Read A Letter with Three Names by Riddhi Pal in Bengali Short Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
  • জঙ্গলের প্রহরী - 4

    জঙ্গলের প্রহরীপর্ব - ৪অস্বস্তিকর পরিস্থিতি কাটাতে ঋষি তাড়াত...

  • ঝরাপাতা - 1

    ///ঝরাপাতাপর্ব - ১সন্ধ্যা নামার ঠিক আগের এই সময়টা খুব প্রিয়...

  • Ms Dhoni

    রাঁচির ছোট্ট শহর। স্টেশন রোডের পাশে এক সরকারি কোয়ার্টারে থা...

  • মহাভারতের কাহিনি – পর্ব 118

    মহাভারতের কাহিনি – পর্ব-১১৮ যুদ্ধের নবম দিনে ভীষ্মের পরাক্রম...

  • তিন নামের চিঠি..

    স্নেহা, অর্জুন আর অভিরূপ — ওরা তিনজন।কলেজের এক ক্লাসে প্রথম...

বিভাগ
শেয়ারড

তিন নামের চিঠি..

স্নেহা, অর্জুন আর অভিরূপ — ওরা তিনজন।

কলেজের এক ক্লাসে প্রথম দেখা, স্নেহা তখন ফার্স্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হয়েছে। বৃষ্টি ভেজা বিকেলে, পেছনের বেঞ্চে বসে থাকা দুটো ছেলে—অর্জুন আর অভি—একটা ছায়া দেখেছিল দরজার কাছে। সাদা ছাতার নিচে ছিমছাম মুখ, ভিজে চোখ, আর ভিজে কাঁধ।

"ভিতরে আসতে পারি?"
স্নেহা জিজ্ঞেস করেছিল।
অর্জুন হেসে বলেছিল, "তুমি আসলে তো আলো ঢুকে পড়ছে ক্লাসে।"

সেই মুহূর্তে যেন গল্পটা শুরু হয়েছিল।

প্রথমে শুধু বন্ধুত্ব। তারপর একটু একটু করে হাসি, ছোঁয়া, চোখের ভাষা বদলাতে থাকল।

তিনজনেই খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেল। ক্যান্টিন, আড্ডা, হোস্টেল র‍্যাগিং, প্রজেক্ট সবকিছুতে ওরা ছিল একসাথে। কেউ কখনও প্রকাশ করে না কে কাকে ভালোবাসে, যেন অজানা একটা চুক্তি ছিল—ভাঙা যাবে না, নইলে সবটাই ভেঙে যাবে।

কিন্তু ভালোবাসা তো নিয়ম মানে না।

অর্জুন একদিন চুপিচুপি স্নেহাকে বলে ফেলে, "তুই জানিস না, কিন্তু তোর হাসিটা আমার ঘুম কেড়ে নেয়। আমি তোকে ভালোবাসি স্নেহা।"

স্নেহা চুপ করে থাকে। অভিরূপের কথা ভাবে, যে নীরবে স্নেহার পাশে থেকেছে, কাঁধে মাথা রাখতে দিয়েছে, চোখে জল এলে ঠাট্টা করে সরিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু স্নেহারও মনে গাঁথা ছিল অর্জুন।

ও বলেছিল,
"আমি তোকে অপছন্দ করতে পারি না অর্জুন…"

ওদের সম্পর্কটা শুরু হলো গোপনে। কিন্তু যে সম্পর্ক গোপন, তা বেশিদিন চাপা থাকে না।

একদিন অভি দেখে ফেলল ওদের হাত ধরা, আর স্নেহার চোখে চোখ রাখা অর্জুনের।

চোখে যেন বজ্রপাত।

"তুই অন্তত আমায় বলতিস অর্জুন! তোর মুখে শুনতাম! আমার কিচ্ছু থাকত না বলার…"

অভিরূপ দূরে সরে যায়।

তারপর শুরু হলো ভুল বোঝাবুঝির সময়।
একদিন অর্জুন হঠাৎ দেখতে পেল, স্নেহা অভিরূপের সাথে কফি খাচ্ছে। হাসছে। খুব কাছাকাছি।

অর্জুন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল,
"তুই কি আবার ওর সাথে ঘুরছিস? আমি বোকা? তুই কি আমায় নিয়ে খেললি?"

স্নেহা অপমানে চোখে জল এনে বলেছিল,
"তুই তো বিশ্বাসই করিস না… ও আমার বন্ধু। আর তোকে ভালোবেসে আমি শুধু তোকেই দেখেছি…"

কিন্তু অর্জুন থামেনি। সম্পর্কটা ভেঙে দিল।

স্নেহা সবার থেকে কেটে গেল। কারো ফোন ধরত না, ক্লাসে আসত না।

একদিন কলেজের নোটিশ বোর্ডে শুধু লেখা ছিল—
“SNEHA CHAKRABORTY — Withdrew from semester. Reason: Higher Education Abroad.”

অর্জুন আর অভিরূপ কিছু জানে না।

স্নেহা সবকিছু ডিঅ্যাক্টিভেট করে, বিদেশে চলে যায়। মোবাইল নম্বর, ইনস্টা, হোয়াটসঅ্যাপ — কোথাও নেই সে।

একরকম উধাও হয়ে যায় মেয়েটা।

অর্জুন আর অভিরূপ, যাদের একটা সময় স্নেহা আলাদা করে জুড়েছিল, এখন একসাথে চুপ করে বসে থাকে ক্যাফের বেঞ্চে।

দিন পেরোয়।

একদিন অভিরূপ হঠাৎ ফেসবুকে একটা পুরনো স্মৃতি দেখে: তিনজনের একটা ছবি।

তিন নাম — S + A + A = Always।

অভি তখন অর্জুনকে বলল,
"চল, ওকে খুঁজে বের করি। জানি না কোথায় আছে, কিন্তু এভাবে হারানো যায় না।"

ওরা খুঁজতে শুরু করল — পুরনো মেল চেক করল, ইউনিভার্সিটির নাম ঘেঁটে বের করল সম্ভবত কোথায় পড়ছে স্নেহা। কেউ বলল আমেরিকা গেছে, কেউ বলল কানাডা।

শেষমেশ, একদিন একটা ফোরামের কমেন্টে অভি পেল একটা পোস্ট:
"Looking for bone marrow donor. Female, 23. Diagnosed with Acute Lymphoblastic Leukemia. Kolkata origin."

নিচে নাম লেখা ছিল: Sneha C.

মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

ওরা দুজনেই ওর খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। সব রকম যোগাযোগ করে শেষমেশ একটা জায়গায় খুঁজে পেল:
“Saint Theresa Cancer Hospice, South California.”

ওরা গিয়েছিল। সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
কারণ, হসপিস থেকে একজন নার্স এসে শুধু এটুকু বলেছিল—
"She left a note for you both. She knew you would come one day."

চোখে জল নিয়ে অর্জুন সেই চিঠি খুলেছিল।


---

চিঠি:

"তোমরা যদি এই চিঠিটা পড়ো, তাহলে বুঝে নিও, আমি হয়ত আর খুব বেশি সময় পাইনি… কিন্তু আমার জীবনে তোমরা দুজন ছিলে — সেটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় পাওনা।

অর্জুন, তোকে ভালোবেসেছিলাম, কিন্তু তোর ভুল বোঝার ক্ষমতা সব শেষ করে দিল। তবুও রাগ করতে পারিনি। অভি, তুই আমার জান, তোকে আমি কখনো হারাইনি, শুধু তোকে নিজের থেকে দূরে রেখেছি — যাতে তোদের দুজনের জীবন থেমে না যায়।

জানি না, আমার শেষ সময়টা তোমাদের দেখা হবে কি না। কিন্তু যদি হয়, তাহলে শুধু হাসবি। কারণ আমি ভালোবাসা নিয়ে মরতে চাই, কষ্ট নিয়ে না।

ভালোবাসি দুজনকেই — শেষ নিঃশ্বাস অবধি।

- স্নেহা"

স্নেহা বেঁচে আছে কি না, কেউ জানে না।
ওরা চিঠিটা নিয়ে ফিরে আসে… নিঃশব্দে।

পেছনে পড়ে থাকে শুধুই তিনটা নামের গল্প।

S + A + A = Always... Or maybe not.