Read Love of the green field by Prabhakar Bhangar in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

সবুজ মাঠের ভালোবাসা

কলকাতার এক ছোট্ট শহরতলিতে সপ্তর্ষি দত্তর দিন শুরু হয় খুব ভোরে। মা যখন চা বানাতে রান্নাঘরে যান, তখনই সপ্তর্ষি মাঠে দৌড়াতে বেরিয়ে পড়ে। তার স্বপ্ন—একদিন বড় ফুটবলার হবে, দেশের হয়ে খেলবে, আর বড় কোনো ক্লাবের জার্সি গায়ে দেবে। ফুটবল তার কাছে শুধু খেলা নয়, জীবন। বাবা ছোটবেলায় বলেছিলেন, “জিততে হলে পরিশ্রম করতে হবে, আর স্বপ্নকে ভালোবাসতে হবে।” সেই কথা মনের মধ্যে গেঁথে গেছে সপ্তর্ষির।

কলেজে সপ্তর্ষি খুব সাধারণ ছাত্র। পড়াশোনায় মনোযোগ কম, কারণ তার মন পড়ে থাকে মাঠে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, ক্লাসের ফাঁকে ফুটবল নিয়ে আলোচনা—এসবই তার নিত্যদিনের সঙ্গী। কলেজের ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন সে, আর তার খেলার দক্ষতা নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে, সায়ন্তিকা সরকার—কলেজের সেরা ছাত্রীদের একজন। পড়াশোনায় দারুণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার উপস্থিতি অনিবার্য। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে সপ্তর্ষির দিকে। প্রথম দিন কলেজে সপ্তর্ষিকে মাঠে খেলতে দেখে মুগ্ধ হয়েছিল সে। সেই থেকে তার প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করে সায়ন্তিকা। কিন্তু সাহস করে কখনও কিছু বলতে পারেনি। সপ্তর্ষি সবসময় ব্যস্ত থাকে নিজের স্বপ্ন নিয়ে, কারও দিকে তাকানোর সময়ই যেন নেই।

প্রেমের শুরু
সায়ন্তিকা প্রতিদিন ক্লাসে সপ্তর্ষির পাশে বসার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো কথা বলে, হাসে, কখনও খেলার প্রশংসা করে। সপ্তর্ষি বিনীতভাবে উত্তর দেয়, কিন্তু তার চোখে স্বপ্নের ছায়া—সায়ন্তিকার ভালোবাসার ইঙ্গিত সে বুঝতে পারে না, বা বুঝেও না বোঝার ভান করে।

একদিন কলেজে ফুটবল ম্যাচ ছিল। সপ্তর্ষি অসাধারণ গোল করে দলকে জিতিয়ে দেয়। সবাই উল্লাসে মাতোয়ারা। সায়ন্তিকা দূর থেকে দেখে, তার চোখে জল এসে যায়—গর্বে, ভালোবাসায়। ম্যাচ শেষে সে সপ্তর্ষিকে অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে যায়।

“তুমি অসাধারণ খেলেছো আজ!”

“ধন্যবাদ, সায়ন্তিকা,” হেসে উত্তর দেয় সপ্তর্ষি।

এই ছোট ছোট আলাপচারিতায় সায়ন্তিকার ভালোবাসা আরও গভীর হয়। সে সিদ্ধান্ত নেয়, এবার সে নিজের মনের কথা বলবেই।

প্রেম নিবেদন
পরের সপ্তাহে কলেজের ক্যান্টিনে সপ্তর্ষিকে একা পেয়ে সায়ন্তিকা সাহস করে বলে,

“শুনো, সপ্তর্ষি, আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই অনেকদিন ধরে... আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি।”

সপ্তর্ষি একটু চমকে যায়। সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,

“সায়ন্তিকা, আমি এখন শুধু ফুটবল নিয়ে ভাবি। আমার স্বপ্ন অনেক বড়। প্রেমে জড়ালে মনোযোগ নষ্ট হবে। প্লিজ, আমাকে ভুল বোঝো না।”

সায়ন্তিকার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে কিছু না বলে চলে যায়। কিন্তু তার ভালোবাসা কমে না, বরং আরও বেড়ে যায়। সে জানে, সপ্তর্ষির স্বপ্ন বড়, কিন্তু তার ভালোবাসা আরও বড়।

কঠোর পরিশ্রম
সপ্তর্ষি দিনরাত পরিশ্রম করে। সকালে কলেজ, বিকেলে কোচিং সেন্টার, রাতে বাড়িতে শরীরচর্চা—এই নিয়মে তার জীবন। বাবা-মা তাকে সমর্থন করেন। বাবা বলেন, “তুই একদিন দেশের হয়ে খেলবি, আমি জানি।” এই কথা সপ্তর্ষির মধ্যে নতুন উদ্যম এনে দেয়।

স্টেট লেভেল চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নির্বাচিত হয় সপ্তর্ষি। তার কোচ বলেন, “এই সুযোগ, সপ্তর্ষি! নিজেকে প্রমাণ কর।” সপ্তর্ষি জানে, এই ম্যাচ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

সায়ন্তিকার অপেক্ষা
সায়ন্তিকা প্রতিদিন সপ্তর্ষির খোঁজ নেয়। বন্ধুদের থেকে জানতে চায় কেমন খেলছে, কেমন আছে। সে জানে, সপ্তর্ষির স্বপ্ন পূরণ হলে সে আবার চেষ্টা করবে তার ভালোবাসা জানাতে। প্রতিদিন ডায়েরিতে লেখে, “আজ সপ্তর্ষি কেমন আছে? ও কি আমাকে মনে রাখে?”

চ্যাম্পিয়নশিপের দিন
স্টেডিয়ামে হাজার হাজার দর্শক। সপ্তর্ষির দল ফাইনালে উঠেছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত, স্কোর সমান। হঠাৎ, সপ্তর্ষি বল পেয়ে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে গোল করে। গোটা স্টেডিয়াম গর্জে ওঠে। সপ্তর্ষির নাম সবাই মুখে মুখে। সে দেশের সেরা উঠতি ফুটবলারদের একজন হয়ে যায়।

কলেজে ফিরে আসে সপ্তর্ষি। সবাই তাকে অভিনন্দন জানায়। মিডিয়াতে তার ছবি, সাক্ষাৎকার। সপ্তর্ষির বাবা গর্বে কাঁদেন। কোচ বলেন, “তুই পারবি, সপ্তর্ষি! তুই অনেক দূর যাবি।”

প্রেমের স্বীকৃতি
কলেজে সপ্তর্ষি যখন সবার মাঝে দাঁড়িয়ে, হঠাৎ সায়ন্তিকা ছুটে আসে। তার চোখে জল, মুখে আবেগ। সে চিৎকার করে বলে,

“সপ্তর্ষি, আমি তোমাকে ভালোবাসি! আমি আর লুকাতে পারছি না। তুমি যদি না বলো, আমি জানি না কী করব!”

সবাই চুপ। সপ্তর্ষি হতবাক। সে সায়ন্তিকার চোখের দিকে তাকায়—সেখানে ভালোবাসা, অপেক্ষা, কান্না সব একসঙ্গে। সপ্তর্ষি এগিয়ে যায়, সায়ন্তিকার হাত ধরে বলে,

“সায়ন্তিকা, আমি জানি, আমার স্বপ্ন বড়। কিন্তু তুমি ছাড়া সেই স্বপ্ন অপূর্ণ। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

সায়ন্তিকা কাঁদতে কাঁদতে সপ্তর্ষির বুকে মাথা রাখে। সবাই করতালি দেয়। কলেজের মাঠে নতুন গল্পের শুরু হয়।

নতুন যাত্রা
সপ্তর্ষি ও সায়ন্তিকা একসঙ্গে নতুন পথচলা শুরু করে। সপ্তর্ষি আরও মন দিয়ে খেলে, সায়ন্তিকা পাশে থেকে তাকে অনুপ্রেরণা দেয়। সপ্তর্ষির স্বপ্ন পূরণের পথে সায়ন্তিকা তার সবচেয়ে বড় সঙ্গী হয়ে ওঠে।

তাদের ভালোবাসা প্রমাণ করে—স্বপ্ন যত বড়ই হোক, ভালোবাসা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। সবুজ মাঠের প্রতিটা ঘাসে, প্রতিটা গন্ধে, সপ্তর্ষি ও সায়ন্তিকার ভালোবাসার গল্প ছড়িয়ে পড়ে।

শেষ কথা
এটাই ছিল সপ্তর্ষি ও সায়ন্তিকার গল্প—স্বপ্ন, ভালোবাসা, পরিশ্রম আর সাফল্যের এক অনন্য মিশেল। তাদের গল্প আজও কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রেরণা দেয়—স্বপ্নের পেছনে ছুটতে, ভালোবাসার জন্য লড়তে।