Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

অভিশপ্ত রাজ্য - 1

অধ্যায় ১: রক্তচোখের কন্যা

নোক্তারিয়া—একটি রাজ্য যেখানে সূর্য উঠেনি গত দশ বছর। দিনের পর দিন এখানে শুধুই অন্ধকার, রক্তরঙা কুয়াশা, আর হিমেল বাতাসে ভেসে বেড়ানো কান্নার শব্দ। মানুষের মুখে মুখে একটি কথাই ঘোরে—এই রাজ্য অভিশপ্ত।

এই রাজ্যের এক প্রান্তে ছিল "মিরাল" নামের ছোট একটি গ্রাম। জনবসতি কম, খাবার কম, কিন্তু ভয় অনেক বেশি। কারণ এখানে জন্ম নিয়েছিল এলিয়া—একটি মেয়ে যার চোখে লালচে এক অদ্ভুত আলো ঝলসে ওঠে মাঝে মাঝে, যেন আগুন জ্বলছে দৃষ্টিতে।

গ্রামের বয়স্করা বলত, “এই মেয়ে ভ্রাতের চিহ্ন বহন করে। ওর চোখে মৃত্যুর পূর্বাভাস আছে।”

তবুও এলিয়া শান্ত, নীরব, নিজের মতো গাছের নিচে বসে কুয়াশার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার স্বপ্নে প্রায়ই আসে এক অদ্ভুত জায়গা—এক অন্ধকার প্রাসাদ, কালো সিংহাসন, আর এক ছায়ামূর্তি, যে বলে—

“তুই আমার উত্তরাধিকারী, এলিয়া। সময় এসে গেছে।”

কিন্তু সে এসব স্বপ্নকে কখনো সত্যি ভাবত না, যতক্ষণ না এক রাতে, সে কুয়োর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে, দেখল একজন অপরিচিত যুবক ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে।

কালো পোশাক, চোখে জ্বলন্ত দৃষ্টি।

“তুমি কে?” এলিয়া জিজ্ঞেস করে।

যুবকটি বলে, “আমি কায়ান। নোক্তারিয়ার শেষ রাজপুত্র। আর তুমি... আমার শেষ আশা।”


---

অধ্যায় ২: রাজপুত্র ও ভবিষ্যদ্বাণী

এলিয়া হতভম্ব। কায়ান বলছে সে নোক্তারিয়ার রাজপুত্র? রাজবংশ তো অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে! কিন্তু তার চোখে ছিল না মিথ্যে—ছিল একটা অতল গভীরতা।

কায়ান বলে, “তোমার ভেতরে এমন কিছু আছে যা তুমি এখনো জানো না। তোমার রক্তেই লুকিয়ে আছে মুক্তির চাবিকাঠি।”

“আর তুমি? তুমি কে?” এলিয়া জানতে চায়।

“আমি সেই সন্তান, যার জন্ম হয়েছিল অশুভ দেবতার ছায়ায়। আমার রক্তের ভেতরেই বাস করে ভ্রাত। কিন্তু আমি চাই তাকে শেষ করতে। রাজ্যকে মুক্ত করতে।”

এলিয়া ভয় পায়, আবার কৌতূহলও বোধ করে। তার ছোটবেলার অদ্ভুত দৃষ্টি, স্বপ্নে দেখা প্রাসাদ—সব মিলিয়ে মনে হয়, কায়ান হয়তো মিথ্যে বলছে না।

ঠিক সেই সময়ে দূরে বজ্রপাত হয়। বজ্রের আলোয় দেখা যায় পাহাড়ের গায়ে এক ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদ। কায়ান বলে—

“ওটাই ভ্রাতের ঘুমন্ত আস্তানা। চল, আমাদের যাত্রা শুরু হোক।”

এলিয়া এক মুহূর্ত দ্বিধা করে। তারপর মাথা নেড়ে রাজি হয়।

এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই, নোক্তারিয়ার বুকে নেমে আসে এক নতুন গল্পের সূচনা—আত্মত্যাগ, জাদু, বিশ্বাসঘাতকতা ও শেষ রক্তবিন্দুর যুদ্ধ।
অবশ্যই। নিচে ১ম ও ২য় অধ্যায়ের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত, আবেগঘন ও রহস্যে মোড়া উপসংহার দেওয়া হলো, যা পাঠকদের মনে কৌতূহল জাগিয়ে রেখে পরবর্তী অধ্যায়ের দিকে টেনে নিয়ে যায়:


---
 অন্ধকারের প্রথম আলো

নোক্তারিয়ার মৃতপ্রায় বায়ুর ভেতর এক নতুন স্পন্দন উঠতে শুরু করেছে। দশ বছরের নিস্তব্ধতা ভেঙে, অদৃশ্য এক হাত যেন ভবিষ্যতের পর্দা সরিয়ে দিচ্ছে।

এলিয়া, যে এতদিন নিজের অস্তিত্বকেই প্রশ্ন করত, এখন জানতে পারল—তার রক্তেই লুকিয়ে আছে রাজ্যের মুক্তির চাবিকাঠি। আর কায়ান—এক অভিশপ্ত রাজপুত্র, যিনি নিজেই অশুভ দেবতার অংশ, আবার সেই দেবতার বিনাশের পথপ্রদর্শকও।

তাদের যাত্রা শুরু হলো অন্ধকারের বুক চিরে, যেখানে ভয়, বিশ্বাসঘাতকতা, আর অতীতের গোপন পাপ তাদের পথে ছায়ার মতো অনুসরণ করবে।

তবে একটাই প্রশ্ন এখনও ঝুলে আছে বাতাসে—

অভিশাপ ঘোচানোর জন্য ঠিক কতটা মূল্য দিতে প্রস্তুত এলিয়া ও কায়ান?
আর তারা কি জানে, যে যাত্রা তারা শুরু করেছে, তা হয়তো শেষই হবে… তাদের নিজেদের বিনাশ দিয়ে?
মানুষের ভেতরের অন্ধকার যত গভীরই হোক না কেন, যদি ইচ্ছা থাকে আলোর দিকে এগোনোর, তবে সেই অন্ধকারকেও জয় করা যায়।”

এলিয়া ও কায়ান—দুজনেই বহন করছে অভিশাপের ছাপ। একজন নিজের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দিহান, আর আরেকজন নিজের রক্তের মধ্যেই পাপ নিয়ে জন্মানো এক রাজপুত্র। কিন্তু তবুও তারা থেমে যায় না। তারা জানে না শেষ কোথায়, কীভাবে মুক্তি মিলবে, এমনকি তারা বাঁচবে কিনা তাও নয়—তবুও তারা বেরিয়ে পড়ে অন্ধকারকে চিরে আলো খুঁজতে।


 ভয় থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়াই সাহস।
নিজেকে নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, পথ খুঁজে নিতে পারা যায়।
 অন্ধকারের জন্ম হয় আলোকে আড়াল করতে নয়, তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।

আমাদের জীবনেও অনেকসময় নিজের ভেতরকার যন্ত্রণা, দুর্বলতা, অথবা অতীতের অভিশাপ আমাদের পেছনে টানে। কিন্তু আমরা যদি এলিয়া ও কায়ানের মতো সাহস করে এক পা এগোই, তাহলে হয়তো আমরাও একদিন আমাদের অভিশপ্ত রাজ্যকে মুক্ত করতে পারব—নিজের ভিতর থেকে।