মনে পড়ে যায়, লুসি যেন হারিয়ে গেছে মধ্যে ইরাকের উত্তপ্ত বালুকা ভরা বিশীর্ণ নাগরী হাজাতে। সেখানে এক প্রকোষ্ঠে অন্ধকারের মধ্যে জঞ্জালের আবরণ সরিয়ে বাস করে নগরের অন্যতম রূপবতী সেইবা। জেক ঘিরে বাতাসে ওঠে ষড়যন্ত্রের ফিসফাস, যার নিশ্বাসে সারা রাত শকুনের চিৎকার। সেই সাইবাই আজকের চোদ্দ বছরের অপাপবিদ্ধ কিশোরী কোননা লুসি।
- মনে কর লুসি, তারও আগের জন্মের কথা ........।
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে লুসির যেন মনে হলো প্রজ্জ্বলিত শিখার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে। স্বৈরিণী রমণীর এলোকেশের মতো ধেয়ে আসছে বহ্নিশিখা। আর এক মূহুর্ত মাত্র। তারপরে লোল জিহ্বা দিয়ে ঐ আগুন গ্রাস করবে তার কোমল তনু বাহার। কবরে সমবেত হাজার হাজার উল্লসিত মানুষের কন্ঠে নিনাদিত - ডাইনী মেরিয়ার মৃত্যু হোক।
ডাইনী ? চল্লিশ বছরের অনন্যা রূপসী মেয়ে মেরিয়া সত্যিই কি ডাইনী ? তা না হলে খোদ লন্ডন শহরের বুকে কেমন করে ঘটে ঐ সব অলৌকিক ঘটনাবলী। কেন কবর থেকে হারিয়ে যায় মিস ডাওলেডের মৃতদেহ ? কেনই বা পিকাডেলি সার্কাসের জনবহুল রাস্তা থেকে হটাৎ অন্তর্হিত হয়ে যান শহরের বিশিষ্ট ব্যাক্তি মিস্টার প্রিয়াবলি ? কেন রূপসী মেরিয়ার চোয়ালের দুটি দাঁত ঠোঁট থেকে দু ইঞ্চি বেরিয়ে থাকে, বুঝি রক্ত পেইন কাতর হয়ে। এ সবই হলো অভিশপ্ত ডাকিনী বিদ্যার ফল।
আর কিন্তু ভাববার অবকাশ পায়না মারিয়া। আগুন তার পায়ের পাতা স্পর্শ করেছে। তারপরে মুহুর্তের মধ্যে গোটা শরীরকে লেহন করেছে লোলুপ দৃষ্টিতে। আকণ্ঠ পিপাসা পাই তার, গলা সুকীয়া ওঠে এবং .........
- একটু জল খাবো, মৃদু কন্ঠে তন্দ্রাছন্নতার মধ্যে লুসি বলে।
ক্লারা হেনরির চোখের দিকে তাকায়। তারপর ঠোঁট নাবিয়ে বলে - আজকের মতো এখানেই শেষ।
হেনরি জবাব না দিয়ে পাতাল ঘরের দরজা খুলে ওপরে চলে যায়। ক্লারা অনেক্ষন মেজেতে শায়িতা লুসির বিবর্ণ চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে। জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটে আর ভাবে বীভৎস কোন এক মুহুর্তের কথা। যখন শীর্ণা ঐ মেয়েটিকে সে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করবে।
এক বুক পিপাসা নিয়ে ওখানে পড়ে থাকে লুসি। ক্লারা ওপরে চলে যায়।
এই সেই ইতিহাসের অনেক রক্তাত্ত ঘটনার নীরব সাক্ষী। সর্বনাশা নীলনদের তীরে ঘটে গাছে অকারণ হত্যা। কুহকিনী রমণী দেহের দুর্বার আকর্ষণে বারবার উদ্বেল হয়েছে পুরুষ হৃদয়। এই সেই নীল ধূসর পটভূমি, সেখানে মৃত্যু যেন দরদী শিল্পীর মত বিকীর্ণ আখরে লিখেছে হত্যা লালসা ব্যাভিচার আর ষড়যন্ত্রের কাহিনী। এখানে শায়িত আছে অসংখ্য মমি যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মহাকালের বিলীয়মান মৃত আত্মার ধারাবাহিক ক্রন্দন শ্রবণ করে।
এখানে আছে বিরাট আকারের স্প্রিংস, যার অতল গহ্বরে সজ্জিত আছে তিল তিল করে জমানো রত্নবাজি। এই উপত্যকায় একা এসেছিলেন রাজা চতুর্দশ টলেমির বোন ক্লিওপেট্রা। হাজার বছর পরেও যে পৃথিবীর নগর বধূদের মনে ঈর্ষা জাগিয়ে তোলে এবং যে কোন পুরুষকে করে শরীর কাতর। একুশ বছরের যুবতী শিখরি দশনা তন্বি পীনোন্নতা মীনাক্ষী ক্লিওপেট্রাকে দেখে যেন ঝড় উঠেছিল রোমান সম্রাট সীজারের মনে।
তারপর আত্ম গরিমায় দুর্বার সম্রাট জুলিয়াস সীজারের বাসনার মোমে গোড়া পুতুল হয়ে রূপসী শ্রেষ্টা ক্লিওপেট্রা মদমত্ত পদক্ষেপে প্রবেশ করলো রোম শহরে। ভেবেছিলো যে, সীজারের অঙ্কশায়িনী হয়ে সুখ সৌন্দর্য আর বৈভবের অনন্ত সমুদ্রে ডুব দিতে দিতে পরিণত হবে সোনার প্রতিমায়।
কিন্তু অন্তরালে বুঝি কুটিল হাসি হেসেছিল সেই তিন ডাকিনী, যাদের দেখা মেলে অন্ধকারে ভূমিকম্পে ঝঞ্ঝায়। তাই বুঝি ব্রুটাসের হাতে নৃশংসভাবে মারা গেল অহংকারী সীজার। বিধ্বস্ত রোম শহরকে পেছনে ফেলে রেখে শরীরের পিপাসা নিয়ে কুহকিনী ক্লিওপেট্রা এলো আলেকজান্দ্রিয়াতে।
এখানে যেন তারই অপেক্ষাতে দিন কাটাচ্ছিল জুলিয়াসের বন্ধু এন্টোনি। তারপর ? যখন রোমের সিংহাসন দখলের লড়াইতে অবতীর্ণ হয়েছে অগাস্টাস আর লেসিডাস তখন নীলনদে ছুটে চলেছে এন্টোনির প্রমোদ তরণী। শরীরের সাথে শরীর মিশিয়ে যখন তখন বেজে উঠছে এক অপূর্ব সিম্ফনি।
কিন্তু ঘুমন্ত মমি, স্প্রিংস আর পিরামিডের রহস্য আবৃত দেশ হল মিশর, যেখানে ঝড় ওঠে মরুভূমিতে, যেখানে সুখ কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই অগাস্টাসের হাতে পরাজিত হল এন্টোনি। যে শরীর নিয়ে ক্লিওপেট্রার গৌরবের অন্ত ছিল না, অবশেষে সেই দুর্বার যৌবনকেও আত্মাহুতি নিতে হল ভাগ্যের হাতে। হারিয়ে গেলো রঙ্গিনী রমনীদের অন্যতমা ক্লিওপেট্রা।
নিজের হাতে ধরা বিষাক্ত সাপিনীর মুহুর্মুহু দংশনে ক্রমে দেহটা নীল হয়ে গেল তার। যে নদের বুকে একদা চলেছিল তার কামলীলা আজ সেখানে শায়িত হল হতভাগিনী ক্লিওপেট্রার বিষ জর্জর মৃত দেহ।
শুধু কি ক্লিওপেট্রা ? মিশরের ইতিহাসে ছড়ানো আছে এমন অনেক ক্লিওপেট্রার কাহিনী। যেমন আছে বিপ্লবী ফ্যারাও আখনাতনের রূপসী স্ত্রী নেফারতিতি, আছে সমগ্র ঐশর্য্যের একচছত্র সম্রাজ্ঞী রাশি সেবা, আছে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম নির্বাসিতা প্রেমিকা আমেন। তাই বুঝি মিশরের বাতাসে মধ্য দিনে মধ্যরাতে ভেসে বেড়ায় রহস্য তন্ময়তা।