Read Prembdnkaalo by Rocky Kazi in Bengali Comedy stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

প্রেমবদনকালো

‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ঘন্টা বাজল ঢং ঢং ঢং। ক্লাস চালু হয়ে গেছে। দূর থেকে ভেসে এলো অটোর টরটর আওয়াজ। জোরালো হচ্ছে জোরালো হচ্ছে, ব্যাস থামল একেবারে গেট গোড়ায়। গেটের সামনে একটা কুকুর ব্রেকফাস্ট ঘুম দিচ্ছিল, অটোর আওয়াজে বেচারার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল। অটোর মধ্যে থেকে একটা জীব বেরিয়ে এল।চিরকুট চানা ওয়ালার গালটা হা হয়ে গেল। একটা মাছি তার গালে ঢুকতে যাচ্ছিল কিন্তু না, যা মুখের বিচ্ছিরি গন্ধ বেচারা নিরাশ হয়ে পগার পার।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ জীবটাকে দেখে কুকুরটা অনেকটাই চমকে গেল। সেকি স্বপ্নে দেখছে, না সত্যি। কী করে বুঝবে? কী করে বুঝবে? সে তো আর চিমটি কাটতে পারবে না। কী করে, কী করে, হ্যাঁ উপায় ঠিক বার করেছে বাছাধন। ধারালো নখ ছিল তা দিয়েই গায়ে আঁচড় কেটে বুঝতে পারল, হ্যাঁ, এটাতো সত্যি।
‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ ‎ জীবটা অটোওয়ালা কে সাতটা ছোট এক টাকার কয়েন ও তিনটি বড় এক টাকার কয়েন মিলিয়ে মোট 10 টাকা দিল। অটোওয়ালা কিছুতেই নেবে না।
জীবটা বলে উঠলোー"ওই নিবিনা? ব্যাটাকে এক্ষুনি পুলিশ ডেকে ঘুসি খাওয়াবো।"
অটোওয়ালা বলে উঠলোー "কে বেটা? আমার ব্যাটা তো ইস্কুলে, সে কী করেছে তাকে ঘুসি খাওয়াবেন?"
জীবটা বলে উঠলোー "না না তোর ব্যাটা কেন? তোকে তোকে, তুই.. তুই ব্যাটা।"
অটোওয়ালা বললー "কেন আমি কী করেছি? জীবটা বললー "তুই কী করিনিস বল? অটোওয়ালা বললー "আমি এখনো দীঘায় যাইনি, মদ খাইনি, চপ খায়নি।"
জীবটা বললー "আরে কী বলছিস ভুলভাল?" অটোওয়ালা বললー "না না আমি ঠিকই বলছি, সব ঠিক, সব ঠিক।"
জীবটা বললー "তোকে কী বললুম? যে.." জীবটার কথা শেষ হওয়ার আগেই অটোওয়ালা বলে উঠলোー "কেন? আপনি যেটা বলেছেন আমিতো উত্তর দিয়েছি ঠিকঠাক।"
জিবটা বললー "আরে আরে চুপ কর চুপ কর, এনে দূর হ।"
তাহলে কি এই শিক্ষিত জীবটা যুদ্ধে হেরে গেল? নান না না না না, তবুও জোর করেই অটোওয়ালাকে সাতটা ছোট এক টাকার কয়েন নিতে হলো। হ্যাঁ আপনারা হয়তো বলবেন এটা ঠিক হচ্ছে না, ছোট এক টাকা, বড় এক টাকা সবই সমান তাই সবই নিতে হবে। কিন্তু আপনার কি নিচ্ছেন? দেওয়ার বেলায় তো আগে আছেন, আর নেওয়ার বেলায়! কেননা ছোট এক টাকা নিয়ে মানুষের এমনই মনোভাবের উদ্ভব হয়েছে, যে ছোট মানেই মূল্যহীন, হ্যঁউ। অটোআলা কী করবে? তাকেও তো সবারই মতন ভাবতে হবে। বেশি করে নিলে, সবাইকে তো আর বেশি করে দিতে পারবে না। অল্প দিলে হতো, কিন্তু একেবারে এত। 10 টাকার মধ্যে সাতটা ছোট এক টাকার কয়েন মানে সত্যিই খুবই বেশি।
জীবটা এগোতে থাকলো। কুকুরটা তাকে আসতে দেখে হয়তো কেটে পড়ি বলে দিল ছুট। জীবটা গেটের এপাড়ে আসতেই
দারোয়ান বললー "স্যার এ কী হাল হয়েছে আপনার।"
জীব! কী হচ্ছে? কাকে জীব বলছি? কিছুই বুঝতে পারছেন না তো, হ্যঁউ। তো আর সময় ব্যয় না করে বলি, আসলে জীবটার নাম বদনবাবু। হ্যাঁ ইনি মানুষ, বয়স 42 ,43 হবে। জীব তো আর এমনি স্বাদে বলা হয়নি, কিছু কারণ তো থাকবেই। প্রথমত বদনবাবুর আজ মাথায় একটাও চুল নেই, একদম গাঞ্জা, মানে টাকলু।
হিমেশের ভক্ত বদনবাবু অনেকদিন ধরে গুরু কাটিং চুল নিয়ে আসছেন তা আজ কী হলো? এটা কি ওনার নতুন হেয়ার স্টাইল নাকি? তার চুল নেই কী হেয়ার স্টাইল বলবো। গুরু মানে আমি হিমেশ গুরু কে বলছি না, আপনারা ভুল ভাবছেন। আমি বলছি গুরু মানে গুরু রানধাওয়াকে। হ্যাঁ গুরু রানধাওয়ারই মতন খাড়া খাড়া চুল।
তার উপর অন্যদিকে আবার মুখের উপর কালি, বোতল আবার খালি! মুখে কালি লেগেছে কোথা থেকে কে জানে। আবার বোতল, হ্যঁউ। আপনারা ভাবছেন কী হলো কী হলো? বোতল ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না, তাইতো। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কী, প্রতিদিন একটা ভর্তি বোতল নিয়ে আসতেন বদনবাবু। তা প্রায় দু লিটার তো হবেই। হ্যাঁ পুরো ভর্তিই নিয়ে তবেই স্কুল চত্বরে প্রবেশ করতেন, একদিনও রুটিনের ব্যাঘাত হয়নি। বদনবাবুর মতে জল খেলে নাকি শরীর চাঙ্গা হয়, শরীরের মধ্যে অফুরন্ত শক্তি জেগে ওঠে, মস্তিষ্কও যেন ফোরজি স্পিডে চলে ব্লাব ব্লাব লা, হ্যঁউ। তাই যাকেই দেখে তাকেই জল খেতে বলে "জল খা, জল খা, খুব ভালো খুব ভালো,খিঁ।"
কথার শেষে মাঝে মাঝে খিঁ খিঁ বলেন যখন মুড ভালো থাকে, কে জানে? মাথার তার ফার কাটা নাকি!
বদনবাবু কোনো উত্তর না দিয়ে কড়া মেজাজ নিয়ে ঠরঠর করে এগিয়ে গেলেন। সময়ও না দাঁড়িয়ে 15 মিনিট এগিয়ে গেছে। বদনবাবু হেডমাস্টারের কাছে সিগনেচার করতে এলেন। হেডমাস্টার দেখে তো একেবারেই অবাক, বললেনー "কী ব্যাপার বদন বাবু? আপনার এরকম হাল, আর আজ যে এত দেরি। কোনদিন তো এমন হয়নি?"
বদনবাবু বললেনー "আর বলবেন না, মদনা মারা পড়ল। তার শোক পালন করতে করতে একটু দেরি হয়ে গেল।"
হেডমাস্টার বললー "তা কী করে মরল?"
মদনা হচ্ছে বদনবাবুর প্রিয় কুকুর ও একাকিত্বের সঙ্গী। তাহলে চলুন কুকুর টার একটু বিবরণ দেয়া যাক। বর্ণে মদনা সাদা রঙের মুখটা শুধু কালো, দৈর্ঘ্যে খুব একটা লম্বা নয়, মাঝারি সাইজের বয়স চার'বছর তো হবেই।
বদনবাবু বললেনー"কুকুরটা চেন দিয়েই বাধা থাকতো, কিছুদিন ধরে দেখছি মদনা কয়েকজন সঙ্গী জুটিয়েছে। তারা আমার মদনার সামনে ঘোরাঘুরি করতো। যখনই আমায় দেখতে পেত পালাতো। একদিন হঠাৎ দেখিনা, মদনার চেন কাটা আর সে উধাও। খোঁজ খোঁজ, চারিদিক খুঁজতে থাকি। আজ সকালে খবর পাই যে সে তার সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে মুরগি চুরি করার অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত শুধু সে একাই মুরগি মালিকের হাতে ধরা পড়ে গিয়েছিল। কেননা মানতেই হবে, সে বাইরের ওইসব কুকুর গুলোর মত অতটা ধূর্ত নয়, অতোটা চালক চতুর নই। তারপর মুরগি মালিক লোক ভাড়া করে নিয়ে এসে তাকে দমকা শুটিয়েছে। সে কোনমতে ওখান থেকে পালিয়ে বেঁচছিল। কিন্তু বিপদ তো লেগেই আছে। মৃত্যু তার পিছু ছাড়েনি। সে অন্য কুকুরদের এলাকায় ঢুকে পড়েছিল, তারপর তারা এমন তাকে তাড়া করেছে, যে সে ছুটতে ছুটতে একটা চলন্ত ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। এই বলে বদনবাবু শোকে চোখ দিয়ে জল ফেলতে থাকলেন।
হেডমাস্টার বললেনー "আরে আরে থামুন থামুন,
তা এই রকম অবস্থা?"
বদনবাবু বললেনー "মদনার শোক পালনের জন্য ন্যাড়া হয়েছি। আর মদনার মুখের কালো রঙের মতন আমিও কালি মেখেছি। মানুষ মারা গেলে যদি ন্যাড়া হয়ে শোক পালন করা হয়, তাহলে কুকুর মারা গেলে আমি কেন তা পারি না। তাই আমি ন্যাড়া হলাম।"
হেডমাস্টার বললেনー "কিন্তু সমাজ তো দেখতে হবে।"
বদনবাবু বললেনー"সমাজে সবাই সবকিছু বলতে থাকবে, কিন্তু সঠিক সময়ে কোথায় থাকে এই সমাজ। কেউ গরিব হলে তাকে তাচ্ছিল্য করবে, অপমান করবে, অসম্মান করবে। কিন্তু সেই গরিবের সাহায্য করতে কেউ আসবে না। কাউকে মরতে দেখলে আসবেনা সমাজ তাকে বাঁচাতে, কিন্তু মৃত্যুর পর তার শোক প্রকাশ অবশ্যই করবে।"
হেডমাস্টার বললেনー "ঠিক আছে ঠিক আছে, আপনি তাহলে ক্লাস করতে যান সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। আর মুখটাকে অন্তত ধুয়ে নিতে পারেন।"
বদনবাবু বললেনー "না, আমি আজ সারাদিন রাত বারোটা এক বাজা না পর্যন্ত এইরকম-ই অবস্থায় থাকবো। বলে ফস ফস করতে করতে বেরিয়ে এলেন।
হেডমাস্টার বললেনー "এ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ, বুড়ো বয়সে যেন ভীমরতি!"
বদনবাবু ক্লাস রুমের কাছাকাছি এলেন। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের চেঁচামেচি। হ্যাঁ এটা কী? তেরি মেরি! হ্যা তেরি মেরি। ছুটে আসা আওয়াজ এর সাথে মিশে আছে একটি গানের সুর। তেরি মেরি। ঠিকই ধরেছেন বদনবাবু। ক্লাস এইট এর ক্লাস থেকেই ভেসে আসছে তা। বদনবাবুর মনটা একটু নরম হলো বৈকি, কারণ হিমেশের গান তার খুব পছন্দের, তা আ আ হোক বা উ উ। বদনবাবু ক্লাসে প্রবেশ করলেন। হঠাৎই সবাই চুপচাপ। সবাই অবাক হয়েছে তা সবার নীরবতা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। কেননা আগে বদন বাবু ক্লাসে আসলে এতটা নীরবতা পালন হত না। বেশিরভাগ সময় চিৎকার-চেঁচামেচিতে ক্লাস গমগম করত। আজ সবাই অবাক, বদনবাবুর এই রূপ দেখে। কিন্তু না, এখনও সবাই অবাক হয়নি। খোচন এখনও গেয়ে যাচ্ছে দুকানে হাত দিয়ে চাপা, আর বেঞ্চিতে রাখা ব্যাগের উপর চোখবুজে পড়ে থাকা অবস্থায়।
ー "তেরি-ই-ই মেরি-ই-ই তেরি মেরি, তেরি-মেরি-ই-ই-ই কাহানি...."
একি টাক আলা কালো মানুষটা কেন দুই আঙুল দিয়ে ওরকম করছে। হ্যাঁ বুঝতে পেরেছি হিমেশের মত ফিঙ্গার ডান্স করছে। হয়তো এটাই ভাবছে স্কুলের পড়ুয়ারা। পাশ থেকে মন্তা খিলখিল করে হেসে উঠল, আর পাশে থাকা ঘুন্টেকে ফিসফিস করে বললー"হোট আজকে খুব আনন্দ হচ্ছে। কালোমানব, আবার তেরি মেরি।"
সামনের বেঞ্চে বসা সুমন বললোー "চুপ কর চুপ কর, দেখি খেলটা কী হয়।"
কালো মানব ধীরে ধীরে এগোতে থাকলো, হিমেসের মতন আঙুল নৃত্য করতে করতে। হুশ নেই খোচনের, আপন মনে গেয়েই চলেছে। কোথাই স্কুল? কোথায় বা সহপাঠক গন? যেন সে স্টেজে গান গাইছে। হারিয়ে গেছে গানের সুরে। খপ করে বদনবাবু রেডিওর প্যাচটা ধরে ঘোরাতে ঘোরাতে রেডিওটা তুলতে লাগলো। রেডিওর মধ্যে থেকে আ...আ আ আ....আ আ আ আওয়াজ বেরোচ্ছে, তা গানের নাকি কানের বোঝা মুশকিল। ঠিকমতো না তাকিয়েই খোচন বলে উঠলোー "কে বে, এক্ষুনি...!" বলে ঘুষি যেই না মারতে যাচ্ছিল, হঠাৎই একজন কালো মানুষকে দেখে সে চমকে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল। জল নিয়ে আয়, জলদি নিয়ে আয়। চারিদিকে হৈ চৈ আবার বেড়ে গেল। এতক্ষণে সবাই বুঝতে পেরেছে যে এটা আমাদের ভৌতবিজ্ঞানের মাস্টার বদনবাবু।
বদনবাবুর এই হাল দেখে মুখে কিছু বলতে না পারলেও, মনে অনেকে আনন্দ পাচ্ছে। অনেকে মুচকি মুচকি হাসছে। কয়েকজনের আবার জোরালো হাসিও শোনা যাচ্ছে।
রতন বললー "এই নিন স্যার বোতল।"
স্যার বোতল থেকে অল্প জল নিয়ে খোচনের মুখে ছিটিয়ে দিল। কিন্তু খোচন উঠলো না। আবার পুনরায় ছিটানো হল, তবুও উঠলো না। এবার বদন বাবু যা করলেন, সত্যিই মানতে হবে। তিনি করলেন কী, রতনের কাছ থেকে বোতলটা নিয়ে খোচনের মুখ হা করে ঢালতে লাগলেন। বদনবাবু মনে মনে বললেনー "এ কী হয়ে গেল,হাইরে।"
বোতলটা শেষ হয়ে গেল, তবুও বেচারারা কোন সাড়াশব্দ নেই। একটুও নড়ছে না।
বদনবাবু বলে উঠলেনー "নে কার বড় বোতল আছে নিয়ে আয়।"
চম্পা তার থামস আপ এর বোতলটা বাড়িয়ে দিল। নানা থামস আপ নেই, জল আছে। তারপর বদনবাবু সেই একই রকম ভাবে তার মুখে বোতল ওপর করে ঢেলে দিতে থাকলো। একটু নড়লো মনে হচ্ছে। আরে আরে বদনবাবুকে তো সাবাসি দিতে হচ্ছে, সত্যিই পারে মাইরি। খোচন চোখ খুললো। কিন্তু না, চোখের সামনে থাকা কালো মানব কে দেখে সে আবার অজ্ঞান হয়ে-গেল। আবারও ঠিক একই রকমভাবে চালু হয়ে গেল, বদনবাবুর জলগ্রহণ পদ্ধতি। খোচনের জ্ঞান ফিরল। ঠিক আগের মতন বদনবাবুকে দেখে সে ভয়ে অজ্ঞান হতে যাচ্ছিল। কিন্তু না, ভয় যেন আত্মসমর্পণ করেছে, জল গ্রহণের কষ্ট আর সহ্য করতে পারবে না বলে। খোচন বলে উঠলোー "আমি কোথায়? আমি কে? চাঁদে আছি নাকি, এটা কে? এলিয়ান।"
পাশ থেকে রাজু বলে উঠলোー "নারে, এটা বদন স্যার, ভৌতবিজ্ঞান স্যার।"
সবাই হাসতে লাগলো।
বদনবাবু বললেনー "কিরে ঠিক লাগছে? না হলে জল খা, সব ঠিক হয়ে যাবে।"
এবার আর খোচন কে বলতে হবে না, সে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছে, এটা বদনবাবুই। কারণ জলের ব্যাপার আছে তো, তা এই স্কুলের যে কেউ বলে দিতে পারবে।
ঘন্টা বাজল ঢং। প্রথম ক্লাস খতম হলো।
আজ পড়াশোনাটা আর হলো না। বদনবাবু ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে এলেন। ক্লাস রুমের ভেতরে যেন কিছু গোয়েন্দা কিছু রিপোর্টারদের নিয়ে বদনবাবুর সমালোচনা চালু হয়ে গেল, হ্যঁউ।
বদনবাবু তেরি মেরি গানটা ইয়াদ করতে করতে যাচ্ছিলেন, অমনি হঠাৎ প্রিয়তমার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। প্রিয়তমা সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে বদনবাবুর দিকে তাকিয়ে আছে, যেন সে বোঝার চেষ্টা করছে, কী এটা? বদনবাবু লজ্জায় পড়ে গেলেন। তিনি কিবা করতেন। তেনার কাছে আদর্শ আগে পরে প্রেম।
প্রেম, এই প্রেম শব্দ টা বড়ই বিচিত্র। সবার ভাগ্যে আসে না, যাদের আসে তারা সত্যিই ভাগ্যবান। বদনবাবু তাদের মধ্যেই একজন, ভাগ্যবান! প্রিয়তমার নাম মাধবীলতা, বাংলার শিক্ষিকা। এই আগের মাসে যোগ দিয়েছেন। বাংলার শিক্ষক বিএড করতে গেছে, তারই শূন্যস্থান পূরণে নতুন এসেছেন। বয়সে আন্দাজ বদনবাবুর থেকে পাঁচ সাত বছরের ছোট হবে, তবুও বদনবাবুর তার সঙ্গে এই একমাস চারদিন, নানা চার দিন নয়, আজকে নিয়ে, হ্যাঁ হ্যাঁ নদিন দিন হবে প্রেমের সাগরে ডুব দিয়েছেন। দুজনে নয়, সিরফ বদনবাবু। মানে ওয়ান সাইড লাভ। এত দিন হয়ে গেল দেখে মুচকি হাসা, সাথে খিঁ খিঁ করা ছাড়া আর কথা এগোয়নি। দ্বিতীয় সাইড থেকে সিগন্যাল এখনো আসেনি, তা আদেও আসবে কী? যা লাজুক প্রকৃতির লোক। তবু এটা প্রথম প্রেম নয়।
বদনবাবু যখন কলেজ পড়ুয়া ছিলেন তখন একজন প্রেমিকা ঠিক জুটিয়ে নিয়েছিলেন। তার সাথে প্রথম আলাপ হয়েছিল কলেজ লাইব্রেরীতে। বদনবাবু সহজপাঠ পড়ছিলেনー "আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, দেখি তুমি জলে নেমে পুতে গেছো পাঁকে। দূর থেকে দেখে ছুটে আসি আমি কাছে, কাদা ঘেঁটে বাঁচিয়ে তোমায় মন ভালোবাসে।"
মুকেশ আমানের লেখা সহজপাঠ, প্রেমের গল্প। দাম 260 টাকা লেখা আছে। কোথা থেকে পাওয়া যাবে, সেটা ঠিক বলতে পারবোনা। হ্যা, তবে এটা বলতে পারি, বইটি তিন তিরিকে নয় পাবলিশার্সের। পড়ছেন বদনবাবু, মনে প্রেমরস সৃষ্টি হচ্ছে। আশেপাশে কেউ নেই, একাকী এক মনে উপভোগ করছেন গল্প খানি। অমনি হঠাৎ নীরবতা ভেঙে একটা মিষ্টি মহিলা কণ্ঠস্বর শুনে চোখটা বই থেকে সরালেন। তিনি তখন বইয়ে পড়ছিলেনー "একটা সুন্দর মিষ্টি মহিলা কণ্ঠস্বর শোনা গেল। এ তো তোমারি আওয়াজ।" একপলকের একটু দেখাতেই তিনি তার প্রেমে পড়ে গেলেন। গল্পের চরিত্রের মধ্যে তিনি ঢুকে গেলেন ও তা কেউ ঢুকিয়ে দিলেন, আর মগ্ন মনে গল্পের আনন্দে ডুবে গেলেন। এই ভাবে চলতে থাকলো তাদের প্রেম কাহিনী। দুজনে সমবয়সীই ছিল, বদনবাবু পিওর সাইন্সের স্টুডেন্ট ছিলেন আর সে ছিল আর্টসের। বদনবাবুর ফিজিক্সের অনার্স আর তার ভূগোলের। ধীরে ধীরে ভালই প্রেম জমে উঠেছিল। একদিন তিনি প্রোপজ করেই ফেললেন। যদিও বা পুরো একটা সাল লেগেছিল, বেশি লাজুক প্রকৃতির হলে যা হয়। তা অনেক কাঠখড়-ও পোড়াতে হয়েছে তাকে, কত সময় দিতে হয়েছে, কত খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু আজ, আজ সে কোথায়? সে কথা দেয়, যে সে চাকরি পাওয়ার পর বিয়ে করবে। আগে নিজের ক্যারিয়ারকে দাঁড় করাবে, তারপর অন্য কথা। প্রথমত সে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে ছিল, আর তার পরিবারের পক্ষে তার শিক্ষার সম্পূর্ণরূপে যাবতীয় খরচ জোগানো খুবই কষ্টকর ছিল। তাই বদনবাবু তাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে সাহায্য করে আসছে, তা আর্থিক দিক হোক বা অন্যান্য দিক। এইভাবে চলতে থাকে তাদের প্রেমের প্রতিটি পর্ব। দুজনেই MA MSc পাস করে। এবার Phd করার পালা। বদনবাবুর কতদিনের শখ যে তিনি পিএইচডি করবেন, ডক্টরেট ডিগ্রী পাবেন। সেই ছোটবেলা থেকে এরই লক্ষ্যে তার পথ চলা। গবেষক হয়ে কিছু আবিষ্কার করার স্বপ্ন তিনি দেখেন। এবার তার স্বপ্ন সফল হতে চলেছে, কিন্তু না, তার আর স্বপ্ন পূরণ হলো না। কারণ কাদম্বরী Phd করতে চাই। কিন্তু সে প্রথমে বলেছিলー " MA করার পর কোন একটা স্কুলে চাকরি পেয়ে যাব, আর দেখতে হবে না, এতেই জিন্দেগি স্যাটেল হয়ে যাবে।"
আজ তার এই রকম মত পরিবর্তনের কারণ তার বান্ধবী মালবিকা।
কাদম্বরী বললোー"ও আমার সোহাগ চাঁদ ও বদনিধনি। মালবিকা Phd করছে, আমিও Phd করতে চাই। কিন্তু আমাদের অত পয়সা নেই Phd করার মতো। তুমি দেখনা, যদি তুমি কিছু টাকা দিয়ে আমায় সাহায্য করতে পারো, দেখনা প্লিজ।"
বদনবাবু বললেনー “ আরে আমার কাছে অতটা টাকা ঠিক হবেনা।‍‍"
কাদম্বরী বললোー"তুমি দেখনা ঠিক হয়ে যাবে। তুমি এতদিন আমাই সাহায্য করে আসছো, আর একটু করে দাওনা প্লিজ।"
বদনবাবু বললেনー "কিন্তু এ তো অনেক টাকা। তুমি বুজতে পারছো না,অত টাকা জোগাড় করা খুবই কঠিন।"
কাদম্বরী বললোー"তুমি আর আমায় ভালোবাসো না,তুমি খারাপ হয়ে গেছ,তোমার সাথে আড়ি।"
বলে সে অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
বদনবাবু বললেনー "আরে রাগ করছো কেন?
আর তুমি তো বলেছিলে, যে তুমি MA পর্যন্তই করবে।"
কাদম্বরী বললোー "এমনিতে করার ইচ্ছা নেই, মালবিকা করছে, আমিও তার মতন করতে চাই। খুবই হিংসা হয় তাকে দেখে, সে একদিন আমায় অপমান করেছিল। বাপের টাকা আছে বলে যেন নিজেকে কী না কিই ভাবে,
আমিও কাদম্বরী দেখিয়ে দেব তাকে।"
বদনবাবু বললেনー"সব বুঝেছি, কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে তো সব করতে হবে।"
কাদম্বরী বললোー "আমি ওসব জানিনা,তোমাকে সাহায্য করতেই হবে নাহলে আমাদের ব্রেকাপ।"
বদনবাবু মনেমনে বললেনー "এতো ভারি সমস্যায় পড়লুম। Phd-করার সব ফর্ম ফিলাপ করা হয়ে গেছে, কিছু টাকাও দেওয়া হয়ে গেছে, এখন কী করি? যা গেছে যাক, Phd আর এজন্মে করা হবেনা। কাদম্বরীরই সাহায্য করি। সে তো একদিন আমারই বউ হবে নাকি। আমার করা আর তার করা একই।
বদনবাবু বললেনー "ঠিক আছে আমি দেখছি।"
বদনবাবু মনে মনে বললেনー "আমার Phd-র জন্য যে টাকাটা রেখেছিলাম তার মধ্যে কিছু কম পড়বে। ফর্ম ফিলাপ করতে তো খরচ হয়ে গেল। যাই হোক করে জোগাড় করতে হবে।কাদম্বরীর Phd করাতেই হবে,নইলে তার কাছে আমি খারাপ হয়ে যাব।"
বহুকষ্টে বদনবাবু বাকি টাকা জোগাড় করে ও নিজের পিএইচডি করার টাকা ব্যয় করে, কাদম্বরীর Phd করার তাগিদে। নিজের স্বপ্ন যেন মনের অন্তরালে হারিয়ে গেল। তা করবেও কী? বাপ তো সামান্য একজন পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার। মাইনেতো অত আর আহামরি নয়। বাপকে কত মিথ্যে বলে অর্থ নিয়েছে, তার আগের সব সাহায্যের জন্য। নিজের কত বই না কিনে, টিউশনি না গিয়ে, মিথ্যা বলে তার সাহায্য করেছে। প্রেমের প্রকৃত পরিচয় তিনি দিয়েছেন। তার বাবা তাকে কোনদিনও সন্দেহ করেনি। তিনি তার বাবার কাছে আরও টাকার প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি মুখ ফুটে বলতে পারেননি। তিনি জানতেন বাবাকে বলে কিছু হবে না, বাবা আর কতই বা পারে। পরিবারের পুরো ভারটা তো তাঁরই উপরে। এক ভাইয়ের টুয়েলভ এর সায়েন্স বিভাগের খরচ, তো আরেক ভাইয়ের কলেজের অনার্স এর যাবতীয় খরচ, আবার অন্যদিকে মায়ের ডাক্তার খরচ, তার ওপর মাথার উপর ঋণের বোঝা। অনেক লোকের সুধ মেটাতে মেটাতে গালমন্দ খেতে খেতে জীবনটা তাঁর যেন একেবারে নরক হয়ে গেছে। আবার যদি সে অর্থের কথা বলে, কিবা করতে পারে বাবা।
সে নিজের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে তার একটা কিডনি বিক্রি করেছিল, সে কাউকে একথা জানায় নি, পাছে কেউ ভয় পাই। যা দিয়ে সে Phd করবে ভেবেছিল, কিন্তু টাকাগুলো তো কাদম্বরীকেই দিয়ে দিতে হল।
স্বপ্নই যেন তার কাছে সব ছিল, কিন্তু কোথায়? কোথায় আর স্বপ্ন, সবকিছু শেষ।
প্রেম আর স্বপ্নের মধ্যে তিনি প্রেম টাকেই বেছে নিলেন। যেন স্বপ্ন অভিমান করে, নীরবে দূরে সরে গেল।
দিন যায় বছর যায়, কাদম্বরীর সঙ্গে যোগাযোগ কমে যায়। ফোনে কথা হচ্ছিল কিন্তু আর কথা হয়না। ফোন লাগালেও এখন শুধু বিজি বিজি বলে। অপেক্ষায় থাকে, শুধু তার সেই মিষ্টি আওয়াজ শুনবো বলে কানে। সে তার বাড়িতে এখনো পর্যন্ত নিয়ে যায়নি, পাছে যদি কেউ অন্য কিছু ভাবে, কিছু সন্দেহ করে। তাই কোথায় বাড়ি? তার খবর ঠিক জানেনা বদন বাবু। তার বন্ধুদেরও এখন আর খোঁজ খবর পাওয়া যায় না, তা পাওয়া যাবে কী করে? কলেজ কমপ্লিট তো যে যার কর্মে ব্যস্ত। পুরনোদের সঙ্গে লিংক থাকে না বললেই চলে। তবুও খুঁজেখাঁজে তার কয়েকজন বান্ধবীদের সঙ্গে কথাবার্তা বললেনー"তোরা তো কাদম্বরীর সঙ্গে পড়তিস না, তা কাদম্বরী সম্পর্কে কিছু খবর জানিস। সে কী করছে? এখন কোথায় আছে?"
বান্ধবী লতা বললー "মেয়েটা কী করছে? কে জানে? সেই কবে দেখা হয়েছিল। ফোন করলে লাগতে চায় না, মনে হচ্ছে নাম্বার চেঞ্জ করেছে।
শুনেছিলাম সে Phd করতে বাইরে গেছে। কেন বলতো? আমাদের থেকে তার কথা তুই তো বেশি জানবি। কী হয়েছে, খুলে বলতো?"
বদনবাবু বললেনー "ও কিছু নয়। ওই যে Phd করতে ভিন রাজ্যে গেছে, ওটাই তাকে শেষ দেখা,মাঝে ভালোই ফোন করছিল কিন্তু কিছুদিন হলো আর ফোন করেনা, আর ফোনও লাগতে চাই না,তাই।"
বান্ধবী টুম্পা বললー "দেখ হয়তো কাউকে পেয়ে গেছে।"
বান্ধবী রিতা বললー "আরে অমন করে বলিনিস, প্রেমিক হৃদয়ে আঘাত পাবে।"
কয়েকজন বান্ধবী হালকা হাসতে লাগলো।
বদনবাবু বললেনー "আরে ঠাট্টা করছিস কেন? ঠিকমতো বলনা। তার বাড়ির এড্রেস বলতে পারবি কেউ?"
বান্ধবী লতা বললー "কেন, তোকে বাড়িতে নিয়ে যায়নি কোনদিন?"
বদনবাবু বললেনー "না।"
বান্ধবী লতা বললー "তা কী যে করিস? আর আমরা কিভাবে জানব? শুধু জানতাম সে ডায়মন্ড হারবার থেকে আসে, তা এত বড় ডায়মন্ডহারবারের কোথায়? সেটা তো জানিনা।" বদনবাবু বললেনー "তাহলে উপায়।"
বান্ধবী রিতা বললー "উপায় একটা আছে, হ্যাঁ তুই এটা করতে পারিস, তুই কলেজে গিয়ে স্যারদের কাছ থেকে জোগাড় করতে পারিস।"
বান্ধবী লতা বললー "হ্যাঁ হ্যাঁ, রিতা ঠিক বলেছে। তাদের কাছে তুই সম্পূর্ণ এড্রেসটাই পেয়ে যাবি।
আর তোর ফোন নম্বর টা দে, কিছু খবর পেলে জানাবো।"
কাদম্বরীর বাড়ির এড্রেসটা যাই হোক না কেন জোগাড় করে ফেললেন বদনবাবু। তিনি তার বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু তালা মারা ছিল। পাশে একজনকে জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পেরেছিলেন, যে কাদম্বরী তার বাবা মার জন্য টিকিট করে পাঠিয়ে ছিল। তাই তার বাবা-মা এই কিছুদিন হলো তার সাথে দেখা করতে গেছে, আর সেই কারণেই বাড়িটিতে তালা মারা। আরও অনেকদিন হয়ে যায়, কিন্তু কোন খবর পাওয়া যায় না।
একদিন হঠাৎই একটা ফোন আসে, আর হঠাৎই তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন। যেন জীবনে বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকুও তিনি হারিয়ে ফেলেলেন। ফোনটি করেছিল মালবিকা। লতাই তাকে এই নম্বরটা দিয়েছে। কোন একটা কথা, যা লতা বললে বদনবাবু বিশ্বাসী করতে পারবেন না বলে তার বিশ্বাস, তাই সে তাকেই বলতে বলেছে, যে এ কথা তাকে জানিয়েছে। কানে এসেছিল একটা দুঃখের খবর। তা অবশ্য তার প্রেমিকার জন্য সুখের, যে কাদম্বরী বিয়ে করে নিয়েছে তা প্রায় দুমাস হতে চলল। পিএইচডি চলাকালীন সে হার্দিক সোম নামক একটা ছেলের প্রেমে পড়ে। তা তার মন দেখে না অর্থ দেখে তা বলাটা খুব একটা কঠিন নয়। ছেলেটার বাবা এক বড় কোম্পানির মালিক, তা আর কিছু বলতে হবেনা আপনারা ঠিক বুঝে গেছেন, তাইতো। ছেলেটাও তার সাথে ভূগোলের পিএইচডি করছিল। তারই সাথে ফিজিক্স ম্যাথ কেমিস্ট্রি ও চলছিল, আর বিয়েটাও কেন বাকি রাখে, সেটাও সেরে ফেলল।
মালবিকার কথাটা প্রথমে লতার মাথায় আসেনি, হঠাৎ ফোনের ফোনবুকএ একজনের নাম্বার খুঁজতে খুঁজতে তার নামটা চোখে পড়ে যায়। আর ভেসে ওঠে অতীতের স্মৃতি। মনে পড়ে যায় বদনবাবু ও কাদম্বরীর কথা।
লতা মনে মনে ভাবলোー " হ্যাঁ মালোবিকাও তো Phd করতে গিয়েছিল মনেহচ্ছে, হ্যাঁ কলটা লাগিয়ে দেখি কিন্তু সে কি বলতে পারবে তার কথা? একটুও তো মিল নেই কাদম্বরীর সঙ্গে।
হয়তো দোষটি সম্পূর্ণ কাদম্বরীর-ই, কি হিংসুটে ও লোভী মেয়েরে বাবা, জীবনে দেখিনি এমন মেয়েকে,শুধু রুপের অহংকার, কম্মে ঢেঁড়স।
টুকে টুকে তো ভালোই নাম্বার নিয়ে ডিগ্রি গুলো কমপ্লিট করে ফেললো। পড়েছিল তারই সাথে আবার টোকা, তাহলে টোকার কী মানে? পড়িস যদি ভালোভাবে পড়ে লিখ। না ইনি মহারানী দুটোই করবেন। এখন আবার Phd ভাবতেই অবাক লাগে। কী করে যে বদনের মতন একজন ভালো ছেলের মাথায় চাপলো শাঁকচুন্নিটা, চিন্তা হয় ছেলেটার জন্য। হ্যাঁ কলটা লাগায় "
কাদম্বরীর সম্পর্কে একথা শুনে তার প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না। যে তাকে এতদিন ভালোবাসলো, লোভের বশে তাকে ভূলে গেল।
এ অবশ্য একদিন হওয়ারই ছিল তা লতা আগে থেকেই ঠাওর করেছিল। যা চরিত্রহীন মেয়ে তা বান্ধবীরাই সঠিক ভাবে বুঝতে পারে।
অজান্তেই যেন বদনবাবুর হাত থেকে ফোনটা মাটিতে পড়ে গেল, পড়ে গিয়ে ব্যাটারি খুলে গেল।
এই ঘটনার প্রায় এক বছর পরে একদিন চাকরি সংক্রান্ত কাজের সূত্রে বদন বাবু কলকাতা গিয়েছিলেন। যাক চাকরিটা তাহলে তার হচ্ছে, কিন্তু অজপাড়াগাঁয়ের কোন নাম না জানা হাই স্কুলে। যা পেয়েছেন এটাই যথেষ্ট। আজ খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে বদনবাবু কে। পরিশ্রমটা আজ তাকে ভালই করতে হয়েছে। পার্কের বেঞ্চে বসে আছেন, হালকা ঠান্ডা হাওয়া বইছে, ঘর থেকে নিয়ে যাওয়া চানাচুর মুড়ি চিবাচ্ছেন চারিদিক দেখতে দেখতে। অমনি হঠাৎ এক জায়গার দিকে যেন তার চোখ স্থির হয়ে যায়। একি মুখটা কেমন চেনা চেনা লাগলো, হ্যাঁ চেনা তো হবেই, যার সাথে জীবনের এতটা দিন জলের স্রোতের মতন কাটিয়েছেন। যার প্রত্যাশার কাছে নিজের স্বপ্নের বলি দিয়েছেন, সে আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে, কাদম্বরী। পাশে ওটা কে? ওর স্বামী, হ্যাঁ, হার্দিক সোম। ওটা তাহলে ওর ছেলে। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তুলছে ফ্যামিলি ফটো। দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মাথায় সিঁদুর।
বদনবাবু ভাবলেনー "যাব ওখানে, না, যেয়েও বা কী করব? ওর মুখ দেখতে ঘৃণা করছে।"
মানুষ কতটা স্বার্থপর হতে পারে, এ যেন তার প্রকৃত দৃষ্টান্ত। হঠাৎই কাদম্বরীর চোখ বদন বাবুর দিকে পড়ে যায়, আর অমনি তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। এমন কায়দায় সে মুখটা ঘুরিয়ে নিল যেন সে বদনবাবুকে দেখতেই পাইনি। চোখে চোখ তো পড়েছে, আর মুখের ফ্যাকাশে ভাবটা এখনো যায়নি। ক্যামেরাম্যানের ছবি তোলার ফ্রেম থেকে সে বেরিয়ে গেল। তার স্বামী এর কারণ জানতে চাইল, সে যেন তার পেটে হাত দিয়ে পেট ব্যাথার ভান করল। তার স্বামী ক্যামেরাম্যান কে বলল আর ছবি তোলা হবে না।
স্বামী তার স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় একটা আশ্বাসের চুমু খেলো। কথাগুলো তাদের দূর থেকে শোনা না গেলেও তাদের ভাব ভঙ্গি থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বাপ ছেলের হাত ধরে এক হাতে স্ত্রীকে জড়িয়ে এদিকে আসতে চাইল, কিন্তু না, স্ত্রী যেন আসতে চাইলো না। তার স্বামী বহু কষ্টেও তাকে এদিকে আনতে পারল না। তাই পার্কের পিছনের গেট দিয়েই তাদের বেরিয়ে যেতে হল। যাবার সময় পিছন ফিরে, হ্যাঁ সে তাকিয়েছে, তাকিয়েছে বদনবাবুর দিকে, কিন্তু একি এটা কী হলো? সে চোখটাকে ছোট করে থুতু ফেলল। যেন সে বদন বাবুর মুখের উপর থুথুটা উদ্দেশ্য করে ফেলল। হয়তো সে তার সামনে বদনবাবুর অকাত দেখিয়ে দিতে চাইছে। বদনবাবু অবাক হয়ে গেলেন। তার এই কৃতকর্মে দুঃখ পেলেন বৈকি। সত্যিই তিনি ভুল করেছিলেন তার স্বপ্নের বলি দিয়ে,ভুল করেছিলেন তাকে ভালোবেসে। আহারে ভারি দুঃখ লাগে এতদিনের ভালোবাসা হারাতে দেখে।
হালকা বাতাসের স্পর্শে সামনে পড়ে থাকা ছেঁড়া পলিথিন টি উড়ে গিয়ে বাতাসে মিশে গেল। প্রেম যেন তার জীবনের সাথে খেলা করে গেল। কোথায় স্বপ্ন, আর কোথায় প্রেম,ভালোবাসা। দুটোই তাকে হারাতে হলো। সূর্যাস্তের কমলা আভায় আকাশটা অল্প রাঙা। গাছের ডালে বসে আছে দুটি শালিক, উড়ে গেল ডানা মেলে একটা শালিক। মিলিয়ে গেল দূর দিগন্তে সূর্যাস্তের সাথে।

শেষ ক্লাসের ঘন্টাটা বেজে উঠল ঢং ঢং, ঢং ঢং, ঢং ঢং, ঢং ঢং করে। বদনবাবু বেরিয়ে এলেন। প্রথম প্রেমে ব্যর্থ প্রেমিকের মনে আবারো প্রেমের জাগরণ হয়েছে। তার আদর্শ, তার ব্যবহার, সত্যিই তাকে মুগ্ধ করেছে। কিন্তু তিনি কি পারবেন? তাঁর এই প্রেম সার্থক করতে। এও কি তার মতন ধোকা দিয়ে যাবেনা তো? কাদম্বরীর জন্যই হয়তো একটু এরকম হয়ে গেছেন বদনবাবু। মাথার তার কেটে গেছে। একটু কিপ্টে হয়ে গেছেন, তা অবশ্য তিনি ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন। হ্যাঁ, এখন একটু বেশিই কিপটে হয়ে গেছেন। যত সব উদ্ভট ভাবনা চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। কাদম্বরীর স্মৃতি যেন ইনাকে কুরে কুরে খায়।Phd করার কথা আর ভাবেননি,যেন স্বপ্নপূরণের সেই আশা, সেই একাগ্রতা, সেই ইচ্ছাশক্তি আর নেই, হারিয়ে গেছে মনের অন্ধকারে।

বোতলটা ভর্তি। চারিদিকে ছাত্রদের কোলাহল। ছুটির সময় যা হয়। গেট থেকে বেরিয়ে এলেন, মুখে কিন্তু কালি এখনো বিদ্যমান। আজ সত্যিই ভারি মজা হলো, কালো মানবকে নিয়ে। এমনিতেই মজা হয়, আজ একটু আনন্দটা বেশিই হল ছাত্রছাত্রী দের।
চিরকুট চানা ওয়ালা চানা রেডি করছে। অটো এসে দাঁড়িয়েছে ঠিক সময় মত। না না সেই অটোওয়ালা টা নয়, এ অন্য। তার নাকে মাছি ছিল, এর থুতনিতে মাছি। মানে যে বড় বড় কালো রঙের তিল হয় একেবারে মাছির মতন সাইজের।
সেগুলোর নাকের উপর মুখের উপর থাকলে দূর থেকে মনে হয় যেন মাছি বসেছে।
অটোই উঠলেন। কয়েকজন ছাত্র অটোই উঠে হুড়োহুড়ি গুতাগুতি করে বসতে শুরু করল। বদনবাবু একটু কড়া সুরেই ধমকই দিয়ে ফেললেন, সবাই চুপ হয়ে গেল। এমনিতেই তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের বড় স্নেহ করেন, এতটা রাগ করবেন তা তিনি নিজেও ভাবেনি।
অটো চলেছে দুরন্ত বেগে। সব যাত্রী নেমে পড়েছে, এখন তিনি একাই যাচ্ছেন চালকের যাত্রী হিসেবে। একেবারে শেষ স্টপিজে নামবেন। বাড়ি ওখান থেকে প্রায় 15 মিনিট হাঁটা পথ। বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। একজন চাকর এসে তার রান্নাবান্না ও যাবতীয় কাজ করে দিয়ে যায়।
হঠাৎই ঘর ঘর আওয়াজ, অটোটা থেমে গেল একি, এ আবার কী সমস্যা? এই যা, এ তো ভারি মুশকিলে পড়া গেল। অটো খারাপ হয়ে গেছে, আর এগোবে না, বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে, তা অবশ্য 30 মিনিট তো লাগবেই বাড়ি ফিরতে। অটোওয়ালা মাফ চেয়ে তার ভাড়া নিল না। ভালোই হলো, এতটা পথ এসে ভাড়া দিতে হবে না। বদনবাবু মনে মনে ভাবলেনー "যাইহোক না কেন পয়সাটা বেঁচে গেল। এইতো আর একটু পথ হেঁটেই মেরে দিই।
আর গাড়ি টাড়ি ধরবো না।" অটোওয়ালা অটো টাকে সাইট করল।
বদনবাবু এগোতে থাকলেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয় হয়। রাস্তা দিয়ে অন্যান্য গাড়ি এগিয়ে চলেছে আপন বেগে, আর বদনবাবু বাম দিক ধরে পয়সা বেঁচে যাওয়ার দরুন প্রফুল্ল মনে একাকী এগোতে থাকলেন। রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলে উঠলো পরপর।
আবছা অন্ধকারে সাথে কৃত্তিম আলোর সংমিশ্রণে কাল মানবকে সত্যিই আরো বিচিত্র লাগছে। ঘেউ, আবার ঘেউ, তারি সাথে ঘেউ ঘেউ ঘেউ, বদনবাবু পিছনে তাকালেন। তিনি দেখলেন কয়েকজন কুকুর তার দিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে। কালো মানব, হ্যাঁ, মাথায় টাক হ্যঁউ।
একটা কুকুর ভাবছেー "এ কে? এলিয়েন নাকি, পাঁচু দের টিভিতে ডোরেমনে দেখেছিলাম একজন কুকুর বাচ্চা ধরে নিয়ে আকাশে চলে যেত। তারপর সেখানে গিয়ে তাদের ডগ ললিপপ করে খেত, মস্তি করে। ওকে দেখে সেদিন আমার বিশাল রাগ ধরে ছিল, মনে হয়েছিল শালাকে লাথ মেরে মুখফুক চিরে দিয়ে মায়ের ভোগে পাঠিয়ে দিই। আজ আবার সেই শালারবেটাই মনে হচ্ছে এসেছে, হ্যাঁ, তার মতনই মুখ কালো মাথা ফাঁকা, একদম ডিটো।
আরে চুলবুল, তোকে সেই এলিয়েনের কথা বলেছিলাম, এই সে হারামজাদা এলিয়ান। আমাদের বাচ্চা চুরি করতে এসেছে।
চুলবুল বললー "আমাদের বাচ্চা চুরি করে নিলে, আমাদের বংশ তো শেষ হয়ে যাবে। তাহলে ধর শালাকে, ওর একদিন কী আমাদের একদিন।"
প্রথমের কুকুরটা বললー "হ্যাঁ শালাকে দেখিয়ে দিই, আমাদের সঙ্গে পাঙ্গা নিলে একেবারে ইন দা মায়ের ভোগ।"
চুলবুল বললー "তো চলো সবাই বন্ধুরা, নেমে পড়ি যুদ্ধে। বংশের সাবাল, বাচ্চাদের বাঁচাতেই হবে।"
কুকুরদের মধ্যে অন্য
আরেকজন বললー "করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।" সাথে অন্যান্য কুকুরগুলোও একসাথে বলে উঠলোー"করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে।"
এদিকে তো বদনবাবুর হাল বেহাল। বিপদের আশঙ্কা বুঝেছেন, কি করবেন তিনি? ভেবে উঠতে না উঠতেই সব কুকুরগুলো ছুটে এলো বদনবাবুর দিকে। আরে দৌড়, দৌড়, বদনবাবু দৌড় দিলেন। কুকুরগুলো ছুটছে দুরন্ত বেগে, বদনবাবুও কিছু কম যায় না তিনিও ছোটাতে ওস্তাদ। দৌড়ে মেডেল পেয়েছেন, মানতে হবে। 15 মিনিট এর পথ তিনি পাঁচ মিনিটে চলে এলেন, লোকালয়ে প্রবেশ করলেন, তবুও কুকুরগুলো তার পিছু ছাড়েনি। তিনি দৌড়াতে থাকলেন, দৌড়াতে থাকলেন, দৌড় দৌড়। লোকালয়ের কিছু লোক দেখে তো অবাক। একজন বললー "কুকুর তাড়া করছে কেন?" লোকটাকে অন্য আরেকজন বললー "কী জানি?"
তৃতীয় একজন ব্যক্তি বললー "লোকটার মুখে কালি মানে?"
সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলে উঠলোー "চোর, শালা চুরি করতে এসেছিল কালি মেখে, না হলে চুরি করে পালাচ্ছে। আর কুকুরগুলোর হাতে ধরা পড়ে তাড়া খাচ্ছে।"
প্রথম ব্যক্তি বললー "কুকুর তো সব বুঝতে পারে। না হলে লোক আর সাধে কুকুর পুষতো।"
চতুর্থ একজন ব্যক্তি এদের কথা শুনছিল পাশ থেকে তাড়াতাড়ি বলে উঠলোー "ধর শালাকে, চোর চোর ধরো সবাই, চোর চোর।"
তার সাথে আরও কয়েকজন গলা মিলিয়ে বলতে থাকেー "চোর চোর, ধর ব্যাটা চোর কে।"
বদনবাবুর পিছনে তাড়া করে সবাই। হাতের সামনে যে যা পাই তাই নিয়ে দৌড় দেয়। দৌড় কারীদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।
সেই টিভি দেখা প্রথম কুকুরটা বললー "আরে দেখো সবাই, মানুষগুলো আজ আমাদের সাথ দিচ্ছে, আমাদের বাচ্চা বাঁচানোর জন্য। আগে সাহায্যের সময় তো তাদের টিকিটিও খুজে পাওয়া যেত না। দেখো সবাই, আজ সাহায্য করতে তারা দলবল নিয়ে আমাদের সাথ দিচ্ছে,
এলিয়ানটি কে মারার জন্য।"
চুলবুল বললー "জয়, বাচ্চা বাঁচানো প্রকল্প, না না, বাচ্চা বাঁচানো অভিযান।"
অন্য আরেকজন কুকুর বললー "না, এটা খুব বড় হয়ে যাচ্ছে। জয় ,হ্যাঁ হ্যাঁ শুধু জয়।"
সবাই তাল মিলিয়ে বলতে থাকেー "জয় জয়,জয়।"
বদনবাবু আর কত ছুটবেন, কুকুর ও মানুষমিলে সবাই তাকে আজ তাড়া করেছে। সবাই চোর ভাবছে। কেন যে তিনি আজ মুখে কালি মাখতে গেলেন? ন্যাড়া হয়েছেন তবুও ঠিক ছিল, কালির জন্য যেন পস্তাতে হচ্ছে। বদন বাবু আর পারছেন না, শেষ পর্যন্ত হাল তাকে ছাড়তে হলো। যদিও বা দৌড় তিনি থামাতে চাননি, কিন্তু রাস্তায় পড়ে থাকা কলার খোলায় পা পিছলে তাকে থামতে হলো হোঁচট খেয়ে পড়ে।
চুলবুল বললー "দাঁড়া দাঁড়া, কেউ আগে যাইনিস। কে জানে শালার কোন শক্তি আছে। দাঁড়া দাঁড়া, মানুষদেরকেই আগে যেতে দে, ওদের আমাদের থেকে বেশি শক্তি আছে। ওরাই লড়ুক যুদ্ধটা। চল আমরা দর্শক হয়ে মজা লুটি।
অন্যান্য কুকুররা বললー "হ্যাঁ ঠিক বলেছিস চুলবুল, একটাই জীবন বুঝে-শুনে এগোতে হবে।"
কুকুর দের মধ্যে
আর একজন বলে উঠলー "কেন? আমরাও কি কিছুতে কম আছি নাকি, দেখিয়ে দেবো কত ধানে কত চাল।"
প্রথম টিভি দেখা কুকুরটা বললー "নারে গুলে, তোর কিছু বুদ্ধি নেই। এই তোদের জন্যই আমাদের কিছু বুদ্ধিমান ব্যক্তি দের বোকা হতে হয় সবার কাছে। আমাদের বুদ্ধি মানুষদের থেকেও বেশি হয়েও পিছিয়ে পড়তে হয় ওদের থেকে। সাহস থাকা যেমন জরুরি, তেমনি বুদ্ধি থাকাটাও দরকার। তাই আমরা দর্শক হয়েই এখন থাকি, পরে সুযোগ বুঝে কোপ মারবো।"
গুলে বললー "ঠিক আছে, ঠিক আছে।"
চুলবুল বললー "হ্যাঁরে, দেখ আমরা কেমন ওদের খাটাচ্ছি, আমাদের কাজ ওদেরকে দিয়ে করাচ্ছি"
প্রথম টিভি দেখা কুকুরটা বললー "আরে, মানুষদের থেকেও বুদ্ধি আমাদের বহু যুগ আগে থেকেই আছে। আমার দাদুই তো ডাইমন্ড, নিউটনের কুকুর। সে এক সকালে দুটি উপপাদ্য আবিস্কার করে ফেলেছিল, মানে অংকে বিশাল দক্ষ ছিল দাদু। তাছাড়া আপেল পড়ার সময় দাদু তো ওখানেই ছিলেন। আপেলটা যখন নিউটনের মাথায় পরলো তখন নিউটন প্রথমেই আপেলটা নিয়ে ভাবেনি, হয়তো খাবার কথা ভেবেছিল। কিন্তু আপেলটা পড়ার পর দাদু আপেল গাছের দিকে তাকিয়ে ছিল, তাই দেখে সেও তাকালো। আর সেটা নিয়ে বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবতে শুরু করলো। কেননা দাদু আগে থেকেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলেন যে কিছু একটা ব্যাপার আছে। আর সেই জন্যই আমার মাথায় তোদের তুলনায় অনেক বেশি বুদ্ধি। সেই জন্যই আমি ইংরেজি বলতে পারি, আর আমার স্টাইলটাও একটু ইংরেজি টাইপের। আমরা বিজ্ঞানী পরিবারের রে, বিজ্ঞানী পরিবারের। যুগ-যুগান্তর ধরে আমরা বিজ্ঞান চর্চা করে আসছি। কিন্তু ঈশ্বর মানুষদের বুদ্ধি কম দিলেও, অনেক কিছু দিয়েছেন। যার ফলে তারা কম বুদ্ধিতেও অনেক কিছু দিয়ে অনেক কিছু অনায়াসে করতে পারে।কিন্তু আমাদের,
আমাদের বুদ্ধি থাকলে কি হবে? অত কিছু দেননি যার সাহায্যে বিজ্ঞান চর্চা গুলি সবার সামনে তুলে ধরতে পারিনা। কপাল, সবই কপাল।"
একজন কুকুর বললー "কে নিউটন?"
প্রথম টিভি দেখা কুকুরটা বললー "আরে নিউটন কে চিনিস না, দূর হ। সেই জন্য বলি বল্টু দার কোচিংয়ে একটু যাওয়া-আসা কর, কত সুন্দর সুন্দর সুইটিরা যাই। বলি প্রেম ও হবে আর পড়াও। আর সেদিনে সেই জন্যই তো তোরা অশিক্ষিতের দল, সেই শিক্ষিত কুকুর টার পেছনে তাড়া করলি, কী বলছিল বুঝতে পারিনিস, ভেবেছিস গালাগালি দিচ্ছে। আর অমনি তাড়া করে গাড়ির তলায় চাপা ফেলে দিলি। ভাবতেই অবাক লাগছে কুকুরটাকে মেরে ফেললি।"
একজন কুকুর বললー "কিন্তু কেন সে আমাদের দাগি বলেছিল? আমরা কি আলুর মতন দাগি নাকি? পচা নাকি? কোথায় দাগি কই? কই গায়ে তো একটাও দাগ নেই..তাহলে কেন?"
প্রথম টিভি দেখা কুকুরটা বললー "আরে সে দাগি বলেনি। সে ইংরেজিতে ডগি বলেছিল। ইংরেজিতে ডগি মানে কুকুর। আর তোরা কী করলি, তার জিনা হারাম করে দিলি। যাক যা হয়ে গেছে বাদ দে ওসব,ওসব বেশি ভাবিনিস হযতো দেখবি ভূত হয়ে সামনে চলেএসেছে প্রতিশোধ নিতে। বাদ দে, বাদ দে। "
বদনবাবু আর রেহাই পেলেন না। বদন বাবু কি বলছেন কেউ তার কথায় কান দিল না, শুধু লাঠি বোতল বেল্ট আরোও কত কী দিয়ে জনগণ যেন রাম ধোলাই দিতে থাকলো। আহারে, কারো যেন মনে একটুও মায়া নেই, কেউ আটকায় না, সবাই দাঁত কেলিয়ে হাসতে থাকে, আর মারতে থাকে। রাম ধোলাই খাওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে যায়। কে জানতো? তার কালি মুখের কালই কাল হয়ে দাঁড়াবে।
একজন ব্যক্তি বললোー "চোরটা টেঁসে গেল নাকি"
তার উত্তরে অন্য
আরেকজন ব্যক্তি বললোー "টেঁসে গেলেতো পুলিশ-টুলিশ কেস হয়ে যাবে। আর তখন আমাদেরও জেল হতে পারে।
তৃতীয় আরেকজন ব্যক্তি বললー "জেলে না ছাই, বললেই হল। এতজন কে আর জেলে ধরে রাখতে পারবে।
অজ্ঞান বদনবাবুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে ও একজন পুলিশকে খবর দেয়।
পুলিশ বড়বাবু বললেনー "দিন, চোরটার মুখটা কেউ ধুয়ে দিন,দেখি বাছাধনের বদনটা।"
এরপর জল নিয়ে আসা হল এবং ভালো করে ঘষে ঘষে চোর টার মুখে থাকা কালিকে ধুয়ে ফেলা হলো। পুলিশ বড়বাবু অবাক হয়ে গেলেন।
পুলিশ বড়বাবু অবাক হয়ে বললেনー "একি, এ যে স্কুল টিচার ব.. ব.. বদনবাবু। কিপটে হতে পারে, কিন্তু তিনি এসব কাজ করতেই পারেন না।"
এখানকার থানার বড়বাবুর সাথে বদন বাবুর আলাপ বহুদিনের, তিনি ভালো মতনই বদন বাবুকে জানতেন।
পুলিশ বড়বাবু বললেনー "কে বলল ইনি চোর?"
জনগণের ভিড়ের মাঝ থেকে একজন বলে উঠলー "না উনি ছুট ছিলেন কালি মাখা অবস্থায়, পিছনে আবার কুকুরেরা তাড়া করেছিল, তাই দেখে চোর চোর মনে হয়েছে।"
পুলিশ বড়বাবু বললেনー "আর আপনার এত মারলেন, যদিও ইনি চোরও হতেন, চোর হলেও মানুষ তো একটুও মায়া দয়াও নেই।
কে কে মেরেছে? অ্যাঁ, কে কে মেরেছে?
সবকটাকে জেলে পুরবো।
সমরেশ তাড়াতাড়ি লোক গুলোর ছবি তুলে নে, পরে দেখা যাবে। যেইনা তিনি বলেছেন একথা, অমনি হঠাৎ লোক গুলো যেন ফুরুত করে পাখির মতন উড়ে গেল। আর নেই, কোথায় কে?
সবাই দে ছুট। আর কুকুরেরা দু-একটা ঘুরঘুর করছে, বাকিরা গতিক বুঝে কেটে পড়েছে।
বদনবাবু কে হসপিটালে ভর্তি করানো হলো। পরেরদিনই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। বদনবাবু কালরাত্রির পর এই প্রথম আস্তে আস্তে চোখ খুলছেন। বদনবাবু ব্যতীত কেউ এখানে নেই, রুমটা ফাঁকা। না না ভুল বললাম, রুমটাতে কে যেন একজন বসে আছে, তার দৃষ্টি বদন বাবুর মুখের দিকে। বদনবাবু চোখ খুললেন, খুলেই তিনি অবাক হয়ে গেলেন। মুখ দিয়ে অস্ফুটভাবে বেরিয়ে এলো "একি তুমি খিঁ।" অজান্তেই তিনি তুমি বলে ফেললেন, সাথে খিঁ-ও বলতে ছাড়লেন না। "সরি সরি আপনি।"
তিনি বললেন "আর আপনি নয়। এখন থেকে শুধু তুমি আর তুমি। আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই ,তুমি কি আমায় বিয়ে করবে?"
একবারে বিয়ের কথা পেড়েই ফেললেন প্রিয়তমা। যতই যাই হোক তিনিও কিন্তু মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিলেন আমাদের বদনবাবুকে।
শেষ পর্যন্ত বদনবাবু প্রেমে সার্থক ই হলেন। কপালে একটা চুম্বন করিলেন আমাদের বাংলার শিক্ষিকা মাধবীলতা। বদনবাবুর মুখের মধ্যে হাসি ফুটে উঠল। চোখের মধ্যে জয়ের উল্লাস আর চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো নীরবে।

Wʀɪᴛᴇʀ✍︎ : 𝓡𝓸𝓬𝓴𝔂 𝓚𝓪𝔃𝓲