শ্রাবণ দিনের কাব্য
শফিকুল ইসলাম
আগামী প্রকাশনী
প্রারম্ভিক কথা...
পুরানো শহর মানে- স্মৃতির শহর,
বহুদিন পর সেই পুরানো স্মৃতির শহরে ফেরা মানে-
স্মৃতির আয়নায় নিজেকে মুখোমুখি দাড় করানো....
কত স্মৃতি, কত মুখ
কত উদাস দুপুর, বিষন্ন গোধূলী, জোছনা-মাখা রাত
ফেলে আসা ক্ষণগুলো মুহুর্তে হৃদয়ে ভীড় করে।
আর সেই সব সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-নিশার পটভূমিতে
কোন কোন মুখ আবার অবিকল মনে জাগে,
হৃদয়ের অতলান্তে ঝড় তুলে....
তেমনি একটি মুখ সুলতা,
বহুদিন আগের এই শহরে একটি মানবীর মায়াবী মুখ-
যে মুখ ¯^cœ দেখাতো বেচে থাকার,
পথ চলায় যোগাতো প্রেরণা--
স্মৃতির শহরে ফিরে এলে তাকে তো মনে পড়বেই,
তাকেই আরো বেশী মনে পড়বে-
মনে পড়াটাই ¯^vfvweK ও মানবিক;
যদিও দীর্ঘ দিনে দৃশ্যপট,
চেনা পথ-ঘাট সবই পাল্টে গেছে,
তবু মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা
অতৃপ্ত প্রেম আবার জেগে উঠবেই,
তৃষিত নয়ন মনে মনে খুজবে সেই চেনা মুখ;
ফিরে চাইলেই কি সবই ফিরে পাওয়া যায়,যায়না।
তেমনি সুলতা নামের কেউ একজন
একদিন এ হৃদয়ে সুখ সুখ বেদনার অনুভব জাগিয়েছিল
তাকে ও আর খুজে পাওয়া যায়নি,
হয়তো যাবে ও না কোনদিন।
সুলতা-রা বুঝি এমনি করেই জীবনে আসে
¯^cœ দেখিয়ে এক সময় ¯^cœ ভেঙে দিয়ে চলে যায়,
আর সেখান থেকেই শুরু হয়
তরুণ কবির হৃদয়ে গোপন রক্তক্ষরণ....
উজ্জ্বল পংক্তিমালার নীচে চাপা পড়ে থাকে
মর্মভেদী সহস্র সহস্র হৃদয় বিদারক দীর্ঘশ্বাস ॥
***
উৎসর্গ
যাকে ভালবেসে,
একদিন এই জীবনকে
বড় বেশী ভালবেসেছিলাম-
যাকে হারিয়ে আজ এই জীবনের চেয়ে
মৃত্যুই বেশী সুমধুর বলে মনে হয়-
যার বিচ্ছেদ যাতনায় তিক্ত গরল ও আজ
অমৃতের অধিক অমৃতময় বলে মনে হয়।
***
কতদিন পর পুরনো শহরে ফিরেছি
কতদিন পর পুরনো শহরে ফিরেছি-
বদলে গেছে অনেক কিছু,
চেনা-জানা দৃশ্যপট।
চেনাজানা অনেক মুখই আজ খুঁজে পাই না-
তার মাঝে তুমি ও একজন।
আহা, সেই চেনা-মুখ কখন ও কি ভোলা যায়-
যে মুখে আমি নিত্যদিন
আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি খুজতাম।
গলির মুখে তোমাদের সেই ভাড়াটে বাড়িটা
আজ ও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে,
শুধু তোমরাই নেই।
শুনেছি এই শহরেই আছো,
তবে কোথায় আছো সঠিক কেউ জানে না।
বাড়ী বদলেছ, বদলেছ কি মন?
আমাকে কি মনে রেখেছ
তোমার অনেক গুণগ্রাহী
সম্ভ্রান্ত অনুরাগীদের মাঝে?
তোমাদের সেই পরিত্যক্ত বাড়ির
আঙিনায় যেয়ে দাড়াই নিঃশব্দে-
বন্ধ দরজায় হাত রাখি,
ইচ্ছে হয় কড়া নাড়ি-
আগের মত নাম ধরে ডাকি সন্তর্পণে
সুলতা....সু;
অজানা আশংকায় হাত ফিরিয়ে নেই,
বন্ধ দরজা খুলে কেউ যদি বলে বসে
অজ্ঞতাবশত-
সুলতা নেই, সুলতা বলে এখানে
কেউ ছিল না।
বন্ধ দরজার ওপাশে তুমি আছো
এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে ফিরে যাই -
আর এই শহরের অলিগলি চষে বেড়াই
একটি সেই হারানো প্রিয় মুখের খুঁজে ॥
***
সুলতা এই শহরের
সুলতা, এই শহরের
MMbPz¤^x প্রাসাদ, অট্টালিকা
মানুষের ভীড় অহেতুক কোলাহল,
অকারণ ব্যস্ততা,
সবই আছে, আগের মতই আছে-
শুধু তুমি নেই।
দিবসের ক্লান্তি শেষে এই শহরে ও রাত নামে,
ঝিমিয়ে পড়ে সমস্ত শহর,
বিশ্রামের ঘুমে নিমজ্জিত হয় নাগরিক জীবন
শুধু আমার দুচোখ তখন ও জেগে থাকে।
মানুষের ভীড়ে, জনতার কোলাহলে
কখন ও ছায়াচ্ছন্ন অন্ধকারে
শহরের গলি ঘুঁজিতে তোমাকে খুঁজি।
কোথায় হারিয়ে গেলে বলত কিছু না বলে-
কোথায় আমার সেই চেনা কন্ঠ?
সমস্ত শহর আজ আশ্রয়-কেন্দ্র
ঘোষিত হলে ও কেন আমি নিজেকে আজ
আশ্রয়হীন অসহায় ভাবি-
কোথায় সেই ভালবাসা-ঝরা মায়াভরা দৃষ্টি,
যার নীচে একদিন আমি নিজের বিবাগী মনের
অতলান্ত আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলাম।
সমস্ত শহর আজ পাথর হয়ে
আমার বুক চেপে বসেছে তুমিহীনতায়-
এই শহরের রৌদ্রদগ্ধ কঠিন মৃত্তিকা
গো-গ্রাসে শুষে নিয়েছে নিমেষে
আমার চোখের জলের ধারা,
মুছে কি নিতে পেরেছে তোমার জন্য
এ অবুঝ হৃদয়ের অতৃপ্ত হাহাকার?
এই শহরের বৃষ্টির জল মুছে নিয়েছে
তোমার ভাস্কর্যমন্ডিত কোমল পদচিহ্ন-
তবু এ অন্তরে তোমার পদধ্বনি
নিরন্তর প্রতিধ্বনি তুলে যাবে।
সুলতা তোমার শাড়ীর আচল
আমার বিজয় পতাকা।
সুলতা তোমার হৃদয় আমার ¯^‡`k -
সুলতা তোমার মুখশ্রী আমার সংবিধান ॥
***
সবার কাছে বসন্ত ঋতু
সবার কাছে বসন্ত ঋতু
একান্ত প্রার্থিত একটি ঋতু;
আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।
বর্ষার বাদলের সাথে তবেই
আমি আমার হৃদয়ের কান্না
মিশিয়ে নিতে পারি -
মিলিয়ে নিতে পারি
বাদলের রিমঝিম সুরের সাথে
আমার মনের অব্যক্ত কান্নার সুর।
আজ আমার জীবন জুড়ে বর্ষা
আজ আমার ভুবন জুড়ে বর্ষা।
আমি চাই আজ আমার প্রকৃতি জুড়ে
সারাক্ষণ বর্ষা নেমে আসুক;
আর আমার মাঠঘাট লোকালয় জনপদ
সবই হুহু বন্যায় ভেসে যাক।
আর আমি সেই অতল অশ্রু সায়রে
অবগাহন করে যদি
এই হৃদয়ের জ্বালা কিছুটা
জুড়াতে পারি-
হৃদয় জুড়ে এই শুধু সজল প্রত্যাশা ॥
***
সুলতা-সু এভাবে ঝড়ের বেগে এসে
সুলতা-সু,এভাবে ঝড়ের বেগে এসে
ঝড়ের বেগে তুমি চলে যাবে--
তা হয় না সুলতা।
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে
সহসা তুমি চলে যেতে চাইবে
কোন রূপ পূর্বঘোষণা ছাড়াই-
এ হয় না সুলতা।
এ বসতগৃহ বহির্বাটি
গৃহ প্রাঙ্গন সংলগ্ন উদ্যান-
এই ঘরের চারটি দেয়ালে
কড়ি কাঠে, চৌকাটে,মেঝেতে, বিছানায়
সর্বত্রই তোমার কল্যানী
কোমল হাতের ছোয়া,
তোমারই স্মৃতি বিজড়িত।
যেখানেই তুমি হাত রেখেছ
সেখানেই নান্দনিক ভিন্নমাত্রার
যোগ হয়েছে;
যেখানেই তুমি হাত রেখেছ
সেখানেই ফুল ফুটেছে।
তুমি চলে গেলে অনাদরে অযত্নে
ঘরের কোনে লতিয়ে উঠবে
অবাঞ্চিত আগাছা;
তুমি চলে গেলে সাজানো গোছানো
গৃহের আসবাবপত্রে জমবে ধুলাবালি;
তুমি চলে গেলে
যেদিকে চোখ পড়বে
তোমার রেখে যাওয়া অজস্র স্মৃতি
চোখে পড়বে-
আর আমাকে পীড়িত করবে অষ্টপ্রহর।
প্রভাতে প্রথম জাগরণে
তোমার কল্যণী মুখ দেখে
আমরা দিবসের প্রাত্যহিক
কাজ কর্ম শুধু করেছি,
তোমার স্নেহ-ঝরা আচলে সস্নেহে
ললাটের ঘাম কতবার
তুমি মুছিয়ে দিয়েছ।
আমাদের রোগ-জীর্ণ ললাটে
যখনই তুমি সস্নেহ হাত রেখেছ
মুহূর্তে আরোগ্য হয়ে গেছে
আমাদের দুরারোগ্য ব্যাধি।
তুমি চলে গেলে গোটা পৃথিবীটা
আমাদের অসুস্থ হয়ে পড়বে
তোমার শুশ্রুষাবিহীন।
ঝড়ে বিধ্বস্ত সাজানো বাগানের মত
সব কিছু আমাদের এলোমেলো
তছনছ হয়ে যাবে।
সুলতা -
তুমি আমাদের চৈত্রের খরতাপে
শান্তিদায়িনী স্নেহ-শীতল ছায়াবৃক্ষ,
তুমি আমাদের অনৈক্যের সংসারে
সংহতির একটি বিশাল বৃক্ষ।
তুমি চলে গেলে কে আমাদের
আগলে রাখবে-
রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে
আমাদের ভীষণ অসুখ করবে।
সুলতা তুমি চলে গেলে
আমরা সহসা-ঝড়ে-বিধ্বস্ত
শাখাশ্রয়ী পাখির মত
নীড়হারা হব,
ঘর ছাড়া হব
ঝড়-ঝঞ্ঝা কবলিত রাতে।
সুলতা তোমার বিদায় নেবার সময় হলে ও
আমাদের তোমায় বিদায় দেবার সময় হয়নি।
সুলতা আমাদের চোখে
যে প্রত্যাশার আলো জ্বলছে,
আমাদের কথা তুমি রাখবে
তুমি যাবে না,
তোমার বিদায় নেবার প্রসত্মাব
ফিরিয়ে নেবেই তুমি আচমকা-
আমাদের সে প্রত্যাশার আলো
তুমি নিভিয়ে দিও না ॥
***
আমার ঘরের বিছানায় আর
আমার ঘরের বিছানায় আর
বালিশে আর চাদরে
তোমার সুগন্ধি স্মৃতি সৌরভ বিলায়-
কেমন ¯^cœgqZvq আমাকে
আচ্ছন্ন করে রাখে সারাক্ষণ -
নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া মানুষের মত।
আমার ঘরের চৌকাঠে আর
গুছিয়ে রাখা কাপড়ের আলনায়
একগুচ্ছ পুষ্পশোভিত ফুলদানীতে আর
দেয়ালে টাঙানো নৈসর্গিক শোভামন্ডিত তৈলচিত্রে
আর শোকেসে সাজানো থরে থরে বই-পত্তরে,
সর্বত্র তোমার স্মৃতি লেপ্টে আছে।
কি করে মুছবো বল তোমাকে
কি করে তোমাকে ভুলে থাকবো।
ধরেই নিলাম তোমাকে না হয় ভুলেই গেছি,
কি করে তোমার স্মৃতি উদ্দীপক
এই পরিপার্শ্বকে ভুলবো-
একটা মানুষ এই এক জীবনে
বল কতটা পরিপার্শ্ব বিমুখ হয়ে থাকতে পারে।
যদি ক্ষণিকের জন্যে তোমায় ভুলে থাকি
এই সজীব পরিপার্শ্ব মুহূর্তে তোমার কথা
মনে করিয়ে দেয় বারবার।
তুমি ছিলে তুমি আছো
এই ঘর এই আঙিনায় -
একথাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে ধরা দেয়
এই মনে বারবার।
তোমাকে কি করে A¯^xKvi করব-
তুমি আছো এই আমার অস্তিত্বে
আর অস্থিতে মজ্জায় মিশে আছো তুমি
হৃদয়ের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে
অবিচ্ছেদ্য অনিবার্য সত্তার মত,
কাছে না থেকে ও কাছের মানুষ হয়ে আছো।
হৃদয়ের নিভৃতে খুব গোপনে
অজানা মধুর রাগিনীতে
তুমি আমার অন্তর নিরন্তর বাজিয়ে তুলো।
তোমার স্মৃতিই আমার
আগামী দিনের প্রেরণা,
তোমার স্মৃতিকেই উপজীব্য করে
আজ ও আমি বেঁচে আছি।
তুমি আমার জীবনের ঘোর অন্ধকার রাতে
একটি স্নিগ্ধ আলোর প্রদীপ।
যখনই হতাশার অতল অন্ধকারে
হাবুডুবু খাই-
তোমার রূপের দীপ্তি ছড়ানো
সুন্দর অই মুখখানি
অন্ধকারে ধ্রুবতারা হয়ে
জীবন চলার পথে আমাকে পথ দেখায়।
আমি আজীবন তাই তোমার স্মৃতির কাছে
সমর্পিত একজন ॥
***
সুলতা এই শহরে পরিচিত এই বাড়ীতে
সুলতা এই শহরে পরিচিত এই বাড়ীতে
একদিন তুমি ছিলে,
একদিন এই বাড়ীর আঙিনায়
নুপুর-ঝংকৃত চরণে তুমি
ছুটাছুটি করেছ উৎসবে আনন্দে-
তোমার অজান্তে
তোমার যৌবনের সুবাস ছড়িয়ে গেছ চারপাশে।
আজ বদলে গেছে তোমার ঠিকানা,
এই শহরে আর তোমার চরণ পড়ে না,
বন্ধ গেট সারাদিন বন্ধই থাকে।
তবু কি যেন অজানা মোহের দুর্নিবার আকর্ষণে
দিবানিশি এ বন্ধ বাড়িতেই
আমি ছুটে আসি।
কেউ নেই জেনে ও
একাকী দাঁড়াই এসে এ বাড়ির নির্জন আঙিনায়-
সুলতা-সু বলে নাম ধরে ডাকি সন্তর্পণে
পুরনো অভ্যাসবশত।
জানি কেউ সাড়া দেবে না,
আমার আহ্বান ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে
আমারই কাছে ফিরে আসবে;
তবু প্রাণপণে ডাকি তোমাকে,
আর চীৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে
সুলতা, ঠিক হয়নি তোমার এভাবে চলে যাওয়া,
কোনরূপ পূর্ব ঘোষণা ছাড়া
এরকম অনুমোদনহীন প্রস্থান।
তুমি চলে গেছ কতকাল
তবু মনে হয় যেন
এই আসছি বলে- আমাকে পথের পাশে
দাড় করিয়ে রেখে
তুমি চলে গেছ কতকাল-
আর অনন্তকাল ধরে আমি
দাঁড়িয়ে আছি পথপ্রান্তে
তোমারই অধীর প্রতীক্ষাতে ॥
***
তুমি নেই তাই
তুমি নেই তাই
নির্জন গলির প্রান্তে একা দাঁড়ানো
এই বাড়িটা --
অভিমানে মুখ ভার করে থমকে আছে
বুকের ভেতর বিশাল শূন্যতা নিয়ে;
একদিন যে বাড়ির প্রতিটি মুহূর্ত
আনন্দ-মুখর থাকতো তোমার কলকাকলীতে।
তুমি নেই তাই -
দীর্ঘদিন প্রবাস যাপনের পর বাড়ি ফিরে এলে
শফিক তুই এসেছিস, তুই এসে গেছিস তাহলে
বলে হাক ডাক তুলে
বাড়ীময় হৈচৈ ফেলে দেয়না কেউ আজ আর-
নীরব অভিমানে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটা
শুধু বলে নেই, নেই, সে নেই।
আজ যে দিকে তাকাই
অজস্র স্মৃতির কাটা এসে বুকে বিধে।
তোমার সযত্ন পরিচর্যায় সাজানো বাগান
আজ আগাছা-পরগাছার দখলে,
নির্জন বারান্দার কোণে আজ
নিঃশব্দ অন্ধকার ঝুলে থাকে,
এ ঘরে এখন কেউ সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালে না আর।
কারো কাকনের রিনিঝিনি ঝংকারে
আজ এ কুটির প্রাঙ্গণ আর
মুখরিত হয়ে উঠে না।
বন্ধ দরজা জানালার কপাট
বন্ধই থাকে সারাদিনমান।
ঘরের আলনায় রাখা শাড়ীটা
ঘরের কোণে থাকা তানপুরাটা
তেমনই পড়ে থাকে শরীর চিতিয়ে।
শুধু স্মৃতির ধুলোবালি জমে থরে থরে
যতদিন যায়।
আধখোলা রবীন্দ্রনাথের গীত বিতান
টেবিলে তেমনই পড়ে থাকে -
সজীব পত্র-শোভিত পুষ্প-স্তবক
দিনে দিনে শুষ্ক বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে-
ঝরে যাওয়া শুষ্ক পুষ্প-গুচ্ছ পালটিয়ে
নতুন এক গুচ্ছ পুষ্প কেউ তুলে
রাখেনা আজ সাজিয়ে ফুলদানীতে।
ঘরের কোণে টাঙানো ক্যালেন্ডারে
দিন মাস সপ্তাহ চলে যায় -
নতুন মাস বছর আসে
কেউ তার পুরনো পৃষ্ঠা দেয় না উল্টিয়ে।
দেয়ালে সাটানো দেয়াল ঘড়িটা
সেই যে চারটা তেত্রিশের ঘরে থেমে আছে,
কেউ সেটা সচল করে দেয় না
তার চাবীটা ঘুরিয়ে।
তুমি চলে গেছ
একদা ব্যস্ত এ গৃহের সব কর্মকান্ড
থেমে গেছে যেন চিরতরে-
কর্ম মুখর পৃথিবীর একপাশে
পড়ে আছে যেন ভগ্নমনোরথ এ বাড়িটা।
আর আমি তোমার স্মৃতি
আকড়ে ধরে এ ভিটে মাটিতে বসত গড়েছি
শেষ দিনটির অপেক্ষাতে ॥
***
তোমাকে বিদায় দিতে গিয়ে
তোমাকে বিদায় দিতে গিয়ে
যদি এই দুই চোখ জলে ভরে যায়
গোপনে আঁচলে তা আমি মুছে নেবো,
তুমি মুখ ফিরায়ে চলে যেও।
যাবেই যখন চলে
থমকে দাঁড়িও না আর।
সম্মুখের পথ চলতে গিয়ে যদি
কারো পিছু ডাক শুনে থমকে দাঁড়াও
তবে মনে করো এ মনের ভুল।
তুমি চলে যেও
ঝরা ফুলদল দলে সমুখে চরণ ফেলে।
যাবেই যখন চলে
থমকে দাঁড়িও না আর।
যদি কোনদিন কোন অবসরে
কারো স্মৃতি মনে করে
তোমার বসন্ত দিনে যদি
হৃদয়ে নামে শ্রাবণের মেঘ-
স্মৃতির দুয়ার বন্ধ করে
নতুন সাথীকে আরো কাছে বুকে টেনে নিয়ে
ভুলে থেকো এই আমাকে।
যাবেই যখন চলে
থমকে দাঁড়িও না আর ॥
***
সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে
সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে
একা গোপন গভীর ক্ষতচিহ্ন,
তুমি আমার জীবনে এক
অমীমাংসিত প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
অনেক কষ্টের পথ পাড়ি দিয়ে
দুসহ একাকীত্বের
দুরতিক্রম্য পথ পেরিয়ে তবে
তোমার দেখা পেয়েছিলাম-
তারপর কোথায় হারিয়ে গেলে
আমার জীবন থেকে বহুদূরে।
বিশ্ব উজাড় করা মণি-মুক্তা ঐশ্বর্যে
কেউ এই ঘর ভরে দিলে ও
তোমায় হারানোর ক্ষতি
আমার পোষাবে না কিছুতে।
সুলতা তুমি আমার ঘুম-ভাঙানো
ভোরের পাখি-
আমার আধার রাতের শেষে প্রভাত সূর্য।
তোমায় হারানোর বেদনাময় অন্তরের
অন্তর্গত শূন্যতা
কিছুতেই পূরণ হবার নয়।
তোমার বিরহ বিচ্ছেদ ভারাক্রান্ত
কন্টকাকীর্ণ স্মৃতি
আজীবন আমাকে পীড়া দেবে।
এই ক্ষত চিহ্ন আমি আজীবন
সযত্নে লালন করেছি।
এতো আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ,
অসম্ভব প্রাপ্তি-
এ ক্ষত চিহ্নই তো আমার জীবনে
তোমার স্মৃতির উদ্বোধক ॥
***
সুলতা তুমি শুধু
সুলতা তুমি শুধু
একটি শব্দ একটি নাম -
অনেকের কাছে হয়তো
নেহায়েত সাদামাটা তিন অক্ষরে
নির্মিত একটি শব্দ,
বিশেষ্য পদবাচ্য।
কে জানে কখন ঐ একটি নাম
শাব্দিক অর্থ ছাপিয়ে
অনির্বচনীয় ব্যঞ্জনায় কখন
আমাকে জড়িয়ে নিয়েছে।
কে জানে ঐ নামের সাথে
কখন অবিচ্ছেদ্যভাবে
জড়িয়ে গেছে আমার জীবন
আমার অস্তিত্ব।
ঐ নামের উচ্চারণে
কেন রক্তে আমার ঢেউ খেলে যায়।
ঐ নামের ছোয়ায় আমি
মুহুর্তে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে যাই।
এক অজানা শিহরণে আমার
সমস্ত স্নায়ুতন্ত্র কেঁপে কেঁপে উঠে।
সুলতা ঐ নামের উচ্চারণে
আমার উষ্ণ হৃদয়ে বয়ে যায়
মুহূর্তে এক ঝলক সুবাতাস।
সুলতা, সুলতা আমার ইষ্টনাম-
যে নামের উচ্চারণমাত্রে
সঞ্জীবনী মন্ত্রের মত মুহুর্তে
মৃত্যুপথযাত্রী আমাকে
ফিরিয়ে আনে জীবনের দিকে।
সুলতা- এই একটি নাম
আমার জীবন থেকে যদি ঝরে যায়
তবে আমার জীবন মুহূর্তে
হেমন্তের পাতাঝরা রিক্ত শাখার
বিশাল অরণ্যের হাহাকার নিয়ে
মর্মর ধ্বনিতে বেজে উঠে।
জীবন চলার পথে
অজস্র জনের পাশে এসেছি;
অনেক নতুন নতুন নাম জেনেছি,
আবার অনেক নাম ভুলে ও গেছি,
কোন কোন নাম অনেক দিন
স্মরণে থেকে ভরেছে হৃদয়-
তারপর সে নাম ও এক সময় ভুলে গেছি।
সুলতা- একটি সে নাম
অবিনশ্বর অস্তিত্ব নিয়ে
এ হৃদয়ে চিরতরে মুদ্রাংকিত হয়ে গেছে ॥
***
সুলতা তোমার কথা মনে পড়লে
সুলতা তোমার কথা মনে পড়লে
আমার রোদ উঠা প্রথম সকাল
দেখতে দেখতে বিষণ্ন বিকেল হয়ে যায়
কেন বলত?
আর বারেবারে তোমার কথা কেন মনে পড়ে
আর কেন মনে পড়ে।
আর আমার উষার উদয় আকাশের
রাঙা রবি কখন অস্তরাগ রঞ্জিত
পশ্চিমাকাশের গোধূলির সুর্য হয়ে যায়
কেন বলত?
সুলতা, তোমার কথা মনে পড়লে
আমার সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ
কেন মুহূর্তে শুষ্ক বিবর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে যায়
আমারই চোখের সামনে
কেন বলত?
সুলতা, তোমার কথা মনে পড়লে
রক্তবর্ণ শিমুল পলাশ অশোক
কখন আমার ক্ষত-বিক্ষত হৃদপিন্ড হয়ে
লাল বর্ণ রক্ত ঝরায় -
কেন বলত?
আর তোমাকে মনে পড়ে,
বারবার তোমাকেই মনে পড়ে
কেন বলত?
***
সে আর আসেনি
সে আর আসেনি,
এই আসছি বলে সেই যে চলে গেলো
আর ফিরে আসেনি।
এই ঘরে আজ ও অযাচিতভাবে
বিবাগী হাওয়া জানালার পর্দা
কাপিয়ে ঘরে উকি দিয়ে যায়।
কখন ও জোছনা চুপিসারে
অনধিকার প্রবেশ করে
ঘরের মেঝেতে শুয়ে থাকে।
সকালের রোদ
আমার ঘুমিয়ে থাকার অবকাশে
গৃহে প্রবেশ করে
আলোছায়ার নাচন তুলে।
শুধু এই ঘরে সে আর আসেনা,
কোনদিন আসবে না জেনে ও
অবুঝ প্রত্যাশায় কাঙালের মতন
উন্মুখ থাকে এই মন।
শূন্য ঘর আজ যেন
দেয়াল-ঘেরা শূন্যতায় খা-খা করে-
আর এই মনে তার স্মৃতির নিত্য আনাগোনা
আমাকে বিচলিত করে ॥
***
সুলতা কতদিন তোমায় দেখি না
সুলতা কতদিন তোমায় দেখি না,
সিঁড়িতে তোমার চঞ্চল পদধ্বনি শুনিনা
কতকাল বাজে না তোমার কাকনের রিনিঝিনি
আমার অন্তরে।
এই জনপদ, লোকালয়ে, মানুষের ভীড়ে
একাকী অসহায় আমি ভেসে বেড়াই
শ্রাবণ আকাশের ছিন্নমূল মেঘমালার মত
ঠিকানাবিহীন।
সুলতা কতদিন তোমার
মায়াভরা মুখখানা দেখিনা,
জীবনের অন্ধকার আকাশে
মুর্ত একখানি আশার মত
কতদিন তোমার চাঁদ মুখ ভাসে না
এ হৃদয় গগনে।
সুলতা এক নিরবচ্ছিন্ন
অমাবস্যার ঘোরে
আচ্ছন্ন প্রহর আমার কাটে
তুমিবিহীন অন্ধকারে।
শ্রীহীন এ ঘর
তোমার রূপের আলোয় উদ্ভাসিত করে
তুমি ফিরে এসো আমার এ দীন কুটিরে--
নিষ্প্রদীপ আমার এ ঘরে
তখন আর আলো জ্বালাবার
প্রয়োজন হবে না ॥
***
সুলতা, হঠাৎ চোখ মেলে
সুলতা, হঠাৎ চোখ মেলে পাশে তাকিয়ে
যখন আবিষ্কার করি তুমি পাশে নেই
ভিড়ের মধ্যে ও আমি একা হয়ে যাই-
নিমেষে আমার পারিপার্শ্ব
জনশূন্যতায় হাহাকার করে।
মনের খেয়ালে ছোট্ট নদীটা
পাড়ি দিতে গিয়ে হঠাৎ যখন চোখে পড়ে
শূন্য নৌকায় তুমি নেই-
ছোট্ট নদীটা তখন নিমেষে
অন্তহীন মহাসাগর হয়ে যায়-
আমি তখন কোন কুল কিনারা খুঁজে পাই না।
অন্তহীন পথ পেরিয়ে
পথপ্রান্তে এসে হাত বাড়িয়ে
তোমার হাতটি ধরতে যেয়ে
যখন তোমার হাতটি খুঁজে পাই না-
তখন মনে হয় আরো কত পথ যেন
এখন ও চলার বাকী....
কর্মক্লান্ত প্রহরে
কখনও ক্ষণিকের অবসরে
যখন মনে পড়ে
আমার জীবনে তুমি নেই-
তখন সমস্ত জীবনটাই
আকাশের মত বিশাল একটা
প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে
ঝুলে থাকে আমার সামনে ॥
***
কোথাও অনেক দূরে
কোথাও অনেক দূরে
চলে যেতে চাই
যেখানে স্মৃতি নেই,
না পাওয়ার জ্বালা নেই,
অন্তর্গত অন্তর্দাহ নেই-
শুধু আছে চলমান বর্তমান।
যেখানে ¯^cœ নেই, আকাংখা নেই,
নেই অতীত।
অতীত মানেই তো তুমি,
অতীত মানেই তো বিরহ বেদনা-
বিচ্ছেদের অদৃশ্য প্রদাহ।
হায় স্মৃতি কেন বারেবারে পিছু ডাকে।
যে পথ পেছনে ফেলে এসেছি
সে পথ পিছে পড়ে কেন থাকে না....
কেন স্মৃতি এসে বারবার সম্মুখে দাঁড়ায়
আর আমাকে কাঁদায়-
কেন পশ্চাতে পড়ে থাকে না
বিস্মৃতির ধুধু অন্ধকার ॥
***
আমি চলে যাচ্ছি সুলতা
আমি চলে যাচ্ছি সুলতা
চলে যাচ্ছি
ঝলমল আলোয় উদ্ভাসিত
এই রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে-
সকলের অজ্ঞাতসারে নীরবে নিঃশব্দে;
যবনিকার অন্তরালেই শুধু নয়
তারও থেকে দূরে আরো বহুদূরে-
এই চেনা জনপদ এই লোকালয় ছেড়ে।
শুধু তুমি সুখে থেকো
শুধু তুমি সুখে থেকো-
এই শেষ সংলাপটুকু আবৃত্তি করতে করতে।
বিদায় বন্ধু বিদায়-
জীবনের মাঝখানে এইখানে এই রঙ্গমঞ্চে
তোমার আমার কত সংলাপ
অন্তরঙ্গ এই মেলামেশা
সহ-অবস্থান -
ভুলে যেও বন্ধু, মনে রেখ না।
জানি এখনও তোমার অনেক দৃশ্য
অভিনীত হবার বাকী-
তোমাকে তাই রেখে গেলাম।
জানি আজকের এই নাটকের
কল্পকাহিনী শেষে
যখন জীবনেরে মূল কাহিনীতে
তুমি ফিরে আসবে-
ব্যাকুল হয়ে খুঁজবে আমাকে-
তখন আমি তোমার থেকে বহুদূরে
আরো দূরে চলে গেছি....
তোমাকে মুক্তি দিয়ে চলে গেছি চিরতরে ॥
***
একদিন এই বাগানে
একদিন এই বাগানে
যে পাখী এসে
মিষ্টিমধুর গান শুনিয়েছিল
সেও একদিন দূর নিলীমার
অজানায় অন্তর্হিত-
আর কোন দিন ফিরে সে আসেনি;
যেতে যেতে রেখে গেছে
তার মিষ্টিগানের সৃষ্টি ছাড়া সুর-
যা আমার হৃদয়ে
আজও ধ্বনি প্রতিধ্বনি তুলে।
আর আমি তাকে খুঁজে বেড়াই
বনে-বাদাড়ে গহীন অরণ্যে, বৃক্ষ শাখায়-
কোথাও মেলেনা সন্ধান।
একদিন তেমনি করে তুমি ও এসেছিলে
অচেনা পথিক কোন অজানা দেশ হতে
আমার জীবনে-
মনের আনন্দে ক্ষণিকের খেয়ালে
ভালোবেসেছিলে....
তারপর মনের খেয়ালে আবার চলে গেছ
যেতে যেতে পেছনে ফেলে রেখে গেছ স্মৃতি।
যেমন করে উড়ে আসা পাখী
পেছনে ঝরা-পালক ফেলে
সুমুখের অজানায় যায় হারিয়ে-
তেমনি তুমিও চলে গেছ,
আর আমি তোমার সেই স্মৃতি
সন্তর্পনে সাজিয়ে রেখে
তোমার পথ প্রান্তে আজ ও বসে আছি -
যদি ও জানি তুমি ফিরে আসবে না কোনদিন ॥
***
সুলতা, দিনের আলোয়
সুলতা, দিনের আলোয়
যেমন এই পৃথিবীর
সুন্দর দৃশ্যাবলী চোখে দেখি,
তোমার রূপের আলোয় তেমনি
আমার জীবন সুন্দর হয়ে
ধরা দেয় আমার জীবনে।
সুলতা, তুমি কি দেখেছ
চৈত্রের খাখা রোদ্দুরে শুকিয়ে যাওয়া প্রান্তরের
অনার্দ্র রোদন?
তুমি কি শুনেছ বোবা পাথরের
অশ্রুবিহীন নিঃশব্দ ক্রন্দন?
তোমাকে হারানোর
বিরতিহীন বেদনায় বিচ্ছেদে
আমার হৃদয় আজ
চৈত্রের শুষ্ক প্রান্তর সুলতা,
আমার হৃদয় আজ বোবা পাথর।
সুলতা আশাহীন ভাষাহীন
এই জীবনে
তুমি ভিন্ন আমার মুক্তি নেই ॥
***
সুলতা যখন তোমায় দেখি
সুলতা যখন তোমায় দেখি
তত আরো দেখার সাধ জাগে।
কখনও ভাবি তোমার উপমা
একটি সদ্য প্রস্ফুটিত লাল গোলাপ,
কখনও ভাবি পূর্ণিমার জোছনার সাথে
তোমার রূপের সাদৃশ্য-
আবার পর মুহূর্তে মনে হয় ভুল
তোমার উপমা শুধু তুমি;
তুমি আছো সব সৌন্দর্য়ের মাঝখানে
সৌন্দর্য়ের রাণী হয়ে সগৌরবে
মহিয়সী;
অপরাজিত, অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
চাঁদের রূপ
সে যে সূর্যের ধার-করা আলোর ঝলক-
তাই কি করে চাঁদের সাথে
চলে তোমার তুলনা।
তোমার রূপের আলোয়
আমার বিশ্বভূবন উদ্ভাসিত-
তুমি ছাড়া আমার সবই অন্ধকার ॥
***
সুলতা, আজ অবসরে
সুলতা আজ অবসরে
তোমার কথাই কেন জানি মনে পড়ছে
বারবার....
সুলতা তুমি মিশে আছো
আমার সত্তায়, অস্তিত্বের ভাজে ভাজে
আমার শিরায় উপশিরায়, প্রতিটি রক্ত কণিকায়
অবিচ্ছেদ্যভাবে।
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে তুমি আছো।
পৃথিবীর সব কোলাহল যখন থেমে যায়-
তখনই তোমার নিঃশব্দ পদধ্বনি
বেজে উঠে আমার অন্তরে।
আমার একা ঘরে ঘরময় বাতাসে
আমি পাই তোমার অস্তিত্বের ঘ্রাণ-
চাদের মত তোমার রূপের আলোয়
প্রতিফলিত হয়ে এই পৃথিবী
অলৌকিক সৌন্দর্যের মহিমা নিয়ে
আমার কাছে প্রতিভাত হয়।
আমার কিছু নেই জানি আমি
রিক্ত নিঃস্ব me©¯^nviv আমি একজন।
তবু সব হারিয়ে আমার আছে
তোমার দেয়া স্মৃতি-
এক বর্ণাঢ্য স্মৃতি।
সেই স্মৃতি গর্বে আমি
বেঁচে থাকার মাঝে এক ধরনের
আনন্দ পাই।
যতদিন এই হৃদয়ে তোমার রূপ
জাগ্রত থাকবে-
ততদিন অলোকিত অন্তরে
এ পৃথিবী আমার কাছে
আমরাবতী হয়ে ধরা দেবে-
তোমার স্মৃতিই এখন আমার কাছে
এক বিরল মহার্ঘ সম্পদ ॥
***
সুলতা এখানে এলেই মন কেমন করে
সুলতা এখানে এলেই মন কেমন করে
তবু কি যেন এক অজানা দুর্নিবার আকর্ষণে
এসে দাঁড়াই এখানে-
এই আঙিনায়।
আসি বললে ঠিক ভুল হবে
আমাকে কে যেন টেনে নিয়ে আসে।
সবই তো আছে এখানে
যেখানে যা ছিল-
শুধু তুমি নেই।
তোমার লাবণ্যমাখা উপস্থিতির
উত্তাপবিহীন পরিপার্শ্ব কেমন
বিষণ্ন নিঝুম।
তুমি তো ভুলে গেছ সবই....
অথচ তোমার অনুপস্থিতিতে
তোমার বিরহে
কেবল আমার মন ভেঙে গেছে-
আর সবই ঠিকই আছে।
দেয়ালে ঝুলানো ঘড়ির কাটাটা
ঠিকই ঘুরছে আগের মত,
সূর্য উঠছে সকালে সূর্য ডুবছে বিকালে,
অশোক পলাশের ফুল ফুটে ফুল ঝরে যাচ্ছে;
অথচ তোমার বিহনে
আমার কিছুই ঠিক থাকছে না,
সব কিছুতেই ভুল হয়ে যাচ্ছে।
যখন ভাবি তুমি নেই, তুমি নেই
মন বলে কিছু নেই, কিছু নেই-
থেমে গেছে যেন সব ॥
***
সুলতা একদিন যে মুখে
সুলতা একদিন যে মুখে
এক অপার্থিব আলো দেখেছিলাম-
যে আলোর মোহে
পতঙ্গ আগুনের উত্তাপ ভুলে গিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ দেয়-
সুলতা সেই মুখে আজ
এ কোন কালো মেঘের ছায়া।
সুলতা একদিন যে চোখে
আমি দেখেছিলাম
আমার জীবনের প্রতিচ্ছবি-
আজ সেই চোখে উদ্ভাসিত
এ কোন ছলনার কাটা
তীর হয়ে বুকে বিধে।
সুলতা, একদিন যে দুটি চরণের নুপুরের ধ্বনিতে
আমার জীবনের বীণা রিনিঝিনি বাজতো-
আজ সেই নুপুর নিক্কনে
এ কোন অশনিসস্পাতের ধ্বনি
ধ্বনিত হয়ে এই বুকে বাজে ॥
***
তুমি নেই আজ আর এখানে
তুমি নেই আজ আর এখানে-
তবু এই গৃহ এই আঙিনায় সর্বত্র
তোমার স্মৃতি লেপ্টে আছে...
এই বিছানায়, এই চাদরে লেগে থাকা
তোমার দেহের উম
আজও উত্তাপ দেয়
প্রখর শীতে ও এই শীতার্ত হৃদয়ে।
এই নকশা কাটা উপাধানে
আজ ও যেন তোমার কেশের নীরব সুগন্ধী
অদৃশ্য সুবাসে আমাকে মাতাল করে রাখে
সারাক্ষণ।
এই বিছানায় আজ ও যেন
তোমার কোমল ফুল্ল স্তনের ভারে-আকা আল্পনা
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হয়ে
তোমার সগৌরব অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়।
তোমার নিঃশ্বাস হতে ছড়ানো
অদৃশ্য সৌরভ এই ঘরের বাতাসকে
সুরভিত করে রাখে সারাক্ষণ।
তুমি চলে গেছ কতকাল...
তবু মনে হয় এখন ও যেন
নুপুর-গুঞ্জরিত কাকনের রিনিঝিনিময়
তোমার আগমন ধ্বনি
এখনও কানে বাজছে।
তোমার রূপের দীপ্তির কাছে হারমানা
শিয়রের-কাছে-জ্বলা দীপশিখার সলাজ আলো
এখনও স্মরণ করিয়ে দেয়
জোছনার কোমল আলোর মত মমতা-ছড়ানো
একটি মায়াবী মুখচ্ছবির কথা।
জানি সময়ের পরিবর্তনে
বদলে যাবে এই প্রেক্ষাপট...
তবু সবার অলক্ষ্যে
আমার হৃদয়ের নেপথ্যে বাজবে
তোমারই আবহ-সংগীত চিরদিন ॥
***
সুলতা, তুমি চলে গেছ
সুলতা, তুমি চলে গেছ
আমার বিধ্বস্ত বুকের কতটা অংশ তলিয়ে গেছে
ধস-নামা পাড়-ভাঙা নদীপারের মত
কেউ সে খবর রাখে না।
অথচ প্রচার মাধ্যমে প্রতিদিন
মুহূর্তে সারা বিশ্বে কতকিছু রটে যায়
অতি তুচ্ছ ঘটনা ও বাদ পড়ে না
সাংবাদিকের শ্যেন দৃষ্টি থেকে।
অথচ তুমি চলে গেছ
এই খবরটি এই মুহূর্তে
আমার কাছে বড় বড় হরফের শিরোনাম হয়ে
বিশাল ক্যানভাসে আমার সামনে ঝুলে আছে-
সে খবর কেউ রাখে না।
সুলতা তুমি চলে গেছ-
তোমার বিচ্ছেদ জনিত দাবানলে
এই বুকের বিশাল অরণ্যভূমি
মুহূর্তে বিরান প্রান্তরে পরিণত হয়েছে-
সে খবর কেউ রাখে না।
সুলতা, তুমি চলে গেছ
পৃথিবীর সৌর প্রদক্ষিণ থেমে যায়নি,
নদীর স্রোত তেমনি বয়ে চলেছে,
ঘড়ির কাটা আগের মতই ঘুরছে।
সুলতা, তুমি চলে গেছ কতদিন
অথচ কোন শোকসভার এখন পর্যন্ত
কোন প্রস্তুতি নেই।
সুলতা তুমি চলে গেছ
আমার অন্তরে জানি অনন্তকাল ধরে
শোক সভা চলবে।
তোমার অন্তর্ধানে আমার অন্তরে
এক মিনিটের নীরবতা নয়
হাজার বছরের প্রাগৈতিহাসিক নীরবতা নেমেছে।
সুলতা তুমি চলে গেছ -
আমার বুকের হৃদস্পন্দন থেমে গেছে
কেউ সে খবর রাখে না ॥
***
আজ মনে হয় তুমি পাশে থাকলে
আজ মনে হয় তুমি পাশে থাকলে
অন্য রকম হত আমার পৃথিবী
অন্য রকম হত আমার আকাশ
বদলে যেত এই দিনরাত্রি।
তুমি পাশে থাকলে
আমার পৃথিবী জুড়ে
সংবৎসর লেগে থাকতো বসন্তকাল,
আমার বাগান জুড়ে
বৎসর ধরে ফুটে থাকতো রকমারী বাহারী ফুল।
থাকতো না এই ঋতু বদলের পালা বদল।
তুমি পাশে থাকলে
এই জীবনের ধু ধু মরুভূমিতে
আজকের মত নিজেকে এত
পরাজিত বিসর্জিত
এত অসহায় মনে হত না।
রাজ্য জয় না করেও নিজেকে
দিগ্বীজয়ী বীর মনে হতো।
তুমি পাশে থাকলে
চলার পথে এতটুকু পথ চলতে
এত গুরুভার দুর্ভর ক্লান্তি
আমাকে আচ্ছন্ন করতো না।
দু'চোখের পাতা জুড়ে
এই অবেলায় এত গভীর ঘুম
নেমে আসত না ॥
***
সুলতা তোমার কাছে যাবো
সুলতা, তোমার কাছে যাবো
বর্ষার খরস্রোতা ভরা নদী সাতরে
আমি তোমার কাছে যাবো-
রৌদ্রদগ্ধ মরভূমির তপ্ত ধুধু বালিরাশি
নগ্নপদে পার হয়ে
তোমার কাছে যাবো।
সুলতা, তোমার কাছে যাবো
বাতাসে তোমার আহ্বান ভেসে আসলেই
সব খেলা ছুড়ে ফেলে আমি
তোমার কাছে ছুটে যাবো।
সুলতা, তুমি মেঘ
আমি তৃষ্ণার্ত চাতক,
সুলতা তুমি জোছনা
আমি পিপাসার্ত চকোর।
সুলতা, সত্যি সত্যি দেখো একদিন
সব লোক লাজ দ্বিধাদ্বন্দ ছুড়ে ফেলে
আমি তোমার কাছেই চলে আসবো চিরতরে
হঠাৎ করে তোমাকে চমকে দিয়ে-
তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও
ফিরে যাব না, যাব না ॥
***
সুলতা এই বুকের ভেতর
সুলতা, এই বুকের ভেতর
অনেক দুঃখ অনেক কষ্ট।
এই উদ্যানে আর আগের মত
নেই প্রস্ফুটিত পুষ্পের সমাহার।
এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো
শুষ্কপত্র ও জীর্ণ পুষ্প-পাপড়ি।
সুলতা এই মন আজ
চৈত্রের শুকিয়ে যাওয়া ক্ষীণ স্রোতা নদী-
ভরা বরষার দুকুল-ছাপানো জল
আজ শুধু হারানো দিনের স্মৃতি।
সুলতা এই আকাশ আজ
মেঘে ঢাকা শ্রাবণের মেঘলা আকাশ-
মধু চন্দ্রিমার মধুর জ্যোৎস্না আজ
স্মৃতির বিলাস।
সুলতা এই বুকে
অনেক না বলা কথা,বেদনার অব্যক্ত বাণী
নীরব প্রহরে হৃদয় জুড়ে হাহাকার করে-
আর বলে
সুলতা তুমি নেই, তুমি নেই
কেউ নেই, কিছু নেই ॥
***
সুলতা তুমি আমার
সুলতা, তুমি আমার
বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত
তাজা গোলাপ দেখার অনুভূতি।
সুলতা তোমার লাবণ্য
চাঁদের মায়াবী জোছনার মত ঝরে
হৃদয়ে মমতা জাগায়-
অনাবিল আবেশে হৃদয় ভরিয়ে দেয়।
সুলতা তুমি
সদ্য ঘুমভাঙা-চোখে রোদে-উজ্জ্বল
প্রথম সকাল দেখার অনুভব-
নতুন দিনের আমন্ত্রণ ।
এই সুর এই গান, এই কাব্য এই ছন্দ
তুমি ছাড়া অর্থহীন।
সুলতা তুমি আমার জীবনের উপমা-
রূপ কথার গল্পে পাতালের নীচে
কৌটোয় বন্দী কোন অজানা দৈত্য-দানবের
প্রাণ-ভোমারার মত।
তুমি হারিয়ে গেলে আমার জীবনে
মৃত্যু ছাড়া আর কিছু থাকে না।
সুলতা তুমি আমার আধার আকাশে
একটি চাঁদের মত-
একটি নিটোল নিভাজ ¯^cœ,
একটি সজীব কবিতা,
চির ঝংকৃত সুরে একটি ছন্দ দ্যোতনা,
শিল্পীর আকা যেন একটি জীবন্ত ছবি,
মিথ্যে হলেও সত্যের চেয়ে
আরো বেশী সত্য কিছু ॥
***
সুলতা জীবনের আয়োজনে
সুলতা জীবনের আয়োজনে
কত শত কামনা বাসনাই
হৃদয়ের অন্তরালে চাপা পড়ে গেছে
প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংস স্তুপের মত।
তবু তোমাকে পাওয়ার বাসনা
আজও জেগে আছে এই মনে
অনির্বাণ প্রদীপ শিখার মত।
জীবনের অনেক সাধ অভিলাষ
কেটে ছেটে প্রায় শূন্যের কোঠায়
নিয়ে এসেছি
সামর্থহীন লোকের মত-
বাসনার কৃচ্ছতা সাধনের জন্য।
তবু এই জীবনে বেহিসেবীর মত
বিপুল মূল্য দিয়ে হলেও
তোমার অনলে পতঙ্গের মত
আমি নিজেকে বিসর্জন দিতে চাই ॥
***
আজ মনে হয় আমার জীবন যেন
আজ মনে হয় আমার জীবন যেন
এক ভাঙ্গনকবলিত নদী তীর
কেবলই পাড় ভাঙে-
ক্রমশ সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে
আমার ¯^‡cœi ভূখন্ডের বিস্তৃতি-
আর আমি কেবলই
ভাঙনের শব্দ শুনি।
কি দিবসে কি রাতে সারাদিন
জাগরণে আর ঘুমের ঘোরে
প্রতিদিন যেন আমার ¯^‡cœi ভিটেমাটি
একটু একটু করে তলিয়ে যায়
জলের অতল আধারে -
আর আমি ক্রমশ একজন
¯^cœnxb মানুষে রূপান্তরিত হচ্ছি।
জানি এমনি করে ধসে পড়া ভূমি
তলিয়ে যেতে যেতে
আগ্রাসী তরঙ্গের আঘাতে
আমার বাস্তুভিটা ও একদিন
জলের অতলে হারিয়ে যাবে -
আমি হারাবো আমার শেষ আশ্রয়টুকু ও।
এই বিশাল ভূপৃষ্টে আমি
একদিন ¯^cœnxb ভূমিহীন
মানুষে পরিণত হব।
মাথার উপরে আচ্ছাদনহীন আমি
খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে
দেখবো একদিন
তিলে তিলে নিজস্ব চেতনার জমিতে
যে বসতি আমি গড়ে তুলেছিলাম
তার সবই আজ নিশ্চিহ্ন,
তার সবই আজ আগ্রসী জলের দখলে-
আজ সেখানে শুধু
নিষ্ঠুর জল তরঙ্গের খেলা।
একদিন যে জমিতে আমি
¯^‡cœi চারাগুলো রোপণ করেছিলাম নিজ হাতে
সযত্ন প্রয়াসে-
তারও আজ কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই-
বুভুক্ষু জলরাশির উঠরে
তাও চলে গেছে।
অথচ বেঁচে থাকলে এই চারাগুলো
একদিন বিশাল মহীরূহ হত-
তার সবুজ পাতার সৌন্দর্য়ে
আমার দৃষ্টি জুড়াতো-
তার হিমেল ছায়ায়
জীবনের নিদাঘ দুপুরে
আমার তপ্ত হৃদয় জুড়াতো।
একদিন আমার বুকে ছিল
এইসব মহীরুহ সংকলিত
সবুজ অরণ্যের ¯^cœÑ
আর সেই অরন্যের বৃক্ষ ছায়ায়
অতিথি পাখীদের সুরেলা সংগীত
শ্রবণের ¯^cœ|
হায় আজ আমি সুর গান পাখী
এই সব থেকে কতদূরে সরে এসেছি।
রাক্ষুসী জলের কাছ থেকে
কিছুই বাঁচাতে না পেরে
নিজেকে নিয়ে বাঁচার তাগিদে
একটু একটু করে সরে
ক্রমশ বহুদূরে চলে এসেছি।
হায় আজ কোথায় সেই বিহঙ্গ-সংগীত
আর কোথায় পাখীর
ডানা থেকে অলখে ঝরে পড়া
রঙীন-পালক-কুড়ানো ¯^cœ|
আজ আমি বৃক্ষহীন ধুধু প্রান্তরে
একলা বসে বিক্ষুব্ধ তরঙ্গের
পৈশাচিক গর্জন শুনি-
আর সর্বস্ব হারানোর বেদনায়
নিজেরই আর্ত চীৎকারে
নিজেই চমকে উঠি।
আর দিগন্তবিস্তৃত জলরাশির দিকে
নির্বাক উদাস দৃষ্টিমেলে তাকিয়ে থাকি ॥
***
সুলতা যেদিন আমি থাকব না
সুলতা যেদিন আমি থাকব না
এই পৃথিবীতে
নিখিল পৃথিবীর বিরহী
আত্মার মাঝে আমার বেদনা
সেদিন ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত
হয়ে বাজবে।
সেদিনও নিঃশব্দে ঝরে যাওয়া
ফুলের মাঝে,
রাতের আধারে সংগোপনে
ঝরে পড়া শিশিরের মাঝে-
আমার না পাওয়া বেদনা
নিঃশব্দে অনুরনিত হবে।
হঠাৎ ছুটে আসা দমকা হাওয়ার মাঝে
আমার সকরুণ দীর্ঘশ্বাস
আর অতৃপ্তির হাহাকার
নীরবে মিশে রবে।
ঘন শ্যাম-মেঘ-কজ্জ্বল শ্রাবণ আকাশ
আমারই হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে
পাঠক চিত্তে ছায়া ফেলবে।
সুলতা একদিন সব পেয়েও
তোমাকে না পাওয়ার কারণে
কিছুই পাইনি সারাটা জীবনে
এই বোধ নিয়ে জীবন কেটেছে।
সুলতা, আকাশের মত
একটি বিশাল না হয়ে জানি
সেদিন ও আমার জীবনে
তুমি চিহ্নিত হয়ে রবে ॥
***
সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত
সুলতা সবার প্রিয় ঋতু বসন্ত
জানো আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।
সুলতা আমার বসন্ত ঋতুতে
আমার বনে কোন কোকিল
গায়না তো গান-
আমার বসন্ত ঋতুতে কোন ফুল ফুটে না।
আমার পুষ্পবিহীন উদ্যানে
কেউ তো আমার জন্য মালা গাথে না-
বসন্ত ঋতু তাই আমাকে কাদায়
আমি তাই ভালবাসি বর্ষা ঋতুকে।
আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা।
বর্ষার ধারা জলের সাথে
আমার কান্না একাকার হয়ে
প্রকাশের পূর্ণতা খুঁজে পায়।
বর্ষার আকাশের উড়ে চলা মেঘের সাথে
আমার বুকের ভেতরে জমাট বাধা অশ্রু
ভেসে বেড়ায় আকাশে আঁকাশে।
সুলতা আমার জীবন জুড়ে বর্ষা
আর কোন ঋতু নেই।
বর্ষার ভরা আকাশের সাথে
আমি আমার অশ্রু সিক্ত
মনের মিল খুজে পাই-
আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা,
বর্ষার মেঘ মল্লার রাগিনী
তাই আমার প্রিয় -
বর্ষার রিমঝিম বাদলের সুর
তাই আমারই মনের সুর -
সুলতা আমার প্রিয় ঋতু বর্ষা ॥
***
আমাকে তুমি কখনও কাঁদতে দেখনি
আমাকে তুমি কখনও কাঁদতে দেখনি
কিংবা দুঃখের গল্প বলতে দেখনি বলে
ভেবনা আমার চোখে অশ্রু ছিল না
আমার বুকে কোন দুঃখ ছিল না।
এই বুক জুড়ে শুধু অনন্ত দীর্ঘশ্বাস
এই চোখ জুড়ে ধু-ধু অশ্রু-সমুদ্র।
এই বুকে অনন্ত দুঃখের কাহিনী নিয়ে
আমি নিশ্চুপ নির্বাক।
এই চোখের উপচে পড়া অশ্রু
আজ জমাট বাধা বরফ-
এই মুখর কন্ঠ আজ মূক পাথর।
অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মত
অন্তর্গত অনন্ত বেদনার নিভৃত প্রবাহে
আমার হৃদয় আজ আন্দোলিত।
অথচ দেখো আমার বহিরঙ্গ
কেমন শান্ত, সমাহিত -
অন্তর্গত অনলে পুড়ে পুড়ে
ভেতরে ভেতরে আমি নিঃশেষ হয়ে গেছি।
বেঁচে থাকার নির্মম প্রয়োজনে
দুঃখকে ভুলে থাকার বাস্তব তাগিদে
সারাদিন আমি
অন্তঃসারশূন্য অনন্ত ¯^‡cœi ভেতর বসবাস করে
¯^cœnxb বিবর্ণ জীবনের চিত্রকে ভুলে থাকি ॥
***
যেভাবেই কাটুক জীবন তো কেটেই যাবে
যেভাবেই কাটুক জীবন তো কেটেই যাবে
সময়ের গতি থেমে থাকে না,
জীবন তো থেমে থাকে না।
সুলতা আজ ভাবি তুমি পাশে থাকলে
তুমি কাছে থাকলে
জীবনটা আমার অন্য রকম হতে পারত।
আর দশজনের মত আমার ও
সাজানো গুছানো একটি ড্রয়ইং রুম থাকতো,
বাড়ির সামনের আঙিনায়
একটি ফুলের বাগান
প্রস্ফুটিত ফুলে ফুলে শোভা বর্ধন করতো-
আর আমার ঘর আলো করে থাকতে তুমি।
সুলতা আজ ভাবি তুমি পাশে থাকলে
তুমি কাছে থাকলে
জীবনটা আমার অন্য রকম হতে পারত।
ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে বলে এই যে
দশজনের নিকট আমার পরিচিতি
সে পরিচয় ঘুচিয়ে দিয়ে ফুটে উঠতো
আমার মাঝে-
আপাদমস্তক সাংসারিক গৃহী মানুষের চরিত্র।
সুলতা আজ ভাবি তুমি পাশে থাকলে
তুমি কাছে থাকলে
জীবনটা আমার অন্য রকম হতে পারত।
আজ আয়নার সামনে দাঁড়ালে
এক বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত মানুষের ছবি
মুহূর্তে ভেসে উঠে পুরো আয়না জুড়ে-
নিজেকেই নিজে তখন চিনতে ভুল করে ফেলি।
আর ভাবি তোমায় নিয়ে
জীবনটা যদি শুরু থেকে শুরু করা যেত।
সুলতা আজ ভাবি তুমি পাশে থাকলে
তুমি কাছে থাকলে
জীবনটা আমার অন্য রকম হতে পারত ॥
***