Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

প্রেমের প্রতিলিপি।

প্রথম পরিচয় – ঝগড়া দিয়ে শুরু
দেবলোক আর পুষ্পিতা – দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। দেবলোকের বাবা বিশ্বদেব বর্মন শহরের বিখ্যাত প্রোমোটার, আর পুষ্পিতার বাবা গ্রামের সাধারণ কৃষক। দুজনের দেখা হয় স্থানীয় এক টিউশন কোচিং সেন্টারে, যেখানে দুজনেই ক্লাস ৯-এ পড়ে।
প্রথম দিন থেকেই তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকে। দেবলোক একটু অহংকারী, সবসময় নিজের মত চালায়। পুষ্পিতা অত্যন্ত মেধাবী, কিন্তু গরীব বলে অনেকেই তাকে তুচ্ছ করে। দেবলোকও প্রথমে তাকে পাত্তা দেয় না, বরং প্রায়ই খোঁটা দেয়। পুষ্পিতাও ছাড়ার মেয়ে নয়, সে দেবলোককে তার অহংকারের জন্য খোঁচা দেয়।

২. ঝগড়া থেকে বন্ধুত্ব
কয়েক মাস পর, একদিন কোচিং থেকে ফেরার সময় পুষ্পিতার সাইকেল নষ্ট হয়ে যায়। সবাই চলে গেলেও দেবলোক একা দাঁড়িয়ে থাকে। সে চুপচাপ পুষ্পিতার সাইকেল সারাতে সাহায্য করে। পুষ্পিতা অবাক হয়, কারণ দেবলোক সাধারণত কারও কোনো উপকার করে না।
সেই দিন থেকে তাদের মধ্যে একটু একটু করে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একসঙ্গে পড়া, একে অপরকে সাহায্য করা, ছোট ছোট হাসি ঠাট্টায় তারা কাছাকাছি চলে আসে। ঝগড়া কমে গিয়ে বন্ধুত্ব গাঢ় হয়।

৩. অজান্তেই প্রেম
দেবলোক বুঝতে পারে, পুষ্পিতার জন্য তার মনে অন্যরকম অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে। পুষ্পিতাও দেবলোকের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে, যদিও মুখে স্বীকার করে না। তাদের বন্ধুরা মজা করে বলে, “তোমরা তো প্রেমে পড়েছ!”
তারা হাসে, অস্বীকার করে, কিন্তু দুজনেই জানে, তাদের মধ্যে কিছু একটা বদলে যাচ্ছে।

৪. প্রেমের স্বীকৃতি
তিন বছর কেটে যায়। তারা এখন ক্লাস ১২-এ। একদিন কোচিংয়ের ছাদে বসে দেবলোক পুষ্পিতাকে বলে,
“তুই জানিস, আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারি না।”
পুষ্পিতা একটু লজ্জা পায়, তারপর বলে,
“আমিও তোকে খুব ভালোবাসি।”
দুজনেই নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে। সেই দিন থেকে তাদের প্রেমের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

৫. বাধা – সমাজ ও পরিবার
দেবলোকের বাবা বিশ্বদেব বর্মন জানতে পারেন তাদের সম্পর্কের কথা। তিনি প্রচণ্ড রেগে যান।
“আমার ছেলে একজন কৃষকের মেয়েকে বিয়ে করবে? অসম্ভব!”
তিনি দেবলোককে ঘরে আটকে রাখেন, বাইরের জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পুষ্পিতার পরিবারও ভয় পায়, সমাজ কী বলবে!

৬. পালিয়ে বিয়ে
দেবলোক কোনোভাবেই পুষ্পিতাকে ভুলতে পারে না। সে তার দাদার সাহায্য নেয়। এক রাতে, সুযোগ বুঝে সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। দাদা তাদের জন্য শহরের বাইরে একটা ছোট্ট বাড়ি ভাড়া করে দেয়।
দেবলোক আর পুষ্পিতা গোপনে বিয়ে করে। তারা নতুন শহরে, নতুন জীবনে পা রাখে।

৭. সংগ্রামের দিন
দেবলোকের কাছে কোনো টাকা নেই। সে বাজারে সবজি বিক্রি করতে শুরু করে।
পুষ্পিতা টিউশনি নেয়, ঘরের কাজ করে।
তাদের জীবন সহজ ছিল না, কিন্তু তারা একে অপরের পাশে ছিল।
কষ্টের মধ্যেও তারা খুশি ছিল, কারণ তাদের ভালোবাসা ছিল অটুট।

৮. ফিরে আসা
তিন বছর পর, বিশ্বদেব বর্মন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন, ছেলের ভালোবাসা আর সুখ তার কাছে সবচেয়ে বড়।
তিনি দেবলোক আর পুষ্পিতাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেন।
সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ হয়, দুই পরিবার মেনে নেয় তাদের সম্পর্ক।

৯. নতুন শুরু
দেবলোক আর পুষ্পিতা আবার নতুন করে জীবন শুরু করে।
তাদের ভালোবাসা সব বাধা পেরিয়ে জয়ী হয়।
তারা প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভালোবাসা কোনো বাধা মানে না।

শেষ কথা
দেবলোক আর পুষ্পিতার গল্প আমাদের শেখায়—
ভালোবাসা মানে শুধু একসঙ্গে থাকা নয়, বরং একে অপরের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা, সংগ্রাম করা, আর বিশ্বাস রাখা।
তাদের গল্প আজও অনেকের অনুপ্রেরণা।তিন বছরের কষ্ট, সংগ্রাম আর ভালোবাসার পরিণতি—
তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়, পরিবার ও সমাজের স্বীকৃতি পায়।
তারা প্রমাণ করে, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না, বরং সময়ের সাথে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

তাদের গল্পের শেষটা হয়—ভালোবাসা, বিশ্বাস আর পারস্পরিক সম্মানের জয়।
তারা একসঙ্গে সুখে-দুঃখে পথ চলতে থাকে, আর তাদের প্রেম হয়ে ওঠে সবার কাছে অনুপ্রেরণা