গ্রামেতে আজ সকাল থেকেই খুবই জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে যেন আকাশ ফেটে বৃষ্টি হবে আজ।
অন্যদিকে আরামসে টিভিতে পেপা পিক দেখতে দেখতে লীলা চিপস খাচ্ছিল আর তখনই ওর ফোনটা বেজে উঠল যেটা তোলাটা পর্যন্ত জরুরি ভাবলো না ও।
রাগের সাথে হাত মুছতে মুছতে ওর মা রুমেতে ঢুকলো আর ফোনটাকে রিসিভ করে হ্যালো বলল ।আর লীলার বেস্ট ফ্রেন্ড কোয়েল ফোন করেছে।
ওপাশ থেকে কোয়েল সিরিয়াস হয়ে বলল_"কাকিমা, আজ না আমাদের রিপোর্ট কার দেবে ওই জন্য কলেজে যেতে হবে তুমি তাড়াতাড়ি করে তোমার ওই তারকাটা পাগল মেয়েটাকে পাঠিয়ে দাও। আমি ওর জন্য বাস স্টপ এর কাছে অপেক্ষা করছি স্কুটি নিয়ে!"
এটা শুনে লীলার মা কিছু কথা বলল আর ফোন কেটে দিলো তারপর লীলার দিকে তাকিয়ে রাগের সাথে বলল"কিগো মা জননী এখনো তোমার খায়া শেষ হলো না। কল এসেছে তোমার ওই কোয়েলের তোদের রিপোর্ট কার্ড দিচ্ছে তাড়াতাড়ি গিয়ে নিয়ে আয়। আজকের এই লাস্ট ডেট। এক সপ্তাহ আগে দেয়া হয়ে গেছে মিস করে গেছে আর আজই লাস্ট দেয়া হচ্ছে তাড়াতাড়ি গিয়ে নিয়ে আয়। কারণ ওটা না হলে তুমি তোমার কেনেডাতে যেতে পারবে না।"
এটা শুনে ঝট করে উঠে পড়ল লীলা আর তাড়াতাড়ি করে চিপসের প্যাকেটে হাত ঢুকিয়ে সব কটা চিপস হাতে ভরে নিলো। তারপর মুড়ে নিল সাথে সাথে চিপসগুলি গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো আর ও একসাথে চিপসের গুড়ো গুনো মুখে ভরে নিলো আর চেবাতে চেবাতে বলল"আরে মা ঐ পাগল কোয়েলটা এখন বলছে আগে বললে আমি রেডি হয়ে নিতাম এখন তো আমি রেডিও হইনি সব তারকাদের দল আমারই ভাগ্যে"
কথাটা শুনে ওর মা ওর মাথায় চাপত মেরে বলল"তারকাটা ওড়না তারকাটা তুই পাগল মেয়ে একটা। যা তাড়াতাড়ি রেডী হয়ে।"
লীলা তাড়াতাড়ি করে বাথরুমে গিয়ে স্নান করে নিলো। আর রুমে এসে তাড়াতাড়ি করে আলমারি থেকে একটা কালো সালোয়ার সুট বার করে পড়ে নিল ওকে ভীষণ সুন্দর লাগছে এই কালো সালোয়ার সুটে। ওর এত দেরি হয়ে গেছে যে ও তাড়াতাড়ি করে রুমে এসে চুলকে হালকা ভাবে চিরুনি দিয়ে আজরে নিলো। আর কোমরের নিচে অব্দি লম্বা ঘন কালো চুল খোলায় ছেড়ে দিলো।
আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না নিয়ে বাইরে চলে এলো, ওকে এই রকম ভাবে চুল খেলিয়ে যেতে দেখে মা রাগেতে চিৎকার করে বলল_"পাগল মেয়ে এভাবে এলো চুলে কেন যাচ্ছিস! যাতে কোন উপরে শক্তি ধরে যাক ভুতফুত ধরলে তখন আমাকে বলবি না আমি যাব না ভূত ছাড়াতে ওইভাবেই পড়ে থাকবি তুই"
কিন্তু মায়ের কথাকে পুরোপুরি ইগনোর করে দিয়ে লীলা তাড়াতাড়ি করে স্কুটি নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল এদিকে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আয়ুস এর মা ও এটা দেখছে।
লীলাকে এত তাড়াহুড়ায় কোথাও যেতে দেখে উনি লীলা কে ডেকে বললেন"কোথায় যাচ্ছিস লীলা? এত তাড়াহুড়াতে মায়ের কথায় ও জবাব দিচ্ছিস না "
এটা শুনে লীলা হেসে বলল" আরে আন্টি রিপোর্ট কার্ড আনতে যাচ্ছি, খুবই দরকারি ওটা, তুমি কিছু বলবে বলো"
এটা শুনে আন্টি একটু ঘাবড়ে গিয়ে কিন্তু লীলার কাছে গিয়ে ওকে একটা ফটো দেখিয়ে বললেন"এটা আমার ছেলে, ও আজ এখানে আসছে ও কাছাকাছি পৌঁছে গেছে যদি দেখা হয় ওকে না একটু দিয়ে যাস কারণ বাস স্টপের পাশ থেকে রাস্তা তো তুই জানিস কতটা খারাপ। আর ওর তো এরকম রাস্তায় চলাফেলা করার অভ্যাস নেই আর বড় গাড়ি ও তো ঢুকবে না এরকম রাস্তায়।"
লীলা গভীরভাবে কিছুক্ষণ আয়ুস ছবি দেখল আর পরক্ষণে গালে হাত রেখে বলল"ওও হাউ কিউট পুরো তোমার মতন।"
এটা শুনে আয়ুস এর মা খুবই খুশি হয়ে গেলেন আর খুশির সাথে চোখে উজ্জ্বলতা নিয়ে বললেন"আমার ছেলেকে তোর পছন্দ হয়েছে? তুই বিয়ে করবি আমার ছেলেকে তোকে না রানীর মতন রাখব আর আমি কিছু হতে দেব না তোকে"
এটা শুনে লীলার কাশি পেয়ে গেল আর তো কাশতে কাশতে বলল"আন্টি এসব কি কথা বলছ শুনে আমার গা গুলো হচ্ছে আমার ভালো লাগছে না আমার দ্বারা এসব হবে না! আর যেহেতু তোমার ছেলেকে ওকে আমি পৌঁছে দিয়ে যাব ডোন্ট বাড়ি। মাকে বলিনি এখনো দু'ঘণ্টা টাইম আছে আসলে ওই কোয়েলের সাথে একটা মুভি দেখতে যাব নতুন মুভি আর রিপোর্ট কাটতো আমার আগেই আনা হয়ে গেছে। এমনিতে তো মা যেতে দিত না। তাই এই বাহানা করলাম তোমাকে বলছি তুমি আবার মাকে যেন বলোনা তুমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতন"
এটা শুনে আয়ুস এর মা হাসলো আর লীলা কে জড়িয়ে ধরে বলল_"না বলবো না তোর মাকে, তুই যা! এমনিতেও কোথাও তো যাস না। আর আমার মনও বলছে যে তুই এটা ইচ্ছা করে যাচ্ছিস না তোকে তোর বান্ধবীরা ও জোর করছে । তা না হলে তুই ডানপিটে মেয়ে ওইসব জায়গায় যাবি নাকি"
কথাটা শুনে লীলাও হাসলো আর বলল"আন্টি সত্যি তুমি তো আমাকে আমার মায়ের থেকেও ভালো বুঝতে পারো যাক গে ছাড়ো কি করবো পাগলরা ডেকেছে যেতে তো হবে! তবে মুভি শুরু হতে দু ঘন্টা বাকি আছে আর যেতে আসতে এক ঘন্টা তো লেগে যাবে মানে তোমার বাচ্চা কে আনতে"
লীলার কথা শুনে আরো জোরে হেসে দিল আয়ুস এর মা। আর লীলাও হাসলো। কিন্তু তখনই কিছু একটা ভেবে লীলা একটু সিরিয়াস হয়ে বলল"আচ্ছা আন্টি তোমার ছেলের লাড সাহেব মানুষ ও আমার এই স্কুটিতে বসে আসতে চাইবে ওর আবার ইগোতে লাগবে না শুনেছি এই লাট সাহেব গুলির প্রচুর ইগো ওলা হয়"
এটা শুনে আয়ুস এর মা ও কিছু একটা ভেবে বললেন"হ্যাঁ রে লীলা এটা তো তুই ঠিকই বলেছিস ইয়ো তো ওর মধ্যে ভর্তি ভর্তি আছে বাপের মতন হয়েছে। বাপের থেকেও ১০০ গুন আগে! অনেক ইগো আছে ওর মধ্যে কে জানে কি হয় তবে তুই ওকে আমার নাম বলিস যে আরোহী আন্টি বলেছে তোকে নিতে আসতে"
এটা শুনে লীলা হেসে বললো"কিন্তু আন্টি ও কি আমার থেকে বড় না ছোট আমি বুঝতে পারছি না দেখে তো আমার বয়সেই লাগছে"
এটা শুনে আরোহী আন্টি খিলখিল করে হেসে বললেন"নারে ও তোর থেকে বড় ও ২৩ বছর বয়স ও গ্রাজুয়েট হয়ে গেছে। বাবার সাথে বিজনেসের সাহায্য করে। বাকি ওর নিজেরও অনেক বিজনেস আছে"
এটা শুনে লীলা আরোহী আন্টিকে ফটোটা দেখিয়ে বলল "কিন্তু আন্টি এই ফটোতে তো স্টুডেন্ট লাগছে, ওকে দেখতে, এতটা একদম এতটা কিউট কিন্তু দেশের মধ্যে এই চুলগুলি কেন এইরকম সিলভার কালারের আর এত বড় বড় এতে ওকে আরো কিউট লাগছে। ও আন্টি আবারও ফিউচারে যেন এরকম তোমার ছেলের মতন কিউট বেবি হয়"
এটা শুনে আরোহী আন্টি আরো হেসে বললেন"আরে হবে আমার ছেলেকে বিয়ে করে নে, তোর মতন বউ মাকে আমি ধন্য হয়ে যাব"
লীলাও আর থাকতে না পেরে হেসে বলল"আচ্ছা আচ্ছা আন্টি তুমিও না শোধরাবে না? কত মজা করো তুমিও আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি আমার ওই সবে কোন ইন্টারেস্ট নেই পৃথিবীর সবথেকে হ্যান্ডসাম ছেলে এসে গেল আমার কোন যায় আসে না আমি আমার ক্যারিয়ারে ফোকাস করতে চাই।"
এটা শুনে আরোহী আন্টি বললেন"আমার কোনো প্রবলেম নেই বিয়ের পরেও তুই যা ইচ্ছা করতে চাইলে আমি তোর মায়ের মতন তোকে বকবো না আমাদের ঘরেতে অনেক সার্ভেন্টরা রয়েছে তোকে কোনো কাজও করতে হবে না আর যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবি। আমি বানিয়ে খাওয়াবো তোর পছন্দের খাবার আমার ছেলেকে বিয়ে করে নে। তুই বললে আমি এক্ষুনি আয়ুস এর বাবার সাথে কথা বলবো"
(তো কি হতে চলেছে এরপর?জানবার জন্য পরের পর্ব পড়তে হবে)