বিকেলের শেষ আলোটা যেন আজ একটু বেশিই মায়াবী। ছোট্ট শহরের এক পুরনো গলিতে, পাশাপাশি দু’টি বাড়ি। একটিতে থাকে নিশীথ, আরেকটিতে মেঘলা। নিশীথের ঘরের জানালা ঠিক মুখোমুখি মেঘলার বারান্দা। এই জানালা-বারান্দার গল্পটা শুরু হয়েছিল বছর খানেক আগে, যখন মেঘলা পরিবারসহ এখানে আসে।
নিশীথ, কলেজের ছাত্র, একটু লাজুক। মেঘলা, সদ্য স্কুল পাশ করা, হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত। প্রথমে দু’জনের মধ্যে ছিল শুধু চোখাচোখি, তারপর ধীরে ধীরে শুরু হয়েছিল কথা। কিন্তু, কথা বলার একমাত্র মাধ্যম—নিশীথের জানালা আর মেঘলার বারান্দা।
আজ সন্ধ্যায়, আকাশে হালকা মেঘ। নিশীথ জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়, মেঘলা বারান্দায়। পাশে দাঁড়িয়ে আছে মেঘলার ছোট ভাই মেঘদূত, আর নিশীথের বন্ধু অরুণ। বাড়ির ছাদে খেলছে মেঘলার ছোট বোন মেঘলা, আর পাশের বাড়ির দিদিমা চুপচাপ বসে আছেন বারান্দায়।
নিশীথ ফিসফিসিয়ে বলে, "আজকের আকাশটা দেখেছো? ঠিক যেন তোমার মতো হাসছে।"
মেঘলা হেসে বলে, "তুমি তো প্রতিদিনই আকাশকে আমার সঙ্গে তুলনা করো।"
নিশীথ একটু লজ্জা পেয়ে বলে, "তুমি জানো, আকাশ যেমন বিশাল, তেমনি তোমার হাসিও আমার মনটা ভরিয়ে দেয়।"
মেঘলা চুপ করে থাকে। হঠাৎ পাশের গাছে বসে থাকা কোকিলটা ডেকে ওঠে। মেঘলা বলে, "শোনো, কোকিলটা কী সুন্দর গাইছে! ঠিক আমাদের মনের কথা বলছে মনে হচ্ছে।"
নিশীথ বলে, "তুমি জানো, আমি যখন তোমাকে দেখি, মনে হয়, জীবনটা কত সুন্দর! তুমি কি কখনো ভেবেছো, আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই প্রকৃতির সৌন্দর্যটা আরও বেশি অনুভব করতে পারবো?"
মেঘলা একটু চুপ থেকে বলে, "হ্যাঁ, আমি ভেবেছি। প্রতিদিন বিকেলে যখন তোমার জানালার দিকে তাকাই, মনে হয়, এই ছোট্ট পৃথিবীটা তোমার আর আমার জন্যই সাজানো।"
এদিকে, অরুণ আর মেঘদূত খোশগল্পে মেতে উঠেছে। ছাদ থেকে মেঘলা হাসতে হাসতে বলে, "দাদা, দিদি, তোমরা আবার কী নিয়ে গল্প করছো?"
মেঘলা হেসে বলে, "কিছু না, আকাশের গল্প।"
নিশীথ বলে, "আকাশ, কোকিল, ফুল—সবকিছুই তো তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়।"
মেঘলা বলে, "তুমি কি জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনো সাহস পাইনি বলার।"
নিশীথ অবাক হয়ে বলে, "তুমি কি সত্যি বলছো? আমি তো প্রতিদিনই ভাবি, কবে তোমাকে বলবো, 'আমি তোমাকে ভালোবাসি।'"
মেঘলা বলে, "তাহলে আজ বলো।"
নিশীথ জানালার গ্রিল ধরে বলে, "মেঘলা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমার হাসি, তোমার কথা, তোমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখা—সবকিছুই আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।"
মেঘলা চোখ নামিয়ে বলে, "তুমি জানো, তোমার জানালার আলোটা যখন আমার বারান্দায় পড়ে, মনে হয়, আমাদের ভালোবাসার আলো।"
এদিকে, দিদিমা মৃদু হেসে বলেন, "ভালোবাসা তো এমনই হয়, জানালা-বারান্দার দূরত্ব পেরিয়ে একদিন মিলেই যায়।"
মেঘদূত আর অরুণ হেসে বলে, "দাদা, দিদি, তোমাদের গল্পটা একদিন বইয়ে ছাপা হবে!"
নিশীথ আর মেঘলা দু’জনেই হেসে ওঠে। নিশীথ বলে, "তুমি কি আমার সঙ্গে সারাজীবন এই জানালা-বারান্দার গল্পটা বুনতে চাও?"
মেঘলা বলে, "হ্যাঁ, চাই। আকাশের মতো বিশাল, কোকিলের গানের মতো মধুর, আর ফুলের মতো সুন্দর হোক আমাদের ভালোবাসা।"
আকাশে তখন রঙিন মেঘ, বাতাসে কোকিলের গান। জানালা আর বারান্দার দূরত্ব পেরিয়ে, নিশীথ আর মেঘলার ভালোবাসা প্রকৃতির সৌন্দর্যে মিশে যায়।
তারা একে অপরের কানে কানে বলতে চাই তাদের ভালবাসার কথা,প্রেমের কথা, জীবন- যৌবনের কথা,কিন্তু তারা যদি একে অপরের চোখের দিকে তাকাই তা হলেই তারা নিজেদের ভেতরের প্রেমের অনুভূতি করতে পারে।
নিজেদের ভেতরের সমস্ত ব্যথা বেদনা তারা ভুলে যায় যদি দুজন দুজনের হাত ধরে।
নিজেদের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয় যদি তারা একে অপরের হাত ধরে।
তারা নিজেদের ভেতরের প্রেমের অনুভূতি গুলি একে অপরের সামনে উজাড় করে দিতে চায়।
তাদের কানে বেজে ওঠে প্রেম পর্যায়ের সঙ্গীত।
প্রকৃতি যেন তাদের একে অপরের জন্যই বানিয়েছে। তারা নিজেদের ভেতরের বিরহের কষ্ট যন্ত্রণা - ব্যথা বেদনা সমস্ত কিছু নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে চায়।
