আয়ুশ স্কুটির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। লীলা স্কুটির কাছে গেলো তারপর স্কুটিটাকে ঠিক করে বসে পরলো আর আয়ুস কে বসতে বলল।
আয়ুশ ভীষণ লম্বা চওড়া ছিল লীলা তার কাছে কিছুই না যেন একটা ছোট্ট পুতুল। আয়ুস পিছনে বসতে লীলাকে দেখা যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। ও পুরো চাপায় পড়ে গেলো।
এদিকে আয়ুস বসার সাথে সাথে ই লীলার ব্যালেন্স বিগড়ে গেল আর লীলা পড়ে যেতে লাগল কিন্তু আয়ুস নিজে পা ফেলে দিল আর লীলার হাতে হাত রাখল আর ব্যালেন্স ঠিক করল।
আয়ুস এর স্পর্শ তে অদ্ভুতভাবে কেঁপে উঠল লীলা। আজ অব্দি কোনো পুরুষ ও এতটা কাছে আসেনি কারণ কাউকে আসতেই দেয়নি ও।
দুজনেরই মনের মধ্যে অদ্ভুত ফিলিংস আসছে যার ব্যাপারে দুজনেই জানে না।
লীলা স্কুটি স্টার্ট করল আর ওই ভাবে ওরা যেতে লাগলো কারণ লীলার পক্ষে ব্যালেন্স সামলে রাখা অসম্ভব। কিন্তু তবুও বারবার ব্যালেন্স বিগড়ে যাচ্ছে।
কিছুটা রাস্তা গিয়েছিল সাথে সাথেই আয়ুস নিজেই পা রেখে দিল আর স্কুটি থেমে গেল যেটা দেখে লীলা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো আর প্রশ্ন করল_"কি হলো নিচে পা রাখলে কেন স্কুটি থেমে গেল তো একে এত কষ্টে চালাচ্ছিলাম!"
কিছু না বলে স্কুটি থেকে লেগে পরলো আর ওর হাত ধরে ওকেও লাভালো, আর নিজে বসে পড়ল আর ওকে ইশারা করলো পিছনে বসার।
লীলা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো কিন্তু আয়ুস কিছু বলল না ওর মুখটা এখনো এক্সপ্রেশনলেস ছিলো।
লীলার কাছেও কিছু করার ছিল না ও বসে পড়লো। আর আয়ুস স্কুটি স্টার্ট করলো। আর খুবই হাই স্পিডে স্কুটি চালাতে লাগল আর লীলা ভয়েতে ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল। যেটা হওয়ার সাথে সাথে স্কুটি থামিয়ে দিলো আয়ুস ।
সাথে সাথে লীলা সরে গেল আর রাগের সাথে বলল"ওই মিস্টার আয়ুস এত স্পিডে স্কুটি চালানোর প্রয়োজন নেই আস্তে আস্তে ও চালানো যাবে"
এটা শুনে আয়ুস কিছু না বলে স্কুটি চালাতে লাগল কিন্তু আস্তে আস্তে। ওর লীলার কথায় কোন যায় আসে না ও শুধু তাড়াতাড়ি করে ওর মায়ের কাছে পৌঁছাতে যাওয়ার মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই আজ কতদিন ও ভালো হবে ঘুমোইনি। মায়ের কোলে মাথা না রেখে ওর ঘুম আসে না। ওর শান্তি তো একমাত্র ওর মায়ে ছিল । ও ওর মাকে ছেড়ে কখনো দূরে থাকেনি কিন্তু এখন তোর বাবার ধৈর্যই পার করে দিয়েছে আর ওর মা রাগ করে এখানে চলে এসেছে।
ও এইজন্যে হাই স্পিডে স্কুটি চালাচ্ছিল যাতে ও তাড়াতাড়ি ওর মায়ের কাছে পৌঁছতে পারে। এদিকে লীলা বিন্দাস আরামসে বসেছিল ও তাড়াতাড়ি করে একে বাড়ি পৌঁছে বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেতে চাই।
আয়ুস এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তখনই আবার খুব জোরে ঝড় উঠলো আর বৃষ্টি পড়তে লাগলো আর দুজনেই ভিজে যেতে লাগলো।
লীলা বিরক্তির সাথে আয়ুস কে বলল"সামনে ভাঙা বাড়ি আছে আমরা দুজনে ওখানে দাঁড়িয়ে পড়ি তা না হলে জ্বর সর্দি হবে আমাদের"
কিন্তু আয়ুস গাড়ি থামালো না ও তাড়াতাড়ি করে মায়ের কাছে যেতে চাই। কিন্তু এত জোরে ঝড় হচ্ছে যে সামনে একটা গাছ ভেঙে পড়ল ভাগ্য ভালো ছিল যে গাছটা ওদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে পড়েছিল।
লীলা খুব ভয় পেয়ে গেল এতে আর আয়ুস ও গাড়ি থামিয়ে দিলো। আর এইখান টাই ওই বাড়িটা ছিল যেখানেই নিলা দাঁড়িয়ে ছিলো। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য।
এই জায়গাটায় এখনো সুন্দর চাঁপাফুলের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়েছিল। আয়ুস এর ও না খেয়ে এই সুন্দর সুগন্ধ টা আসছে আর ওর মনকে শান্ত করছে।
লীলা তাড়াতাড়ি করে আয়েশের হাত থেকে নিজে স্কুটি নিয়ে ওই ভাঙ্গা বাড়ির কাছে গেল আর আয়ুস কেও ইশারা করলো আসার জন্য। ওর পিছু পিছু গেলো। আর লীলা স্কুটিটাকে পার্ক করল তারপরে ওই ভাঙ্গা বাড়িতে ঢুকে পড়ল আয়েশা ওর পিছু পিছু গেল আর ঢুকে পড়লো বাইরে ঝাঁপটা আসছে যার জন্য সবকিছু ভিজে গেছে বাইরে ও দাঁড়ানো যাচ্ছে না।
লীলা কিছু একটা ভেবে জোরে লাথি মারলো দরজাতে সাথে সাথেই দরজার তালা ভেঙ্গে গেলো। আর লীলা ভেতরে ঢুকে পড়ল ভেতরে খুবই গরম ছিল আর শুকনো ছিল জায়গাটা এটা একটা মাটির ঘর ছিল। খুব একটা খারাপ না ভালোই হালে ছিলো। কিন্তু এখানে কেউ থাকেনা।
আয়ুস ও ভেতরে ঢুকে পড়লো লীলা কিছু খুঁজতে লাগলো যাতে ওরা দুজন নিজেকে গরম রাখতে পারে।
তখনই লীলা পাশেই একটা চুলা দেখতে পেলো আর ওর পাশে আগুন জালানোর কিছু জিনিস ছিলো।
ওইগুলি নিয়ে আগুন জালাল। আর পাশের চিয়ারো রাখা ছিল ও ওইটা এনে দিল আর আয়ুসকে বসতে বলল। আয়ুস ও বসে পরলো
লীলা দেখল আয়ুস ওর থেকে বেশি ভিজে আছে। যেটা দেখে ও আশপাশে কিছু খুঁজতে লাগলো তখনই ওর নজর গেলো।
ওইখানে চলে গেল আর একটা চাদর নিয়ে এলো, চাদরটা পরিষ্কারই ছিল ও ওইটা আয়ুস এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো"মুছে নাও নিজের বডি না হলে সর্দি হবে "
আর এই চাদর টা দেখে এমন এক্সপ্রেশন দিল জানো ওর বমি হবে। যেটা দেখেই লীলা মাথা হিলিয়ে নিলো আর মনের মধ্যে পরল"বড়লোকেদের বড় বড় ব্যাপার!"
এই বলে ও নিজেই নিজের চুল মুছতে লাগলো। আর আয়ুস ওকে গভীরভাবে কিছুক্ষণ দেখলো। তখনই ওর চোখ ছোট ছোট হয়ে গেল কারণ এই মেয়েটা সত্যি অপ্সরা ছিল কিন্তু এখন ওর হিংসা হচ্ছে না।এটা আশ্চর্যের বিষয় ছিলো।
কিন্তু আয়ুস এটা কি ইগনোর করে আগুনের কাছে গেলো। কারণ ওর ঠান্ডা লাগছে। ও কখনো এরকম সিচুয়েশনে এ পড়েনি তা না ও অনেকবার অনেক রকম ভয়ংকর থেকেও ভয়ংকর সিচুয়েশনে সাথে পড়েছে যখন ও ওর মিশনের জন্য বাইরে যেত আর খারাপ ভাবে মেরে ফেলত শত্রুদের।
ওর সবকিছুর অভ্যেস আছে। কিন্তু বারবার ওর চোখ লীলার দিকে চলে যাচ্ছে।
আর টাওয়ারের প্রবলেম হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে বলে। লীলা পকেট থেকে ফোন বার করলো আর ফোনটাকে ভালো করে চেক করতে লাগলো যদি একটু নেট পাই। কিন্তু নেট আসছেই না।
যেটা আয়ুস ও ভালোভাবে বুঝতে পারছি । কিছু একটা ভেবে আয়ুস গভীরভাবে লীলার দিকে তাকালো আর লীলাকে বলল"নাম কী তোর আর তুই আমার সাহায্য করতে কেন এলি আমার মা কি তোকে চেনে অনেক আগে থেকে?"
কথাটা শুনে লীলা নিজের চুল মুছতে মুছতে বলল"obviously আন্টি আমাকে চিনবে কারণ আন্টি আমাদের পাশের বাড়ি থাকেন আমরা নেভার।"
এটা শুনে আয়ুস বুঝতে পারার মাথা নাড়লো। লীলা আয়ুস এর কাছে এলো আর বলল"পুরো ভিজে গেছ তুমি মুছে নাও নিজের বডি না হলে আমি মুছে দিচ্ছি আমার সহ্য হচ্ছে না"
এই বলে জোর করে আয়ুস এর লম্বা সিলভার কালারের চুল মোছাতে লাগলো লীলা। আয়ুস আটকালো না ওরে এসব থেকে কোনো মতলব নেই মেয়েটা যা করছে করুক।
এদিকে লীলার পা ভিজে থাকা কারণে ও পা স্লিপ করে সোজা আয়ুস এর কোলেই বসে পড়লো। সাথে সাথে আয়ুস লীলা যাতে পড়ে না যায় ধরে নিলো। ও লীলার পুরো সাহায্য তো করত না কিন্তু লীলার কথা শুনে মনে হচ্ছে ও ওর মাকে ভালোভাবে জানে আর ওর মায়ের খুবই কাছের যার জন্য ও লীলাকে বাঁচালো।
এদিকে এখন দুজনে অনেক কাছাকাছি ছিলো। যার জন্য অদ্ভুত ফিলিংস দুজনের মনের মধ্যেই হচ্ছে দুজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।
(তো কি হতে চলেছে এরপর?জানবার জন্য পরের পর্ব পড়তে হবে)