Read A story of invisible attraction. by Prabhakar Bhangar in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • মুক্তির আশায়

    মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, তার সাথে সাথে মেঘের ডাক আর বিদ্যুতের...

  • ঝরাপাতা - 4

    ঝরাপাতাপর্ব - ৪গোপার কান্নার পর কিছুই চাপার নেই। এতদিন লিলির...

  • Forced Marriage - 2

    শ্বেতার পুরো পৃথিবীটা যেন ঘুরতে শুরু করেছিল। ফোনের ওপারে সেই...

  • LOVE UNLOCKED - 1

    Love Unlocked :1Pritha :"এই যে চাশমিশ নাম কি ?" পাশ থেকে বেশ...

  • মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 121

    মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১২১ ভীষ্মের শরশয্যার কাহিনি   প্রাকক...

বিভাগ
শেয়ারড

অদৃশ্য টানের গল্প।



অধ্যায় ১: প্রথম দেখা

ঢাকার একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে ভর্তির দিন ছিল। নতুন মুখ, নতুন পরিবেশ, আর নতুন আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখল রুদ্র। লম্বা গড়ন, চশমা পরা, শান্ত স্বভাবের এই ছেলেটির নিজের একটা আলাদা ক্যারিশমা ছিল।

প্রথম দিন ক্লাসে ঢুকেই যে দৃশ্য তার চোখে পড়ল, সেটাই ভবিষ্যতের গল্পের সূচনা হয়ে গেল।

ছাত্রীদের ভিড়ে একজোড়া চোখ রুদ্রকে আকৃষ্ট করল—সেই চোখের মালিক মেঘলা। বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, মিষ্টি হাসি, আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর আচরণ তাকে সকলের থেকে আলাদা করে তুলেছিল।

মেঘলা তখন তন্ময়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। তন্ময়—রুদ্রের স্কুল জীবন থেকে বন্ধু, একই কলেজে পড়েছে, এবং এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। মেঘলা তন্ময়ের পরিচিত, স্কুল জীবনে তারা একই পাড়ায় থাকত।

তন্ময় রুদ্রকে মেঘলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। সেই প্রথম দেখা, প্রথম কথা—আরও অনেক কিছুর শুরু।


---

অধ্যায় ২: সম্পর্কের সূচনা

দিন যেতে লাগল, ক্লাস, গ্রুপ প্রজেক্ট, ক্যান্টিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনুষ্ঠানে রুদ্র আর মেঘলার দেখা হতে লাগল প্রায়ই। ধীরে ধীরে বন্ধুত্বের বাঁধনটা দৃঢ় হতে শুরু করল।

এক বিকেলে ক্যাম্পাসের বটতলায় বসে রুদ্র হেসে বলল, “মেঘলা, তুই জানিস, আমি তোকে প্রথম দেখার দিন থেকেই আলাদা ভাবে দেখেছি।”

মেঘলা হেসে তাকাল, “আলাদা মানে?”

“মানে, তুই অন্যদের মতো নোস না। তোর চোখে একটা টান আছে… একটা রহস্য।”

মেঘলা হেসে বলল, “বেশি গল্প করিস না রুদ্র!”

তবে সেই দিনটার পর থেকে তাদের সম্পর্কটা শুধুই বন্ধুত্বে আটকে থাকল না।


---

অধ্যায় ৩: ত্রিকোণ অনুভূতি

তন্ময় অনেক দিন ধরেই মেঘলার প্রতি একটা আলাদা অনুভব করত। কিন্তু রুদ্র আর মেঘলার ঘনিষ্ঠতা দেখে সে কিছু বলেনি।

একদিন, লাইব্রেরির এক কোণায় তন্ময় সাহস করে মেঘলাকে বলল, “মেঘলা, তোকে একটা কথা বলার ছিল অনেকদিন ধরেই। আমি তোকে পছন্দ করি। একটু অন্যভাবে।”

মেঘলা চমকে উঠল। তন্ময় তার ভালো বন্ধু, কিন্তু রুদ্রের প্রতি তার টানটা অনেক গভীর।

সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তন্ময়, আমি তোকে সম্মান করি। তুই ভালো, কিন্তু আমার মনে তোর জন্য যে অনুভূতিটা আছে সেটা... হয়তো তুই যেটা চাইছিস সেটা নয়।”

তন্ময় হতাশ হলেও নিজেকে শক্ত রাখল। কিন্তু এই বিষয়টা রুদ্রের কানে পৌঁছাতে দেরি হল না। একদিন এক সহপাঠীর মুখে ঘটনাটা শুনে সে চুপ হয়ে গেল।


---

অধ্যায় ৪: ভুল বোঝাবুঝি ও বিচ্ছেদ

রুদ্রের মনে সন্দেহ দানা বাঁধল। তার ভাবনা—তন্ময় আর মেঘলা কি কিছু লুকোচ্ছে?

তাদের মাঝে অকারণে কথা কমে গেল। একদিন রুদ্র বলেই ফেলল, “তুমি কি তন্ময়ের সঙ্গে কিছু লুকোচ্ছে?”

মেঘলা ক্ষুব্ধ হয়ে বলল, “তুমি আমার বিশ্বাস করো না রুদ্র?”

“বিশ্বাস করতাম। এখন দ্বিধায় পড়ে গেছি,” রুদ্র শান্তভাবে বলল।

এই ঠান্ডা উত্তরে মেঘলা ভেঙে পড়ল। কিছু না বলেই চলে গেল সেদিন। সেই যাওয়া, আর ফিরে আসা হল না।


---

অধ্যায় ৫: অদৃশ্য টান

বছর কেটে গেল। রুদ্র স্কলারশিপ পেয়ে কানাডায় পাড়ি দিল। মেঘলা ঢাকায় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি পেল। তন্ময়ও পড়াশোনার পর চাকরির খোঁজে চট্টগ্রামে চলে গেল।

তিনজনের মধ্যে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে গেল। কিন্তু স্মৃতির জাল কেউই ছিঁড়তে পারল না।

রুদ্র মাঝে মাঝে তার মেইলবক্সে পুরনো চিঠিগুলো পড়ত। মেঘলা নিজের ডায়েরির পাতায় রুদ্রের কথা লিখে রাখত।

কখনও তারা একে অপরের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢুকে ছবি দেখত, স্ক্রল করত, কিন্তু কোনো বার্তা পাঠানোর সাহস করত না।


---

অধ্যায় ৬: পুনর্মিলন

পাঁচ বছর পর, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু আরমানের বিয়েতে সবাই নিমন্ত্রণ পেল। এক বড় রিসোর্টে অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।

রুদ্র ঢাকায় ফিরে এসেছিল কয়েকদিনের জন্য, অনেকটা দ্বিধা নিয়ে সে বিয়েতে গেল।

বিয়েবাড়ির ভিড়ে এক মুহূর্তে চোখে পড়ল মেঘলাকে—তারপর হৃদয় ধক করে উঠল।

মেঘলাও রুদ্রকে দেখেই থমকে গেল।

দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ। তারপর রুদ্র এগিয়ে এসে বলল, “কেমন আছো, মেঘলা?”

“ভালো... তুমিও?”

“হ্যাঁ, মোটামুটি,” বলেই দুজনেই হেসে ফেলল।

সেদিন রাতে তারা অনেকক্ষণ হাঁটল, গল্প করল। পুরনো অনেক কথা মনে পড়ে গেল।

মেঘলা বলল, “তুমি জানো, আমি বহুবার ভেবেছি তোমাকে একটা চিঠি পাঠাবো।”

রুদ্র বলল, “আমি এখনও তোমার সেই শেষ উপহারটা রেখে দিয়েছি—নীল রঙের স্কার্ফ।”

তাদের চোখে চোখ পড়তেই বোঝা গেল—টানটা কখনোই শেষ হয়নি। শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল।


---

অধ্যায় ৭: শেষ কথা

কয়েক মাসের মধ্যেই তারা একে অপরের পরিবারকে জানায়। সম্পর্কটা আবার নতুন করে শুরু হয়।

তন্ময়ও খুশি ছিল তাদের জন্য। সে তখন নতুন একজনের সঙ্গে জীবন শুরু করেছে।

রুদ্র ও মেঘলা বুঝেছিল, ভালোবাসা হারিয়ে যায় না, যদি সেই ভালোবাসায় থাকে একে অপরকে বোঝার গভীরতা। ‘অদৃশ্য টান’ আসলে হৃদয়ের সেই অদেখা সুতো, যা দূরত্বের পরেও জোড়া দেয় ভেঙে যাওয়া হৃদয়।


---

শেষ বাক্য

প্রেম মানে শুধু একসাথে থাকা নয়, মানে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো—স্মৃতির মধ্যে, বাস্তবের মধ্যে, এবং ভবিষ্যতের অপেক্ষায়।
“অদৃশ্য টানের গল্প” সেই প্রেমের এক চিরন্তন উদাহরণ, যেখানে শেষ মানেই শেষ নয়—শুরু হতে পারে নতুন এক অধ্যায় ।


---

উপসংহার

ভালোবাসা কখনও কখনও দৃশ্যমান পথে চলে না। কখনও তা নীরব থাকে, কখনও গোপনে কাঁদে, আবার কখনও সময়ের পরতে পরতে বুনে যায় এক অনন্ত প্রতীক্ষার ছায়া। “অদৃশ্য টানের গল্প” আমাদের সেই ভালোবাসার কথাই বলে—যা ভাঙে, হারিয়ে যায়, ভুল বোঝাবুঝির ধুলায় ঢাকা পড়ে; তবু শেষ পর্যন্ত নিজের পথ খুঁজে ফেরে।

রুদ্র আর মেঘলার গল্প শুধু একটি ভালোবাসার গল্প নয়, এটি হলো সম্পর্কের গভীরতা, বন্ধুত্বের টানাপোড়েন, আর জীবনের অনিশ্চয়তার মাঝে টিকে থাকার এক মৃদু প্রতিশ্রুতি। এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও হারায় না—সে অপেক্ষা করে, কখনও নীরবে, কখনও দূর থেকে, শুধু ফিরে আসার একটা মুহূর্তের জন্য।

অতএব, ভালোবাসা যদি সত্যি হয়, তা ফিরেই আসে—যতই দীর্ঘ হোক পথ, যতই গভীর হোক দূরত্ব।