Read Moon Witch by Prabhakar Bhangar in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • আগুনের ছোঁয়া - পর্ব 2

    তুমি আমাকে জ্বালিয়ে দিলে, আমি এখন নিজের আগুনে পুড়ছি।**ইশা...

  • চাঁদের জাদুকরী

    প্রথম অধ্যায়: স্বপ্নের আভাসকলকাতার এক পুরনো বইয়ের দোকানে কাজ...

  • সম্পর্ক

    আজ গত এক সপ্তাহ ধরে বাবাকে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করে বাড়িতে নিয়ে...

  • জোঁকার সিন্দুক

    জোঁকার সিন্দুক বিঘা ছয়েক জমির উপর ভিয়ার পুকুর। হলদিয়ার গে...

  • সবুজের আহ্বান

    পশ্চিমবঙ্গের এক কোণে, ছোট ছোট পাহাড়ের কোলে আর শাল-সেগুনের ছ...

বিভাগ
শেয়ারড

চাঁদের জাদুকরী

প্রথম অধ্যায়: স্বপ্নের আভাস
কলকাতার এক পুরনো বইয়ের দোকানে কাজ করে নভেল। তার চারপাশে হাজারো বই, অথচ তার মনে এক অদ্ভুত শূন্যতা। প্রতিদিন রাতে সে এক রহস্যময় রমণীর স্বপ্ন দেখে—যার চোখে চাঁদের আলো, কণ্ঠে অদ্ভুত মায়া। প্রতিবার সেই রমণী বলে, “চাঁদের নিচে দেখা হবে।”
একদিন, ধুলো জমা এক বইয়ের ভাঁজে সে খুঁজে পায় এক জ্যোতির্ময় চিঠি। চিঠিতে লেখা—
“তুমি এলে, আলো জ্বলে উঠবে। চাঁদের রাজ্যে তোমার অপেক্ষায় আছি।”
নভেলের বুকের ভেতর কেমন যেন কাঁপন ধরে যায়। কে এই ডাকছে? কেন?

দ্বিতীয় অধ্যায়: জাদুকরী দরজা
এক সন্ধ্যায়, বইয়ের দোকানে আসে এক রহস্যময় বৃদ্ধ—সারথি মুনি। তিনি নভেলকে বলেন, “তোমার স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন নয়। চলো, তোমাকে তোমার সত্যি দেখাই।”
বৃদ্ধের পিছু পিছু নভেল পৌঁছায় এক অচেনা গলি, যেখানে ঝাপসা আলোয় জ্বলছে এক দরজা। দরজার ওপারে—এক সম্পূর্ণ নতুন জগত: চান্দ্রলোক।
সেখানে তার সামনে এসে দাঁড়ায় ইলা—চাঁদের রাজকন্যা। চোখে অপার্থিব দীপ্তি, অথচ মুখে গভীর বিষণ্ণতা। দু’জনের চোখে চোখ পড়তেই যেন সময় থেমে যায়। মনে হয়, এই দেখা বহু জন্মের।

তৃতীয় অধ্যায়: প্রেম ও সংগ্রাম
নভেল ও ইলা একসাথে সময় কাটাতে শুরু করে। ইলা জানায়, মানুষের প্রেমে পড়লে দেবীর শক্তি হারাতে হয়।
রৌদ্র, চান্দ্রলোকের যোদ্ধা, ইলাকে চুপচাপ ভালোবাসে। সে বুঝতে পারে, ইলা আর নভেলের মাঝে এক অদ্ভুত টান। ঈর্ষায় রৌদ্রের হৃদয় জ্বলে ওঠে। সে নভেলকে সরিয়ে দিতে চায়, ষড়যন্ত্র করে।

চতুর্থ অধ্যায়: আত্মত্যাগ
একদিন দেবতারা ঘোষণা করে:
“ইলা যদি নভেলকে ভালোবাসে, তাকে তার সমস্ত জাদু ত্যাগ করে মানুষ হতে হবে। আর নভেল যদি ইলার সাথে থাকতে চায়, তার পৃথিবীর সব স্মৃতি ভুলে চিরতরে চান্দ্রলোকে থাকতে হবে।”
নভেলের মনে পড়ে তার শৈশব, তার বইয়ের দোকান, তার একাকিত্ব। ইলা ভাবে, সে কি দেবী না হয়ে শুধু মানুষ হয়ে থাকতে পারবে?

পঞ্চম অধ্যায়: সিদ্ধান্ত
ইলা অবশেষে তার সমস্ত জাদু ত্যাগ করে। তার চোখের দীপ্তি ম্লান হয়ে আসে, কিন্তু মুখে শান্তির ছায়া।
নভেল, চোখে জল নিয়ে, নিজের পৃথিবীর স্মৃতি ভুলে চিরতরে চান্দ্রলোকে থেকে যায়।
রৌদ্র, নিজের অপূর্ণ ভালোবাসার যন্ত্রণায়, আত্মধ্বংস করে।

শেষ অধ্যায়: জাদু ছাড়া প্রেম
এখন তারা সাধারণ মানুষ, কোনো অলৌকিক শক্তি নেই, নেই দেবত্বের অহংকার।
তবু, চান্দ্রলোকের এক প্রান্তে—যেখানে আকাশে একটাই চাঁদ জ্বলে—তারা হাতে হাত রেখে বসে থাকে।
তাদের প্রেমে নেই আর কোনো জাদু, নেই দেবতাদের ভয়।
তবু, সেই প্রেম হয়ে ওঠে অমর—কারণ, সত্যিকারের প্রেমই তো সবচেয়ে বড় জাদু।
রাত গভীর হলে, চান্দ্রলোকের আকাশে ঝলমল করে একটাই চাঁদ। ইলা ও নভেল চুপচাপ সেই চাঁদের আলোয় বসে থাকে। হঠাৎ ইলা বলে ওঠে,
— “তুমি জানো, পৃথিবীর মানুষেরা ভাবে চাঁদে কেউ থাকে না?”
নভেল হেসে বলে,
— “তারা জানে না, ভালোবাসার জন্য কেউ সব কিছু ত্যাগ করলে, চাঁদও ঘর হয়ে ওঠে।”

তাদের কথা শুনে, চান্দ্রলোকের বাতাসে এক নরম সুর বাজে। সেই সুরে মিশে থাকে তাদের ভালোবাসার গল্প—যা হয়তো কোনোদিন পৃথিবীর কারও কানে পৌঁছাবে না, কিন্তু চাঁদের আলোয় চিরকাল বেঁচে থাকবে।

তাদের জীবন এখন সাধারণ, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে তারা আবিষ্কার করে নতুন নতুন আনন্দ—একসাথে রান্না করা, চাঁদের বাগানে হাঁটা, কিংবা রাতের আকাশে তারা গোনা।
জাদু নেই, দেবত্ব নেই—তবু, এই ছোট ছোট সুখেই তারা খুঁজে পায় চিরন্তন প্রেমের আসল অর্থ।


“জীবনের সবচেয়ে বড় জাদু লুকিয়ে থাকে ছোট ছোট আনন্দে, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মুহূর্তে।
চাঁদের আলোয় যেমন সবকিছু মায়াবী মনে হয়, তেমনি ভালোবাসা যখন সত্যি হয়, তখন সাধারণ জীবনও হয়ে ওঠে অসাধারণ।”

“প্রেম, যখন সত্য হয়, তখন জাদুও হার মানে।”
চান্দ্রলোকের শান্ত, রূপালি আলোয় ইলা ও নভেল একসাথে বসে থাকে। তাদের চারপাশে আর কোনো জাদু নেই, নেই দেবতাদের নিয়ম, নেই অতীতের স্মৃতি—শুধু আছে একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
তারা জানে, তারা এখন সাধারণ মানুষ; কিন্তু তাদের ভালোবাসা অমর, কারণ তারা দু’জনেই নিজেদের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস—জাদু ও স্মৃতি—ত্যাগ করেছে একে অপরের জন্য।
রৌদ্রের আত্মত্যাগ তাদের মনে করিয়ে দেয়, ভালোবাসা কখনো কখনো বেদনা ও বিসর্জনেরও নাম।
তবু, চাঁদের আলোয় তারা নতুন জীবন শুরু করে—যেখানে প্রেমই একমাত্র সত্য, আর সেই প্রেমের জন্যই তাদের জীবন পূর্ণতা পায়।

বার্তা
“প্রেম মানে শুধু একসাথে থাকা নয়, বরং একে অপরের জন্য নিজের সবকিছু ত্যাগ করতেও প্রস্তুত থাকা।
সত্যিকারের ভালোবাসা কোনো জাদুর নয়—এটা আত্মত্যাগ, বিশ্বাস আর নিঃস্বার্থতার