Read The wolf by Kalyan Ashis Sinha in Bengali Short Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

বনমুরগী

স্কুল থেকে বেড়িয়ে সোজা বৈঠকখানার দিকে হাঁটতে শুরু করি। শীতের বিকেলের রোদ, শরীরকে যতটা না গরম করে, শীতল হাওয়া তার থেকেও বেশি ঠান্ডা করে দেয়। তবু একটা চাদর গায়ের উপর ফেলে রেখে সোনালী রোদ্দুর খারাপ লাগে না।

আজকে স্কুলে শুধু গল্প করে করেই কেটে গেল। ছাত্রছাত্রীরাও কেউ আসেনি। এমনিতে পরীক্ষার পর ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে আসেও না। আজকে স্কুলে, দুপুরেও ভূতের গল্প বেশ জমে উঠেছিল।

যাইহোক, হাঁটতে হাঁটতে বৈঠকখানায় উপস্থিত হই। আমাকে দেখেই ভুলো প্রতিদিনের মতো কাছে এসে লেজ নাড়াতে শুরু করে। একবার তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই, চুপ করে তার নিজের জায়গায় গিয়ে বসে। আমিও ভিতরে ঢুকি।

এখনও কেউ আসেনি। তবে আজকে সবাই আসবে। আগে থেকেই আজকে ফিস্ট হবার কথা আছে। যদিও রান্নাবান্না সেই রঘুদাই করবে। তবে সাধারণত আমাদের যেদিন ফিস্ট হয়, সেদিন আমাদের আড্ডাটাও বৈঠকখানায় না হয়ে, রান্নাঘরে রঘুদার সাথেই হয়। আর রঘুদা একসাথে থাকা মানেই, তার পুরানো অভিজ্ঞতা গল্পের আকারে পেয়ে যাব।

বৈঠকখানার ভিতরটা এই বিকেলেই কেমন যেন অন্ধকারময় হয়ে উঠেছে। আর একটু পরেই রঘুদাকে আলো দিতে বলতে হবে। আগে আর কেউ আসুক। বিপিন মনে হয় আজকে একটু বেড়িয়েছে। ওকে এই সময়টাতে একটু খাটতে হয়। সব স্কুলে গিয়ে বইয়ের নমুনা দিয়ে আসতে হয়। তবে সন্ধ্যার মধ্যেই এসে পরবে। ততক্ষণ একটু গড়িয়ে নিই।

যেমন ভাবা তেমনই কাজ। চশমা একপাশে খুলে রেখে, একটু রেস্ট নেওয়া আর কি! আর কেউ না থাকায়, ঘুম গাঢ় হতে সময় লাগেনি।

কতক্ষণ কেটে গেছে বুঝতে পারিনি। আজকে ঠাণ্ডাটাও বেশ জাঁকিয়ে পরেছে। চাদরটাকে ভালো করে জড়িয়ে নিই। এমন সময় দেখি, রাজীব আর শান্তনু বসে আছে। বুঝতে পারি না, এরা কখন এলো!

কিরে, কখন এলি? আমায় ডাকিসনি কেন?

বৃষ্টি শুরু হবার আগেই। উৎপল মনে হয় বৃষ্টিতে আটকে পরেছে।

বৃষ্টি কখন থেকে হচ্ছে? আমি তো স্কুল থেকে ফিরেই শুয়ে পরেছিলাম।

তাই দেখলাম। তোকে অঘোরে ঘুমাতে দেখে শান্তনুই ডাকতে বারণ করল। তার কিছুক্ষণ পরে, রঘুদা এসে লণ্ঠন জ্বেলে দিয়ে গেল। তখন বোধ হয় পাঁচটার মতো হবে। হঠাৎই আকাশ মেঘে ছেয়ে যায় এবং বৃষ্টি শুরু হয়।

এখন কটা বাজে?

সাতটা মতো হবে।

তার মানে, আমি একটানা প্রায় তিন ঘণ্টা ঘুমিয়েছি। উঠে পরি। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে আসি। বাইরে এখনও বৃষ্টি পরে চলেছে। তবে টিপটিপ করে পড়ছে। আর থামবে বলেও মনে হচ্ছে না। এমন অসময়ে আবার বৃষ্টি কেন! শীতকালে কখনোই বৃষ্টি ভালো লাগে না। আর এই বৃষ্টিটা আজকের তাপমাত্রাকে অনেক কমিয়ে দিয়েছে। চাদর থাকলেও বেশ শীত শীত করছে।

বৈঠকখানায় ফিরে আসতেই দেখি, বিপিনও এসে পরেছে। বিপিন বলে, আজকে এখনও কিছু শুরু হয়নি কেনরে! আর তোরা সব এখানে বসে রয়েচিস! ফিস্টের জোগাড় কখন হবে? ও রঘুদা, খুব খিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি কিছু একটা ব্যবস্থা করো।

আমরাও সবাই মিলে হাত লাগানোর জন্য ভিতরের দিকে ঢুকি। শান্তনু বলে, আজকে উৎপলের একটা দেশি মুরগী আনার কথা। কিন্তু এখনও আসছে না কেন?

ওকে সকালে হাটের দিকে যেতেও দেখেছি। আজ তো ওর কোন কাজও ছিল না। ডাক্তারবাবু এক সপ্তাহের জন্য পুরী গেছেন। তাই উৎপলের এখন ছুটি। কিন্তু এখনও আসছে না কেন!

চল, ততক্ষণে অন্য সব কিছু জোগাড় করে রাখি।

অন্য আর কি! তার চেয়ে বরং চল, রঘুদাকে ভাতটা বসাতে বলে দিই।

আজকে ফিস্ট। মানে তোমরা তো সেই দশটার পরে খাবে। এখুনি ভাত রান্না করে ফেললে যে, ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। আজকের বৃষ্টি আরও ঠাণ্ডা করে দিয়েছে। তার চেয়ে বরং, আজকে ভাতের বদলে রুটি করে ফেলি।

তা যা বলেছ। ঠাণ্ডায় রাতে ভাতের চেয়ে রুটিই ভালো।

কিন্তু উৎপল দাদাবাবু এখনও আসছে না কেন? তোমরা বরং একটু গল্প করো, এদিকটা আমিই দেখছি।

আমরাও বৈঠকখানায় ফিরে আসি। সত্যি! উৎপলটা না কি একটা! সারে সাতটা বাজতে গেল। শীতকালের রাতে গ্রামাঞ্চলে সারে সাতটা মানে মাঝরাতের সমান। বাইরে বৃষ্টিও টিপটিপ করে পরে চলেছে। আর একটু দেখি। তারপর না হয় কিছু একটা ভাবা যাবে।

বাইরে কোথাও একটা বাজ পড়ল। আর তার আওয়াজে আমি প্রায় চমকে উঠলাম। এই একটি জিনিস, আমার কাছে খুব ভয়ের। কিছুতেই ভয় কমাতে পারি না। তাই অন্য প্রসঙ্গ টেনে ভয় কমাতে চেষ্টা করি।

হ্যাঁ রে বিপিন, তোর সব স্কুলে ঘোরা হয়ে গেছে?

অনেক গুলোতেই বই দিয়ে এসেছি। কয়েকটি স্কুলে এখনও যাওয়া হয়নি। সেগুলোতে আর যাবও না। এবারে শুধু স্কুল গুলোতে একবার করে গিয়ে বুকলিস্ট নিয়ে আসতে হবে। আর বইয়ের স্টক করতে হবে। আমাদের মধ্যে উৎপলের কাছে ফোন ছিলোই। আবার বিপিনও একটা নতুন ফোন নিয়েছে।

বিপিন বলে, দাঁড়া, উৎপলকে একবার ফোন করি। বলে পকেট থেকে ফোন বের করে উৎপলের নম্বর ধরার চেষ্টা করে। বৃথা চেষ্টা! উৎপলের ফোন ঝড়বৃষ্টির জন্য বন্ধ আছে।

শান্তনু বলে, একবার এগিয়ে গিয়ে দেখলে হয় না?

এতো রাতে কোথায় খুঁজবি বলতো?

গেলে তো সোজা ওর বাড়িতেই যেতে হবে! দাঁড়া, রঘুদার থেকে একটা ছাতা নিয়ে আসি। তোর দাদুর ছাতাটাতো আছেই। দুজনে না হয় একবার বেরিয়ে দেখে আসি। এখান থেকে ওদের বাড়ি হেঁটে আধঘণ্টা মতো লাগবে।

তাই চল।

শান্তনু ভিতরে ঢোকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ছাতা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আমিও উঠে পরি। বিপিনদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকি। একটা টর্চ আমাদের আলো দেখায়। টিপটিপ করে বৃষ্টি এখনও পরেই চলেছে। গরমকাল হলে, এই বৃষ্টিতে কেউ ছাতা নিয়ে বেরোবার কথা ভাবতোই না। কিন্তু শীতে জড়োসড়ো হয়ে একহাতে ছাতা অন্যহাতে টর্চ নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে।

রাস্তাটা কিছু দূরে গিয়ে দুভাগ হয়ে গেছে। ডানদিকের পথটা সোজা খামারবাড়ির দিকে চলে গেছে। আমরা বাঁদিকের রাস্তাটা ধরবো। উৎপলের বাড়ি এই দিকেই পড়বে। তারপরে আরও কিছুটা গেলে জেলেপাড়া। তার পরে উৎপলদের বাড়ি।

আমরা তিনমাথার মোড়ে একটু দাঁড়াই। এতটা পথ এলাম। কোন জনমানুষের দেখা নেই। তবে সেটাই স্বাভাবিক। একে শীতের রাত, তার উপরে বৃষ্টি। কোন জরুরী কাজ না থাকলে কেউ বাইরে বেরোবেও না। তাই কারোর দেখা পাব, সে আশা না করাই ভালো।

চল, দাঁড়িয়ে কি হবে!

তাই চল।

আবার এগিয়ে চলি। দুপাশে ফাঁকা মাঠ। মাঝ দিয়ে রাস্তা। ক্রমে মাঠ পার হই। হঠাৎ শান্তনু বলে, কিছু শুনতে পাচ্ছিস?

ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কি শুনবি?

ভালো করে শোন। সামনের দিক থেকে আওয়াজটা আসছে।

সত্যিই ঝিঁঝিঁর ডাক ভেদ করেও আওয়াজটা কানে আসছে এবার। যেন অসংখ্য পাখি একসাথে ডেকে চলেছে। এমন সময়ে আমাদের সামনে দিয়েই একটা বনমুরগী রাস্তা পার করে উল্টোদিকের ঝোপের মধ্যে ঢুকে গেল।

ভারি অদ্ভুত তো!

কি হল রে?

এতো বড় হলাম, আজই প্রথম দেখছি, বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে একটা বনমুরগী যাতায়াত করছে!

তাই তো!

চল, তোকে আর মুরগী দেখতে হবে না। উৎপলের বাড়ি এখনও অনেক দূর। আবার ফিরতেও হবে।

আমরা এগিয়ে চলি। এমন সময় একবার বিদ্যুৎ চমকায়। বিদ্যুতের আলোয় আমরা যা দেখলাম, তারপর সত্যিই অগ্রসর হবার কথা ভুলে গেলাম।

দেখি, আমরা শ্মশানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, আর আমাদের ও শ্মশানের মাঝে অগুনতি মুরগী ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তা করছে, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই।

ঠিক দেখছি তো! কিন্তু দুজনেই একসাথে ভুল দেখবো! হাতের টর্চটাতে জল লেগে সুইচ কাজ করছে না।

শান্তনুর কাছে টর্চ নেই। বলে, কি হল রে, টর্চ অফ করে দিলি কেন? কোথায় ছিল বলতো এতো মুরগী?

টর্চ জ্বলছে না, ও'কে জানাই। এটা খুবই সমস্যার কথা। একটা মাত্র টর্চ নিয়েই বেরিয়েছি। হঠাৎই আকাশ আলো করে দিয়ে আবারও একটা বাজ পরে। তাতেই দেখি, শ্মশানের কাছে শ্মশানযাত্রীদের জন্য যে ঘরটা রয়েছে, তার সামনে কেউ একজন বসে রয়েছে।

শান্তনুকে বলাতে, ও বলে, চল তো একবার, দেখি।

আমাদের কাছে কিন্তু কোন আলো নেই!

একেবারে নেই নয়, একটা দেশলাই তো তোর পকেটে আছে।

হ্যাঁ, তা আছে।

তাতেই হবে।

আমরা রাস্তা থেকে শ্মশানের দিকে নেমে যাই। সামনে যে ফাঁকা জায়গাটা আছে, সেখানে নামার সাথে সাথেই বুঝতে পারি, আমাদের দেখে মুরগী গুলো ভয়ে সরে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের চারপাশে গোল করে ঘিরে রেখেছে। আমরাও এগিয়ে যেতে থাকি। শ্মশানযাত্রীদের ঘরটিতে কোন দরজা নেই। তিন দিকে দেওয়াল আছে এবং জানালার জন্য ফাঁকা জায়গা রাখা আছে। দেখি, ভিতরে কে যেন একজন, দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে।

সামনে আসার পর শান্তনুই বলে, দেশলাইটা একবার জ্বালা। আমিও একটা দেশলাই কাঠি জ্বালাতেই দেখি, উৎপল রক্ত মাখা শরীরে বেহুঁশ হয়ে পরে আছে। বাইরে তখন অগুনতি মুরগীর ডাক শোনা যাচ্ছে। শান্তনুই বাইরে থেকে হাতে করে জল এনে উৎপলের চোখে মুখে ছিটিয়ে দেয়।

আস্তে আস্তে উৎপল চোখ খোলে।

আমি কি বেঁচে আছি? তোমরা কারা?

আবারও একবার টর্চটা জ্বালার চেষ্টা করি। দেখি এবারে টর্চটা জ্বলেছে। শান্তনুকে প্রথম দেখতে পায়।

ঈশ্বরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। তোদের দেখা পেলাম।

কি হয়েছিল তোর?

মুরগীতে আক্রমণ করেছিল।

মুরগী!

দেখ না কি অবস্থা করেছে। তোর সামনে পরলে বুঝতে পারতিস।

কি হয়েছিল গোড়া থেকে বল।

সকালে হাট থেকে ফিস্টের জন্য একটা বনমুরগী কিনে নিয়ে আসি। বিকালে তার পালক ছাড়িয়ে, পুড়িয়ে, ছোট ছোট পিস করে নিয়ে বের হই। বেরোতে বেরোতে একটু দেরিই হয়ে গিয়েছিল। শ্মশানের কাছে আসতেই দেখি, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে।

একে শীতকালের সন্ধ্যে, তার উপরে বৃষ্টি। তাই আর না এগিয়ে, এই ঘরটায় ঢুকে পরি। এদিকে বৃষ্টিও বাড়তে থাকে। তার সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া! আবার এই ঘরটায় জানালা দরজাও নেই। কোন রকমে একটা কোণে বৃষ্টির হাত থেকে বেঁচে চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকি। হাত থেকে ব্যাগটা নামিয়ে রাখি।

আমি এককোণে থাকার জন্য বৃষ্টির হাত থেকে বেঁচে যাই। কিন্তু বৃষ্টির জল জানালা দিয়ে ঢুকে ব্যাগের উপরে পরে। যেন কোন ঈশ্বর ব্যাগের উপরে শান্তিজল ছিটিয়ে দিয়ে বনমুরগীর জীবন ফিরিয়ে দিল।

ঠিক বুঝতে পারি না। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাগের ভিতরে কিছু একটা নড়াচড়া অনুভব করি। একি! ব্যাগের ভিতরে আবার কি ঢুকলো! যাইহোক, পরে থাক এখন। বৃষ্টি থামলে দেখবো। কিন্তু নড়াচড়াটা বাড়তেই থাকে।

আর একটা ব্যাপার অন্ধকারেও চোখে পরে। ব্যাগটা যেন ক্রমশ ফুলে উঠছে। বাইরে থেকে ঝড়ের শোঁশোঁ শব্দ কানে আসছে। এমন সময় বাইরে একটা বাজ প‍রে। আর তাতেই দেখতে পাই, ব্যাগ থেকে বেড়িয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে দৈত্যাকার একটা মুরগী!

অন্তত পাঁচ ছয় ফুট হাইট হবে। এতো বড় মুরগী হতে পারে বলে জানতাম না। মুরগীটা সোজা আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। দেখে বেশ ভয় লাগে। কি করবো বুঝতে পারি না। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পরছে। আর এই ঘরে আমার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমার থেকেও বড় একটি মুরগী! নড়াচড়া বন্ধ করে, চুপ করে বসে থাকার চেষ্টা করি।

হঠাৎ মুরগীটা মানুষের মতই কথা বলল।

কি বলল? আমরা একসাথে জিজ্ঞেস করি।

তোরা আজকে আমায় খাবি ভেবেছিলিস না! দেখ, আমি এখন তোর মাংস খাব। আমার দিকে এগিয়ে আসে।

আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাই। হাত পা ছুঁড়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। মুরগীটাও তার ঠোঁট দিয়ে ঠোকরাতে শুরু করে। যেখানেই ঠোকরায়, সেখান থেকেই মাংস খুবলে নেয়! যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে বৃষ্টির মধ্যেই ছুটিতে শুরু করি।

যা ও'কে ধরে নিয়ে আয়, মুরগীটা তার মুরগী সৈন্যদের আদেশ দেয়। তখন লাখো লাখো মুরগী আমাকে ঘিরে ধরে। বাধ্য হয়েই আবার এই ঘরের মধ্যে ফিরে আসি!

মুরগীর পায়ে হাত দিয়ে অন্যায় স্বীকার ক‍রি, যেন এবারের মতো আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়!

আমাদের ছেড়ে দিস তোরা?

বুঝতে পারি, সমস্ত মানুষ জাতির পাপের শাস্তি আমাকে এখন পেতেই হবে। তাই চুপ করে মুরগীটার পায়ে হাত দিয়েই প‍রে থাকি।

ছাড়, ছাড়, পা ছাড়। আমরা মানুষ না! বলে বাইরে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে একা একা এখানেই বসে আছি। বাইরে অসংখ্য মুরগী ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভয়ে আর বাইরে বেরোতে পারিনি।

চল এবারে।

যাব, কিন্তু বাইরে যে মুরগী সৈন্যরা আছে!

আমরা বাইরে বেরোতে যাব, এমন সময় আবারও টর্চটা নিভে যায়। কি আর করা যাবে! অন্ধকারকে মেনে নিতে হয়। বাইরে একটা বাজ পড়ে। তাতেই দেখতে পাই, দরজার জন্য যে জায়গাটা ফাঁকা রাখা হয়েছিল, সেখানে মূর্তিমান যমদূতের মতো দৈত্যাকার সেই বনমুরগীটা দাঁড়িয়ে আছে। কি যে করি এখন!

ওঠ, সৌরভ ওঠ। অনেকক্ষণ সন্ধ্যে হয়ে গেছে। রঘুদা মুড়ি দিয়ে গেছে।

চোখ খুলে তাকাই। দেখি উৎপল ডাকছে। তবে কি আমি এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম! মনে মনে হেসে ফেলি।