Read Dream of torn clothes by Prabhakar Bhangar in Bengali Classic Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

ছেঁড়া কাঁথার স্বপ্ন

১. ছেঁড়া কাঁথার নিচে
রাতের শেষ প্রহর। বস্তির টিনের ছাউনির ভেতর ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে পড়ে। আকাশের গায়ে মাত্র একটা ছেঁড়া কাঁথা। বুকের মধ্যে কেমন একটা শূন্যতা, যেন কেউ কিছু কেড়ে নিয়েছে।
বাবা-মা নেই। ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া সেই মুখগুলো শুধু স্বপ্নে আসে। জেগে উঠলে আবার একা।
কেউ পাশে নেই—শুধু একটা আশ্চর্য জেদ, “আমি পারব, আমি কিছু হব।”

২. ক্ষুধা, অপমান আর অদম্য স্বপ্ন
দিনের আলো ফোটার আগেই আকাশের ঘুম ভেঙে যায়। ক্ষুধা পেট চেপে ধরে, কিন্তু স্কুলের বইটা হাতে নিয়ে সে আবার স্বপ্ন দেখে।
স্কুলে গিয়ে সে দেখে, অন্য ছেলেরা তার ছেঁড়া জামা নিয়ে হাসাহাসি করছে। কেউ বলে, “ওই দেখ, ভিখারির ছেলে!”
আকাশ চোখের জল চেপে রাখে। সে জানে, তার চোখের জল কেউ মুছিয়ে দেবে না।
রাতে বাজারে মাল টানে, চা দোকানে বাসন মাজে। পকেটে সামান্য কয়েন, কিন্তু বুকভরা স্বপ্ন—“একদিন আমি প্রমাণ করব, আমি পারি।”

৩. প্রিয়া : একফোঁটা আলোর মতো
প্রিয়া আসে তার জীবনে নরম বাতাসের মতো।
একদিন আকাশ ক্লাসে পড়া শেষ করে, ক্লান্ত হয়ে বেঞ্চে বসে আছে। প্রিয়া এসে চুপচাপ পাশে বসে।
— “তুই কাঁদিস না আকাশ, আমি জানি তুই অনেক বড় হবি।”
প্রিয়ার চোখে ছিল অদ্ভুত বিশ্বাস। আকাশ প্রথমবার নিজের স্বপ্নকে সত্যি বলে মনে করে।
কিন্তু প্রিয়ার বাবা?
প্রতিবার আকাশকে দেখলে কড়া গলায় বলেন, “তুই আমার মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকবি। তোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।”
আকাশের বুকটা কেঁপে ওঠে, তবু সে হাল ছাড়ে না।

৪. অজানা চিঠি, অচেনা কান্না
একদিন হঠাৎ ডাক আসে সরকারি অফিস থেকে।
আকাশ ভয়ে ভয়ে যায়।
সেখানে শুনে—তার বাবা-মা ছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। দুর্ঘটনায় তারা চলে গেছেন, রেখে গেছেন অগাধ সম্পদ আর অসমাপ্ত স্বপ্নের ভার।
আকাশের চোখে জল আসে। এতদিন যাদের মুখ শুধু স্বপ্নে দেখেছে, তারা আজও তার জন্য রেখে গেছেন ভালোবাসা, দায়িত্ব।
সে বুঝতে পারে, তার জীবন বদলে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ছেঁড়া কাঁথার রাত, সেই অপমান—সবকিছু যেন আরও বেশি করে টেনে ধরে।

৫. স্বপ্নের লড়াই
আকাশ বাবার গবেষণার খাতা খুলে বসে।
রাতের পর রাত, নিঃসঙ্গ ঘরে, শুধু টেবিলের ওপর একটা বাতি জ্বলছে।
প্রিয়ার চিঠি আসে—
“তুই পারবি আকাশ, তুই পারবি।”
আকাশের চোখে জল আসে, আবার কলম ধরে।
একদিন, বহু রাতের ক্লান্তি, চোখের জলের বিনিময়ে, সে এমন কিছু আবিষ্কার করে ফেলে—যা দেশের অর্থনীতিতে আলোড়ন তোলে।
তার নাম ছড়িয়ে পড়ে—কিন্তু আকাশ জানে, এই জয় কেবল তার নয়, তার বাবার, মায়ের, প্রিয়ার, আর সেই ছেঁড়া কাঁথার।

৬. ক্ষমা, ভালোবাসা আর নতুন সকাল
প্রিয়ার বাবা এসে তার সামনে দাঁড়ান।
চোখে জল, কণ্ঠ কাঁপে—
“তুই আমার মেয়েকে নিজের হাতে তুলে নে, আকাশ। আমি ভুল করেছিলাম।”
আকাশ কিছু বলে না। শুধু প্রিয়ার হাত ধরে, মনে মনে বলে—
“তুই ছিলি বলেই আমি পারলাম।”

৭. আকাশের স্বপ্ন, সবার স্বপ্ন
আকাশ এখন দেশের গর্ব।
কিন্তু সে ভুলে যায় না সেই বস্তির রাত, ক্ষুধার জ্বালা, অপমানের কান্না।
সে গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুল গড়ে তোলে, শিক্ষার আলো ছড়ায়।
সে জানে, হাজারো আকাশ আজও ছেঁড়া কাঁথা গায়ে ঘুমোয়, বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে।
তার গল্প ছড়িয়ে পড়ে—
“জন্ম নয়, স্বপ্ন আর ভালোবাসাই মানুষের আসল পরিচয়।”

আকাশের গল্প শুধু এক অনাথ ছেলের গল্প নয়,
এটা প্রতিটা স্বপ্নবাজ, প্রতিটা সংগ্রামী হৃদয়ের গল্প—
যারা অন্ধকারে থেকেও আলোর জন্য লড়ে যায়,
যারা ভালোবাসা আর বিশ্বাসে বদলে দেয় নিজের ভাগ্য,
যারা প্রমাণ করে—
স্বপ্ন দেখো, ভালোবাসো, লড়ে যাও—জয় একদিন আসবেই।

আকাশের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় ছিল সংগ্রাম, অপমান, আর অদম্য স্বপ্নের মিশেল। সে বারবার হোঁচট খেয়েছে, কিন্তু কখনও থেমে যায়নি। একসময় যে ছেলেটি রাতের আঁধারে ছেঁড়া কাঁথা গায়ে স্বপ্ন দেখত, সেই ছেলেটিই আজ হাজারো মানুষের অনুপ্রেরণা।
আকাশ তার জীবনের কষ্ট, অপমান, ভালোবাসা—সবকিছুকে শক্তি বানিয়ে এগিয়ে গেছে। সে শুধু নিজের নয়, সমাজের, দেশের জন্যও আলো জ্বালিয়েছে। তার জীবনের গল্প প্রমাণ করে, মানুষের আসল পরিচয় তার জন্ম নয়, তার স্বপ্ন, পরিশ্রম আর ভালোবাসা।

প্রিয়া আর আকাশের ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস—সব প্রতিকূলতার ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছিল। আকাশ আজও সেই বস্তির ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়ায়, যেন আর কোনো আকাশকে আর কাঁদতে না হয়, যেন প্রতিটি স্বপ্ন ডানা মেলে উড়তে পারে।

জন্ম, পরিবেশ বা সমাজের চোখে ছোট হয়ে থাকলেও, নিজের স্বপ্ন, অধ্যবসায় আর ভালোবাসার জোরে মানুষ সবকিছু বদলে দিতে পারে। প্রতিকূলতা যতই আসুক, হাল ছেড়ে দিলে নয়, লড়ে গেলে, বিশ্বাস আর ভালোবাসা থাকলে—জয় একদিন আসবেই।

তাই, স্বপ্ন দেখো, ভালোবাসো, লড়ে যাও—তোমার গল্পও একদিন কারো অনুপ্রেরণা হবে।