Read Silent revenge by Meghbalika in Bengali Short Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

নিঃশব্দ প্রতিশোধ

প্রিয়া নিজের বিয়ের ছবি নিয়ে ব্যালকনিতে বসে আছে তাও আবার আনমনে । চোখ থেকে জল পড়ছে অবিরত । এইভাবে যে নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামী কে অন্য কারোর হাতে তুলে দিতে হবে ভাবতে পারেনি সে । অবশ্য যদি ভালোবাসার মানুষ টাই যদি তার সাথে থাকতে চায় না ।তার স্বামী রোহন তার নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু রুশা কে শাস্ত্র মতে বিয়ে করেছে । পাঁচ বছরের ভালোবাসা এবং তিন বছরের সংসার । এই সব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে । নিজের মায়ের প্রতি পূজা ভীষণ কৃতজ্ঞ । যেখানে ডিভোর্সি মেয়েকে বাপের বাড়ি মেনে নেয় না । সেখানে সে প্রায় ভেবে নিয়েছিল যে তার মা তাকে মেনে নেবে না । কিন্তু শেষে তার মাও মেনে নিল । তার মা তার এই লড়াই এর সঙ্গী । এই সব শুনে তার মা তাকে আপন করে নেয়। নিজের চোখের জল মুছে বিয়ের ছবি টাকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেললো । কারণ সেটি এখন চোরাবালি ছাড়া কিছু নয় । পূজা নিজের রুমে এসে প্রেগন্যান্সি রিপোর্টটা দেখে নিজের পেটে হাত বোলালো আর মুচকি হেসে বলল - " জানিস তো তোর বাবা তোকে মেনে নেবে না । কেনো জানিস কারণ আমি নাকি তোর বাবাকে কষ্ট দিয়েছি । আমি নাকি তার লজ্জার কারণ । আচ্ছা তুই কি বলিস তোর মা এমন করতে পারে । " । প্রিয়ার মা এসে প্রিয়ার মাথায় হাত বোলালো আর বললো - " মা রে , বাচ্চা টাকে রাখবি । সে ভালো কথা কিন্তু তুই কার পরিচয়ে ওকে বড়ো করবি ।" । প্রিয়া হেসে বলে - " নিজের পরিচয়ে । " 
প্রিয়ার ডিভোর্স হতে প্রায় একবছর লেগে গেল । সেই সময়ে তার একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্ম নিল ।মেয়ের নাম রেখেছে উষ্মিতা। যেহেতু প্রেগন্যান্সির সময় ডিভোর্স হয়েছে তাই সময় লাগলো । তার পর নিজের ক্যারিয়র আর সন্তান কে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে । রোহন একবারও তার বাচ্চা টাকে দেখেনি। সে শুধুমাত্র জানত যে কিভাবে তার স্ত্রী কে নিজের জীবন থেকে দূর করা যায় । তার এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা ছিল না । বরঞ্চ কোর্টের রায়ের শেষ দিনে রোহন পূজার মুখের উপর বিয়ের কার্ড ছুড়ে ফেলেছিল । পূজা প্রতিউত্তরে শুধু হেসেছিল । সবশেষে পূজা একটা স্কুলে চাকরি পেলো । 
-----------------------------
মানুষের খারাপ দিন নাকি ক্ষণস্থায়ী । এ কথাটাই যেনো পূজার জীবনে বেদবাক্য এর মত ফলে গেলো । প্রায় সতেরো টা বছর কেটে গেছে । যে স্কুলের শিক্ষিকা ছিল সে সেই স্কুলের প্রিন্সিপাল সে । পূজার সেই স্কুলের এখন বেশ নামডাক । উষ্মিতার বয়স এখন সতেরো । উষ্মিতা একদম মায়ের মত দেখতে । সে এখন ক্লাস ইলেভেন এর স্টুডেন্ট । একদিন পূজার স্কুলে চাকরির জন্য রোহন এলো । সে অবশ্য জানত না যে পূজা এই স্কুলের প্রিন্সিপাল । রোহন কে একজন পিয়ন বললো যে তাকে প্রিন্সিপাল এর সাথে দেখা করতে । রোহন প্রিন্সিপাল রুমে গিয়ে অবাক হয়ে ধরা গলায় বলল -'' পু...পূজা" 
পূজা একটা ফাইল চেক করছিল । রোহন এর গলা শুনে পূজা তাকালো তার দিকে । রোহন এর শরীর শুকিয়ে গেছে , চোখ ভেতরে ঢুকে গেছে । এইসব দেখে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো - " তো মিস্টার রোহন , এখানে আসার কারণ কি । " 
রোহন ধরা গলায় বললো - " চাকরি ...... চাকরির খোজে । আসলে আমার এই চাকরির খুব প্রয়োজন। " 
পূজা মাথা নাড়লো । রোহন বললো - " পূজা আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করো । আমি তোমায় অপমান করেছি । সেই সবের মাসুল আমি গুনছি । আমার চাকরি চলে গেছে । পথের ভিখারী হয়ছি আমি । রুশা আমায় ছেড়ে চলে গেছে । আমার মাও মারা গেছে । প্লীজ প্লীজ আমি অনেক বড়ো দোষী । আমায় ক্ষমা করো । " 
পূজা হেসে বললো- " আপনার ওপর কোনো রাগ আমার নেই । আপনাকে আমি অনেক আগে ক্ষমা করে দিয়েছি । " 
হটাৎ দরজায় নক পড়ায় কথা বলা বন্ধ করলো পূজা । পূজা হেসে দরজা খুললো । তার একমাত্র মেয়ে উষ্মিতা। পূজা বললো - " মিতা , কি হয়ছে। তুমি এখন এখানে । " উষ্মিতা বললো - " তুমি বাড়ি যাবে না । আমি স্কুল থেকে ফিরে দেখি তুমি নেই । এস ইউসুয়াল তুমি একটায় বাড়ি ঢোক । আর আজকে দুটো বাজে। দিস ইজ নট ডান মা। " । এই সমস্ত কথা বলার পর উষ্মিতা তাকায় রোহন এর দিকে । পূজা তার মেয়ের দিকে তাকায় । উষ্মিতা তার মাকে বলে - " উনি কি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসছেন । " । পূজা মাথা নাড়লো যার অর্থ হাঁ। " তুমি নিশ্চয়ই তাকে ক্ষমা করেছ । "। নিজের মেয়ের এই কথা শুনে রোহন অবাক হয়। পূজা বললো - " তুই তো সব জানিস মা , আমি তোর বাবা...... মানে মিস্টার রোহন এর প্রতি না কোনো অনুভূতি আছে না কোনো রাগ । তাই ক্ষমার এখানে কোনো প্রশ্নই আসে না । " উষ্মিতা বললো - " তাহলে চলো মা । " । বাইরে দাড়িয়ে থাকা পিওন কে পূজা বললো -" আজকে টাইম শেষ হয়ে গেছে ,সো ক্যান্সেল হিম "। এই কথাটা বলে পূজা আর উষ্মিতা বেরিয়ে যায় ।রোহন স্তম্ভিত নয়ণে তাদের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকলো। পূজা নিজের গাড়িতে বসে বললো - " আচ্ছা মিতা আমার আজকে করা ব্যবহার টা কি ঠিক হলো । " 
উষ্মিতা হেসে বলল - " নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থেকো না মা । মানুষ ঠকে শেখে। আর তুমি সেটা অনেক পরে শিখেছো অ্যান্ড হি ডিজার্ভ ইট । সে আমার জন্মদাত্রী পিতা । তার কাছে আমার অনেক ঋণ ঠিকই কিন্তু তিনি আমাকে আপন করেনি। তাই তুমি যেটা করেছ সেটা ঠিক করেছ । তুমি তোমার রুল মেইন্টেইন করেছ । "। পূজা হেসে তার মেয়ের কপালে সস্নেহের একটা পরশ একে দেয় । হয়ত এটাও প্রতিশোধ ছিল । 
নিঃশব্দ প্রতিশোধ । যাকে শোনা যায় না , কিন্তু দেখা যায় ।