দূরে সরে গেলাম আর সেই সময় কংকালটা এসে শুভর সামনে হাজির হলো। এটা দেখে শুভ তখন ভয়ে কোথায় যাবে আর ভেবে পেলো না। তখন কংকালটা এসে শুভকে বললো কিরে শুভ আমাকে মেরে ফেলে তোদের কী লাভ হলো আমরা তো খুব ভালো বন্ধু ছিলাম তাও শুধু সুস্মিতার জন্য আমাকে মেরে ফেললি এইভাবে আমি তোদের কী ক্ষতি করেছিলাম? শুভ তখন বললো আমাকে ক্ষমা করে দে অনিকেত আমার খুব বড়ো ভুল হয়ে গেছে। তখন কংকালটা বললো এখন ক্ষমা চেয়ে আর কোনো লাভ নেই তোকে শাস্তি পেতেই হবে এই বলে সে শুভকে টানতে টানতে কবরের ধারে নিয়ে গেলো এবং শুভর গলা কেটে তাকে হত্যা করলো আর এইভাবে কংকালটার সমস্ত বদলা সম্পূর্ণ হলো এবং সে সারাজীবনের জন্য মুক্তি পেয়ে গেলো আর আমিও নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে এলাম।


সমাপ্ত "