Featured Books
বিভাগ
শেয়ারড

আগলে রেখো মোড়ে - 2



খান বাড়িতে 
বাড়িতে ইরার ডোকার সাথে সাথে 
দারাও ইরা কথা আছে তোমার সাথে আমার ( ইরার বাবা জলিল খান) 
বলুন শুনছি আমি। (ইরা) 
এভাবে কেন কথা বলছ তুমি । (জলিল খান) 
নরমাল ভাবেই তো বললাম  আমি খুব ক্লান্ত । ফ্রেশ হয়ে আসি আমি?? এসে না হয় আপনার সব কথা শুনব। (ইরা) 
আচ্ছা ঠিক আছে । তুমি ফ্রেশ  হয়ে এসো ততোক্ষণ সবসবাই আসুক। এই জামেলা  সবাইকে ড্রয়িং রুমে ডাকো কথা আছে আমার।(জলিল খান) 
আচ্ছা বলে সবাই কে ডাকতে চলে গেলেন (জামেলা বিবি ) 
* জামেলা বিবি হলো জলিল খানের প্রথম পক্ষের স্ত্রী। আর ইরা হলো ওনার দ্বিতীয় পক্ষের মেয়ে। ইরার জন্মদাএী  মা আর বেচে নেই  । যখন তার ছয় বছর বয়স তখন মারা যায় । তখন থেকেই ইরা এই খান বাড়িতে থাকে এই বাড়িতে কয়েকটি মানুষ ছাড়া ইরা কে কেউ পচ্ছন্দ  করে না অথচ আজ ইরার মায়ের জন্যই জলিল খান বেঁচে আছে। বাকি কথা গল্প পড়তে পড়তে জানবেন এবার গল্পে ফেরা যাক।

পাপা ডেকেছিলে কেন সেটা বলো। এখানে তো আমরা সবাই আছি। (আদনান ইরার দাদা) 
ইরা আসুক তারপর বলবো ।(জলিল খান) 
এখানে ওর ডাকার দরকার কি বুঝিনা আমি । (ইরার বড়ো ফুপি)
ফুপি ও আমার বোন হয় আর এ বাড়ির প্রত্যেক বিষয়ে জানার অধিকার ওর আছে। ওকে নিয়ে তোমার এতো অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ..(আদনান) 
কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে ইরা চলে আসে। 
হ্যাঁ বলুন কি বলবেন। সবাই আছে দেখি (ইরা) 
সকলের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে চাই কথাটা ইরাকে নিয়ে । কালকে দুপুরে ইরাকে দেখতে পাএপক্ষ আসবে । আমি কোন কথা শুনতে চাই না এই নিয়ে। (জলিল খান) 
আমি এখন বিয়ে করতে চাই না । আপনি আমাকে না জানিয়ে কীভাবে এতবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন । (ইরা আশ্চর্য হয়ে বললো) 
আমি কোন কথা শুনতে চাই না পাএ  একজন ডাক্তার। আমার বন্ধুর ছেলে তুমি ছোটবেলায় দেখছ তাকে  চেনোও এই বিষয়ে আমি আর কথা শুনতে চাই না এই বিয়েটা হবেই  বলে উঠে গেলেন (জলিল খান) 
ইরাও  চলে গেল দৌড়ে নিজের রুমে। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কেউ কেউ অসহায় তাকিয়ে থাকল তো কেউ কেউ মুখ বেঁকালো । 
রুমে এসে ইরা দেখল সামিম তাকে ম্যাসেজ করেছে। ম্যাসেজটি এমন ছিল। 
"দেখ অনেক দিন ধরে বলবো বলবো করেও বলতে পারছিলাম না তাই আজ তোমাকে ম্যাসেজ করলাম। আমি তোমাকে না নিশা কে ভালোবাসি। তোমার প্রতি আমার মোহ ছিল কোন ভালবাসা না। আমি আর নিশা আজ একবছর রিলেশনে আছি। তুমি আমাকে যা দিতে পারোনি ও আমাকে সেই সবটুকু দিয়েছে। আমি ওর কাছে লয়াল থাকতে চাই তাই তুমি প্লিজ আমাকে আর ফোন করে বিরক্ত করো না। আর আমাকে ফোন করলেও তুমি পাবে না কারণ আমি তোমাকে সব জায়গায় থেকে ব্লক করেছি। তুমি এমনিতেই বাড়িতে কতোদিন থাকতে পারবে তার ঠিক নেই তোমার বাবাও তোমাকে কোন সম্পত্তি দেবে না। এমন একজনের সাথে আমি থাকতে চাই না। নিশা তোমার থেকে সবদিক দিয়ে বেটার। আমি ওর সাথে সারাজীবন কাটাতে চাই। আশা করি তুমি বুঝতে পেরেছ আর কিছু আমাকে বলতে হবে না। যদি বুঝে থাক তাহলে আর ডিস্ট্রাব করোনা। বাই। "

লেখা টা পড়ে ইরা কান্নায় ভেঙে পড়ল। বালিশের ভেতর মুখ দিয়ে অনেকক্ষন কাঁদল যাতে ওর কান্না কেউ শুনতে না পাই। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরেছিল ফোনের আওয়াজ তার ঘুম ভাঙে। ঘুমের মধ্যে কল রিসিভ করে। 
হ্যালো (ইরা) 
কিরে তুই কি ঘুমাচ্ছিস। আর এদিকে আমরা কনফারেন্স কল করে বসে আছি (দিপ্তী) 
আরে না টায়ারড ছিলাম তাই কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই (ইরা) 
আচ্ছা কিছু খেয়েছিস তুই (স্বপ্না) 
না খাওয়া হয়নি আর। কান্না আটকে বললো (ইরা) 
এই তুই কাঁদছিস কেন? তোকে আমরা কি বলেছিলাম ভুলে গেছিস(স্বপ্না) 
তার আর দরকার নেই সামিম ব্রেকআপ করে নিয়েছে আমার সাথে। (ইরা) 
এই কি হয়েছে পুরোটা বল দেখি (ঋষি) 

সন্ধ্যা থেকে যা যা হয়েছে সবটাই বললো ওদের ইরা। ওরা শুনে কিছুটা খুশি আর কষ্ট পেল। 

দেখলি  সেই প্রথম তোকে আমি বলেছিলাম এই ছেলেটা সুবিধার নয়। আজকে তার প্রমাণ পেলি তো (মাহিদ রেগে বললো) 
এই তুই চুপ কর পেটুক। দেখতে পাচ্ছিস  ও কাঁদছে তারপরও তুই এই কথা বলছিস। আর সামিম এত মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলত যে আমরা কেউই বুঝতে পারিনি। তোর সাথে ঝামেলা হয়েছিল তাই তুই এই কথা বলতে পারছিস । শোন পরে মিশন সামিম আগে আমাদের ইরু  ওকে (স্বপ্না) 
শোন ইরা আমার মনে হয় তোর এই বিয়ে টা করে নেওয়া উচিত। তোর নিজের একটা মানুষ দরকার। আমরা বন্ধু সারাজীবন আছি তারপরও আমাদের নিজেদের একান্ত মানুষ দরকার যার হাত আমাদের কাছে খুবই বিশ্বস্ত। যত রাগ, দুঃখ, হাঁসি , স্ট্রেস তার নিকট রিলিফ লাগে। আর দেখতে এলেই যে বিয়ে হয়ে যায় এমন বলবো না কারণ তোকে পচ্ছন্দ না হওয়ার কোন কারণ নেই। তুই বিয়ের পরও নিজের জন্য কিছু করতে পারবি। এই বাড়িতে দুই মিনিট তোর কথা শোনার মতো কেউ নেই। তাই রাজি হয়ে যা। আর শোন কালকে তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে। কি বলিস সবাই। (মাহিদ) 
হ্যাঁ মাহিদ যা বলেছে ঠিক বলেছে। ওঠ গিয়ে খেয়ে নে। আর আমরা আছি পাগলি। কালকের সারপ্রাইজের জন্য ওয়েট কর। (ঋষি ) 
কি সারপ্রাইজের কথা বলছিস তোরা???(ইরা) 
আমাদের কেও বলেনি এই দুই বাদর। (দিপ্তী, স্বপ্না একসাথে বললো)
আরে সারপ্রাইজ বলে দিলে থাকে নাকি। চাপ না নিয়ে পড় বাই (ঋষি আর মাহিদ হাঁসতে হাঁসতে কল ডিসকান্টে করল) 
** সামিমের সাথে ইরার ফেসবুকে পরিচয় হয় । তারপর বন্ধুত্ব। তারপর ভালোলাগা এই ভালোলাগা থেকে ভালবাসা। সামিম বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান তাদেরও ব্যবসা আছে। ইরার বাবার বিজনেস রাইভালের ছেলে। সামিম ভেবেছিল ইরা কে ফাঁসিয়ে ওর বাবার থেকে সম্পত্তি নেবে কিন্তু ও ইরার ব্যপারে জানার পর সরে যায় নিশার সাথে। সামিম কেমন প্রকৃতি তা গল্প পড়তে পড়তে জানবেন আমাদের চারিদিকে এমন অনেক সামিম আছে যাদের মিষ্টি কথা ফাঁদে পরে অনেক মেয়ের জীবন গেছে তাই তাদের থেকে দূরে থাকুন। 
পরেরদিন দুপুরে 
এলাহী রান্না হয়েছে পাএপক্ষ আসবে বলে। হয়তো ইরাকে বিদায় করতে পারবে সেই খুশিতে এতকিছু ভেবে  ইরা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। সুন্দর করে সেজে পাএপক্ষের সামনে বসে আছে ইরা। 
তা মেয়ে তুমি রান্না করতে পারো তো? জিঙ্গাসা করল পাএের পাশে বসে থাকে পাএের ভাই। কন্ঠটা  তার চেনা লাগলেও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ঘাড় নেড়ে বললো হ্যাঁ (ইরা) 
পাএের ভাই আরও কিছু বলবে তার আগে পাএ বললো আমরা কি আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি। 
হ্যাঁ বাবা যাও । ইরা তোমার রুমে নাহলে ছাদে নিয়ে যাও। (জলিল খান) 
ছাদে
ইরা আর পাএ দাড়িয়ে আছে কেউ কথা বলছে না।
কিছুক্ষণ পর
পাএ বললো আপনার কি আমাকে পচ্ছন্দ হয়েছে?(পাএ) 
আমি তো আপনাকে এখন দেখিনি আর আমার কথা বাদ দিন আপনার কি আমাকে পচ্ছন্দ হয়েছে? প্রতিউত্তরে বললো (ইরা) 
পচ্ছন্দ না হওয়ার তো কিছু নেই। তুমি করেই বলছি কারণ এক তো তুমি আমার ছোট আর দ্বিতীয় তোমাকে আমি আগে থেকেই চিনি হ্যাঁ এটা ঠিক বেশ কয়েক বছর দেখা হয়নি। আর তৃতীয় তুমি আমার হবু স্ত্রী তাই তুমি করেই বললাম। (পাএ) 
না ঠিক আছে আপনি তুমি করেই বলতে পারেন। আচ্ছা আপনি আমার সবকিছু জানেন আর আমার এক অতীত ও আছে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসতাম বা বলুন ভালোবাসা এখান আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে চাইবেন? ( ইরা) 
আলবাত বিয়ে করবে বলেই তো এসেছে আমার দাদা বুঝলে ভাবী (পিছন থেকে বলে উঠলো পাএের ভাই) 
হঠাৎ গলার আওয়াজ পেয়ে ভয়ে পেয়ে পিছনে তাকাল। 
মাহিদ তুই। তুই এখানে কি করছিস তোর তো এই টাইমে কলেজে থাকার কথা। (ইরা) 
এই মাহিদ তুই এখানে কেন আসলি  আমরা তো কথা বলতে এসেছি (পাএ) 
আমি জানতাম ইরা বিয়ে না করার জন্য অনেক অজুহাত দেবে তাই চলে এসেছি দাদাভাই। আর  ইরু বেইবি  আমার একমাত্র দাদার জন্য পাএী  দেখতে আমি আসবো না তো কে আসবে। আর দাদাভাই আর ইরা তোদের আজকেই রেজিস্ট্রী আর এঙ্গেজমেন্ট টা হয়ে যাবে। (দাঁত বার করে হেসে বললো মাহিদ)
তারমানে আপনি আহিদ ? কিন্তু পুরো বলতে না দিয়ে (অবিশ্বাস্য চোখে বললো ইরা) 
ইয়েস ম্যাডাম। পরে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেব এখন নিচে  যাওয়া যাক। (আহিদ) 


চলবে......... 
আহিদ আর ইরার এঙ্গেজমেন্ট কালকের পর্বে থাকবে।আহিদ কে আর তার বিষয়ে জানতে হলে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। পরার শেষ কমপ্লিমেন্ট দিতে ভুলবেন না। আপনাদের ছোট্ট কমপ্লিমেন্ট আমাকে সামনে আরও লিখিতে উৎসাহিত করে। ধন্যবাদ 🌼🌼