Read Blessed are the eyes - 2 by Mallika Mukherjee in Bengali কবিতা | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

নয়ন যে ধন্য - 2

নয়ন যে ধন্য

 

লেখক

নরেন্দ্র মোদী

 

(2)

_______________________________________

 

অনুবাদ

মল্লিকা মুখার্জী

_______________________________________

 

14

এমন মানুষ

 

যেথায় বলা উচিত সেথায় থাকে চুপ

আবার বলে যখন উচিত কথা বলেনা,

এমন মানুষকে কখনও গুরুত্ব দিও না।

 

আওয়াজের নয়ন খোলো,

উচিত কথা বলো।

নিগূঢ নীরবতার আড়ম্বরকে  

দাহন করো,

কখনও স্তাবকতাকে পোষণ কোরো না।

 

কারুর নিন্দা শুনে

চুপ থাকাই কিন্তু পাপ,

সত্য বলে, স্বীকার করে

তার সকল অপরাধ মাফ।

বাতাসে বৃক্ষের মহিমা মত্ত হয়ে দুলে,

অনাদি কাল থেকে

নিসর্গ কিন্তু সত্য কথাই বলে!   

 

 

15

উৎসব

ঘুড়ি....

আমার উর্ধ্বগতির উৎসব,

আমার সূর্যের দিকে প্রস্থান!

 

ঘুড়ি....

আমার প্রত্যেক জন্মের ঐশ্বর্য,

আমার সুতো আমার হাতে!

অয়নে এই চরণ,

গগনে বিহগের সমান

ওড়ে আমার ঘুড়ি।

অতশত ঘুড়ির মাঝেও

আমার ঘুড়ি পথভ্রান্ত হয়না।

কোনো গাছের ডালেও জড়ায় না!

 

ঘুড়ি....

যেন আমার গায়ত্রী মন্ত্র!

ধনী, সম্পন্ন বা দরিদ্র

সকলেই ভালোবাসে

‘কটি পতঙ্গ’ একত্র করতে।

অদ্ভুত আনন্দ এটাও!

বিচ্ছিন্ন ঘুড়ির কাছে রয়েছে

আকাশের অনুভব,

হাওয়ার গতিপথের জ্ঞান।

সে একবার উঁচুতে উড়েছে,

কিছুক্ষণ রয়েছে, এটাই প্রত্যক্ষ প্রমান!

 

ঘুড়ি....

আমার সূর্যের দিকে প্রস্থান!

ঘুড়ির প্রাণ রয়েছে সুতোয়,

ঘুড়ির ভব আকাশে।

ঘুড়ির সুতো আমার হাতে,

আমার সুতো শিবের হাতে!

ঘুড়ি চায় নিখিল বাতাস,

হিম ঘাটে শিবের আবাস।

ঘুড়ির স্বপ্ন

মানবের স্বপ্ন থেকে নিতান্ত উঁচু!

 

ঘুড়ি ঢেউ খেলে শিবের কোলে,

মানুষ মাঠে বসে শুধু জট ছাড়ায়!  

 

16

কারগিল

কারগিল আমি আগেও গিয়েছি,

টাইগর হিল আগেও দেখেছি।

তখন রাজাধিরাজের ধবল মৌনের  

অনুভূতি করেছি।

আর আজ?

আজ প্রতিটি শিখরে বোমের গর্জন,

বন্দুকের শব্দ শোনা যায়।

 

দেখেছি বরফের শিলার উপর

দাঁড়িয়ে আছে

জ্বলন্ত অগ্নির মতো সৈন্য।

দেখেছি প্রতিটি জোয়ানকে

কৃষক সেজে

নিজের বর্তমানকে রোপন করতে।

রক্তসেচন করিতে

যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ

শুকিয়ে না যায়।

 

প্রত্যেকটি জোয়ানের নয়নে দেখেছি

একশো কোটি স্বপ্ন।

চোখের পলকে

মৃত্যু কে ধরে রাখতে দেখেছি বীরকে,

আবার যমরাজকে দেখেছি

তাদের চরণ ছুঁতে।

 

জ্বলন্ত আগুনের সম

এই বীর জোয়ানের  

উষ্ণ প্রশ্বাসে

বরফকে ঝরনা হয়ে বইতে দেখেছি।

ঝরনার গতিতে সমাহিত

সুজলাম,

সুফলাম,

ভারতের সমবেদন।

আবার দেখলাম

ঝরনার গর্ভে প্রস্ফুটিত হল  

বন্দে মাতরম্ গান!

 

17

ক্রিয়াপদ

আমার চারিপাশে  

এঁকে দাও একটি শব্দের বৃত্ত,

এবার এই বৃত্তকে

চতুষ্কোনে পরিবর্তিত করো।

এই বৃত্ত-চতুষ্কোনের মধ্যে  

রেখে দাও

বিভিন্ন রঙের গুলির মতো শব্দ।

চকচকে গুলির মতো শব্দ,

কাঁচের শব্দ!

খাঁটি শব্দ- অশ্রুজলের মতো

বা পূর্ণ বিরামের মতো।

 

বিশেষনের চারিদিকে

এঁকে দাও লক্ষণরেখা।

মেনে চলো রামের মহিমা।

নামের আশপাশ খেলো

শূন্য-চতুষ্কোনের খেলা।

ক্রিয়াপদকে কেন্দ্রীভূত করো,

এইবার আঁকো

একটি অনন্ত বৃত্ত!

 

18

আত্মগর্ব

 

‘ঝুঠ বোলে কৌআ কাটে’

বলেই কি

আমাদের সত্যকথা বলা উচিত?

সত্য কিন্তু আমাদের আত্মগর্ব,

বিবশতা নয়।

 

সত্য না বললে মনে হয় যেন,

কোকিলের কুহুককে

মরা মাছ ভেবে

কাক তার চঞ্চু দিয়ে

তন্ন তন্ন করে দেবে।

 

গুজবের ওপর নির্ভর খবর

ভোর হতেই উদিত হয়

যেন কালো সূর্য!

 

সত্য হতে সত্যাগ্রহ অবধি

আমাদের সফরে সম্মুখীন হয়

চরণবিহীন পথিকদের ছায়া,

শুধু মানুষের দল!

 

 

19

গতির গান

 

গোধুলি

সন্ধ্যাবেলার সূর্যের প্রশ্বাসকে

কতক্ষণ রোধ করতে পারে?

সূর্যের প্রখর শ্বসন

শীতকালের ভোরকে

কতক্ষণ প্রতারিত করতে পারে?

মধ্যাহ্নের সূর্য

এই ঘন কালো পথকে

কতক্ষণ ব্যাহত করতে পারে?

এবার তো ক্ষমা করো!

 

আমার এই রসহীন ধরায়

শূল রোপন কোরো না,

কোনো কোমল পায়ের

রক্ত-পান শুরু করে দেবে এই শূল,

 তার আগেই থেমে যাও।

 

আমি গ্রাম্যবধূর কলসের ওপর

প্রতিবিম্বিত কিরণের

গান গাইতে চাই।

 আমি ভরদুপুরে কর্মরত শ্রমিকের

 ঝলমল স্বেদবিন্দুর

 গান গাইতে চাই।

আমি গোধুলির থেকে                                                                                  

শিশুর কোমল পায়ের উড়ন্ত ধুলোকে  

পৃথক করতে চাই।

 

আমার কামনা,

সেই ধুলির আমি একটি

অ্যালবাম তৈরি করি।

আমি গতির ছবি আঁকতে চাই,

প্রগতির রূপ সৃষ্টি করতে চাই

   কিন্তূ এই ছবির গায়ে যে দাগ রয়েছে!

 

মনে হয় গতি-প্রগতির বিক্রিত রূপ

দাগ হয়ে  ভেসে উঠেছে।

এই দাগ আর কিছু নয়,

আমাদের রোপন করা

শুষ্ক শূলের সাহস!

নরম-মুলায়ম পদতলের  

রক্ত মাখা ধুলো, তাই এত দাগ!

 

আমাদের গতি-প্রগতির

এই তো নিশানী!

তবে ....

এই দাগকে রূপ ভাবা উচিত হবেনা।

আমি তো সেই শিশুদের অন্তরে

প্রখর সূর্যের তেজ নিরুপন করে

গান গাইতে চাই,

তুমি অপেক্ষা করো।

 

এবারের অ্যালবামে

কোনো দাগ থাকবে না।

কিন্তু হায়...

তার আগেই

কত শিশুদের উষ্ণ রক্ত বয়ে গেছে,

এই শূলগুলো জ্বালাতে গিয়ে!

তাই বলছি,

শূল রোপন বন্ধ করো,

আমি গতি-প্রগতির গান গাইতে চাই।

 

20

গরবা

 

গায় তার গরবা,

অভ্যর্থনা করে তার গরবা,

গরবা গুজরাতের মহিমাগৌরব।

 

ঘুরে তার গরবা, মাতে তার গরবা,

গরবা গুজরাতের মহিমাগৌরব।

 

সূর্য-চন্দ্র গরবা, সকল ঋতু গরবা,

দিবস গরবা, রজনী গরবা,

গরবা গুজরাতের মহিমাগৌরব।

 

সংস্কৃতি গরবা, প্রকৃতি গরবা,

গরবা বাঁশি, গরবা ময়ুরপুচ্ছ ।

 

গরবা মতি, গরবা সহমতি,

বীরের গরবা, অমীরের গরবা।

দেহ গরবা, প্রাণ গরবা,

গরবা জীবনের সহজ বিরতিপর্ব।

 

গরবা সতী, গরবা গতি,

নারী জগতের মুকুলিত জাজিম।

গরবা সত্য, গরবা অক্ষত,

গরবা মায়ের শ্রীময়ী সিন্দুর!

 

21

গানের মাধ্যমে

  

পাখির পাখনায় লুকিয়ে আছে গান,

এই গানের মাধ্যমে

কোকিল, বুলবুলও কথা বলে।

তাদের একটি ডানায় ধরনী,

একটি ডানায় নীলাম্বর!

 

আমার কাগজে আঁকি সূর্য,

আবার আঁকি পূর্নিমার চাঁদ।

আমার এই কাগজে পল্লবিত হয় তরু,

তরুর গায়ে হরিত পর্ণ।

প্রিয়জনের স্মৃতিতে আঁকি শৈল,

যাকে ঝরনা ঝাঁকি দেয় আর্দ্রতা সহ।

 

এক দিকে মরু, অন্য দিকে সাগর,

তৃতীয় দিকে নদীর লিপি।

কন্ঠে আমার পরমের পিপাসা

যা মিটালেও মিটানো যায়না।

নয়নে আকাশ তুলে চলি আমি,

বাস করি যদিও পৃথিবীর কোলে!

 

22

কুসুমস্তবক

 

গভীর, বিরূপ এই গহ্বর কেন?

মানুষের মাঝে এ কী হানাহানি?

 

আমি তো সেতু হতে চাই,

প্রেমের হেতু হতে চাই।

এক তান যদি হতে পারে মানুষ

তবে অপূর্ব এই পরিবেশ!

 

গোবর গাদায় গড়ানো ব্যর্থ যদিও

গোলাপ হয়ে জন্ম নেওয়া

নিরর্থক নয়।

বাধা-বিঘ্ন দূর হলেই

পাবো হাতে কুসুমস্তবক!

 

 23

গর্ব

 

বরাবর গর্ববোধ করি,

আমি মানব, আমি হিন্দু।

প্রতি মুহূর্তের অনুভূতি,

আমি বিশাল, বিরাট সিন্ধু!

 

কেউ না থাকে বাদ,

সকলের সাথে যুক্ত হতে চাই,

সবার কাছে

যেন স্নেহময় প্রীতি পাই।

 

শিরায় নর্মদার নীর বহে,

ফুলের গায়ে আমি শিশির-বিন্দু!

বরাবর গর্ববোধ  করি,

আমি মানব, আমি হিন্দু।

 

হতে পারে নয়ন ছোটো

দৃষ্টি আমার বিশাল, তাই

সম্প্রদায়ের গলি নয়,

আমি নানাবিধ শিক্ষালয় চাই।

 

সূর্য, মেঘ, গ্রহ, নক্ষত্র –

আমার গগনে আমি ইন্দু,

বরাবর গর্ববোধ  করি,

আমি মানব, আমি হিন্দু।

 

24

তিতিক্ষা

 

অস্নেহ করো কায়া, ত্যাগ করো মায়া,

ছাড় দ্রব্য সামগ্রী, ছেড়ে দাও ছায়া।

ভগ্ন করো দুর্গ, ভগ্ন করো পিঞ্জর,

সম্মোহক স্বপ্ন যত, করো পরিত্যাগ।

 

রাত্রি বিচরণ করছে উদ্দেশ্যহীন,

জল্পনা করে চলেছে একাকী।

বিরত হোক বাণী, ছেড়ে দাও ভাষ্য,

সংশয়ের স্তম্ভ এড়িয়ে চলো।

 

কেউ নেই, নাইবা থাকুক,

থেকেও কেউ নেই নেই!

চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিবাদ ছেড়ে

নাহির পথকে ধীর ভাবে আবৃত করো।

 

 25

জানা নেই

 

এই সূর্য আমার ভালো লাগে।

তার সাতটি ঘোড়ার লাগাম হাতে রাখে,

কিন্তু জানা নেই

সে কোনো দিন

কোনো ঘোড়াকে

চাবুক দিয়ে আঘাত করেছে।

তবু

সূর্যের মতি,

সূর্যের গতি,

সূর্যের দিশা, 

সব কিছু সুনিশ্চিত।

কেবল প্রেম!

26

ছত্রছায়া   

 

সফল হলে ঈর্ষার যোগ্য, বিফল হলে দয়ার পাত্র,

সফল-বিফল পার করে তৃতীয় কুলে এসেছি মাত্র!

 

ভীরুতা স্বভাবগত হয়নি যখন,

আমি ভাববো কেন দীনতার কথা?

পূর্ণ ভাবে জীবন কাটিয়ে  

বিদায় নেব, আমার কামনা।

 

প্রভুর ছত্রছায়ায় শিক্ষা গ্রহন করি, আমি যে ছাত্র,

সফল-বিফল পার করে তৃতীয় কুলে এসেছি মাত্র!

 

নিন্দা নোনা মহাসাগর,

স্তুতি তেমন মধুর বাণী।

ছাওনি  দুটিই  অনর্থক,

আমাদের অক্ষত কাহিনী!

 

করি প্রার্থনা, রণক্ষেত্রে কাঁপেনা যেন আমার গাত্র,

সফল-বিফল পার করে তৃতীয় কুলে এসেছি মাত্র!