Read Samay Ghurni by Srabanti Ghosh in Bengali Science-Fiction | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

সময় ঘূর্ণি

সময় ঘূর্ণি ⌛✍️


|| ১ ||


কলকাতার কলেজ স্ট্রিট এলাকায় আজও সময় থমকে আছে পুরনো বইয়ের পাতা আর কফির কাপে। কিন্তু এই গল্প সেই শহরের বুকেই এমন এক ছেলেকে নিয়ে, যে সময়ের বাঁকেই ঘূর্ণি তুলল এক বিকেলে।

নাম তার অনিলাভ দত্ত। সায়েন্স কলেজে পদার্থবিদ্যার পিএইচডি করছে। চুপচাপ, একটু ঘরকুনো, অথচ অসম্ভব বুদ্ধিমান। আর একটা জিনিস আছে তার—পুরনো জিনিসের নেশা। বিশেষ করে ঘড়ি।

কলেজ স্ট্রিটের পাশের এক পুরোনো বইয়ের দোকানে সে মাঝে মাঝে যেত, শুধু বই নয়, ভাঙাচোরা ঘড়ি, বাতিল যন্ত্রপাতি ঘাঁটত। সেদিনও তেমনই এক ঘোর দুপুরে, যখন শহরটা অনিলাভর মতোই ঝিমোচ্ছিল, হঠাৎ একটা অদ্ভুত ঘড়ির বাক্স চোখে পড়ল তার।

কাঠের তৈরি, হাতল ঘোরালেই ঘড়ির কাঁটা উলটো দিকে যায়। দাম? মাত্র ১২৫ টাকা। 

দোকানদার বলল, "এই ঘড়িটা নাকি এক বিজ্ঞানী বানিয়েছিল... শেষবার বাজবার সময় ছিল 'দুপুর ১টা ৩২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড'।"

অনিলাভ হেসে বলল, “টাইম ট্র্যাভেল করতে বানিয়েছিল বুঝি?”

দোকানদার হেসে বলল, “হয়তো করে… জানলে অবাক হবেন। কেউ কেউ বলে, ঘড়িটা ‘দেড় সেকেন্ডের’ পিছনে নিয়ে যায় সময়কে—একবারই, মাত্র একবার।”

অনিলাভ ঠাট্টা করলেও কিনে নিল। কিন্তু পরদিন, তার থিসিসের পরীক্ষার দিন সকালে হঠাৎই একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটল।

রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ একটা বাইক এসে ধাক্কা মারে। মাথা ঘুরে পড়ে যায় সে।

চোখ খুলে দেখে… আশেপাশের সব জিনিস একটু একটু বদলে গেছে।

ঘড়িতে তখন সময় — ১টা ৩২ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড।

সে বুঝতে পারে, কিছু একটা হয়েছে। বাস্তবের টাইমলাইন বদলে গেছে সামান্য হলেও।

কিন্তু এই সামান্য বদলেই—একটা অপরিচিত মেয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়ে যায় রাস্তায়। 

মেয়েটার চোখে একরাশ ঘোর, যেন কোনো ভুল জায়গায় এসে পড়েছে। গভীর চোখ, পুরনো সিনেমার মতো মুখ, আর হাতে ধরা একটা নোটবুক। তার নাম অর্ণিলা সেন।

অনিলাভ তাকিয়ে থাকে… কারণ সে জানে, এই মেয়েকে সে এর আগে কখনও দেখেনি।

… কিন্তু অর্ণিলা বলল, “তুমি আগেও এসেছিলে এই রাস্তা দিয়ে। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে, ‘এটা কোন রাস্তা?’… মনে নেই তোমার?”

অনিলাভ স্তব্ধ। সে তো এই রাস্তায় জীবনে প্রথমবার।


কলেজ স্ট্রিটের সেই চেনা অলিগলির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অনিলাভ এখন যেন নিজেরই পায়ের ছায়া খুঁজে বেড়াচ্ছে। মাথার ভেতর যেন সারাক্ষণ বাজছে একটা টিকটিক শব্দ, ঘড়ির কাঁটার মতো। কিন্তু ঘড়িটা এখনো সে খুলে পরেনি। বাক্সেই রেখে দিয়েছে।

তবে একটাই দৃশ্য, বারবার ফিরে আসছে মাথায় — ওই অপরিচিত মেয়েটার মুখ। অর্ণিলা সেন।

বিকেলে সে কলেজ লাইব্রেরির পুরনো দালানে গিয়ে চুপচাপ বসেছিল। ঘড়িটা কেনার এক সেকেন্ড আগেই ছিল অনিলাভর চেনা জীবন। অথচ এখন? চারপাশে আলো, রঙ, শব্দ — সবই অচেনা।

আর একদম সামনে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে, যার মুখ যেন ইতিহাসের পুরনো কোনো পৃষ্ঠার মতো চেনা বা অচেনা। অর্ণিলা নিজেই, হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ।

--“তুমি… আমাকে সত্যিই মনে নেই তোমার?” অর্নিলার ব্যাকুল প্রশ্ন।

--“আমি… তোমাকে কখনো দেখিইনি তো।”

--“তুমি সত্যিই আমাকে চিনতে পারোনি?”

অনিলাভ একটু অপ্রস্তুত, “না… মানে, আমি তো কখনও তোমাকে দেখিনি। তাই জানিও না তুমি কে।”

অর্ণিলা হেসে ফেলে। একটা বিষণ্ণতা কেটে যায় সেই হাসিতে, “আজকেই দেখেছ… এই নিয়ে সেকেন্ড টাইম। আগেও এসেছিলে। এই রাস্তায়, এই কোণায়। বলেছিলে—‘এটা কোন রাস্তা?’ তারপর একটা ঘড়ির কথা জিজ্ঞেস করেছিলে… ‘ঘড়িটা কি বিক্রি হচ্ছে'?"

--"ঘড়ি। কিসের ঘড়ি?" ঘড়িটার কথাও জানে? অনিলাভ একটু সতর্ক হয়।

--"হ্যাঁ… কাঠের ঘড়ি। হাতল ঘোরালে উল্টো দিকে যায়।"

অনিলাভর কাঁধে ধরা ব্যাগটা যেন হঠাৎ ভারী হয়ে ওঠে। কে এই মেয়ে?

--“তুমি কে?”

--“আমি? আমি… তোমার অতীত, ভবিষ্যৎ আর একটা ভুল টাইম জাম্পের সাক্ষী।”

অর্ণিলা এবার ব্যাগ থেকে বের করল একটা পুরোনো লেদার কভার নোটবুক। একপাশে লাল কালি দিয়ে লেখা—‘TIME LOGS – ANIRUDDHA SEN’.

--“এই নোটবুকটা আমার দাদুর। উনি টাইম মেকানিক্স নিয়ে কাজ করতেন, তোমার মতই। ওনার বানানো ঘড়িই তুমি কিনেছ।”

--"তোমার দাদুর ঘড়ি?"

--"হ্যাঁ, এটা দাদুর প্রজেক্ট। এর কথা পুরনো সায়েন্স জার্নালে আছে… আমার দাদুর নামে। আর দাদু তোমাকে নির্বাচন করে গেছেন।”

❤️চলবে_____💜💙💚💛🧡❤️

(আগামী অংশে)
[ অর্নিলার দাদু অনিরুদ্ধ সেন কি বলে গেছেন?
কোথায় তার নিশানা পাবে অনিলাভ?
এই সবসময়ই বদলাতে থাকা সময়ে অর্নিলা অনিলাভর কিভাবে দেখা হয়েছিল?
এক রোম্যান্টিক টাইম-এক্সকারশন, প্রেম আর ত্যাগের ঠিকানায়। ]
💙⌛✍️




কেমন লাগল প্রথম পর্বটা? 
রেটিং রিভিউ দিয়ে জানাতে ভুলবেন না।