Read We are BOYS by Sayani Paul in Bengali Moral Stories | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

We are BOYS

Stage–1

তরুণ ক্লাস টুতে সেকেন্ড হয়েছে। ফার্স্ট গার্লের সাথে তার নম্বরের তফাৎ মাত্র দেড়। ‘তরমুজ’ বানান ‘তোরমুজ’ লেখায় হাফ নম্বর আর অঙ্কে 9×9= 80 লিখে দেওয়ায় তার এক নম্বর কেটে নেওয়া হয়। রেজাল্টের দিন তরুণ নিজের নম্বর নিয়ে বেশ খুশি ছিল। কিন্তু তার সেই খুশি বেশিক্ষণ টিকলো না। স্কুল বাস থেকে বাড়িতে নামতেই সে দেখে বাড়ির লোকজন উঠোনে দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা করছে। তার মা এগিয়ে এসে আদর করে তার পিঠ থেকে ব্যাগ নামিয়ে নেয়। মিষ্টি সুরে জিজ্ঞাসা করে,
--“ কত পেয়েছো তরুণ? ”
--“ একশো আটানব্বই পয়েন্ট পাঁচ। ”

সবাই খুশি হয়ে যায়। তরুণের বাবা তরুণকে জিজ্ঞাসা করে,
--“ তার মানে তুমি ফার্স্ট হয়েছো এবার, তাই তো? ”

তরুণ উত্তর দেয়,
--“ না না, নন্দিনী ফার্স্ট হয়েছে। ও দুশোতে দুশো পেয়েছে। ”

তরুণের বাড়ির লোকের মুখ গম্ভীর হয়ে যায়। ওর মা ওর ব্যাগটা মাটিতে রেখেই ভেতরে চলে যায়। তরুণের বাবা ওকে বকতে থাকে।
--“ ছি ছি ছি। এত টাকা দিয়ে তোকে পড়াচ্ছি সেকেন্ড হওয়ার জন্য? তরমুজ বানান লিখতে পারিস না? অঙ্কের জন্য দুই দুটো টিচার রাখা রয়েছে। তবুও নয় নং কত লিখতে পারিসনি? একটা মেয়ের কাছে হেরে গেলি? তোর জীবনে আর উন্নতি হবে না। ”

তরুণের খুব কান্না পায়। এই অবস্থায় ওকে দাদু ঠাম্মিও আদর করতে এগিয়ে এলো না। ওখানেই পড়ে পড়ে কাঁদতে থাকে ও।

Stage–2

ক্লাস সেভেনের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় জবরদস্তি অংশগ্রহণ করানো হয়েছিল তাকে। কিন্তু তার বেসুরো গলা শুনে স্কুল কতৃপক্ষই তাকে স্টেজ থেকে নেমে যেতে বলে। তরুণকে দাবার ক্লাসে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেও ওর বিশেষ কোনো উন্নতি হয় না। চালই ভুলে যাচ্ছে, তো খেলবে কীকরে? তবে তরুণ চেষ্টা করেছে অনেক।

ক্লাস সিক্সের রেজাল্ট দেখেই তরুণের উপর থেকে ভরসা চলে যায় ওদের বাড়ির সবার। তরুণের রোল হলো B সেকশনের চৌত্রিশ। কী ভয়ঙ্কর বেতের বাড়ি তাকে খেতে হয়েছিল তার সারাজীবন মনে থাকবে। ঠাম্মি বলেছিল,
--“ আরে তুই ছেলে। তোকে জীবনে কিছু করে খেতে হবে। মেয়ে হলে পরের বাড়ি গিয়ে বসে খেতে পারতিস। কুলাঙ্গার জন্ম দিয়েছে রূপালী। ”

সে হাজার চেষ্টা করেও বাড়ির লোকের ভালো ছেলের সংজ্ঞার সাথে সে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারছে না। পাচ্ছে না সে একশোতে একশো নম্বর। ভুলে যাচ্ছে ঐকিক নিয়মের অঙ্ক। তার শুধু ইচ্ছা করে বন্ধুর বাড়ি থেকে ব্যাটটা তুলে মাঠের দিকে চলে যেতে। তার ভালো লাগে সে যখন ছক্কার পর ছক্কা মারে। কিন্তু তাকে বাড়ি থেকে খেলতে যেতে বারণ করেছে। সেজন্য বিকেল বেলায় আরো দুটো টিউশন টিচার ঠিক করা হয়েছে।

ক্লাস এইটের মাঝামাঝি সময়। বন্ধুদের কথা শুনে সাহস করে সে স্কুলের ক্রিকেট টিমে যোগ দেয়। বাড়িতে তখনও কিছুই বলেনি। তরুণের ব্যাটিং দেখে স্কুলের সব স্যাররা হতচকিত। ক্লাসের মধ্যে সব সময় ভীত, সন্ত্রস্ত থাকা এই ছেলেটি এত সুন্দর ব্যাটের জাদু দেখাতে পারে? আসছে প্রতিযোগিতায় একে দিয়ে খেলাতে হবে। ক্রিকেটে ছেলেটার ভবিষ্যৎ ভালো। স্যারেরা চলে যায় তরুণের বাড়িতে। স্কুল থেকে কোনো প্লেয়ারকে সিলেক্ট করার আগে তার বাবা-মায়ের অনুমতির দরকার ছিল। তরুণের মনে প্রচন্ড আনন্দ হচ্ছিল। স্কুলের স্যারেরা এসে তরুণের বাড়িতে তার খেলায় কেরিয়ার গঠন নিয়ে বোঝাতে থাকলে বাড়ির সবার কাছ থেকেই তারা একটাই উত্তর পান,
--“ দেখুন স্যার, with due respect, আমি আমার ছেলেকে স্কুলে পড়াশোনা করতে পাঠাই, খেলাধুলো করতে নয়। আমাদের পারমিশন না নিয়ে ও ক্রিকেট টিমে নাম দিয়েছে, ওর ব্যবস্থা আমি পরে করছি। কিন্তু আপনাদের আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিই – তরুণ কোনভাবেই আপনাদের টিমের হয়ে খেলবে না। সামনেই একটা মেধা কনটেস্ট আছে, ওকে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ”

সেবার মার খেয়ে তরুণ কাঁদেনি। বরং আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে ও। বাড়ির সবার সাথে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে। যখন তখন সাইকেল নিয়ে কোথায় চলে যায়, কাউকে বলে যায় না। বাড়ির লোক বুঝতে পারেনা তরুণের মাথাটা এভাবে নষ্ট করছে কে?

Stage–3

অঙ্ক অনার্সে সাপ্লি পাওয়ার আরো এক বছর তাকে কলেজে থাকতে হয়। সমাজে নাকি চুনকালি পড়ে গেছে। তাতে তরুণের এখন কিছু যায় আসে না। কলেজে পল্লবী নামের এক তরুণীর প্রেমে পড়ে সে। তার সাথেই সারাদিন কথা বলতে থাকে, তার কথাই ভাবতে থাকে।

পল্লবী পড়াশুনায় ভালো। জুলজি অনার্স নিয়ে পড়ে first class first হয়েছিল কলেজে। Msc. না করেই সে জব লেটার পেয়ে যায়। তাকে বোম্বে শিফট হতে হতো। তরুণের তীব্র প্রতিবাদ ছিল এই নিয়ে। সে কোনোভাবেই পল্লবীকে বোম্বে যেতে দিতে চায় না। কিন্তু পল্লবী কোনোভাবেই একটা ছেলের জন্য নিজের সদ্য গড়ে ওঠা কেরিয়ারকে ভুলে যেতে রাজি ছিল না। সে সাফ সাফ বলে দেয়,
--“ তরুণ, নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে আমায়। বোম্বেতে দারুন একটা কাজ পেয়েছি আমি। আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে সাপোর্ট করবে। দূরত্বটা কোনো বিষয় নয়, ভালোবাসা সৎ থাকে। আমি অপেক্ষা করবো। তুমিও একটা চাকরি ব্যবস্থা করো নিজের জন্য। ”
--“ কিন্তু আমার কথা কি কোনো মূল্য রাখে না তোমার কাছে? আমি বারণ করলাম তো যেতে। এরকম করলে কিন্তু আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না। ”
--“ ব্রেকআপ করতে চাও? অসুবিধা নেই আমার। যে মানুষটা তার পার্টনারের কেরিয়ারকে সাপোর্ট করে না, সে তাকে ভবিষ্যতে কীকরে সম্মান করবে? ”

তরুণের মনে হয় যে এই মেয়েটা তাকে ধোঁকা দিল। সে বুঝতেই পারল না তার ভুলটা কোথায়। কী দরকার পল্লবীর কাজ করার? মেয়েরা তো সাধারণত বসে বসেই খায়। ওর নিজের মাই তো বলে, মেয়েরা বাইরে গেলে খারাপ হয়ে যায়।

পল্লবীকে অনেক জোর খাটিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেছিল তরুণ। পল্লবী পুলিশ কেস করে। চলে যায় বোম্বেতে। তরুণ মনের দুঃখে গাঁজা, সিগারেট ধরে। বাড়িতে ভাঙচুর শুরু করে। একদিন তার বাবা তার ঘরে আসে। শান্তভাবে তার কাঁধে হাত দিয়ে তাকে বলে,
--“ এবার একটা চাকরি জোগাড় কর। কিছু তো করে খেতে হবে তোকে। আমি বুড়ো হচ্ছি। ক্রিকেটের মায়াটা ত্যাগ কর। এতে কিছু হবে না। এখন তো ভালো খেলিস না তুই। ভালো খেললে না হয় বুঝতাম। জীবনে বড় হতে গেলে টাকা কামাতে হয়। তুই তো ছেলে, তোর পকেট দেখেই তোর যোগ্যতা বিচার হবে। একটা চাকরি দেখ। ”


তরুণের চাকরিতে ঢুকতে আরও দশটা বছর লেগে যায়। ইতিমধ্যেই সে খবর পেয়েছে, পল্লবী বোম্বেতে তারই এক ক্লাসমেটকে বিয়ে করে নিয়েছে। তাদের একটা বেবি আছে। তরুণ এবার মদটাও ধরে। সব সময় মাথায় একটা ভীষণ রাগ চেপে থাকতো তার। কিন্তু কার উপর সেই রাগটা দেখাবে সে বুঝতে পারত না। সেই উপায় করে দেয় বাড়ির লোক। সদ্য BA পাস করা একটা একুশ বছরের মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তরুণের। বিয়ের পর মেয়েটা একদিন তরুণকে বলে,
--“ তরুণ, আমি আরো পড়াশোনা করতে চাই। ভূগোলে এমএসসি করে পিএইচডি করব। তারপর কোন কলেজ কিংবা স্কুলে পড়াবো। "

তরুণের হাতের কাছে ছিল সদ্য খোলা বেল্ট। এক্ষুনি বিছানায় ভোগ করেছে সে তার বউকে। বউটা এখনও ঠিক করে শাড়িটা পড়তে পারেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজার বাইরে থেকে সেই বাচ্চা মেয়েটার মর্মান্তিক কান্না আর তরুণের গালাগালি শোনা যায়। বাড়ির লোক তরুণকে আটকাতে আসে না বরং সিরিয়ালের ভলিউম বাড়িয়ে দেয়।

Stage–4

তরুণের ছেলের বয়স আট। কিছু বছর আগে তরুণের দাদু এবং ঠাম্মি গত হয়েছেন। তরুণ, তরুণের বউ এবং তার বাবা মা একটা বিশেষ কাজে উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির সামনে একটা হলুদ রঙের কনভেন্ট স্কুলের গাড়ি দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে আসে তরুণের ছেলে। তরুণের বউ তার ছেলের কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে তার রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করে। তার ছেলে থার্ড হয়েছে। ফার্স্ট আর সেকেন্ড পজিশনে দুটো মেয়ে। হাতের কাছে রাখা ছিল কঞ্চির লাঠি। কেউ বাধা দেয় না তরুণকে।

- Happy Family -
Happy ending?

[ লেখিকা কোনোভাবেই ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কিংবা কোনরকম বাজে নেশাকে সমর্থন করে না। কেবলমাত্র গল্পের প্লট তৈরিতে এই দৃশ্যগুলির বর্ণনা। লেখিকার বিনীত অনুরোধ, কেউ এই গল্পটা পড়ে খারাপ দিকে পা বাড়াবেন না। গল্পের মোরাল বোঝাটাই আসল লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। ]

কলমে - Sayani Paul