🌑 গুপ্তধনের সন্ধান
বসন্তপুর গ্রামের পাশে আছে এক পুরোনো, অদ্ভুত পাহাড় — কাচারি ডাঙা। লোকমুখে শোনা যায়, সেই পাহাড়ের গভীরে লুকিয়ে আছে “নন্দনারায়ণের গুপ্তধন”, যা নাকি বহু বছর আগে এক জমিদার বন্যা আর দস্যুদের ভয়ে মাটির নীচে লুকিয়ে দিয়েছিল।
১. রহস্যময় মানচিত্র
একদিন গ্রামের ছেলে ঈশান তার দাদুর পুরোনো ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে পায় একটা হলদে রঙের চামড়ার টুকরো। তাতে অদ্ভুত দাগ কাটা আর পুরোনো বাংলা হরফে লেখা—
“যে খুঁজিবে, সে পাবেই… তবে পাহাড়ের ছায়াকে জয় করতে হবে।”
ঈশান বুঝল—এটা নিশ্চয়ই গুপ্তধনের মানচিত্র!
২. অভিযান শুরু
ঈশান তার দুই বন্ধু সুচন্দা আর প্রিয়মকে নিয়ে রওনা দিল কাচারি ডাঙার দিকে। পাহাড়ের ঢালে পৌঁছে তারা মানচিত্রের দাগ মেলাল। একটা জায়গায় লেখা—
“নাগশনখের নিচে গোপন পথ।”
পাহাড়ের গায়ে সত্যিই একটা সাপের মতো বাঁকানো পাথর ছিল। তার নীচে হাত দিতেই খুলে গেল একটা সরু পথ।
৩. অন্ধকারের রাজ্য
তিন বন্ধু টর্চ জ্বেলে ভিতরে ঢুকল। ভেতরে অদ্ভুত ঠান্ডা বাতাস, দেওয়ালে পুরোনো মূর্তি আর গুহার শেষে শোনা যাচ্ছে জল পড়ার শব্দ।
হঠাৎ সুচন্দার চোখে পড়ল—
দেওয়ালে খোদাই করা তিনটা চোখওয়ালা মুখ।
তার নিচে একটা লিপি—
“সত্য, সাহস, আর বিশ্বাস—এই তিনে খুলিবে পথ।”
ঈশান তিনটি পাথরের বোতাম খুঁজে পেল। তারা সত্য কথা বলল, ভয় না পেয়ে বোতাম চাপল আর নিজেদের ওপর বিশ্বাস রেখে শেষ বোতাম টিপল।
গুহা হঠাৎ কাঁপতে লাগল, তারপর সামনে খুলে গেল আরেকটি দরজা।
৪. গুপ্তধনের কক্ষ
ভেতরে ঢুকতেই তারা দেখল—
মাটির মাঝে বড়ো একটা লোহার সিন্দুক।
উপরের ঢাকনায় জমিদার নন্দনারায়ণের প্রতীক।
ঈশান সিন্দুক খুলতেই ঝলসে উঠল আলো—
সোনার মুদ্রা, রত্নখচিত তরোয়াল, পুরোনো পুঁথি আর মূল্যবান নকশিকাঁথা!
কিন্তু সবচেয়ে মূল্যবান ছিল একটা চিঠি—
“ধন মানুষকে বড়ো করে না। ধনকে ব্যবহার করার মনটাই মানুষকে মহৎ করে।”
৫. ফিরে দেখা
তিন বন্ধু সিদ্ধান্ত নিল—ধন গ্রামের উন্নতির জন্য ব্যবহার করবে।
রাস্তা বানাবে, স্কুল করবে, পানীয় জলের ব্যবস্থা করবে।
কাচারি ডাঙার গুপ্তধন শুধু তিন বন্ধুকেই নয়, পুরো বসন্তপুরকে বদলে দিল।
×---
**🌑 গুপ্তধনের সন্ধান — পর্ব ২
“ছায়ার অভিশাপ”**
কাচারি ডাঙা থেকে গুপ্তধন পাওয়ার পর পুরো বসন্তপুরে খুশির জোয়ার। কিন্তু ঈশান, সুচন্দা আর প্রিয়মের আনন্দ বেশিদিন টিকল না…
১. অদ্ভুত ছায়া
গুপ্তধনের সিন্দুক গ্রামের লাইব্রেরিতে রাখার পর পরই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করল।
রাতে লাইব্রেরির জানালায় দেখা যায় দীর্ঘ, মানুষের মতো একটা ছায়া, কিন্তু আশেপাশে কেউ থাকে না।
এক রাতে প্রিয়ম সিন্দুক দেখতে গেলে পিছনে কেউ ফিসফিস করে—
“ধন ফেরত দাও… নইলে ছায়া আসবে।”
সে ঘুরে দাঁড়াল—কেউ নেই। শুধু ঠান্ডা বাতাস।
২. দাদুর পুরোনো কাহিনি
পরের দিন ঈশান দাদুকে সব বললে দাদু ফিসফিস করে বলল—
“ছায়া তাড়া করে জমিদারের ধনকে। যে-ই ধন ছোঁয়, ছায়া তাকে পরীক্ষা করে।”
দাদু জানালেন, নন্দনারায়ণ জমিদার মৃত্যুর আগে একজন তান্ত্রিকের সাহায্যে ধনের ওপর এক রক্ষাকবচ বসিয়েছিলেন—
অশুভ মন যার থাকবে, সেই ছায়ার অভিশাপে পড়বে।
৩. মানচিত্রের লুকানো অংশ
সুচন্দা আগের মানচিত্রটা আবার খুঁটিয়ে দেখে।
এক কোণায় খুব হালকা করে এঁকে রাখা ছিল আরেকটা চিহ্ন—
একদম কালো রঙের বৃত্ত, তার মধ্যে তিনটা বাঁকা লাইন।
প্রিয়ম বলল,
“এটা নিশ্চয়ই ছায়ার প্রতীক!”
আর তার নিচে লেখা ছিল—
“দ্বিতীয় কক্ষ খুঁজে না পেলে অভিশাপ মুক্ত হবে না।”
অর্থাৎ প্রথম সিন্দুকটা ধনের একটাই অংশ ছিল—আরও কিছু লুকিয়ে আছে!
৪. রাতের পাহাড় আর ছায়ার তাড়া
তিন বন্ধু আবার কাচারি ডাঙায় গেল। এবার পুরো পাহাড় জুড়ে অদ্ভুত নীরবতা।
হঠাৎ পিছনে ঠক ঠক পায়ের শব্দ।
তারা ঘুরতেই দেখল—
দীর্ঘ লম্বা এক কালো ছায়া, চোখ নেই, মুখ নেই… শুধু দুলছে।
ছায়াটা ইশারায় পাহাড়ের ওপরে উঠতে বলল—
নাহলে যেন ওদের শ্বাস বন্ধ করে দেবে!
৫. দ্বিতীয় কক্ষ
পাহাড়ের মাথায় একটা ছোট গুহা ছিল। ভিতরে ঢুকতেই তারা দেখল একটা পাথরের দরজা।
দরজায় লেখা—
“আলো যেখানে জন্মায়, ছায়া সেখানেই ভয় পায়।”
ঈশান টর্চটা মাটিতে ফেলে আলোটা চারদিকে ঘোরাল। আলো যেদিকে পড়ল, সেখানকার পাথর কাঁপতে লাগল।
তিনজন মিলে আলো পাথরের উপর ঠিকভাবে ফেলতেই দরজাটা খুলে গেল।
ভিতরে ছিল আরেকটি ছোট সিন্দুক।
সিন্দুকে শুধু একটা স্বর্ণমূর্তি আর খুব পুরোনো চিঠি।
চিঠিতে জমিদার লিখেছিলেন—
“গুপ্তধনের এই অংশ ছাড়া ছায়া কখনও শান্ত হবে না।
ধনের রক্ষক ছায়া—শত্রু নয়, পরীক্ষক।
যে হৃদয় সৎ, ছায়া তাকে রক্ষা করবে।”
হঠাৎ পিছন থেকে ছায়া আবার দেখা দিল।
এইবার ছায়া তিনজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল না—
ধীরে ধীরে সোনা রঙে ঝলসে উঠে মাটির ভিতরে মিলিয়ে গেল।
৬. অভিশাপ মুক্ত
দ্বিতীয় সিন্দুক গ্রামে নিয়ে আসতেই আগের সব অদ্ভুত ঘটনা বন্ধ হয়ে গেল।
গ্রামবাসী বলল—
“এই তিনজন শুধু ধন উদ্ধার করেনি, আমাদের অভিশাপ থেকেও বাঁচিয়েছে।”
কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়…
কারণ মানচিত্রের একেবারে নীচে লেখা—
“তৃতীয় পথ সবচেয়ে বিপজ্জনক।”
×---
**🌑 গুপ্তধনের সন্ধান — পর্ব ৩
“অন্ধকারের তৃতীয় পথ”**
দ্বিতীয় সিন্দুক পাওয়ার পর গ্রামের শান্তি ফিরেছিল।
কিন্তু মানচিত্রের নীচের সেই এক লাইন তিন বন্ধুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল—
“তৃতীয় পথ সবচেয়ে বিপজ্জনক।”
১. মানচিত্রের গোপন আলো
ঈশান মানচিত্রটাকে রাতে টর্চ দিয়ে দেখছিল।
হঠাৎ বুঝল—কাগজটা অদ্ভুতভাবে আলো রিফ্লেক্ট করছে।
সুচন্দা বলল,
“এই মানচিত্রটা সাধারণ কাগজ নয়—এটা চন্দ্রালোকে আসল রাস্তা দেখাবে।”
তারা মানচিত্রটাকে পূর্ণিমার আলোয় ধরতেই দেখা দিল নতুন কিছু লেখা—
“ছায়াহীন পথে এগোলে, অন্ধকারই পথ দেখাবে।”
তার সাথে নতুন একটি দাগ—পাহাড় ছাড়িয়ে জঙ্গলমুখো।
২. নিষিদ্ধ জঙ্গল ‘গহনঝুরি’
গ্রামের মানুষ ওই জঙ্গলকে “গহনঝুরি” বলে—
সেখানে নাকি বহু আগে এক তান্ত্রিক সাধনা করত আর মৃত্যু-ছায়াদের বশে রাখত।
রাতে তিন বন্ধু জঙ্গলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস থেমে গেল।
পাখিদের ডাকা বন্ধ।
হঠাৎ প্রিয়ম বলল,
“আমাদের ছায়া কোথায় গেল?”
তারা একসাথে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল—
জঙ্গলের ভিতরে কোনও কিছুরই ছায়া পড়ছে না!
এ যেন জমিদারের মানচিত্রে লেখা ‘ছায়াহীন পথ’!
৩. অদ্ভুত ফিসফিসানি
জঙ্গলের গভীরে যেতে যেতে তারা পায় একটা ভাঙা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ।
ভিতরে কেউ একটানা ফিসফিস করছে—
“ফিরে যাও… ফিরো… তৃতীয় পথ কারো জন্য নয়…”
কিন্তু কণ্ঠটা মানুষের নয়—
বরং যেন বাতাসের মধ্যে একজন মৃত মানুষের আওয়াজ।
সুচন্দা কাঁপা গলায় বলল,
“এটা ছায়ার আওয়াজ না… এটা অন্য কিছু!”
৪. তান্ত্রিকের নথি
মন্দিরের ভিতরে একটা কালো পাথরের স্তম্ভের পাশে পড়ে ছিল পুরোনো তামার পাত।
তাতে খোদাই করা—
“নন্দনারায়ণ আমার সাহায্য চেয়েছিল।
আমি ধনকে রক্ষা করতে ছায়াদের ডেকেছিলাম।
কিন্তু একটি ছায়া আমার নিয়ন্ত্রণ ছাড়িয়ে গেছে—
‘অন্ধকার-তৃষ্ণা’ নামের ছায়া।”
নিচে সতর্কীকরণ—
“যে তৃতীয় সিন্দুক খুঁজবে, তাকে অন্ধকার-তৃষ্ণা ছাড়বে না।”
হঠাৎ স্তম্ভের পিছন থেকে শোঁ শোঁ শব্দ—
এবার তিনজন স্পষ্ট দেখল—
একটা ছায়া নয়, যেন ছায়ার মধ্যেও আরেকটা অন্ধকার, লম্বা নখওয়ালা দানব।
অন্ধকার যেন জীবন্ত!
৫. অন্ধকার-তৃষ্ণার তাড়া
দানব ছায়াটা গর্জে উঠল।
বাতাস পুরো জমে গেল, চারদিকে অন্ধকার গড়িয়ে পড়তে লাগল।
ঈশান দ্রুত মানচিত্র দেখে চিৎকার করল—
“দৌড়াও! সামনে একটা কালো পুকুর আছে! মানচিত্র ওখানেই শেষ হয়েছে!”
ওরা দৌড়ে পুকুরের ধারে পৌঁছাল।
পুকুরের জল সম্পূর্ণ কালো, আয়নার মতো—
আকাশে চাঁদ আছে, কিন্তু জলতে চাঁদের প্রতিফলন নেই।
প্রিয়ম বলল,
“এটাই ছায়াহীন পুকুর!”
দানব ছায়াটা যখন প্রায় ওদের ধরে ফেলেছে,
হঠাৎ সুচন্দা পুকুরের জলে টর্চের আলো ফেলল।
কালো জল আলো শুষে নিয়ে ভিতরে একটা সিঁড়ির মতো ছায়া বানালো।
সুচন্দা চিৎকার করল—
“ভিতরে লাফ দাও! এটাই তৃতীয় পথ!”
তিনজন পুকুরের কালো জলে লাফ দিল।
দানব ছায়া পিছনে হাত বাড়াল…
কিন্তু তাদের গায়ে লাগার আগেই জল পুরো অন্ধকার হয়ে শক্ত পাথরের দরজার মতো বন্ধ হয়ে গেল।
৬. তৃতীয় কক্ষ
তারা চোখ খুলতেই দেখল—
একটা বিশাল ভূগর্ভস্থ গুহা।
মাঝে পাথরের বেদি আর তার উপর তৃতীয় সিন্দুক।
কিন্তু সিন্দুকের উপরে খোদাই—
“এই ধন নিলেই অন্ধকার-তৃষ্ণা মুক্ত হবে।”
এমানে দানব ছায়া বন্দি আছে সিন্দুকের শক্তিতে।
তারা সিন্দুক তুললেই সেটা মুক্ত হয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে!
ঈশান বলল,
“তাহলে আমরা কি সিন্দুক নেব? নাকি রেখে দেব?”
সুচন্দা বলল,
“ধন নিলে ছায়া মুক্ত, না নিলে মানচিত্র কেন আমাদের এখানে এনেছে?”
প্রিয়ম কাঁপা গলায় বলল—
“তাহলে হয়তো… সিন্দুকের ভিতরেই ছায়াকে থামানোর উপায় আছে!”
গল্প এখানেই থামল…
কারণ তৃতীয় সিন্দুক খুললেই শুরু হবে সবচেয়ে বড় বিপদ।
---**🌑 গুপ্তধনের সন্ধান — পর্ব ৪
“অন্ধকারের পুনর্জন্ম”**
গভীর ভূগর্ভে, কালো শিলার গুহায় তিন বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে তৃতীয় সিন্দুকের সামনে।
চারপাশ নিস্তব্ধ — কিন্তু বাতাসে এমন একটা চাপ, যেন গুহাটাই তাদের শ্বাস নিচ্ছে।
সিন্দুকের গায়ে লেখা—
“যে সত্য জানবে, সে আলোর যোগ্য।”
১. সিন্দুকের খোলা দরজা
ঈশান ধীরে ধীরে সিন্দুক খুলল।
ভেতরে রত্ন নয়, সোনা নয় — শুধু একটা কালো পাথর আর একটা চিঠি।
চিঠিতে লেখা—
“এই পাথরই ‘অন্ধকার-তৃষ্ণার’ হৃদয়।
যে একে ছোঁবে, তার মধ্যেই আলো ও অন্ধকারের লড়াই শুরু হবে।”
ঈশান পাথরটা হাতে নিতেই গুহা কাঁপতে লাগল।
চারদিক থেকে ধোঁয়ায় ভেসে উঠল সেই ছায়া দানব —
কিন্তু এবার তার মুখের আকৃতি স্পষ্ট।
মুখটা… ঈশানের মতো!
সুচন্দা চিৎকার করল,
“ওটা তোর ছায়া, ঈশান! তুই ওর অংশ!”
২. সত্য প্রকাশ
দানব-ছায়াটা হাসতে লাগল—
“তুমি ভাবলে তুমি ধন খুঁজছো?
তুমি নিজেই সেই ধনের রক্ষক—জমিদারের উত্তরাধিকার।”
চিঠির পেছনে ছিল জমিদার নন্দনারায়ণের নিজের স্বাক্ষর।
তাতে লেখা—
“আমার রক্তের শেষ উত্তরাধিকারই ধন পাবে, আর অন্ধকারও তাকে চিনবে।”
ঈশান হাঁ করে চেয়ে রইল।
সে-ই নন্দনারায়ণের বংশধর!
অর্থাৎ ছায়া-দানব ‘অন্ধকার-তৃষ্ণা’ আসলে তারই ছায়া রূপে বেঁচে আছে শত বছর ধরে।
৩. ছায়ার লোভ
অন্ধকার-তৃষ্ণা বলল,
“আমায় সম্পূর্ণ কর!
এই পাথর আমার হৃদয় — আমাকে ছোঁয়, আমি তোমার শক্তি হবো!”
প্রিয়ম চিৎকার করল,
“না, ঈশান! ওকে ছোঁয় মানে তুই অন্ধকারের অংশ হয়ে যাবি!”
কিন্তু ঈশানের চোখে তখন এক অদ্ভুত আলো।
তার মাথার ভিতর যেন দুই কণ্ঠ লড়ছে—
একটা বলছে “ছোঁয়”, আরেকটা বলছে “না”।
৪. আত্মত্যাগ
ঠিক তখন সুচন্দা এগিয়ে এল।
সে ঈশানের হাত থেকে কালো পাথরটা কেড়ে নিয়ে নিজের হাতে নিল।
পাথরটা ছুঁতেই তার দেহ কালো আলোয় জ্বলে উঠল,
চারপাশে ঘূর্ণিঝড়ের মতো বাতাস বইতে লাগল।
সুচন্দা চেঁচিয়ে বলল,
“এই পাথর এক জনকেই সহ্য করতে পারে।
আমি ছায়াকে ফিরিয়ে দিচ্ছি তার জায়গায়!”
এক মুহূর্তে সে অদৃশ্য হয়ে গেল—
শুধু একটা আলো রইল, যা ছায়া দানবের দিকে ছুটে গিয়ে তাকে গিলে ফেলল।
তারপর সব নিস্তব্ধ।
গুহা ভেঙে পড়তে শুরু করল।
ঈশান আর প্রিয়ম দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এল।
৫. শেষ চিঠি
বাইরে এসে তারা দেখল—
তৃতীয় সিন্দুকটা তাদের সঙ্গে বাইরে এসে পড়েছে।
ভেতরে এখন নতুন একটা চিঠি—
“অন্ধকারকে জয় করার একমাত্র উপায় হল ত্যাগ।
সত্যিকারের ধন হল আলো, যা অন্যের জন্য জ্বলে।”
ঈশানের চোখে জল।
সুচন্দা হারিয়ে গেছে, কিন্তু তার ত্যাগেই অভিশাপ ভেঙে গেছে।
৬. পরিশেষ
কয়েক মাস পর, বসন্তপুরের মাটিতে নতুন জীবন এসেছে।
ঈশান স্কুলের পাশে একটা স্মৃতিফলক বসিয়েছে—
লিখেছে, “আলোর নাম সুচন্দা।”
কিন্তু এক রাতে, চাঁদের আলোয় ঈশান যখন পাহাড়ের দিকে তাকাল,
দেখল কাচারি ডাঙার মাথায় এক ছায়া দাঁড়িয়ে আছে —
চুল উড়ছে বাতাসে, হাতে টর্চের আলো জ্বলছে।
ঈশান ফিসফিস করে বলল,
“সুচন্দা… তুই কি ফিরে এলি?”
ছায়াটা হেসে মাথা নাড়ল…
তারপর মিলিয়ে গেল চাঁদের আলোয়।