Read You are trapped in a cage of your mind. by Ridhika Islam Himi in Bengali Love Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

মন খাঁচায় বন্দী তুমি

মেঘ - এই ছেলে তোকে শাটলেস অবস্থায় বেশ হট লাগছে জানিস 

অভিক - অসভ্য মেয়ে ! এটা কোন ধরনের বেয়াদবি ?

এমন রাম ধমক খেয়েও থামল না মেঘনা।এগিয়ে এসে অভিকের মুখোমুখি দাড়ায় ,কপাল কুঁচকে অভিক তার দিকে তাকিয়ে আছে ,মনে মনে বলে 

অভিক- মেয়েটা করবে কি ? 

মেঘনা অভিক কে চমকে দিয়ে একটু উঁচু হয়ে দাড়ায় ।অভিক কপাল কুঁচকে এখনো ঠাঁয় চেয়ে রয়েছে ,মেঘনা তার চোখে চোখ রাখল ।একটু হেসে আচমকাই তার গালে নিজের নরম ঠোঁট স্পর্শ করল ।চোখ বড় বড় হয়ে যায় অভিকের।ঠিক এমন করেই বাম গালেও টস করে চুমু এঁকে দিলো মেঘনা ।কানের কাছে মুখ এনে বলে - 

আজ অব্দি সিনিয়র ভাইয়াদের জ্বালা সহ্য করেছি , কিন্তু আজ থেকে সিনিয়র আপুর দুষ্টু প্যারা সামলাতে হবে ডিয়ার! 

কথা টা বলেই সেখান থেকে পা পিছিয়ে চলে গেলো মেঘনা ।গালে এক হাত দিয়ে ঠাঁয় নিজ স্থান দাঁড়িয়ে রইল অভিক , হতবাক বিস্ফোরণের দৃষ্টিতে মেঘনার যাওয়ার দিকে সে চেয়ে থাকল।অবাকের শেষ পর্যন্তই এসে দাঁড়িয়েছে সে,জীবনের প্রথম বার কোনো মেয়ে তাকে কিস করল! তাও কিনা এমন একটা মেয়ের থেকে? লাইক সিরিয়াসলি! 

অভিক হতভম্ব হয়ে সেই স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দিন পর চিরো চেনা সেই শহর টায় পা রেখেছিলো সে‌।তবে যেই বাড়িতে যাওয়ার কথা ,সেখান টা খুঁজে বের করতে পারছিলো না অভিক।আকাশে আজ উঠেছে রাগী তেজি সূর্য মামা ।যার তীক্ষ্ণ রোদের ঝলকানিতে ,আর ওনার উত্তাপতো গরমে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে উঠেছে অভিক।শরীরের জড়িয়ে ছিলো সাদা রঙের শার্ট। একদম পাতলা রঙ্গের হওয়াতে আর অতিরিক্ত ঘামের কারনে তার শরীরের ভাঁজ স্পষ্ট হচ্ছিল।তবে সে কোথায় মেয়ে মানুষ? তার যদি শরীর ঘামে এমন দেখা যায় তবে এতে কি তার লজ্জা পাওয়ার কথা ? নাহ সে পুরুষ মানুষ একটুও লজ্জা করবে না তার ।তবে মাঝ রাস্তায় হঠাৎ করে একজন মেয়ে এসে তাকে এমন বাক্য বলবে সেই টা তার কল্পনাতেও ছিলো না ,সব টা বাদ দিলেও অভিক নিজের গালের উপর হওয়া সে স্পর্শ কে কি ভুলতে পারবে ? হয়তো না !

মেঘনা সরে এসে নিজের বন্ধু মহলের দিকে যায়।প্রতিটা মানুষ তার দিকে হা করে চেয়ে আছে।মেঘনা সোজা নিজের বন্ধু মালিহার সামনে যায় ,হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে 

মেঘনা -:ডেয়ার ডান ,এবার আমাকে টাকা দে । শর্ত মোতাবেক আমি ওই ছেলেকে কিস করেছি তার সাথে ওকে হট বলে লজ্জায় ও ফেলেছি ! এবার দে আমার টাকা !

মালিহা গোল গোল‌ চোখে মেঘনা কে দেখছে।নিজের মাথায় এক হাত দিয়ে সে পাশ ফিরে চাইলো সাবরিনার দিকে ।সাবরিনা যে এতো সময় ধরে নিজের হাসি চেপে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করছিলো, এখন মালিহার তাকানোতে সে ফিক করে হেসে ফেলে ।হাসতে হাসতে মালিহা কে বলে

সাবরিনা -: আমি আগেই বলছি তোকে ।যে সবার সাথে পাঙ্গা নিলেও মেঘের সাথে নিস না । তুই জানিস না যে মেঘ একটি ডেয়ার গাল! তবুও ওকে এমন ডেয়ার দিয়ে নিজের পাঁচ হাজার টাকা হারিয়ে ফেললি ! এবার বুঝ জ্বালা

সাবরিনা হাসতে লাগলো ,মালিহা অসহায় দৃষ্টি করে মেঘনার দিকে তাকায় ।মুখ টা কাঁদু ৺কাদু বানিয়ে এবার সে বলে 

মালিহা - দোস্ত আমার ভুল হয়ে গিয়েছে তোকে ডেয়ার টা দেওয়া ।তবে এখন আমার কাছে টাকা নেই কাল‌ দিবো কেমন ?

মেঘনা এটা শুনেই তেতে উঠল 

মেঘনা - কি বললি তুই? এই যখন ডেয়ার দিয়েছিলি তখন আমি বলছিলাম পরে কমপ্লিট করি ।সেই সময় আপনি বলেছিলেন যে নাহ নাহ এক্ষুনি করতে হবে ।নাহলে ভাববো তুই ভীতু তাই না ।

তখনি সাবরিনা তার সাথে তাল মিলিয়ে বলে 
সাবরিনা - দোস্ত তুই কি সব ভুলে গেছিস নাকি !আরে মনে কর ও তোরে এটাও তো বলছিলো ।তাও কিনা কড়া ভাবে ,যে এই রাস্তা দিয়ে প্রথম যেই ছেলে টা আসবে তাকেই কিস করতে হবে‌।

মেঘনা সাবরিনার কথায় মালিহার দিকে তাকায় ।মেঘনা সিদ্দিকী অতিরিক্ত দুষ্টু স্বভাব সে , মেঘনার সব দুষ্টুমির একটা সীমা থাকলেও আজকের ঘটনা তা ছিলো না ।মেঘনা কে নাকি স্কুলে ডেয়ার গার্ল বলা হতো ।আর সে তেমনি ,কঠিন কঠিন ডেয়ার সে কমপ্লিট করে ফেলে ।আর শর্ত মোতাবেক টাকা ও নিয়ে নেয় ।এই তো আজকের ঘটনা ,মেঘনা মালিহা আর সাবরিনা ছাদে বসে কথা বলছিলো ।এটা হলো সাবরিনাদের বাড়ি,প্রায় সময়ই এখান টায় তিনজন বান্ধবী বসে বসে আড্ডা দেয় আজ ও তার ব্যতিক্রম হচ্ছিল না । আড্ডা দেওয়ার মধ্যেই হঠাৎ করে মালিহা মেঘনা কে বলে 

মালিহা - মেঘ তোকে স্কুলে এবং কলেজে ডেয়ার গার্ল কেনো বলা হয় রে? 

মেঘনার জবার সাবরিনা দিলো ।

সাবরিনা দিলো - কেনো বলা হয় তুই জানিস না ! আরে মেঘ আজ অব্দি একটাও কঠিন ডেয়ার হেরে যায় নি ।সব ডেয়ার ডান করেছে , জানিস স্কুলে আমাদের একটা গনিত টিচার ছিলো ,বেটা অনেক বজ্জাত ছিলো ।ক্লাসে ঢুকেই সব সময়ই রাগা রাগী করতো ,জীবনেও ওর মুখে হাসি‌ ছিলো না ।এক বার ওই বেটাকে প্রপোজ করার ডেয়ার দেওয়া হল মেঘ কে ।আর জানি ও সেটা করেও দিলো আর তার সাথে একটা তথ্য ও পেলো ! 

মালিহা কৌতুহলী হয়ে বলে -কি তথ্য দোস্ত? 

সাবরিনা মেঘনা কে এক পলক দেখে নিলো ,মুখ টিপে হেসে সে বলে 

সাবরিনা - আমাদের স্কুলের সব থেকে রাগী গনিত স্যার কে যখন মেঘ প্রপোজ করল তখন জানতে পেলাম যে মনে মনে বেটা নাকি আমাদের মেঘ কে পছন্দ করে ।তাই তো আর কিছুই বলে নাই ! 

মালিহা আর সাবরিনা হাসতে আরম্ভ করল‌।মেঘনা তার দেখে দিলো এক ঝাড়ি তবে কাজ হলো না এতে ,দুই বান্দর হেসেই চলেছে এক নাগাড়ে। হঠাৎ হাসি থামিয়ে মালিহা বলে 

মালিহা - ওকে ওকে তোর যদি এতোই নাম কাম থাকে এই ডেয়ার কমপ্লিট করা নিয়ে তবে আমার একটা ডেয়ার ডান করে দেখা তো দেখি ! 

মেঘনা এক ভ্রু নাচিয়ে সন্দিহান গলায় জিজ্ঞেস করে 
মেঘনা - কেমন ডেয়ার !আর তার আগে বল এটা করলে তুই আমাকে কি দিবি ।

মালিহা - যা চাইবি তাই দিবো !

মেঘনা - ভেবে দেখিস কিন্তু 

মালিহা - দোস্ত আগে তুই শুনি তো ডেয়ার টা কি ?
মেঘনা বলে - বলিস পরে আগে দেনাপাওনার হিসেব তো শেষ করি !

মালিহা এবার বলে - দেখ মেঘ ,আগে শুনে নে ডেয়ার টা কি ।এমন যেনো না হয় যে তুই টাকা পয়সা সব ঠিক করলি আর পরে আমার ডেয়ার শুনে পা পিছিয়ে নিলি‌!

মালিহা হেসেই কথা টা বলেছিলো ।তবে মেঘনা তীক্ষ্ণ গলায় বলে 

মেঘনা - আজ অব্দি আমার কখনো কোনো ডেয়ার হারি নি ।আর যতো কঠিন হোক না কেনো আমার সেটা কমপ্লিট করেই ছাড়বো ! এবার বল কি করতে হবে !

মালিহা নড়েচড়ে বসল ।এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভাবল সে ।মাথায় একটা জিনিস আসতেই উৎফুল্ল হয়ে বলে 

মালিহা - ওই যে রাস্তা টা দেখছিস ? 

মেঘনা সাবরিনা দেখলো ,বাড়ির সামনেই দু'টো রাস্তা ।একটি ডান দিকে তো অপর টি বাম দিকে ।একি রাস্তার দুটি ভাগ মুলত,মেঘনা রাস্তা দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলে 

মেঘনা - তো! রাস্তা থেকে কি বালি তুলে এনে তোকে খাওয়াতে হবে নাকি ? 

মেঘনার এমন কথা শুনে মালিহা হতবাক।সাবরিনা হাসতে লাগলো ,সাবরিনা কিছু টা এমনি ছিলো ,সব সময়ই হেসে থাকত ।বলা যায় হাসি ওর প্রধান কাজ ।কারনে অকারণে সে হাসবেই হাসবে ।সাবরিনা কে ধমক লাগিয়ে দিলো মালিহা।

মালিহা-চুপ কর তো সাবু ! 

মেঘনার দিকে তাকিয়ে এবার বলে 

মালিহা - না রে দোস্ত আমি বাড়ি থেকে পেট ভরে খাবার খেয়ে এসেছি এখন এই বালি খেয়ে নিজের পেট ফাটাতে চাইছি না ।তো তুই এবার আমার কথা শুন ! 

মেঘনা মনোযোগী হলো তার কথায় ।মালিহা এবার বলে - 

মালিহা- দেখ এই রাস্তা দিয়ে প্রথম যে আসবে,সেটা ছেলে হোক কিংবা মেয়ে ! বুড়ো হোক কিংবা যুবক যাই হোক না কেনো তাকে গিয়ে তোকে লজ্জায় ফেলতে হবে।

মেঘনা - আরে আমি কি ওর জামাই লাগি নাকি ,যে তাকে কিছু একটা বলে লজ্জায় ফেলবো ?

মালিহার কথা শেষ হওয়ার আগেই মেঘনা খানিকটা চেঁচিয়ে বলে উঠে ।যা শুনে মালিহা বলে 

মালিহা - তুই আমার‌ পুরো কথা টা শুনবি তো আগে নাকি ? 

মেঘনা সোজা হয়ে বসল ,‌মালিহা এবার বলে 

মালিহা - তুই এমন কিছু একটা তাকে বলে লজ্জা দিবি ।আর লজ্জা কেটে উঠার আগেই সেই লোক টা কে তুই 

সাবরিনা আর মেঘনা এক সাথে বলে - কি ? 

মালিহা একটু থেমে যায় ,এবার সে সাহস জুগিয়ে বলে 
মালিহা - তুই তাকে কিস করবি 

মেঘনা + সাবরিনা - : হোয়াট ? 

মালিহার এমন ডেয়ারের কথা শুনে মেঘনা তার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ।মালিহা বোধহয় জানতো যে মেঘনা কাউকে কিস করতে রাজি হবে না তাই তো এমন ডেয়ার ইচ্ছে করে দিয়েছে ।সাবরিনা এবার মৃদু রেগে গিয়ে বলে 

সাবরিনা -: দেখ মালিহা তুই এমন ডেয়ার কেনো দিলি ? এটা একটা গেইম আর তুই ওকে অচেনা একটা মানুষ কে কিস করতে লাইক সিরিয়াসলি! আর তুই তো ওকে অন্য কিছু ও দিতে পারতি ,এটা কোন ধরনের ডেয়ার গেইম ! 

মালিহা এবার বলে - দেখ সাবু এখানে সিরিয়াস নেওয়ার কিছুই নেই ।এটা শুধু একটা গেইম আর আমি তো ওকে ডেয়ার ডান করার জন্য টাকা ও দিবো তাই না ।এখন বল মেঘ তুই কি আসলেই ডেয়ার গার্ল বলার যোগ্য!

মেঘনার দিকে তাকিয়ে কথা টা বলে মালিহা।এখন মেঘনা কে কিছু একটা বলতেই হবে কারন এবার ব্যপারটা তার সম্মানে এসে লেগেছে।তাই সে অন্য কিছু না বলেই সোজা ছাদ থেকে নেমে যায় ।মালিহা আর সাবরিনা ছাদ থেকে দেখছে মেঘনা কি করে ? মেঘনা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ল ।তার মাথায় কিছুই আসছে না সে কি বলবে বা কি করবে ।মেঘনা দুরু দুরু বুক নিয়ে একটু পর পর শুকনো ঢোক গিলছে।মনে মনে বিরবির করলো ভয়ার্ত মেঘনা 

মেঘনা -: না জানি কে আসবে ।যদি কোনো বুড়ো ভুরি যুক্ত লোক আসে ,তাহলে কি ওই বেটা রে কিস করতে হবে ? না মানি আমার জীবনের প্রথম কিস তাও কিনা একটা বুড়ো খাটাশ লোক কে করবো ? ছিঃ! নাহ নাহ মেঘ তোকে করতেই হবে ।কারন এবার তোর ডেয়ার গার্ল উপাধি নিয়ে টানাটানি পড়ছি ,করতেই হবে তোকে ।

মেঘনা থেমে থেমে গভীর শ্বাস নিচ্ছিলো,তখনি নজর পড়ল রাস্তার দিকে ।সাদা শার্ট পড়ে একটা যুবক এগিয়ে আসছে! মুখ চোখে বিরক্তির ছাপ । আশ পাশ দেখে কিছু একটার খোজ চালিয়ে যাচ্ছে সে ।মেঘনা কপাল কুঁচকে যুবক কে দেখছে‌। শরীরের শার্ট টা অতিরিক্ত ঘামের কারনে ভি৺জে লেপ্টে আছে দেহের সাথে ।যার ধারন শরীরর ভাঁজ স্পষ্ট হলো মেঘনার নিকট । দুষ্টু মেঘনার মাথায় আসলো কুটো বুদ্ধি, দুষ্টু হেসে সে এগিয়ে এলো ।লোক টা নিজের হাত ঘড়িতে সময় টা দেখে নিলো তখনি মেঘনা তার সামনে সে তা বললো ।ছেলেটা যাতে তাকে অন্য কিছু বলতে না পারে তাই সে নিজেকে তার সিনিয়র আপূ বলে দাবি করল ।অথচ মেঘনা জানেও না ছেলেটার আসলে কত বয়স !

বর্তমান —---

মালিহা পর পর মেঘনা কে অনুরোধ করছে আর বলছে 
মালিহা - মেঘ প্লিজ আমাকে যেতে দে । কথা দিচ্ছি আমি কাল তোর ডেয়ারের টাকা নিয়েই আসবো ! প্লিজ দোস্ত! 

মেঘনা আর সাবরিনা তার দিকে তাকিয়ে আছে ।সাবরিনা বলে -

না মেঘ ওর কথা শুনবি না ।ও কি করছে মনে নেই ? ওরে এখন ধরে ইচ্ছে মতো কেলানি দে দেখবি এমনি এমনি টাকা বের হবে ! 

মালিহা অসহায় গলায় বলে‌

মালিহা - দোস্ত প্লিজ ! অনন্ত তুই তো আমার সাপোর্টে থাক ! 

এতো কিছুর মাঝে কোনো ধ্যান নেই মেঘনার । কিছু একটা ভাবতে সে মগ্ন,মালিহা যে তার কানের কাছে সেই কখন থেকে প্যান প্যান করেই যাচ্ছে এতে একটুও পাত্তা দিলো না সে । বরং শান্ত গলায় বলে - 

মেঘনা -: কাল টাকা নিয়ে আসিস !

ছোট করে বলেই সে ছাদ থেকে নেমে যেতে নেয় তখনি সাবরিনা বলে 

সাবরিনা- : কোথায় যাচ্ছিস ? 

মেঘনা -: বাড়িতে , আম্মু আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেছে ! 

সাবরিনা - ; কেনো ? কোনো মেহমান আসবে বুঝি ? 

মেঘনা একটু হেসে বলে -: হ্যা ,আপু কে দেখতে আমার ফুপুর ছেলে আসবে আজ ! 

তখনি মালিহা বলে -: দেখিস আবার আপু কে দেখতে এসে তোকে নাকি পছন্দ করে বিয়ে করে নেয় তোর কাজিন !




মেঘনা মালিহার কথা শুনে ওকে বলে 

মেঘনা -: এতো পট পট করিও না পিও ,টাকা জমিয়ে কাল নিয়ে এসো ।নাহলে একটাও চুল আস্তো রাখিবো না বলে দিলাম ।আমার জীবনের প্রথম চুমু ছিলো ওটা ! 

সাবরিনা এবার বলে - যেটা তুই ওই যুবক কে উপহার দিয়েছিস ! 

মেঘনা টেরা চোখে তাকাতেই ,সাবরিনা চুপ করে যায় ।বিদায় নিয়ে সে এবার পা বারায় নিজের বাড়ির দিকে ।একটু দূরেই মেঘনাদের বাড়ি ,মনের আনন্দে সে যাচ্ছে বাড়ির দিকে ।আজ মেঘনার বড় বোন সূচনা কে পাএ পক্ষ দেখতে আসবে।আর পাএ হলো মেঘনার ফুপুর ছেলে,যদিও বিয়ে টা পারিবারিক ভাবেই হচ্ছে তবে সূচনা নিজেই পছন্দ করেছেন পাএ কে ।মেঘনা এখনো দেখে নি নিজের হবু দুলাভাই কে ,তাই তো বাড়িতে তাড়াতাড়ি করে যাচ্ছে সে ।মনে মনে গান গুন গুন করছে সে 

মেঘনা -: আজ কি আনন্দ আকাশে বাতাসে…

বাড়ি ফিরতেই মায়ের এক থালা বকা ফ্রি তে শুনতে হলো মেঘনার।তানিয়া বেগম কড়া গলায় শাসন করে বলছেন 

তানিয়া বেগম -: আজ বাড়িতে মেহমান আসছে আর এই মেয়েটা তিরিং তিরিং করে মহলা ঘুরে বেড়াচ্ছে ! এই তোর বোন কে আজ দেখতে আসবে আর তুই কোনো কাজ না করেই বাহিরে গিয়েছিলি ? কেনো আমাকে বল‌তো ? 

মেঘনা কে আরো কয়েক টা কথা শুনিয়ে দিলেন তানিয়া বেগম তবে তাতে পাত্তা দেয় কে ? মেঘনা নাচতে নাচতে নিজের রুমে এসে পড়ল ।আয়নার সামনে বসে আছে সূচনা ,শরীরে জড়িয়ে রেখে লাল একটা কামিজ। অসম্ভব সুন্দরী লাগছে সূচনা কে ,এটা বলা চলে যে মেঘনার থেকে বেশি সুন্দরী হলো সূচনা ।মন খারাপ করে আয়নার সামনে সূচনা কে বসে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল মেঘনা 

মেঘনা -: কিরে মনমরা হয়ে বসে আছিস কেনো ? এমন মনে হচ্ছে যে তোর বর অন্য মেয়ে হাত ধরে পালিয়েছে ! নাকি তোর বর কে আমি চুরি করে নিয়েছি বলতো আপু ? 

মেঘনার উপস্থিতি টের পেয়ে মধ ভালো করার অভিয়ন করল সূচনা ।মেঘনা এগিয়ে এসে পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরল ।সূচনার গালের সাথে গাল রেখে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে 

মেঘনা -: দেখতো আমার বনু টারে আজ একদম পুতুল লাগছে ।ওয়াও নাজার না লাগে ,থু থু থু !

নাটকিও ভঙ্গিতে বলে মেঘনা ।সূচনা তার এমন কথা বলার ভঙ্গি দেখে খিল‌খিল করে হেসে দিলো।মেঘনা দেখলো সেই হাসি , মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকল কিছু সময় ।সূচনা তার দেখে ইশারায় বলে

সূচনা ;- কি হয়েছে ? কি দেখছিস ?

মেঘনা চোখ নামিয়ে নেয় ,সূচনা তার দেখে নিজের গলা হতে মেঘনা কে ছাড়িয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।সে মন খারাপ করে মাথা নত করে আছে!সূচনা তার দেখে হাত দিয়ে মেঘনার মুখ টা নিজের সামনাসামনি করল . নরম গলায় বলে 

সূচনা‌-: কি হয়েছে মেঘ ? মন খারাপ কেনো ?

মেঘনা নত মস্তিষ্কে দাঁড়িয়ে রইল,যা দেখে সূচনার আর বুঝতে বাকি রইল না যে তার বোন টা কান্না করছে ।মেঘনা কান্না করলে সর্বদা মাথা নত করে রাখে কখনো উচু করে নিজের চোখের পানি দেখাবে না সে ।নিজের দুর্বলতা কখনো প্রকাশ করতে ইচ্ছুক নয় মেঘনা ।সূচনা মেঘনার মাথা টা উঁচু করে নিজের মুখোমুখি করল ,চোখে চোখ পড়তেই সে চমকে বলে 

সূচনা-: মেঘ তুই কান্না করিস ? 

মেঘনার ছলছল চোখ দেখে আরো অস্থির হলো সূচনার মন ,বেকুল গলায় বলে 

সূচনা -: কেনো কি হয়েছে মেঘ ? আমাকে বল ! কেউ বকা দিয়েছে ? কোথায় ব্যথা পেয়েছিস ? এই মাএ তো ঠিক ছিলি তুই! তাহলে হঠাৎ করে কি হলো মেঘ ? 

মেঘনা কে চুপ থাকতে দেখে ফের একি গলায় বলে সূচনা 

সূচনা -: কি হলো মেঘ কথা বলছিস না কেনো ? বল না ! 

মেঘনা এবার সূচনা কে জড়িয়ে ধরল । কান্না গুলো কে চেপে রাখার চেষ্টা করতে করতে সে বলে 

মেঘনা -: আপু তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি ? আমি তোকে ছাড়া কি করে থাকবো বলে তো ? এই রুমে ঘুমানো‌ নিয়ে কার সাথে ঝগড়া করবো ? তুই তো চলে গিয়ে আমাকে ভুলেই যাবি তাই না ! যাহ তোর সাথে কথা নেই ?

মেঘনা গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে মুখ করে দাড়ায় ।সূচনা তার দেখে মুখ টিপে হাসল ,এবার সে এসে মেঘনার গাল টেনে দিয়ে বলে 

সূচনা -: ওরে বাবারে আমাকে যে মেঘনা রানী এতো মিস করবে সেটা তো আমি জানতাম না ।এখন মেঘ রানীর মন ভালো করতে কি করা যায় ?

গালে এক আঙ্গুল লাগিয়ে ভাবুক হলো সূচনা । কিছু সময় পর চমকে উঠার মতো করে সে চকচকে মুখ নিয়ে বলে 

সূচনা -: একটা কাজ করা যায় কিন্তু মেঘ !

মেঘনা মুখ ঘুরিয়ে বলে .

মেঘনা -: কি কাজ ?

সূচনা -: আমি এই বিয়ে টা করবো না তাহলেই তো হয় 

মেঘনা চোখ ছোট ছোট করে বলে 

মেঘনা -: কাল অব্দি বিয়ে করার জন্য পাগল ছিলি আর আজ আমার জন্য বিয়ে করবি না বলে দিলি ? দেখ তোর হবু বর যদি কথা টা শুনে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় তখন তো সবাই আমাকে জেলে পুরে দিবে ।না না বাবা থাক ,এর থেকে ভালো তুই বিয়ে কর ।আর হ্যা তুই চলে গেলে কিন্তু তোর সব কসমেটিস আমার হয়ে যাবে 

সূচনা চোখ পাকিয়ে বলে 

সূচনা -: এই জীবনে এই আশা করো না পিও ! একদম মেরে ফেলবো 

মেঘনা - : তুই মারবি আর আমি চুপ করে থাকবো নাকি ? 

তানিয়া বেগম - এই পাএ পক্ষ এসে পড়েছে ,মেঘ সূচনা কে নিয়ে আস তো ! 

তানিয়া বেগম ঘরে প্রবেশ করতে করতে কথা টা বলেন ।মেঘনা লাফিয়ে উঠল ,পাএ পক্ষ এসেছে শুনে ।যদিও পাএ তার ফুপির ছেলে ,সবটাই চেনা এবং জানা তাদের ।এর পর ও মনের কোণে আনন্দ লেগেই আছে ।তানিয়া বেগম সূচনা কে দেখলেন ,এগিয়ে এসে মেয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে 

তানিয়া বেগম -: অসম্ভব সুন্দর লাগছে আমার মা কে আজ 

যা শুনে মেঘনা গাল ফুলিয়ে বলে 

মেঘনা -: হ্যা হ্যা সূচনাই তো আপনার মেয়ে আমি কি আর কারো কিছু হই !

সূচনা খোঁচা মেরে বলে ।

সূচনা -: তুই কেনো আমার মায়ের মেয়ে হবি ? মেয়ে তো আমি ! 

মেঘনা বাঁকা চোখে তাকাতেই তাকিয়ে বেগম তাড়া দিলেন ।

তানিয়া বেগম -: মেঘ সূচি কে নিয়ে একটু পরেই বাহিরে আসবি ।আর খবরদার যদি কোনো দুষ্টুমি করেছো তো ! তুমি তো জানোই তোমার ফুফুর শাশুড়ি কতটা কড়া ।দেখা যাবে তুমি কিছু করলে যার কারনে তোমার ফুপি কে কথা শুনতে হলো ।আর তোমার আপু ও সেই বাড়ির বউ হতে যাচ্ছে,মনে রেখো !

মেঘনা শুধু মাথা নাড়ায় ,বেশি কিছু এখন সে বললো না ।তবে নিজের খেলা সে ঠিকই দেখিয়ে দিবে ।তানিয়া বেগম চলে যান ,মেঘনা সূচনার কানের‌ কাছে এসে বলে.

মেঘনা -: আপু তোর বিয়ে পর ওই বুড়ি কে আছা মতো জ্বালাতন করবি বলে দিলাম ।এতো দিন ধরে আমাদের ফুপির জীবন টা ভাজা ভাজা করে দিয়েছে ,এবার নাহয় তুই ওর জীবন টা তেজ পাতা করে দিবি !

সূচনা - ; দেখ মেঘ ওনি আমাদের গুরু জন ।ওনার সম্পর্কে এমন কথা বলতে নেই ! 

মেঘনা মুখ ছিটকে বলে ।

মেঘনা -: গুরু জন নাকি কচু ! বুড়ি অনেক শয়তান।দেখো না সব সময়ই কেমন টাকার গরম দেখায় !

মেঘনা মেঘনা ?

বাহির থেকে ডাক পড়তেই মেঘনা ছুটে যায় ।ওড়না টা সুন্দর করে মাথায় দিয়ে দিলো ।কিচেন রুমে আসতেই তানিয়া বেগম বলেন -

তানিয়া বেগম-: মেঘ তোর ফুপি কে একটু ডেকে নিয়ে আসত তো দেখি ! 

মেঘনা আর কথা না বলে পা বাড়ায় ডাইনিং রুমের দিকে ।সোফায় সবাই বসে আছে , শাশুড়ি সেলিনার সাথে বসে আছেন ফুপি।মেঘনা তাকে দেখে এগিয়ে আসল ,ফুপি করে কে উদ্দেশ্য করে বলে -

ফুপি তোমাকে আম্মু ডাকছে !

রেহানা বেগম উঠে দাড়ায় ।মেঘনা চলে যেতে নিবে তখনি থমকে দাঁড়ায় সে ।চোখের ভুল দেখেছে ভেবেই ফিরে দাড়ায়ে দেখলো সে ,তাতেই কাল হলো মেঘনার জন্য।চোখ বড় বড় হয়ে এসেছে মুহূর্তেই , চোয়াল ঝুলে হা করে তাকিয়ে থাকলো সামনের সোফায় গম্ভীর মুখ করে বসে থাকা ছেলেটার দিকে । অবাকের শেষ পর্যন্ত এসে টক টক শব্দ করলো তার মস্তিষ্ক ,সাথে কানে শ্রবন হতে লাগলো একটাই বানী ।

মেঘনা -: এই ছেলে টা এখানে কি করছে ? 

গম্ভীর মুখে ফোনের স্ক্রিনে দিকে তাকিয়ে আছে অভিক ।চোখ মুখ কুঁচকে আছে ,বুঝাই যাচ্ছে সে বড্ড বিরক্ত বোধ করছে ।মেঘনা কত সময় দাঁড়িয়ে থেকে অভিক কে দেখল ।তবে অনিকের কোনো ধ্যান নেই ,তাকে যে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে কেউ একজন সে তার অজানা । ড্যাবড্যাব করে দেখছে মেঘনা ,মনে মনে বলে 

মেঘনা -: এটা কে ? আর আমাদের বাড়িতে কি করে এলো ? বিচার দিতে নিশ্চিত এসেছে ?‌তবে ও তো আমাকে চিনে না তাহলে ? 

রেহানা বেগম এসে মেঘনার পেছনে দাড়ায় ,অভিকের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে মেঘ কে ফিসফিস করে বলে 

রেহানা বেগম -: কিরে মা ,আমার ছোট ছেলে টা কে কি তোর মনে ধরল শেষমেশ? 

ছোট ছেলে ! দুটো বাক্য মস্তিষ্কে তবলা বাজানো মতো হয়ে উঠলো ।চোখ বড় বড় করৈ বিরবির করল 
মেঘনা -: তবে এই জিনিয়ার টা ফুপির বিদেশী ছেলে ! 

কথা টা বলেই এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটে এলো সে ।কেউ একজন তার পাশ কেটে দৌড়ে গিয়েছে অনুভব হতেই চোখ তুলে তাকায় অভিক ।পাশে তাকাতেই নিজের মায়ের মুখ দেখলো সে ।কোনো কথা না বলে ফোনে মনোযোগ বসালো ।এখানে থাকতে তার একটুও ভালো লাগছে না‌ তবে মায়ের কথায় চুপচাপ বসে আছে সে ।নাহলে আজকের কান্ডে তার মাথা এমনিতেই গরম হয়ে আছে ।মনে মনে শুধু বলে চলছে সে 

অভিক -: শুধু একবার ওই মেয়েটা কে পাই তার পর বুঝিয়ে দিবো আমি সিনিয়র নাকি জুনিয়র ভাই , অসভ্য মেয়ে একটা ! 

রুমে এসে দরজা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে মেঘনা ।সূচনা উঠে এসে মেঘনা কে হাঁপাতে দেখে বলে 

সূচনা -: কি হয়েছে মেঘ ,সব ঠিকঠাক তো ? 

মেঘনা - যমের ভয়ে পালাই যতো ,যম তো মোর বাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে ! 

সূচনা বুঝল না কিছু তাই না বুঝে বলে 

সূচনা -: মানে ? 

মেঘনা বলে ।
মেঘনা -: তোর যে একটা দেবর আছে সেটা আমাকে আগে বলছিস নি কেনো ?

সূচনা কপাল কুঁচকে নেয় ,ভাবুক হয়ে বলে ।

সূচনা -: দেবর আমার ? হ্যা আছে তো তবে তুই জানিস না ! 

মেঘনা এবার বলে ।
মেঘনা -; আপুরে আমাকে ক্ষমা করে দে!

সূচনা কপাল কুঁচকে বলে .

সূচনা-: ক্ষমা করবো কিন্তু কেনো ? কি করেছিস তুই? 

মেঘনা মিনমিন করল ,সূচনা সন্দিহান গলায় বলে 

সূচনা -: কিরে কথা বলছিস না কেনো ? এবার কি কান্ড ঘটিয়েছিস তুই!

মেঘনা চুপ,একদম চুপ ।যা দেখে সূচনা বলে 

সূচনা - : কি হলো মেঘ কথা বল ? দেখ আমার অস্থির লাগছে তো !

মেঘনা -; তোর বিয়ে টা যদি ভেংগে যায় তবে আমাকে ক্ষমা করে দিস 

সূচনা -: আমার বিয়ে ভাংগবে মানে ? কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছিস তুই !মাথা ঠিক আছে তো তোর ?

মেঘনা সূচনার হাত ধরে ওকে টেনে বিছানার উপর বসিয়ে দেয় ।মাথা নত করে মিনমিন করে বলে।

মেঘনা -: আসলে আপু আমি একটা কাজ করে ফেলছি 

সূচনা -: কি কাজ ?

কৌতুহলী হয়ে বলে সূচনা ।মেঘনা আশেপাশে তাকায় ,ভয়ে শুকনো গিলে বলে 

মেঘনা -: আসল আমি ,আমার ওকে আমি ! 

মেঘনা কে ধমক দেয় সূচনা !

সূচনা -: কি আমি ওকে বলছিস ? সোজাসুজি বল নাহলে বলার দরকার নেই !

মেঘনা -: আমি ওকে কিস করেছি ,তাও মাঝ রাস্তায়! 

চোখ বন্ধ করে এক দম বলে মেঘনা ।মুখ হা হয়ে যায় সূচনার ।পিট পিট করে তাকাতেই সূচনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে 

সূচনা -: দেখ মেঘ বল তুই মিথ্যা কথা বলছিস ! আমার সাথে মজা করছিস ! 

মেঘনা অসহায় গলায় বলে -: না আপু আমি সত্যি বলছি ।আমি ওকে আজ কেই কিস করছি !

সূচনা মাথায় হাত দিয়ে বলে ।

সূচনা -; তুই এটা কি করে করতে পারলি মেঘ ? ও আমার হবু বর,আর তুই ওকে ! নিজের বোনের এতো বড় ক্ষতি করতে পারলি তুই? 

ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় মেঘনা ,সে বুঝলো না এখানে সূচনার হবু বরের কথা আসলো কোথা থেকে। কনফিউজ হয়ে বলে 

মেঘনা -: এখানে ভাইয়ার কথা আসছে কোথা থেকে?

সূচনা থামল এবার ,একটু ভাবল তার পর বলে 

সূচনা -: এক মিনিট মেঘ , তুই আমাকে পরিস্কার করে বল তো তুই কাকে কিস করেছিস ?

মেঘনা হাত কচলাতে লাগলো ,সূচনা তার দেখে ধমক দিয়ে বলে 

সূচনা -: এই এমন করছিস কেনো ? কথা কাঁধে যায় না নাকি ? বল সব বল ।আমার টেনশন লাগছে তো নাকি ! 

মেঘনা‌-: ফুপির ছোট ছেলে কে ! যেটা বিদেশে থাকতো সেটা কে ! 

নিজের হবু বর এর কথা মেঘনা বলে নি বলে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ল সূচনা ।তবে পরক্ষনেই চোখ কপালে উঠে যায় তার ।অবাক গলায় বলে 

সূচনা-: বোইন তুই কি বললি ? তুই কাকে কিস করেছিস? 

মেঘনা অপরাধীদের মতো মুখ করে বসে রইল ।সূচনা কত সময় চেয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলো ।মেঘনার এক বাহু জড়িয়ে ধরে‌ বলে 

সূচনা -: ডোন্ট বারি সিস ,ভয়ে কিছু নেই ।আমার বিয়ে ভাঙছে না ওকে । আচ্ছা কি করে হলো এই সব বল তো আমায় শুরু থেকে!

মেঘনা সূচনার চোখে চোখ রাখল ।মিনমিন করতে করতে সব টা বললো তাকে ।সব টা শুনার পর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে সূচনা ।মেঘনা তার হাসি দেখে গাল ফুলিয়ে রাখল ।সূচনা হাসতে হাসতে বলে 

সূচনা -: লাইক সিরিয়াসলি বোন , তুই ওকে জনিয়র হট ছেলে বলছিস ? তুই জানিস ও তোর থেকে গুনে গুনে পাঁচ বছরের বড় ! 

চোখ বড় বড় করে তাকায় মেঘনা ,মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো শব্দ 

মেঘনা -: এ্য্্যা!

সূচান -: এ্যাঁ নয় বোনু বলো হ্যা ! অভিক এমবিএ কমপ্লিট করছে লন্ডনে ।আর তুই তাকে ? 

সূচনা ফের হাসতে আরম্ভ করল ।মেঘনা গাল ফুলিয়ে নিলো , কিন্তু কানে বাজলো অভিক’ এই নাম টা ।মনে মনে কয়েক বার সেই নাম টা কে বললো সে ।সব কিছু কে তুচ্ছ করে দিয়ে যদি ছেলে টা কে নিয়ে ভাবা হয় তবে .

মেঘনা -: এতো সুন্দর ছেলে ? 


#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৩
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

        ,❌ অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌

পাট ৩

মেঘনা নিজের কথার মাঝেই লজ্জা পেলো , হঠাৎ করেই এই মুচকি হাসির কারন সে জানে না ।জানবে কি করে সে কিছু করেছে নাকি ।হ্যা কিছুই করে নি মেঘনা , ছেলেটা যদি তাকে দেখে কিছু বলে তবে সে সোজাসুজি বলে দিবে 

মেঘনা -: আপনি যাকে দেখেছেন সে আমি নয় ।আমি হতেই পারি না ,আমি কত ভদ্র একটা মেয়ে সেটা কি আপনি জানেন ? 

মেঘনা নিজের মনে মনে কথা গুলো সাজিয়ে নিচ্ছিল ,তখনি তানিয়া বেগম সূচনা কে নিয়ে আসতে বলে ।এখন সূচনা থেকে বেশি লজ্জা পাচ্ছে মেঘনা ।সব তার পরিচিত মুখ তবে একটা ছাড়া , নতুন ভাবে দেখছে সে তাকে ।সূচনা কে নিয়ে বসার ঘরের দিকে পা বাড়ায় মেঘনা ।চোখ তুলে একবার গম্ভীর মুখ করে বসে থাকা লোক টা কে দেখলো সে ,এখনো ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে অভিক ।সূচনা সবাই কে সালাম দেয় ,সালাম শুনে অভিক চোখ তুলে তাকায় ।প্রথম নজর সূচনার উপর পড়ে ,সবাই সালামের জবাব দিলো ।অভিকের দৃষ্টি হঠাৎ করেই পড়ল পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে ।এক বার দেখে চোখ নামিয়ে নিলো , কিন্তু কয়েক মিনিট পর আবারো তাকায় সে ।চোখ বড় বড় করে মেঘনা কে দেখছে অভিক । অবিশ্বাস্য গলায় বলে 

অভিক -: এই ,এই মেয়ে টা এখানে কি করে ? 

চোখ বড় বড় করে দেখছে সে ,আজ দুপুরে সব কথা তার মনে পড়ে যায় ।রাগ বিরক্ত নিয়ে দাতে দাঁত চেপে চুপ চাপ বসে রইল অভিক ।মেঘনা একটু আড়চোখে অভিকের দিকে তাকায় ।সাথে সাথে চোখাচোখি হয় দুজনের ,চোখ দিয়েই যেনো অভিক খেয়ে ফেলবে মেঘনা কে ।মেঘনা মনে মনে দোয়া দরুদ পড়তে লাগলো ,

মেঘনা -: ও আল্লাহ, এই বেটা যেনো আম্মু কে কিছু না বলে ।যদি বলে দেয় তাহলে তো আমি শেষ ? খুন্তি দিয়ে মারবে আমায় । ইশ কোনো দুঃখে যে আমি ডেয়ার নিয়েছিলাম ! এখন ঠেলা সামলাও মেঘ ! 

নিজেকে মনে মনে বকা দিচ্ছে ,জুসের ট্রে নিয়ে সবাই কে দিলো ।এবার পাল্লা অভিকের দিকে যাওয়ার ,মেঘনা একটু বোকা হেসে তার সামনে যায় ।অভিক ও তার দিকে তাকিয়ে আছে ,জুসের ট্রে বারিয়ে মেকি হেসে বলে 

মেঘনা -: এই নিন ভাইয়া !

অভিক চোখ পিটপিট করে বলে।

অভিক -: ভাইয়া ? তবে আমি তো আপনার জুনিয়র আপু তাই না ! আপনি আমার সিনিয়র আর আপনার প্যারা ও সামলাতে হবে ।আর তখন যেনো কি বলছিলেন আমায় ? 

সবার আড়ালে কথা বলছে অভিক ,বড়রা নিজেদের কথার মাঝে ব্যস্ত থাকার কারনে অভিকের কথা শুনছে না ।মেঘনা ভয় পেয়ে গেলো ও নিজের সামলে নেয় ,মেকি হাসি দিয়ে বলে ।

মেঘনা -: কি সব বলছেন ভাইয়া ?আপনার সাথে তো আমার প্রথম বার দেখা হলো ? আর তখন মানে ? কখন ভাইয়া ? 

অভিক মেঘনার চালিকি ধরে ফেলেছে , কিন্তু সে কিছু বললো না তাতে । বরং একটু হেসে মেঘনার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে 

অভিক -: ডোন্ট কল মি ব্রাদার ! জাস্ট সেহ হট বেবি ? 

মেঘনা সরে দাঁড়ায় অভিক থেকে।অভিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল মেঘনা কে ।মেঘনার এবার ভয়ে হাত পা টানটান হয়ে যায় ,শুকনো ঢোক গিলে তাকায় অভিকের দিকে ।সেও তার দিকেই চেয়ে আছে যার কারনে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে মেঘনা কে ।অভিক এবার নিজের নজর ঘুরিয়ে রেহানা বেগম কে বলে

অভিক -: মা এই মেয়েটা কে ? 

রেহানা বেগম দেখল অভিক কে ।মেঘনা কে নিজের কাছে ডেকে এনে বসিয়ে বলেন 

রেহানা বেগম -: ওকে তুমি চিনলে না অভিক ! আরে ও তোমার মামার ছোট মেয়ে মেঘনা ।আমাদের মেঘ !

অভিক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ,সেই দৃষ্টির সম্মুখীন হতেই কান্না পেলো মেঘনার ।এতো টা ভয় ডর তার ডেয়ার ডান করার সময় ও লাগে নি তবে এখন‌ লাগছে ।অভিকের এমন বাজ পাখির ন্যায় দৃষ্টি তাকে কঠিন বিবৃতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।মেঘনা শুকনো ঢোক গিলে রেহানা বেগমের কথা শুনলেন ।

রেহানা বেগম -: মেঘ ,এটা হচ্ছে তোমার অভিক ভাইয়া ।আমার ছোট ছেলে! ওর কথা বলছিলাম আমি তোমাকে মনে আছে ? 

উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো মেঘনা ।যার অর্থ তার মনে আছে ,অভিক কে মেঘনার দিকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেলিনা বেগম বলেন ।

সেলিনা বেগম -: কি হয়েছে দাদুভাই ,ওকে এমন করে কি দেখছো ? 

অভিক -: দেখছি যে ওর বয়স টা কত ? 

শান্ত নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কথা বললেই সে ফের তাকায় মেঘনার দিকে ।মেঘনা জানে কেনো অভিক এই কথা জিজ্ঞেস করেছে । রাস্তায় তাকে জুনিয়র বলাতে সে ক্ষিপ্ত হয়েছে বোধ হয় ।অভিকের কথার জবাব দিলো রেহানা বেগম 

রেহানা বেগম -: আরে বেশি বয়স না আমাদের তন্নীর সমাবয়সী । তন্নী আর ও দুই দিনের ছোট বড় ! 

অভিক বিরতির করল -: মাএ দুই দিনের ছোট-বড়! আর আমার সিনিয়র আপু বাহ ! 

কথা টা শ্রবন হতেই অভিকের দিকে তাকায় মেঘনা । ভীতু তার দৃষ্টি ভঙ্গি,যা হাসির কারন হলো অভিকের।পাশে খোঁচা মারলো নিজের ভাই অনিক কে ।অনিক যে এতো সময় ধরে লজ্জায় রাঙা হয়ে মাথা নত করে বসে ছিলো ।কারন তার হবু বউ তার ঠিক সামনের সোফায় বসে আছে ।একটু পর পর অনিক মাথা তুলে সূচনা কে দেখছে ।আর মুচকি মুচকি হাসছে ,অভিক খোঁচা মেরে বলে 

অভিক -: ভাই তুমি বললে না তো যে তোমার এতো দুষ্টু একটা শালিকা ও আছে !

কপাল কুঁচকে অভিকের দিকে তাকায় অনিক।পাশে মেঘনা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে হাসল ,মেঘনা ও মেকি হাসি দিলো ।অভিকের দিকে তাকিয়ে বলে ।

অনিক -: এখানে বলার কি আছে ? তুই জানিস না মামার ছোট মেয়ে কথা ?

অভিক -: জানি তো যে আমার মামাতো ছোট বোন আছে‌।তবে এটা তো এখন আর ছোট নেই ?

অনিক সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় ,অভিক চোখ টিপ দিতেই সে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় । কৌতুহলী হয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে .

অনিক -: আর ইউ সিরিয়াস? 

অভিক তার মতো করেই বলে ।

অভিক -: নিশ্চিত 

অনিক -: পুরোপুরি?

অভিক -; হাজার শতাংশ! 

অনিক হাসল ,অভিক পাশ‌ ফিরে একবার মেঘনা কে দেখল ।ভয়ে নীল পড়ে গিয়েছে মেয়েটার মুখ। হঠাৎ করেই অভিকের মাথায় আরো একটা বুদ্ধি এলো ,সে দুষ্টু হেসে ফিসফিস করে বলে - 

হেই সিনিয়র আপুই! জানো তুমি না বললে তো আমি জানতামই না যে আমি কতটা হট ! 

মেঘনার সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠল , ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে শীরদ্বারা দিয়ে ।শুকনো ঢোক গিলে পাশ‌ ফিরে অভিক কে দেখল ।তাকাতেই চোখ টিপ দিলো অভিক ,মেঘনা এবার ভয় ভুলে রাগ করল ।কারন সে নিশ্চিত অভিক কাউকে কিছুই বলবে না ।বলার হলে এতো ক্ষনে বলে ফেলতো ,মেঘনা মনে মনে বলে ।

মেঘনা -: ওরে বেটা আমার সাথে ফাজলামি করা ? চিনিস আমায় আমি কে ? একদম বুঝিয়ে দিবো কে আমি ! এতো সময় আমি হুদাই ভয় পাচ্ছিলাম।এবার বুঝিয়ে দিবো আমি কি !

মেঘনা সরে এলো ।বড়রা মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করতে চাইলেন ।সূচনা আর অনিক কে আলাদা কথা বলার জন্য পাঠানো হলো ।সূচনা আর অনিক ছাদের গেলো ।মেঘনা তো কম যায় না সেও কুটো বুদ্ধি নিয়ে পা টিপে টিপে ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল ।কান পেতে শুনতে চাইলো কি বলছে তারা , কিন্তু ঠিকঠাক ভাবে শুনতে পারছে না বলেই সে কান টা পেতে দিলো ।গভীর মনোযোগ নিয়ে সে শুনছে ,তখনি কেউ একজন বলে 

অভিক -: ছিঃ ছিঃ সিনিয়র আপু ! এমন করে কারো কথা শুনো ঠিক নয় ! আপনি আমার সিনিয়র হয়ে যদি এমন কাজ করেন তবে আমার জুনিয়র কি করবো !

কানের কাছে এমন ফিসফিস শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় মেঘনা। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দু'জন একে অপরের মাথার সাথে বাড়ির খেলো ।মেঘনা কপালে হাত দিয়ে আহ’ শব্দ করল ।অভিক তা দেখে একটু হেসে‌ আবারো বলে 

অভিক -: কি হলো সিনিয়র আপু ,আপনি না আমাকে জ্বালাতন করবেন বলছেন এখন কি হলো ? 

মেঘনা এবার বলে ।মেঘনা -: আরে আপনি তো আছা লোক একজন ? সেই কখন থেকে আমাকে সিনিয়র আপু বলছেন ।আমি আপনার কোন জন্মের সিনিয়র আপু বলেন তো ভাইয়া ?

অভিক চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ,যা দেখে মেঘনা একটা শুকনো ঢোক গিলে ।অভিক একটু হেসে বলে 

অভিক -: সত্যি ভাইয়া বলেন আপনি আমাকে ? কিন্তু তখন যেনো কি বলছিলেন ! উহু উহু হ্যা মনে পড়েছে ,

মেঘনার দিকে একটু ঝুঁকে এলো অভিক ,মেঘনা নিজেকে দেওয়ালের সাথে চেপে নিলো ।জীবনে প্রথম বারের মতো কোনো পুরুষ তার এতোটা কাছে ।একে অপরের নিঃশ্বাস আছরে পড়ছে মুখের উপর । উষ্ণ গরম নিঃশ্বাস যেনো মাতাল করার ন্যায় ,মেঘনার গলা শুকিয়ে এলো ।ভয়ে রিতিমত ঘাম ছুটছে তার ,কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়তেই তা নজর দিলো অভিক ।একটু লুকিয়ে হাসল সে ।মেঘনার দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলে‌

অভিক -: আমি এতো বেশি হট তা তো আমি জানতামই না সিনিয়র আপু ।দেখেন না আমার গরমের কারনে আপনার শরীর থেকে ঘাম ঝরছে! উফ কি হট তাই না ! 

মেঘনা -: ছিঃ! আপনি কি বাজে !

অভিক -: আমি বাজে তাই না ।আর মাঝ রাস্তায় আমাকে কিস যে করেছে সে শাধু ঠিক আপনার মতো তাই না ম্যাডাম! 

দাঁতে দাঁত চেপে কথা কে বলেছে অভিক ।এক হাত তার দেওয়ালে ভর দিয়ে সে মেঘনার দিকে ঝুঁকে আছে ।এতো সময় ধরে শান্ত অভিক এবার চেতে উঠেছে ।রাগে সে কটমট করতে করতে বলে 

অভিক -: যে মেয়ে মাঝ রাস্তায় ছেলেদের ধরে কিস করতে পারে সে নিশ্চিত দুধে ধোয়া তুলসী পাতা তাই না ।আর সেই তুলশি পাতা টা হলেন আপনি তাই না ! 

দাঁতে দাঁত পিষে বলা কথা টা শুনে হার্ট অ্যাটাক করার উপক্রম হলো মেঘনা ।এখন বুঝতে পারছে সে কত বড় একটা ভুল করেছে ।ভয়ের চটে নাকি কান্না করে বসে কে জানে ,মেঘনা যতোই দুষ্টুমি করুক না কেনো ।ও এতো টাও কঠিন নয় ,প্রচুর নরম মনে মেয়ে ,তাই তো অভিকের সামান্য ধমকের কান্না পেয়ে যাচ্ছে ওর । নিজেকে অভিকের সামনে শক্ত করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে 

মেঘনা -: ভাইয়া আসলে সে টা একটা গেইম ছিলো !

অভিক কপাল কুঁচকে বলে ।

অভিক -; কাউকে চুমু খাওয়া তোমার জন্য একটা গেইম ,লাইক সিরিয়াসলি! সব থেকে বড় কথা হলো ।তোমার বয়স কতো ? এই টুকু বয়সে এই সব হট শব্দ ব্যবহার করো ? লজ্জা করে না ! 

মাথা নত করে নেয় মেঘনা ।রাগ লজ্জা দুঃখ অপমানে চুপ করে বসে রইল সে ।অভিক আর মেঘনার মাঝে দূরত্ব সামান্য পরিমাণের কিন্তু এর মাঝেও এক বার ও অভিক তার শরীর স্পর্শ করে না ।যেটা ভালো করেই লক্ষ্য করেছে মেঘনা ।ভালো লেগেছে তার ,এক বার চোখ তুলে অনিকের রাগী ফেইস টা দেখল সে । উজ্জ্বল বর্ণের গায়ের রং, লম্বা চওড়া বডি।সাদা শার্ট জড়িয়ে আছে ,কালো প্যান্টের সাথে ইন করে পড়া । সিল্কি চুল গুলো সুন্দর করে সেট করে রেখেছে ,একটা জিনিস বার বার গা কাটা দিয়ে উঠছে মেঘনা ।আর সেটা হলো অভিকের বডি স্মেল ,কড়া মিষ্টি গন্ধ এসে বার বার নাকে বারি খেয়ে যাচ্ছে।এর কারনে মেয়েটা শরীর ঝাঁকিয়ে উঠছে বার বার ,শুকনো ঢোক গিলে তাকায় অভিকের দিকে ,সে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে 

অভিক -: আজ যেটা করছো না সেটার শাস্তি পেতে হবে তোমায় !

মেঘনা -: আমায় শাস্তি দেওয়ার আপনি কে ? 

মুখ ফস্কে বলে ফেলে মেঘনা ।এর সাথে সাথেই রাম ধমক খেয়ে চুপসে যায় সে ।অভিক কটমট করতে করতে বলে 

অভিক -: এই মেয়ে ! বয়স কতো তোমার? বয়সের আগে বেশি পেকে গিয়েছো দেখি ? ডোন্ট ওরি আমি আছি না ।তোমাকে কি করে পাকা থেকে ভালো করে কাচা চিবিয়ে খেয়ে হয় সে আমি তোমাকে দেখাবো ।

অভিকের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝল না মেঘনা।কি করবে অভিক ? তাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে মানে ? আর মেঘনার মাথায় একটা জিনিস এলো না । সামান্য একটা ঘটনার জন্য অভিক তার সাথে এমন ব্যবহার করবে ?


#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৪
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

               ❌ অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌ 

পাট৪
সামান্য একটা ডেয়ার ডান করতে গিয়ে যে মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে সেটা যদি ক্ষুনক্ষরেও যদি টের পেতো তবে জীবনেও এই ভূল করতো না মেঘনা ।তাও কিনা এমন একটা মানুষের সাথে যে তার জীবন টা কে এক দিনেই তেজ পাতা করে দিয়েছে ? 

ভয়ে হাত পা বার বার ঠান্ডা হয়ে পড়ছে মেঘনার। কিছু সময় পর পর শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে ,তবে কিছুতেই তা হচ্ছে না ।আজ যেনো সাবরিনার কথা সত্যি হলো।বড় বোন কে দেখতে এসে ছোট বোনের ও বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো ।যেটা ছিলো মাথা নষ্ট করার ব্যাপার ।তখন অভিক তাকে শাসিয়ে নিচে এসে কি জানি রেহানা বেগম কে কি বললো ।এর পরেই সূচনার সঙ্গে মেঘনার হাতেও আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেলেন ।প্রথমে মেঘনা মনে করেছিলো হয়তো এমনি ফুপু পড়িয়েছেন তবে যখন সেলিনা বেগম বললেন 

সেলিনা বেগম -: এই তো আমার মনের মতো নাত বউ ।আমার অভিকের হবু বউ,মেঘনার যেই তেজ ওর দ্বারাই আমার সাথে ঝগড়া করা সম্ভব।রেহানা তো জীবনেও ঝগড়া করতে পারলো না ।আর সূচনা সে তো ভেজা বিড়াল ,তবে মেঘনা হলো বাঘিনী ! মনে মতো বউ পাইয়ে দিয়েছে অভিক আমাকে! 

তখন মেঘনা শুধু থ হয়ে চেয়ে ছিলো ।তানিয়া বেগমের খুশি দেখে কে ,একি বাড়িতে দুই মেয়ে যাচ্ছে ।সূচান ও বেশ খুশি হয়েছে , কিন্তু মেঘনা তার কাছে কেউ কিছু জিজ্ঞেস ও করল না ।আর করবেও না ,কারন সবাই জানে যে মেঘনা নিজের বাবার কথার উপর কোনো কথা বলবে না ।আর হলো টাই এমন ,অভিক কে মেয়ে জামাই হিসেবে বেশ পছন্দ হয়েছে তার বাবা সিদ্দিকী সাহেবের।নিজের বোনের ছেলে বলে কথা ,একি বাড়িতে দুই মেয়ে যাবে, এর থেকে বড় আনন্দ আর কি আছে ।মেঘনা থ মেরে এখনো বসে আছে , কান্না পাচ্ছে তার ।সব অনুভূতি মিলিয়ে এখন কান্না! 

সূচনা -; দেখলি মেঘ রানী আমি কতো টা ভালোবাসি তোকে ! তোকে রেখে যাবো না এমন কি শশুর বাড়ীতেও নিয়ে যাবো ।নিজের ঝা করে ,ওয়াও কি মজা তাই না ! তোর আর আমার বিয়ে একি দিনে হবে ! 

মেঘনা‌ কে নিয়ে সূচনা রুমে এলো ।এসেই তাকে কথা গুলো বললো , অনুভূতিহীন মেঘনা কোনো কথাই বলছে না ।সূচান কে জড়িয়ে ধরে বলে

মেঘ-: আপু এমন টা না হলে কি হতো ? আমি ওনাকে বিয়ে করবো না । সামান্য একটা ডেয়ার ডান করার জন্য আজ আমার জীবন টা এলোমেলো হয়ে যাবে ? আমি এই বিয়ে করবো না ।ওই অভিক ভাইয়া আমাকে শাস্তি দেওয়া জন্য বিয়ে করছে কেনো ? পৃথিবীতে তো কত মানুষ কতো মানুষ কেই কিস করে তাই বলে কি সবাই কে বিয়ে করতে হবে ! আপু তুমি কিছু করো না প্লিজ ? 

সূচনা -: মেঘ ! তুই কি বোকা নাকি ? 

থামল সূচনা ,এবার বলে 
সূচনা -: মেঘ সামান্য শাস্তি মনে করেছিস তুই? আরে বোকা যদি অভিকের তোকে শাস্তিই দিতে হতো‌ তবে ও তোকে অন্য কিছু করতেও তো পারতো ।যেমন ধর আম্মু কে বলতেও তো পারতো তাই না ! 

মেঘনা ভাবল ,আসলেই তো ! যদি অভিকের তাকেই শাস্তিই দিতে হতো তাহলে তো অন্য ভাবেও দিতে পারতো । কিন্তু বিয়ে করতে চাইলো কেনো ? মেঘনা বলে 

মেঘ-: তাহলে ওনি আমাকে বিয়ে করতে চাইলেন কেনো ?

সূচনা নিজৈর মাথায় চড় মেরে মেঘনা কে ধরলো তারপর বলে 
সূচনা -: আমার বোকা বোন রে তোকে নিয়ে কি করবো । তুই বুঝিস নি যে অভিক তোকে পছন্দ কর করেছে ।আজ ফুপির দূই ছেলে আমাদের দুজন কেই দেখতে এসেছিলো 

মেঘনা -: কিহ!

সূচনা -: জী ! 

মেঘনা অবাক গলায় বলে .

মেঘনা -: মানে কি আপু ! ওরা শুধু তোমাকে নয় বরং আমাকেও দেখতে এসেছিলো কিন্তু কেনো ? 

সূচনা হাসল এবার সে বলে ।

সূচনা - অভিকের জন্য অনেক আগ থেকেই মেয়ে দেখা হচ্ছিল,ফুপি প্রথম যেদিন আমাকে দেখতে এসেছিলো সেদিন তোকে ও তার পছন্দ হয় ।নিজের ভাইয়ের মেয়েদের নিজের ছেলেদের বউ করবে বলে ওনি ঠিক করেন । কিন্তু সমস্যা হলো অভিক ছিলো লন্ডনে,ওর আসতে সময় লাগলো ।কাল রাতেই ও দেশে ফিরেছে ,ও সব টা জানতো তবে ফুপি আগে বলেছিলো যদি অভিকের পছন্দ হয় তবেই কথা আগাবেন।আর রইল তোর কথা ,তাহলে তোকে বললে তুই কোনো না কোনো কান্ড করে নিজের বিয়ে টা ভাংতি।তার সাথে আমার টাও ,আর ফুপিদের সামনে বাবা মা লজ্জিত হতো 
তার চেয়ে ভালো তোকে না জানিয়ে সব টা করেছিলো সবাই ! 

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল মেঘনা ।তার পিঠ পেছনে এতো কিছু চলছে আর সে সেটা জানতেই পারলো না ।সূচনা মেঘনার চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায় ।মেঘনা ভাবতে লাগলো আজ এক দিনে তার জীবন কতটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।এই এক দিনে প্রথম বার কাউকে কিস করল ,তারপর সে জানল নিজের হবু বর করেই কিস করে দিয়েছে সে ।মেঘনা নিজেকে বুঝাতে লেগে পড়ল তখনি সূচনা ডাকে তাকে 

সূচনা -: মেঘ মেঘ এদিকে আয় তো ! 

বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডাকছিলো সূচনা ।মেঘনা উঠে যায় কি হয়েছে জানতে চাইলেই সে নিচের রাস্তার দিকে ইশারা করে ।যেখানে ফুপিরা সবাই গাড়িতে উঠছে ।সূচনা লজ্জায় ভরা দৃষ্টিতে অনিক কে দেখছে ,মেঘনা তাতে পাত্তা না দিয়ে যখনি রুমে ফের যেতে নিবে ।তখনি নজর পড়ল গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসতে যাওয়া অভিকের দিকে ।অভিক গম্ভীর মুখে সিট বেল লাগাচ্ছিলো । হঠাৎ করেই তার নজর যায় বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা মেঘনার দিকে । চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে সরে দাঁড়ায় মেঘনা ।অভিক কোনো প্রতিক্রিয়া করে না ঠাঁয় কত সময় তাকিয়ে থাকে , কিন্তু মেঘনা লজ্জায় মড়িয়া হয়ে উঠলো ।

মেঘ -: এক কেমন অনুভূতি? এতো লজ্জা করছে কেনো তার চোখে চোখ পড়তেই ? 

এখন শত মানা করলেও মেঘনা ছিলো অভিকের হবু স্ত্রী ।যদি এর আগে কখনো তাদের দেখা কিংবা কথা হয় নি তবে একে অপরের নাম শুনেছে কয়েক বার ।প্রথম দেখেই কি অভিকের পছন্দ হয়েছিলো মেঘনা কে ? নাকি অন্য কিছু? মেঘনা কি অভিক কে পছন্দ করবে ? তাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে ধারতে পারবে ? এক টা ডেয়ার যেটা বদলে দিলো মেঘনার পুরো টা জীবন তাও এক দিনের মধ্যে! 

অভিকরা চলে যাওয়ার পর লম্বা একটা ঘুম দিয়েছে মেঘনা আর সূচনা ।প্রথমে কতো সময় ধরে প্যান প্যান করলেও পরে ঠিকই অভিক কে মেনে নিয়েছে মেঘনা।শত হলেও তো এতো সুদর্শন ছেলে কে কি না করা যায় ? ঘুমের ঘোরেও একটু পর পর মূচকি হাসি দিয়েছে সে ।সূচনার ঘূম ভেঙ্গে যাওয়াতে ডাকল মেঘনা কে ,

সূচনা -: এই মেঘ ! মেঘ ! কি হলো উঠ । সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তো ।এবার তো উঠ! 

গায়ে চাদর জড়িয়ে ধরে ঘুমন্ত গলায় মেঘনা বলে। মেঘনা -: উফ আপু আরো একটু ঘূমাতে দেও তো ! 

সূচনা গায়ের থেকে চাদর টেনে উঠিয়ে বলে ।

সূচনা -: আপুর বাচ্চা জলদি উঠ।উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসবি ! ভুলে গিয়েছিল সামনেই সেমিস্টার 

এই হলো এক জ্বালা তাকে শান্তিতে ঘুমাতে দেয় না তার মা আর বোন ।মেঘনা কে টেনে টুনে উঠিয়ে বসালো সূচনা ।নিজে চলে যায় ,ঘুম ঘুম হাতে ফোন টা নিয়ে বসল মেঘনা । আলসেমিতে পিএইচডি করে রেখেছে সে ,ঘুম তার চোখ থেকে দূরেই যায় না ।ঘুম ঘুম হাতে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে লাগলো ।কত সময় পর সূচনা এসে তাকে এমন করতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল 

সূচনা -: মেঘ ! 

কপাল কুঁচকে তাকিয়ে মেঘনা বলে ।

মেঘনা -: আপু প্লিজ এমন‌ ষাঁড়ের মতো চেঁচামেচি করো না । বিরক্ত লাগে তো ! এখন আমাকে একটু ফোন‌ দেখতে দেও ,এরপর পড়তে বসবো ! 

সূচনা কোমরে এক হাত রেখে রাগী চোখে তাকাতেই মেঘনা ফোন টা রেখে দিলো ।উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো ।বেরিয়ে এসে পড়ার টেবিলে বসে বই খুললো ।আজ সারা দিনের কথা এক প্রকার মাথা থেকে মুছেই গিয়েছে তার ।গালে এক হাত দিয়ে নিজের বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পরিহিত ছোট এনগেজ রিং টা দেখে কত সময় ওমত হয়ে চেয়ে থেকে বলে 

মেঘ-: আপু এই রিং টা কি তোমার ? নিশ্চয়ই তোমার ! আমি বোধহয় পড়েছিলাম ঘুমানোর আগে।এই নেও তো নিয়ে নেও ! পরে আমার হাত থেকে হারিয়ে যাবে !

সূচনা ছোটো ছোটো চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে । ঠোঁট উল্টে বলে 

সূচনা -: তুই আসলেই আমার বোন তো মেঘ ? না মানি আজকের‌ এতো বড় একটা কথা তুই কি করে ভুলে গেলি ? তোমার মাথায় কি ঘিলু নেই ? 

সূচনার এমন করে বলাতে অপমান বোধ করল মেঘনা ।গাল ফুলিয়ে বইতে মুখ গুজে তবে নজর সেই রিং টার দিকে , অনেক সময় তাকিয়ে থাকার পর সবটা তার মাথায় এলো ।লাফিয়ে উঠে পড়ল সে ,মেঘনা একটু চেঁচিয়ে বলে 

মেঘনা -: আমার তো ওই হট জুনিয়রের সাথে এনগেজ হয়েছে তাই না ।মনে পড়েছে মনে পড়েছে ! বেটা লুচ্চা আমারে দেখে যে ওর ভালো লাগছে সেটা না বলে বলে আমাকে কিস করার দায়ে তোমাকে শাস্তি স্বরূপ বিয়ে করবো ! হুহ !

তানিয়া বেগম - কি হচ্ছে এখানে ? 

তানিয়া বেগম কে দেখেই মেঘনা সোজা হয়ে নিজের টেবিলে বসল ।তানিয়া বেগম মেয়েদের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা ও তার সাথে কফি করে নিয়ে এসেছেন ।সূচনার লিংকে এগিয়ে দিতেই সে বলে।

সূচনা -: ওহ মা তুমি কেনো কষ্ট করতে গেলে আমি তো এমনিতেই করতাম তাই না !

তানিয়া বেগম একটু হাসলেন ,সূচনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে .

তানিয়া বেগম -: তোমার তো সারা জীবন কাজ করার দিন এসেই পড়েছে ,কয়েক দিন পর থেকেই শুরু হবে সেই দিন ।আমার কাছে যতো দিন আছো ততদিন না হয় আমিই নিজের মেয়েদের করে খাওয়াই ! 

মেঘনা -: কেনো মা আমি কোথায় যাচ্ছি ?আপু গেলে যাবে ওর শশুর বাড়ী ।আমি বলে দিচ্ছি আমি কিন্তু যাবো না !

তানিয়া বেগম আর সূচনা হাসল তার কথায় ।সূচনা বলে 

সূচনা -; হ্যা‌ তোকে আর যেতেই হবে না ।অভিক যেই ছেলে ,

মেঘনা - কেমন ছেলে অভিক ভাইয়া!

সূচনা দুষ্টু হাসলো ,তারপর বলে।

সূচনা - : সেটা নাহয় তুই নিজেই দেখবি ! 

তানিয়া বেগম তাড়া দিয়ে এবার বলেন ।

তানিয়া বেগম-: মেঘ সূচি খাবার শেষ করে বাসায় ঘরে আসিস ।কথা আছে তোদের সাথে 

মেঘনা -: কি কথা মা ? 

#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৫
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

            ❌ অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌ 

পাট ৫ 

তানিয়া বেগম বলেন।তানিয়া বেগম -: তোমাদের বিয়ের সম্পর্কে কিছু আলোচনা করবো ।কে কি পড়বে ,কাকে কাকে দাওয়াত করবে ! সবটা .

বিয়ে ! ছোট একটা শব্দ।যেটা মেঘনার সাথে এখন জড়িয়ে গিয়েছে‌।তা তো ভাবতেই অবাক লাগছে তার ও বিয়ে হবে ! এক দিনে জীবন কতটা পরিবর্তন হয়ে গেলো তাই না ।তানিয়া বেগম চলে যান ,মেঘনা ধপ করে চেয়ারের বসে পড়ল ।সূচনা এগিয়ে এসে বলে 

সূচনা - কি হয়েছে মেঘ ? 

মেঘনা -: আপু আমি বিয়ে করবো না ! 

সূচনা -: কিন্তু কেনো মেঘ ? 

চোখ তুলে তাকায় , ভয়ার্ত গলায় বলে .

মেঘনা -: আপু আমার যাকে চিনি না জানি না ।প্রথম বার দেখা হয়েছে ,তারপর উপর আমি তার সাথে কেমন ব্যবহার করেছি ! এই সব বাদ দিলেও সে আমার কাজিন হয় ।আমার কি করে ওনাকে বিয়ে করি ?

সূচনা শান্ত গলায় বলেন ।
সূচনা -: অনিক বুঝি আমার কিছু হয় না ।সে ও তো আমার কাজিন হয় তাই না !

মেঘনা -: হলেও কি আপু ,অনিক ভাইয়াকে তুমি আগে থেকেই চিনো জানো ।আর আমি তো তাকে আজ প্রথম দেখলাম ! কখনো দেখা হয় নি কথা হয়নি ।আবার আমার রাস্তার মাঝে ..

নিজের দু হাত মুখ ডাকে মেঘনা ।সূচনা ফোঁস করে একটা শ্বাস ফেলে তার সামনে বসল ।মেঘনার মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বলে -

সূচনা-: মেঘ এটা বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয় ।আর অভিক খুবই ভালো আর বুঝদার ছেলে ।ও না বুঝে এই বিয়েতে হ্যা বলে নি নিশ্চিত। তুই বেশি বেশি করছিস ! একবার মন খুলে তুই অভিক কে ঢুকতে দে ।দেখবি তুই ওর প্রেমে পড়ে গিয়েছিস ,তখন বলবি মন খাঁচায় বন্দী তুমি! 

মেঘনা -: আমি কি তাকে নিজের মন খাঁচায় বন্দী করতে পারবো নাকি ?

সূচনা -: কেনো পারবি না , অবশ্যই পারবি । তুই বিয়ের আগের এই কয়েক দিন অভিকের সাথে মিশে যা ,একদম বন্ধু হয়ে যায় ।ভালোবাসা হতে কত ক্ষন ! 

মেঘনা মাথা নাড়ায় ।সূচনা নিচে চলে যায় ,মেঘনা এখন একা থাকবে।তার একা থাকা প্রয়োজন, নিজেকে বুঝাতে সময় দিতে হবে তাকে ! 
___
কলেজ মাঠে মালিহা নিজের জান বাচিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ।সাবরিনা হাসতে হাসতে মাটিতে বসে আছে ।তার এখন এমন ছুটাছুটি করার ক্ষতি নেই ,তবে মেঘনা ছাড়ছে না মালিহা কে ।তার এমন উদ্ভট ডেয়ারের কারনেই আজ তার জীবন এটা এমন হয়ে গিয়েছে ।কলেজে এসেই মালিহা কে তাড়া দিয়েছে মেঘনা ,তাড়া পেয়ে সেই যে ছুট লাগিয়েছে মালিহা এখনো থামার নাম গন্ধ অব্দি নেই ।মালিহাকে তাড়া করে মেঘনা চেঁচিয়ে বলছে 

মেঘ -: দাড়া শয়তানী ,পালাচ্ছিস কেনো এখন ! আজ তোকে আমার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না ।তোর জন্য শুধু তোর জন্য আজ আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে,!

মালিহা এবার থামে ,থেমে গিয়ে বলে ।

মালিহা -: দোস্ত আমাকে একটা ধন্যবাদ দে ,আমার জন্য তোর বিদেশি কাজিনের সাথে তোর বিয়ে হতে যাচ্ছে ।তা না করে তুই আমাকে মারছিস ! ইটস নট ফেয়ার ইয়ার ! 

মেঘনা বাকা চোখে তাকাতেই মালিহা চুপ ।আজ চার দিন পর সে কলেজে এসেছে ।এই চার দিনে তার জীবন নরক বানিয়ে দিয়ে তার মা তানিয়া বেগম ।ঘরের কাজ শিখাতে শুরু করেছেন ওনি ।যেটা বেশ বিরক্তির কারনে মেঘনার কাছে ।মেঘনা আজ একপ্রকার জেদ করেই কলেজে এসেছে ।কারন তার ভালো লাগে না এমন বাড়িতে বসে এই সব কাজ করতে ।তবে কি আর করার ,তানিয়া বেগম বার বার বলেন ।

তানিয়া বেগম - কদিন পর তোর বিয়ে ।ওই বাড়িতে গিয়ে কাজ করে শশুর শাশুড়ির মন জয় করতে হবে ।তো এখন থেকেই সব শিখ! 

মায়ের কথা গায়ে না মেখে আজ কলেজে এসেছে সে ।মালিহার সাথে ঝগড়া করতে লেগে পড়েছে ।মেঘনা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে 

মেঘ -: তোর জন্য আজ আমার বিয়ে হচ্ছে তোকে তো ছাড়ছি না ।আর তার উপর তুই আমার টাকা ও দিচ্ছিস না কেনো ? তোকে আজ চাঁদ থেকে ফেলে দিমু ! দাড়া পালাচ্ছিস কেনো ? 

মালিহা কে ধরে দাড় করায় মেঘনা।মালিহা অসহায় গলায় বলে ।

মালিহা -: দোস্ত প্লিজ এমন করিস না ,দেখ টাকা টা আমি আনতেই চাইছি তবে ভুল করে রেখে আসছি ! সত্যি বলছি কাল দিয়ে দিবো .তোর টাকা ! মেঘ ছাড় 

মেঘনা ওর কান টেনে ধরল ।মালিহা লাফালাফি করতে লাগলো ,সাবরিনা এসে মেঘনা থেকে ওকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে ।

সাবরিনা -: মেঘ ও বলছে তো কাল দিয়ে দিবে ।তো এখন ওকে ছাড়, আর এক মিনিট! তোর না বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? এতো বড় লোক জামাই পাইতাছিস তাহলে এই টাকা কেনো চায়‌ তোর ? 

মেঘনা টেংরা চোখে তাকায় ।অভিক সম্পর্কে কথা তুলতেই তাঁর কেমন যেনো অনুভব হতে লাগলো ।মনে পড়ল তার নাকে বারি খাওয়া সেই বডি স্মেলের কথা ,গা কাটা দিয়ে উঠল মেঘনার । নিজেকে শান্ত করে সে সাবরিনা কে ঝাড়ি দিয়ে বলে ।

মেঘনা -: আমার জামাইয়ের টাকা আছে কিন্তু তাই বলে যে ওর কাছে পাওনা টাকা টা ছেড়ে দিবো এমন না ! ওই টার কারনেই তো আজ আমি জামাই পাইছি ! 

মালিহা -: তো দোস্ত তুই মানছিস যে আমার কারনেই তুই এতো হ্যান্ডসাম একটা জামাই পাইছিস ! এখন তো আমাকে ট্রিট দে ! 

মেঘনা ওর কান ফের টেনে ধরৈ বলে ।

মেঘনা -: হ্যা দিবো তো ! এই যে দিচ্ছি তোকে ট্রিট কতো মজা তাই না দোস্ত 

মালিহা নিজের কান ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল ।তখনি মেঘনার কল এলো ফোনে । ব্যাগ থেকে ফোন বের‌ করতেই দেখল সূচনা কল দিয়েছে ।সে এই সময় কল‌‌ দিয়েছে কেনো ?

মেঘনা -: হ্যালো আপু বলো

অভিক -: পাঁচ মিনিটের মধ্যে কলেজ গেইটে আসো !

ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় মেঘনা ।না বুঝেই বলে 

মেঘনা -: এ্যাঁ!

অভিক -: এ্যাঁ নয় হ্যা ! এক্ষুনি আসো না হলে আমি ভেতরে আসলে তোমার জন্য ভালো হবে না। ইউ নো বেবি আই এম টু মাচ হট গাই ! 

থ মেরে যায় মেঘনা ।অভিকের কথা তার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে ,লাইক সিরিয়াসলি তাকে এই ছেলে থ্রেট দিচ্ছে তবে কেনো ? মেঘনা আর কিছু না বলেই মালিহা আর সাবরিনা থেকে বিদায় নিয়ে কলেজের বাহিরে এসে দাঁড়ায় । হাঁটুতে ভর দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে সে ,এক দৌড়ে এখানে এসেছে মেঘনা ।তাকে দেখেই বেরিয়ে এলো অভিক ,সামনে এসে বলে 

অভিক -: উফ গট কেনো আমি এতো হট ! যার কারনে আমার হবু বউ টা ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে! 

মুখ দিয়ে চ করে একটা শব্দ বের করল অভিক ।মেঘনা সোজা হয়ে দাড়ায় ,প্রথমেঈ জিজ্ঞেস করে ।

মেঘনা -: আপনার কাছে আপুর‌ ফোন কি করে এলো ? আর আপনি এখানে কি করছেন ? এমন করে ডাকলেন কেনো আমাকে ?

অভিক এতো গুলো প্রশ্ন শুনে বিরক্ত হলো , হেঁয়ালি পূর্ণ গলায় বলে ।

অভিক -: উফ বেবি এতো পট পট কেনো করো ।সোজা গাড়িতে গিয়ে বসো ,আর তুমি আমাকে আপনি করে কথা কেনো বলছো ? তুমি জানো না আমি তোমার জুনিয়র! 

মেঘনা বাঁকা চোখে তাকায় ,অভিক যে তাকে খোঁচা মেরে কথা বলছে তি সে নিশ্চিত বুঝে গেলো ।তাই তো সে নিজের এক আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে ..

মেঘনা -: ইউউ 

অভিক -: মি হোয়াট ? আই নো আমি হট ! 

মেঘনা নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করে মাটিতে সজোরে লাথি দিলো ।অভিক ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে 

অভিক -: ওহ বউ এমন করে রেগে থেকো না ।খেয়ে ফেলতে মন চাই তো!

হা হয়ে গেলো মেঘনার মুখ ।বড় বড় চোখ করে কিছু সময় চেয়ে রইল সে ।অভিকের মুখে দুষ্টু হাসি দেখে সে বলে 

মেঘনা -: অসভ্য!

অভিক তা শুনে অবাক হওয়ার ভান করে বলে ।

অভিক -: কি বললেন আপু আমি অসভ্য! তো আপনি কি ? আমি যদি এই টুকু তে অসভ্য হই তাহলে আপনি যে আমায় মাঝ রাস্তায় কিস করলেন সেটাতে কিছু না ।সেটা বোধহয় ভদ্র লোকের কাজ ।তাই তো আমি ও আপনাকে কিস করে ভদ্র লোক হয়ে যাই ! কি বলেন ? 

অভিক অনেক টাই ঝুঁকে পড়েছে মেঘনার উপর । চারপাশে দেখল মেঘনা ।এখানে তেমন একটা লোক জনের আসা যাওয়া নেই ।এখন কলেজ টাইম সবাই ক্যাম্পাসের ভিতরে, কিন্তু তার পর ও পথ চলা কিছু কিছু মানুষ যাওয়ার সময় তাদের দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।অভিক আরো একটু ঝুঁকে পড়তেই মেঘনা নিজের ব্যাগ টা মুখের সামনে টেনে ধরল ! এতে অভিকের মুখ গিয়ে লাগে মেঘনার ব্যাগের সাথে ।চোখ মুখ বন্ধ করে নিলো সে ,তখনি সেখানে সূচনা আর অনিক এলো ।অনিক অভিক কে বলে 

অনিক -: কি রে তুই এমন করে আছিস কেনো ? আর মেঘনা কেমন আছো ?

মেঘনা ব্যাগ সরিয়ে নিলো ,অভিক সোজা হয়ে দাড়ায় ।সূচনা মেঘনার কাছে এসে বলে ।

সূচনা -: কিরে তোকে সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি আর তুই কল রিসিভ করছিলে না কেনো ?

নত মস্তকে দাঁড়িয়ে মেঘনা বলে ।
মেঘনা -: ক্লাসে ছিলাম ,ফোনের সাউন্ড অফ ছিলো ।

সূচনা -: ওহ তাই বল , আচ্ছা আমরা সবাই বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছি।মা বললো তোকে নিয়ে যেতে ,

মেঘনা -: আমি যাবো না তোরা যা !

অভিক -: বিয়ে টা তো শুধু ভাবির হচ্ছে তাই ভাবি একাই যাবে !

একটু বিরক্তির গলায় বলে অভিক ।মেঘনা চায় না অভিকের সাথে যেতে ।ছেলে টা তার থেকে ও বেশি পাজি এটা সে বুঝে গিয়েছে এতো সময়েই মধ্যে।তার জীবন তেজপাতা করে দিবে নিশ্চিত এটাতে মেঘনা ।তাই সে বাহানা করল 

মেঘনা -: আপু আমি যাবো না 

সূচনা -: এটা কেমন কথা ? তুই বিয়েতে কি পড়বি না পড়বি সে তুই দেখবি না 

মেঘনা -: নাহ তুমি একটা পছন্দ করে নিয়ে আসো তাতেই হবে !

অভিক একটু তার কাছ ঘেঁষে দাড়ায় , নিচু গলায় হুঁশিয়ার করে বলে ।

অভিক -: যদি এখন আমার সাথে না যাও তবে সবাই কে বলে দিবো যে তুমি কতটা ভদ্র মানুষ! আর ভালো করেই জানেন ম্যাডাম আমি বললে পুরো টাই বলবো ! 

#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৬
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 
                    ❌ অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ❌

পাট ৬

গাড়ির মধ্যে গাল ফুলিয়ে বসে আছে মেঘনা ।তার পাশেই ড্রাইভিং সিটে বসে আছে অভিক ।একটু পর পর মেঘনা কে দেখছে আর যদি চোখাচোখি হয় তবেই হেসে উঠছে সে ।এতে বেশ বিরক্ত মেঘনা ,তখন বেশ জোর করেই তাকে থ্রেট দিয়ে অভিক নিজের সাথে করে নিয়ে আসে ।পেছনের সিটে সূচনা আর অনিক বসে কথার পর কথা বলেই যাচ্ছে।আর এদিকে মেঘনা যে কিনা এখান থেকে বাঁচতে চাইছে ,বাঁচতে নয় বরং অভিকের দৃষ্টি থেকে।বার বার লজ্জায় ফেলছে অভিক তাকে ,তার দৃষ্টিতে কিছু একটা তো আছেই যেটা মেঘনা কে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।মেঘনা জোরে একটা শ্বাস ফেলে ! গাড়ি থামতেই সূচনা আর অনিক নেমে যায় ।তারা তাদের মতো করে যেতে লাগলো ,বেচারি মেঘনা এই অভিকের সাথে ফেসে গেলো ।সূচনা কে ডাকতে যাবে তখনি অভিক বলে

অভিক -; নিজে তো রোমান্স করতে পারো না ! এখন ওনারা করছে তাতেও তোমার সমস্যা!

মেঘনা তাকায় অভিকের দিকে । শান্ত গলায় বলে .

মেঘনা -: একটা মানুষ এমন করে কেমনে কথা বলতে পারে !

অভিক কিছু টা ঝুঁকে পড়ল মেঘনার দিকে ,চোখে চোখ রেখে বলে 

অভিক -: যেমন করে তুমি আমাকে কিস করেছিলে তাও মাঝ রাস্তায় ঠিক তেমন করেই ! 

মেঘনা -: একটা কথা বার বার কেনো বলেন আপনি ? ওটা একটা গেইম ছিলো মাএ!

অভিক -: তবে আমার জন্য অনেক কিছু ছিলো ।আমার ইজ্জত লুটে নিয়ে তুমি বলছো সেটা একটা গেইম ছিলো ? এমন টা বলতে তোমার মুখে বাজল না !

হা করে যায় মেঘনা ,বিরবির করল সে 

মেঘনা -: একটা মানুষ এতো টা পাগল কি করে হয় ? মা শেষমেশ পাগলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে!

ফের মেঘনা বলে ।

মেঘনা ,-: আমি আপনাকে বিয়ে করবো না ! 

অভিক -: তোমাকে কি জিজ্ঞেস করেছি ! নাকি আদেশ করেছি !

মেঘনা এবার রেগে যায় ,রাগী গলায় বলে ।

মেঘনা -: আমাকে আদেশ করার আপনি কে ?

অভিক -: তোমার হবু বর! অর্ধেক বর ও বলতে পারো আমাকে ! 

মেঘনা -: নির্লজ্জ কোথাকার ! 

মেঘনা মুখ বাঁকিয়ে কথা টা বলে ।এরপর তারা মলের দিকে যায় ,সূচনা তো নিজের মন মতো করে কেনা কাটা করতে লাগলো ।তবে মেঘনা ! সে শুধু তাদের পেছন পেছন হেঁটেই যাচ্ছে।যেখানে বিয়েতে তার কোনো মত নেই সেখানে শপিং করা টা তার জন্য বিলাশিতা নয় কি ? 

অভিক সবটা আড়চোখে পরক করছে ।সূচনা আর অনিক এক দিকে চলে যায় তাদের যাওয়ার পরেই অভিক খোপ করে ওর হাত ধরে নিজের সাথে নিয়ে যায় ।মেঘনা মৃদু চেঁচিয়ে বলে 

মেঘনা -: আরে আরে আমাকে এমন গরুর মতো করে টেনে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!

অভিক -: ইডিয়ট একটা গরু নয় বরং গাভী হবে ! 

মেঘনা কে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই সে নিজ থেকেই মেঘনার জন্য লেহেঙ্গা দেখতে লাগলো । গম্ভীর মুখ করে একের পর এক জিনিস উল্টে পাল্টে দেখছে সে ।মেঘনা সন্দেহবশত বলে 

মেঘনা -: আপনি কি এর আগে কখনো বিয়ে করেছেন নাকি ? না মানি মেয়েদের বিয়ের জিনিস সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারনা আছে দেখি ! 

অভিক আড়চোখে তাকায় ,মেয়েটার মাথায় নিশ্চিত কোনো সমস্যা আছে তা না হলে এই কথা কি করে বলে ।মেঘনা কে চমকে দিয়ে অভিক বলে 

অভিক -: এর আগে কত শত বিয়ে করলাম ! এটাতে নতুন কি 

মেঘনা -: কি বললেন আপনি ? 

অবাক গলায় বলে সে ।চোখ বড় বড় করে বলে 

মেঘনা-: আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তবে আমাকে কেনো বিয়ে করছেন ? আমি করবো না একটা বিবাহিতা পুরুষ কে ফের বিয়ে ।সতিনের সংসার করতে পারবো না আমি 

অভিক -: তোমার যেই তেজ ,এক টা কেনো তুমি তো দশ টা সতিন নিয়েও সংসার করতে পারবে ।এখন বোকার মতো কথা না বলে লেহেঙ্গা দেখো ! 

মেঘনা এবার বুঝল অভিক তাকে বোকা বানাচ্ছে।তাই সে আর কোনো কথা বলে না । চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে দেখছে সে কি কি করে ।অভিক নিজের পছন্দ মতোই মেঘনার জন্য বিয়ের লেহেঙ্গা কিনে ।তার সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে গহনা ও নিচ্ছে ,মেঘনা এক মনে দেখছে অভিক কে।মনে মনে বলে 

মেঘনা -: নাহ ! ছেলেটা ওতো টাও খারাপ নয় ! ভালোই তো দেখতে তবে কথা বলে বেশি .

মেঘনা গাল ফুলিয়ে অভিক কে দেখে , কিন্তু বিরক্তকর মুখ নিয়ে কথা বলতে থাকা ছেলে টা তার মন কেড়ে নিয়েছে ।মনে হচ্ছে সে তার হ্দয় খাঁচায় বন্দী! ফের মনে মনে বলে

মেঘনা -: থাক কথা বেশি বললে সমস্যা কোথায়? কমিয়ে কথা বলা শিখিয়ে দিবো আমি ! 

নিজেই হেসে ফেলে ,অভিক তার হাসি দেখে কপাল কুঁচকে নেয় । ইশারায় বলে ‘ কি . মাথা নাড়িয়ে কিছু না বলে মেঘনা ।তার জন্য সব কেনা কাটা শেষ করে এবার অভিক এলো নিজের জন্য বিয়ের শপিং করতে । পাঞ্জাবির দোকানে এসেই সে কপাল কুঁচকে নেয় তা দেখে মেঘনা বলে 

মেঘনা - : আপনার পাঞ্জাবি পছন্দ নয় 

অভিক -: পছন্দ তবে আমি এই সব জিনিসে বেশি কাঁচা ! না মানে কালার চুজ করতেই আমার সময় লেগে যায় 

মেঘনা এবার বলে .

মেঘনা -: আরে এখানে সময় লাগার কি আছে ! আমি দিচ্ছি দেখুন 

বেছে বেছে ব্লু কালার একটা শেরোয়ানি পছন্দ করে দিলো মেঘনা ।যা দেখে অভিক খুশি হয়ে‌ বলে ।

অভিক -: এই তো আমার বউয়ের মতো একটা কাজ করলে ,গুড জব 

মেঘনা -: এই বার বার আমাকে বউ বলবেন না তো ? 

অভিক -: বউ কে বউ বলবো না তো কি বলবো ? খালা ! 

মেঘনা -: এখনো বিয়ে হয় নি তাই এখনো আমি আপনার বউ হয় নি ।যখন হবো তখন বলবেন !

অভিক -: তুমি আমার অর্ধেক বউ ,মনে রেখো বিয়ের মাএ সাত দিন বাকী 

মেঘনা -: কিহ !

 অভিক -; জী 

মেঘনা চুপসে যায় ,অভিক তা দেখেও না দেখার ভান করল ।মেঘনা বুঝলো না এতো তাড়াতাড়ি কেনো বিয়ে টা দিচ্ছে সবাই ? একটু পরে দিলে কি হয় ? মন খারাপ করেই অভিকের সাথে হাঁটতে লাগলো সে । অনেক টা সময় কেনাকাটা করার পর এবার তারা বেশ ক্লান্ত,সবাই একটা রেস্টুরেন্টে বসল ।সূচনা আর অনিক আলাদা আর মেঘনা আর অভিক আলাদা ।মেঘনা মনে মনে বেশ বকা দিচ্ছে সূচনা কে ।

মেঘনা -: নতুন একখানা জামাই পাইয়া মাইয়ার কি যে ভাব ওরে আল্লাহ! আজ মোর একখানা এমন রোমান্টিক জামাই নাই বলে কি দুঃখ!

তখনি অভিক ওর সামনের চেয়ার টেনে বসলো ।মেঘনার মনে পরল তার ও তো সূচনার মতো একখানা বর আছে ।তাও ইতর বদমাইশ হবু বর ,অভিক মেঘনা কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মাথা নিচু করে হাসল তারপর আস্তে করে বলে 

অভিক -: জানি আমি অনেক সুন্দর তাই বলে এই ভাবে দেখে নিবেন জান ! 

জান ! অভিক কি বললো তাকে ? ছেলেটার মুখে কি কিছুই আটকায় না ।বড় বড় চোখ করে মেঘনা দেখছে অভিক কে ।অভিক ও তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ।মেঘনা আর চোখ সরিয়ে নিলো না বরং দেখল অভিক কে । প্রথম দেখাই ভালো লেগে যাওয়ার মতো মুখশ্রী ছেলেটার , হঠাৎ করেই মেঘনার বুকের বাঁ পাশ টা কেমন ডিরিম ডিরিম শব্দ করল ‌।অভিক তার হাতের উপর হাত রাখল ,চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে 

অভিক -: পছন্দ হয় কি আমায় !নিজের বর হিসেবে?

মেঘনা -: হ্যা ! 

নিজের প্রশ্নের জবাবে সে নিজেই লজ্জা পায় মাথা নিচু করে নিলো ।অভিক ঠোঁট কামড়ে হাসল।তার বার বার ঠোট কামড়ে হাসা টা কেমন অস্থির করে তোলে মেঘনা কে ,তাই সে আবারো চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায় না ।নিজের খাবারে মনোযোগী হয় ।অভিক হেসে বলে 

অভিক -: ওরে আমার লজ্জাবতী রে,এতো লজ্জা নিয়ে ঘুমান কি করে ম্যাডাম? রাস্তায় কিস করার সময় তো এতো লজ্জা পান নি আপনি ! 

মেঘনা এবার একটু করে অভিকের দিকে চাইলো।লোক টা বার বার একি কথা বলে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে কেনো ? 

মেঘনা -: দেখুন প্লিজ এক কথা বার বার বলবেন না ! 

অভিক -: তুমি কাজ এমন করে রেখেছো যে না বলে আর পারছি না । আচ্ছা তুমি আমাদের ফাস্ট নাইটে কি ঠিক ওমন করেই কিস করবে ?

লজ্জায় লাল হয়ে পড়ল মেঘনা ।ছিঃ বলেই দু হাতে নিজের‌ মুখ ঢেকে নিলো ।অভিক হাসল ,লোক টা বড্ড ঠোঁটকাটা স্বভাবের ।এতো কথা কোথা থেকে পায় কে জানে । আপাতত মেঘনা লজ্জার কারনে তার সাথে দৃষ্টি মেলাতে পারছে না। নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে , অভিক বেশ কয়েক বার ডেকেছে তবে তার উওর সে‌ দেয় নি ।মেয়েরা লজ্জাবতী হবে না তো কি হবে শুনি ? 

বাকী কেনা কাটা করা শেষ । সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে সূচনা আর মেঘনা কে বাড়ি নামিয়ে তারা চলে যায় ।বাড়ি এসে সূচনা তানিয়া বেগম কে একের পর এক জিনিস দেখাতে লাগলো ,মেঘনার লেহেঙ্গা দেখে তানিয়া বেগম বলেন 

তানিয়া বেগম -: বাহ কতো সুন্দর হয়েছে তোর বিয়ের জন্য কেনা লেহেঙ্গা টা । নিশ্চয়ই অভিক পছন্দ করে দিয়েছে তাই তো এতো সুন্দর।আসলে বলতেই হবে ছেলেটার পছন্দ আছে বটে ! 

সূচনা তখন মেঘনার গলা জড়িয়ে ধরে বলে‌।

সূচনা -: হ্যা তাই তো আমাদের মেঘ কে ওর পছন্দ হয়েছে !

লজ্জায় লাল নীল হয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে বসে থাকল মেঘনা ।এতো লজ্জা সে রাখবে কোথায় শুনি ! 

#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৭
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

              ❌ অনুমতি ব্যতীত কপি করা নিষেধ ❌

          ( বোনাস পাট )
পাট ৭

দিন হলো শুক্রবার ।সকাল‌ থেকেই তোর জোর চলছে বাড়িতে ,কারন আজ ছেলেদের বাড়িতে যাবে সবাই ।তবে গাল ফুলিয়ে বসে আছে মেঘনা কারন তাকে কেউ নিবে না ,বিয়ে টা তো তার নিজের ও হচ্ছে তাই না।আর নতুন বউ হয়ে কি আর হবু শশুর বাড়ীতে বিয়ের আগে যাওয়া যায় কেমন‌ একটা লাগে না ।এই কথা টাই সকাল‌ থেকেই বেশ কয়েক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন তানিয়া বেগম ,এমন কি সূচনা নিজেও বোন কে বুঝিয়েছে ।তবে মেঘনা মানা করে নি , কিন্তু গাল ফুলিয়ে ঠিকই ছাদে বসে আছে‌।ছাদ থেকে দেখছে সবাই তার ফুপিদের বাড়ি যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠেছে ।সে একা একাই বির বির করলো 

মেঘনা -: সবাই ফুপিদের বাড়ি যাবে আর আমি এখানে বসে বসে মশা মারবো! দূরহ 

সবাই চলে যায় ,সূচনা নিজের রুমে গিয়ে বিন্দাস ঘুম দিচ্ছে।মেঘনা একা একা টই টই করে ঘুরে বেরাচ্ছে। হঠাৎ করেই নিজের ফোন নিয়ে সোফায় আধশোয়া হয়ে তাতে কোরিয়ান সিরিজ দেখতে লাগলো ।সে মাঝে মাঝেই দেখে ,নিজের গভীর মনোযোগের মাঝে হঠাৎ করেই কেউ একজন হাত থেকে ফোন টা নিয়ে গেলো ।চমকে যায় মেঘনা ,উপর হয়ে তাকাতেই চমকে বলে 

মেঘনা -: আ , আপ আপনি !

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কথা টা বলেই উঠে দাড়ায় ।অভিক গম্ভীর চোখ ফোনের স্ক্রিনে বুলিয়ে দেখল।মেঘনা তাকে দেখেই বলতে লাগল 

মেঘনা -: আপনি এখানে কি করে এলেন ? সবাই তো আপনাদের বাড়িতে গিয়েছে ! আর এই আমরা ফোন দিন ,দিন বলছি !

মেঘনা ফোন নেওয়ার জন্য ছটফট করলো ।অভিক এক হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আর অন্য হাতে ফোন ধরে তা উচু করে আছে ।মেঘনা একটু পর পর লাফিয়ে উঠছে ! যেটা তে বিরক্ত হলো অভিক । কিন্তু সে বলে 

অভিক -: আমার মতো এতো হট একটা হবু বর থাকতে তুমি এই সব চকলেট বয়ের সিরিজ দেখো ! এটা কোনো কথা ! 

মেঘনা এবার থামল ,মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলো । কচলাতে কচলাতে মিন মিন করল সে 

মেঘনা -: আসলে আসলে 

অভিক -: আসল নকল বাদ দিয়ে ,সোজা সুজি কথা বলো !

মেঘনা মাথা নত করে নিলো ।অভিক গম্ভীর গলায় বলে 

অভিক -: তুমি এতো টা ভদ্র কি করে হতে পারলে ? 
মেঘনা -: আমি এমনি এগুলো দেখছি আর এটা তো খারাপ কিছু নয় ! 

অভিক -: আমি কখন বললাম এটাতে খারাপ কিছু আছে ।দেখার হলে নিজের পার্টনারের সাথে দেখো ।আর তুমি যদি চাও এর থেকে ও ডিপ কিছু দেখতে তবে আমায় বলতে পারো !

মেঘনা -: ছিঃ ছিঃ আস্তাগফিরুল্লাহ ! এই আপনি এতো টা বাজে কি রে ! ছিঃ । অসভ্য লোক কোথাকার !

অভিক অবাক হয়ে বলে ।

অভিক -: আমি অসভ্য ম্যাডাম? তো আপনি কি শুনি ! আপনি তো সভ্যতার সব ক্যারেক্টার এক সাথে পালন করেন ।আর বউয়ের সাথে অসভ্যতামি করবো না তো কি পাশের বাড়ির আন্টির সাথে করবো ? 

মেঘনা - এই আপনি কিন্তু এবার অনেক বেশি বলছেন ! এখনো বিয়ে হয় নি আমাদের 

অভিক -: রেডি হও 

মেঘনা -: মানে ? 

অভিক আবারো বলে ।মেঘনা বুঝলা না কেনো রেডি হতে বলছে ,অভিক মেঘনা কে নিয়ে ঘুরতে যাবে তাই তো নিজের সাথে করে বাহিরে নিয়ে এলো ।ওই বাড়িতে বেচারা অনিক ফেঁসে আছে ,অভিক কে ও থাকতে বলেছিলো তবে সে কার কথা শুনে না ।মেঘনা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল সে।গাল ফুলিয়ে রেখেছে মেঘনা ,গাড়ির মধ্যে ফুল সাউন্ডে গান চলছে ।তাও গা কাটা দেওয়ায় মতো গান ,মেঘনা একটু পর পর অভিক কে দেখছে ।সে নিজের মতো করে দুষ্টু হাসি নিয়ে ড্রাইভিং করছে । বিরক্ত হয়ে মেঘনা গান বন্ধ করে দিলো ,অভিক বেশি কিছু বলে না ।একটু একটু করে তারা অনেক স্থানে ঘুরতে যাবে ।মেঘনা কে নিয়ে অভিক গাড়ি থেকে নামল ,সামনের দৃশ্য দেখে খুশি তে আত্মহারা হয়ে বলে 

মেঘনা -: ওয়াও ফুচকা! 

অভিক তার খুশি দেখে বলে ।

অভিক -: পছন্দ তোমার‌?

মেঘনা -: অনেক বেশি ,আই লাভ ফুচকা

অভিক -: এন্ড আই লাভ ইউ!

হুট করেই তাকায় মেঘনা ।অভিক কি বলছে সে টা বুঝতে তার কয়েক মিনিট লাগলো ,তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে ।অভিক মেঘনার অবাক মুখ দেখে হাসল ,তাকে রেখেই সে সামনে এগিয়ে এসে ফুচকার একটা প্লেট তুলে নিলো ।মেঘনার সামনে ধরে ,মেঘনা এখনো থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভিকের মুখের দিকে তাকিয়ে ।অভিক তা দেখে শান্ত গলায় বলে 

অভিক - : ফুচকা নেও !

মেঘনার কোনো হুস নেই ,সে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ।অভিক ফের বলে তবে এবার ও একি কান্ড।এবার অভিক একটা ফুচকা নিয়ে মেঘনার মুখে পুরে দিলো ।হুস ফিরল মেঘনার , অভিকের দিকে তাকায় এ চমকানোর ভঙ্গিতে বলে 

মেঘনা -: আপনি আমাকে ভালোবাসেন?

অভিক -: আমি কখন বললাম ?
মেঘনা -: একটু আগে যে বললেন 
অভিক -: আর কি বলেছিলাম ?

মেঘনা -: আই লাভ ইউ 

অভিক এবার নিজের চমকানোর ভঙ্গিতে বলে ।

অভিক -: ওয়াও জান তুমি আমাকে ভালো বাসো বলছো ,আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ।এখন যখন তুমি আমাকে ভালোবাসি বলছো তখন আমি ও বলে দেই ,আই লাভ ইউ! 

মেঘনা হতবাক হয়ে তাকায় ।ছেলেটা তার সাথে ফান করছে ? হ্যা তাই তো এই জন্যই তার কথা তাকেই ফেরত দিলো ।মেঘনা কোনো পাত্তা না দিয়ে ফুচকা নিয়ে মুখে তুলে নিলো ।এবার সে অভিক কে বলে 

মেঘনা -: আপনি খাবেন না ? 

অভিক -: আমি এই সব খাই না ! তুমি খাও 

মেঘনা -: আরে একটু খেয়ে দেখুন অনেক মজা !

অভিক -: না লাগবে না তুমি খাও ! 

মেঘনা তার মুখে এটা তুলে দেয় ।অভিক অনেক কষ্টে সেটা খেয়ে বলে 

অভিক -: অনেক স্পাইসি ইয়ার ! 

মেঘনা জ্বালে হু হু করছে এর পরেও বলে ।

মেঘনা -: কোথায় জ্বাল আপনি খেতেই জানেন না।

অভিক হাসল ,মেঘনার খাওয়া শেষ হতেই সে বিল মিটিয়ে চলে আসল ।হাত ধরে হাঁটা দিলো ,হাঁটতে হাঁটতেই অভিক কে মেঘনা প্রশ্ন করে 

মেঘনা -: আমাকে বিয়ে কেনো করছেন ? 

অভিক -: মানুষ বিয়ে কেনো করে ? 

মেঘনা ও প্রশ্ন করে ।
মেঘনা -: কেনো বিয়ে করে মানুষ? 

অভিক -: সেটা মানুষ কেই জিজ্ঞেস করো ।আমাকে কেনো করছো 

মেঘনা এবার হাসতে হাসতে বলে ।

মেঘনা -: তার মানে আপনি বলছেন আপনি মানুষ না ! সো ফানি ! 

মেঘনার কথা শুনে অভিক নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে ।

অভিক -: আমি যে কি সেটা তোমাকে ভালো করে বুঝাতে হবে না ।কারন তুমি তো জানোই যে আমি হট বয় ! 

মেঘনা থেমে যায় ,অভিক তাকে বার বার একি কথা কেনো বলে ।অভিক তার দিকে তাকিয়ে বলে .

অভিক -: মেঘ রানী হাতে ফুল পড়বে ? 

মেঘনা তাকায় , কিন্তু কিছু বলে না ।অভিক তার হাত ধরে সামনে নিয়ে যায় ।সামনেই ফুলের দোকান নিয়ে বসে আছে একজন ছেলে ।অভিক তাকে বলে একটা বেলি ফুলের মালা নিলো ।মেঘনা সব টা দেখছে ,অভিক সেই মালা টা নিয়ে মেঘনার হাতে নিজ থেকেই পড়িয়ে দিলো । অসম্ভব সুন্দর একটা মুহূর্ত মেঘনার জন্য।কারন এর আগে সে কত স্বপ্ন দেখেছে এমন কেউ একজন তার হাতে ফুলের মালা বেঁধে দিবে ।তবে কখনো হয় নি কিন্তু আজ এই জিনিস টা সত্যি হলো ।মেঘনা মনে মনে মুগ্ধ হয়ে বলে 

মেঘনা -: যে পুরুষ নারীর ভালোবাসা বুঝে আর সেটার মূল্যায়ন করে সেই পুরুষই শ্রেষ্ঠ পুরুষ! আর সেটা হয়তো আপনি অভিক ! 

অভিক মেঘনার হাত ফুল টা বেঁধে তার দিকে তাকায় ।সেই হাতের পিঠেই নিজের উষ্ণ ওষ্ঠ স্পর্শ করল ,কেঁপে উঠলো মেঘনা ।অভিক তার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে 

অভিক -: তুমি নারী ! তুমি নারী হিসেবই অনেক সুন্দর ।আমার কাছে তুমি সব ,তোমাতেই আমার শুরু তোমাতেই আমি শেষ ।নারী সুদর্শন কাউকে চায় না ,নারী চায় তাকে কেউ একজন কঠিন ভাবে ভালো বাসুক তাই না মেঘ ! 

মাথা উপর নিচ করে হ্যা বলে মেঘনা ।আজ মুগ্ধ থেকে মুগ্ধ হচ্ছে মেঘনা । সত্যি তার বাবা মা তার জন্য সঠিক মানুষ টাই বেছে নিয়েছে । অভিকের প্রতিটা কথায় মুগ্ধ হচ্ছে সে ,চোখ ভরে উঠল মেঘনার ।ঠিক এমন একটা মানুষ কেই নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছে সে সব সময় ।অভিক মেঘনার গালে হাত দিয়ে বলে 

অভিক -: এখন আমাকে বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই তো মেঘ রানী ?

দুই দিকে মাথা নাড়িয়ে না বলে মেঘনা ।অভিক হাসল ,মেঘনা কে নিয়ে হাঁটা ধরলো সে।অভিক তা হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে আছে মেঘনা এক দৃষ্টিতে তাকে দেখছে ।অভিক ধিজ থেকেই কথা বলছে তার সাথে ।আর মেঘনা তাকে মন ভরে দেখছে ,কালো শার্ট, সিল্ক চুল ,মুখে এক চিলতে হাসি সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে অভিক কে মেঘনার কাছে ।হাঁটতে হাঁটতে তারা নদীর ঘাটে এলো ।অভিক বলে ..

অভিক -; নৌকায় উঠবে ! 

মেঘনা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো ।তার নৌকায় চলতে বেশ‌ লাগে । অনেক মজা ও করে সে ,অভিক একজন মাঝি থেকে তার নৌকা ভাড়া নিলো ।তা দেখে মেঘনা বলে 

মেঘনা -: মাঝি ছাড়া নৌকা চলবে কেমন করে ? 

অভিক -: আপনার মাঝি থাকতে অন্য মাঝি কেনো খুঁজেন ম্যাডাম! 

মেঘনা বুঝল যে অভিক নিজেই নৌকা চালাবে ।তাই তারা দুজনে উঠলো নৌকায় ।অভিক বৈঠা হাতে নিয়ে পানিতে ঠেলা দিতে লাগলো , নৌকা চলতে লাগলো ।খোলা নদী ,আর মাঝ খানে একজোড়া কপত কপতি নৌকার যাত্রী।মেঘনা হাত দিয়ে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে , হঠাৎ করেই সেই পানি নিয়ে অভিকের উপর ছিটিয়ে দিলো ।অভিক চোখ বন্ধ বলে বলে 

অভিক -: মেঘ দুষ্টুমি করো না একদম 

মেঘনা -: কেনো হট বয় কে কুল করছি !

অভিক -: আমি কুল হওয়ার ছেলে নয় ।

মেঘনা এবার শুনিয়ে শুনিয়ে বলে অভিক কে ।

মেঘনা -: আমি জানি কত কতো টা হট !

অভিক -: তাই নাকি ম্যাডাম! 

মেঘনা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো , বিকেলে আকাশ । চারদিক থেকে ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগছে ।প্রিয় মানুষ টা সামনেই বৈঠা চালিয়ে যাচ্ছে তবে নজর তার মেঘনার দিকে নিবদ্ধ।মুখে নেই কোনো শব্দ, নিস্তব্ধ নদীতে পানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই ।মেঘনা বেশ খুশি মনে প্রশ্ন করল 

মেঘনা -: আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে ?

অভিক -: আমার হৃদয়ের বাগানে তুমি একটি মাএ গোলাপ ! 

নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলেছে সে ,তবে এবার ও মুগ্ধ হলো মেঘনা ।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে । নৌকা চলছে তো চলছেই ,এবার থামল ।এপাড় এসে তারা নেমে পড়ল ।আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে হয়তো বৃষ্টি পড়বে ।মেঘনা আর অভিক মিলে ভেতরে আসলো ,এখানে তেমন একটা লোক জন নেই ।থাকলেও হয়তো এই সময় নেই ,অভিক মেঘনার হাত ধরে হাঁটছে,মেঘনা ও হাঁটছে। অভিক নিজ থেকেই প্রশ্ন করলো 

অভিক -: মেঘ আমাকে কি নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করছো তুমি? 

#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৮
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

পাট ৮

অভিকের প্রশ্নের উত্তর মেঘনা দিবে ? তবে কি করে । লজ্জা কেনো পাচ্ছে সে ? যদি উওর টা না দেয় তাহলে কি অভিক রাগ করবে ? হয়তো করবে ।মেঘনা কথা বলবে তখনি আকাশ ঝলকে বৃষ্টি নামতে লাগলো ।অভিক মেঘনার হাত ধরে তাকে নিয়ে ছুটে এলো একটি টিনের চালের নিচে।দুজন হাঁপাতে লাগলো মেঘনা বলে 

মেঘনা -: এমন করে কেউ ছুট লাগায় নাকি ? 

অভিক -: না হলে তো ভিজে যেতাম !

মেঘনা -:এতো সুন্দর বৃষ্টি না ভিজলে কেমন দেখায় না ! 

অভিক তাকায় ,মেঘনা তার দিকেই তাকিয়ে আছে ।অভিক ইশারায় না বলে তবে মেঘনা ঠোট উল্টিয়ে তাকাতেই সে আর কিছুই বলে না ।এক ছুটে বাহিরে এসে পড়ল ।আকাশ থেকে টপ টপ করে বৃষ্টির ফোঁটা তার শরীরে পড়ছে । মেঘনা দুহাত মেলে গোল হয়ে হয়ে ঘুরছে ।অভিক মুগ্ধ চোখে তাকে দেখছে ,বুকে হাত ভাজ করে দাড়ালো সে ।মেঘনা অভিকের দিকে তাকিয়ে তাকে ডাকল ।অভিক না বলে তবে মেঘনা শুনে না ,এগিয়ে এসে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো ।

অভিক মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে ।

অভিক -: ইউ +মি এন্ড rain ! 

মেঘনা খিল খিল করে হেসে দিলো ।অভিক তার হাত ধরে গোল গোল ঘুরিয়ে দিলো ।মেঘনা হাতে পান জমিয়ে তার মুখের উপর মারল ,অভিকের কানের কাছে এসে বলে ।

মেঘনা -: এই বৃষ্টি দিনে তুমি আর আমি ,কি যেনো বলে তাকে !

অভিক -: প্রণয়ের শ্রাবন! 

মেঘনা হেসে দিলো ।অভিকের গলা জড়িয়ে ধরে , কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের‌ কাছে টেনে নিলো অভিক তাকে ।চোখে চোখ রাখল মেঘনা ,একে অন্যের চোখে ভালোবাসা দেখল । মেঘনা কে নিজের আরো কাছে টেনে নিলো অভিক ,চোখে চোখ ।একে অপরের উপর নিঃশ্বাস উপড়ে পড়ছে তাদের । আকাশের মেঘের গর্জন জানাল দিলো তারা এখানে একদম একা , হঠাৎ করেই মেঘনার ঠোঁট কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো অভিক ।ভেজা শরীরে একে অন্যতে মতো হলো তারা ,

মেঘনা কতো সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলো , কিছু সময় পার হতেই সেও সায় দিলো অভিকের ছোঁয়াতে।হাত বাড়িয়ে অভিকের পিঠে রাখল ।খামচে ধরল তার শার্টের ভেজা অংশ ,বেশ সময় পর ছেড়ে দিলো অভিক ,

সরে এসে অন্য দিকে মুখ করে নিলো মেঘনা । কিছু সময় নিরবতায় কেটে গেলো । লজ্জায় মাথা নত করে নিলো মেঘনা ।জীবনে প্রথম এমন টা হওয়ায় সে চুপ একদম নিস্তব্ধ।অভিক আকাশের দিকে তাকায় এ বলে 

অভিক -: বৃষ্টিতে পড়া প্রতিটা ফোটার মতো ,যেনো কোনো‌ কাহিনির গল্পের মতো । হৃদয় থেকে মন পর্যন্ত যা পৌঁছে যায় ,আমি তো তোমার আশিক হলাম ! 

রাত একটা তিন , বেডরুমের গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে মেঘনা ।রাতেই বাড়ি ফিরেছে ,কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে নি কোথায় গিয়েছিলে ।কারন সবাই জানে অভিকের সাথে ছিলো সে । তানিয়া বেগম মেঘনা কে দেখেই কড়া গলায় বলেন 

তানিয়া বেগম -; দু দিন পর যার বিয়ে সেও নাকি এমন বৃষ্টিতে ভিজে ,জ্বর না বাঁধলেই হয় ।

মুখ ভেংচি দিয়ে নিজের রুমে এসে পড়েছে মেঘনা।আজকেল ঘটনার পর একা থাকতেও তার লজ্জা করছে ।কি হলো ,সেটা ভাবতেই কেমন যেনো লাগে তার কাছে ।সব মিলিয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে সে , অভিকের প্রথম স্পর্শ সে হয়তো কখনো ভুলতে পারবে না ।মেঘনা নিজের মুখ ডেকে বলে 

মেঘনা -: ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা! এতো লজ্জা করছে কেনো আমার! 

নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেলে সে ।সূচনা তাকে ভালো করেই লক্ষ্য করছে ,বেশ কয়েক বার জিজ্ঞেস ও করেছে কি হয়েছে তোর বলে ।তবে মেঘনা তার প্রশ্নের কোনো জবাব দিলে তো ! তাই না ।সে তো নিজের মনে প্রণয়ের কথা ভাবতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।তার কি আর দিন দুনিয়ার খবর আছে ! সে ভাই যে লোক অভিকের সামনে আর জীবনে যাবে কি না সন্দেহ আছে এতে ।এই যে এখন ঘুমের মধ্যে ও অভিকের কথা ভেবে মুচকি মুচকি হাসছে সে ।মনে মনে একটাই চাওমা মেঘনা !

মেঘনা -: ওনি যেনো আমার সামনে না আসে প্লিজ গট ! চোখে চোখ রাখতে পারবো না আমি ! 

বরং হারিয়ে যায় সে ।তবে ভাগ্য কি এতো সুখ সহ্য করে ? হয়তো না ।ভাগ্য সবার খুশি সহ্য করে না ,----

কলেজের রাস্তায় একটা অচেনা মেয়ের সাথে অভিক কে দেখে চমকে যায় মেঘনা ।দেখল তো দেখলো তাও কিনা এমন অবস্থায়! যা দেখে তার মাথায় রাগ চড়ে যায় ।ছেলেটা তার সাথে বেইমানি করছে এটা বুঝতে পেরেই রেগে অবস্থা খারাপ মেঘনার ।হাত কচলাতে কচলাতে বলে 

মেঘনা -: আমার সাথে বিয়ে রটিয়ে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম লাগাবি ! 

এগিয়ে এলো মেঘনা ,মেয়েটা অভিকের সাথে লেগে আছে ।এক বাহু জড়িয়ে ধরে কান্না জড়িত গলায় বলে 

রূপা -: অভি প্লিজ তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না ।আমাকে বুঝতে চেষ্টা করো । তুমি আমাকে ফিরে নেও ,দেখবে আমরা অনেক সুখি হবো ! প্লিজ অভি ! 

মেঘনা -: অভিক ! আপনি তলে তলে যে টেম্পু চালান সেটা তো আগে বলেন নি ? 

হঠাৎ মেঘনা কে দেখে চমকে যায় অভিক ।মেয়েটাও বেশ অবাক হয় ,অভিকের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায় মেঘনা ।অভিক কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ।মেঘনা এগিয়ে এসে চেঁচিয়ে বলে 

মেঘনা -: সাহস‌ কতো তোর ! আমার সাথে বিয়ে রটিয়ে অন্য মেয়ের সাথে প্রেম ঘটাচ্ছিস ! তোর একটা একটা চুল আমি টেনে টেনে ছিড়বো বলে দিলাম ! 

রূপা -: এই মেয়ে কে তুমি? আর অভির সাথে এমন করে কথা বলছো কেনো ? কমনসেন্স নেই তোমার ? 

মেঘনা তার কথা শুনে হা হয়ে যায় ,আরো রেগে গিয়ে অভিক কে বলে ।

মেঘনা -: এ এই মেয়ে আমাকে যা নয় তাই বলছে আর আপনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছে ? আপনি যে এতোটা খারাপ তা তো আমি জানতাম না ! আপনাকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো !

রূপা -: অভি কে এই মেয়ে ! আর এমন করে তোমার সাথে কথা বলছে কেনো ?

এবার‌ শান্ত গলায় অভিক বলে ।

অভিক -; আমার কাজিন হয় ও !

হা হয়ে যায় মেঘনা ।এবার বলে সে 

মেঘনা -: আমি শুধু আপনার কাজিন হই ?

অভিক -: আরো কিছু হও বুঝি ? 

মেঘনা -: অবশ্যই হই আমি ! আমি আপনার হবু বউ ।আপনার অর্ধেক বউ ভুলে গিয়েছেন ।ওই দিন রাস্তায় তো ভালোই আমাকে ….

মুখে এক হাত দিয়ে চুপ করে দিলো অভিক ।মেঘনা চোখ বড় বড় করে কটমট করছে রাগে ।অভিক অবাক মেঘনার কান্ডে ,এতোটা যে সে রেগে যাবে তা ভাবতে পারে নি অভিক।অভিক মেঘনার কানে কানে বলে 

অভিক -: নিজে‌ যখন কিস করো তখন কিছু না আমি করলেই দোষ! আর এখানে ওর সামনে আমার মান সম্মান খাবে নাকি ? বেচারি এমনিতেই ছ্যাঁকা খেয়ে বেকা হয়ে আছে ,আর কষ্ট দিলে ও তো অভিশাপ দিবে আমাদের ! তখন দেখা যাবে আমার ফাস্ট নাইট গেলো কেল্লায় ! 

মেঘনা কপাল কুঁচকে নেয় ,অভিক ওকে শান্ত হতে দেখে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে ।এবার শান্ত গলায় বলে 

অভিক -: গুড গাল আর কোনো কথা বলবে না ।আগে ওকে দেখে নেয় কেমন ।এর পর মন ভরে রোমান্স করো !

রূপা -: অভি তুমি ওর মুখ ধরে আছো কেনো ? 

অভিক এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে ।

অভিক -: ওর সাথে আমি যাই করি না কেনো তাতে কি তোমার ।আর হ্যা মিস রূপা আমি আগে ও বলছি আর এখন ও বলছি ! আমার বন্ধু্র কথা নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে দেন ।ওর বিয়ে হয়েছে এক টা বাচ্চা ও আছে ।বিয়ের আগে যা কিছু হয়েছে তা হতেই পারে এটা স্বাভাবিক তবে এখন ওর বিয়ে হয়েছে আর কোনো কথাই নেই ওকে ! 

মেঘনার হাত ধরে সেখান থেকে এসে পড়ল অভিক ।বুঝল না মেঘনা কি বলছে সে ,রূপা নামক মেয়েটা পেছন থেকে চেয়ে রইল শুধু।মেঘনা কে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো অভিক ।নিজেও বসে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো ,মেঘনা হা করে দেখছে তাকে ।যেটা অভিক লক্ষ্য করেছে তাই সে বলে 

অভিক -: আমি জানি যে আমি অনেক সুন্দর তাই বলে এই ভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাবে আমায় ? 

মেঘনা -: আমি মোটেও আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছি না ! 

অভিক -: তো কি করছেন আপনি ? 

মেঘনা -: ওই মেয়েটা কে ছিলো ?

অভিক এবার লুকিয়ে হাসল ,তবে মেঘনা কে বুঝতে দিলো না ।মেঘনা কে বলে 

অভিক -;যে মন চায় সে হবে ! তোমার কি তাতে 

মেঘনা -: আই এম ইউর ফিয়ান্সী ।আর আমি কে মানে ? আমার সব কিছু জানার অধিকার আছে !

অভিক চোখ ছোট ছোট করে বলে।

অভিক -: আর ইউ জেলাস মেঘ !

মেঘনা -: নো! 

অভিক হেসে দেয় ,মেঘনার রাগে গজগজ করতে থাকা মুখ দেখে তার বড্ড হাসি পেলো তাই সে বলে ।

অভিক -: তুমি মিথ্যা টা ও ঠিক মতো বলতে পারো না মেঘ !

মেঘনা অবাক হয়ে বলে .

মেঘনা -: আমি মোটেও মিথ্যা বলছি না ।আর শুনুন আগে এটা বলুন কে ওই মেয়ে ।নাহলে আমি ফুপি কে বলবো 

অভিক -: কি বলবে ?

মেঘনা দম নিলো ,একটু থেমে বলে 

মেঘনা -: আমি বলে দিবো যে আপনি অন্য একটা মেয়ের সাথে রাস্তায় ঢলাঢুলি করেন ! 

অভিক গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাচ্ছে আর বলে ।

অভিক -: ওকে তাহলে আমি ও বলে দিবো ,যে তুমি মাঝ রাস্তায় আমার আমাকে কিস করেছো ! এখন কোথায় ঢলাঢুলি আর কোথায় কিস …!

মেঘনা অদ্ভুত একটা কান্ড করে বসলো ,অভিক গাড়ির ব্রেক কষে .নিজের চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলে ।

অভিক -: মেঘ চুল ছাড়ো আমার ,আহ ! মেঘ ছাড়ো লাগছে তো 

মেঘনা অভিকের চুল টেনে ধরেছে ।নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের না আনতে পেয়েই সে এমন টা করেছে।অভিক ফের চেঁচিয়ে উঠলো ।তবে মেঘনা থামে না নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে সে বলে 

মেঘনা -: অনেক বেশি কথা বলেন আপনি অভিক ! আমাকে চিনেন শুধু,এতো দিন ধরে খালি আমাকে জ্বালাতন করেছেন ,এবার আমার পালা অনেক হয়েছে ! আর কোনো মেয়ের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করবেন !

অভিক -: না না করবো না আমার আম্মা এবার চুল ছাড়ো !

মেঘনা -: আমি আপনার আম্মা হলাম কি করে ? 

অভিক নিজের মাথার ব্যথায় কঁকিয়ে উঠছে ।এবার সে বলে 

অভিক -: না বউ , আম্মা হবে কেনো তুমি তো আমার বউ ।আমার লক্ষী বউ এবার আমার চুল গুলো ছাড়ো ! 

চুল ছেড়ে দিলো সে ।অভিক সোজা হয়ে বসে আছে ,নিজের মাথায় হাত দিয়ে ।মেঘনার হাতে তার কয়েক টা চুল এসে পড়েছে ।বেচারা ব্যথায় মাথা নাড়াতে ও পারচ্ছে না ,যেটা বড়ো কষ্টে ! অভিক নিজের মাথা ধরে বলে 

অভিক -: ও আল্লাহ কোন শাকচুন্নী কে বিয়ে করতে যাচ্ছি আমার জীবন তো তেজ পাতা করে দিবে ।বিয়ের আগে এতো গুলো চুল তুললো ! না জানি বিয়ের পর আমার পুরো খাল না তুলে দেয়! 

মেঘনা বাঁকা চোখে তাকাতেই ,অভিক বলে ।

অভিক -: এমন‌ করে কেউ কারো চুল টানে বুঝি 

মেঘনা -: এমন করে কেউ কাউকে জ্বালাতন ও করে না স‌্যার ।এবার বলেন ওই মেয়েটা কে ?

অভিক বুঝলো নিজের জেলাসির কারনে সে এমন টা বলছে ।তাই ও বলে 

অভিক -: মেয়েটা আমার বন্ধুর এক্স ।ডাবল টাইমিং করতে গিয়ে ধরা খেলো । বন্ধু ছ্যাঁকা খেয়ে আমার দুঃখ সামলাতে না পেয়ে বিয়ে করে নিলো ।বিয়ের এক বছরেই ওর প্রেমিকা কে ভুলে থাকার চেষ্টা করে হয়েই নিলো একখানা আন্ডা সরি বাচ্চা।আর এই এক বছরের পর ওর সাথে ডাবল টাইমিং করা প্রেমিকা বুঝলো তার ভুল ।এবার সে আমারে ধরছে ওর এক বাচ্চা বাপ প্রেমিকের কাছে নিয়ে যেতে ।আমি মানা করছি ও আমারে জড়িয়ে ধরল ।সব সিনিয়র আপু প্যারা আমার উপর দিয়েই যায় এখন বউ টাও আমায় মারল ! কি কষ্ট টা হচ্ছে এখন আমার কাকে বুঝাবো আমি ! 

তার কথা বলার ভঙ্গিতে হেসে ফেললো মেঘনা ।হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে সে ,অভিক তার সেই হাসি দেখে নিজেও হেসে দিলো ।চুলে হাত চালাতে চালাতে বলে 

অভিক -: বউ এমন করে হেসো না বুকে লাগে তো ! 

চুপ মেঘনা ,তার আর কথা বলার দরকার নেই এই অসভ্য লোকের সাথে ।লোকটা অনেক পাজি এই যে এখন ও তার সাথে বদমাইশি করবে তাতে নিশ্চিত সে ।অভিক তাকে চুপ হতে দেখে বলে 

অভিক -; কি হলো মেঘরানী চুপ করলে যে ! 

মেঘনা -: আমি বাড়ি যাবো ।

অভিক -: সেটা তো আমি ও জানি । আচ্ছা পরশ তো আমাদের বিয়ে তাই না 

বিয়ের কথা কানে আসতেই কেমন করে উঠল মন মেঘনার ।ভালো লাগা লজ্জা খুশি কষ্ট সব মিলিয়ে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে তার মনে ।মুখের হাসি মিলিয়ে যায় ,মাথা নত করে নেয় সে লজ্জায়।মনে পড়ল বৃষ্টি ভেজা সেই সন্ধ্যার কথা ।যা তাকে লজ্জায় নত করে দিলো ,অভিক তার দিকে তাকিয়ে থেকে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলে 

অভিক -: কাল বাদে পরশু আমার মেঘ আমার কাছে থাকবে কথা টা ভাবতেই আমার অনেক আনন্দ লাগছে মেঘ ! 

মেঘনা কিছু বলে না , বরং চুপ করে যায় ।তার লজ্জায় এখন আর কথা বলতে চাইছে না ।অভিক হাসল ,তার জীবন বোধহয় এখানেই সুখি।গাড়ির চালাতে লাগলো অভিক ,মেঘনা বাহিরের দিকে তাকায় এ ভাবতে লাগলো 

মেঘনা -: জীবন কতটা সুখি তাই না আজ থেকে তিন সপ্তাহ আগে অব্দি আমার জীবনে কেউ ছিলো না ।আর একদিনেই কি পরিবর্তন হলো ? আমার জীবনে আসল অভিক ! একটা সামান্য গেমের জন্য তাকে কিস করলাম‌। সামান্য একটা ফান করার কারনে যে ওনি আমাকে পছন্দ করবেন আর বিয়ে ও করবেন এটা ভাবতেই কেমন লাগছে আমার ।এই তো দুই দিন পর আমি একে বারের জন্য ওনার হয়ে যাবে ! শুধু মেঘনা নয় বরং অভিকের মেঘ ! 

মুচকি হাসল মেঘনা ।অভিক তা দেখে দুষ্টুমি করে বলে 

অভিক -: চুপচাপ অবস্থায় মেয়েদের মুচকি হাসি বিপদের সংকেত! 

মেঘনা -: এই আপনি এতো দিকে লক্ষ্য করেন কেনো ? চুপচাপ গাড়ি চালান তো ! অসভ্য লোক 

অভিক আশেপাশে তাকিয়ে বলে ।

অভিক -: বউয়ের মুখে অসভ্য ডাক টা শুনা যে কতটা কি সেটা তুমি বুঝবে না ! 

গাড়ি থামল ,,মেঘনা নিজের বাড়িতে এসে পড়েছে ।কাল ওর হলুদ আজ মেহেদী,সূচনা তো সেই কখন থেকে মেহেদী লাগাতে বসে গিয়েছে ।মেঘনা ঢুকতে তাকে নিজে কাছে ডাকল ।সূচনার মুখের হাসি দেখে হাসল মেঘনা ।সূচনার পাশে বসতেই সে বলে 

সূচনা -: এতো সময় ধরে কোথায় ছিলি তুই? জানিস সেই কখন থেকে বসে ছিলাম তোর জন্য আমি ? জানিস মেহেদি ওয়ালি কখন থেকে এসে আছে ।নে জলদি বস ! 

তানিয়া বেগম -: মেঘ ! অভিক কি চলে গিয়েছে !

তানিয়া বেগম রুমে এসে বলছিলেন এমন টা ।মেঘনা সূচনার পাশে বসতে বসতে বলে ।

মেঘনা -: হ্যা ওনি চলে গিয়েছে !

তানিয়া বেগম আর কিছু না বলে চলে যান ।সূচনা তার দিকে তাকিয়ে বলে।

সূচনা - ; তুই এতো সময় অভিকের সাথে ছিলি 

মেঘনা -: হ্যা ছিলাম তো ! 

সূচনা কপাল কুঁচকে বলে ।

সূচনা -: কি করছিলি তুই? 

মেঘনা নিজের হাতে মেহেদী পড়তে বসে পড়লো ।সূচনা একটার পর একটা কথা বলে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে ।তবে মেঘনা ও কি কম যায় নাকি ? সে ও অনিক কে নিয়ে সূচনা কে বেশ কথা শুনিয়ে দিচ্ছে ।মেঘনা আর সূচনার এই দুষ্টু মিষ্টি মুহূর্ত গুলো দেখেই প্রান ভরে গেলো তানিয়া বেগমের ।ওনি বেশ চোখ ভরে নিজের মেয়েদের দেখছেন,এই তো পরশ হতেই ওনার দুটি মেয়ে চলে যাবে শশুর বাড়ী ।আর এই বাড়িটা খালি হয়ে যাবে ! ওনি একা হয়ে যাবেন ।যেটা ভাবলেই বুক টা ফেটে যায় তানিয়া বেগমের ।ওনি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলেন ,নিজের‌ কাছে চলে যান ।বিয়ে বাড়িতে মেহমানদের সমাবেশ বসছে ।এক এক করে সব আত্মীয়রা এসে পড়ছে ,

মেয়েটা -: আপু ভাইয়ার নাম কি?

মেহেদী ওয়ালী মেয়েটা হঠাত কথায় চমকে তাকায় মেঘনা । হঠাৎ করে মেয়েটা মেহেদী দেওয়ার মাঝে এই কথা বললো কেনো ? মেঘনা ন বুঝে বলে ।

মেঘনা -; আমার কোনো ভাই নেই ! আমরা দু বোন শুধু 

মেয়েটা মেঘনার কথা শুনে হাসতে লাগলো ,মেঘনা তাকে হাসতে দেখে বলে ।

মেঘনা -: হাসছো কেনো ? 

মেয়েটা নিজের হাসি আটকে বলে ।

মেয়েটা -: আপু আমি আপনার ভাইয়ার কথা বলছি না ।আমি আমার ভাইয়ার কথা বলছি 

বলেই সে মিটমিট করে হাসতে লাগলো ,মেঘনা কপাল কুঁচকে নেয় ।এবার সে বিরক্ত হয়ে বলে 

মেঘনা -: তোমার ভাইয়ার নাম আমি কি করে জানবো ? আর তোমার ভাইয়ার নাম তুমি জানো না ?

#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#পর্ব_সংখ্যা_৯
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

পাট ৯ 

মেয়েটা মেঘনার কথা শুনে হাসতে লাগলো ,মেঘনা যে তার কথা বুঝতে পারে নি সে টা সে ভালো করেই বুঝল ।তাই সে হাসতে হাসতে বলে 

মেয়েটা -: আপু আমি আপনাকে না আমার ভাইয়ার কথা বলছি না আপনার ভাইয়ার কথা বলছি ! আমি বলছি আপনার হবু বরের কথা !

এতো সময় পর বুঝল‌ মেঘনা ।নিজেকে কয়েক টা বকা দিলো সে ,সে এতো টা বোকা কবে থেকে হলো ।সব দোষ ওই অভিকের ,মেঘনার মাথা টা পুরো খেয়ে নিয়েছে সে ।মেঘনা অভিক কে বকা দিতেও একটু ও ভুলে না ।মনে মনে আছা রকমে বকা দিলো তাকে ,মেয়েটা কে বলে 

মেঘনা -: আপনি ওনার নাম শুনে কি করবেন ? 

এবার সূচনা নিজের হাত বাড়িয়ে ধরল মেঘনার মুখের সামনে ।হাতের মাঝে খানেই ছোঠ ছোট অক্ষরে লিখা অনিকের নাম ।যেটা দেখে মেঘনা সূচনার দিকে তাকায় ।সূচনা নিজৈর হাতের দিকে ইশারা করে বলে 

সূচনা -: আমার হাতে কি লিখেছে সে ?

মেঘনা স্বাভাবিক ভাবেই বলে ।

মেঘনা -: কেনো ভাইয়ার নাম আর কি !

সূচনা এবার নিজের কনুই দিয়ে মেঘনার মাথায় একটা গাট্টা মারল ,মেঘনার উপর চেঁচিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ।

সূচনা -: সেটাই তো কথা গাঁধী ! ও অভিকের নাম এই জন্যই জিজ্ঞেস করছে কারন‌ তোর হাতের মাঝে ওর নাম লিখে দিবে সে ! 

মেঘনা এবার সব টা বুঝে জীভ কামড় দিলো ।মেয়েটা মেঘনার অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো ,সূচি মেয়েটা কে বলে 

সূচনা -: ওর হবু বরের নাম অভিক ! সুন্দর করে লিখে দেও ! 

মেয়েটা মিষ্টি হেসে মেঘনার হাতের তালুতে অভিকের নাম লিখে দিলো ।মেঘনা মন দিয়ে দেখছে সেই নাম টাকে ।চোখ ভরে উঠলো ওর ,কেনো জানি মনের কোণে কেমন ব্যথা অনুভব করছে ও । কিন্তু কেনো ? তা জানা নেই তার ! মেঘনা নিজের হাতে মেহেদী রাঙ্গা অভিকের নাম টা দেখছে শুধু।সূচনা তার দিকে তাকিয়ে বলে 

সূচনা -; কি‌ ব্যাপার ! এমন করে নাম টা দেখছিস যে ? কাল বাদে পরশু লোক টা তোর ।এখন নাম দেখে কি করবি বল তো ? 

মেঘনা লজ্জা পেলো ,মাথা নত করে নিলো সে।মেঘনা একটু‌ লজ্জিত ভঙ্গিতে হেসে বলে 

মেঘনা :- আপু তুমি এমন করে কথা বলছো কেনো গো ! সরে এখান থেকে 

সূচনা -: ওরে বাবা ! আমি আবার কি বললাম ? যেটা সত্যি সেটাই তো বলছি তোমাকে ! 

মেঘনা -: আপু তুমি অনেক বেশি কথা বলো ।যাও তোমার সাথে কথা নাই ! 

বলেই মেঘনা উঠেই চলে যায় ছাদে ।খোলা আকাশের নিচে দু হাতে মেহেদী পড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে ,জীবন টা কতো রঙ্গিন তাই না ! এই তো হঠাৎ করে তার বিয়ে টা হয়ে যাচ্ছে।রংহীন জীবন টা ভীন্ন রঙে রাঙিয়ে দিচ্ছে! মেঘনা হাসল। অভিক কে মনে করে তার মুখে এমনি এমনি মুচকি হাসি চলে আসে ।এই তো এখন আবার আসছে ! 

_____

সময় টা এখন সন্ধ্যা সাত টা ছুই ছুই।ছাদে ফুল ভলিউমে গান চলছে ।আজ সূচনা আর মেঘনার হলুদ সন্ধ্যা।বাড়িতে মেহমান গিজগিজ করছে ,একটুও দম ফেলার সময় টা হচ্ছে না তানিয়া বেগমের ।কখনো এদিক ছুটছেন তো কখনো ওদিক ছুটছেন ।একটা স্থানে দাঁড়িয়ে পুরো কথা বলার সময় নেই তার ,বাড়ির দুই মেয়ের বিয়ে বলে কথা ।বসে কি আর থাকা যায় ,মেঘনা আর সূচনা কে রেডি করে এখন ছাদে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কাজিনরা ।অভিক আর অনিকের বাড়ি থেকে হলুদ এসেছে ,তার সাথে কয়েক জন মেহমান ও এসেছে ।তাদের মধ্যে একজন , তন্নী অভিকের ছোট বোন ।বয়সে মেঘনার সমাবয়সী সে ।মেঘনা কে একটা পর একটা কথা বলে লজ্জা দিচ্ছে ,মেঘনা কয়েক বার ধমক ও দিয়েছে তবে সে কার কথা শুনে আবার ! তন্নী মেঘনা আর সূচনা কে নিয়ে ছাদে আসলো ।ছোট করে সব কিছুর আয়োজন করা হয়েছে ছাদের মধ্যেই ।মেঘনা আর সূচনা কে হলুদ ছুয়ে দিলেন তার বাবা মা ! 

তানিয়া বেগম -: আমার ছোট মেয়ে দুটো এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে বড় হয়ে গেলো ? তোরা নিজেদের খেয়াল রাখিস ! 

একে একে সবাই হলুদ ছুয়ে দিলো তাদের ।শেষে সবাই নাচ গানে ব্যস্ত হলো ,তখনি তন্নী এসে মেঘনা কে বলে 

তন্নী -: আপু তোমাকে না নিচে ডাকছে ! 

মেঘনা -: কে ডাকছে তন্নী ? 

তন্নী -: নিচে গেলেই তো দেখতে পারবে ।যাও !

মেঘনা নিজের শাড়ি উঁচু করে ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো ।নিচের দিকে টায় এখন কেউ নেই ।পুরো ফাঁকা হয়ে আছে স্থান টা ,সবাই উপরে আছে হলুদের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত। তন্নীর কথা মতো মেঘনা নিচে তো এলো ! তবে এখানে কেউ নেই দেখে তার কপালে ভাঁজ পড়ল ।আবারো উপরে চলে যাবে বলে পা বাড়িয়ে ছিলো ঠিক তখনি কেউ একজন তার শাড়ি ভেদ করে নিজের উষ্ণ হাত দিয়ে তার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো । আকস্মিক ঘটনায় অবাক হয়ে গেলো মেঘনা , চেঁচিয়ে উঠল সে 

মেঘনা -: আরে কে ! কে আপনি ! 

দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল তাকে অভিক ।চোখ মুখ ভয়ে খিচে বন্ধ করে নিলো মেঘনা ।ভয়ে জড়জরিত হয়ে সে চিৎকার দিলো তবে উপরে গান চলার কারনে তার কথা কেউ শুনতে পেলো না । অভিক তার উপর ঝুঁকে পড়ল ,মেঘনা চোখ পিটপিট করে তাকায় ।নিজের সামনে হলুদ পাঞ্জাবীতে এক উজ্জ্বল বর্ণের পুরুষ কে দেখে হৃদয় থমকে গেলো যেনো তার ।হা করে অভিক কে দেখতে লাগলো সে ।তা দেখে অভিক দুষ্টু হেসে বলে

অভিক -: কি করছো বউ বিয়ের আগেই নিজের বর কে এমন করে দেখে তার ইজ্জত লুটে নিচ্ছো ? ইটস নট হেয়ার বেবি ! 

অভিকের কথায় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল মেঘনা ।অভিক ফের বলে .

অভিক -: প্রথম দিন তুমি আমাকে কিস করেই ইজ্জতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো ! আজ আর বাকী ইজ্জত টুকু খেয়েও না প্লিজ ! 

মেঘনা দিলো এক ধমক ।

মেঘনা -: এই আপনার মাথা ঠিক আছে ? কি সব উল্টোপাল্টা কথা বলছেন আপনি ?

অভিক আরো একটু ঝুঁকে এসে তার কানের কাছে মুখ নিয়ে স্লো ভয়েসে বলে ।

অভিক -: তোমাকে দেখলে আমার মাথা মন কোনো টাই ঠিক থাকে না জান ! সব এলোমেলো হয়ে যায় । আমাকে বিধ্বস্ত করে তুমি কি এমন শান্তি পাও ! যে আমার জন্য মরন সাজ সেজে বসে আছো ! 

মেঘনা -: ইশশশ 

গা কাটা দিয়ে উঠার মতো বাক্যের মধ্যে মেঘনা চোখ মুখ খিচে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো ।অভিক তার অনেক কাছে ,কানের লতিতে তার ওষ্টের উষ্ণ স্পর্শ সে অনুভব করতে পারছে ।মাতাল করা বডি স্মেল নাকে বার বার বারি খাচ্ছে।অভিক তাকে দেওয়ানা করে দিয়ে আরো বলে 

অভিক -: মেঘ তুমি আমার সুখের ঠিকানা হবে ? তুমি আমার পাগলি প্রেমিকা হবে ? যে আমাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে ! আমার জীবনের অন্যতম সেরা খুশি‌ হবে ! যা পেয়ে আমি আর অন্য খুশিতে মত্ত হবো না ! আজ‌ একটা কথা বলি মেঘ !

মেঘনা এখনো অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।চোখ তার বন্ধ ,অভিক তাকে আবারো বলে ।

অভিক -: বলবো ?

মেঘনা -: হুম 

অভিক তার আরো কাছে এলো ।মেঘনার কাধে নিজের কপাল লাগিয়ে জোরে শ্বাস টানলো সে ।কেঁপে উঠলো মেঘনা ,অভিক এবার আস্তে করে বলে 

অভিক -:আই লাভ ইউ মেঘ !

স্তব্ধ নির্বাক মেঘনা ।শরীরের এতো সময় ধরে হওয়ার কম্পন টা এখন থেমে গিয়েছে ।একদম বরফের ন্যায় জমে গিয়েছে সে ,অভিক আবারো বলে 

অভিক -: তোমাকে প্রথম বার দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি ।পরে যখন জানলাম তোমাকেই দেখতে এসেছি তখন আর না করিনি ।বিয়ের জন্য হ্যা করে দিয়েছি । তুমিই বলো ,যদি পাখি নিজে এসে খাচায় ধরা দেয় ।তাহলে কি তাকে না বলা যায় ? হৃদয়ের খাঁচায় বন্দী তুমি ! 

মেঘনা মুচকি মুচকি হাসছে ,অভিক একটু সরে এসে বলে 

অভিক - নিজের মাঝ রাস্তায় কিস করতে চাওয়া বউ হলুদ যদি না ছুঁয়ে দেই কেমন লাগে বলো ? 

মেঘনা কপাল কুঁচকে নেয় ।অভিক কে প্রশ্ন করে 

মেঘনা -: আপনি এখানে হলুদ লাগাতে এসেছেন? 

অভিক -: হ্যা 

মেঘনা দেখল ,অভিক টেবিলের উপর থেকে হলুদ নিয়ে এসে তার‌ দিকে এক পা এক পা এগিয়ে আসছে ।মেঘনা তা দেখে সরে এসে বলে 

মেঘনা -:এতো সহজে আমাকে হলুদ ছোঁয়াতে দিবো ভেবেছেন আপনি !

বলেই সে ছুটতে লাগলো ।অভিক হেসে তার পিছু ছুটছে ,নিচের‌ দিক টায় কেউ নেই বিধায় তার কর্ম কান্ড কেউ দেখছে না ।অভিক মেঘনার পিছু ছাড়ছে আর বলছে 

অভিক -: মেঘ থামো বলছি ,নাহলে কিন্তু ভালো হবে না বলে দিলাম !

মেঘনা থামল‌ নি বরং ছুটতে লাগলো সে ।ছুটতে ছুটতে নিজের রুমে এসে পড়ে । দরজা বন্ধ করতে নেয় তখনি সে অভিক ধরে ফেলে ।মেঘনা কে উদ্দেশ্য করে বলে 

অভিক -: আমাকে জ্বালাতন করছো কেনো ? 

মেঘনা কে ধরে ভেতরে প্রবেশ করল অভিক ।মেঘনা অভিক কের দিকে তাকিয়ে বলে ।

মেঘনা -: বিয়ে যেহেতু আমাকে করছেন তো বউয়ের জ্বালাতন সহ্য করতে হবে ।বউয়ের জ্বালাতন সহ্য করবেন না তো কার করবেন শুনি !

নাক উঁচু করে করা টা বলে ।অভিক তার অনেক টা কাছে এসে পড়েছে । দেওয়ালের সাথে মিশে গেলো মেঘনা ,অভিক তার দিকে গোর লাগা কন্ঠে বলে 

অভিক -: জ্বালাতন কাকে বলে জানো তুমি? 
#মন_খাচায়_বন্দী_তুমি 
#অন্তিম_পর্ব
#হ্দিকা_ইসলাম_হিমি 

অভিকের কথায় লজ্জায় ছিটিয়ে গেলো মেঘনা ।এগিয়ে এসে অভিক তার হাত স্পর্শ করলো মেঘনার গালে । কেঁপে উঠলো মেয়েটা ,অভিক এবার নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে নিলো ।এগিয়ে এসে ঝুকে পড়ল ।মেঘনার গালের সাথে ঘষা দিলো তার গাল ,এবার চোখ মুখ নিচে বন্ধ করে কাঁপতে লাগলো ।অভিকের পাঞ্জাবির এক অংশ আকড়ে ধরে আছে মেঘনা ,

অভিক -: মেঘ পাখি !

জোরে শ্বাস ফেলে মেঘনা ,অভিক মাতাল করার মতো গলায় বলে 

অভিক -: ভালোবাসি তোমায় ! নিজের থেকেও অনেক বেশি ! ইউ লাভ মি ? 

উওর টা দিলো না মেঘনা ।সেই অবস্থায় সে নেই আপাতত,অভিক আবারো বলে ।

অভিক -: আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমি কি আমায় ভালোবাসো? বলো না এতো দিনে কি তোমার মনে রাজ করতে আমি পেরেছি ? 

মেঘনা চুপ , কিন্তু অভিক আবারো বলে।

অভিক -: কি হলো বলো ? 

মেঘনা কে জোর করতেই সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ।

মেঘনা -: আমি জানি না ! 

অভিক -: মিথ্যা কেনো বলছো ? তুমি জানো আর শুধু তুমিই জানো ! জবাবের অপেক্ষায় আমি থাকবো ।সময় কাল রাত অব্দি তোমার কাছে ! 

রাত ভর নাচ গান শেষে সবাই নিজ নিজ স্থানে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ।মেঘনা বেশ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েছে ভোরের দিকে ।সূচনার ও একি অবস্থা,তবে সে এখনো জাগ্ৰত আছে ।কারন অনিক এখনো ফোনে তার সাথে কথা বলেই যাচ্ছে।মেঘনা ঘুমের মধ্যে বার বার বিরক্ত হচ্ছ।সূচনা ফিসফিস করে অনিকের সাথে কথা বলছে ,যেটা বিরক্তির কারন হলো মেঘনার কাছে।মেঘনা একটু ঘুমাতে চায় ,তবে আর পারলো না ।তানিয়া বেগম এসেই তাদের উঠিয়ে দিয়ে গেলো ।কি সব নিয়ম আছে নাকি ,

মেঘনা -: দুরহ মা এই সব করলে কি হবে ! বিরক্তিকর যাও তো এখান থেকে ।

তানিয়া বেগম -; দেখ মেঘ এখন ঘুমানোর সময় না ,ওঠ ।উঠি ফ্রেশ হ ! 

মেঘ -: আরেকটু পর মা !

তানিয়া বেগম -: আজ তোর বিয়ে মেঘ 

মেঘনা ঘুম ঘুম গলায় বলে ।

মেঘনা -: বিয়ে কাল‌ করো এখন ঘুমাতে দেও তো !

সূচনা ঘুম ঘুম চোখে ওর কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় । তানিয়া বেগম রাগী গলায় বলেন 

তানিয়া বেগম -: এই মেয়েটা কি জীবনেও মানুষ হবে না নাকি ?‌সূচি তুই ওকে টেনে তুলে নিয়ে আয় তো মা !

তানিয়া বেগম চলে যান নিচে ।আজ বাড়িতে বিয়ে , অবশেষে দিন টা চলেই এলো ।মেঘনা আর সূচনার বিয়ের দিন ।সবাই হাতে হাতে কাজ করছে , কিছু বুড়ো মহিলারা নিজেদের খালি গলায় গিত ধরেছে । বাচ্চাদের হৈচৈ শব্দ আরো মানুষের কথা বলার শব্দ দিয়ে বাজার বসেছে ।মেঘনা আর না পেরে উঠে যায় ,ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই তাকে সবাই ঘিরে ধরল ।একের পর এক নিয়ম পালন করতে লাগলো ।মেঘনা মনে মনে বিরক্ত নিয়ে‌ বলে 

মেঘনা -: বিয়ে করতে হলো যে এতো কিছু সহ্য করতে হয় তা আগে জানলে আমি বিয়েই করতাম না ! 

মেঘনা কে গোসলের পর রেডি করতে কয়েক জন মেয়ে আসে ।বউ সাজতে থাকা মেঘনার মনে এবার কেমন অনুভূতি হচ্ছে। অদ্ভুত লাগছে তার কারনে সে চুপ হয়ে যায় একদম নিশ্চুপ।কোনো কথা বলছে না ,মেয়ে গুলো তাকে আর সূচনা কে রেডি করে দিলো ।তানিয়া বেগম মেয়েদের দেখে আর চোখ ফেরাতে পারেন না ।

কত সময় চোখের জল লুকিয়ে বিসর্জন ও দিয়েছেন উনি।মেয়েদের চোখের আড়ালে তা ,কারন ওনি চান না মেয়ে দুটো তার মতো করে কান্না করুক ।

মেঘনা -: আপু বিয়ে করতে হলে এতো ঝামেলা কেনো প্রহাতে হয় বলো তো ?দূরহ সেই কখন থেকে সং‌ সেজে বসে আছি ।কেউ কিছু খেতে ও দিচ্ছে না ।নিজেরাই গিলে গিলে রাক্ষুসের মতো খাচ্ছে! 

মেঘনার কথায় সূচনা হাসল ।তবে কিছু বললে না সে ।মেঘনা ক্ষিদে জিনিস টা সহ্য করতে পারে না। তার ক্ষিদে পেলেই খাবার খেতে হবে আর এখন তো তাদের খাওয়ার সুযোগ হচ্ছে না ।কেউ না কেউ এসে‌ কথা বলছে ,কেউ ছবি তুলছে ! মেঘনা বিরক্ত হলেও চুপ করে আছে ।আজকের দিনের জন্য তানিয়া বেগম তার মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন !

মালিহা -: দোস্ত আমার জন্য তোর বিয়ে টা হচ্ছে এখন আমাকে কিছু দিবি না ?

মেঘনা -: দিবো তো কাছে আস !

মালিহা এগিয়ে এলো ,মেঘনার সামনে আসতেই সে আলতো করে ওর গালে চড় দিয়ে দিলো ।যা দেখে সাবরিনা হাসতে হাসতে শেষ ,মালিহা গালে হাত দিয়ে মেঘনা কে বলে 

মালিহা -: দোস্ত নিজের বিয়ের দিন ও তুই আমাকে মারলি ? 

মেঘনা -: হ্যা মারলাম কারন আমার বিয়ে টা তোর কারনে হচ্ছে! 

মালিহা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে ।

মালিহা -: হচ্ছে তো ,এখন আমাকে গিফট দে ।তা না দিয়ে আমাকে মারলি ! 

মেঘনা আরো কিছু বলতে যায় তখনি সাবরিনা বলে ।

সাবরিনা -: বরং এসেছে বর এসেছে! দোস্ত তোর বর এসেছে ! 

সাবরিনার কথায় লজ্জা পেলো মেঘনা ।মাথা নত করে নিলো । অনেক নার্ভাস লাগছে তার , নিজেকে শান্ত করে সে চুপচাপ বসে রইল। সাবরিনা মালিহা নিচে চলে যায় ।রুমে একা সূচনা আর মেঘনা ।সূচনা মেঘনার হাত ধরে বলে 

সূচনা -: মেঘ ! আমার কেমন যেনো লাগছে ? তোর ও কি তেমন লাগছে ?

মেঘনা -: অস্থির লাগছে আপু ? 

সূচনা -: হ্যা মন টা বেকুল হয়ে পড়ছে কেনো রে? 

বিয়ে পড়ানো শুরু হলো ।কাজি কে নিয়ে সিদ্দিকী সাহেব মেয়েদের কাছে এলেন ।প্রথমে সূচনার বগয়ে হলো ,এবার মেঘনার পাল্লা ।তাকে কবুল বলতে বলা হলে সে চুপ করে যায় কাজি সিদ্দিকী সাহেব‌কে বলেন ।

কাজি -: মেয়ে কে কবুল বলতে বলেন ! 

সিদ্দিকী সাহেব এগিয়ে এলেন ।মেঘনার মাথায় হাত রাখতেই সে বাবার দিকে তাকায় । অসহায় ছলছল দৃষ্টি দেখে বুক কেঁপে উঠল ওনার।মেঘনা এবার বলে 

মেঘনা -; বাবা আমি বিয়ে করবো না ।তোমাকে ছাড়া থাকতে আমি পারবো না ।আমি বিয়ে করবো না বাবা !

সিদ্দিকী সাহেবের মনে কেঁদে উঠল । কিন্তু নিজেকে শক্ত করে ওনি মেঘনা কে বলে 

সিদ্দিকী -: মা আমার ,বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে তাই না ।মা কবুল বলে দেও ! 

মেঘনা আবার ও কান্না করে দেয় , সিদ্দিকী সাহেব ওকে কবুল বলতে বলে । অনেক কষ্টে সে তিন বার কবুল বলে ।মেয়ের মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে দেন ওনি।মেঘনা কান্না করছে ,কাজি চলছে যান ।সবাই মোনাজাত ধরল ,

মেঘনা আর সূচনা কে বাহিরে নিয়ে এলো ।অভিক আর অনিক বসে আছে ।মেঘনা মাথা নত করে আছে ,অভিক চেয়ে দেখল নিজের বউ কে ।মেঘনা কে অভিকের পাশে বসিয়ে দিলো সবাই ।সূচনার প্রশংসা করতে করতে থামছে না অনিক ।সবাই মিট মিট করে হাসছে ,সূচনা তো লজ্জায় মাথা তুলতেই পারছে না ।অনিক একটু করে বলে 

অনিক -: বউ আমার এতো কেনো ? 

পাট ১১

অভিক কত সময় যে মেঘনা কে দেখেছে সেটা তার হিসেব নেই ।এতো সময় ধরে মেঘনার দিকে তাকিয়ে আছে অভিক যেটা তার কাছে বেশ অস্বস্তিকর ।মেঘনা নিজের হাত কচলাতে লাগলো , থরথর করে কাঁপছে সে ।মেঘনা আস্তে করে বলে 

মেঘনা -: এমন করে দেখছেন কেনো?

অভিক -: নিজের বউ কে দেখছি ! তুমি আমার মরন সাজ কেনো সাজো ? 

লজ্জায় নুয়ে গেলো মেয়েটা ।অভিক হাসল ,সবাই একে একে কথা বলছে তাদের সাথে ।

সময় টা এখন রাত এগারোটা বাজে । সন্ধ্যার দিকে বিদায় দেওয়া হয়েছে মেঘনা আর সূচনা কে। কান্না করতে করতে অবস্থা খারাপ হয়েছে মেঘনার ।এই বাড়িতে প্রবেশ করতেঈ ফুপি রেহানা বেগম তাদের বরন করে নিলেন ।এর আগে কয়েক বার এই বাড়িতে এসেছে মেঘনা তবে আজ এসেছে সে নিজের বাড়িতে ।সারা জীবনের জন্য,নিজের বাড়ি নিজের ঘর তার ।বাড়িতে আসতেই দাদি নানি মামি চাচি মিলে কতো শত যে নিয়ম পালন করল তা কে জানে । হিসেবের বাহিরে তা ,মেঘনা কে কিছু সময় আগেই অভিকের ঘরে বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে তন্নী।মেঘনা ভয়ে ধুরু ধুরু বুক নিয়ে বসে আছে ।

ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার ।সারা দিনের ঝামেলা শেষে এখন তার বেশ অদ্ভুত লাগছে । নিজেকে সব জিনিসের জন্য প্রস্তুত করছে সে ।তখনি দরজা খুলার শব্দ পেলো সে ,চোখ তুলে তাকায় মেঘনা ।অভিক এসেছে ,তার উপস্থিতি বুঝতে পেরে আরো ছিটিয়ে যায় মেঘনা ।থরথর করে কাঁপছে মেঘনা ।অভিক এগিয়ে এসে তার পাশে বসে বলে 

অভিক -; এই গরমের দিনে কে বিয়ে করে বলো তো ? বিয়ে করতে হয় শীতের দিনে! 

মেঘনা তার কথা শুনে কপাল কুঁচকে নেয় তবে কিছু বলে না ।অভিক এবার বলে 

অভিক -; জিজ্ঞেস করবে না কেনো‌ শীতের মধ্যে বিয়ে করতে চাই আমি ! 

মেঘনা কোনো কথা‌ বলে না ।অভিক তা দেখে হাসল এর পর সে তার আরো একটু কাছে এসে বসল ।গা ঘেঁষে বলে -: 

অভিক;-কাল রাতের কথা মনে আছে মিস ? 

মেঘনা লজ্জিত ভঙ্গিতে তাকায় ,অভিক হাসল ।মেঘনার হাতের উলটো পিঠে নিজের ঠোট স্পর্শ করে বলে -; 

অভিক:- উওর দিন ম্যাডাম? ভালোবাসেন আমায়? 

মেঘনা কেঁপে উঠলো ।অভিক আরো একটু কাছে ঘেষে বলে 

অভিক -: মেঘ বলেন ? 

অভিক কে এতো কাছে দেখে ভরকে যায় মেঘনা।অভিকের চোখে চোখ রাখতেই মেঘনা তার বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে নিলো ।অভিক শব্দ করে হেসে দিলো 

অভিক -: ভালোবাসি কথাটা মুখে বলতে হয় না ।বুঝে নিতে হয় ! প্রেম কে মুখে স্বীকার করলেও ভালোবাসা কে মুখ দিয়ে প্রকাশ করতে হয় না ।তা প্রিয় মানুষের ব্যবহারেই প্রকাশ পায় ! 
ভালোবাসা ! তার মতো আর কি হয় বলো তো ? 

প্রথম ভালোবাসা আসলেই সুন্দর।প্রথম প্রেম ভুলে যাওয়া যায় না ।তা কে কাছ থেকে অনুভব করতে হয় ।যা তুমি আমাকে করিয়েছো ? মন খাঁচায় বন্দী তুমি প্রিয়শী…..

সমাপ্ত