Read Shiva, Sujan, and Nandi: A Journey of Devotion and Friendship by Proy Roy in Bengali Motivational Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

শিব, সুজন ও নন্দীর ছোঁয়া ভাষা

অধ্যায় ১: ভোরের শিবমন্দির

ভোরবেলা। গঙ্গার পাড়ে একটি পুরনো শিবমন্দির। ঠান্ডা হাওয়ায় কাঁপছে গাছের পাতারা।
সুজন চুপচাপ বসে আছে শিবের চরণে। চোখে জল, মুখে স্তব। পাশে দাঁড়িয়ে তার প্রিয় সঙ্গী—নন্দি।

সুজন:
“প্রভু, তুমি তো জানো আমি কিছু চাই না। শুধু তোমার ছোঁয়া চাই, শান্তি চাই।
মানুষের ভিড়ে আমি কোথাও খুঁজে পাই না নিজেকে...”

শিব যেন মৃদু হাসলেন, বাতাসে ঢেউ খেলে গেলো।
নন্দি মাথা নিচু করে, যেন নিজেই ঈশ্বরের তরফ থেকে আশীর্বাদ দিয়ে দিলো।
অধ্যায় ২: নন্দির নীরব ভাষা

সুজন শিবের পায়ে মাথা রেখে একটানা বসে ছিল। তার চোখে জল শুকিয়ে এসেছে, মনটা শান্ত।
নন্দি ধীরে ধীরে তার পাশে এসে বসলো। মুখে কোনো কথা নেই, কিন্তু চোখে যেন হাজার ভাষা।

সুজন (চমকে তাকিয়ে):
"নন্দি, তুই না কথা বলতে পারিস, তবু তোকে সবসময় বুঝতে পারি।
তুই জানিস না—তোকে আমি কেমন ভালোবাসি।
তুই তো শুধু শিবের বাহন না, আমার জীবনের একমাত্র বন্ধু।"

নন্দি মাথা নিচু করে নিজের কপালটা ঠেকালো সুজনের হাতে।
এক অদ্ভুত অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে। যেন শিবের আশীর্বাদ সেই মুহূর্তে তাদের জড়িয়ে ধরেছে।

পটভূমিতে এক অদৃশ্য স্তব বেজে উঠল—

“মন দাও শিবে, শান্তি খোঁজো প্রাণে,
শুদ্ধ ভালোবাসা সব পাপ করে মুছে।”

হঠাৎ শিবলিঙ্গ থেকে এক কণা তুষারজ্যোতি পড়ে সুজনের কপালে।
সেই মুহূর্তে, সুজন অনুভব করলো—
আজ সে আর একা নয়, তার আত্মা এখন শিবের ছায়ায় পূর্ণ।

শিব, সুজন ও নন্দি” —
অধ্যায় ৩: রুদ্ররূপের রাত্রি


---

দৃশ্যপট:
রাত্রি গভীর। চাঁদ যেন আজ আকাশের একমাত্র দর্শক। গাঢ় নিস্তব্ধতার মাঝে কেদারনাথে হঠাৎ করেই শুরু হয় এক অভূতপূর্ব প্রকম্পন।

সুজন:
(চমকে উঠে)
"নন্দি! এই শব্দ? এই আলো? কোথা থেকে আসছে?"

নন্দি মাথা তুলে তাকাল। তার চোখে বিস্ময়, কিন্তু কোনো ভয় নেই।

শিবলিঙ্গ থেকে ধীরে ধীরে এক আলোর রেখা উঠতে লাগল। সেই আলো এক সময় গর্জে উঠল, যেন দশ দিক কাঁপিয়ে উঠলো এক তাণ্ডবী জ্যোতি।

আলো থেকে শোনা গেল এক নরম অথচ তীব্র কণ্ঠস্বর—

শিবের বাণী:
“ভক্ত যখন নির্মল,
তার আহ্বানে আমি রুদ্রও হই কোমল।
তোমার চোখের জলে আমার গঙ্গা বইছে সুজন।”

সুজন মাথা নিচু করে কেঁদে ফেলল।

সুজন:
“হে মহাদেব, আমি কিছু চাই না। শুধু আপনি আমায় ও নন্দিকে আপনার ছায়ায় রাখুন।”

আলো ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এল।
চারদিক নিস্তব্ধ। কেবল পায়ের কাছে পড়ে রইলো এক ছোট্ট চন্দনের কণিকা—
যা শিব নিজ হাতে সুজনের কপালে ছুঁইয়ে গিয়েছিলেন।

নন্দি ধীরে ধীরে সুজনের পাশে বসে মুখ রাখল তার কাঁধে।
এই প্রথমবার, নন্দির চোখ থেকেও একটি জলকণা গড়িয়ে পড়লো।


---

ছোট্ট কবিতা:
“তুই শিবের বাহন, আমি শিবের ভক্ত,
তবু যে বন্ধুত্ব, তা অনন্ত চিরশক্ত।
না বলা ভাষায়, চোখের ভাষায়,
তোর-আমার বন্ধন, শিব জানে পাশায়।”

“শিব, সুজন ও নন্দি”
অধ্যায় ৪: সন্ন্যাসীর ছায়া


---

দৃশ্যপট:
সকাল হয়েছে, কিন্তু কেদারনাথের আকাশ আজ অদ্ভুত রকমের মেঘে ঢাকা। বাতাস ভারী। শিবলিঙ্গের সামনে বসে আছে সুজন, পাশে নন্দি। হঠাৎ মন্দিরের দরজায় ধীরে ধীরে প্রবেশ করলেন এক জটাজুট ধরা সন্ন্যাসী। তাঁর গায়ে বাঘছাল, হাতে ত্রিশূল, গলায় রুদ্রাক্ষ। কিন্তু মুখ ঢেকে রেখেছেন ছায়ায়।

সন্ন্যাসী:
“ভক্ত সুজন… আমি এসেছি মহাদেবের বার্তা নিয়ে।”

সুজন:
(চমকে উঠে)
“আপনি কে? আমি তো আপনাকে চিনিনা।”

সন্ন্যাসী:
“জানবে সময় এলেই। এখন শুধু শুনো।
শিব সন্তুষ্ট, কিন্তু পরীক্ষা এখনও শেষ নয়।
তোমার হৃদয়ে যে ভালোবাসা ও ভক্তি জন্মেছে,
তা কি বিপদের মুখেও অটুট থাকবে?”

নন্দি ধীরে ধীরে এগিয়ে এল সন্ন্যাসীর পায়ের দিকে। সে তার পায়ে মুখ রাখল— যেন সেই ছায়ার মধ্যেই সে চিনে নিয়েছে তাঁর পরিচয়।

সুজন (কাঁপা কণ্ঠে):
“আমার সব কিছু নিয়ে নিন, শুধু শিব যেন আমার মন থেকে দূরে না যান।”

সন্ন্যাসী মৃদু হেসে বললেন—
“তবে প্রস্তুত হও। আগামী পূর্ণিমায় কেদারনাথ কাঁপবে। তীব্র বরফঝড় নামবে।
তুমি আর নন্দি— তোমাদের রক্ষা করবে না কেউ, শুধু তোমাদের বিশ্বাস যদি শুদ্ধ থাকে।”

এই বলে তিনি হাওয়ার মতো মিলিয়ে গেলেন।

নন্দি:
(চোখে জল নিয়ে)
“সুজন… ওনি কি শিব নিজে ছিলেন?”

সুজন কিছু বলে না। সে শুধু হাত জোড় করে শিবলিঙ্গের দিকে চেয়ে থাকে—
আবার শুরু হয় প্রার্থনার তপস্যা।


---

ছোট্ট কবিতা:
“ভক্তি যে শক্তি, তা রক্ষা করে সব,
ভয়কে যে জয় করে, তারেই চায় রব।
সুজনের হৃদয়, নন্দির চোখ,
তাদের বন্ধুতা আজ শিবের আলোয় ধোক।”
শিব, সুজন ও নন্দি”
অধ্যায় ৫: বরফঝড়ের রাত্রি


---

দৃশ্যপট:
পূর্ণিমার রাত। পাহাড়ে অস্বাভাবিক ঠান্ডা নেমেছে। কেদারনাথের চূড়া ঢেকে গেছে ঘন বরফে। মন্দির চত্বর জনশূন্য। শুধু এক কোণে, আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে সুজন ও নন্দি। চারপাশে দমকা হাওয়া, দূরে শোনা যাচ্ছে গর্জনের মতো শব্দ— যেন প্রকৃতিও কিছু বলতে চাইছে।

নন্দি:
“সুজন, আমার গায়ে হিম লেগে যাচ্ছে। তুই বলেছিলি বিশ্বাসে রক্ষা হবে— সত্যিই কি হবে রক্ষা?”

সুজন:
(চোখ বন্ধ করে ধ্যানরত, ধীরে ধীরে বলে)
“আমরা কিছু চাইনি। শুধু প্রার্থনা করেছি— ভালোবাসা দিয়ে, হৃদয় দিয়ে।
শিব যদি আছেন, উনি আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেবেন।”

ততক্ষণে আকাশ কালো হয়ে আসে। তুষারপাত শুরু হয়। ধীরে ধীরে মন্দির ঢেকে যায় বরফে। আগুন নিভে যায়। নন্দি কাঁপতে থাকে। সুজন নিজেকে নন্দির গায়ে চাদর দিয়ে জড়িয়ে দেয়।

নন্দি:
“তুই নিজে কাঁপছিস, আমার কথা ভাবিস কেন?”

সুজন:
“শিবের ভক্ত একা নয়। যতক্ষণ তুই আছিস, ততক্ষণ আমি শক্ত।
আমরা একসাথে থাকলেই বরফ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।”

ঠিক তখনই, মন্দিরের শিখরে দেখা যায় এক আলোর রেখা।
একজন সন্ন্যাসীর অবয়ব দেখা যায় তুষারের মাঝে।
হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন তিনি। আর তারপর, হঠাৎ— সব শান্ত। বরফ থেমে যায়।
তাপ যেন ফিরে আসে হাওয়ায়। আগুন আবার জ্বলে ওঠে আপনাতেই।

সুজন ও নন্দি— একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। শিব আছেন, ছিলেন, থাকবেন।


---

কবিতা:
“তুষার যতই পড়ুক, হৃদয়ে যদি দীপ্তি থাকে,
সততার জ্যোতিতে বরফও গলে গিয়ে যায় নীচে।
ভক্তি শুধু নয়, বন্ধুতা—
শিবকে টেনে আনে মানুষের কাছাকাছি।”