Read Another ghost story by Kalyan Ashis Sinha in Bengali Children Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

এক অন্য ভুতের গল্প

দোলের আগের সপ্তাহের কথা বলছি। এক সপ্তাহ আগে থেকেই এই বছরের দোলের উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে সর্বত্র। রাস্তার দুপাশে সব কটা মোড়ে মোড়েই কেউ না কেউ একটা টেবিল পেতে বসে পড়েছে। ছোট ছোট রঙের শিশি, ছোট ছোট বস্তায় নানান রঙের আবির, হরেক রকম রঙের টুপি, মুখোশ, আর কত ধরণের যে পিচকারী, বলে শেষ করা যাবে না।

মুন্সিরহাট থেকে পাঁচারুলের বাসে উঠি। আজকেও রামপুরগামী বাস না থাকায় পাঁচারুলের বাসই ধরতে হয়। বাসে গুটিকয়েক যাত্রী। আর তার মধ্যে আবার বেশির ভাগেরই চেনা মুখ। সবাই এই সময়ের বাসের যাত্রী। কেউ পেঁড়ো, কেউ বা খিলা, আবার কেউ কেউ উদয়নারায়নপুর পর্যন্ত যাবে। সবাই বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক অথবা শিক্ষিকা।

আমাকে একা বাসে উঠতে দেখে দেবলীনাদি জিজ্ঞাসা করে, আজকে পম্পা যাবে না?

আমি কিছু বলার আগেই বাসের পিছনে বসা মহুয়া ম্যাডাম বলে ওঠে, নাগো দেবলীনাদি, পম্পাদি যাবে। খিলা থেকে উঠবে। ওর হাজবেন্ডের সাথে বাইকে খিলা পর্যন্ত যাবে।

একটু থেমে আবার বলে ওঠে এই দেখ না। সামনের সপ্তাহের মঙ্গল, বুধবার, দোলের আর হোলির ছুটি থাকবে। তা সত্ত্বেও আজকে দোলের জন্যই সুষমাদি আসতে পারল না। ওর কত্তা ওকে বাইকে করে পিটিএস পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশের বাইক। তা সত্ত্বেও দোলের জন্য রাস্তায় দোকানের ভিড়ে বেহালা থেকে আসতে পারেনি। গত সোমবার তো বাইক থেকে পড়েই গিয়েছিল। কোমরেও লেগেছে।

এই দেখো বলা হয়নি। দেবলীনাদি উদয়নারায়ণপুরের গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষাগতা করেন। পম্পা, মহুয়া, সুষমাদি আর আমি, উদয়নারায়নপুর থেকে আরও কিছুটা গিয়ে রামপুর। সেখানকার হাইস্কুলে শিক্ষকতা করি। এখানে যে মহুয়া ম্যাডামের দেখা পেলেন, তিনি কখনোই চুপ করে থাকতে পারেন না। সব সময় কিছু না কিছু কথা বলতে থাকেন। তাই বলে সকলে ভাববেন না যেন, মহুয়া ম্যাডাম নিজের মনে বিড়বিড় করে বকেন!

সেরকম একেবারেই নয়। আসলে উনি সবসময় কাউকে না কাউকে কথা বলার জন্য পেয়েই যান। আর সব সময় কথা বলার জন্য, উনি নানা সময়ে নানা বিষয়ে কথা বলতে পারেন।

দেবলীনাদি এর পর সরাসরি মহুয়া ম্যাডামকে সুষমাদির চোট এখন কেমন জিজ্ঞাসা করেন।

মহুয়া ম্যাডামও বলতে থাকে, তা আর বোলো না। সোমবার স্কুলে গিয়ে ব্যথার ওষুধও খেয়েছে। রাতে যখন ফোন করি, তখন তো ভোলিনি দিয়ে ম্যাসেজ করছিল। বাসে ট্রেনে এত জার্নি! ব্যথা কি সহজে কমতে চায়! তার উপর মাধ্যমিকের জন্য ছুটি নিতেও পারছে না। আমাদের স্কুলে যদিও মাধ্যমিক হচ্ছে না। আজকে সকালে বলছিল, একটু কম আছে। আর আজকেই সময়ে আসতে পারল না। বলেছে পরের বাসে আসবে। পরের বাসতো আমতলায় নামায়ই এগারোটার পরে। তারপর আবার খানিকটা হাঁটতে হয়। আজকে হয়তো সুষমাটির স্কুলে ঢুকতে ঢুকতে এগারোটা পনেরো হয়ে যাবে। বলেছি হেড স্যারকে ফোন করে রাখতে।

একটু থেমে আবার বলে, এবারে দোলের জন্য একটা নতুন শাড়ি কিনেছি। আসলে গত বছর এই সময়ে শান্তিনিকেতনে ছিলাম। তখনকার মতোই এ বছরও কিনেছি। জানো তো, এ বছরে ও' আর ছুটি পেল না। না, হলে তো এবছরও চলে যেতাম। গতবছর সে কি কাণ্ড! কোথাও ঘর ফাঁকা নেই! শেষে চেনা একজন এক দিনে তিন হাজার টাকায় একটা ঘর ঠিক করে দেয়। এবারে নতুন শাড়িটা পড়ে মেয়েকে নিয়ে ফ্ল্যাটের নিচেই রঙ খেলব। দোলের দিনও ও'কে বেরোতে হবে।

মহুয়া ম্যাডামের কথা শুনতে শুনতেই বাস ততক্ষণে পেঁড়ো পৌঁছে গেছে। মাঝে আলতাড়ায় বাস শুধু একবার একটু দাঁড়িয়েছিল। একজন উঠেছে। ও খিলায় নামবে। ওখানের স্কুলে পড়ে। এই সময়ের বাসে আরও কয়েকজন থাকে, তাদের আজকে দেখছি না। কম বয়সের কিছু ছেলে মেয়ে। সবাই খিলার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ে। আজকে হয়তো ছুটি থাকতে পারে, বা পরের বাসে আসবে বা অন্য কিছু।

পেঁড়োয় এসে বাস দাঁড়িয়ে যায়। এখানেই বাসের স্টার্টার অফিস আছে। এখানে বাসের টাইম ঠিক রাখার জন্য ফাইন এর ব্যবস্থা আছে। প্রতি মিনিটে দশ টাকা ফাইন। আবার এই ফাইন নয় মিনিট পর্যন্ত, প্রতি মিনিটে দশ টাকা করে। দশ মিনিট লেট হয়ে গেলেই টাইম এর জন্য ফাইন পাঁচশো টাকা। এবং দশ মিনিটের পর থেকে প্রতি মিনিটের জন্য কুড়ি টাকা করে ফাইন। কোন কারণ বশত লেট পনেরো মিনিট হয়ে গেলে, ফাইন নয়শো টাকা এবং পরবর্তী প্রতি মিনিটে কুড়ি টাকা করে।

এইরকম ফাইন ব্যবস্থার জন্য কোন বাসের ড্রাইভারই দশ মিনিট লেট করতে চায় না। তাই মুন্সিরহাট থেকে পেঁড়ো পর্যন্ত বাস খুব জোড়েই আসে। পেঁড়ো থেকে দুইজন বাসে ওঠে। এদের একজন পাঁচারুল যাবে, আর একজন রামপুর। এরা দুজনেই নার্সের কাজ করেন।

যিনি রামপুর যাবেন, তিনি সকাল আটটা থেকে আলতাড়ার হেল্থ সেন্টারে থাকেন। আবার দশটার দিকে এই বাসটি পেঁড়ো থেকে ধরেন। যেদিন রামপুরগামী বাস থাকে, সেদিন কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু আজকের মত যেদিন পাঁচারুলগামী আমি বাস ধরতে হয়, সেদিন খুব কষ্ট হয়। সিংটিতে নেমে আবার কোনো কিছু ছোট গাড়ি করে উদয়নারায়নপুর। তারপর আবার উদয়নারায়নপুর থেকে কোনো ছোট গাড়ি করে রামপুর।

বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, পনেরো মিনিট পরের রামপুরগামী বাসের সাথে একই সময়ে রামপুরে পৌঁছানো গেল।

তাহলে তো পরের রামপুরের জন্য অপেক্ষা করলেই হয়! কিন্তু তাতেও আছে সমস্যা। পরের বাসটি রামপুরগামী নাও হতে পারে। তাই আগে উদয়নারায়নপুর পৌঁছানো জরুরী হয়ে ওঠে।

খিলা থেকে যথারীতি পম্পা ম্যাডাম এই বাসটিতে উঠে পড়েন। অনেক সিট ফাঁকা থাকলেও তিনি এগিয়ে গিয়ে মহুয়া ম্যাডামের পাশের সিটে বসেন।

আর বসার সাথে সাথেই মহুয়া ম্যাডামের সাথে কথায় মেতে ওঠেন। তবে এখন আর এটা ওটা প্রভৃতি বিষয় নয়, বর্তমানে বাজার মাতিয়ে রেখেছে অ্যাডিনো ভাইরাস। আর তা নিয়েই, কি করলে একটু সুরাহা মিলতে পারে, তা জানতে পারি পম্পা ম্যাডামের থেকে। আর অন্য দিকে অ্যাডিনো ভাইরাস সম্পর্কিত নানা গণনাকৃত তথ্য পেতে থাকি মহুয়া ম্যাডামের থেকে।

কেউ যেন অজান্তেই মহুয়া ম্যাডামকে তথ্য সংরক্ষণের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে। আসলে এখানেও আমি হয়তো অন্য সব স্যার বা ম্যাডামদের থেকে আলাদা! আমি স্কুলের বাইরে বাড়িতে বা অন্য কোথাও আড্ডা মারতে বেশী পছন্দ করি। আর অন্য সকলে পড়তেই থাকে। আমি তো ছাত্রছাত্রীদেরও কম পড়ার কথা বলি। আর অন্য সবাই বেশি সময় ধরে পড়ার কথা বা কাজ করার কথা বলে।

যাই হোক, অ্যাডিনো ভাইরাসের গল্পে আমাদের সাথে একসাথে একই বাসে করে চলা নার্স দুটিও অংশ নেয়। সত্যিই বাসের মধ্যেও এই গল্প শুনতে শুনতে এক সময় রাজাপুর পৌঁছে যাই। পম্পা ম্যাডাম ও মহুয়া ম্যাডামের সঙ্গে আমিও নেমে পড়ি। আজকে ওদের জন্য বুক করে রাখা টোটো করেই চলে যেতে পারবো।

ভাড়া করা এই ব্যাটারী চালিত টোটোগুলি পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী হওয়ায়, বাজার ধরে নিয়েছে। এই টোটোটি ড্রাইভার বাদে পাঁচ জন যাত্রী নিতে পারে। আবার স্পিডও খুব খারাপ নয়। প্রতিদিন পম্পা ম্যাডাম, মহুয়া ম্যাডাম, সুষমাদি, আর উদয়নারায়নপুর থেকে জয়ন্তীদি ও লীনা ম্যাডাম যায়। আজকে সুষমাদি না থাকায় একটা সিট এমনিই খালি যেতো।

স্কুলে পৌঁছে দেখি দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট হয়েছে। পাঁচ মিনিট পরেই প্রেয়ার এর ঘণ্টা পড়বে। আমিও তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে ঘুরে ফ্রেশ হয়ে আছি। আজকে বৃহস্পতিবার। মানে প্রথমেই টেনের এ সেকশন। সেকেন্ড পিরিয়ড নেই। থার্ড পিরিয়ডে টুয়েলভ, নেই। আবার সেই ফোর্থ পিরিয়ডে টেন বি। টিফিনের আগে তাই তেমন চাপ নেই।

আমাদের স্কুলে বিদ্যাসাগর ভবনের চার নম্বর রুমে টেনের এ সেকশনের ছাত্রছাত্রীরা বসে। প্রেয়ারের পরেই কুন্তলবাবু, মানে আমাদের স্কুলের হেডস্যার, একটু দাঁড়িয়ে যেতে বললেন। নতুন কিছু নির্দেশের কথা হয়তো সকল স্টাফকে জানাবেন। আমিও আমার কাগজপত্র, চক ডাস্টার টেন এ এর অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার নিয়ে রেডি হয়েই দাঁড়িয়ে থাকি।

সকলে জড়ো হলে, কুন্তলবাবু জানান, আজকে সকলেই স্কুলে এসে পড়েছে বা রাস্তায় আছে, এক্ষুনি এসে পড়বে। তাই মাধ্যমিক চলাকালীন দিনগুলোতে অন্যদিনের মতোই সকলের উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদও জানান। আর ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে পড়াশোনার চাপ কমানোর কথা ভাবতে বলেন। ক্লাসগুলিতে পড়ার বাইরের বিষয়, গল্প-কুইজ প্রভৃতিতে নিয়োজিত করার কথা বলেন।

আমিও যেইমাত্র টেনের এ সেকশনের ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাটেন্ডেন্স নেওয়া শেষ করেছি। প্রায় সাথে সাথেই সকলে কিছু একটা যেন বলতে চাইছে বুঝতে পারি। রিমা'ই প্রথম বলে ওঠে,

স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?

কি? বল!

তবুও চুপ করেই থাকে। বুঝতে পারি অনেকেই একই প্রশ্ন করতে চাইছে, কিন্তু প্রশ্নটি কি, ঠিক বুঝতে পারছি না!

কি হলো, বল।

পাশ থেকে অঙ্কিতা বলে ওঠে, স্যার আপনি কি ভূত নিয়ে রিসার্চ করেন?

সকলে প্রায় সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে, হ্যাঁ স্যার, ওই, ওই।

আমি ওদেরকেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম, তোরা মানিস?

এতক্ষণে ছেলেদের বেঞ্চ থেকে সাড়া পাওয়া গেল। স্যার এবারে যতটা পরীক্ষা হবে সবটা পড়া হয়ে গেছে। আজকে স্যার একটা ভূতের গল্প বলুন।

কেউ কেউ আবার প্রশ্নের অন্য মানে করে বসে, না, স্যার আমরা ভূত মানি না।

ঠিক আছে, ঠিক আছে, তাই বলে নিশ্চয়ই হই হই করা যায় না! কেউ বলছে ভূত আছে, কেউ বলছে নেই। এখন তো আবার অনেক রকম ভূতের ছবিও দেখতে পাওয়া যায়।

স্যার, আপনি মানেন?

সেটাই বলছি। ধর, আমি বললাম, আমার হাইট পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি, যেটা আগে থেকে মেপে দেখানো আছে। এবারে আমি এখান থেকে হেঁটে এই রুমের পিছন পর্যন্ত যাব, আবার ফিরে আসবো। যদি তখন আমি আমার উচ্চতা মাপি, তো তখন আমার উচ্চতা হবে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি, অর্থাৎ দুই ইঞ্চি বেশী। আমার মনে হয়, তোদের কারোর এটা প্রমাণ করার দরকার নেই যে আমার উচ্চতা বাড়বে না। এটার প্রমাণ, যেহেতু আমি বিবৃতি দিয়েছি, তাই আমাকেই করা উচিত।

সকলেই আমাকে সমর্থন জানায়। আমি তখন বলি, কিন্তু ভুতের বেলায় ঠিক উল্টোটাই দেখা যায়। যারা ভূতে বিশ্বাস করে না, তাদেরকেই প্রমাণ করতে বলা হয়, ভূত নেই দেখাও। আমি আগেই বলেছি ভূতের অনেক ছবি দেখতে পাওয়া যায়। আসলে এগুলো সবই তৈরী করা। এবারে আমরা দেখব, ভূত আসলে কি? এরা কোথায় থাকে?

হ্যাঁ, স্যার, যখন পড়ার পর রাতে বাড়ি ফিরি, তখন কি ভয় পায়!

সমস্যারের বাড়ির কাজটা এলেই যেন মনে হয়, কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। কাছে এলেই আর দেখা যায় না!

একবার আমিও দেখেছি!

আমি তো খেলে কতদিন অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছি। কত জায়গায় শ্মশানের মাঠে খেলা হয়। কোনদিন কিছু দেখিনি। তোরা ভীতু, তাই যখন তখন ভূত দেখিস।

এরকম অনেক কথাই একসাথে কানে আসতে থাকে। আসলে এটাই স্বাভাবিক। তাই প্রত্যেককে আর একবার মনে করিয়ে দিই।

দেখ, ভূতের বাস্তবে অস্তিত্ব খুঁজতে গেলে, হয়তো কেন, নিশ্চিতই পাবো না। তবে এর কারণটা সবার আগে জানা উচিত। আমরা যদি একটা প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসি, "মন" কি? আমাদের শরীরের ঠিক কোন্ অংশটাকে মন বলে? তাহলে প্রথমটির উত্তর যদিও দেওয়ার চেষ্টা করা যায়, দ্বিতীয়টির বেলায় না ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না।

তাহলে কি আমরা বলব আমাদের মন নেই। আসলে মন তো একটা ধারণা। একটা অনুভূতি গঠনকারী ধারণা। এ বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরের উপর প্রযুক্ত হয়।

এইরকমই একটা ধারণা হলো ভূত।

এটার আগে, আমার মনে হয়, সবাই দেখেছি। মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে, কখনো কখনো রাস্তার উপর পড়ে থাকতে! হেঁটে বাড়ি পর্যন্তও যেতে পারে না।

হ্যাঁ, স্যার, দেখেছি। বিশেষ একটা তরল খেয়ে!

হ্যাঁ, ওটা খাওয়ার পর কি ওরা ভূত দেখে? যদি না হয়, তাহলে পড়ে যায় কেন? আসলে ওরা নেশায় থাকে, ভুল দেখে। এটা একটা রোগ। এইরকমই আমাদের মধ্যেও মাঝে মাঝে ভুতের নেশা পায়। আমরা আগে থেকেই ভাবতে শুরু করি, এখানে বোধ হয়, কিছু একটা আছে!

আমরা যদি ভালোভাবে দেখি, তাহলে দেখব, দিনের বেলায় বেশী আলোয়, আমরা কেউ ভূত দেখি না! আবার যখন অনেকে একসাথে থাকে, তখন সবাই একসাথে ভূত দেখি না।

এর জন্য একটা বিশেষ স্টেজের দরকার হয়। সন্ধ্যার সময় বা রাতে, বিশেষ করে, যেখানে আলো-আঁধারি থাকে, একেবারে নিস্তব্ধ হলে কোনো ভাবেই ভূত দেখা যায় না। হালকা বা ভারী, কাছে বা দূর থেকে হলেও হবে, কিন্তু ঝিঁঝিঁর ডাক, বা নিদেনপক্ষে কানের পাশে মশার আওয়াজ না থাকলে ভূত যেন আসতে চায় না!

তবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই, যে আলো-আঁধারি আর হালকা ঝিঁঝিঁর ডাক মানেই আমরা ভূত দেখতে পাবো। ভূত এত সহজেও আবার দেখা দেন না। আর পৃথিবীতে এত লোক থাকতে আমার মধ্যে কি এমন রয়েছে যে, এত সহজেই ভুতের দেখা পাব!

তবে তোদের জন্য বিষয়টা সহজ করে দিতে পারি। ব্যাপারটা এইরকম যে, এই দিনের বেলায় সবার সামনে তো ভূত এসে, আমি এলাম, বলে দেখা দেবে না। বরং বলা ভালো আমরা তাকে দেখতে পাবো না। আর দেখতে পাবো না মানেই যে ভূত নেই, এটা ভাবারও কোনো মানে হয় না, যদি আমরা ভূতকে অনুভব করতে পারি।

কি রকম, স্যার?

এই ধর, বাতাসকে তো আমরা দেখতে পাই না, তাই বলে বাতাসকে কি আমরা নেই বলবো? বাতাস যে আছে তা তো আমরা অনুভব করতে পারি। একই রকম ভাবে আমরা যদি ভূতকে অনুভব করতে পারি, তো বলতে হয়, ভূত আছে।

এখানে সবার আগে প্রয়োজন সত্য কথা বলা। এবং সকলের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া। আর বাকি সকলের জন্য একটা কথা, মুখে কোন কথা বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের প্রতিনিধি কিছু বলছে।

এখানে ওই বিশেষ একজন কে হবে তার জন্য চিন্তা করার কিছু নেই। যে কেউ হলেই এটা সম্ভব। আমি একজন ছাত্রকে ডেকে নিই। তাকে আমি বলি ভূতের গল্পের জন্য হলেও, এটা খুব জরুরী যে আমি সব সময় সত্য কথা বলব এবং এখানে তোমাকেও বলতে হবে। নাহলে, ভূতের অনুভূতি বাকি সকলে জানতে পারবে না।

একবার দেখে নে চারিদিকে, তোর এবং আমার কাছাকাছি অন্য কেউ আছে কিনা। এবারে আমরা চোখ বন্ধ করে অতীতে বেঁচে ছিল, কিন্তু বর্তমানে মৃত এরূপ একজনকে ডাকবো। কিছুক্ষণ ডাকলেই তিনি আমাদের কাছে চলে আসবেন। এবং তোকে টাচ করে, তিনি এসেছেন জানাবেন। তাই তোকে কেউ টাচ করলেই জানিয়ে দিতে হবে, যাতে আমরা সকলে বুঝতে পারি তিনি এসেছেন।

এখানে তোর পাশেই তো আমি দাঁড়িয়ে আছি। আর তোর চোখ যখন বন্ধ। তাই আমিই তো তোকে টাচ করতে পারি। কিন্তু এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। কারণ আগে থেকেই আমি আমার দুই হাত দিয়ে তোকে টাচ করে থাকব। বাকি প্রত্যেকের জন্য, এখন থেকে সকলে চুপ না থাকলে ভূত নাও আসতে পারে! তাই সকলকে আবার বলছি, যা দেখবে, শুধুই দেখবে। যা বলার পরে বলবে। আমি অবশ্যই কি হচ্ছে তা শিখিয়ে দেব।

সুবিধার জন্য আমরা প্রত্যেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডাকবো। সকলের চোখ বন্ধ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যিনি এই ক্লাসের প্রতিনিধিত্ব করছেন অর্থাৎ যাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টাচ করে, তিনি এসেছেন জানাবেন, তাকে চোখ বন্ধ করতেই হবে। আমি দুই হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে, আঙ্গুলগুলো মুঠো করে, শুধু তর্জনী দিয়ে টাচ করে থাকব।

যেহেতু তুই গোটা ক্লাসের প্রতিনিধিত্ব করচিস, এবং চোখ বন্ধ করে রেখেছিস, তাই আমি তোর বন্ধ চোখের উপরে টাচ করে থাকব। সকলে মনে মনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমাদের ক্লাসে আসার জন্য অনুরোধ করতে থাক।

আমিও বন্ধ দুই চোখ টাচ করে এক, দুই তিন গুনতে থাকি।

তিন গোনা শেষ হলে, হাত সরিয়ে নিই। এবং কিছু হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করি।

চোখ খুলে জানায়, না স্যার, কিছু হয়নি।

আমিও আবার চোখ বন্ধ করতে বলি এবং চোখের উপর টাচ করে থাকি। এক, দুই,

এবারে আর তিন গুনতে হয় না। আমার হাত সরিয়ে দিয়ে চারিদিকে ঘুরে ফিরে দেখতে থাকে।

আমি জিজ্ঞাসা করি, কি হলো?

কেউ যেন আমার মাথার বাঁদিকে হালকা চাঁটি মারল!

এদিকে ক্লাসের বাকি সকলে তখন কোনো রকমে মুখ চাপা দিয়ে হাসি থামিয়ে রেখেছে।ক্লাসের প্রতিনিধি তখন বলতে থাকে, কি করে হলো স্যার! কেউ তো ছিল না, তাহলে কে আমার মাথায় চাঁটি মারল?তবে কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভূত হয়ে আমাদের মধ্যে এসেছেন?

থাম এবারে, আসলে আমি দ্বিতীয়বারে বাঁ হাতের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে তোর দু চোখে টাচ করেছিলাম। আমার ডান হাত ফাঁকাই ছিল। তোর মাথায় চাটি মারার পর, তোর চোখের সামনে তাড়াতাড়ি হাত নিয়ে এলেই হল।

বাকি সকলে এবারে মুখ থেকে হাত সরিয়ে হাসতে থাকে। আসলে ভূতের জন্য একটা বিশেষ গল্পের প্রয়োজন হয়। আমরা যদি আমাদের নিজেকে গল্পের একটা চরিত্র করে ফেলতে পারি, তাহলেই ভূত আমাদের সামনে চলে আসে।

রাতে পড়ে বাড়ি ফেরার সময় যারা যারা ভুতে ভয় পেতে চাস, তারাই মাঝে মাঝে এটা ওটা দেখিস। আলো-আঁধারিতে আমরা যখন পরিষ্কার দেখতে পাই না, তখনই আমাদের মন আগে থেকেই ভুতের অনুমান করে নেয়।

একটা কাজ করতে পারিস। ভুতে ভয় পাওয়া বন্ধ করে দে। আর কখনো ভূত দেখবি না।