Read Boul Batas - 3 by Joy Bandyopadhyay in Bengali কবিতা | মাতরুবার্তি

Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

বউল বাতাস - 3

কাঠ

একদিন ছিলাম নামগোত্রহীন তোমার মনে
সবুজের আভা ছিল, ছিল ঈষৎ বল্কল, একটুকরো
জীবনের অনুভূতি। পূর্বরাগের বোধহয় পূর্বাভাস
প্রাণের প্রতিশ্রুতি অবছন্ন ছিল অনন্কুরিত
বীজের গর্ভে। আর দিকে ছিল রক্ত জমাট,
বিষাক্ত আস্বাদন, প্রেমের প্রথম বহিঃপ্রকাশ।
শিরা থেকে ধমনীতে চোরাস্রোতে বহমান
আদিম রিপু। অনাথ শিশুর শিরঃচ্ছেদের
আয়োজনে প্রেমিকার স্তনে মাতৃদুগ্ধপান।
নিস্তব্ধ মধ্যরাতে শুকতারার পাশে কোনো
অজানা নক্ষত্রপাত। বলিষ্ঠ এক নটিনির
রুদ্ধশ্বাস কুশলতায় হাজার হাতের করতালি
শুনে পল্লবিত তরুশাখায় তরতাজা উন্মাদনা-
শুধু চোরাবালিতে নিমজ্জিত হবার আগে,
ভ্রষ্ট সমাজের জ্বলন্ত চিতায় আমার
নামে রেখো একটুকরো কাঠ।।

চিতার কাঠ

আমার জন্য দুটুকরো কাঠ রেখো শমী
নিজেকে শুদ্ধ করি কাঁচা আগুনে জ্বলে
নিষ্কলুষ বীর্য যেটুকু সুপ্ত শরীরের গোপন রক্তে
তার সবটুকু যেন অঙ্কুরিত হয় নিষ্কর্ষিত জমিতে
কঠিন শীতের ছোঁয়া আর উষ্ণ বাতাস পেয়েছি সারা জীবন
পায়ের নীচে পাই নি শুধু ভিজে মাটির ছোঁয়া
দুহাত ছড়িয়ে নিয়েছি আঘ্রাণ আগুনরঙা ফুলের
ধমনী জুড়ে নিমজ্জিত ছিল প্রাণের স্পন্দন।


স্বল্পায়ু এই জীবনপথে সবটাই ছিল তোমাকে আগলে রাখা
হয়তো তোমার অনুভূতি স্পর্শ করেনি
ভরসাহীন গহীন রাতে ধরেছি তোমার হাত
আজ আমাকে মৃত্যু দাও প্রিয়া
কিছুই চাইনি আমি, তোমার সোনালি ভোর তোমারই থাক
আমার চিতাতে শুধু দুটুকরো কাঠ দিয়ো
ঘৃতশুদ্ধ শরীরে চন্দনের প্রলেপ নাই বা হলো
বৃষ্টিভেজা সোঁদা মাটির গন্ধে ভরুক উত্তরীয়


রক্তস্নাত বীভীষিকায় শুরু হোক শ্মশান পূজো
বলি চড়ুক সকল রিপু নির্মমতা সাঙ্গ হোক
মাদলের তালে চলকে উঠুক মজ্জাগত অভিযোগ
অস্তাগত সূর্য মিশে যাক ছায়াপথে আসুক দারুণ দুর্যোগ
রিক্ত বাসনা, সুপ্ত কামনা থেঁতলে যাক উন্মাদ ঘোড়ার ক্ষুরে
চোখের জলে ভিজুক কাঠ, জ্বলুক চিতা আমার হাড়ে
নিভেই যখন গেলাম প্রিয়া, নিভতে এবার দাও মোরে
শ্মশান জুড়ে লাগুক আগুন, জ্বলুক চিতা আমার হাড়ে।।


ভো কাট্টা

ভো কাট্টা পেটকাটিটা
লাট খেতে খেতে দিগন্ত ছুঁতে চায়-
আমি চাই না ভাটার টানে ভাসতে
চাই না এক বোঝা আবেগ বয়ে বেড়াতে।
জমাট বাঁধা কান্না বুক থেকে গলে গলে পড়ে
অমাবস্যার অন্ধকারে মোমের বাতির মতো-
হিসেব কষে মহাজনী সুদ, চোখের কোণে আগুন
পায়ের তলায় সরষে দিয়ে, উচ্ছসিত ফাগুন।
প্রাসাদের নির্বাসিত ঘরে ঘরে প্রেতাত্মার কান্না-
রাত ভোর হলে সর্বনাশের শেষ।
ঝুরি ভরা বটের পাতায় চাপ চাপ স্মৃতি
মুখের বলি রেখায় হিমেল স্রোত-
বানের জলে ভেসে যায় লখীন্দরের লাশ-
বেহুলার কপাল পুড়ে দারুণ সর্বনাশ।
জীবনে হাতরানো কিছু রঙ তবু-
কিছুতেই চাই না আমার প্রতিচ্ছবির মুখে।

আপোশ

জীবনের সাথে আপোশ কোরো না
জীবনবিমুখী হয়ে যাবে-
আপোশ কোরো না নিজের সাথে,
নির্ভীক হয়ে বাঁচো- স্ফুর্তির সাথে বাঁচো।
অনেক ভয় চারিদিকে, মাকড়সার জাল পাতা,
অক্টোপাসের মতো হামাগুড়ি দিয়ে আসে,
অজগরের মতো বেঁধে ফেলতে চায় আষ্টেপৃষ্টে,
হায়নার মতো দল বেঁধে ছিঁড়ে খেতে চায় বুকটাকে-
যে বুকে তোমার অদম্য সাহস;
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর অটুট বিশ্বাস ।
জর্জরিত হতে পারো দুঃখ-রাগ-বিতৃষ্ণায়
তার সাথে তবু হাত মিলিও না, আপোশ কোরো না তার সাথে।


অবসাদ এক বিভ্রম, মুখোশ পরা শয়তান -
তোমাকে বাঁচাতে পারো তুমিই-
দুহাতে নিজেকে আঁকড়ে ধরো-
রঙ-বেরঙের আপোশী ছদ্মবেশ ধারণ করার চেয়ে,
উলঙ্গ থাকা বরং ভালো।


রোজ একটু একটু করে মরতে যদি হয়,
আপোশহীন জীবন একবার বাঁচো-
মৃত্য দিয়ে সাজানো অমূলপ্রত্যক্ষ এই সমাজে
ক্যাকটাসের মতো সদর্পে বাঁচো।


নষ্ট হতে দাও

তোমায় ছেড়ে নষ্ট হবার পণ করেছিলুম, প্রিয়তমা
তুমি আমার
নষ্ট হবার সবটুকু সাধ
আঁচল ঝেড়ে দিয়েছিলে।


আত্মশ্লাঘা, উন্মাদনা, প্রতিহিংসার প্ররোচনা
হাড়, মাংস, মজ্জায় ছড়িয়ে ছিল—
শালুক ফুল বুকে নিয়ে লজ্জাহীন ঘুমিয়েছি
একাকী আমি রাতচরা পাখি।


আত্মার আত্মীয় যারা হয়েছিল সুদুর পরিহাসী
প্রখর প্রেমে ছিল তরল পরিযাতনা—
আধপোড়া সিগারেটে এখনো লেগে আছে
তোমার পূর্ণস্বাদ যৌবনের মগ্নতা।


এতদিনে বুঝতে পারি আমায় ঘিরে কি চাও তুমি
সন্ধ্যার আলো আঁধারিতে
মুখে বিচিত্র রঙ আমার —
বিদুষকের চোখের জল নিয়ে,
এবার নষ্ট হতে দাও আমায়।


সবুজ আবেগ

নিশিত খঞ্জরের সুতীব্র ছোবল
সুপটু ঠোঁটের কোণে —
বড় বিপজ্জনক খেলা
শিশির ভেজা ঘাসে পা ডুবিয়ে
রোদ চুপিচুপি এসে দাঁড়ায়
কৃষ্ণচূড়ার ডালে, ফাগুনের হাওয়া
শিরশিরে প্রলোভন ছড়ায় মনে
বুড়িয়ে যাওয়া নদীর ভাঙ্গা ঘাটে
সবুজ রঙের আবেগ আর আকুলতা
নিয়ে, কেউ আর হাতছানি দিয়ে বলে না
একটিবার এসে ভেজো এই অমলিন বৃষ্টিতে।


অব্যবহৃত যৌবন যখন আত্মসমর্পিত
বৈধব্যের ধূসরতায়—
কার কাছে গচ্ছিত রেখে যাবো
এই উপেক্ষিত জীবন !
খোলা হাওয়ায় আটকে থাকা ঘুড়ি
শাপিত জিভ বের করে ভেংচি কাটে।


বয়ঃসন্ধির স্বপ্ন লাট খায় অবচেতন ঘুমে
কাঁচা হাতের প্রেমনিষ্ঠ চিঠিতে জমাট বাদামী ধুলো
পেলব আঙুলের মাদকতায় জড়িয়ে যায় হাত
সেলফোনের আলোয় দেখা মায়াবী মুখ
সব অভিব্যক্তি জট পাকিয়ে যায়,
চূড়ান্ত সংঘাতের মধ্যরাতে—
তবু ভালো থেকো অরক্ষিত হাতছানি,
নিশিত খঞ্জরের সুতীব্র ছোবল আর
সুপটু অস্থিতিশীল ঠোঁটের কামড় বাঁচিয়ে।