# আগলে_রেখো_মোরে
রাত 1:30
আকাশের গোল চাঁদ টার দিকে তাকিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চুল ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে গান গাইছে এক তরুনী
এই চাঁদের টিপে মন ভোলেনা মা
দোলনা দোলে মন দোলেনা মা
রাতের চোখে ঘুম যে নামে
চাঁদের পাশে মেঘ যে থামে
রাতের চোখে ঘুম যে নামে
চাঁদের পাশে মেঘ যে থামে
আমার পাশে নেইতো তুমি মা...
তোমায় ছাড়া ঘুম আসেনা মা
মাগো তোমায় ছাড়া ঘুম আসেনা মা...........
গান শেষে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছে আম্মু তোমার মেয়ে অনেক বড়ো হয়ে গেছে তার বিয়ে হয়ে গেল আম্মু। তুমি দেখতেও পেলে না আম্মু। খুব কষ্ট হয় তোমাকে ছেড়ে থাকতে আম্মু। আমার একাকিত্বের জীবনে নতুন দায়িত্ব এসে পড়ল। ও আম্মু তুমি চলে যাওয়ার পর কেউ আমার খেয়াল রাখে না আম্মু। আব্বুও বদলে গেছে আম্মু। যাকে তুমি বাঁচিয়েছিলে যার জন্য নিজের সবকিছু হারালে সে তোমাকে সবথেকে বেশি ঠকিয়েছিল আম্মু। আজ আব্বুর সামনে তোমাকে নিয়ে সবাই আমাকে খারাপ কথা বলছিল যানো আম্মু উনি আমার হয়ে একটাও কথা বলেনি। আম্মু আমার খুব ভয় করছে যদি এই দায়িত্ব ঠিক করে পালন না করতে পারি কি হবে আম্মু।
ফোনের আওয়াজে তার কান্না থামে ।
হ্যালো কে বলছেন (ইরা)
আমি তোমার হ্যাসবেন্ড বলছি আমাইরু । আচ্ছা তোমার গলাটা এমন লাগছে কেন ? ?
কাঁদছিলে তুমি? আরে কথা বলো(আহিদ)
আরে আমাকে কথা তো বলতে দিন আপনি তো বলতে শুরু করলেন। (ইরা)
আচ্ছা বলো(আহিদ)
আমি একটু শুয়ে ছিলাম তাই বোধহয় গলাটা এমন লাগছে। আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?? (ইরা)
যাকে বিয়ে করলাম তার নাম্বার কালেক্ট করা অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল শুধু সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। (আহিদ)
আচ্ছা মাহিদ দিয়েছে তাই তো। ও আপনার ভাই অব্যশই ও দিয়েছে। আচ্ছা আমার একটা কথা ছিল। (ইরা)
শুধু একটা কেন তোমার যতটা মন চাই বলো আমি শুনছি (আহিদ)
আপনি আমার সবকিছু যেনেও কেন বিয়ে করলেন?? আপনি একজন ডাক্তার তো এখন আপনি হস্পিটালে রোগী দেখার কথা আমার সাথে কথা বলছেন যে (ইরা)
প্রথম প্রশ্নের উত্তর এখন দেওয়ার মুড নেই আমার। আর দ্বিতীয়টার উত্তর আমি ডাক্তার বলে কি আমাকে সারাক্ষণ হস্পিটালে রাখতে চাইছো। এ কেমন কথা মিসেস ? এই শোন সন্ধ্যার ম্যাটার নিয়ে মন খারাপ করবে না তুমি আমার ওয়াইফ তাই কে কি বললো তাই নিয়ে ভাববে না।সারাদিন আমাকে নিয়ে ভাবো তাহলে আমার প্রতি অনুভূতিরা ডানা মেলে আসবে বুঝলে মিসেস (আহিদ)
এমন টুকটাক খুনসুটি কথা চলতে থাকল ওদের মাঝে। হ্যাঁ ওই তরুনী আর কেউ না ইরাই ছিল। আজকে সন্ধ্যায় কি হয়েছে যানতে হলে ফ্লাশব্যাকে যেতে হবে.........
ফ্লাশব্যাক
হুম চলুন (ইরা)
নিচে
ইরা আজ তোমার ও আহিদের এঙ্গেজমেন্টের সাথে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ টাও হচ্ছে আমরা ঠিক করেছি এটা।আর দুই মাস পর সামাজিক বিয়ের মাধ্যমে ওনারা তোমায় উঠিয়ে নিয়ে যাবেন ।আশা করি কোন অসুবিধা হবে না কারণ তুমি ছোট থেকেই চেনো তোমার মনিমা আর পাপাইকে ।তবুও তোমার কি কিছু বলার আছে কি এখানে। (জলিল খান)
থাকলেও কি আপনি শুনতেন। যাকগে আমার কোন আপত্তি নেই। (ইরা)
এরপর ইরা ও আহিদের এঙ্গেজমেন্ট ও রেজিস্ট্রী ম্যারেজ হয়ে যায়। তারপর আহিদের মা আসে ইরার সাথে কথা বলতে।
কেমন আছিস রে মা? (হেনা বেগম)
ভালো আছি মনিমা। তুমি কেমন আছো? (ইরা)
এতদিন ওতটাও ভালো ছিলাম না এবার ভালো থাকবো আমার মা টাকে এবার আমি কাছ থেকে দেখতে পাবো যে। তোর মায়ের কথা তো রাখতে পারিনি এখন যখন সুযোগ এলো তা যথার্থ ভাবে পালন করতে চাইরে মা। তোর আম্মু আর আমি সেই ছোটবেলায় সই ছিলাম সেই বন্ধুত্ব তার মৃত্যুর আগে ওবধি ছিল। ও এখন নেই তো কি হয়েছে তুই আছিস তো। তোর মানি রোজ তোর খোঁজ নেই। আজ এখানে আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোর বাবা আর ফুপিরা পচ্ছন্দ করে না ওকে তাই আসেনি রিসেপশনে আসবে ওরা। একদমই কষ্ট পাবি না। তোর আর একটা আম্মু আছে তো মা বলে ইরাকে বুকে চেপে ধরে চোখের জল ফেললেন (হেনা বেগম)
কি আম্মু এই মুটকী কে পেয়ে আমাকেই ভূলে গেলে এটা কিন্তু ঠিক না। আমি না তোমার নানাসা ছেলে দেখ তোমরা খাওনি বলে আমি খাবার নিয়ে এলাম। কতো ভালোবাসি তোমাদের আমি দেখছ (মাহিদ)
হ্যাঁ ভালোবেসে উদ্ধার করেছিস তুই একবার আমাদের (ইরা)
শুধু ও না আমরাও আছি ইরু রানি । আমরাও ভালোবাসি তোকে (স্বপ্না)
একি তোরা এখানে। (ইরা)
আহিদ দাদাভাই কাল বিকালে রাতে কল করে বলে এখানে আসতে তখনও এসব কিছু জানতাম না কলেজ যাওয়ার সময় ঋষি আর মাহিদ আসে আমাদের নিতে তখনই সব জানতে পারি। (স্বপ্না)
আমার ভাবী হয়ে কেমন ফিলিংস লাগছে ইরুপাখি টেডি স্মাইল দিয়ে জিঙ্গাসা করল (মাহিদ)
চোখ পাঁকিয়ে তাকালো ইরা মাহিদের দিকে। ওকে দেখে সবাই হেসে ফেললো।
এই তোরা ওকে না জ্বালিয়ে খাবার দে দেখি আমার মা টাকে আমি খাইয়ে দিই। (হেনা বেগম)
আচ্ছা নাও আমাকেও একটু খাইয়ে দাও আম্মু (মাহিদ)
এই যাতো এখান থেকে। (হেনা বেগম)
ধুর কেউ ভালোবাসে না আমাকে। মুখ ফুলিয়ে চলে গেল মাহিদ। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবারও সবাই হেসে উঠল। খাওয়ার পর হেনা বেগম ইরাকে বললেন..
ইরা আমার ছেলেটা একটু রাগি তবে মন থেকে খুব ভালো। ওকে তোকে খুব ভালো রাখবে দেখিস। ও যদি তোকে বকে তাহলে আমাকে বলবি কেমন কান মলে দেবো আমি ওকে। পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে ইরার বড়ো ফুপি চলে এলেন।
এতো লাই দিও না ওকে। খাল কেটে কুমির নিয়ে যাচ্ছো বাড়িতে সাবধানে থেকো। ওর গায়ে ওর মায়ের রক্ত বইছে ওদের ধারা হলো অন্যের সংসার ভাঙা দেখ তোমার ছেলেকে আবার তোমার থেকে কেড়ে না নেয় মুখ বাঁকিয়ে বললো (বড়ো ফুপি)
বড়ো ফুপির কথা শুনে ইরার চোখ ছলছল করে উঠল । তখনই এলো ঝামেলা বেগম।
আমরা ওকে কারোর সংসার ভাঙার আগেই বিয়ে দিয়ে দিলাম। স্বামীকে নিজের করে রেখ আমার স্বামীর মতো যেনো কোনো কাজ করতে না পারে। নিজেও একজনের প্রতি মন দিও অন্য কারোর সাথে গিয়ে কাছের মানুষদের কষ্ট দিওনা। (জামেলা বেগম)
ও কখনো কাউকে কষ্ট দিতে পারে না আপা। আর না ওর মা দিয়েছে আপনি যেমন ঠকেছিলেন সেও তেমন ঠকেছে । সেটা আপনার স্বামী খুব ভালো জানে। ইরা আমার ছেলেকে কারবে না আমার থেকে বরং আমি আমার ছেলেকে ওর আঁচলে। ওর জ্বালা থেকে বাঁচবো কোথাও যেতে পারিনা আমি ওর জন্য । ওর আঁচলে বেধে আমি নিশ্চন্তে ঘুরতে পারবো। ইরা যখন জন্মেছিল তখন আমাদের ব্যাবসায় অনেক সাফল্য লাভ করে তাই আপনাদের ভাইয়া ওকে লক্ষী বলে ডাকে। আমাদের একটা মেয়ের সখ ছিল যেটা ইরা পূরণ করে। আর তো দুই মাস থাকবে এখানে আশা করবো এই কটা দিন ওকে ভালো রাখবেন। (হেনা বেগম)
ওখানে উপস্থিত ইরার বাবাও ছিলেন কিন্তু উনি ইরার হয়ে একটা কথা ও বলেননি। হেনা বেগমের কথাই সকলে চুপ হয়ে যায়।
যায় হোক জলিল ভাই এবার আমাদের বেড়োতে হবে আর ওই কথায় রইল তাহলে ইরার বিয়ের সমস্ত খরচ আমরা বহন করবো তুমি না হয় অতিথি অ্যাপায়ন করো। এইটুকু ছাড় দিলাম তোমাকে। আজ উঠি ( ইমান চৌধুরী)
আচ্ছা এসো তোমরা। (জলিল খান)
ফ্ল্যাশ বাক শেষ............
ওনারা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ইরার সকল বন্ধুরাও চলে যায়। এবার আসুন নায়কের সমন্ধে কিছু জেনে নিই। আমাদের নায়ক আহিদ চৌধুরী। আহিদের বয়স 28 ।গায়ের রং উজ্বল শ্যামলা।হাইট 5.8"।হ্যান্ডসাম ও গুড লুকিং এর জন্য নার্সিং হোমে মাক্সিমাম লেডি ডক্টরদের মনে বিরাজ করে।কেউ প্রকাশে বলতে পারে না তার গম্ভীরতার জন্য। একজন গাইনোকোলজি স্পেশালিস্ট। এবং নিউ লাইফ নার্সিং হোমের ওনার। আহিদের বাবা ইমান চৌধুরী ও মা হলেন হেনা বেগম। ইমান চৌধুরী একজন সৎ মানুষ সাথে সৎ ব্যবসায়ী। উনি নিজের স্ত্রী ছেলেমেয়েদের খুব ভালোবাসেন। ইমান চৌধুরী ফ্যাশন হাউসের ওনার উনি ওনার বড়ো ছেলের জন্য নিউ লাইফ নার্সিং হোমটি করেন আগে উনি ওনার ছিলেন এখন আহিদ। আর মাহিদ হলো ছোট সদস্য। মাহিদ, দিপ্তী, ইরা, স্বপ্না ও ঋষি একসাথে বড়ো হওয়া ওরা একসাথে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে স্টাডি করছে। আর কয়েকদিন পর ওদের ফাইনাল এক্সাম তাই বিয়ে দুইমাস পর হবে।আরও জানতে পারবেন গল্প পড়তে পড়তে ।
এই আমাইরু তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?? হ্যালো হ্যালো। যাহ ঘুমিয়ে পড়ল। (আহিদ ফোন রেখে দিল)
চলবে............
আজকের পার্টটা ছোট দেওয়ার জন্য সরি। পরবর্তী পর্বে জন্য অপেক্ষা করুন।
গল্প ভালো লাগল পরার শেষ ফলো করে পাশে থাকুন। এবং কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না। আপনাদের ছোট্ট কমপ্লিমেন্ট আমাকে সামনে আরও লিখিতে উৎসাহিত করে। ধন্যবাদ 🌼🌼