অবচেতনার অন্ধকারে

(11)
  • 54.2k
  • 1
  • 19.3k

- এসো, কাছে এসো| লুসি চোখ তুলে তাকালো | টানা টানা দুটি চোখে অনন্ত জিজ্ঞাসা | সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো | অদূরে দাঁড়িয়ে আছে এক রমনি মূর্তি, কালো বোরখা ঢাকা দেহ তার, মাথায় একরাশ সোনালী চুলের বন্যা | লুসি যেন আচ্ছন্নের মতো হেঁটে চলেছে | ঘরের মাঝখানে কাঠের দীপাধারে জ্বলছে একটি মাত্র প্রদীপ | চারপাশে ছড়ানো আছে মৃত মানুষের অস্থি মজ্জা হাড়। পচা দুর্গন্ধ ভরে রেখেছে বাতাসকে। বাতাস বলতে খর তাপ ভরা রুক্ষতার হাওয়া। এই মরুভূমির দেশে এক বিন্দু বৃষ্টি নেই। এখানে শুধুই উন্মত্ত প্রখর সূর্যের হাহাকার। লুসি ছায়া মূর্তির ঠিক সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। তারপর চোখ বন্ধ করলো।

1

অবচেতনার অন্ধকারে - 1

- এসো, কাছে এসো| লুসি চোখ তুলে তাকালো | টানা টানা দুটি চোখে অনন্ত জিজ্ঞাসা | সে পায়ে পায়ে গেলো | অদূরে দাঁড়িয়ে আছে এক রমনি মূর্তি, কালো বোরখা ঢাকা দেহ তার, মাথায় একরাশ সোনালী চুলের বন্যা | লুসি যেন আচ্ছন্নের মতো হেঁটে চলেছে | ঘরের মাঝখানে কাঠের দীপাধারে জ্বলছে একটি মাত্র প্রদীপ | চারপাশে ছড়ানো আছে মৃত মানুষের অস্থি মজ্জা হাড়। পচা দুর্গন্ধ ভরে রেখেছে বাতাসকে। বাতাস বলতে খর তাপ ভরা রুক্ষতার হাওয়া। এই মরুভূমির দেশে এক বিন্দু বৃষ্টি নেই। এখানে শুধুই উন্মত্ত প্রখর সূর্যের হাহাকার। লুসি ছায়া মূর্তির ঠিক সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। তারপর চোখ বন্ধ করলো। ...আরও পড়ুন

2

অবচেতনার অন্ধকারে - 2

ভীষণ চেষ্টা পেতো লুসির। অন্যের আত্মা যখন তার শীর্ণ দেহ খাঁচা ছেড়ে চলে যেত মহাকালের আকাশে, লুসির সমস্ত শরীর এক অনুভূতিতে থর থর করে কেঁপে কেঁপে উঠতো। জন্ম জন্মান্তরের সঞ্চিত পিপাসা যেন গ্রাস করতো তার জিভ, চোখ দুটি ঠিকরে বেরিয়ে আসবে, হাত বেঁকে যাচ্ছে, মাথায় ভীষণ যন্ত্রনা। কোষে কোষান্তরে সংবাহিত অনন্ত বেদনা। এক একটা ঘটনার পরে লুসি ভাবতো আর বাঁচবে না। তবু সে বেঁচে রইলো। সেদিনের চার বছরের ছোট্ট মেয়ে লুসি আজ চোদ্দ বছরের কিশোরী। প্রাকৃতিক নিয়মে তার দেহে যৌবন এঁকেছে পদচিহ্ন। কিন্তু লুসি সে ডাকে সাড়া দিতে পারেনি। এই রোমাঞ্চিত বয়েসে সে ভালোবাসে না বসন্ত বাতাস। তার কানে ...আরও পড়ুন

3

অবচেতনার অন্ধকারে - 3

ঐ রাত যেন পরম কাঙ্খিত হয়ে নেমে এসেছিলো আগাথার জীবনে। আজ তার বিয়ের প্রথম বছরে আগাথার বারবার মনে পড়েছে রাতের কথা। সে রাত তাকে গরবিনী করেছিল। তারপর কতবার সে শরীরের চাবি তুলে দিয়েছে দস্যু জোসেফকে। পলের কাছ থেকে ক্রমেই সরে গাছে সে। সোনালী সকালটা ফুরিয়ে গিয়ে নেমে এলো রাত। উৎসব শেষে বেডরুমে প্রবেশ করলো আগাথা। পল তার প্রতীক্ষাতে বসে আছে সিগার ঠোঁটে। কিন্তু আগাথার দাউ দাউ বহ্নিকে সে কি সীমিত ক্ষমতায় মেটাতে পারবে? আগাথা জানে এই প্রাসাদে সারাটি জীবন তার কাটবে এক দেহ খুদা নিয়ে। সে মুহূর্তে জ্বলে ওঠে, গোবলেটে রক্ত রঙা মদিরা। হাসলো আগাথা। তার দুটি ভরাট স্তনের ...আরও পড়ুন

4

অবচেতনার অন্ধকারে - 4

মনে পড়ে যায়, লুসি যেন হারিয়ে গেছে মধ্যে ইরাকের উত্তপ্ত বালুকা ভরা বিশীর্ণ নাগরী হাজাতে। সেখানে এক প্রকোষ্ঠে অন্ধকারের জঞ্জালের আবরণ সরিয়ে বাস করে নগরের অন্যতম রূপবতী সেইবা। জেক ঘিরে বাতাসে ওঠে ষড়যন্ত্রের ফিসফাস, যার নিশ্বাসে সারা রাত শকুনের চিৎকার। সেই সাইবাই আজকের চোদ্দ বছরের অপাপবিদ্ধ কিশোরী কোননা লুসি। - মনে কর লুসি, তারও আগের জন্মের কথা ........। এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে লুসির যেন মনে হলো প্রজ্জ্বলিত শিখার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। স্বৈরিণী রমণীর এলোকেশের মতো ধেয়ে আসছে বহ্নিশিখা। আর এক মূহুর্ত মাত্র। তারপরে লোল জিহ্বা দিয়ে ঐ আগুন গ্রাস করবে তার কোমল তনু বাহার। কবরে সমবেত হাজার ...আরও পড়ুন

5

অবচেতনার অন্ধকারে - 5

চোখ খুলে লুসি দেখলো ঘরে জ্বলছে সেই স্বপ্নময় নীল আলো। সে তাকাল, চোখের সামনে ছায়ার মতো সরে যায় দুটি একটিতে যে উদ্দাম অভিসারে মত্ত, হাতে তার সুরা পাত্র, সুরমা টানা চোখের কোন যৌবনের সহস্র সঙ্গী করে। অন্য ছবিটি এক দেহ পিপাসু বুভুক্ষু রমণীর, যে প্রতিরাতে নিজেকে নিবেদিত করে এক কিশোরের কাছে। - না, না, বিশ্বাস কর, এ জীবনে আমি সেইবা অথবা আগাথা হতে চাই না। আমি পবিত্র ভাবে বাঁচতে চাই। দেখতে চাই বসন্তকে। উপভোগ করতে চাই দূর আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া স্কাইলার্কের কাকলি। আত্মার গভীরে প্রোথিত চেতনার মধ্যে আলোড়িত এক বাঙময় সত্তা লুসিকে বার বার মনে করায়, সে ব্যাভিচারিনী ...আরও পড়ুন

6

অবচেতনার অন্ধকারে - 6

কে সেই অশরীরী? লুসির একবার মনে হয় তারা হলো পৃথিবীর সর্বত্র হাওয়ার মধ্যে শুস্ক কণার মতো ঘুরে বেড়ানো অপঘাতে আত্মা। অথবা এমনও হতে পারে, যারা জীবনের অনেক স্বাদ অপূর্ণ রেখে মৃত্যুর ডাকে সাড়া দিয়েছে সেই সব পিপাসার্ত মানুষ। ওদের যেকোনো পরিচয় হোক না কেন, লুসি জানে ওরা বাস করে মধ্য রাতের হিম কুয়াশায়। চোখে দেখা না গেলেও প্রতি মুহূর্তে সে ওদের নীরব উপস্থিতি অনুভব করে তার দগ্ধ হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনে। অথবা ওরা কি তার মা এনিলিয়ার মতো ? যারা হারিয়ে যাই এই পৃথিবী থেকে, কোনো জঘন্য মানুষের রক্তাত্ত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে। লুসি জানলার সামনে দাঁড়ালো। আসে পাশে কেউ কোথাও জেগে ...আরও পড়ুন

7

অবচেতনার অন্ধকারে - 7

এ কোন মায়া ? যা মানুষকে পঙ্গু করে তোলে ? এ কোন শক্তি ? যে অমানুষকে বোবা করে দেয় এ কোন ছলনা ? যা মানুষকে মধ্যে রাতে হাতছানি দিয়ে ডেকে আনে সমাধি ক্ষেত্রে বিরাজিত নিস্তব্ধতার মধ্যে? হয় তো বা শোনাতে চায়, বলতে চায় সেই চির অজানা কথা। দেখো লুসি, একদিন তোমাকেও এমনভাবে শুয়ে থাকতে হবে ধরিত্রী মাতার গহ্বর। দিনে দিনে, শরতে, শীতে, বসন্তে তোমার দেহে ধরবে পচন, তুমি পরিণত হবে বীভৎস বিকৃত কঙ্কালে। তারপর কালের নিয়মে সেই হাড়ের কাঠামোতে একদিন ধরবে ভাঙ্গন, অস্থি মজ্জা রক্ত বিহীন শুকনো কঙ্কালের বুকে ভীষণ দাঁত বসাবে মহাকাল। তারপর ঝুর ঝুর করে ভেঙে গুঁড়িয়ে ...আরও পড়ুন

8

অবচেতনার অন্ধকারে - 8

এই কি মানুষ ? না কি মানুষের নামধারী কোন এক অজ্ঞাত প্রাণী ? তারপর সেই অশরীরী আত্মা লুসির দিকে দিয়েছে তার ক্ষুধার্ত হাত। ভয়ে বিস্ময়ে লুসি দেখলো সেই মানবিক হাতে নেকড়ের সুতীক্ষ্ণ নখর। আরেকটু হলেই টেনে চিরে টুকরো টুকরো করে দেবে লুসিকে। সে ছুটতে থাকে, পায়ের নিচে ছুটছে ছড়ানো হাড়ের তীক্ষ্ণ ফলা, মানুষের কঙ্কাল হাসছে তার চারপাশে, লুসি ছুটছে। এই জীবন হারা জীবন্তদের আস্তানা থেকে তাকে এখুনি পালাতে হবে প্রাণের জন্য। প্রাণ তাকে ডাকছে। পৃথিবীর প্রথম প্রাণ, হিংস্র বিধস্ত বিশ্বাসঘাতক সেই জীবন স্রোতে ভাসতে না পারলে আজ এখানেই সমাপ্তি ঘটবে তার জীবনের। ঝনঝন করে যেন কাঁচ ভেঙে গেলো। সুদূর ...আরও পড়ুন

9

অবচেতনার অন্ধকারে - 9

তখন হেনরির ঘরে দপ দপ করে জ্বলছে ড্রাগনের চোখে দুটি লাল আলো। হেনরি একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ক্লারার চোখের দিকে। সে সম্মোহিত করবে, তার বিকৃত আত্মাকে নিজের ইচ্ছানুসারে চালিত করবে। কেননা আজ সকাল থেকে ক্লারা তার কথা মতো কাজ করতে গিয়ে অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। চার জোড়া চোখ পরস্পরকে লেহন করতে চায়। এখন চলেছে ক্লারা আর হেনরির ইচ্ছা শক্তির লড়াই। অনেক্ষন একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকার পর চোখের পলক ফেলে দেয় ক্লারা। তখনি জয়ের আনন্দে উল্লসিত হয়ে নেচে ওঠে হেনরির মন। সে চিৎকার করে স্তব্ধ বাতাসে ঘূর্ণন তুলে বলতে থাকে ---- ক্লারা, ক্লারা, তুমি হেরে গেলে, তুমি মানবী, পুরুষের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে ...আরও পড়ুন

10

অবচেতনার অন্ধকারে - 10

হয়তো বিনা অনুমতিতে অনাহুত মানুষের অবাঞ্চিত প্রবেশে ক্রূদ্ধ বিরক্ত সে। তাই চিৎকার করে, বুনো শেয়ালের মতো আর্তনাদ করে জানাতে তার রাগ। ক্লারা এবার আচ্ছন্নের মতো এক পা এক পা করে হাটঁছে হেনরির দিকে। তার মানে সম্মোহনের শেষ পর্যায়ে হেনরি এখন তাকে স্পর্শ করবে। এখন মধ্যে রাতে, একুশ তলার ঘরে, ঝির ঝির তুষারের মধ্যে একটি সক্ষম পুরুষ আর অনাবৃতা রমণী শরীরের কাছাকাছি এগিয়ে আসছে। কি আশ্চর্য্য, তাদের মধ্যে জেগে নেই এক বিন্দু লালসা। তাদের একজন শিকারি কুকুরের মতো অনুসন্ধানী, অন্যজন ভীত হরিণীর মতো চঞ্চলা অথচ স্থির। আনুবিসের শৃগাল চোখে মৃত্যুর ছায়া কাঁপে। তার পাথুরে শরীরের চারপাশে কেমন যেন অশুভ ইঙ্গিতে ...আরও পড়ুন

11

অবচেতনার অন্ধকারে - 11

গ্রহ নক্ষত্রেরা এমনভাবে সংকুচিত এবং সংনমিত যে গ্রহ নক্ষত্রের বাইরে মহাশুন্যের বিশালতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কোন শয়তানী শিল্পবিদ্যা ঐ দুঃস্বপ্নকে জন্ম দিয়েছে, হেনরি বুজতে পারে না। এই প্যাটার্ন কোনো মানুষ শিল্পীর সৃষ্টি কিনা তাতেও সন্দেহ হয়। হয়তো দরজার এই মূর্তিটার কোনো ভয়াবহ প্রতীকী তাৎপর্য আছে। হয়তো অদ্ভুত শরীরের পটভূমিকায় এই প্রকান্ড মাথাগুলো মানুষের সব দেবতার অন্তরালে যে গোপন সন্ত্রাস লুকিয়ে থাকে, তারই সাক্ষ দিচ্ছে। যতোই দেখছে হেনরি, ডিসাইনার জটিল গোলকধাঁধায় তার মন জড়িয়ে পড়ছে। মূর্তিটা তার মন কেড়ে নেয়, তাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। মূর্তির দিকে খানিক তাকালে জীবনের অর্থ ও তাৎপর্যের চিন্তা মনে আসে, সেইসব ভয়াবহ চিন্তা, যা দর্শনিককে ...আরও পড়ুন