Miracle - 4 books and stories free download online pdf in Bengali

অলৌকিক - প্রথম 4

দুপুরবেলা, থানায় ভিড়টা কম এখন। চায়ের কাপ নিয়ে সত্য,দারোগাবাবু আর সোহরাব শাহ অর্থাৎ জসীমউদ্দীন শাহর বড়ভাই বসলেন। "বলুন কীভাবে হেল্প করতে পারি আপনাদের?"

"আপনার ভাইয়ের ওয়াইফ বলছিলেন এই মৃত্যুটা নাকি হবারই কথা ছিল, কিন্তু কিছু ক্লিয়ার করলেন না। আপনি কি জানেন উনি কেন এমন বলছেন?"

"হুমম। ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলনা। চাষাবাদের ওপরেই ডিপেন্ডেন্ট আমরা। আমি আর জসীম স্কুলে কিছুদূর পড়াশোনা করলেও, ছোট কোনোদিন স্কুলমুখো হলোনা,সেই ছোটবেলা থেকেই জমিজমা নিয়ে পড়ে আছে আজ অব্দি। আল্লাহর কৃপায় ওই জমি থেকেই আজ আমাদের কোনো অভাব নেই, বলতে গেলে প্রয়োজনের তুলনায় বেশীই সম্পত্তি হয়েছে।

জসীম চাষবাসের ওপরে পুরোপুরি নির্ভর করতে চাইত না। তাই একটা জুয়েলারির শোরুমে কাজ করতো। মালিক ধনঞ্জয় মিত্র খুব ভালোমানুষ। আমাদের বাড়িতেও যাওয়া আসা করতেন মাঝে মাঝে। জসীমকে খুব বিশ্বাস করতেন। কিন্তু বেইমান জসীম বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে জানত না।"--- কথাগুলো বলে লম্বা শ্বাস ফেলে থামলেন সোহরাব।

"তারপর?"--- একসাথে জিজ্ঞাসু গলায় বলে উঠলেন দারোগা বাবু আর সত্য।

"সে প্রায় ডানশ-কুড়ি বছর আগের ঘটনা ধনঞ্জয়বাবু ব্যবসার কাজে একমাসের জন্য বাইরে গেলেন অনেকদিনের পরিচিত বিশ্বস্ত জসীমকে শোরুমের দায়িত্ব দিয়ে। ও আহাম্মক জুয়েলারির ব্যবসাটাই গ্রাস করে নিল। কাগজে কলমে বেআইনিভাবে মালিক হয়ে গেলো জসীম। ধনঞ্জয় মিত্তির, জানেন,মাটির মানুষ পুরো। এত বড়ো ধাক্কা এত বেইমানির পরেও প্রতিশোধ নেননি শুধু আমাদের সাথে যে আত্মীয়ের মত রিলেশনটা হয়েছিল তা শেষ করে দিলেন। আর কোন ভরসাতেই বা সম্পর্ক রাখবেন বলুন। জাহানারা মেনে নিতে পারেনি এই অপকর্ম। ও নামেই এই বাড়িতে থাকে,সারাদিন গম্ভীর মুখেই থাকে, জসীমকে স্বামীর পরিচয় দিতে ওর ঘেন্না লাগে। ছেলেটাকে মানুষ করতে চায় ভালোভাবে, যেন বাপের মত অমানুষ না তৈরি হয় সেই চেষ্টা করে ও। জসীম মরার খবরে ও যেন একটা বড়ো বোঝামুক্ত হয়েছে। মনমরা গম্ভীর ভাবটা কেটে গেছে। আর ওকে কী বলবো আমার নিজের সহোদর ভাই পরিচয় দিতে আমার গা হাত রি-রি করে।"

"তাহলে বলছেন ধনঞ্জয়বাবু প্রতিশোধ নেননি এসবের পরেও! আচ্ছা, এরকম নয় তো যে উনিই এখন প্রতিশোধ নিচ্ছেন ওনার জীবনে ঘটে যাওয়া এই বিশ্বাসঘাতকতার?"

"নিতেই পারেন। নিলে নিক,বেশ করেছেন।" "ওনার স্ত্রী তো বললেন ওনাকে ঘেন্না করেন। উনি কি....

"না না ও স্বামীকে ঘেন্না করতে পারে কিন্তু খুন,না না।

"দেখুন আমার কাজটা এমনই সবাইকে সন্দেহ করতেই হয় সে দোষ করুক আর নাই করুক। আচ্ছা ধন্যবাদ আপনাকে। এখন আসতে পারেন,আপাতত আর কিছু লাগবেনা। পরে ডাকতে পারি প্রয়োজনে।

"হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়। আসছি।"

"তাহলে আমাদের সাসপেক্ট এখন ধনঞ্জয় মিত্ৰ ৷ ওর ব্যাপারে খোঁজ করুন ইমিডিয়েটলি। মনে হচ্ছে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।"


**********************



রবিবারের অলস সকাল,ঘড়িতে ৯টা ৪০, ব্যালকনিতে ইজিচেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে আছে সত্য। আশার আলো দেখতে পাওয়ার কথা ও বললো ঠিকই কিন্তু কোথাও গিয়ে যেন সব কিছু হিসাবে গরমিল হয়ে যাচ্ছে। এযাবৎ যা ইনভেস্টিগেশন করেছে এমনটা কখনো হয়নি। তাহলে গলদটা কোথায় হচ্ছে? আগেতো খুব সহজেই সলভ করেছে প্রতিটা কেস।

ধনঞ্জয়বাবুর বাড়িতে ও গতকাল গিয়েছিল। ওনার সাথে কথা বলে সত্য বুঝেছে মানুষটা সত্যিই মাটির মানুষই বটে--- এত বড়ো ঝড় বয়ে গেছে জীবনের ওপর দিয়ে কিন্তু শয়তানের ওপরে কোনো রিভেঞ্জ নেওয়ার এতটুকু ইচ্ছে নেই ওঁর। যতবার সত্য জিজ্ঞাসা করেছে কেন ছেড়ে দিলেন শত্রুদের এভাবে?" উনি উত্তরে বলেছেন,"যা যাবার সব চলে গেলো আমার এরপরে আর কার জন্য করবো বলতে পারেন? ওই পুলিশ কোর্ট কেস ওসবের অত ঝক্কি কি আর একা একা সামলাতে পারতাম? একটা বইয়ের দোকান করেছি ছোটখাটো, ওতেই একটা পেট চালিয়ে নিই যদ্দিন আছি বেঁচে। ভগবান যে কেন বাঁচিয়ে রেখেছে আমায়! একটুও ভালো লাগেনা কিচ্ছু। স্ত্রী বেইমানি করলো,অমন ফুলের মত মেয়েটা খুন হলো,আমি এই অভিশপ্ত বাড়িতে একা পড়ে এখনো।"

এতটা বলেও ধনঞ্জয়বাবু অবশ্য রাত্রের ওই ৩শব্দের ছোট্ট চিরকুটের কথাটা সম্পূর্ণ চেপে গেলেন সত্যর কাছে। সত্য জিজ্ঞাসা করেছিল,"আপনার স্ত্রী বেইমানি করেছিল?"

"হ্যা,আমার কাঠের গোলা ছিল জানেন। কাঠের ব্যবসাটা আমার বাবার আমলে শুরু হয়েছিল। বাবার বিজনেস পার্টনার ছিলেন বটুকেশ্বর ভট্টাচার্য। ওঁর ছেলে রামেশ্বর আমার ক্লাসমেট ছিল। পরে যখন বাবা ব্যবসার দায়দায়িত্ব সব আমার হাতে তুলে দিলেন আমি রামেশ্বর-এর সাথে পার্টনারশিপ করি। ও আমাদের বাড়িতে সেই ছোটবেলা থেকেই যাতায়াত করতো, বন্ধু হিসাবে খুব বিশ্বাস করতাম আর সেই সুযোগে কখন যে আমার স্ত্রীয়ের সঙ্গে অতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছিলো বুঝতে পারিনি। একবার ব্যবসার কাজে একমাসের জন্য বাইরে যেতে হয়। আমার স্ত্রী মধু, আর উনিশ বছরের মেয়ে মঞ্জু বাড়িতে ছিল। আমার না থাকার সুযোগে আমার সিগনেচার জাল করে পরিচিত উকিলের সাহায্য নিয়ে আমায় ডিভোর্স দেয় মধু আর বিজনেসের পার্টনারশিপ নিয়ে নেয় রামেশ্বর আর মধু৷

মঞ্জু ওই ডিভোর্স পেপারটা ওর মায়ের ঘরের টেবিলে দেখতে পেয়ে গেছিলো। সেই নিয়ে তুমুল অশান্তি হয় মা-মেয়ের মধ্যে, ইভেন মধু ওকে খুনের হুমকিও দেয়। এসবের সাথে আমার জুয়েলারীর বিজনেসের মালিকানাও হাতছাড়া হয়ে যায়...শয়তান জসীম... 11

"হ্যা ওই ঘটনাটা শুনেছি। তারপরে কী হলো বলুন?"

"আমি ফিরে এসে এসব কিছু শুনি মঞ্জুর মুখে চেষ্টাও করেছিলাম শোধরানোর,কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো, শুনলাম ফ্ল্যাট কিনেছে ওখানেই ও থাকে রামেশ্বর-এর সাথে। এক সন্তানও হয়েছিলো...ওই যে কী নাম বলছিলেন আপনি,রা...তুল, হ্যাঁ হ্যাঁ ওই রাতুল। এরপরে একটা অ্যান্টিক শপ খুলেছে দেখলাম, মধুই থাকতো শপে। আমি একটা বইয়ের দোকান চালু করলাম, বাঁচতে হলে দানাপানি তো দিতে হবে পেটে। ওই দোকানেই যা যেটুকু লাভ হতো ওতেই দুটো পেট চলছিল।

আমার মেয়েটা খুব ভেঙে পড়েছিল মানসিকভাবে। বাইরে মুখ দেখাতে লজ্জা পেত মনমরা হয়ে নিজের ঘরেই কাটাত বেশিরভাগ সময়টা।"

"ওকে খুন কে করলো?"

"বলছি বলছি.... মেয়েটা মানসিক চাপ নিতে পারেনি এতটাই অসহ্য হয়ে গিয়েছিল। একদিন দুপুরে দোকান থেকে ফিরে দেখি সারা বাড়িটা কেমন থমথম করছে যেন। মঞ্জু মঞ্জু করে হাঁক দিলাম ওকে দেখতে না পেয়ে। কিন্তু তখন কে সাড়া দেবে। ওর ঘরে গিয়ে দেখি ওখানে ও। ছুটে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গিয়ে ছাদের ঘরে দেখি ওর মায়ের একটা শাড়ি গলায় পেঁচিয়ে ফ্যান থেকে ঝুলছে..."

"সামলে নিন নিজেকে। আর বলতে হবে না। দুঃখিত আমি, আপনাকে এসব জিজ্ঞাসা করে আঘাত দিয়ে ফেললাম।"

"আর ওর হাতে একটা কাগজ তখনও ধরেছিল শক্ত করে। কাগজটা নিয়ে দেখি ওতে ও লিখেছে 'বাবা আমি শত্রুদের শাস্তি দেবই একদিন দেখো।'

এটা সুইসাইড হলেও আমি মানিনা। এটা একটা খুন, মানসিক নির্যাতনের ফল।"

ক্রিং ক্রিং...ক্রিং ক্রিং... ক্রিং

মোবাইলটা বাজছে বেডরুমে। সত্যর গভীর চিন্তায় ছেদ পড়লো। প্রিয়তোষ বাবুর ফোন। "হ্যা হ্যালো"

"কদ্দুর এগোলে ভায়া?

"দুটো মৃত্যুর মধ্যে লিংক রয়েছে।"

"সেকী তাই নাকি?"

"হুমম আর দুটোই খুন আর প্রবাবলি একজনই করেছে।"

"কে সে ফোর্স নিয়ে যাবো নাকি?"

"উম হুমম এখুনি অত রণসাজের প্রয়োজন নেই। খুনির সাথে মুখোমুখি হইনি এখনো।" "মানে কী? কে সে?"

"সেটাই তো রহস্য,এখনো জানিনা। তবে খুব শিগগির জানবো।"


(চলবে...)





শেয়ারড

NEW REALESED