Motivation books and stories free download online pdf in Bengali

অনুপ্রেরণা


বৃহস্পতিবার রাত্রে (১৫/২/২৪) দমদমে বিয়েবাড়ী থেকে ফেরার সময় Ola করলাম। দমদম থেকে উত্তরপাড়া আসতে আধঘন্টা সময় লাগে । আমরা গাড়ীতে বসে নিজেদের মধ্যেই কথা বলতে ব্যস্ত ছিলাম। যখন উত্তরপাড়ায় গাড়ীটা ঢুকল, তখন আমার কর্তা ড্রাইভার ভদ্রলোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন " গাড়ীটা কোথাকার? 'উত্তরে ড্রাইভার সাহেব জানালেন " শিয়ালদা " । তারপরে আবার যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল " দিনে কতবার ট্রিপ করতে হয়? " উনি বললেন " আট থেকে দশটা। কিন্তু আমি মাসে একদিনই গাড়ী চালাই। " আমি ভীষণ অবাক হয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম " কেন?" উনি তখন বললেন " আপনি Google এ গিয়ে Ola Uber driver Ashoke Kumar Singh type করুন। " এবার আরও অবাক আমরা। বললাম Google? উনি বললেন "আরে দেখুনই না। " ওনার কথা মতো তাই করলাম। Type করতেই আশ্চর্য্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলাম। ওনার মেয়ে Aditi Singh ভারতবর্ষের প্রথম তিনজন neurosurgeon এর একজন। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ICSC তে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হয়ে জয়েন্টেও rank করে। এরপরে medical.পড়ে স্কলারশিপে FRCS করে লন্ডন থেকে। এরপরে AIIMS এ nurosurgeon হয়ে জয়েন করে । বর্তামানে লন্ডনেই থাকে। বছরে একবার একমাসের জন্য দিল্লীর AIIMS আসেন critical case solve করতে । শুধু ভারত বা লন্ডনই নয়, সারা বিশ্বের সমস্ত দেশেই যে কোনো critical case এলেই ডাক পড়ে Dr Aditi Singh র। এতদূর শুনে মুখে কথা জোগাচ্ছিল না। কিন্তু আমাদের অবাক হওয়া এখনও বাকী ছিল। এতক্ষণের গল্প শুনে মনে হতেই পারে এ তো ফি বছর মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোলেই কত এমন গল্প বেরোয় টিভি আর পেপারে । কিন্তু না এই গল্প একটু আলাদা।
ভদ্রলোক এবার নিজের জীবনের গল্প বললেন । তিনি যখন ফাইভে পড়েন তখন বিহারের ছাপড়া থেকে কাজের সন্ধানে কলকাতায় আসেন। শিয়ালদায় একটা হোটেলে তিনবছর বাসন ধোয়ার কাজ করেন। এই কাজ করে কিছু পয়সা জমিয়ে আবার স্কুলে ভর্তি হন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন।কিন্তু এইভাবে হোটেলে কাজ কাজ করে পড়ার সময় কমে আসছিল। তাই তিনি ড্রাইভিং শিখে গাড়ী চালাতে শুরু করেন। দিনে গাড়ী চালিয়ে রাত্রে কলেজে পড়তেন।বেশী পয়সা রোজগার করার জন্য Ambulance চালাতে শুরু করেন। এইভাবেই তিনি Graduation করে Master' s পড়া শেষ করেন। এরপরে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তার স্ত্রীর গলার হার বিক্রি করে নিজের একটা গাড়ী কেনেন। স্বাধীনভাবে গাড়ী চালিয়ে তিনি compititive exam দিতে শুরু করেন এবং SBI তে চাকরি পান। শেষ জীবনে তিনি যখন Retire করেন তখন তিনি Manager ছিলেন এবং তিনি বর্তমানে 52,000 টাকা পেনশন পান। এতদূর শুনেই মনে হচ্ছে তো পুরো রূপকথার গল্প বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে ? না আসে নি। সে মানুষ আর সেইজন্যই সে মনুষ্যত্ব ত্যাগ করে নি। এতদূর পরে মনে হতেই পারে সে হয়তো নিজের অতীত জীবনের সংগ্রামকে সম্মান করতেই এখন মাসে একদিন গাড়ী চালায়। কিন্তু না ---- এখানেও চমক। তিনি মাসে একদিন গাড়ী চালিয়ে যে রোজগার করেন তা দিয়ে তিনি ৩৫ টি অন্ধ বাচ্ছার সমস্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর জন্য তিনি তার মেয়ে এবং তার আরও একটি ছেলে আছে ,যে কিনা শিকাগোতে থাকে তাদের থেকে কোনো সাহায্য নেন না। তিনি খুব উজ্জ্বল মুখে বললেন " আমি খাই, ঘুরতে যাই সব ছেলেমেয়েদের পয়সায়। কিন্তু এই কাজের জন্য আমি কারোর থেকে কোনো help নিই না। এটা আমার একান্ত নিজের কাজ ।" ওনার সঙ্গে এত কথা বলতে বলতে গাড়ী এসে আমাদের বাড়ীর দরজায় থামল। ওনার সঙ্গে ফোটো তুলতে চাইলে উনি হাতজোড় করে মানা করলেন। বহুবার বলার পরে কুন্ঠিতভাবে দুটি ছবি তুলতে রাজী হলেন।
সবাই তো আমরা বেঁচে থাকি,কাজ করি, কিন্তু এমনভাবে কয়জনে ভাবতে পারি? ?
একার জন্য বাঁচাটা বাঁচা নয়, কারোর জন্য কিছু করে যেতে পারলে হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। এমন হয়তো অনেক মানুষ আছেন যারা কোনো প্রচার বা সমর্থনের জন্য অপেক্ষায় না থেকে নিজের সামর্থ্যের মধ্যে থেকেই অন্যদের আলোর পথ দেখিয়ে নিয়ে যান।
বহুমানুষের অণুপ্রেরণা হয়ে ভালো থাকুন আপনি Ashoke Kumar Singh জী।


শেয়ারড

NEW REALESED