মার্কস বাই সিন: পর্ব-১
ঘড়িতে রাত আড়াইটা। শহরের একদম শেষ প্রান্তে, কনস্ট্রাকশনের কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়া দশ তলার একটা উঁচু বিল্ডিং কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে রাতের আকাশের নিচে। এই বিল্ডিংয়ের আশেপাশে একটাও স্ট্রিট লাইট নেই। জায়গাটা এমনিতেই ফাঁকা এবং মাঠের প্রায় এক ধারে হওয়ায় দিনের বেলাতো নয় রাতের বেলাও কেউ এখানে আসে না। তার ওপর অন্ধকার আর স্যাঁতসেঁতে বাতাসে জায়গাটা যেন ভূতের শহর।
তবে এই ধরনের জায়গা সুরা প্রেমীদের কাছে সবথেকে প্রিয়। দিনের বেলায় কিংবা রাতের অন্ধকারে মাঝেমধ্যেই তারা এইখানে এসে ভিড় জমায় সুধা সেবনের জন্য। শুধু সুরা প্রেমী নয়..... এই সমস্ত জায়গা দিনের পর দিন ফাঁকা থাকার কারণে অপরাধের আঁতুর ঘর হয়ে ওঠে। এবং এই জায়গাটাও ধীরে ধীরে তাই হয়ে উঠেছে।
আজ সকাল থেকেই একনাগাড়ে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। থামার নামই নিচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিল আকাশ যেন ফুটো হয়ে গেছে। তবে বিকেল আটটা কি নয়টার দিকে বৃষ্টিটা একটু ধরেছে।
আর সেই কারণেই কাঁদা, জল সব উপেক্ষা করে এতো রাতে এই বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজন মানুষ চাপা স্বরে নিজেদের মধ্যে টুকটাক কথা বলছে এবং সর্তক দৃষ্টি চালিয়ে নিজেদের চারপাশে নজর রাখছে।
বিল্ডিংয়ের একটু দূরে একটা সাদা রঙের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। কিছু লোক সেই বিল্ডিংয়ের অন্ধকার ঘর থেকে কিছু সাদা বক্স নিয়ে এসে গাড়িতে লোড করছে, চুপচাপ। কয়েকজন তাড়া মারছে ওদের, কয়েকজন আবার বিল্ডিং-এর থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে
ওদের মধ্যে একজন, যে একটু নেতা গোছের, সে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ দেয়। কারণ আকাশের যা অবস্থা যখন তখন আবার বৃষ্টি নামলো বলে। এমনিতেই বেশ ঝোড়ো হাওয়া দিচ্ছে এখন। এই সময় বৃষ্টি নামলে সব খারাপ হয়ে যেতে পারে।
সে আকাশের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে থেকে সবার উদ্দেশ্যে গর্জন করে ওঠে। "হাত চালা......তাড়াতাড়ি। সময়ের মধ্যে সবকিছু শেষ করতে হবে। এইগুলো সঠিক সময়ে সঠিক লোকেশনে না পৌঁছাতে পারলে কার্ল আমাদের শেষ করে দেবে!"
এই কথা শুনে কয়েকজন তার মুখের দিকে তাকায়। কয়েকদিন আবার নিজেদের মতো মাথা গুঁজে কাজ করতে থাকে। তবে সবার কাজের গতি বেড়ে যায় খানিকটা।
একজন ট্রাকের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে ওস্তাদের কাঁধে হাত রেখে বলে "চিন্তা কোরো না ওস্তাদ। সব ঠিকঠাক সময়মতো পৌঁছে যাবে।"
"চিন্তা না করে উপায় আছে। দেখছিস না আকাশের যা দশা, তাতে জল লাগলে সব শেষ।"
তারপর সে আবার চিৎকার করে বলে ওঠে "বাক্সগুলো ঠিক জায়গায় গুছিয়ে রাখবি, আর ওপর থেকে ভালো করে ঢাকা দিবি, দেখিস জলে ভিজে যায় না যেন। এইগুলো নষ্ট হলে টাকাতো যাবেই, আমাদের সবার প্রাণ পাখিও দেখবি ফুড়ুৎ করে উড়ে গেছে।"
তারপর বিরক্ত মুখে গজগজ করতে করতে ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে "রবীন সবদিকে খেয়াল রাখছিস তো তুই? শুনেছি এই রুটে এখন কড়া চেকিং হচ্ছে। ধরা পড়লে কিন্তু সব শেষ!"
ছেলেটি বিজ্ঞের মতো হাত নেড়ে বলে "আহ্ ওস্তাদ তুমি ওতো চিন্তা করো না তো। আমি সব দেখে রেখেছি। কিন্তু জানাতো ওই নতুন অফিসার কি যেন নাম....... হ্যাঁ মনে পড়েছে, আহান, ওই পুলিশটা না ভয়ানক প্যাঁচালো। প্রতিটা গলিতে নাকা বসাচ্ছে এখন করে। ওকে নিয়েই একটু চিন্তা আছে। ব্যাটা কখন কি করে কিছু বোঝা যায় না।"
"আরে বসাবে না কেন! আমাদের মধ্যে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে…। ইনফো বাইরে গেছে। সেই মীরজাফরকে একবার ধরতে পারলে শেষ করে দেব।"
"হুম… ঠিক বলেছো ওস্তাদ। যে থালায় খাচ্ছে সেই থালায় ফুটো করছে.....।"
"সে আর বলতে.....।"
বিরক্ত মুখে দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠে ওস্তাদ।
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে সে আবার বলে "জানিস কার্ল নাকি গোপনে নিজের লোক লাগিয়ে ওই পুলিশ আর যে আমাদের ইনফো বাইরে করছে, তাদের সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিতে শুরু করে দিয়েছে।"
"কি বলো ওস্তাদ! তাহলে আর সে বাঁচবে না। কার্লের হাত থেকে কতদিন পালিয়ে বেড়াবে সে, ধরা একদিন পড়বেই। আর তখনই .........."
নিজের পুরো কথা শেষ না করেই হেসে ওঠে রবীন আর তার সাথে ওস্তাদও হেসে ওঠে। রবীন মুখে নি বললেও ওস্তাদ বুঝতে পারে সে কি বলতে চাইছে।
চলবে.............