তোমার জন্য লিখবো
লেখার জন্য বাঁচতে হলে
আরো কিছুদিন লিখবো
বাঁচার জন্য লিখতে হলে
আরো কিছুদিন বাঁচবো।
হিমেল হাওয়ায় শীতের পরশ
আরো কিছুদিন আর একটু জোশ
ভালোমানুষের সুচতুর মন
আরো কিছুদিন আর একটু রোষ
জোড়া দিয়ে দিয়ে ভাঙা দিনগুলো
অজনা দু ক্রোশ আরো হাঁটা হলো
ক্লান্ত সকাল ভিজে ভিজে চোখে
ভালোলাগা গুলো যেন অগোছালো
নিভু নিভু দিন হলো অবসান
হিসাব রাখিনি প্রেম পরিমাণ
যদি বেঁচে যাই আরো একদিন
তোমার জন্য লিখবো।
জলছবি
একমুঠো গাঢ় নীল আকাশ
গড়িয়ে নেমেছে তোমার গলার পাশ থেকে
নেমে এসেছে আরো গভীরে
যেখানে সঙ্গোপনে বড়ো হচ্ছে
একজোড়া প্রতিশ্রুতি
একফালি আঁচল দিয়ে ঢেকে
একমুঠো স্বপ্ন সুঠাম সুনিবিড়
ঘুম ভেঙে চুঁইয়ে পড়ে মনের চোরা গলিতে
অবচেতন থেকে অচেতন
চেতনার আরো অতলে
ভেদনশীল সম্পর্কের বেড়াজালে
দারুণ অসময় ফিরে আসে
তোমার সদ্য বেড়ে ওঠা অপক্য কলি
তোমার প্রতিটি ভোর যেন সুকুমারী রাতের প্রসব
কোন এক উন্মত্ত প্রলয় এসে
ভাঙা ঘরে নির্বাপিত প্রদীপ
পরিকল্পিত আলিঙ্গনে নাক্ষত্রিক শক্তির
অযাচিত সুচারু হসতান্তরণ
নিপিড়ীত সুকোমল মনে
একান্তে ঢেউ ভাঙে তরল জীবন
ছোট্ট জানালার গরাদে নাক ঠেকিয়ে
প্রতীক্ষার প্রাচীরে জমে ওঠে সবুজ শ্যাওলা
একমুঠো ভালোবাসা হঠাৎ হিমায়িত কুয়াশা
নিকষ অন্ধকার থেকে হ্যারিকেনের আলো
মিটিমিটি তারা আর জোনাকীর পটভূমি
আপস করে কাঁধে নেওয়া
নিদ্রাহীন রাত
লৌকিক সত্যের বিদ্রুপে ফিরে ফিরে আসে
নির্জন বিজনে দারুণ অসময়
একান্ত অসহিষ্ণুতা তোমাকে ঘিরে
কনুই ছুঁয়ে সানন্দ জোছনায় হাত ধরে
হেঁটে যেতে পারি না সেই খেয়াকাঠির উৎসবে
শিউলির মৌতাতে মিলনের শর্তহীন আত্মসমর্পণ
সব ছেড়ে উদাসী বাউল তোর চঞ্চল আহ্বানে
খানিক স্তব্ধ হয়ে রই মুগ্ধতার অবকাশে
সাদা ক্যানভাসে তুলির আঁচড়ে ফুটে ওঠা
নিষ্পাপ প্রেম
তাও যেন আপেক্ষিক আপাদমস্তক
জলছবির পুনর্গঠন।
বাঘবন্দী খেলা
আমার মাথার মধ্যে আমি
নিজের সাথে বাঘবন্দী খেলি
ক্ষুধার্ত শ্বাপদ দাঁত আর নখ বের কোরে
ছিঁড়ে টুকরো করতে চায় হরিণ শাবক।
ভোর রাতে ঘুম ভেঙে উঠি
মনের মধ্যে কুন্ডলী পাকানো চিন্তা
নিজেকে একটু একটু কোরে জুড়ি
সাদাকালো পুরোনো ছবির কোলাজ।
অচেনা নদীর ঘাটে আমি একা
বেসামাল স্রোত ঢেউ ভাঙে পায়ের কাছে
কুয়াশা জমাট বেঁধে আকার পেতে চায়
নিরাবয়ব ঈশ্বরের জন্য পূজোর আয়োজন।
ধর্মতলার মোড়ে রাজনৈতিক চীৎকার
আমার মধ্যে তবু নেই প্রতীবাদের ভাষা
একমুঠো গরম ভাতের জন্য কি ভীষণ আর্তি
নিজের অস্থি পুড়িয়ে রান্নার জোগাড়
না খাওয়া মুখগুলোর লেলিহান চাউনি
নিয়তির হাতে নিষ্চেষ্ট আত্মসমর্পণ
ক্রমাগত নির্যাতনে বিকৃত হয় পৃথিবী
পোকা বাছা মৌনতায় তবুও জীবনযাপন
খুব সঙ্গত কারণে মনে হয় স্বেচ্ছাচারী হই
গলার কাছে হৃৎপিণ্ডের প্রতিধ্বনি শুনি
সম্পূর্ণ সততার মোড়োকে সামাজিক অভিসন্ধি
সুজটিল চারুশিল্পে পরিমার্জিত হয়
তৃপ্ত গিরিখাত বেয়ে আবেগের ধারা
এক নির্জন বীথিকায় আমায় টেনে নিয়ে যায়।
অসীম শূন্যতা
তোমার ভেজা ঠোঁটের হালকা স্পর্শ
যখন রাখো আমার শরীরে
পূর্ণতা পায় পুরুষত্ব
তোমার ভিজে চুলের ছিটকে আসা জল আনে
শান্তির বারিধারা আমার অশান্ত মনে
আমি জানুভাঙি, প্রসারিত করি তৃষ্ণার্ত হাত
ভারাক্রান্ত নতদেহ আর অনুচ্চারিত প্রশ্নসামগ্রী
ঘরে ফেরার ডাক আসে তবু ফেরা হয় না ঘরে
তোমায় দিয়ে শূন্যতাকে সম্পূর্ণতা পাই
তুমি যখন বুকে রাখো হাত
খোলা চুলে বন্যা ঢেলে দাও
পরিপূর্ণতা পায় পুরুষত্ব
তোমার চোখের কাজল আর
কোমল ঠোঁটে অস্তরাগ
শরীর আমার হিমেল হাওয়ায়
কঠিন বরফ হয়ে ওঠে
তুমি যখন পল্লবিত চোখ রাখো আমার চোখে
তোমার শরীর জুড়ে প্রবল ঝড়
আমি শুকনো পাতার মতো প্রচন্ড দাবানলে
ছেঁড়া পাল হাতে ধরে তবু
কান্না চেপে ভালোবেসে যাই
সাদা ক্যানভাসে তুলির আঁচড় কাটি নিঝুম অন্ধকারে
সবটুকু প্রেম ঢেলে তোমার প্রতিকৃতি আঁকতে চাই
স্বপ্নের পারিজাত থেকে নেমে আসা এক প্রতিমূর্তি
অপরিচিত দ্বৈরথে আমায় টেনে নিয়ে যায়
চোখের কোনে অশ্রুসিক্ত রক্তবিন্দু নিয়ে
অসীম শূন্যতায় আজও তোমায় খুঁজে পাই।
খেয়াঘাটের শেষ পাড়ি
খেয়াঘাটের শেষ পাড়ির দাঁড় টানি আমি
শান্ত জলের বুকে ক্লান্ত পায়ের ভাষা লিখে যাই
আবছা অন্ধকার নিশ্চুপ চারিধার,
শুধু অভ্যেসের ছপছপ্-
আপন মনে ওঠে আর নামে
এই শেষ যাত্রার ভেতর কোনো প্রত্যাশা নেই,
নেই কোনো প্রতিশ্রুতির দায়ভার-
ছেড়ে যাওয়া ঘাটে থাকে শুধু ঘুমের আয়োজন
রুটিন বাঁধা রোজনামচা জীবনে
বৃষ্টি নামুক এক পশলা|
লখীন্দরের বাসর ঘরে চুপিসাড়ে
সন্দিগ্ধ কালনাগিনী এসে বসে বিছানার এক কোণে|
মনে পড়ে সেই ফেরীওলার ডাক
মন খারাপ করা দুপুরে-
ইচ্ছে পাখি ডানা মেলে ভাটিয়ালী সুরে
আবছায়া ফুটে ওঠে এক মুগ্ধ যৌবন|
আমি দাঁড় থেকে আলগোছে হাত সরিয়ে রাখি,
ফিরে দেখি ফেলে আসা ঘাট থেকে
ছুটে আসে শুধু নিকষ অন্ধকার।