ঠক ঠক --- ঠক --- ঠক ঠক ঠক
"এখন এই রাত্রে কে এলো?" ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকালো সত্য,সাড়ে 12টা ছুঁই ছুঁই করছে ঘড়ির কাঁটা। দরজা খুলতেই দেখে এক অপরিচিত যুবতী। পরনে হোয়াইট শর্ট কুর্তি আর ব্লু জিন্স। মুখটা খুব খুব চেনা চেনা লাগছে সত্যর কিন্তু মনে করতে পারলো না কোথায় দেখেছে এর আগে।
"আপনি ডিটেকটিভ সত্যজিৎ বিশ্বাস?"
"হ্যা আমিই।"
"আপনার সাথে বিশেষ কথা ছিল। কিছু প্লিজ যদি ভিতরে আসতে দেন।"
"তুমি মানে...কে আপনি এই রাত্রে একা...মানে?"
"সব বলছি। আগে বলুন ভিতরে আসব?"
"হ্যা আসুন তাহলে।"
ভিতরে ঢুকে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো অচেনা যুবতী,"থ্যাংকস,একটু জল খাওয়াবেন কাইন্ডলি!"
সত্য ফ্রিজ থেকে বোতল নিয়ে এসে বসলো মুখোমুখি।
ঢক ঢক করে হাফ বোতল জল শেষ করে মেয়েটা একটা লম্বা শ্বাস ছাড়লো। তারপর সত্যকে বললো,"আচ্ছা আপনি ওই জোড়া খুনের কেসটা ইনভেস্টিগেশন করছেন তাই না?
"খুন কে বললো আপনাকে? পেপারে মিডিয়ায় তো খুন বলা হয়নি কোথাও, অস্বাভাবিক মৃত্যুই বলা হচ্ছে?"
"উফফ সব কি আর নিউজ পেপারে বলে দেবে নাকি,নিজেরও ঘটে কিছু থাকতে হয়।" "ওহ রিয়েলি?"
"হুমম আর দুটো খুন একজনই করেছে জানেন৷ কী হলো অবাক হলেন নাকি? আরে আরে বুদ্ধি কি শুধু একচেটিয়া আপনারই আছে নাকি,আমিও মাথা খাটাতে জানি ভালোই।" "তা কে করলো খুন?"
"বলছি, অত অধৈর্য মানুষ কেন আপনি? ডিটেকটিভদের এত তাড়া মানায় না জানেন সবুর করুন না,বলতেই তো এসেছি এখানে। নাহলে এই রাতবিরেতে এলাম কী জন্য?" "দেখুন বেশি গৌরচন্দ্রিকা শোনার ইচ্ছা আর সময় কোনোটাই নেই আমার। "আমি আপনাকে হেল্প করতে চাই। আপনি কি কিছু জানতে চান?"
"আজব কান্ড! বাড়িতে এসে যেচে হেল্প করতে চাইছেন, এ কেমন মহিলা?",মনে মনে ভাবলো সত্য।
"আচ্ছা আপনি এরকম গায়ে পড়ে হেল্প করবেন কেন? এতে আপনার কী লাভ?
"জানেন ধনঞ্জয়বাবুর সাথে যেটা হয়েছে ঠিক হয়নি। শয়তানগুলোর উচিত শাস্তি দরকার ছিল আর ওটা হয়েছেও। ওনার স্ত্রী বাড়ি ছাড়ার পরে বেশিদিন চুরি করা সম্পত্তি ভোগ করতে পারেনি। নতুন ফ্ল্যাটে ওঠার ২বছর পরে ছেলে হলো। তার ৪ বছর পরে ক্যান্সারে মারা গেলো। পাপের শাস্তি বুঝলেন। রামেশ্বর ভট্টাচার্যর শাস্তি বাকি থাকবে কেন শুধু শুধু। ওর সাজাটাও কমপ্লিট করে দিলাম।"
"করে দিলাম মানে?
"মানে এসব পাপী কীট বেঁচে থাকুক একদম পছন্দ করিনা আমি। আমার সামনেই তো হলো খুনটা সেদিন। কি যে তৃপ্তি আহা সে বলে বোঝাতে পারবো না।
"আপনি দেখলেন মানে কী বলছেন আপনি খুনিকে দেখেছেন?"
"আলবাত দেখেছি।"
"আর ঐযে সেকেন্ড খুনটা ওটাও দেখেছি আমি, একদম সামনে থেকে। দ্বিগুণ আনন্দ হয়েছিল ওদিন, সত্যি বলছি জানেন,অতটা আনন্দ কোনোদিন পাইনি আমি।
"কে,কে করেছে খুন?"
"এখনো ধরতে পারলেন না,কেমন ডিটেকটিভ বলুন তো! খুনি আপনার সামনে হাজির,ডাকুন দারোগাবাবুকে।"--- মহিলাকণ্ঠের ঠাট্টার সুরে কথাগুলো সত্যকে,ওর গোয়েন্দাগিরিকে যেন খোঁচা দিল। "আ...আপ...আপনি খুনি?"
"আমি ওদের নিজেদের সন্তান নই জানেন৷ ধনঞ্জয় মিত্র আর মধুলিকা মিত্র অনাথ আশ্রম থেকে আমায় দত্তক নিয়েছিল। মা ফার্স্ট ফার্স্ট খুব ভালোবাসতো আমায়। তারপরে আসতে আসতে কেমন পাল্টে গেলো। রামেশ্বর ভট্টাচার্যর সাথে বেশি টাইম স্পেন্ড করতে লাগলো। বাবা তখন থেকে আরো আগলে রাখতে শুরু করে আমায়। বাবার মতো ভালোমানুষটার সাথে এই অন্যায়টা মেনে নিতে পারিনি। এত ভরসা এত বিশ্বাসের মূল্য দিলোনা সবথেকে কাছের মানুষরা। বেঁচে থাকতে প্রতিশোধ নিতে পারিনি বাবার হয়ে। তাই সুইসাইডের ডিসিশনটা নিলাম,রোজ রোজ মরার চেয়ে একেবারে মরে যাই। বেঁচে থাকতে যেটা পারিনি,মরে গিয়ে অন্তত সেটা করতে অনেক সুবিধা হবে। কাজও হাসিল হবে আর জেল-জরিমানার হ্যাপাও থাকবে না, খুন হয়েছে বুঝলেও তদন্তে খুনিকে না পেয়ে অ্যাট দ্যা এন্ড অলৌকিক, অস্বাভাবিক বলে সবাই মেনে নেবে।"
"মঞ্জুলিকা আ...আপনি!
"হ্যা এইবার এই মঞ্জুলিকার ছুটি। বাবাকে আর ডিস্টার্ব করবেন না। শান্তিতে থাকতে দিন জীবনের বাকি ক'টা দিন।চলি।"--- বলতে বলতে মঞ্জুলিকার সোফায় বসা শরীরটা ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যেতে থাকলো।
সত্য চশমাটা খুলে চোখ কচলে অবাক হয়ে সেইদিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,"অ্যাডভান্টেজ অফ অলৌকিকতা" ।।
(সমাপ্ত)