Read relation by sari in Bengali Fiction Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

সম্পর্ক

আজ গত এক সপ্তাহ ধরে বাবাকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে বাড়িতে নিয়ে এসে শান্তিতে একটু বসলাম। একটু বলতে খুবই সামান্য কারন দুপুর তিনটে থেকে দুটো ব্যাচের স্টুডেন্ট পড়াবো । আমার বেস্টু বললো ফেসবুকে একটা যুগল খুব ভাইরাল হয়েছে সেটা দেখার জন্য ফোন নিয়ে বসা। কিন্তু কপাল খারাপ কটাদিন দৌড়াদৌড়িতে ফোনটি চার্জ দেওয়া হয়ে ওঠেনি 🙂। কখন যে পড়ানোর সময় হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। ফোন টা চার্জ দিয়ে পড়াতে বসলাম। পড়াতে পড়াতে দেখি 9:30 বেজে গেছে। ওদের ছুটি দিয়ে বাবাকে খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলাম। তারপর নিজে খেয়ে শোবে শুয়ে ফোনের ডাটা ওন করতেই বেস্টুর দেওয়া লিংকটি চোখে পড়লো। যুগলটির কাহিনীটি ভালো লাগলো বেশ। প্রেমিক স্বামী ভরা রেস্টুরেন্টের মধ্যে আইফোন আর দামি হিরের রিং দিয়ে তার প্রেমিকা অর্ধাঙ্গিনীকে বড়োদিনে উপহার স্বরূপ দিলো। আর সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিঙ্গা করল। পুরুষটি তার স্ত্রীকে বললো "হে প্রিয়া সারাজীবন তোমার হাতে হাত রেখে আমি চলতে চাই। তুমি সবসময় এভাবে আমার পাশে থেকো। তুমি আমার জীবনে সূর্যের আলো হয়ে এসেছো জীবন এতো সুন্দর সেটা তুমি আসার আগে কখনো উপলব্ধি করিনি আমি। হে প্রিয় জীবন টা যে এত সুখের হবে আগে কখনো ভাবিনি । যখন সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফিরি তোমার মুখের এই উজ্জ্বল হাসিটা দেখলে কেমন ম্যাজিকের মতো সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। তোমার উষ্ণ আলিঙ্গন আমার সকল চিন্তা দূর করে দেয় ঠিক যেন এক চুটকিতে । হে প্রিয়া এত সুখ সুখ লাগে কেন তুমি এই জীবনে আসার পর। আমি তোমার সাথে শেষদিন ওবধি কাটাতে চাই। আমার যে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই জীবনে বেঁচে থাকার জন্য হলেও আমার তোমাকে চাই।তুমি যে আমার সবকিছু সুখ দুঃখ ভাগ করার সাথী।তোমাকে আমার প্রয়োজন অপ্রয়োজনেও দরকার।তুমি ছাড়া সবকিছু কেমন প্যানসে।এমনই এক বড়োদিনে তুমি আর আমি একসাথে পথ চলা শুরু করেছিলাম।আজ আমাদের বিবাহিত জীবনে দুই বছর পূর্ণ হলো।হ্যাপি অ্যানিভার্সারী আমার প্রিয়তমা । হে প্রিয়া আমার একটাই ইচ্ছা আমি যেন তোমার কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারি। তুমি আমাকে হাসি মুখে বিদায় দেবে তো............... "

প্রেমিক স্বামীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে স্ত্রীটি আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেছে।। মাথা নেড়ে সায় জানালেন তিনি।পুরুষটি উঠে জড়িয়ে ধরে হাতে আংটি টা পড়িয়ে দিলো। ভিডিও করেছে ওনেকে সেটাকে আবার । বিদেশে এমন জিনিস হয়েয় থাকে কিন্তু আমার যেটা ভালো লেগেছে সেটি হল ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে বাংলাতেই বলেছিল কথাগুলো । শেষের ভিডিও টা দেখে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এল কষ্ঠে। কারণ ভিডিওর পুরুষটি আর কেউ না ছিল আমার দাদা। না না হিংসায় না আসলে ভাই আমার বিয়ে করলো আমরাই জানতাম না। আসলে বাড়িতে খুব অভাবে চলছে আমাদের বছরখানেক আগে বেশ সচ্ছল ছিল। আমরা দুই ভাইবোন আর বাবা মায়ের সংসার টা বেশ সুখের আর সুন্দরও ছিল। বছরখানেক আগে দাদাকে হোস্টেল থেকে ফেরার পথে একটা এক্সিডেন্টে সব ওলটপালট হয়ে যায়। বাবা মা দুই ভাইবোনকে সর্বদাই সমান চোখে দেখতে । ওই এক্সিডেন্টে বাবা মা আর দাদার খুবই বাজেভাবে জখম হয়। বাবা পায়ে চোট পায় আর দাদা আর আম্মু খুব বাজেভাবে জখম হয়েছিল। সেইবার বাবা নিজের কোনো ট্রিটমেন্ট না করে আম্মু আর দাদাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ছোটাছুটি করে কত। সেইযাএায় আম্মু আর ফিরে আসেনি। দাদার জন্য তিন বিঘা জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করায়। অথচ আজ বাবার যখন বারবারি হওয়ায় ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম ভাইয়া বাবা খুব অসুস্থ কিছু টাকা পাঠাতে পারবে পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে বললো চার মাস আগে টাকা দিয়েছি এখান আর দিতে পারবো না অনেক ক্রাইসিস চলছে। তুই তো খালি টিউশনি করাস বাইরে বের হ বুঝবি কত জ্বালা। তোর জন্য আমাকে এক্সট্রা টাকা খরচ করতে হয় আর কত টানবো আমি । বাইরে থাকি কত ঝামেলা বুঝিস টাকা চাইলি আর দিয়ে দিলাম হাতের মোঁয়া নাকিরে । বলি আর কত তুই আমার ঘাড়ে বসে খাবি তোর জন্য আমি বিয়ে করতেও পারছি না। আমি কোন টাকা পাঠাতে পারবো না আর এভাবে হুটহাট করে ফোন করবি না তুই আমি আর দুই মাস পর দেখি চার হাজার টাকা পাঠাতে পারি কি। আমি দরকার হলে বাবাকে ফোন করে নেবো। তুই এভাবে হুটহাট করে ফোন করবি না ঠিকাছে। আল্লাহ হাফিজ। বলেই ফোন রেখে দিল। আর কোন কথা শুনতে চাইলো না। সেদিন হাতে কিছু টাকা নিয়ে পাশের বাড়ির এক দাদার সাহায্য বাবাকে হস্পিটালে ভর্তি করলাম। ডাক্তার বললেন একটা ওপারেশান করতে হবে পায়ে নাহলে আর হাটতে পারবেনা। সরকারি হাসপাতালে ওষুধের যা খরচ বাকি আর কোন চিন্তা নেই বলে ডাক্তার আশ্বাস দিলেন। স্টুডেন্টদের বাড়িতে কথা বলে পরেরদিন প্রত্যেকের বাড়ি থেকে আডভান্স টাকা নিয়ে নিলাম। ওরা সত্যিই ওই টাইমে আমাকে বুঝে কোন কিছু না বলেই টাকা দিয়ে দিয় ছিল বলেই বাবাকে সুস্থ করে বাড়ি আনতে পারলাম। আল্লাহ আমার সহায় ছিলেন। বাবা জানেন তার ছেলে তাকে সুস্থ করে তুলেছে। তিনি জানেন ও না আজ এক সপ্তাহ হতে যাই ভাইয়া একটু ফোন খোঁজ নেইনি। কত কিছুই না করেছেন বাবা দাদার জন্য। একটু অসুস্থ হয়ে পরলে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ঠিক করে খেতে পারতেন না । আম্মু মারা যাওয়ার পর আব্বুর ঠিক করে কাজ করতে পারতেন না তখন দাদাও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি । আমি তখন তিন বেলায় টিউশন পড়াতাম সাথে বাড়ির সমস্ত কাজ। দাদা একটু সুস্থ হয়ে সেই যে বিদেশ গেল আর আসেনি যাওয়ার সময় বলেছিল বনু তোর আর কষ্ট করতে হবে না আমি প্রতি মাসে মাসে টাকা পাঠাবো ওতে আমাদের হয়ে যাবেরে দেখিস। যাওয়ার পর মাএ একবছর প্রতি মাসে ঠিক করে দিয়েছিল টাকা তারপর দুই মাস পর পর তখন আমার সাথে কথা বলতে চাই তো না। তারপরে বছর চারমাস পর কখনো ছয় মাস পর চার হাজার করে দিত আমি ফোন করলে তুলতো না আর তুলেও ধমক দিয়ে রেখে দিতে বাধ্য হয়ে আমি টিউশন বাড়ায় না হলে বাবার ওষুধ আর আমার পড়াশোনাটাও এগোতে পারতাম না। দাদা কথা না বললে খুব কষ্ট হত এখনও হয় তবে সয়ে গেছে। 

বিয়ে করছে আজ দুই বছর অথচ আমি জানলাম তাও সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে । বাবা জানলে কত যে কষ্ট পাবে। আচ্ছা ভাবীর জন্য ওতো গিফ্ট দিতে পারলো আর বাবার চিকিৎসার জন্য কি একটু টাকা দিলে কি কমে পরে যেত?। তোকে আজ খুব জিঙ্গাসা করতে ইচ্ছা হচ্ছে জানিস ভাইয়া তুই না বলছি আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। এই ভাইয়া তুই না বলছি আমি তোর সোনা বনু আমার সাথে কথা না বললে তোর কান্না পায়। হ্যাঁরে আমার সাথে কথা না বলে কিভাবে আছিস? আমার কথা মনে পরে তোর ভাইয়া? জানিস আমার খুব কষ্ট হয় এতকিছু সামলাতে। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন আমার খুব ভয় লাগে জানিস। তুই যে চার হাজার দিস বছরে দুইবার সেটা বাবার ওষুধ কিনতেই চলে যায়। বাবার তোকে দেখতে খুব মন চায় জানিস। আমাকে দেখতে হবে না রে তুই একটু বাবাকে দেখে যাস উনি তোর বিয়ের খবর জানেই না এখনও জানিস। আমি কি খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম তোকে ভাইয়া ? আচ্ছা নে তোকে আর বলবো না তোরা ভালো থাক। বাবাকে নিয়ে একটু ভাবতে পারছি সেটা যখন করলি না থাকলে ছাড় আমি যথেষ্ট আমার বাবার জন্য। ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে জল পরতে শুরু করল বুঝতে পারলাম না। আজ খুব কষ্ট পেলাম । খুব কষ্ট পেলাম খুব 🙂। এই বুঝি রক্তের সম্পর্ক। 


#অনুগল্প

#সম্পর্ক

#লেখনীতে সারিকা মন্ডল (প্রিয়া) 🤍🌼🤍🌼





আসসালামু ওয়ালাইকুম সবাইকে কেমন আছেন সবাই??আশা করছি ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। এটা একটা অনুগল্প কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না কারণ আপনাদের ছোট ছোট কমপ্লিমেন্ট আমাকে লিখতে উৎসাহিত করে খুব.... 


📍গল্পটি ভালো লাগলে লাইক ও follow দিয়ে পাশে থাকুন🌼 ....

@surjomukhi....