( পূর্ব প্রকাশিতের পর )
৫
গাট ও মাইক্রোবায়োম
Gut বা গাট—শব্দটা আজকাল আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এর প্রকৃত অর্থ এখনও অনেকটাই অস্পষ্ট। অনেকেই মনে করেন গাট মানেই শুধু খাবার হজমের জায়গা। কিন্তু আসলে এটি আমাদের শরীরের এক বিস্ময়কর কেন্দ্র, একে বলাই যায় শরীরের “কন্ট্রোল রুম।”
প্রায় ৩০ ফুট দীর্ঘ এক নালি—যা মুখ থেকে শুরু হয়ে খাদ্যনালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র অতিক্রম করে পায়ুদ্বারে শেষ হয়—এই অবিশ্বাস্যভাবে সূক্ষ্ম ও জটিল ব্যবস্থাটিই হলো গাট।
গাটই ঠিক করে দেয়—
আমরা কতটা শক্তি পাবো,
কোন ভিটামিন–মিনারেল শোষিত হবে,
হরমোনগুলো কীভাবে কাজ করবে,
আর আমাদের ইমিউন সিস্টেম কতটা শক্তিশালী থাকবে।
গাট মাইক্রোবায়োম – আমাদের ভেতরের নীরব পরিবার
গাটের ভেতরে লুকিয়ে আছে কোটি কোটি অদৃশ্য প্রাণী—ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাসসহ অসংখ্য মাইক্রোব। একে বলা হয় গাট মাইক্রোবায়োম।
তাদের ভাবা যায় একজন মায়ের মতো—যিনি সন্তানের খাওয়া–দাওয়া, ঘুম, আবেগ, সুস্থতা সবকিছু আগলে রাখেন।
আমরা যখন প্রাকৃতিক ও আঁশযুক্ত খাবার খাই, তখন এই মাইক্রোবায়োম খুশি হয়, শক্তি উৎপাদন করে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কিন্তু আমরা যখন প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড, কেমিক্যাল ভর্তি খাবার খাই, তখন তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের জায়গা দখল করে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। তখন শরীরে শুরু হয় প্রদাহ, হরমোনাল অস্থিরতা, আর ধীরে ধীরে জন্ম নেয় নানা রোগ—ডায়াবেটিস তার মধ্যে অন্যতম।
ভাবুন তো—আমাদের ভেতরে প্রতিদিনই চলছে অদৃশ্য এক যুদ্ধ। একদিকে আছে আমাদের উপকারী মাইক্রোব, অন্যদিকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। জয়ী হয় সেই পক্ষ, যাদের আমরা আমাদের খাবার দিয়ে শক্তি যোগাই।
গাট–ব্রেইন এক্সিস – পেট আর মস্তিষ্কের রহস্যময় যোগসূত্র
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, গাট আর মস্তিষ্ক একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। একে বলা হয় Gut–Brain Axis।
গাটে রয়েছে প্রায় ১০ কোটি নার্ভ সেল—এজন্যই গাটকে বলা হয় আমাদের “দ্বিতীয় মস্তিষ্ক।” এখান থেকেই তৈরি হয় সেরোটোনিনের মতো রাসায়নিক, যা মুড ভালো রাখে ও ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে।
তাই গাট অসুস্থ হলে সরাসরি তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। আমরা হই উদ্বিগ্ন, স্ট্রেসড, ডিপ্রেসড। আবার স্ট্রেস কর্টিসল বাড়িয়ে রক্তে শর্করাকে আটকে রাখে, ডায়াবেটিস আরও বাড়িয়ে দেয়।
অতএব, গাটের স্বাস্থ্য মানেই মানসিক ও শারীরিক—দুই স্বাস্থ্যই।
সুতরাং গাট হলো আমাদের নীরব অভিভাবক। আমরা তাকে যত্ন করলে সে আমাদের ডায়াবেটিসসহ অসংখ্য রোগ থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু আমরা যদি তাকে কষ্ট দিই, তবে সে নীরবে আমাদের অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেবে।
তাই ডায়াবেটিস বোঝার ক্ষেত্রে প্রথম পাঠ হলো গাট ও মাইক্রোবায়োম।
কীভাবে গাটকে সুস্থ রাখা যায়—প্রোবায়োটিক, ফারমেন্টেড ফুড, আঁশযুক্ত শাকসবজি, সঠিক জীবনযাপন ইত্যাদি নিয়ে আমরা পরে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কিন্তু আপাতত এই মুহূর্ত থেকেই একটি কাজ করতে পারেন—
সব ধরণের প্রসেসড ফুড বাদ দিন, আর আঁশ ও ফারমেন্টেড খাবারকে প্রতিদিনের খাদ্যে জায়গা দিন।
তাহলেই আপনি আপনার শরীরের ভেতরের “দ্বিতীয় মস্তিষ্ক”কে খুশি রাখবেন।
৬
শ্লো মেটাবলিজম – শরীরের ইঞ্জিন যখন ধীর হয়ে যায়
আমাদের শরীরটা আসলে এক আশ্চর্য ইঞ্জিন। খাবার হলো তার জ্বালানি, আর মেটাবলিজম হলো সেই জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া।
এই ইঞ্জিন যত দ্রুত ও মসৃণভাবে কাজ করবে, তত ভালোভাবে শরীর শক্তি পাবে, সুগার ব্যবহার করতে পারবে।
কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন এই ইঞ্জিনের গতি ধীর হয়ে যায়।
অর্থাৎ— শ্লো মেটাবলিজম।
শ্লো মেটাবলিজম হলে কী ঘটে ?
১. খাবার শক্তিতে পরিণত হয় না → গ্লুকোজ রক্তে থেকে যায়, বাড়ে সুগার।
২. চর্বি জমতে থাকে → শরীর এনার্জি ব্যবহার না করে ফ্যাট আকারে জমা করে রাখে।
৩. ক্লান্তি বাড়ে → সামান্য কাজেই হাঁপিয়ে ওঠা, মনোযোগ নষ্ট হওয়া।
৪. হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট হয় → ইনসুলিন ও থাইরয়েডের কাজ ব্যাহত হয়।
৫. ইমিউনিটি কমে যায় → ঘন ঘন অসুস্থতা, ইনফেকশন, প্রদাহ।
কেন মেটাবলিজম ধীর হয় ?
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া – শরীর বারবার ইনসুলিন নিঃসরণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
শরীরচর্চার অভাব – ব্যায়াম না করলে কোষে মাইটোকন্ড্রিয়া সক্রিয় থাকে না।
ভুল ঘুমের অভ্যাস – রাত জাগা বা অনিদ্রা শরীরের হরমোনাল ঘড়ি বিগড়ে দেয়।
স্ট্রেস – কর্টিসল হরমোন সবসময় উঁচু থাকে, ফলে ফ্যাট জমে ও সুগার আটকে যায়।
ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি – বিশেষত ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন D, B কমপ্লেক্স।
বয়স বাড়া – বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মাংসপেশি কমে যায়, ফ্যাট বাড়ে → মেটাবলিজম স্লো হয়।
কীভাবে বুঝবেন আপনার মেটাবলিজম স্লো হয়ে গেছে ?
অল্প খেয়েও ওজন বাড়ছে
সব সময় ক্লান্তি বা অলসতা
হাত–পা ঠান্ডা লাগা
হজমে সমস্যা
সহজে ফ্যাট কমছে না
চুল পড়া, ত্বক রুক্ষ হওয়া
মানসিক অস্থিরতা বা মুড সুইং
মেটাবলিজমকে কীভাবে জাগিয়ে তুলবেন ?
১. ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (১৬/১৮ ঘণ্টা)
– শরীরকে জোর করে পুরনো ফ্যাট ও জমে থাকা গ্লুকোজ ব্যবহার করতে শেখায়।
২. স্ট্রেংথ ট্রেনিং ও হাঁটা
– মাংসপেশি যত বাড়বে, মেটাবলিজম তত দ্রুত হবে।
৩. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
– ডিম, মাছ, ডাল, বাদাম মাংসপেশিকে সক্রিয় রাখে।
৪. প্রচুর পানি পান
– ডিহাইড্রেশন হলে মেটাবলিজম ধীর হয়ে যায়।
৫. ভালো ঘুম ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
– প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম, মেডিটেশন, প্রার্থনা, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম।
৬. প্রাকৃতিক খাবার ও আঁশ
– সবুজ শাক, ডাল, বীজ, ফারমেন্টেড ফুড।
শ্লো মেটাবলিজম মানে হলো— শরীরের ইঞ্জিন ঘুমিয়ে পড়েছে।
এই ঘুমন্ত ইঞ্জিনকে না জাগালে সুগার কোনোদিন নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
সুখবর হলো— মাত্র কয়েক সপ্তাহের নিয়মিত ফাস্টিং, ব্যায়াম, সঠিক খাবার আর ঘুমের মাধ্যমে এই ইঞ্জিনকে আবারও সক্রিয় করা যায়।
তখন শরীর নিজেই গ্লুকোজ ব্যবহার করবে, ফ্যাট পোড়াবে, শক্তি ফিরিয়ে দেবে।
অর্থাৎ, ডায়াবেটিসকে রিভার্স করতে হলে প্রথমেই জাগিয়ে তুলতে হবে আমাদের ধীর হয়ে যাওয়া মেটাবলিজমকে।
৭
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
মানুষের শরীর আসলে এক বিশাল ল্যাবরেটরি, যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। এই বিক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এক অদৃশ্য সেনাবাহিনী—হরমোন।
হরমোনকে বলা যায় শরীরের বার্তাবাহক। এরা রক্তের মাধ্যমে ছুটে গিয়ে শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে নির্দেশ দেয়—কখন কী করতে হবে। আমাদের মুড থেকে শুরু করে ঘুম, ক্ষুধা, বিপাকক্রিয়া—সবই হরমোনের নিয়ন্ত্রণে।
এই হরমোনগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হলো ইনসুলিন।
ইনসুলিন একটি এনাবলিক হরমোন, অর্থাৎ এটি শরীরে জ্বালানি ও পুষ্টি জমাতে সাহায্য করে।
ইনসুলিনের কাজ – পুলিশের মতো ভূমিকা
ভাবুন, শহরের রাস্তায় হঠাৎ অনেক গুন্ডা-বদমাশ বেরিয়ে এসেছে।
যদি তারা রাস্তা জুড়ে ঘুরে বেড়ায়, তবে সাধারণ মানুষ ভয়ে থাকবে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাবে, শহরের অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। তখন পুলিশ বাহিনী এগিয়ে এসে এই গুন্ডাদের ধরে ধরে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
ঠিক এইভাবেই কাজ করে ইনসুলিন।
আমরা যখন খাবার খাই, বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট বা মিষ্টিজাতীয় কিছু, তখন রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়।
যদি গ্লুকোজ খোলা অবস্থায় রক্তে ঘুরতে থাকে, তবে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর—রক্ত ঘন করে, ধমনীর দেয়াল নষ্ট করে, হার্ট, কিডনি, চোখের ক্ষতি করে।
তখন ইনসুলিন এসে গ্লুকোজকে ধরে ধরে কোষের ভেতর পাঠিয়ে দেয়।
কোষের ভেতরে ঢুকলে গ্লুকোজ আর ক্ষতিকর থাকে না, বরং শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
তাই ইনসুলিন আসলে আমাদের শরীরের প্রথম রক্ষক পুলিশ।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স – যখন পুলিশকেও পাত্তা দেওয়া হয় না
সমস্যা হয় তখনই, যখন শরীরের কোষ ইনসুলিনকে আর গুরুত্ব দেয় না।
ইনসুলিন যতই কড়া নাড়ুক, কোষের দরজা আর খোলে না।
এটাকেই বলা হয় ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
ফলাফল ?
রক্তে গ্লুকোজ জমতে থাকে।
ইনসুলিন বারবার বেশি পরিমাণে নিঃসৃত হয়।
শরীর ক্লান্ত, দুর্বল ও প্রদাহগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
কেন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় ?
মূল কারণ হলো আমাদের ভুল জীবনযাপন।
সারাদিন বারবার খাওয়ার অভ্যাস (চা, বিস্কুট, স্ন্যাকস, সফট ড্রিঙ্কস)।
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া।
শারীরিক পরিশ্রমের অভাব।
গাটের অসুস্থতা।
পেটে চর্বি জমে থাকা।
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস ও ঘুমের অভাব – মানসিক চাপ ও অনিয়মিত ঘুম কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা সরাসরি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে ত্বরান্বিত করে।
প্রতিবার খাবার মানেই ইনসুলিন নিঃসরণ।
এক থালা ভাত খেলেও ইনসুলিন আসে, আবার একটা বিস্কুট খেলেও ইনসুলিন আসে।
এই অবিরাম ইনসুলিন নিঃসরণই ধীরে ধীরে কোষগুলোকে অসংবেদনশীল করে তোলে।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হলে কী হয় ?
রক্তে শর্করা নিয়মিত বেশি থাকে।
ক্ষুধা বেড়ে যায়, মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে বাড়ে।
শরীর ক্লান্ত লাগে।
পেটের চারপাশে চর্বি জমে।
রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল বেড়ে যায়।
লিভার, কিডনি ও হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
টাইপ–২ ডায়াবেটিস না ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ?
আমরা সাধারণত বলি—“ডায়াবেটিস হয়েছে।”
কিন্তু প্রকৃত অর্থে টাইপ–২ ডায়াবেটিস মানে হলো ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
মূল সমস্যা হলো কোষের দরজা ইনসুলিনকে গ্রহণ করছে না।
গ্লুকোজ রক্তে জমে যাচ্ছে—এটাই রোগের আসল রূপ।
তাই আসলে বলা উচিত—
ডায়াবেটিস নয়, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স।
পরিশেষে বলতে হয়—
যে ইনসুলিন একসময় আমাদের রক্ষক ছিল,
আমাদের বাঁচাতে ছুটে আসত,
সেই ইনসুলিনই ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে—আমাদের নিজের ভুল খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, আর অসুস্থ জীবনযাত্রার কারণে।
তাই ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির আসল চাবিকাঠি হলো—
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ভাঙা।
যতদিন না আমরা এটাকে বুঝতে পারছি, ততদিন মুক্তি নেই।
৮
স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা
স্ট্রেস—এই একটি শব্দই আজ আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারী। বাইরে থেকে দেখা যায় না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে এটি শরীরকে ধ্বংস করে দেয়।
ধমনী ক্ষয় করে,
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে,
গাট অসুস্থ করে,
ইনসুলিনকে অকার্যকর করে তোলে।
ফলাফল কী ? ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, ডিপ্রেশন—সবই এর ধারাবাহিক ফল।
ফাইট অর ফ্লাইট – প্রাচীন মানুষের গল্প
হাজার বছর আগে যখন মানুষ জঙ্গলে বাস করত, প্রতিদিন তার জীবন ছিল ভয় আর লড়াইয়ে ভরা।
হঠাৎ কোনো বাঘ বা সিংহ সামনে এসে দাঁড়াল—তখন মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হতো: লড়াই করবে নাকি পালিয়ে যাবে ?
এই পরিস্থিতি সামলাতে সৃষ্টিকর্তা মানুষের শরীরে তৈরি করলেন একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা—
কর্টিসল নামক হরমোন এবং সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম।
এই অবস্থায়—
হার্টবিট বেড়ে যেত,
রক্তচাপ হঠাৎ উঁচু হতো,
শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হতো,
মাংসপেশিতে রক্ত বাড়ত,
রক্তে গ্লুকোজ জমা হতো যেন মুহূর্তে প্রচণ্ড শক্তি মেলে।
এটাই ছিল শরীরের ফাইট অর ফ্লাইট মোড।
তখন এটি জরুরি ছিল, কারণ সত্যিই জীবন বাঁচাতে বাঘ–সিংহের সঙ্গে লড়তে বা পালাতে হতো।
আধুনিক মানুষের ভয় – মনের জঙ্গলের জানোয়ার
আজ আমরা আর জঙ্গলে থাকি না। সামনে বাঘ বা সিংহ আসে না।
কিন্তু আমাদের মনের ভেতরে লুকিয়ে আছে হাজারো জানোয়ার—
অফিসের ডেডলাইন,
পরীক্ষার চাপ,
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা,
সংসারের দ্বন্দ্ব,
সামাজিক প্রতিযোগিতা,
রাজনৈতিক বিরোধ,
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভয়।
এই অদৃশ্য জানোয়ারগুলোই আমাদের শরীরকে সারাক্ষণ ফাইট অর ফ্লাইট মোডে রাখে।
আমরা দিনভর সতর্ক, ভয়গ্রস্ত, টেনশনে থাকি।
মনে হয় যেন কোথাও একটা বাঘ লুকিয়ে আছে, এখনই আক্রমণ করবে !
কর্টিসল – স্ট্রেস হরমোন
স্ট্রেসড অবস্থায় শরীর থেকে নিঃসৃত হয় কর্টিসল।
স্বল্প সময়ের জন্য এটি উপকারী।
বিপদের মুহূর্তে এটি শরীরকে বাড়তি শক্তি দেয়।
কিন্তু সমস্যা হয় তখনই, যখন কর্টিসল সব সময় উঁচু থাকে।
ফলে—
রক্তে শর্করা ক্রমাগত বাড়তে থাকে,
ইনসুলিন দুর্বল হয়ে পড়ে,
হজম খারাপ হয়,
ঘুম নষ্ট হয়,
প্রদাহ ছড়িয়ে পড়ে,
শরীর দ্রুত ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের দিকে ধাবিত হয়।
আমাদের দুই ধরণের নার্ভাস সিস্টেম:
শরীরের অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেমের দুটি দিক আছে—
১. সিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (ফাইট অর ফ্লাইট) – বিপদের সময় সক্রিয় হয়, শরীরকে যুদ্ধ বা পালানোর জন্য প্রস্তুত করে।
২. প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট) – যখন আমরা শান্ত, নিশ্চিন্ত, তখন সক্রিয় হয়। এই সময় হজম ভালো হয়, ঘুম ভালো হয়, ইনসুলিন সবচেয়ে কার্যকরভাবে কাজ করে।
আধুনিক জীবনে আমরা প্রায় সব সময়ই “ফাইট অর ফ্লাইট” অবস্থায় আটকে আছি।
ফলে শরীরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙে যাচ্ছে।
গাট–ব্রেইন এক্সিস ও স্ট্রেস
স্ট্রেস শুধু মস্তিষ্ককে নয়, গাটকেও অসুস্থ করে।
স্ট্রেসে গাট মাইক্রোবায়োমের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
হজম খারাপ হয়, প্রদাহ বাড়ে।
আবার গাট অসুস্থ হলে মস্তিষ্কও প্রভাবিত হয়—উদ্বেগ, অনিদ্রা, ডিপ্রেশন দেখা দেয়।
এই পারস্পরিক সম্পর্ককেই বলা হয় Gut–Brain Axis।
অতএব, স্ট্রেস হলো এমন এক বিষ, যা একই সঙ্গে মন ও শরীরকে কাবু করে এবং ডায়াবেটিসকে আরও তীব্র করে।
স্ট্রেস আসলে আজকের যুগের অদৃশ্য বাঘ–সিংহ।
একে পুরোপুরি এড়ানো যায় না, কিন্তু একে জয় করা যায়।
আমাদের শিখতে হবে—
কখন শান্ত হতে হবে,
কীভাবে গভীর শ্বাস নিতে হবে,
কীভাবে ধ্যান, প্রার্থনা বা মাইন্ডফুলনেসে মনকে স্থির করতে হবে,
কীভাবে নিজের মনের জঙ্গলের জানোয়ারগুলোকে বশে আনতে হবে।
ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি মানে শুধু সুগার কমানো নয়, বরং মনের প্রশান্তি ফিরিয়ে আনা।
আজ যদি আমরা প্রতিজ্ঞা করি—
“আমি আর স্ট্রেসের দাস হব না, আমি আমার মনের শান্তি ফিরিয়ে আনব”
তাহলেই আমরা সত্যিকারের সুস্থতার পথে এগোতে পারব।
৯
ভুল খাদ্যাভ্যাস
বাংলায় একটি প্রচলিত ধারণা আছে—
“চিনি বাদ দিলেই ডায়াবেটিস ঠেকানো যায়।”
কিন্তু এটি সবচেয়ে বড় ভুল।
আমরা অনেকেই গর্ব করে বলি—“আমি তো চিনি ছাড়া দুধ-চা খাই।” অথচ আমরা জানিই না—দুধের মধ্যেই আছে ল্যাকটোজ, যা এক ধরনের প্রাকৃতিক চিনি।
আবার মনে করি ভাত, রুটি, চিঁড়া, মুড়ি, ভুট্টা—এসব নিরীহ খাবার। বাস্তবে এগুলোও সব কার্বোহাইড্রেট, যা শরীরে গিয়ে ভেঙ্গে শেষ পর্যন্ত গ্লুকোজেই পরিণত হয়।
অর্থাৎ, আমরা যেসব খাবারকে “চিনি-মুক্ত” ভাবি, সেগুলোর ভেতরেও লুকিয়ে আছে অদৃশ্য চিনি।
ফলের প্রাকৃতিক মিষ্টি – বড় ভ্রান্তি
অনেকের ধারণা—“ফল তো প্রাকৃতিক, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ।”
কিন্তু আসল সত্য হলো—
মিষ্টি ফল (আম, লিচু, আঙুর, কলা) প্রচুর ফ্রুকটোজ বহন করে।
ফ্রুকটোজ রক্তে তৎক্ষণাৎ গ্লুকোজ বাড়ায় না, কিন্তু লিভারে জমে ফ্যাট তৈরি করে এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ায়।
আবার কেউ ভাবে—“চিনি খাই না, শুধু গুড় / মিশ্রী / মধু খাই।”
বাস্তব হলো—
চিনি, গুড়, মিশ্রী, মধু—সবাই আসলে আলাদা পোশাক পরা একই চিনি।
শরীরের কাছে এদের নাম একটাই—গ্লুকোজ।
GI ও GL – গ্লুকোজ স্পাইকের আসল চিত্র:
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI): খাবার খাওয়ার পর কত দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়ায়।
হাই GI (>৭০): দ্রুত গ্লুকোজ বাড়ায় (সাদা ভাত, ময়দা, আলু, মুড়ি)।
লো GI (<৫৫): ধীরে বাড়ায় (ডাল, ছোলা, শাকসবজি)।
গ্লাইসেমিক লোড (GL): শুধু খাবারের ধরণ নয়, পরিমাণও বিবেচনা করে।
মানে, ভাতের এক চামচ বনাম এক থালা—দুটোর প্রভাব আলাদা।
বাজারি প্রতারণা – “সুগার ফ্রি’র” আসল চেহারা
আজকাল বাজারে “সুগার ফ্রি বিস্কুট” নামে অনেক পণ্য বিক্রি হয়।
কিন্তু সেগুলোর মূল উপাদানই হলো ময়দা, যা শরীরে ঢুকেই গ্লুকোজে ভেঙে যায়।
অতএব, এগুলোও সুগার বাড়ায়—শুধু মোড়কে লেখা থাকে “Sugar Free”।
আরেক প্রতারণা হলো কৃত্রিম সুইটনার।
Aspartame, Sucralose, Saccharin—এগুলো প্রথমে নিরীহ মনে হলেও গাট মাইক্রোবায়োম নষ্ট করে, লিভার-কিডনির ওপর চাপ ফেলে, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
তবু বাজারে এগুলোকে প্রচার করা হয় “ডায়াবেটিস ফ্রেন্ডলি” নামে।
ভুল সময় ও ভুল পরিমাণে খাওয়া:
ভুল খাবারের পাশাপাশি ভুল সময় ও ভুল পরিমাণও ডায়াবেটিস ট্রিগার করে।
রাত ১০টার পর ভারী ডিনার → ইনসুলিন কম কার্যকর থাকে।
সারাদিন ছোটখাটো “খুঁটিখুঁটি” খাওয়া (চা-বিস্কুট-চিপস) → ইনসুলিন সারাদিনই উঁচু থাকে।
খাবারের ভুল ক্রম → আগে ভাত-রুটি খাওয়া = দ্রুত সুগার স্পাইক; আগে সবজি / প্রোটিন খেলে সুগার স্পাইক কম।
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক দৃশ্য দেখা যায়—
কিছু সুগারী মানুষ ভোরবেলা মাঠে হাঁটতে যান, ঘণ্টাখানেক হাঁটার পর রাস্তার পাশের দোকানে গিয়ে খান চিনি ছাড়া দুধ-চা।
তারপর ফেরার পথে কিনে নেন তেলে ভাজা ময়দার পুরি আর ঘুগনি !
এসবের ফলাফল ?
যাও সামান্য কিছুটা গ্লুকোজ হাঁটাহাঁটিতে কমেছিল, পুরি-ঘুগনি খেয়ে সব আবার দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
এটাই হলো ভুল সচেতনতার মজার চিত্র।
বাঙালির প্লেটের লুকানো চিনি:
সাদা ভাত— GI ৭৩–৭৫
আটার রুটি— GI ৬০–৬৫
ময়দার পরোটা— GI ৭০+
আলু সেদ্ধ— GI ৮০–৮৫
মুড়ি— GI ৭৭–৮০
চিঁড়া— GI ৭০+
ভুট্টা— GI ৬০–৭০
এই খাবারগুলোর মধ্যে খালি চোখে দেখতে গেলে কোনো চিনি নেই। কিন্তু খাওয়ার পর শরীরের মধ্যে গিয়ে এগুলো ভেঙ্গেই গ্লুকোজ অর্থাৎ চিনি তৈরি হয়। নয়তো শরীরের মধ্যে কি চিনির ফ্যাক্টরি আছে যে শরীর নিজে নিজে চিনি তৈরি করবে ?
ভুল খাদ্যাভ্যাস মানে শুধু কী খাচ্ছি তা নয়—
কখন খাচ্ছি,
কতটা খাচ্ছি,
আর কীভাবে খাচ্ছি—সবকিছুর সমষ্টিই।
তাই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
কারণ—ডায়াবেটিসের আসল শত্রু শুধু “চিনি” নয়, প্রতিটি ভুল অভ্যাস।
১০
স্লিপ ডিজঅর্ডার বা অনিয়মিত ঘুম
ঘুম হলো জীবনের তৃতীয় স্তম্ভ—খাবার, ব্যায়ামের মতোই অপরিহার্য। অথচ আজকের দিনে এই ঘুমটাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
আমরা সমাজের অবক্ষয় দেখলে ঘুমের ভান করি, কিন্তু নিজের শরীরের ক্ষতি করার জন্য রাত জাগতে একটুও পিছপা হই না।
কখনো ভেবেছেন—ঘুম না হলে কী হয় ?
শরীরের ভেতরে হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট হয়।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, সুগার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ক্ষুধার হরমোন ঘ্রেলিন বাড়ে, তৃপ্তির হরমোন লেপ্টিন কমে যায়। ফলে সারাদিন খিদে পায়, বেশি খাওয়া হয়, ওজন বাড়তে থাকে।
সকালে ঘুম ভেঙে শরীর ভারী লাগে, মন খারাপ হয়, ব্যায়াম করার ইচ্ছা মরে যায়।
ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, ঘুম হচ্ছে শরীরের আসল মেরামতির সময়।
এই সময়েই কোষগুলো নিজেদের রিচার্জ করে, ভাঙাচোরা অংশ সারায়, মস্তিষ্কে জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করে।
আমাদের মস্তিষ্কের ছোট্ট একটি গ্রন্থি, পিনিয়াল গ্ল্যান্ড, এখান থেকেই তৈরি হয় ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন। লাখো বছর আগে মানুষ যখন অন্ধকার নামলেই গুহার ভেতরে শুয়ে পড়ত, তখন এই মেলাটোনিন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হতো।
কিন্তু আজ ?
গত দেড়শ বছরের সভ্যতা আমাদের সেই প্রাকৃতিক ছন্দ নষ্ট করেছে। সারারাত আলো জ্বলে, টিভি–মোবাইল–কম্পিউটারের ব্লু লাইট চোখে পড়ে, আর তাতেই মেলাটোনিনের নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘুম আসে না, এলেও গভীর হয় না।
আর গভীর ঘুম না হলে শরীরও নিজের ভেতরের ক্ষত সারাতে পারে না। ফলে ডায়াবেটিসের মতো রোগ আরও তীব্র হয়।
তাহলে কী করা উচিত ?
রাত ১০টার মধ্যে শুয়ে পড়ুন।
শোবার অন্তত এক ঘণ্টা আগে মোবাইল–টিভি বন্ধ করে দিন।
শোবার আগে হালকা বই পড়ুন, মেডিটেশন করুন বা প্রার্থনা করুন।
ঘর রাখুন অন্ধকার, শান্ত ও ঠান্ডা।
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো–জাগার অভ্যাস তৈরি করুন।
ঘুম হচ্ছে শরীরের বিনামূল্যে দেওয়া এক ওষুধ।
সঠিক ঘুম ছাড়া কোনো ওষুধ, কোনো ডায়েট, কোনো ব্যায়ামই সুগারকে হারাতে পারবে না।
তাই নিজেকে প্রতিজ্ঞা করুন—
“আজ থেকে আমি রাত জাগব না। আমার শরীর–মনকে আমি প্রতিদিন যথাযথ ঘুম উপহার দেব।”
১১
বংশগতিকে ট্রিগার করার মতো জীবনযাপন
আমাদের সমাজে এক বড় ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত—
“আমার মা–বাবার ডায়াবেটিস ছিল, তাই আমারও হবেই।”
বা, “দাদু–ঠাকুমার সুগার ছিল, তাই আমার কিছু করার নেই।”
কিন্তু সত্যিটা একেবারেই অন্যরকম।
হ্যাঁ, বংশগতির প্রভাব আছে।
কিন্তু সেটি কোনো চূড়ান্ত রায় নয়।
বরং আপনার জীবনযাপনই ঠিক করে দেয় সেই প্রবণতা সক্রিয় হবে কি না।
জেনেটিক বনাম এপিজেনেটিক
জেনেটিক্স (DNA): আমরা জন্মসূত্রে কিছু প্রবণতা নিয়ে আসি—যেমন কারো ডায়াবেটিস, কারো থাইরয়েড, কারো হার্ট ডিজিজের ঝোঁক থাকে।
এপিজেনেটিক্স: আমাদের খাবার, ঘুম, ব্যায়াম, মানসিক চাপ ও পরিবেশ—এসবই ঠিক করে দেয় সেই প্রবণতাগুলো জেগে উঠবে, নাকি ঘুমিয়েই থাকবে।
একটা সহজ উদাহরণ দিই—
ঘরে এসি মেশিন থাকলেই কি ঘর ঠান্ডা হয়?
না। যতক্ষণ না আপনি সুইচ অন করছেন, এসি কোনো কাজ করবে না।
ঠিক তেমনি—
আপনার শরীরে যদি ডায়াবেটিসের প্রবণতা থেকেও থাকে,
আপনি যদি ভুল জীবনযাপন দিয়ে সেই সুইচ অন না করেন, তবে সেই জিন কোনোদিনই প্রকাশ পাবে না।
কীভাবে বংশগতিকে ট্রিগার করা হয় ?
যদি পরিবারের কারো সুগার থেকে থাকে, আর আপনি—
বেশি ভাত, রুটি, আলু, মিষ্টি খান,
সারাদিন বসে থাকেন,
টেনশনে ডুবে থাকেন,
রাত জেগে মোবাইল চালান,
প্রসেসড ফুড ও জাঙ্ক ফুড খেতে থাকেন,
নিয়মিত ঘুম কমান—
তাহলেই সেই বংশগত প্রবণতা জেগে ওঠে।
অর্থাৎ, আপনার জিনের সুইচ অন হয়ে যায়।
কীভাবে বংশগতিকে থামানো যায় ?
আবার যদি আপনি—
পরিমিত ও সচেতন খাবার খান,
প্রতিদিন হাঁটেন বা ব্যায়াম করেন,
স্ট্রেস ম্যানেজ করেন,
রাত ১০টার মধ্যে ঘুমান,
শাকসবজি, ডাল, প্রোটিন ও গুড ফ্যাটে ভরসা রাখেন—
তাহলে সেই জিন চুপচাপ অফ অবস্থাতেই থেকে যাবে।
তাহলে আসল কথা কী ?
বংশগতি মানেই ভাগ্য নয়।
এটা কেবল একটি প্রবণতা।
আপনার হাতে আছে সেই সুইচ।
আপনি যদি ভুল জীবনযাপন করেন → জিন অন হবে।
আপনি যদি সঠিক জীবনযাপন করেন → জিন অফ থাকবে।
অতএব, আপনার বাবা–মার ডায়াবেটিস ছিল বলেই আপনার হবেই—এটা একেবারেই সত্য নয়।
বরং, আপনার সচেতন সিদ্ধান্তই ঠিক করে দেবে—
আপনি হবেন ডায়াবেটিসের রোগী,
নাকি থাকবেন সুস্থ, প্রাণবন্ত, মুক্ত মানুষ।
( বাকি কারণগুলো পরবর্তী পর্বে )