Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

আছি আমি পাশে - পর্ব 1


#আছি_আমি_পাশে
#পর্ব-১
#সারিকা_মণ্ডল_(প্রিয়া)

রোজ স্কুলে থেকে ফেরার পথে, তুমি যখন আমার 
পিছু পিছু আসতে, আমি বুঝতে পারতাম ,
তুমি আমাকে পছন্দ কর।
কেনো বুঝবো না বলতো আমি কি আর ছোট্টটি আছি ?? হুমম.........
বনলতাও তো বুঝতে পারে সব ,
তোমার সাথে যে তার ভারী ভাব ।
সেদিন আমাকে এসে বললো জানিস চারুসখি বৃন্দাবন দাদা তোকে খুব ভালোবাসে ।
আমি বললাম তা তুই কেমনে বুঝলি শুনি??
সেকথা শুনে সে বললো - ওমা তা আমি জানমুনে,
আমাকে সব বলে যে বৃন্দাবন দাদা। ওইযে সেবার তোর জন্য যে পিঁয়ারা মাখা আনলুম, তুই বেশ চেটেপুটে খেলি সেতো বৃন্দাবন দাদা তোর জন্য নিজে হাতে করে পাঠিয়েছিলরে পাগলী।
আমি তো শুনে সেই অবাক ,মনটা অজানা কারণে বড্ড খুশি হয়ে গেলো কেনো জানি সাথে একটু হিংসেও হচ্ছিল আমার। কই তুমি তো কখনো আমার সাথে ভালো করে হেসে কথা বলো না।
অঙ্ক করাতে এসেও হাসো না একটুও , উল্টে আমি যদি একটু হেঁসে কথা বলি ধমক দাও আর তাকালেই তুমি খালি কেমন পালাই পালাই করো । 
সব মনে আছে আমার হুমমম ...... 
কিছুটি ভুলি নাই আমি । বড্ড অভিমান হয়েছে আমার তোমার উপরে,তুমি কি তা বুঝতে পারো ??
ধুর ভালো লাগে না আমার...... 
তবে আমি আজ বেজায় খুশি এইযে তুমি আমার ছোট ছোট পছন্দ ,অপছন্দ মনে রেখেছ ।
আচ্ছা আমার এত খুশি কেনো লাগছে ??
সে যাকগে আমি আবাগে গা ভাসানো না যে 
বৃন্দাবন দাদা। আমি জানি তুমি কয়েকদিন পর বিলেতে যাবে , আমিও যে বিলেত ফেরত ডক্টর হতে চাই ।
কৈলাশ দাদা দিদিকে নাকি খুব ভালোবাসত কই 
বিলেত থেকে তো আর ফিরলো না সে।
দিদিও তো ভালোবাসত কিন্তু পেলনা কৈলাশ দাদাকে । কতরাত দিদিকে আমি কাঁদতে দেখেছি ,
আমারও তখন বড্ড কষ্ট হতো কিন্তু লজ্জায় কাঁদতে পারতাম না দিদির সামনে । 
এখন তারা বেশ আছে আমারও ভালো লাগে দিদিকে আগের মত হাসতে দেখে ।
আমি যে আমার সাথেও একই জিনিস ঘটুক সেটা চাই না।
বনলতার থেকে শুনলাম তোমার নাকি বেলি ফুল খুব পছন্দের ,
সেবার বর্ষাতে তোমার জন্য কিছু বেলি ফুল নিয়ে গেছিলাম তুমি হাত থেকে বেলি ফুলটা নিলে ঠিক ,
কিন্তু আমাকে ধমক দিলে কেনো এই কাদা মাড়িয়ে তোমাকে ফুল দিতে গেলাম ।
আমার যে ভারি মনখারাপ হলো,
ওই কাদা রাস্তা দিয়ে ছুটে চলে এলাম, পিছন থেকে তোমার চিৎকার করে ধমক দেওয়াটা তখনো শোনা যাচ্ছে।
তারপরের দিন বনলতা আমাকে কতগুলো জুঁই ফুলের মালা দিল মন ভালো করার জন্য,
বললো কিরে চারুসখী এখনও কি মন খারাপ ??
আমি কি আমার সখীর মন ভালো করতে সক্ষম হতে পারিনি??
আমি হেসে বললাম তুই কত ভালোরে লতাসখী,
আমার জন্য মালা নিয়ে এলি মন ভালো করার জন্য, শুনলুম তোর নাকি বিয়ে পাশের গ্রামের দত্ত বাড়ির ছোট ছেলের সাথে তা কি সত্যি??
বনলতা লজ্জা পেয়ে বললো হ্যাঁ সে নাকি তোর আর আমাকে স্কুলের পুকুরে শালুক ফুল তোলার সময় দেখেছে ।আমাকে নাকি তার মেলা পছন্দ হয়েছে । তাই একেবারে সমন্ধ নিয়ে বাড়ি এলো ।
আমারও তাকে পছন্দ হয়েছে তাই আর না করিনি।
আমি বললাম আমি তা বেশ ভালো করেছিস ,
কিন্তু তুই তো আমাকে আগে বলিসনি একথা ?
লতা বলে আরে বলতাম আমি এইতো দুদিন আগেই এসব হলো ঠিক। আমার তো খুব লজ্জা লাগছিল তোকে বলতে আরো আগে বলতাম তো কিন্তু ওইযে লজ্জা।
আমি মুচকি হেসে বললাম তা বেশ ভালো হলো তোর আর সৎমায়ের অত্যাচার সইতে হবে না এতেই আমি খুশি , তবে আগের মত আর দেখা সাক্ষাৎ হবে না তোর সাথে ,তুই আমার একটা মাত্র সখী ।
আরও কিছু বলার আগেই বনলতা বললো আরে কি বলিস এখুনি কি আমার বিয়ে হচ্ছে তিনি নাকি বলেছেন আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে গেলে বিয়ে হবে এখন তারা আশীর্বাদ করে রেখে যাবে।
আর তোর বিয়েও তো বৃন্দাবন দাদার সঙ্গে হবে আমি জানি তখন তো তোর সাথে রোজ দেখা হবেরে সখী ।
আমি বললাম কি যে বলিস তুই বৃন্দাবন দাদার সঙ্গে আমার কেনো বিয়ে হবে শুনি।
সে যে আর কিছুদিন পর বিলেত যাবে ডাক্তারি পড়তে তখন কত সুন্দর সুন্দর বিদেশিনী পাবে ,
আমার কথা তার কি আর মনে থাকবে কৈলাশ দাদাকে দেখলি না কেমন দিদিকে অপেক্ষা করিয়ে রাখলো ,কিন্তু আর ফিরলো না বাবা তো তাই আমাকে বলেই রেখেছে ওসব কাজ করো না নিজে কষ্ট পাবে সাথে লোকে খারাপ বলবে ।
তবুও আমি সেদিন তেনার জন্য বেলি ফুল নিয়ে গেছিলাম সেকি কি করলো জানিস ?
বনলতা বললো কি করলো ??
আমি বললাম আমার থেকে ফুলটা নিল তারপর খুব খানিকটা ধমক দিয়ে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল আর বলেছিল আর যেনো কখনো এমন না করি ,জানিস আমি কত কষ্ট পেয়েছি।
বনলতা বলে আরে পাগলী সে যে তোকে ভালোবাসে খুব তাই চাইনা তোকে কলঙ্কিনী করতে,
আমাকে সে বলেছে বনলতা তার খেয়াল রাখিস সে যে বড় অবুঝ , আমি চাই না তাকে কলঙ্কিনী করতে,সঠিক সময় পেলে আমি নিজে যাবো কথা বলতে।
তারপর নিয়মিত বৃন্দাবন দাদা রোজ অঙ্ক করাতে এলো চুপ করে পড়িয়ে আবার চলে যেত।
রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা নিয়ে যেত আর
ফেরার পথে সেই মানুষটা পিছু পিছু আসতো কিন্তু কখনো পাশে এসে হাত ধরে হাঁটেনি।
আর একদিন পর বিলেত যাবে বৃন্দাবন দাদা,
এখন আমার ছুটি চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি তাই আর স্কুলে যাওয়া হয়না ,আর দেখা হয় না তার সাথে।
বনলতাকে নাকি বলেছে বিলেত যাওয়ার আগেরদিন আমার সঙ্গে দেখা করতে চাই সে।
কিন্তু আমি যে যাবো না দেখা করতে, তাই তার জন্য একটা চিঠি লিখেছি ।
যাবো না আমি দেখা করতে কেনো যাবো ?
সে বললেই আমাকে যেতে হবে সেদিনের অপমান যে আমি ভুলিনি, হোক সে ভালোর জন্য বলছিল কিন্তু অপমান তো করেছিল একটু ভালো করেও বলতে পারতো আমাকে । সব কি বনলতা বোঝে ?
আমি কি কিছুই বুঝিনা??
তাহলে যাওয়ার আগে বনলতার সাথে দেখা করে চিঠি নিক , আমারও অভিমান হয় কই সেটা তো ভাঙলো না ,এতদিন বাড়ি ছিলাম একবারও দেখা করতে চাইলো না ।
 সকাল থেকে লতা অনেক জোর করলো দেখা করার জন্য কিন্তু আমি মিথ্যে অজুহাতে তা সুন্দর করে এড়িয়ে গেলাম ।তবুও নাছোড় সখী আমার জর করে নিয়ে গেল আমিও শর্ত দিয়েছি শোন সখী আমি যে আছি ওখানে বলিস নে যেনো তাকে আমি ছোট্ট কুটিরে লুকিয়ে থাকবো কেমন।লতা বলে আচ্ছা চিঠিটা নিয়ে গেলো সাথে করে বাড়ির পিছনে কিছুটা দূরে বড় আমগাছের কাছে। শেষ দেখার জন্য মনটা কেমন করে উঠলো আমার। আমিও চুপিচুপি গিয়ে ছোট্ট কুটিরের কাছে লুকিয়ে পড়লাম একবার দেখার আশায়। ইস্ আর দেখা পাবো না এই মানুষটার হয়তো কৈলাশ দাদার মত সেও ওমন করবে আমার সাথে,আমিও শর্ত দিয়েছি হুমম ......
চেনে না তো এই চারু কি ? 
বনলতার হাত থেকে চিঠি নিয়ে পড়ে বলে শেষ দেখাটা দেখতে এলো না আবার কবে দেখা হবে তার সঙ্গে জানি না ,বেশ আমি তাতেই খুশি যে সে না এসেও তার দেওয়া কিছু তো হতে দিল। তারপর খানিকটা জোরেই বললো - ওহে বনলতা আমার চারুকে দেখে রাখিস সে যে বড়ই অবুঝ ,
আমি তার সব শর্ততে রাজি ।
তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলিস , 
নিজের খেয়াল রাখতে বলিস , আমি যে তাকে কলঙ্কিনী করতে চাইনি এটা তাকে বুঝিয়ে বলিস , শোন বনলতা আমার চারুকে বলিস আমি তার আসক্তিতে আটকে পড়ে গেছি, আমি তার অপেক্ষায় থাকবো । ওহে বনলতা তাকে বলিস আমার জন্য যেন সে অপেক্ষা করে ,ঠিক আমি যেমন করবো । বলিস কিন্তু তাকে আমি তার সব শর্তে রাজি শুধু সে যেনো আমার থাকে । 
আজ তবে আসিরে ভালো থাকিস তোরা ।
এই কথা শুনে আমিও চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে ফিসফিস করে বললাম -
আছি আমি 
আছি আমি
আছি আমি পাশে 
প্রিয় আছি আমি পাশে....................



চলবে.....

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ একবছর পর একটা নতুন গল্প নিয়ে আমি এসেছি সবাই অব্বশই পড়বেন একটু । গল্পটি কেমন হলো অব্যসই জানতে ভুলবেন না ।চারু শেষ দেখতে কি শর্ত দিয়েছিল বৃন্দাবনকে ? এবং কি দিয়েছিল তাকে চিঠির সাথে? জানতে হলে পরবর্তি পার্ট এর জন্য অপেক্ষা করুন।পড়ার শেষে  কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না কেউ কারণ আপনাদের ছোট ছোট কমপ্লিমেন্ট আমাকে লিখতে উৎসাহিত করে অনেক। অবশ্যই  ফলো দিতে ভুলবেন না আমার লেখা ভালো লাগলে।

ধন্যবাদ 😌🌸🌼🎀