Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

অভিশপ্ত পুতুল - পর্ব 1

আমার বান্ধবী লতা মারা যাওয়ার আগে আমি তার টেবিলে একটা পুতুল পড়ে থাকতে দেখি । পুতুল টা ছিল অনেক কিউট তাই আমি কাউকে না বলেই সেটা নিজের ব্যাগ এ নিয়ে রেখে দিয়েছিলাম,

লতা ছিল বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে । দেখতে ও ছিল অনেক সুন্দরী, পড়াশোনাতেও ছিল বেশ ভালো। কিন্তু কিভাবে যেনো সব কিছু শেষ হয়ে গেলো ।
লতা মারা যাওয়ার আগে স্কুল এ আমাকে প্রায় বলতো যে সে নাকি বাঁচবে না ।
আর তার চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে আছে এমন যেনো সে অনেক দিন না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে ।

আমি অবশ্য তাকে ইয়ার্কি করে বলতাম
কিরে এত রাত জেগে পড়াশোনা করে কি লাভ। প্রতি বারে তো তুইই ক্লাসে ফাস্ট গার্ল হয়ে যাস। এবার না হয় আমি হই । সে শুধু একটা মুচকি হাসি দিল। তার হাসিটা ও ছিল অনেক টা মায়াবী।

(বলে রাখা ভালো যে সে ও আমি একই স্কুলে পড়ি ও তার রোল ছিল ১ আর আমার রোল ছিল ২)।

আমি একটা জিনিস প্রায় লক্ষ্য করতাম যে লতার ব্যাগ এ ওই পুতুল টা সব সময় থাকতো । তাকে অনেক বার
জিজ্ঞাসা করেছিলাম পুতুলের বেপারে কিন্তু পুতুলের কথা বললেই সে কথা
ঘুরিয়ে নিত । বা এড়িয়ে যেত।
আমি তার পুতুল টা দেখতে চাইতাম কিন্তু সে দেখাতো না বরং সে আমার সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়া করতো পুতুল নেওয়ার কথা বলতে।

সে আমার অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল, স্কুলে সবাই জানতো যে সে ও আমি বোনের মত থাকি । কিন্তু মাঝে মাঝে আমাদের ঝগড়া দেখে সবাই অবাক না হয়ে পারত না । তাই আমি তাকে ওই পুতুল এর কথা বলতাম না।
যদি সে আবার ক্ষেপে যায় । পুতুল টা এতো তাই দামী ছিল যে সে সেটা কে সব জায়গায় নিয়ে যেতো, হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে । আমি তাকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে তুই পুতুল টা কোথায় কিনেছিস বল । আমিও বাবা কে বলে ঠিক এমন একটা পুতুল কিনবো ।

কিন্তু সে বলেনি আমায় দোকানের কথা।
বলেছিল যে কুড়িয়ে পেয়েছে । আমি মনে করেছিলাম যে হয়তো সে আমাকে দিবে না তাই মিথ্যে কথা বলছে ।

সেদিন তাদের বাসা থেকে পুতুল টা আমি আমার ব্যাগ এ করে রুম এ এনে রেখে দিয়েছিলাম, যদিও পরে তেমন আর মনে নেই আমার পুতুল এর কথা । আমি রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়ি ঠিক মাঝ রাতে কারো পায়ের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায় আর অনেক টা পিপাসা ও লেগেছিল তাই নিজের রুম থেকে কিচেনে যাচ্ছিলাম পানি খেতে। কিন্তু পায়ের শব্দ টা যেনো
স্পষ্ট ভাবে সোনা যাচ্ছিলো ।

আমি ঘাড় ফিরিয়ে দেখলাম কই কোথাও কিচ্ছু নেই। অনেক টা ঘাবড়ে গেলাম । মন কে বুঝালাম হয়তো আমারই মনের ভুল এটা, তাই কিচেনে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি খেয়ে কাঠ গলা টা কে ভিজিয়ে নিলাম । তারপর বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়লাম । সকাল বেলা মায়ের ডাকে কিচেন এ গেলাম । মা ধমক দিয়ে বলল তোর পুতুল কিচেনে কি করছে??? তুই কি পুতুল কিচেনে রেখেছিলি???

আমি - কই আমার তো তেমন কিছু মনে পড়ছে না । আমি তো পুতুল টা আলমারির ওপরে রেখেছিলাম । যাই হোক হয়তো আমিই কোনো সময় কিচেনে এনেছিলাম পুতুলটাকে।

বিষয় টা কে তেমন একটা গুরুত্ব দিই নি আমি সেই সময়। আজকের সকাল টা বেশ ঝলমলে । সূর্য টাও দেখছি
আজকে একটু তাড়াতাড়ি উঠেছে ।
এদিকে আমার প্রাইভেট এর ও সময় হয়ে যাচ্ছে! কি আর করার । হঠাৎ লতার কথা মনে পড়ে গেলো । ইসস সে থাকলে কতই না মজা হতো । রোজ স্কুল যাওয়ার পথে ।

করিম চাচার ফুচকার দোকান থেকে ফুচকা খেয়ে তার পর স্কুলে যেতাম ।
মনটা নিমিষেই বিষণ্ণতায় ভরে গেলো ।
মন টা কে সান্তনা দিয়ে রাখলাম যে পৃথিবীতে তো কেউ আর সারা জীবন বেচেঁ থাকবে না । সবাই কেই তো যেতে হবে কোনো না কোনো একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে, লতা নাহয় একটু তাড়াতাড়ি চলে গেলো । এসব ভাবতে ভাবতে প্রাইভেট চলে আসলাম ।
প্রাইভেট ও স্কুল শেষে চলে আসলাম বাসায় । বাসায় আসার পথে পরে লতা দের বাসা । লতার মা আমাকে দেখে
মুখ চেপে কান্না করতে করতে চলে গেলো বাসার ভিতরে । মনে হলো হাজারো ব্যাথা মনে নিয়ে আছেন তিনি ।
আমিও বাসায় চলে আসলাম , কারণ একটু পরেই সন্ধ্যা নেমে আসবে ।
বাসায় এসে পড়তে বসে পড়লাম , আর পড়া শেষ করতে করতে বেজে গেলো রাত প্রায় ১২ টা ।

মা টেবিল এ খাবার রেখে গেছেন ।
আমি খাবার টা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
রাতে আবারো সেই কারো হাঁটার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। এবার মনে অনেক সন্দেহ হলো । কে হতে পারে এতো রাতে???

তাই আমি আমার দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম । কিছুক্ষন পর দেখলাম লতাদের বাড়ি থেকে আমার নিয়ে আসা পুতুল টা বারান্দায় হাঁটছে । ভয়ে আমার বুক শুকিয়ে যাচ্ছে । দৌড়ে গেলাম পুতুল টা যেখানে রেখেছিলাম সেই ঘরে । গিয়ে দেখি পুতুল নেই তার জায়গায় । আমি নিশ্চিত এই পুতুলের ভিতর কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ।

আমি পুতুল এর কথা ভাবতে ভাবতে পুতুল আমার সামনে হাজির। আমি পুতুল টা কে আমার সামনে দেখে অনেক ভয় পেয়ে যাই। ভয়ে কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে আর পুতুল টা আগের থেকে
আকারে অনেক বড় হয়ে গেছে ।
চোখ দুটি যেনো কোনো নিকষ কালো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ।
পুতুল টা আমার কাছে চলে আসছে । আমি জোড়ে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম ।

কিছুক্ষন পর যখন চোখ খুললাম দেখি মা ও বাবা আমার পাশে । মা বলল যে তোর রুম থেকে জোড়ে চিৎকার শুনে তাড়াতাড়ি তোর বাবা আর আমি চলে আসলাম দেখতে তোকে, আর এসে দেখি তুই ফ্লোরে পড়ে আছিস । কি হয়েছে মা কোনো খারাপ সপ্ন দেখেছিস মনে হয়???

আমি মনে মনে ভাবলাম মা কে সব সত্যি কথা বললে হয়তো অনেক চিন্তা করবে
তাই বিষয় টা এখন আড়াল করে রাখলাম । আর মা কে ভুলভাল বুঝিয়ে ওনার রুমে যেতে বললাম । কিন্তু মা সে রাতে আর রুমে গেলো না বাবা মা ও আমি একই রুমে ঘুমালাম । পরদিন সকাল হতেই আমি পুতুলটাকে অনেক দূরে ফেলে দিয়ে
আসলাম । আর মনে মনে ভাবলাম যাক বাবা বাঁচা গেলো এই অলৌকিক পুতুল এর হাত থেকে ।

সেদিন আর সেই পুতুল নিয়ে ভাবলাম না কিছু। এভাবেই বেশ কয়েক দিন কেটে গেল। আমি ও আগের মত চলতে থাকলাম । কিন্তু হঠাৎ একদিন রুমে এসে দেখি সেই পুতুলটাকে কে যেনো আমার রুম এ এনে রেখে দিয়ে গেছে???

আমি মা কে জিজ্ঞাসা করলাম যে এই পুতুল টা কে রেখে দিয়ে গেছে আমার রুমে । মা উল্টা আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বললো নিজের পুতুল নিজে রাখছিস হয়তো??? না কী পুতুল নিজে নিজে
হেঁটে হেঁটে আমাদের বাসায় চলে আসছে নাকি???

মায়ের কথায় সেইদিন এর রাতের কথা মনে পড়ে গেলো । আমার অজান্তেই শরীর টা একবার শিহরিত হয়ে উঠল।
আমি মায়ের সাথে কথা না বলে পুতুল টাকে আবার ময়লার বালতি তে ফেলে দিয়ে আসলাম । একটু পরে একটা গাড়ি এসে ময়লার বালতিটা নিয়ে গেলো।
আমি বললাম যাক আপদ বিদায় হলো ।

কিন্তু আমার জানা ছিল না যে এই পুতুল টা আমার জীবন তাকে পুরোই শেষ করে দিবে । এভাবে দিনটা শেষ হয়ে আসলো । বিকাল এ গেছিলাম এক জায়গায় ঘুরতে । বাসায় এসে দেখি পুতুল আবার আমার বিছানায়। আমি এবার অনেক ভয় পেয়ে যাই । কিন্তু ভয় এর কথা মাকে বা বাবাকে বলা যাবে না । কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে একটা ভাইয়া কে ফোন দিলাম । যদিও সে আমার এক দূর সম্পর্কের মাসির ছেলে । তবে আমাকে দেখলেই তার প্রেম উঠলে পড়ে । মানে সহজ কোথায় আর কি পছন্দ করে আমাকে ।
যদিও তাকে তেমন পাত্তা দি না আমি ।

তাকে ফোন এ সব কথা খুলে বললাম। কিন্তু আমার জানা ছিলো না যে সে অনেক ভীতুর ডিম । আমার কথা শুনে এক দমে বলে দিলো যে সে নাকি পারবে না । আর সাথে এটাও বলল যে আমি তার কি হই যে সে আমাকে সাহায্য করবে???

আমি কি করবো না ভেবে তাকে বললাম যে আমি তোমাকে পছন্দ করি । বিশ্বাস করবেন না ভাই । পাল্টি খেয়ে ১ নেনো সেকেন্ড ও সময় লাগলো না । সে বলল আচ্ছা আমি কাল কে তোদের বাসায় যাবো। মা মামার জন্য কিছু পিঠা বানিয়েছে সেটাই দিতে যাবো তখন দেখবো কি করা যায়???

আমিও তার অপেক্ষায় থাকলাম। তার পরেরদিন সে আসলো , আমাকে দেখে তো যেনো হাতে চাঁদ পেয়েছেন মনে হয় ।
যেই পুতুল এর কথা বললাম অমনি বেলুন এর মত চুপসে গেলো ।
তারপর অনেক ভাবলো আর তার কোন জানি ফ্রেন্ডকে ফোন দিল । আর বলল যে পুতুল টা কে নিয়ে কি করা যায়???

তার ফ্রেন্ড নাকি বলল যে পুতুল তাকে একটা তান্ত্রিক কে দেখানো ভালো হবে ।
কিন্তু আমি তান্ত্রিক এর কাছে যাবো কিভাবে । আমাকে তো বাসা থেকে বের হতে দিবে না । ভাইয়া একটা প্ল্যান করলো । আমাকে বললো মা কে বলতে যে মাসিদের বাসায় যাওয়ার কথা।

আমিও সেই কথা ই বললাম ।প্ল্যান টাও কাজে এলো । আমরা পুতুল টা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম তান্ত্রিক এর উদ্দেশ্যে ।
ভাইয়া ও আমি পুতুলকে নিয়ে তান্ত্রিক এর সামনে বসে আছি । তান্ত্রিক বলল যে পুতুল টা কে একবার দেখান । আমি যেই পুতুল টা ব্যাগ থেকে বের করেছি তান্ত্রিক পুতুল তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা উঠকণ্ঠ নিয়ে বলল যে -


.......চলবে.......


পরবর্তী গল্পের আপডেট সবার আগে পেতে গেলে ফলো করে সাথে থাকুন।

"ধন্যবাদ"