মানবাশোক বিরচিত
অথ রামকথা
যদি থাকে গজানন, করিনু নমন,
রামের মহিমা(?) আমি করিব বর্ণন ৷
********
অযোধ্যা নামেতে এক আছিল নগর,
রাজত্ব করিত সেথা নৃপতি সগর ৷
ষাট হাজার পুত্রের সগর জনক,
স্বভাবে তাহারা সব অতি ভয়ানক ৷
কপিলের শাপে ভস্ম হলো ভ্রাতাগণ,
গঙ্গোদকে স্বর্গে যাবে মিলে আশ্বাসন ৷
সগরের নাতি ছিলা অংশুমান নামে,
দিলীপ তাহার পুত্র খ্যাত ধরাধামে ৷
দিলীপের পত্নিপুত্র ভগীরথ নামে,
গঙ্গাদেবী আনিলেন এই ধরাধামে ৷
পূর্বপুরুষ ভস্মোপরি গঙ্গা বহিয়ে,
স্বর্গবাসী হ’লো তারা শাপমুক্ত হয়ে ৷
আরো বহুকাল পরে সগরের কুলে,
দশরথ জন্মিলো ইন্দুমতীর কোলে ৷
পিতা তার মহারাজা অজ মহামতি,
প্রজারঞ্জক সুভদ্র অযোধ্যা নৃপতি ৷
পিতৃ অন্তে দশরথ অযোধ্যা-রাজন,
প্রধানা মহিষী তার ছিলো তিনজন ৷
বহুকাল হৈল গত পুত্র নাহি হয়,
পুত্রার্থে দশরথের আকুল হৃদয় ৷
একদা মৃগয়াকালে রাজা দশরথ,
হরিণ ভাবিয়া করে মুনিপুত্র বধ ৷
পুত্র হারাইয়া মহা ক্রোধে অন্ধমুনি,
দশরথে অভিশাপ দিলেন তখনি ৷
পুত্রহারা হয়ে আমি ত্যজিব জীবন,
পুত্রশোকে তোমারও হইবে মরণ ৷
শাপেবর হৈল ইহা ভাবে দশরথ,
মুনিশাপে পূর্ণ হবে তার মনোরথ ৷
পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞের দ্রুত করে আয়োজন,
যাজ্ঞিক ঋষ্যশৃঙ্গ বিভাণ্ডক-নন্দন ৷
বিভাণ্ডক ঔরসে গর্ভবতী হরিণী,
ঋষ্যশৃঙ্গে জন্ম দিলা সেই কুরঙ্গিনী ৷
চরু বানাইলা মুনি বসি যজ্ঞস্থলে,
পুত্রবতী হবে পত্নি সে চরু খাইলে ৷
সে চরু খাইয়া তিন পত্নি ভক্তিভরে,
গর্ভবতী হইয়া চারি পুত্র প্রসব করে ৷
জ্যেষ্ঠ্যপুত্র রাম তার শুনো সর্বজন,
অনুজ ভরত শত্রুঘ্ন আর লক্ষ্মণ ৷
পত্নিরূপে বরে রাম জনক-দুহিতা,
রূপবতী গুণবতী নাম তার সীতা ৷
পিতার আদেশে রাম যায় বনবাসে,
অনুজ লক্ষণ চলে তার পাশে পাশে ৷
জনক-নন্দিনী সীতা রামচন্দ্র সাথে,
রাজ্য ছাড়ি তিনজন যায় বনপথে ৷
লঙ্কার অধিপতি রাক্ষস দশানন,
বনমাঝে জানকীরে করিল হরণ ৷
সীতারে হরণ করি রাজা দশানন,
প্রহরায় রাখে তারে অশোক কানন ৷
সীতার উদ্ধার লাগি রাম রঘুনাথ,
সসঙ্গী সুগ্রীব সাথে করিল আঁতাত ৷
সুগ্রীবের পরিচয় দিলাম হেথায়,
বালি তার জ্যেষ্ঠভ্রাতা রাজা কিস্কিন্ধ্যায় ৷
মহাবল বালি রাজা জানে সর্বজনে,
লেজে বেঁধে রেখেছিলো রাজা দশাননে ৷
ডুবাইয়া ছিল সাত সাগরের জলে,
কিস্কিন্ধ্যার নরপতি বালি মহাবলে ৷
বালিপত্নি তারাদেবী অতি রূপবতী,
সুগ্রীবের কামদৃষ্টি ছিলো তার প্রতি ৷
তার সাথে রাজ্যলোভ সুগ্রীবের মনে,
বসিতে বাসনা তার রাজ সিংহাসনে ৷
লালসা বুঝিয়া তার কিস্কিন্ধ্যা-রাজন,
প্রহারিয়া সুগ্রীবেরে করে বিতাড়ন ।
সকল জানিয়া রাম করে অঙ্গীকার,
রাজাসনে বসাইবে মিত্রকে তাহার ৷
আশ্বস্ত হৈল সুগ্রীব রামের বচনে,
মল্লযুদ্ধে রত হয় জ্যেষ্ঠভ্রাতা সনে ৷
শ্রীরাম লুকায়ে থেকে বৃক্ষ অন্তরালে,
বাণ মারি বধ করে বালি মহাবলে ৷
তদন্তর রামচন্দ্র সুগ্রীবেরে লয়ে,
লঙ্কাপুরী উপজিল সাগর তরিয়ে ৷
সিংহাসনে বসি আছে লঙ্কেশ রাবণ,
হেনকালে উপজিল ভ্রাতা বিভীষণ ৷
কহিলেক জানকীরে কর তুমি মুক্ত,
রামের শরণ লয়ে হও তার ভক্ত ৷
একথা শ্রবণ করি রাজা দশানন,
পদাঘাতে বিভীষণে করে বিতাড়ন ৷
বিভীষণ পঁহুছিল শ্রীরাম সকাশে,
বন্ধনে আবদ্ধ হলো মিত্রতার পাশে ৷
ভুলিয়া আপন দেশ আপনার জন,
দেশের গোপন কথা করিলো জ্ঞাপন ৷
আরম্ভিল মহারণ রাম দশাননে,
মারিতে না পারে রাম লঙ্কেশ রাবণে ৷
অকালে করিল রাম দুর্গার বোধন,
বাসনা অন্তরে তার রাবণ নিধন ৷
পৌরহিত্য তরে রাম না পায় ব্রাহ্মণ,
পূজারি হইল সেথা রাজা দশানন ৷
অকাল বোধন কেনো জানিয়া কারণ,
শুদ্ধাচারী দশানন করিল পূজন ৷
রাবণ বধের তরে গুপ্ত অস্ত্রখানি,
চুরি করি হনুমান রামে দিলা আনি ৷
সেই অস্ত্রে বধি রাম রাজা দশাননে,
বিভীষণে বসাইলা রাজার আসনে ৷
মুক্ত হয়ে সীতা আসে রামের সকাশে,
জানকীরে হেরি রাম কহে কটুভাষে ৷
এতদিন ছিলা তুমি রাবণ কবলে,
সতী তুমি নহ আর মন মোর বলে ৷
সমুখে চাহিয়া দেখো সুগ্রীব লক্ষ্মণ,
আরও আছে লঙ্কার রাজা বিভীষণ ৷
ইহাদের মধ্য হতে করি নির্বাচন,
করিবারে পারো তুমি পতিত্বে বরণ।
রামের বচন শুনি জনক নন্দিনী,
আত্মাহুতি দিতে সেথা জ্বালিলেন অগ্নি ।
প্রবেশ করেন সীতা জ্বলন্ত অনলে,
দহে না সীতারে অগ্নি মহা পূণ্যফলে ৷
তদন্তর শ্রীরাম সীতা আার লক্ষ্মণ,
সঙ্গে হনুমান আর কপি সৈন্যগণ ৷
পুষ্পক বিমানে আসে অযোধ্যা নগরী,
রাজাসনে বসে রাম লক্ষ্মণ ছত্রধারী ৷
তদন্তর রাম সীতা অযোধ্যা প্রাসাদে,
কাটাইলো কিছুকাল আমোদ-প্রমোদে ৷
রামের ঔরসে সীতা হৈল গর্ভবতী,
জন্ম দিতে শ্রীরামের বংশের বাতি ৷
সীতারে লইয়া প্রজা করে কানাকানি,
দশানন করিয়াছে সতীত্বের হানি ৷
তাহারে লইয়া রাম করে সংসার,
এই পাপে অযোধ্যা হইবে ছারখার ৷
এমতো শুনিয়া রাম ডাকিয়া লক্ষ্মণে,
নির্দেশিল সীতারে ত্যজি আইসো বনে ৷
বাল্মিকী আশ্রমে সীতা পাইল আশ্রয়,
তথায় জনম দিলো যুগল তনয় ৷
রামের রাজত্বে এক বালক ব্রাহ্মণ,
সে বালকের হইল অকাল মরণ ৷
অযোধ্যা-নরেশ যেথা রাম রঘুপতি,
তথায় অকালমৃত্যু হইলো কেমতি ৷
নারদ কহিল শুদ্র সামন্তক নাম,
অকালমৃত্যু তার কার্য্যের পরিণাম ৷
শুদ্র হৈয়া তপ করে সেই দুরাচার,
অবিলম্বে করো তার প্রাণ সংহার ৷
রামচন্দ্র পঁহুছিলো সামন্তক যেথা,
সংহারিল সামন্তকে চূর্ণ করি মাথা ৷
আরো কিছকাল পরে সপুত্র সীতারে,
ফিরাইয়া আনে রাম অযোধ্যা নগরে ৷
শ্রীরাম কহিল শুনো জনকনন্দিনী,
নির্দশিব যাহা তুমি পালিবে এখনি ৷
রাম কহে জানকী অগ্নি-পরীক্ষা দেহ,
দূর করিবার তরে প্রজার সন্দেহ ৷
ভীষণ তাপিতা সীতা দুঃখে মুহ্যমান,
কাঁদিয়া কহিলা ধরা বক্ষে দাও স্থান ৷
ধরণী হইল দ্বিধা সে রোদন শুনি,
সীতারে আপন বক্ষে লইলেক টানি ৷
আরো কিছুদিন পরে কৌশল্যানন্দন,
প্রিয় ভ্রাতা লক্ষ্মণেরে দিলা বিসর্জন ৷
তদন্তর বহুবর্ষ রাজত্ব করিয়া,
বৈকুন্ঠে উপজিল জীবন বিসর্জিয়া ৷
ক্ষুদ্রবুদ্ধি মোর অতি নারি বুঝিবারে,
শ্রীরাম পুরুষোত্তম হৈল কি বিচারে ৷
ক্ষুদ্রাকারে রামকথা করি বিরচন,
ত্রুটি হৈলে ক্ষমিবেন জ্ঞানী-গুণী জন ৷
🙏🙏🙏