১) তুমি যদি না আসতে, তাহলে ধর্মটা আমরা অনুষ্ঠান বলেই জানতাম।।। ধর্ম যে চরিত্রগত করতে হয়, নিত্য আচারের মাধ্যমে, তা হয়তো জানতাম ই না।।। ধর্ম মানে যে বাঁচা বাড়া, তা তুমিই বললে যে, আমাদের ধারনা ছিল, পূজা পার্বন ই ধর্ম।।
২) লক্ষীপূজা করলেই লক্ষীলাভ হয় বলে আমরা জেনেছি, তুমি বললে, "সদাচারে বাঁচে বাড়ে, লক্ষীবাধা তাঁর ঘরে"।  মানে সদাচারে বাঁচলে বাড়লেই, অর্থাৎ লক্ষী চলনাই যে লক্ষীলাভের উপায়, তা জানলাম এবং এ উপলব্ধিও করছি, অসদ আচরণ ও অসাদাচারী চলনে লক্ষী লাভ অসম্ভব, তা বুঝিয়ে দিলে ঠাকুর।।। 
৩) মন যা চায়, তাই খেতে হয়, এটাই আমরা জানতাম, তুমি এসে দুম করে বললে যে, "মাছ মাংস খাসনে আর, পিঁয়াজ রসুন মাদক ছাড়"। শুধু নিরামিষ আহার বলেই তুমি ক্ষান্ত হলেনা, বললে স্বত্বিক আহার গ্রহণের কথা, এবং আমাদেরকে ওরকম করিয়েই ছাড়লে তুমি।।
 ৪) যে মানুষ পয়সা ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা, তাকেই বললে ঘুম থেকে উঠে গুরুর ভোগের জন্য কিছু রেখে তারপর দিনের খাওয়া দাওয়া শুরু করতে, কি যে কঠিন এই কাজ, কিন্তু কোটি কোটি মানুষ ঘুম থেকে উঠেই তোমার ভোগের জন্য কিছু রাখার পরই খাওয়া দাওয়া শুরু করে, এ এক মহাবিস্ময়কর ব্যাপার, এই ম্যাজিক করেও  তুমি দেখালে ঠাকুর ।। গুরুকে আপন করে জানতে হয়, সে এই নিত্য নিবেদনের মাধ্যমেই সম্ভব আর দেওয়াই যে পাওয়ার মূল মন্ত্র, তা'ও বুঝলাম ঠাকুর।। 
৫) আমরা জানতাম, আমি ধৰ্ম কর্ম করলেই হল,  প্রতিবেশী নিয়ে আমার মাথা ব্যথার কোনও কারণ নেই, তুমি বললে,  "পড়শিরা তোর নিপাত যাবে, তুই বুঝি সুখ খাবি বসে, যা ছুটে যা ওদের বাঁচা, ওরাই যে তোর বাঁচার পুঁজি"।।  কি বিপদ, নিজে হরি হরি করলেই হবেনা, গেরুয়া পরে জঙ্গলে বসে ধ্যন করলে, শুধু নিজের কিছু উন্নতি হলেও হতে পারে, কিন্তু তাতে অন্যদের যে কিছু লাভ হবেনা, অন্যদেরও উদ্ধার করতে হবে, এ যে কি কঠিন কাজে তুমি ফেললে ঠাকুর।। 
৬) নাকে মুখে আঙ্গুল দিলে তক্ষুনি তা ধুয়ে নিতে হবে, এই বিধানও ভগবানের দিয়ে যেতে হয়, তা তুমিই বললে ঠাকুর, সুস্থ থাকার সব বিধান তুমি দিলে ঠাকুর, এ যে আগে পাইনি, সকালে উঠে থানকুনি পাতা খাওয়া থেকে শুরু করে শব-ধ্যান করার বিধান তুমি দিলে, যাতে করে একটা মানুষ সারাজীবন সুস্থ ও সুন্দর থাকতে পারে এবং তুমি আমাদের এগুলো করিয়েই ছাড়ছো।।।
 ৭) তুমি বললে, "উন্নয়ন আর সুপ্রজনন, এই তো বিয়ের মূল, যেমন তেমন বিয়ে করে, করিস নাকো ভুল"।। একটা মেয়েকে দেখে ভালো লাগলো, বিয়ে করে নিলেই হলো, ব্যাস, এইতো আমরা জানি, কিন্তু না, তুমি দিলে এমন বিধান, যাতে করে বাবার চেয়েও তাঁর সন্তান আরও আরও উন্নত হয়, এই তত্ত্বটি  আগে আমরা পাইনি বা জানতাম না, ঠাকুর।।
৮) "লেখা পড়ায় দড় হলেই শিক্ষা তারে কয়না, অভ্যাস ব্যবহার সহজ জ্ঞান, নইলে শিক্ষা হয়না", অভ্যাস ব্যবহার ও যে শিক্ষার অঙ্গ আর তা না ছাড়া যে শিক্ষা অসম্পূর্ণ, তাও তুমার থেকেই জানলাম ঠাকুর।  তোমার বলাগুলো মানতে কষ্ট হয় ঠাকুর কিন্তু তুমি যে ব্রহ্মবাক্য  বলেছ, তা যে স্বাত্ত্বত্ব, নির্ভুল, তা না মানলে যে সমূহ বিপদ, তা যে আমরা এখন হারে হারে বুঝতে পারছি ঠাকুর।।। 
তুমি না আসলে কি হত ?  আমরা ধর্মকে ব্যহ্যিক একটা আচার অনুষ্ঠান বলেই জানতাম, জীবন চলনাটাই যে ধৰ্ম, তা তুমি এসেই যে আমাদের বুঝালে ঠাকুর। দীক্ষা, শিক্ষা ও বিবাহ যে জীবনের এতবড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এবং তা সঠিক না হওয়া যে অধর্ম, তা তুমিই, বুঝালে ঠাকুর।। বিভিন্ন প্রকার বিকৃতি, যা কালক্রমে আমাদের আচার অনুষ্ঠানে ধর্ম বলে ঢুকে পড়েছে, তা তুমি চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখালে বুঝতেই পারতাম না।।  
ঠাকুর তোমার দেওয়া বিধান পালন করার মাধ্যমে ক্রমে ক্রমেই যেন আমরা ঠাকুরত্ব লাভ করে অমৃত পথের যাত্রী হতে পারি, বংশ পরম্পরায় বিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের জেনেটিকেল ত্রুটি মুক্ত হয়ে আমরা যদি মহা মানবে উন্নিত হতে পারি, তবেই তোমার আসার স্বার্থকতা।।।  
পরম প্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুরঅনুকুলচন্দ্রের ১৩৮ তম শুভ আবির্ভাব দিবসে, তোমার অধম সন্তানের এই ভাবনা।। তুমি ভালো থেকো ঠাকুর,আমার প্রণাম নিও ঠাকুর, জয়গুরু।।।